গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ এনে র্যাবের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে শেষে তিনি গণমাধ্যমে এমন আশা ব্যক্ত করেন।
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, বৈঠকে নির্বাচন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তরসহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।
মোমেন বলেন, ‘ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে চমৎকার আলোচনা হয়েছে। ব্লিঙ্কেন তার সূচনা বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র- বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা এবং ঢাকার সঙ্গে একত্রে কাজ করতে ওয়াশিংটনের ইচ্ছার কথা জানান।
‘ব্লিঙ্কেন বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেল হয়ে উঠেছে। ওয়াশিংটন সত্যিই দুই দেশের মধ্যে অংশীদারত্ব জোরদার করতে আগামী ৫০ বছর একসঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছে।’
মোমেন বলেন, ‘আমি ব্লিঙ্কেনকে বলেছি যে ৫০ বছর আগে বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার ভূমিতে পরিণত হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, খুনি রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তর, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল, রোহিঙ্গা ইস্যু, ইন্দো-প্যাসেফিক কৌশল, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াসহ ব্যাপক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
র্যাব প্রসঙ্গে আলোচনা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রকে র্যাব এবং এর কিছু বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছি। কারণ এই এলিট ফোর্স বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমন এবং মাদক পাচার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’
‘তাদের বলেছি যে আমরা সব প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি (মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমস্যা সমাধানের জন্য)।’
গত চার মাসে র্যাবের সঙ্গে কোনো বন্দুকযুদ্ধ ঘটেনি বলেও আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন মোমেন।
তিনি বলেন, ‘র্যাব হয়তো কখনও কখনও কিছু বাড়াবাড়ি করেছে। কিন্তু জবাবদিহিতার জন্য একটি নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে। এবং যারা অন্যায় করেছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।’
বাংলাদেশে যখন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিল তখন আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ৩০০ জনেরও বেশি আহত হয় বলেও জানান মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের ক্ষেত্রে র্যাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে (জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন)।’
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি র্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন এবং এটিকে এফবিআইয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন বলেও জানান তিনি।
ড. মোমেন বলেন, ‘ব্লিঙ্কেন গত চার মাসে র্যাবের কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি খুব আশাবাদী যে র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।’
বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া
একটি স্বচ্ছ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন ড. মোমেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা আছে। আমাদের একটি নির্বাচন কমিশন (ইসি) আছে। তারা (কমিশন) স্বাধীন এবং নির্বাচনের সময় তারাই বস।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে।’
রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তর
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ও দণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টিও বৈঠকে উত্থাপন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
একজন খুনিকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেয়া উচিত নয় বলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ‘খুনি রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তর দুই দেশের ৫০ বছরের সম্পর্ক উদযাপনে একটি গেম চেঞ্জার হবে।’
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ
অবকাঠামো, আইটি ও ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।
বৈঠকে মন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকায় বিনিয়োগের নব্বই শতাংশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে। আমি চাই আপনারা বাংলাদেশে আইটি ও ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো খাতগুলোতে বিনিয়োগ করুন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ালে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি বাড়বে যা ওয়াশিংটনকে নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিকের উদ্বেগ নিরসনে সাহায্য করবে।’
মোমেন বলেন, ‘আমি বলেছি যে আমরা একটি মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, উন্মুক্ত এবং সুরক্ষিত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল চাই। এতে আপনাদের উপস্থিতি থাকলে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। যুক্তরাষ্ট্র বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’
জিএসপি পুনর্বহালের উদ্যোগ
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা ২০১৩ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এই বাজার সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়টিও বৈঠকে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশে শ্রম পরিস্থিতির আরও উন্নতি হলে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করবে বলে জানিয়েছেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
রোহিঙ্গা ইস্যু
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সহিংসতাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান এ কে আব্দুল মোমেন।
সংকট সমাধানে আসেম ও কোয়াড সদস্যদের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা-নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে সরাসরি বিমানের ফ্লাইট চালুতে উদ্যোগ নেয়ারও আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তার সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হানিফ, নাইম রাজ্জাক, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আমেরিকা) তৌফিক ইসলাম শাতিল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দেশের বৃহত্তর স্বার্থে চলতি বছরের আগস্টের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা মনে করি এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।’
দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পরের দিন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবির কথা জানান।
এর আগে সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশ নেন নেতারা।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন আয়োজনে পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং প্রশাসনে আপেক্ষিক স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে, তাই নির্বাচন পেছানোর কোনো কারণ নেই।’
বিএনপির বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক বলেন, সরকার গঠিত নির্বাচন সংস্কার কমিশনও বুধবার তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।
ফখরুল বলেন, ‘তাই নির্বাচন পেছানোর কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমরা মনে করি না। যত বিলম্ব হবে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট তত গভীর হবে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন যে, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। কারণ এটি গণতন্ত্রের ভিত্তি।
আরও পড়ুন:চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে ফের সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশের ৪০তম ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শকরা (এসআই)।
আব্দুল গনি রোডে সচিবালয়ের ১ ও ২ নম্বর গেটের বিপরীত পাশে সোমবার সকাল থেকে অবস্থান নেন তারা।
বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তারা শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা দাবি পূরণে কোনো আশ্বাস না পেলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান।
অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ট্রেনিং থেকে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদ ও চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আমরা ৩২১ জন সাব-ইন্সপেক্টর গত ৫ ও ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করি। আমাদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব দেখা করে আমাদের দাবির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
‘এখন পর্যন্ত আমাদের বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে না পাওয়ায় আমরা সবাই (৩২১ জন) আজ আবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলমান থাকবে।’
অব্যাহতি পাওয়া এসআই অম্লান মিত্র বলেন, ‘আমি ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর ট্রেনিংয়ে অংশ নিই। অব্যাহতি দেওয়া হয় ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর। আমাকে বলা হচ্ছে ক্লাসে অমনোযোগী এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। কিন্তু আমি অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষায় ৮০৪ জনে ১০০ জনের মধ্যে ছিলাম। অমনোযোগী থাকলে তো এমন ফলাফল হওয়ার কথা না।’
কর্মসূচিতে আসা আরেকজন নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমরা এক বছর অনেক ত্যাগ স্বীকার করে প্রায় বিনা বেতনে ট্রেনিং করেছি। যখন চাকরিতে নিয়মিত হব, তখনই আমাদের বাদ দেওয়া হলো। এর থেকে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না।’
৪০তম ক্যাডেট এসআই ব্যাচে প্রশিক্ষণের জন্য মোট ৮২৩ জন ছিলেন। তারা গত বছরের ৪ নভেম্বর থেকে রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু করেন।
তাদের মধ্যে তিন ধাপে ৩১৩ জন এসআইকে মাঠে ও ক্লাসে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তুলে শোকজ করে একাডেমি। এরই মধ্যে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) সদ্য নিয়োগ পাওয়া ছয় সদস্যের নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল হায়াত মো. রফিকের সই করা প্রজ্ঞাপনে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি কর্মকমিশনে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত নিম্ন বর্ণিত ছয় সদস্যের নিয়োগ আদেশ বাতিল করা হলো।
নিয়োগ বাতিল করা ছয় সদস্য হলেন অধ্যাপক ড. শাহনাজ সরকার, মো. মুনির হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এ এফ জগলুল আহমেদ, ড. মো. মিজানুর রহমান, সাব্বির আহমেদ চৌধুরী ও অধ্যাপক ডা. সৈয়দা শাহিনা সোবহান।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।
দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এক বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর জানায়, চীনসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটি উদ্বেগজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে এ সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সেই সাথে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন: হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, গর্ভবতী নারী ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।’
পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এই রোগের সংক্রমণ দেখা গেছে। কিন্তু রোগটি যাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনা
১. শীতকালীন শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে
২. হাঁচি-কাশির সময় বাহু/টিস্যু দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন
৩. ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন
৪. আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন
৫. ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুইতে হবে(অন্তত ২০ সেকেন্ড)
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ ধরবেন না
৭. আপনি জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন। প্রয়োজনে কাছের হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা রোববার জানান, বাংলাদেশের এক নারী এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এইচএমপিভি না, নিউমোনিয়ার কারণে তার স্বাস্থ্যের অবস্থার অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন।
চীনের উত্তরাঞ্চলে রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে এতে আরেকটি মহামারির ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ভাইরাস থেকে সুরক্ষায় নাগরিকদের পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (সিডিসি)।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিয়াং জানান, শীত মৌসুমে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগটির সংক্রমণ বেশি ঘটে। তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার কমই ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন রোববার এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘তার স্বাস্থ্যের রুটিন পরীক্ষা প্রতিদিনই চলছে। তবে সোমবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে বিশেষ কিছু পরীক্ষা করা হতে পারে। হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখেছেন বিখ্যাত হেপাটোলজিস্ট অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডি। এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনেই তার চিকিৎসা চলছে।
‘হাসপাতালে ভর্তির পরই খালেদা জিয়ার ফিজিওথেরাপি করানো হয়েছে। এতে তার শারীরিক অবস্থার আরও উন্নতি হয়েছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন বলেও জানান জাহিদ হোসেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়া লন্ডনে যান। ওই দিনই হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বিশেষায়িত হাসপাতাল দ্য লন্ডন ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করা হয়।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পরীক্ষা এরই করা হয়েছে। সেই পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে তার চিকিৎসা চলছে।
লিভার সিরোসিস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া।
আরও পড়ুন:শতাধিক পণ্যে শুল্ক ও কর বাড়ানো হলেও দেশের মানুষের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর জন্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্যটা ভালো হবে। দেশের মানুষেরই উন্নয়ন হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের অজনপ্রিয় হওয়ার কোনো কারণ নেই।
রাজধানীর ফরেন একাডেমিতে রোববার প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রেস সচিব বলেন, ‘বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে ট্যাক্স আদায় সবচেয়ে কম। সরকার চায় ট্যাক্স, জিডিপি এমন জায়গায় থাক, যাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটে। তাহলে সামনে দেশের মানুষেরও উন্নয়ন হবে।
‘ম্যাক্রো ইকোনমি বাড়ানোর জন্য ট্যাক্স বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইএমএফের চাহিদার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশেও তো ভালো অর্থনীতিবিদ আছেন। তাদের পরামর্শেই এটা করা হয়েছে। এটা করা না হলে ডলারের দাম ১২৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৯০ টাকা হয়ে যাবে। বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেখেন দেশের ট্যাক্স আদায়ের পরিমাণ কেমন; অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যটা কতটা মজবুত।
‘এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও উচিত বিষয়টি নিয়ে জনগণকে বোঝানো।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘খরচ কীভাবে কমানো যায়, সরকার সে জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। আগের প্রধানমন্ত্রী ৩০০ লোক নিয়ে বিদেশে যেতেন। এখন প্রধান উপদেষ্টার বহরে ৫০ জন যাচ্ছেন। তারও একটি বড় অংশ থাকছে নিরাপত্তার জন্য।
‘আগে দেখা গেছে, একজন মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর জন্য কর্ণফুলী টানেল করা হয়েছে। টানেল থেকে নেমে তার বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে সেভেন স্টার হোটেল বানানো হয়েছে।’
পাচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘সেগুলো ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। গতকালও পূর্বাচলের একটি প্লট নিয়ে দুদকের মামলা হয়েছে। এগুলো সরকারের কোষাগারে আনা যায় কি না, সেই চেষ্টা চলছে।’
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেখতে হবে বাজারে সরবরাহ চাহিদা মতো আছে কি না। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যটা ভালো থাকলে মূল্যস্ফীতিও কমিয়ে আনা যাবে।
‘যারা ভ্যাট-ট্যাক্সের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তারা অনেক বুঝে-শোনেই দিয়েছেন। মানুষের ভালোর জন্যই এটা করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:রাজনৈতিক কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বিঘ্ন ঘটলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কুসুমপুর জাগরণী সংসদ মাঠে রোববার বেলা তিনটার দিকে ঢাকা ব্যাংকের কৃষিজ যন্ত্রপাতি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
ওই সময় স্থানীয় ৩০ জন কৃষকের মাঝে শ্যালো মেশিন ও ট্রাক্টর বিতরণ করেন উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের কাউকে ছাড় না দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশে আরও অগ্রসর হতে হবে সাংবাদিকদের।
উপদেষ্টা বিক্রমপুর কুঞ্জবিহারী সরকারি কলেজে তারুণ্য মেলায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শামসুল আলম সরকার, জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার মোহন্ত, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মো. মারুফ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য