কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই সাংবাদিককে হেনস্তা করার অভিযোগ তদন্তে কমিটি করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন)।
কক্সবাজার-১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাঈমুল হক জানান, সোমবার রাতে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তাদের সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট এলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাংবাদিক হেনস্তার অভিযোগ এনে সোমবার সকালে এক প্রেস বিবৃতি দেয় কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংবাদ সংগ্রহের সময় গত রোববার দুপুরে দ্য টেরিটোরিয়াল নিউজের (টিটিএন) প্রধান প্রতিবেদক আজিম নিহাদ ও ভিডিও জার্নালিস্ট লোকমান হাকিমকে হেনস্তা করেন এপিবিএনের একজন সহকারী পুলিশ সুপার, উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সজিব ও কনস্টেবল মো. মতিন।
এই তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
গাজীপুর থেকে চুরি হওয়া ১ হাজার ৯টি কার্টনভর্তি ১০ হাজার ৯০টি টি-শার্টের একটি চালান উদ্ধার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ।
চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশ থানাধীন আতুরার ডিপো এলাকা থেকে মঙ্গলবার বিকেলে তিনটি কাভার্ডভ্যান বোঝাই পণ্য উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় মোশাররফ (২৪), মো. আজাদ (৩৬) ও মো. গণি (২৯) নামের তিন ব্যক্তিকে, যারা কাভার্ড ভ্যানগুলোর চালক।
পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছয়টার সময় গাজীপুরের ট্রপিক্যাল নিটেক্স বিডি লিমিটেডের ১০ হাজার ৯০টি টি-শার্ট একটি সংঘবদ্ধ চক্র চুরি করে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ওই পণ্যগুলো চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে আতুরার ডিপোর দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ জানতে পারে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে বায়েজিদ বোস্তামী থানার একটি চৌকস টিম সংশ্লিষ্ট এলাকায় অভিযান চালায়।
পুলিশ আরও জানায়, অভিযানের একপর্যায়ে কাভার্ড ভ্যানগুলো আতুরার ডিপো চলে যাওয়ার পথে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশের জালে ধরা পড়ে। আটকের স্থানটি পাঁচলাইশ থানাধীন হওয়ায় জ্যেষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আটককৃত চোরাই গার্মেন্টস পণ্য বোঝাই কাভার্ড ভ্যানগুলো এবং আটক তিনজনকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানায় নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাবেক কার্যকরী সভাপতি ও সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদলের কবরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত।
বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী গ্রামে আহমদুল্লাহ খান বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত গাড়ি নিয়ে এসে এ ঘটনা ঘটায়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বোয়ালখালী থানা পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, লাল রঙের একটি মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা শুরুতে বাদলের কবরে ভাঙচুর চালায়। এরপর সেখানে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মইন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান ফেসবুকে লিখেন, ‘কতিপয় সন্ত্রাসী আজ দুপুরে গাড়ি নিয়ে এসে মইন উদ্দীন খান বাদলের পৈত্রিক ভিটার কবরে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়…এখন কবরেও মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে না।’
ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি নিরপেক্ষ সরকারের আমলে যদি মানুষ কবরেও শান্তিতে থাকতে না পারে, তাহলে আমরা কোথায় যাব? আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
‘বাদল কখনও কোনো দুর্নীতির সঙ্গে ছিলেন না। তার কোনো বদনাম নেই। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।’
মইন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যু হয় ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর, যিনি চট্টগ্রাম-৭ ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জাসদের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জে কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনটি বরাদ্দে ১০০টি বেডের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ এলেও জানেন না কৃষকরা।
আলাদা তিনটি স্মারকে বরাদ্দের তিনটি কপি এসেছে নিউজবাংলার প্রতিবেদকের হাতে, যেগুলোর একটিও বাস্তবায়ন করেননি এ কর্মকর্তা।
কৃষকদের জন্য ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বরাদ্দের পুরোটাই এ কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালে একটি স্পেশাল বরাদ্দ আসে কিশোরগঞ্জে। সেটিও এ কর্মকর্তা ভাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এ বরাদ্দে ছিল চার লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এসবের বাইরে কৃষকের মাঠ দিবস, প্রশিক্ষণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেন ২০২৩ সালের ২৮ মে থেকে নিকলী উপজেলায় কর্মরত।
প্রকল্পগুলো কী ও বরাদ্দের পরিমাণ কত
কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের অনুকূলে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ভাসমান বেডে মসলা, লতাজাতীয় ও লতাবিহীন সবজি প্রদর্শনী রাজস্ব ব্যয় বাবদ নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনুকূলে ব্যয় মঞ্জুরিসহ চার লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। লতাজাতীয় ২৩টি প্রদর্শনীর জন্য দুই লাখ ৩০ হাজার (প্রতিটি প্রদর্শনীর ব্যয় ১০ হাজার) টাকা ও লতাবিহীন ২৩টি প্রদর্শনীর জন্য দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০২৪ সালের ২ মে পাওয়া এ বরাদ্দের একটি প্রদর্শনীও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
ভাসমান বেডে লতাজাতীয় সবজি ও লতাবিহীন সবজি প্রদর্শনীর জন্য ২০২৪ সালের ২১ মে নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনুকূলে ব্যয় মঞ্জুরিসহ বরাদ্দ দেয়া হয় তিন লাখ টাকা।
ভাসমান বেডে মসলা প্রদর্শনীতে পাঁচটিতে বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকা (প্রতিটি প্রদর্শনীতে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ)। ভাসমান বেডে লতাজাতীয় সবজি প্রদর্শনীর জন্য ১০টি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় ১ লাখ টাকা। এ ছাড়াও ভাসমান বেডে লতাবিহীন সবজির ১৫টি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় দেড় লাখ টাকা। এখানে ৩০টি প্রদর্শনীতে মোট তিন লাখ টাকা বরাদ্দের একটি প্রদর্শনীও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
একই বছরের ৬ জুন ভাসমান বেডে মসলা প্রদর্শনীর ১১টিতে বরাদ্দ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা (প্রতিটি প্রদর্শনীতে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ)। ভাসমান বেডে লতাজাতীয় সবজি প্রদর্শনীর জন্য ৯টি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় ৯০ হাজার টাকা।
এ ছাড়াও ভাসমান বেডে লতাবিহীন সবজি চারটি প্রদর্শনীতে বরাদ্দ প্রদান করা হয় ৪০ হাজার টাকা। এখানে ২৪টি প্রদর্শনীতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দের একটি প্রদর্শনীও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
কোন খাতে কী বরাদ্দ জানেন না উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, প্রদর্শনীর বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় বাবদ সরকার বরাদ্দ দেয় উপজেলা কর্মকর্তা বরাবর। প্রদর্শনী অনুযায়ী কৃষক নির্বাচন করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে। তারা কৃষক নির্বাচন করে নিশ্চিত করেন উপজেলা কর্মকর্তাকে।
একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে উপসহকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা।
নিয়ম অনুযায়ী, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষক নির্বাচন করে উপজেলা অফিসে জমা দেবেন। পরবর্তী সময়ে কৃষি কর্মকর্তা উপকরণ কিনে নির্ধারিত একটি তারিখে কৃষকদের অফিসে আসতে বলবেন। পরে সেখান থেকে উপকরণ বিতরণ রেজিস্ট্রারে (স্টক রেজিস্ট্রার) সাক্ষর রেখে মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয় কৃষককে। এ ক্ষেত্রে তিনি কোনো উপসহকারীর সঙ্গে সমন্বয় করেননি।
সমন্বয় না করলে প্রদর্শনীতে কী কী উপকরণ বরাদ্দ এসেছে সেগুলো উপসহকারী কর্মকর্তা কিংবা কৃষকদের জানারও সুযোগ থাকে না।
নিকলী সদর ইউনিয়নের ষাইটধার গ্রামের কৃষক মিয়া হোসেন জানান, বিগত দুই বছর পূর্বে ৮০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছিলেন তিনি। তখন ১০ কেজি বীজ, এক বস্তা ইউরিয়া আর এক বস্তা ডিএপি সার ছাড়া কিছুই পাননি। এরপর আর তার অনুকূলে কোনো বরাদ্দ আসেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিকলী উপজেলার গুরই, সিংপুর ও সদর ইউনিয়নের একাধিক কৃষক জানান, অন্যান্য বছর আগস্টের মধ্যেই তাদের ভাসমান বেড তৈরির বরাদ্দ দেয়া হতো। এবার তাদের কাউকেই কোনো প্রকার বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে তারা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করার পর তাদের জানানো হয়েছে, এ বছরের বরাদ্দ আসেনি।
কৃষকরা জানান, বরাদ্দ এলে তাদের দেয়া হবে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
প্রান্তিক কৃষকদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান শুরু করে নিউজবাংলা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের আওতায় আলাদা তিনটি বরাদ্দে ১০০টি বেডের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। আলাদা তিনটি স্মারকে বরাদ্দের তিনটি কপি আসে এ প্রতিবেদকের হাতে, যেগুলোর একটিও বাস্তবায়ন করেননি এ কর্মকর্তা।
অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তার ভাষ্য
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বরাদ্দ আসার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করেন। খানিকটা পর বলেন, ‘কয়েকটা ছোট বরাদ্দ এসেছে। পানি বেশি থাকায় সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অচিরেই সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’
একপর্যায়ে বরাদ্দের কপি দেখানোর পর বিশেষ বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের তৎকালীন উপ প্রকল্প পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বিবেকানন্দ হীরা তার ব্যাচমেট। হঠাৎ একদিন হীরা তাকে ফোনে বলেন, ‘তোমার নামে একটি স্পেশাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তুমি বরাদ্দের টাকাটা উত্তোলন করে আমাকে পাঠিয়ে দাও। অফিসের বিভিন্ন আনুষঙ্গিক খরচে সেটি ব্যয় করা হবে।’ তিনিও তার কথামতো সেটি করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারাও তো বোঝেন, অনেক সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক কিছুই করতে হয়। আমিও সেটি করেছি।
‘তারপরও বিষয়টি যেহেতু আপনাদের নজরে চলে এসেছে আমি তার সাথে কথা বলে অচিরেই বাস্তবায়ন করে নেব।’
এ কথার একপর্যায়ে তিনি ফোনে কথা বলেন হীরা নামের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে।
সাখাওয়াত তাকে বলেন, ‘তুমি যে একটা স্পেশাল বরাদ্দ দিয়েছিলে, সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেছে।’
নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আরও আছে। এর আগে এ কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায়। সেখানেও তার বিরুদ্ধে কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ, সার, বীজসহ বিভিন্ন প্রণোদনার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে।
এ বিষয়ে জাতীয় একটি পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। পরে সেখান থেকে তাকে বদলি করা হয় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে, তবে সেখানে গিয়ে বেশি দিন থাকতে হয়নি তার। তিনি চলে আসেন কিশোরগঞ্জের নিকলীতে।
মোহনগঞ্জে থাকা অবস্থায় অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেখানে কোনো প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি করেননি বলে দাবি করেন সাখাওয়াত।
এ কর্মকর্তার দাবি, সেখানকার এক সাংবাদিক তার কাছে থেকে অনৈতিক সুবিধা নিতে চেয়েছিলেন। দেননি বলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন।
যা বললেন তৎকালীন উপ প্রকল্প পরিচালক
কৃষি সম্প্রসারণের আওতাধীন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের তৎকালীন উপ প্রকল্প পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বিবেকানন্দ হীরার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ প্রকল্পের মেয়াদ আগস্টেই শেষ হয়ে যায়। এ প্রকল্পের সবকিছুই ক্লোজ হয়ে গেছে। তিনিও বর্তমানে এ প্রকল্পের দায়িত্বে নেই।
তিনি জানান, তার জানা মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দও কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। তারপরও যদি কোনো কর্মকর্তা সেটি বাস্তবায়ন না করে আত্মসাৎ করে থাকেন, তবে এর দায়ভার একান্তই তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপপরিচালকের ভাষ্য
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যদি কোনো কর্মকর্তা এ ধরনের অনিয়ম বা আত্মসাৎ করে থাকেন এবং তদন্তে এসবের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।’
আরও পড়ুন:দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে নতুন শুল্কায়নে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।
এর ফলে পেঁয়াজের দাম শিগগিরই কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান মঙ্গলবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত আটটা নাগাদ নতুন শুল্কায়নে ভারতীয় চারটি ট্রাকে ১২৩ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে।
হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ এবং রপ্তানিমূল্য টনপ্রতি ৫৫০ ডলার থেকে ১৪৫ ডলার কমিয়ে ৪০৫ ডলার নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি কাস্টমস সার্ভারে সংযুক্ত না হওয়ায় গত ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার ভারতের সার্ভারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি সংযুক্ত হওয়ায় সেই জটিলতা কাটিয়ে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বেড়ে দাম কমবে বলে প্রত্যাশা আমদানি-রপ্তানিকারক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের।
এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সংকটের অজুহাতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। এরপর গত মার্চ মাসে অনির্দিষ্টকালের জন্য দ্বিতীয় দফায় নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত সরকার।
ভারতের ওই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়ায় দফায় দফায় দাম বাড়তে থাকে। এরপর প্রায় ৫ মাস পর গত ৪ মে ন্যূনতম ৫৫০ ডলার রপ্তানি মূল্য এবং ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারণ করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ভারত সরকার।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম শহিদ জানান, নতুন নিয়ম সার্ভারে সংযুক্ত হওয়ায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক কমে আসবে বলে তারা আশা করছেন। ফলে পেঁয়াজের দাম বাজারে অনেকাংশে কমে আসবে।
স্থলবন্দর উদ্ভিদ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী জানান, হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহ বাড়িয়েছেন। মঙ্গলবার নতুন করে আরও চার ব্যবসায়ী এলসি খুলেছেন। এসব পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করলে পণ্যটির বাজারদর নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে মানববন্ধন ও শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর বিকেল ৪টায় আবার প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বিশ্বিবদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আজকের (১৭ সেপ্টেম্বর) মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি নিয়োগ দিতে হবে। অন্যথায় আগামীকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভিসি নিয়ে নয়-ছয় আর নয় আর নয়, ‘ঢাবি রাবি ভিসি পেল, চবি কেন পিছিয়ে গেল’, ‘আর নয় বিজ্ঞাপন, দিতে হবে প্রজ্ঞাপন’, ‘ঢাবি রাবি স্বর্গে, চবি কেন মর্গে’, ‘শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য, ভিসি হবে দক্ষ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ভিসি নিয়োগের একটি গুঞ্জন শোনা যায়। রোববার ভিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন আসার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত আসেনি। আমাদের সাথে এই প্রজ্ঞাপন-প্রজ্ঞাপন খেলা বন্ধ করুন। ভিসি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই কর্মসূচি চলবে।’
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ’আমরা ক্লাসে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি কিন্তু এখনও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। আমরা কি আন্দোলনই করে যাব শুধু?
‘বাংলাদেশের অন্য সব স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ দেয়া হলেও আমরা এখনো ভিসি পাইনি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ অতিসত্বর ভিসি নিয়োগ দিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার। আমরা শিক্ষার্থী, আমাদের জায়গা হচ্ছে পড়ার টেবিলে। আমাদেরকে পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে নিন।’
আরও পড়ুন:নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন জারি রাখার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর আলমাস মোড়ে গণতন্ত্রের শোভাযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপি।
সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি আলমাস মোড় হয়ে কাজীর দেউরী, লাভ লেইন, জুবলী রোড, নিউমার্কেট, কোতোয়ালি হয়ে লালদিঘি পাড়ে গিয়ে শেষ হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে সমাবেশটি পরিচালনা করেন সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান।
কর্মসূচিতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, জয়নাল আবদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় শোভাযাত্রার সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবর্তন আমরা করেছিলাম। তা হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। সেই কেয়ারটেকার সরকার বিলুপ্ত করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নতুনভাবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রবর্তন করেন।
‘অন্তহীন সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, রক্ত, শ্রম আর প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশের মানুষ পুনরায় স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই স্বাধীনতা, এই গণতন্ত্রের জন্য যারা যুদ্ধ করেছে, বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম শহীদ রংপুরের সাঈদ। দ্বিতীয় শহীদ চকরিয়ার পেকুয়ার সন্তান, আমার সন্তান ওয়াসিম।’
তিনি বলেন, ‘সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামে-আন্দোলনে, যুদ্ধে চট্টগ্রাম সবসময় নেতৃত্ব দিয়েছে। আপনারা যদি মনে করেন যে সবকিছু এমনি এমনি এসেছে, তাহলে এটা ভুল কথা। এই গণঅভ্যুত্থানে, এই গণবিপ্লবে শহীদদের মধ্যে ৪২২ জন বিএনপির নেতাকর্মী। ১১৩ জনের বেশি ছাত্রদলের নেতাকর্মী।
‘এই আন্দোলন সংগ্রামে সাতশ’র বেশি মানুষ গুম-খুনের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৪২৩ জন শুধু বিএনপির নেতাকর্মী। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে দুই হাজার ৭০০ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, বিচারবর্হিভূত হত্যার শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে শত শত মানুষ বিএনপির নেতাকর্মী।
তিনি বলেন, ‘এত রক্ত, এত ঘাম, এত প্রাণ, এত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি বাংলাদেশে নতুন স্বাধীনতা দিবস, বাংলাদেশের নতুন গণতন্ত্র দিবস। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে।
‘কিন্তু গণতন্ত্র, এই নতুন স্বাধীনতা, এই বিজয়কে যদি আপনারা অর্থবহ করতে চান, তাহলে ধৈর্য্য ধরতে হবে। আন্দোলন জারি রাখতে হবে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করতে হবে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যতদিন পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, সংসদ প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা রাজপথে এই আন্দোলন অব্যাহত রাখবো।’
বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশে গণহত্যাকারীদের আর কোনোদিন জায়গা হবে না। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের, গণহত্যাকারীদের কোনো রাজনীতি চলবে না। যদি গণহত্যাকারীদের রাজনীতি চলে, তাহলে বাংলাদেশ আবার পরাধীন হবে। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের এখানে তাঁবেদারি চলবে না।
‘যদি সত্যিকারভাবে স্বাধীন-সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাইলে শহীদদের রক্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমাদের পরস্পরের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। কেউ আইনের চেয়ে বড় নন।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাবৃন্দকে আহ্বান জানাই, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনমুখী সংস্কার সাধন করুন এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, বিগত ১৭ বছর নির্যাতনের পরও বিএনপিকে স্তব্ধ করতে পারেনি। আগামী ১৭ বছর চেষ্টা করলেও পারবে না। রাত যত গভীর হয় ভোর তত নিকটে আসে।
‘আওয়ামী লীগ মনে করেছিল ভোর বুঝি আর হবে না। কিন্তু সকাল ঠিকই হয়েছে। শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। হাসিনার মত স্বৈরশাসক ইতিহাসেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তাই বলে আমাদের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের কেউ যেন আশ্রয় না পায়। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেক টাকা। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’
আবুল খায়ের ভূইয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশকে ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। নির্বাচনকে নির্বাসনে পাঠিয়ে জবরদস্তির শাসন কায়েম করেছিল। জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিতদের শাসন ফিরিয়ে আনাই হবে রাষ্ট্রের বড় সংস্কার।’
জয়নাল আবদীন ফারুক বলেন, ‘স্বৈরাচারের পতনের পর গণতন্ত্রের পথে নতুন করে অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রের অতি জরুরি কিছু সংস্কার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংসদ ও সরকার গঠন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। উন্নয়ন যেমন গণতন্ত্রের বিকল্প নয়, তেমনই সংস্কারও ভোটের বিকল্প নয়।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য যেসব সংস্কারের পদক্ষেপ নিতে হবে এবং যতটুকু সময় প্রয়োজন সে পর্যন্ত অন্তর্বতীকালীন সরকারকে বিএনপি সমর্থন দেবে।
বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত শোভাযাত্রা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর রায় এসব কথা বলেন।
সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার না হওয়ার সমালোচনা করেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম এই সদস্য।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের নামের মামলাগুলো তো প্রত্যাহার করে নিলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধের মামলাগুলো কেন এতোদিনেও প্রত্যাহার করে নিলেন না।
‘গত ১৬ বছরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পতন আন্দোলনে কি আমরা রক্ত দেইনি? আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী খুন হয়েছে, গুম হয়েছে। বৈষম্যহীন সংস্কারের নামে নতুন করে বৈষম্যের সৃষ্টি করবেন না।’
বিএনপি ও তারেক রহমান সম্পর্কে দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা না বলার হুশিয়ারি উচ্চারণ করে গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘আমাদেরকে বিরোধী দলে ঠেলে দেবেন না। উস্কানিমূলক মন্তব্য করলে দলের নেতাকর্মীরা চুপ করে বসে থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করেছে। তাকে ১৬ দিনের হিসাবে বিচার করলে চলবে না। সরকারের পতন হয়েছে, কিন্তু জনগণ এখনও গণতন্ত্র ফেরত পায়নি।
‘ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজের হাতে না দেয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। এতোদিন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছি। এখন অদৃশ্য ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করতে বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থকরা প্রস্তুত।’
আইন উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অবিলম্বে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
বিএনপির বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘জনপ্রশাসন উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সূক্ষ্মভাবে আওয়ামী দোসরদের দিয়ে প্রশাসন সাজাচ্ছেন। এর ফল ভালো হবে না।
‘শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী দোসরদের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলকে ধূলিসাৎ করে নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করে গণহত্যাকারীদের ফিরে আসার পথ সুগম করছেন।’
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের গেল ১৬ বছরে খুলনার খালিশপুরে বন্ধ সব পাটকল চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। আওয়ামী স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
‘বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে- যেন স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা দেশে আবারও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও গণহত্যা চালাতে না পারে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির জাতীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, ‘সংগ্রাম কিন্তু শেষ হয়নি। সব ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে হবে।
‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন করি। এই সরকারের ব্যর্থতা মানে বাংলাদেশের ব্যর্থতা। এই সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠনের দিকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
নগরীর শিববাড়ী মোড়ে জিয়া হলের সামনে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শিববাড়ী মোড় থেকে লোয়ার যশোর (খান এ সবুর) রোড হয়ে পাওয়ার হাউজ মোড়, ফেরিঘাট মোড়, ডাকবাংলো মোড়, পিকচার প্যালেস মোড় হয়ে খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দান, খুলনা জিলা স্কুলের সামনে ঘুরে কে.ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
দুপুর গড়াতেই বিভাগের ১০ জেলার বিভিন্ন ইউনিট থেকে আসা বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এতে অংশ নেন।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এসএম শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবীব, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য