আমদানির জোয়ার, পাশাপাশি বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে বাণিজ্য ঘাটতি চূড়ায় উঠেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩০ কোটি ৬০ লাখ (২২.৩০ বিলিয়ন) ডলার। বর্তমান বিনিময়হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ২০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।
এই অঙ্ক গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) প্রায় সমান। আর জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
২০২০-২১ অর্থবছরের এই আট মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। আর পুরো অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ২ হাজার ২৮০ কোটি লাখ (২.৮০ বিলিয়ন) ডলার।
এর আগে আট মাসে এত বিশাল অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতির মুখে কখনই পড়েনি বাংলাদেশ। আর এর ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ১২ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন (১ হাজার ২৮৩ কোটি)। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৮২ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
পণ্য আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ও লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতিতে এই মাইলফলক অতিক্রম করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর ও মঞ্জুর হোসেন।
তারা বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমদানির লাগাম টেনে ধরা। যে করেই হোক এটা করতে হবে। তা না হলে সংকটে পড়বে অর্থনীতি।’
করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই আমদানিতে জোয়ার বইছে। আর এতে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ব্যবধান বা বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ৪ হাজার ৩৪৭ কোটি ৭০ লাখ (৫৪.৩৭ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই আট মাসে ৩ হাজার ৭০৬ কোটি ৭০ লাখ (৩৭.০৬ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩ হাজার ২০৭ কোটি ১০ লাখ (৩২.০৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি।
এ হিসাবেই অর্থবছরের আট মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।
সেবা বাণিজ্যে ঘাটতিও বাড়ছে
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫০ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ১৭৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার
২০২১-২২ অর্থবছর শুরুই হয়েছিল লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি নিয়ে। দিন যত যাচ্ছে, ঘাটতি ততই বাড়ছে। প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৩১ কোটি ৪০ লাখ (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার। চার মাস শেষে (জুলাই-অক্টোবর) তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। জুলাই-নভেম্বর সময়ে ঘাটতি ছিল ৬ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।
ডিসেম্বর শেষে তা আরও বেড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। সবশেষ জানুয়ারি শেষে ১০ দশমিক শূন্য ১৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে।
ফেব্রুয়ারি শেষে তা ১২ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। এর আগে কোনো অর্থবছরেও এত ঘাটতিতে পড়েনি বাংলাদেশ।
করোনা মহামারির কারণে আমদানি কমায় ৯২৭ কোটি ৪০ লাখ (৯.২৭ বিলিয়ন) ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের বছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
তবে আর্থিক হিসাবে এখনও বড় উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এই উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৩ কোটি ১০ লাখ (১০.৯৩ বিলিয়ন) ডলার। গত অর্থবছরের এই সময়ে ৬৪৭ কোটি ৪০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।
করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ঋণসহায়তা পাওয়ায় আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে বলে জানান আহসান মনসুর।
তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের আট মাসে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৫৯০ কোটি (৫.৯ বিলিয়ন) ডলারের ঋণসহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি।
২০২০-২১ অর্থবছরের এই আট মাসে ৩৭৩ কোটি ৬২ লাখ ডলারের ঋণসহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ।
তবে জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে সামগ্রিক লেনেদেনে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২২ কোটি ২০ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচকে ৬৮৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।
রেমিট্যান্স কমেছে ১৯.৪৬ শতাংশ
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ১ হাজার ৩৪৪ কোটি (১৩.৪৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম।
২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ১৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
যে কারণে বেড়েছে আমদানি ব্যয়
আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। পাশাপাশি জাহাজ ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়াও বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।
গত বছরের মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৬০ ডলার। বৃহস্পতিবার সেই তেল ১০০ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় এর দর ১৩৯ ডলারে উঠে গিয়েছিল।
গত আট মাসে জ্বালানি তেল আমদানিতে খরচ বেড়েছে ৭৩ শতাংশ। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৩২ শতাংশ।
মহামারির পর চাহিদা বাড়ায় খাদ্যপণ্য (বিশেষ করে গম), ভোজ্যতেল, শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি), শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ সব ধরনের জিনিসের দামই বেড়েছে।
গত বছরের মার্চে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৮৫০ থেকে ৯০০ ডলার। বর্তমানে এই তেল ১ হাজার ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। মাঝে দর ১ হাজার ৮০০ ডলারে উঠেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মোট আমদানি ব্যয়ের ৭০ শতাংশের মতো খরচ হয়েছে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও অন্য পণ্য আমদানিতে। একই সঙ্গে এ খাতে নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিও বেড়েছে।
তৈরি পোশাকের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে তুলা। গত বছরের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ৩০ কাউন্ট মানের সুতার দাম ছিল ৩ ডলারের মতো। বছরের মাঝামাঝি সময়ে তা ৪ দশমিক ২০ থেকে ৪ দশমিক ৩০ ডলার পর্যন্ত উঠে যায়। এখন তা ৪ দশমিক ১০ থেকে ৪ দশমিক ১৫ ডলারে নেমেছে।
‘যে করেই হোক আমদানি কমাতে হবে’
অস্বাভাবিক আমদানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক হয়েছে আর নয়। আমাদের কোমরের বেল্টটা এখন টাইট করতে হবে। যে করেই হোক আমদানি কমাতেই হবে। এ ছাড়া এখন আর অন্য কোনো পথ খোলা নেই।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণভাবে অর্থনীতিতে আমদানি বাড়াকে ইতিবাচকভাবে দেখা হয়ে থাকে। বলা হয়, আমদানি বাড়লে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। এতদিন আমরাও সেটা বলে আসছি। কিন্তু এখন অসনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। ৫০ শতাংশ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা আমাদের অর্থনীতির নেই। এখন এটা কমাতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ায় সরকারের জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কয়েক গুণ বেড়ে গেছে, গ্যাসে বেড়েছে, সারে বেড়েছে, বিদ্যুতেও বেড়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এবার ভর্তুকি ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বাজেট ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের চাপ পড়বে।’
এ ক্ষেত্রে এখন করণীয় কী- এ প্রশ্নের উত্তরে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা আহসান মনসুর বলেন, ‘সরকারকে সাশ্রয়ী হতে হবে। একই সঙ্গে দেশের মানুষকেও সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কম খরচ করতে হবে। আমাদের অনেক কিছুই কিন্তু জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। গ্যাস, বিদ্যুৎ, সার, পানি- এসব কিছু উৎপাদনে তেলের প্রয়োজন হয়। এই সংকটের সময়ে এসব কিছু যেন মানুষ কম ব্যবহার করে।
‘পরিবহন খাতে যদি জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমানো যায়, তাহলে আমদানি খাতে খরচ কমবে। সরকারের ভর্তুকি কমবে। অন্যদিকে বিলাসবহুল পণ্য যাতে কম আমদানি হয়, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। প্রয়োজন নেই এমন পণ্য আমদানি থেকে এখন বিরত থাকতে হবে।’
একই কথা বলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক মঞ্জুর হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যে পণ্যের খুব বেশি প্রয়োজন নেই, এলসি মার্জিন বাড়িয়ে এবং অন্য সব উদ্যোগ নিয়ে সেগুলোর আমদানি বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে পণ্য আমদানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।’
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য বাড়াতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমিশন করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তান থেকে যাতে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে আমদানি করতে পারি সেজন্য এ কমিশন করা হবে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশকিছু সমঝোতা স্বাক্ষর হবে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষ খুব খোলামেলা আলোচনা করেছি। আমরা দুই দেশের বাণিজ্য বাড়াতে একমত হয়েছি। খাদ্য ও কৃষি উন্নয়নে আমরা কাজ করতে চাই। কিছু কিছু মধ্যবর্তী পণ্য যৌথভাবে উৎপাদনে যেতে পারলে উভয় দেশ উপকৃত হবে। খাদ্য ও কৃষি পণ্যে জোর দেওয়া হয়েছে। আমাদের ফল আমদানি ও রপ্তানি নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা আনারস রপ্তানির কথা বলেছি। স্থানীয়ভাবে চিনি উৎপাদনে পাকিস্তানের সাহায্য চেয়েছি। তারা সব বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এন্টি-ডাম্পিং বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বাহিরেও আমাদের পাকিস্তান হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড আমদানির ওপর এন্টি-ডাম্পিং ট্যাক্স আরোপ করেছিল আমরা সেটা সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছি। তারা এটা রাখবে আশা করি। আমরা পাকিস্তান বাজারে ডিউটি ফ্রি ১ কোটি কেজি চা রপ্তানির কথা জানিয়েছি। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী আরো তিনদিন থাকবেন, এটা নিয়ে আরো আলোচনা হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের বেশকিছু সমঝোতা স্বাক্ষর হবে। এরমধ্যে জয়েন্ট ট্রেড কমিশন গঠন, কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি। এই ট্রেড কমিশন বন্ধ ছিল না। সেখানে কিছু আলোচনা হতো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দুই দেশের মধ্যে ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশন করতে চাই। আমাদের দুই দেশে ব্যবসার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ালে ভারতের সঙ্গে আরো বৈরিতা বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কাজ হচ্ছে বাণিজ্যে সক্ষমতা তৈরি করা। এ বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করুন। এটা আমার কনসার্ন নয়। আমরা দেশের স্বার্থে কাজ করছি। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দেশের স্বার্থে অন্য যে যে দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো প্রয়োজন হয় আমরা সেটা করব।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। আমার কাছে সবার আগে দেশের স্বার্থ। দেশের স্বার্থে আমাদের যা যা করণীয় সেটা আমরা করব। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের যে পাওনা-দেনা ছিল সেটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বাণিজ্যের কোনো বিষয় না। আর এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘প্রায় দেড় দশক বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য ছিল না বললেই চলে। তারা আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরাও বাণিজ্য বাড়াতে অসুবিধা দেখি না। আমাদের উভয় দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে এ বাণিজ্য বাড়ানো যায়। আমাদের উপদেষ্টা ধারণা দিয়েছেন পাকিস্থানে কি কি বিষয় রপ্তানি করতে পারে। আমরা পাকিস্তান থেকে বেশি আমদানি করি কিন্তু রপ্তানি করি কম। আমরা চাই এটা পরিবর্তন হোক। আমরাও যাতে বেশি রপ্তানি করতে পারি। এতে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
বাংলাদেশ পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে কিনা এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সবার দিকে ঝুঁকছি।, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছি। ভারত থেকেও পেঁয়াজ আনছি। সর্বাগ্রে বাংলাদেশের স্বার্থ, যেখানে দেশের স্বার্থ আছে, সেখানেই ঝুঁকছি।’
বাণিজ্যসচিব মাহবুবর রহমান বলেন, ‘গত দেড় দশক পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য তেমন ছিল না বললেই চলে। খাদ্য ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমরা নানা দেশ থেকে আমদানি করি, প্রতিযোগিতা দরে পাকিস্তান থেকে এসব পণ্য আনা গেলে সমস্যা নেই। একই সঙ্গে আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর গুরুত্ব দিয়েছি। বর্তমানে পাকিস্তান থেকে ইম্পোর্ট করি বেশি, রপ্তানি কম করি। আমরা রপ্তানি বাড়াতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। গত অর্থবছর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৭৮৭ মিলিয়ন ডলার এবং পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে ৭৮ মিলিয়ন ডলার।’
বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে এ বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্থানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, বাংলাদেশে পাকিস্থানের হাইকমিশনের রাজনৈতিক কাউন্সিলর কামরান ধাংগাল, বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক প্রতিনিধি জাইন আজিজ এবং বাণিজ্য সহকারী ওয়াকাস ইয়াসিন।
বাংলাদেশে সফররত পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান আজ রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কার্যালয়ে চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সংস্কৃতি ও জীবনাচরণের দিক দিয়ে দুদেশের মানুষের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। আর পাকিস্তানের টেক্সটাইল ও বিশেষ করে জুয়েলারি পণ্য এদেশের মানুষের মাঝে বেশ চাহিদা রয়েছে।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নে এফটিএ স্বাক্ষরের জন্য এদেশের বেসরকারি খাত সবসময়ই সরকারকে প্রস্তাব দিয়ে আসছে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এফটিএ স্বাক্ষর হলে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে।
তিনি বলেন, দুদেশের মধ্যে সরাসরি বিমান ও কার্গো যোগাযোগ চালু হলে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশই রপ্তানির ক্ষেত্রে তৈরি পোষাক এবং টেক্সটাইল খাতের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল। দুদেশেরই রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলোসহ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত পোশাকের নতুন ডিজাইনের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। যেখানে দুদেশের পোষাক খাতের উদ্যোক্তাদের মনোনিবেশ করা আবশ্যক। যার মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পূর্ব আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে দুদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়াতে একযোগে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও সিমেন্ট, চিনি, পাদুকা ও চামড়া প্রভৃতি খাতে পাকিস্তান বেশ ভালো করছে এবং বাংলাদেশ চাইলে পাকিস্তান থেকে এ পণ্যগুলো আমদানি করতে পারে। পাশাপাশি ঔষধ খাতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা পাকিস্তানের জন্য বেশ কার্যকর হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, দুদেশের কৃষি কাজ এবং পণ্যের উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তি ও মূল্য সংযোজন বৃদ্ধি করা গেলে এখাতে বৈশ্বিক বিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।
জাম কামাল খান জানান, পাকিস্তানের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে শিগগিরই বাংলাদেশে ‘সিঙ্গেল কান্ট্রি এক্সিবিশন’-এর আয়োজন করা হবে। যার মাধ্যমে দুদেশের বেসরকারি খাতের সম্পর্ক আরও জোরাদারের সুযোগ তৈরি হবে।
এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, ডিসিসিআই জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এবং পাকিস্তান হাইকমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন করে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ২৭ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এর আগে গত ১৩ আগস্টের এক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও ব্যাংকখাতের বর্তমান বাস্তবতায় কয়েকজন পরিচালক নতুন কোনো ব্যাংকের অনুমোদনের বিপক্ষে মত দেন।
২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনুমোদন পাওয়া নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি এবং কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি।
সূত্র জানায়, ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনো বাংলাদেশে পুরোপুরি তৈরি হয়নি। একই সময়ে কয়েকটি প্রচলিত ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনেকেই নতুন লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন।
তবে পরিকল্পনা থেমে নেই। আগ্রহীদের কাছ থেকে নতুন ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন চাওয়া হতে পারে শিগগির। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আবেদন আহ্বান করে। তখন ৫২টি আবেদন জমা পড়ে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ৯টি প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিচালনা পর্ষদের সভায়।
এর মধ্যে নগদ ও কড়ি ছাড়াও স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক, নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক এবং জাপান-বাংলা ডিজিটাল ব্যাংককে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওএল) দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিকাশ, ডিজি টেন এবং ডিজিটাল ব্যাংককে পৃথক লাইসেন্স না দিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং উইং খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আবেদন বাতিল করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগেরবার রাজনৈতিক বিবেচনায় যে প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, এবার তার চেয়ে অনেক স্বচ্ছ ও কঠোর মানদণ্ডে নতুন আবেদনগুলো যাচাই করা হবে।
২০২৪ সালের শেষ নাগাদ দেশের ব্যাংক খাতের দুর্দশাগ্রস্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ‘ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০২৪’-এ এসব তথ্য ওঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের শেষে এ ধরনের ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। ১ বছরে তা ৪৪.২১ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় অর্ধেক। আইএমএফের সংজ্ঞা অনুযায়ী, খেলাপি, পুনঃতফসিল এবং অবলোপনকৃত (রাইট-অফ) ঋণকে সম্মিলিতভাবে ‘দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা, পুনঃতফসিলকৃত ঋণ ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা এবং রাইট-অফ করা ঋণের পরিমাণ ৬২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও তদবিরের মাধ্যমে দেওয়া ঋণ এখন খেলাপিতে রূপ নিচ্ছে। আগে এসব তথ্য গোপন থাকলেও এখন আইএমএফের চাপের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে এসব তথ্য প্রকাশ করছে।
প্রতিবেদনে আরও ওঠে এসেছে, ২০২৪ সালে দেশের ব্যাংক খাত চরম চাপের মুখে পড়ে, বিশেষ করে মূলধন পর্যাপ্ততার ক্ষেত্রে। সিআরএআর (ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েইটেড অ্যাসেট রেসিও) মাত্র ৩.০৮ শতাংশে নেমে আসে, যেখানে তা কমপক্ষে ১০ শতাংশ থাকার কথা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও বেশকিছু ইসলামী ব্যাংক।
মূলধন অনুপাত ও লিভারেজ অনুপাত যথাক্রমে ০.৩০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গোটা ব্যাংক খাতের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অভাব স্পষ্ট করে।
তবে ব্যাংক খাতের তারল্য পরিস্থিতি এখনো তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। অ্যাডভান্স-ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) ৮১.৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, দেশের আর্থিক খাত সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও খেলাপি ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ এবং সুশাসনের অভাব এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সময়োপযোগী নীতিমালা, কঠোর তদারকি এবং প্রযুক্তিনির্ভর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই এই খাতকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
সীমান্ত ব্যাংক এবং এবিসি রিয়েল এস্টেট এর মধ্যে সম্প্রতি এবিসি রিয়েল এস্টেট এর প্রধান কার্যালয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় গ্রাহকেরা এবিসি রিয়েল এস্টেট এর ফ্ল্যাট ক্রয়ে সীমান্ত ব্যাংক এর হোমলোন ”সীমান্ত নিবাস” গ্রহনের ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত ইন্টারেস্ট রেট ও লোন প্রসেসিং ফি সুবিধা পাবেন ।
সীমান্ত ব্যাংকের হেড অব বিজনেস মোঃ শহিদুল ইসলাম এবং এবিসি রিয়েল এস্টেট এর পরিচালক সৌগত ঘোষ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সাক্ষর করেন। এ সময় সীমান্ত ব্যাংকের রিটেইল অ্যাসেট ও লাইবিলিটি এর ইনচার্জ মোহাম্মদ মাসুদ সাজ্জাদ, এবিসি রিয়েল এস্টেট এর জেনারেল ম্যানেজার (সেলস) মোহাম্মদ জাকির হোসেন-সহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উভয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট পরিষেবা বিকাশে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে বদ্ধ পরিকর।
পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি হিসেবে লিড প্লাটিনাম সনদ অর্জন করলো বাংলাদেশের সুপারব্র্যান্ড ও টেক জায়ান্ট ওয়ালটনের মোল্ড অ্যান্ড ডাই ফ্যাক্টরি কমপ্লেক্স। টেকসই উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানির সাশ্রয়ী ব্যবহার এবং পরিবেশবান্ধব অবস্থানের কারনে লিড সনদ প্রদান করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। লিড সনদ অর্জনের মধ্য দিয়ে গ্রিন ফ্যাক্টরি স্থাপনায় ওয়ালটনের ঝুড়িতে যুক্ত হলো আরেকটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
বুধবার (২০ আগস্ট, ২০২৫) রাজধানীতে ওয়ালটন করপোরেট অফিসে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লিড প্লাটিনাম সনদ গ্রহণ করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র চেয়ারম্যান এস এম শামছুল আলম এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম মাহবুবুল আলম।
অনুষ্ঠানে ওয়ালটনের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণসহ লিড সনদ অর্জনের ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ৩৬০-ডিগ্রি টোটাল সলিউশন লিমিটেডের আন্তর্জাতিক গ্রিন বিল্ডিং বিশেষজ্ঞ অনন্ত আহমেদ ও অন্য কর্মকর্তাগণ।
লিড সনদ অর্জনের প্রতিক্রিয়ায় ওয়ালটন হাই-টেকের চেয়ারম্যান এস এম শামছুল আলম বলেন, পরিবেশবান্ধ কারখানার স্বীকৃতি হিসেবে ওয়ালটন মোল্ড অ্যান্ড ডাই কারখানা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ লিড প্লাটিনাম সনদ অর্জন করায় ওয়ালটন পরিবার অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা চাই- ভবিষ্যত প্রজম্মের জন্য একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে। সেজন্য কারখানা থেকে শুরু করে পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া সর্বত্র টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন ও গ্রিন ফ্যাক্টরি স্থাপনে লিড সনদ ওয়ালটনকে আরো বেশি উৎসাহিত করবে।
মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশবান্ধব লিড সনদ অর্জনে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করায় ৩৬০-ডিগ্রি টোটাল সলিউশনকে ধন্যবাদ জানান ওয়ালটন হাই-টেকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় ওয়ালটন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার লক্ষ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে ওয়ালটন কারখানায় পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন গ্রিন প্রকল্প ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে জিরো কার্বন নিঃসরণ, সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানির ব্যবহারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে গ্রিন স্ট্রাকচারাল ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে। রুফটপ সোলার পাওয়ার প্রজেক্ট, ফ্লোটিং বা ভাসমান সোলার পাওয়ার প্রজেক্ট, রেইন ওয়াটার বা বৃষ্টির পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও পুনঃব্যবহার নিশ্চিত, অ্যাডভান্সড ভেন্টিলেশন সিস্টেম, প্লাস্টিক ও মেটাল রিসাইক্লিং ইত্যাদি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষায় ওয়ালটনের এসব গ্রিন ইনিশিয়েটিভ অব্যাহত থাকবে।
আন্তর্জাতিক গ্রিন বিল্ডিং বিশেষজ্ঞ অনন্ত আহমেদ জানান, বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্পখাতে ওয়ালটনই প্রথম বিশ্বব্যাপী মর্যাদাপূর্ন লিড প্লাটিনাম সনদ অর্জন করেছে। এই সনদ একটি বিল্ডিং বা প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব এবং কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করে। এর মাধ্যমে একটি বিল্ডিং কতটুকু পরিবেশ-বান্ধব, তা বোঝা যায়। লিড সনদ দেয়ার ক্ষেত্রে শক্তি ও পানির ব্যবহার, কার্বন নিঃসরণ, উপকরণ নির্বাচন এবং অভ্যন্তরীণ পরিবেশগত গুণমানসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হয়। এসব বিষয়ে কোন বিল্ডিং বা প্রকল্প কত স্কোর করে, তার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের লিড সার্টিফিকেশন প্রদান করা হয়। ওয়ালটনের মোল্ড অ্যান্ড ডাই ফ্যাক্টরি সর্বোচ্চ স্কোর পাওয়ায় লিড প্লাটিনাম সনদ অর্জন করেছে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক টেকসই মানদন্ড অনুসরণে ৩ লাখ ৭৬ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে গ্রিন স্ট্রাকচারাল ডিজাইনে মোল্ড অ্যান্ড ডাই কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। কারখানায় বৈদ্যুতিক আলোর চেয়ে দিনের আলোর পর্যাপ্ত ব্যবহারের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে ২.১ মেগাওয়াটের রুফটপ সোলার পাওয়ার পয়েন্ট। ওয়ালটন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ তৈরি করছে, তার চেয়েও কম পরিমাণ বিদ্যুৎ কারখানায় ব্যবহার করছে। এছাড়া কারখানার আভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও বাতাসকে আরামদায়ক রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাডভান্সড ভেন্টিলেশন সিস্টেম। বৃষ্টির পানি ব্যবহার ও পুণঃব্যবহারেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
এনআরবিসি ব্যাংকের ১২তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় গত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, লভ্যাংশ, ২০২৫ সালের জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ ও তাদের সম্মানী অনুমোদন করা হয়। ২১ আগস্ট, ২০২৫, বৃহস্পতিবার, কুর্মিটোলা গল্ফ ক্লাবে ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন প্রধানিয়ার সভাপতিত্বে হাইব্রিড পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত সভায় স্বশরীর ও অনলাইন প্লাটফর্মে স্বতন্ত্র পরিচালক, উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডারবৃন্দ অংশ নেন।
সভায় স্বতন্ত্র পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ, এফসিএ, স্বতন্ত্র পরিচালক ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান মো. নুরুল হক, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আবুল বশর, মো. আনোয়ার হোসেন ও ব্যারিস্টার মো: শফিকুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. মো. তৌহিদুল আলম খান, ডিএমডি ও সিএফও হারুনুর রশীদ এবং কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আহসান হাবিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় শেয়ারহোল্ডারদের অনলাইন প্লাটফর্মে প্রদত্ত সর্বোচ্চ ভোটের মাধ্যমে ৪ টি এজেন্ডা পাস করা হয়। এছাড়া অনলাইন এবং সশরীরে উপস্থিত বিনিয়োকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া।
এজিএমে অংশগ্রহণকারী সকল স্বতন্ত্র পরিচালক, শেয়ারহোল্ডার, গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, আমানতকারী ও সাধারন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় এনআরবিসি ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমরা ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার মাধ্যমে নতুন পরিচালনা পর্ষদ আমনতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। তিনি আরও বলেন, ঋণশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে ব্যাংকের গুণগত সম্পদ ও মুনাফা বৃদ্ধি করাই এই পর্ষদের লক্ষ্য। এক্ষেত্রে, তিনি সবাইকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ, এফসিএ, বলেন, ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থার কারণে আমানতের পরিমান ২০ হাজার কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে। সুবিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে টেকসই ব্যবসায়িক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা সফল হলে শেয়ারহোল্ডারগণ তাদের বিনিয়োগের কাঙ্খিত সুফল পাবেন বলে আমরা আশাবাদী।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. মো. তৌহিদুল আলম খান বলেন, আমানতকারী ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এনআরবিসি ব্যাংকের প্রাণশক্তি। আমরা দক্ষ পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে ব্যাংকের স্বার্থ সংরক্ষণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কমপ্লায়েন্স, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে চাই।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে যাত্রা করা এনআরবিসি ব্যাংক পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হয় ২০২১ সালে। বর্তমানে সারাদেশে ব্যাংকটির ১০৯টি শাখা এবং ৪১৫টি উপশাখার মাধ্যমে প্রথাগত ব্যাংকিং সেবার পাশাপাশি শরীয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং সেবাও প্রদান করছে।
মন্তব্য