২০২১ সালের ৩ এপ্রিল। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে আলোড়ন তোলা ঘটনা।
স্ত্রী নন, এমন নারীসহ সেখানে আটক হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সে সময়ের ব্যাপক প্রভাবশালী নেতা মামুনুল হক। স্থানীয়দের জেরার মুখে যখন সঙ্গিনীকে স্ত্রী দাবি করার পর সত্যিকার স্ত্রীর সঙ্গে তৈরি হয় বিবাদ। সন্তানসহ ঘর ছাড়েন তিনি। এখনও ফিরেছেন কি না জানা যাচ্ছে না কোনোভাবে।
সেই রাতে অবরুদ্ধ মামুনুলকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে ধর্মভিত্তিক দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। মসজিদে মাইকিং করে জড়ো হয়ে চলে রিসোর্টে হামলা। প্রধান ফটক থেকে ভেতরের সাজানো গোছানো রিসোর্টটি তছনছ করে দেয় তারা।
এরপর মামুনুল সেখান থেকে ঢাকায় ফেরেন। কিন্তু সেই ঘটনাটি তার সে সময়ের প্রভাবশালী অবস্থানকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়।
ঘটনা সেখানেই থেমে থাকেনি। হামলা হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর, মহাসড়কে যানবাহনে।
এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর সেই রয়েল রিসোর্ট কেমন আছে?
রিসোর্টের ব্যবস্থাপক খাইরুল কবির লাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে মেরামত কাজে। এর পুরোটাই তো লোকসান।
‘করোনার কারণে এই সময়ে ব্যবসায় এমনিতেই মন্দা। তার ওপর এত টাকার ধকল। সব মিলিয়ে ভালো থাকার তো সুযোগ নেই।’
এই হামলার ঘটনায় রয়েল রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ কোনো মামলা করেনি। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও উপজেলা যুবলীগ রফিকুল ইসলাম নান্নু তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করেন৷
খাইরুল কবির বলেন, ‘আমাদের এই রিসোর্টে দেশীয় গেস্টের চেয়ে বিদেশি গেস্ট বেশি আসে। আর আসে কাপল। তবে মামুনুল হক কাণ্ডের পর আগের মতো আর কাপল আসে না। মাঝেমধ্যে কিছু গেস্ট আসে। ওই ঘটনায় শুধু রিসোর্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, ব্যবসারও লোকসান হয়েছে। কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে, আগের অবস্থানে ফিরে যেতে।’
রিসোর্টের মতোই ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির কথা বলছেন সেই রাতের বেপরোয়া হামলার ভুক্তভোগীরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামসুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, ‘আমাদের আওয়ামী লীগের অফিসে ভাঙচুর করে অনেক ক্ষয়ক্ষতি করা হয়। পরে আমরা নিজ উদ্যোগে সেগুলো মেরামত করেছি।’
যুবলীগের সোনারগাঁ কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু বলেন, ‘মামুনুলের ঘটনায় হেফাজত নেতা-কর্মীদের হামলা, ভাঙচুরে আমার প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা আর পূরণ হয়নি।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যেসব যানবাহন পুড়িয়েছে তার ক্ষতিপূরণ পাননি যানবাহনের মালিকরা।
পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম জানান, যতদিন পর্যন্ত মামলা শেষ না হবে, ততদিন পর্যন্ত এ বিষয়ে বলা যাবে না।
তিনি বলেন, ‘সবকিছু নির্ভর করছে আদালতের ওপর।’
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি হাফিজুর রহমান জানান, এসব ঘটনায় মোট সাতটি মামলা হয়েছে। সব কটি মামলা তদন্তাধীন।
বিচার কতদূর
ঘটনার প্রায় এক মাস পর ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন তার রিসোর্ট সঙ্গিনী জান্নাত আরা ঝর্ণা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম গত ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ৩ নভেম্বর মামুনুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত।
২৪ নভেম্বর আদালতে জবানবন্দি দেন ঝর্ণা। আদালতে বলেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রয়েল রিসোর্ট ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্থানে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেছে মামুনুল।
এর পর থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
১৩ ডিসেম্বর মামুনুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন রয়েল রিসোর্টের সুপারভাইজার আব্দুল আজিজ, রিসিপশন অফিসার নাজমুল ইসলাম অনিক ও নিরাপত্তা প্রহরী রতন বড়াল।
২৫ জানুয়ারি সাক্ষ্য দিয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, রয়েল রিসোর্টের এক্সিকিউটিভ মাহাবুবুর রহমান ও নিরাপত্তা প্রহরী ইসমাইল হোসেন।
মামলার আরও সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসবেন পর্যায়ক্রমে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রকিবুদ্দিন আহমেদ জানান, ধর্ষণ মামলায় মামুনুলের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তিনজনই সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তবে মামুনুল হকের আইনজীবী ওমর ফারুকের দাবি, তার মক্কেলকে ফাঁসাতে সাক্ষীরা আদালতে মিথ্যা তথ্য তুলে ধরছেন।
যুবলীগ নেতা নান্নুর বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মামলাগুলোর তদন্ত শেষ করে এখনও প্রতিবেদন দেয়া যায়নি।
আদালতে এলেই হম্বিতম্বি
ধর্ষণ মামলায় মামুনুল হককে যতবার আদালতে আনা হয়েছে, ততবার তিনি কোনো না কোনো ঘটনা ঘটিয়েছেন। পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত হওয়া, মামলার বাদীর সঙ্গে উচ্চবাচ্য করাও বাদ যায়নি।
মামুনুল যতবার হাজির হয়েছেন ততবার তার অনুসারীরা আদালত চত্বরে হট্টগোল করেছেন।
শুরুর দিকে মামুনুলকে অন্যান্য আসামির মতো আদালতে হাজির করা হলেও তার এসব কর্মকাণ্ডে পুলিশের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে জানিয়েছেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামুনুল হককে যখন শুনানিতে আনা হয়, সে তারিখে আদালতের প্রবেশ ফটকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পাশাপাশি বহিরাগতের প্রবেশের সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়ে থাকে। কারণ বিগত সময় নানা ঘটনা ঘটেছে।’
হরতালের সহিংসতা
রিসোর্টকাণ্ডের আগে ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতালেও ব্যাপক সহিংসতা হয়।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে ওই বছরের ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে হেফাজতকর্মীদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়।
ওই সংঘর্ষের জেরে সহিংসতা হয় নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জসহ আরও কয়েক জেলায়।
চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তিতে হামলা ঠেকাতে পুলিশের গুলিতে প্রাণহানির প্রতিবাদে ২৮ মার্চ হরতাল ডাকে হেফাজত।
সেদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড মোড় থেকে শিমরাইল মোড় পর্যন্ত টায়ার ও গাছের গুঁড়ি জ্বালিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সংগঠনের নেতা-কর্মী ও তাদের সমর্থকরা। ভাঙচুর করে ৫০টির বেশি যানবাহন। আগুন দেয়া হয় ১১টিতে। বাদ যায়নি অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী বহনকারী গাড়িও।
এসব ঘটনায় র্যাব ও পুলিশ ছয়টি মামলা করেছে। এসব মামলার তদন্ত শেষ করে এখনও বিচারের পর্যায়ে যায়নি।
তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সহিংসতায় মামুনুল হকের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছেন তারা।
হরতালে নাশকতা, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা, যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ছয়টি মামলা হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, ওই ঘটনায় পুলিশ মামলা করে তিনটি। দুটি মামলা করেন ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহনের মালিকরা। র্যাব করে একটি।
এর মধ্যে দুটি মামলা তদন্ত করছে সিআইডি ও পিবিআই। বাকি মামলাগুলো থানা-পুলিশ দেখছে। সব কটি মামলার তদন্ত চলমান।
গত বছরের ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে মামুনুলকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ। তাকে কয়েক দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের সহিংসতা ছাড়াও ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের আটকে থাকা মামলাও নতুন করে সচল হয়।
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে কারণ দর্শোনোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত চিঠিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১৫ এপ্রিল নাটোর জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা প্রদান, মারপিট ও অপহরণের ঘটনা যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি সুমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, যা দলীয় আচরণবিধি পরিপন্থির সামিল।
‘এমতাবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব আগামী ৩ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ওই সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দলীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাবের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার বিকেলে সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা অনলাইনে আবেদনের পর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে আসেন। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মারধর করে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে আবারও বেধড়ক মারধর করে বাড়ির সামনে ফেলে যায়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের পরিবার লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করে আসছে। ইতোমধ্যে তাদের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সুমন নামের এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধর করেছেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় রুবেলকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তার। তিনি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক।
আরও পড়ুন:জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ৪০ বছর বয়সী খাইরুল ইসলাম চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় পশ্চিমপাড়ার মৃত নসিম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে।
আহতদের মধ্যে কয়েক জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, ৫০ বছর বয়সী সাজু হুদী, জামাত ফকির ও নুর বেগম, ৫৫ বছর বয়সী মানু প্রামানিক, ৬০ বছর বয়সী মোসলেম উদ্দিন, ৩৫ বছর বয়সী খোকন প্রামাণিক, জিল্লুর, ওলিউর রহমান, মজিদ, ইছাই প্রামানিক ও মো. মিঠুন এবং ৩০ বছর বয়সী নাসিরউদ্দিন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই গ্রুপের লোকজনদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে দুই গ্রুপের মধ্যে ছোটোখাটো মারামারির ঘটনাও ঘটে। এইসব ঘটনার জের ধরে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তারা ফের সংঘর্ষে জড়ায়।
সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থলেই খাইরুল নিহত হন। আর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয়রা। তাদদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন মারা গেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলতে পারব।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় টাকা না পেয়ে আব্দুল কাদের নামে এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পলাতক রয়েছে আরিফ হোসেন নামের ওই যুবক।
উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া পাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘টাকার জন্য প্রায়ই বাবাকে চাপ দিত ২০ বছর বয়সী আরিফ। সম্প্রতি বাবার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল কেনে সে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আবারও ১০ হাজার টাকা চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান আব্দুল কাদের। এতে আরিফ ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে আব্দুল কাদের পাশে বড় ছেলের বাড়িতে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে পেছন থেকে বাবার পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় আরিফ। এ সময় স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আরিফ পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চলছে।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকায় পৃথক ঘটনায় ট্রেনে কাটা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার ভোর ৫টা ও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাটিয়ারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনাগুলো ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহদুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে রেলওয়ে পুলিশ জানায়, এদিন ভোরে ভাটিয়ারি এলাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী তুর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়ে মারা যান ভাটিয়ারী ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের বিপ্লব দাশ নামের ২৩ বছর বয়সী এক যুবক।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়েন স্থানীয় ভাটিয়ারী বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির সিভিল স্টাফ ২৪ বছর বয়সী মো. আসিফ উদ্দিন।
দুটি ঘটনার পরই মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ফৌজদারহাট রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হওয়া বিপ্লব মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।’
গাইবান্ধা জেলা কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগের পর প্রধান অভিযুক্ত কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামসহ দুই কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে তাদের বদলির বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বদলি করা হয় বলে জানান তিনি।
বদলি হওয়া অপর কারারক্ষীর নাম সাবানা খাতুন। তাদের মধ্যে প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামকে দিনাজপুর কারাগার এবং সাবানা খাতুনকে ঠাঁকুরগাও কারাগারে বদলি করা হয়েছে।
এর আগে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভেতর আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলায় বিষয়টি জানাজানির ভয়ে নারী হাজতি সীমাকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন ভুক্তভোগীর মা করিমন নেছা।
লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে হাজতি সীমার উন্নত চিকিৎসা ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দেন করিমন নেছা।
ওই অভিযোগপত্রে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী (সুবেদার) আশরাফুল ইসলাম, নারী কারারক্ষী সাবানা খাতুন ও তহমিনা, কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফাকে অভিযুক্ত করা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসককে দেয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা একটি মামলায় (হাজতি নম্বর-৫০৮) প্রায় ৫ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দি। কিছুদিন আগে কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলেন সীমা।
বিষয়টি জানতে পেরে সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন সীমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। ঘটনা জানাজানির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তারা কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।
একপর্যায়ে সুবেদার আশরাফুল ও তার সহযোগীরা হাজতি সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে আনেন। তারা অভিযুক্তরা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার ভেঙে দেন।
এতসবের পর হাজতি সীমা এসব ঘটনা জানিয়ে জেল সুপারের কাছে বিচার দেবেন জানালে সুবেদার আশরাফুল তাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন। এক পর্যায়ে ২০ মার্চ দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভেতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। পরে সেলের ভেতরে নিয়ে সীমাকে হাতকড়া পরিয়ে রশি দিয়ে দুই পা বেঁধে আবারও মারধর করেন। উপরন্তু নির্যাতনের এসব ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে সীমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, করিমন নেছা একাধিকবার তার মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও সে সুযোগ দেয়া হয়নি। অবশেষে হাজিরার তারিখে আদালতে মেয়ের সাক্ষাৎ পান মা করিমন নেছা। সেদিন সীমা মায়ের কাছে নির্যাতনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখান।
অভিযোগ পেয়ে গত ১৬ এপ্রিল ঘটনার তদন্তে জেলা কারাগারে যান গাইবান্ধা জেলা প্রশাসাকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান।
সেদিন নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এরপরই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।’
শুক্রবার অভিযুক্তদের বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তা নিশ্চিত করেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা হবে।’
আরও পড়ুন:মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে সে দেশ থেকে বাংলাদেশে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও ১৩ সদস্য।
বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিব) সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এক বার্তায় শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শুক্রবার নতুন করে আরও ১১ জন (জীম্বংখালী -৩ জন এবং হাতিমারাঝিরি-৮ জন) বিজিপি সদস্য আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত সর্বমোট ২৮৫ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
বিজিবি জানিয়েছে, বাংলাদেশে ঢোকা বিজিপি সদস্যদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
শেরপুরের নকলায় বসতবাড়ির সীমানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক নারীর লাঠির আঘাতে প্রতিবেশি মোরাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ওই নারী ও তার মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার টালকী ইউনিয়নের পূর্বটালকী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ৫৫ বছর বয়সী মোরাদ হোসেন নকলার পূর্বটালকী গ্রামের মৃত রহিম মাস্টারের ছেলে। চাকরির সুবাদে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করতেন তিনি।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, নকলার মোরাদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর কল্যাণপুরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি করতেন। অনেকদিন থেকে তার প্রতিবেশি চাচাতো ভাই জালাল উদ্দিনের সঙ্গে বসতবাড়ির সীমানা নির্ধার্ণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। শুক্রবার সকালে ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন মোরাদ। বাড়িতে প্রবেশ করার পর তার প্রতিবেশি চাচাত ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত ওই নারী লাঠি দিয়ে মোরাদের মাথার পেছনে আঘাত করেন। এতে আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা মোরাদকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
ঘটনার পর জালাল উদ্দিনের স্ত্রী ও মেয়েকে আটক করে পুলিশ।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’
মন্তব্য