করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় দেশে পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৫ হাজার ৯৪৫ কোটি (৫৯.৪৬ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি।
বর্তমান বিনিময়হার হিসেবে (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ২০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৫ লাখ ১২ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা। এই অঙ্ক চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ৮৫ শতাংশ।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে এমন উল্লম্ফন দেখা যায়নি। আর এতে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও চাপের মধ্যে রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আমদানির লাগাম টানার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে সরকার ও দেশবাসীকে অনুরোধ করেছেন তিনি। সবাইকে সাশ্রয়ী হতে বলেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার পণ্য আমদানির এলসি-সংক্রান্ত হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, এই সাত মাসে গড়ে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় সেসব দেশের মানুষ আগের মতো পণ্য কেনা শুরু করেছেন। দেশের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব ধরনের পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গেছে।
সে চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা নতুন উদ্যমে উৎপাদন কর্মকাণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সে কারণেই শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ (ক্যাপিটাল মেশিনারি) সব ধরনের পণ্য আমদানিই বেড়ে গেছে; বেড়েছে এলসি খোলার পরিমাণ।
এ ছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ অন্য সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এলসি খুলতে বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে বলে জানান তারা।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানির জন্য ৬ হাজার ৭০৪ কোটি (৬৭.০৪ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছিলেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। ওই অঙ্ক ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এলসি খুলতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা খরচ হয়েছে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড় ও অন্য পণ্য আমদানিতে; সেটা ৮৫০ কোটি ৫৪ লাখ (৮.০৫ বিলিয়ন) ডলার, গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৪৭ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।
সুতা আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৩৪১ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১০ শতাংশ। তুলা ও সিনেথেটিক ফাইবার আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ২৮৭ কোটি ২২ লাখ ডলারের। বেড়েছে ৩৮ শতাংশ।
রাসায়নিক দ্রব্য ও সার আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৩৭০ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ ছাড়া ওষুধের কাঁচামালের এলসি খোলা হয়েছে ৭৮ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের; বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৪ শতাংশ।
মূলধনি যন্ত্রপাতি বা ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির জন্য ৪৬৫ কোটি ২৮ লাখ ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা। বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৫৫৪ কোটি ৮৩ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ২৫২ কোটি ৫৭ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, ১০৫ দশমিক ১৪ শতাংশ।
খাদ্যপণ্যের মধ্যে চাল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৩২ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের; কমেছে ১৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গম আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ১৪৪ কোটি ১২ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি ৩১ দশমিক ৫১ শতাংশ।
চিনি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলারের। প্রবৃদ্ধি ৯৩ শতাংশ। ভোজ্যতেল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ১৪২ কোটি ৬২ লাখ ডলারের; বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
এ ছাড়া অন্যান্য পণ্য ও শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ৫৫০কোটি ৬৯ ডলারের; বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ৩৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য মোট ৫৬ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল, যা ছিল আগের (২০১৮-১৯) অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ২১ শতাংশ কম।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক হয়েছে আর নয়। আমাদের কোমরের বেল্টটা এখন টাইট করতে হবে। যে করেই হোক আমদানি কমাতেই হবে। এছাড়া এখন আর অন্য কোনো পথ খোলা নেই।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণভাবে অর্থনীতিতে আমদানি বাড়াকে ইতিবাচকভাবে দেখা হয়ে থাকে। বলা হয়, আমদানি বাড়লে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। এতোদিন আমরাও সেটা বলে আসছি। কিন্তু এখন অসনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। ৫০ শতাংশ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা আমাদের অর্থনীতির নেই। এখন এটা কমাতেই হবে। তা না হলে বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়ব আমরা।’
তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ায় সরকারের জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কয়েকগুণ বেড়েছে গেছে। একইসঙ্গে গ্যাসে ভর্তুকি বেড়েছে, সারে বেড়েছে। বিদ্যুতে বেড়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এবার ভর্তুকি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বাজেট ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের চাপ পড়বে।’
এক্ষেত্রে এখন করণীয় কী- এ প্রশ্নের উত্তরে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা আহসান মনসুর বলেন, ‘সরকারকে সাশ্রয়ী হতে হবে। একই সঙ্গে দেশের মানুষকেও সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কম খরচ করতে হবে। আমাদের অনেক কিছুই কিন্তু জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরশীল। গ্যাস, বিদ্যুৎ, সার, পানি- এ সব কিছু উৎপাদনে তেলের প্রয়োজন হয়। এই সংকটের সময়ে এ সব কিছু যদি মানুষ কম ব্যবহার করে।
‘পরিবহন খাতে যদি জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমানো যায়, তাহলে আমদানি খাতে খরচ কমবে। সরকারের ভর্তুকি কমবে। অন্যদিকে বিলাসবহুল পণ্য যাতে কম আমদানি হয়, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। প্রয়োজন নেই এমন পণ্য আমদানি থেকে এখন বিরত থাকতে হবে।’
এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি দিকনির্দেনা দেয়া উচিত বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল তেলের দাম; একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেলের দর ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এখন বিশ্ববাজারে তেলের দর নিম্নমুখী; তাও ১০০ ডলারের উপরে অবস্থান করছে।
রিজার্ভে টান
আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি রিজার্ভ বা সঞ্চয়নও কমছে। রোববার দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ৪৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসেবে এই রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
অথচ গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল, যা ছিল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ওই সময়ে প্রতি মাসে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসেবে ১০ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।
আরও পড়ুন:দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই (জানুয়ারি-মার্চ) বেড়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।
গত বছরের মার্চে ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।
ব্যাংক খাতে মোট ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশই বর্তমানে খেলাপি। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ৫৭ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৫ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
অন্যদিকে বিদেশি ব্যাংকগুলোর তিন হাজার ৪২ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ ঋণ খেলাপি। আর সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের মোট ঋণের ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ বা ৪ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা বর্তমানে খেলাপি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলো এখন নিজেরাই নিজেদের ঋণ পুনঃতফসিল করছে। ফলে ব্যাংক নিজেই খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে। তাই খেলাপি ঋণের এ তথ্য প্রকৃত চিত্র নয়। বাস্তবে খেলাপি ঋণ আরও বেশি হতে পারে। অনেক ব্যাংক ঋণ আদায় করতে না পেরে তারল্য-সংকটে ভুগছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মার্চে খেলাপি ঋণ দেয়ায় অনেক ব্যাংক দেরি করেছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ কমানোর ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কাজ করছে। ফলে বাস্তবে খেলাপি ঋণ এর চেয়েও বেশি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা হলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে তা প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। কারণ, আইএমএফ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি দেখানোর পক্ষে।
সরকার আইএমএফের কাছে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সফর করে। তার অংশ হিসেবে আইএমএফের মিশন প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে নানা পরামর্শ দেয় আইএমএফ। সে সময় খেলাপি ঋণকে ব্যাংক খাতের অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না সে বিষয়েও জানতে চায় বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার তাগিদ দেয় আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘বিতরণ করা এসব ঋণের বেশিরভাগই অসৎ উপায় অবলম্বন করে দেয়া হয়েছে। এমন লোকদের ঋণ দেয়া হয়েছে, যারা পরবর্তী সময়ে এসব টাকা আর পরিশোধ করছে না।
‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ এসব ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে জড়িত থাকে। এসব ঋণ এখন আর ফেরত আসছে না। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দিন দিন খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। আর্থিক খাত দুর্বল হওয়ার কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আর্থিক খাতে নানা রকম কেলেঙ্কারি সংঘটিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব খেলাপি ঋণের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। যেসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি, সেসব বিষয়ে তারা এড়িয়ে যায়।’
আহসান মনসুর বলেন, ‘যারা ভালো কাজ করে তাদেরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শাস্তি দেয়। আর যারা খারাপ কাজ করে তাদের বিষয়ে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয় না।’
আরও পড়ুন:রাষ্ট্র মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশে রেমিট্যান্স আয় বাড়াতে বিশেষ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে।
রোববার ‘রূপালী ব্যাংক রেমিট্যান্স সেবা কর্মসূচি’ শীর্ষক এ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী ছানাউল হক ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
এ সময় কাজী ছানাউল হক দেশের স্বার্থে গ্রাহকদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি রূপালী ব্যাংকে রেমিট্যান্স প্রেরণে উৎসাহিত করাই এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য।’
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘রূপালী ব্যাংকের পুরনো রেমিট্যান্স গ্রাহকদের ব্যাংকে ফিরিয়ে আনা এবং নতুন গ্রাহক সৃষ্টি করাই এ ক্যাম্পেইনের মূল উদ্দেশ্য। রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে।’
ক্যাম্পেইনটি ২৮ মে শুরু হয়ে শেষ হবে ২৭ জুন।
আগামী এক মাসে প্রবাসীরা রূপালী ব্যাংকে টাকা পাঠালেই পাবেন লটারি জেতার সুযোগ।
ক্যাম্পেইন চলাকালে প্রতি সপ্তাহে রূপালী ব্যাংকের রেমিট্যান্স গ্রাহকদের মধ্যে লটারি হবে। প্রতি সপ্তাহে পাঁচজন বিজয়ী হবেন।
লটারির পুরস্কার হিসেবে রয়েছে পাঁচটি ১০০ সিসি মোটরসাইকেল, পাঁচটি ৪০ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি, পাঁচটি মাইক্রোওয়েভ ওভেন, পাঁচটি স্মার্টফোন ও পাঁচটি ডিনার সেটসহ ২৫টি পুরস্কার।
এই উদ্যোগের ফলে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হবে, যা ডলার সংকটের মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি বয়ে আনবে।
ক্যাম্পেইন চলাকালে রূপালী ব্যাংকের সব শাখা ও উপশাখার মাধ্যমে বিতরণ করা ক্যাশ রেমিট্যান্সের বেনিফিসিয়ারীরা ও যে সব গ্রাহক বিদেশ থেকে রূপালী ব্যাংকের চুক্তিবদ্ধ এক্সচেঞ্জ হাউস/ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি রেমিট্যান্স পাঠাবেন, তারা পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য লটারিতে অংশগ্রহণের জন্য বিবেচিত হবেন।
প্রতি সপ্তাহ শেষে পরবর্তী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লটারির ড্র হবে।
লটারি বিজয়ীদের নাম রূপালী ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজে প্রচার করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের ডিএমডি তাহমিনা আখতার ও হাসান তানভীর, মহাব্যবস্থাপক মো. হারুনুর রশিদ, মো. ফয়েজ আলম, মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান ও মো. ইসমাইল হোসেন শেখ প্রমুখ।
আরও পড়ুন:জাপান থেকে বাগেরহাটের মোংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আনা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১৪৭টি গাড়ি নিলামে তোলা হচ্ছে।
আমদানির পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছাড় না হওয়ায় মোংলা কাস্টম হাউস গাড়িগুলো বিক্রির জন্য নিলামে তুলছে। ৫ জুন নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হবে।
প্রতি মাসে নিলাম প্রক্রিয়ার নিয়ম থাকলেও নানা জটিলতায় চার মাস পর এই নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলে জানায় মোংলা কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ।
মোংলা কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, গত চার মাস মোংলা বন্দরে গাড়ির নিলাম বন্ধ ছিল। গত বছরের নভেম্বরে নিলামকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
সর্বশেষ কাস্টমের নিয়োগকৃত নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ছিল ‘আল আমিন ট্রেডার্স’।
এরপর নিলামকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজতে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হয়। তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক কমমূল্য কমিশন দাখিল করে।
আবার ২৮ মার্চ দরপত্র আহ্বান করা হলে ছয়টি প্রতিষ্ঠান কমিশন দাখিল করে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের কে এম করপোরেশনকে কোম্পানি নিয়োগ দেয়া হয়। এরাই ৫ জুনের নিলামের আয়োজন করছে।
মোংলা কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা ছবি রাণী দত্ত জানান, মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি করা এসব গাড়ি ৩০ দিনের মধ্যে ছাড় করানোর নিয়ম থাকলেও সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকরা তা করেনি।
এরপর আমদানিকারকদের আরও ১০ কার্যদিবস সময় দেয়ার পরও গাড়ি ছাড় না করায় নিয়মানুযায়ী পর্যায়ক্রমে নিলামে ওঠানো হচ্ছে এসব গাড়ি।
নিলামে ওঠা এসব গাড়ির মধ্যে নিশান, পাজারো, এক্সিও হাইব্রিড, পিয়ার্স হাইব্রিড, টয়োটা ভিজ, প্রোবক্স, এ্যাকুয়া হাইব্রিড, টয়োটা হাইব্রিড, করোলা ফিল্টার, হাইয়েচ, মাইক্রো ও অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১৪৭টি গাড়ি রয়েছে।
গাড়ির নিলামে অনলাইন থেকে বিড করা যাবে। এ ছাড়া নিলামে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতার তালিকা প্রকাশের পর গাড়িগুলো বিক্রি হবে।
নিলামে ওঠা গাড়ির মধ্যে ১৯৯৩, ৯৬, ৯৭, ৯৮, ৯৯, ২০০৬, ৭, ৮, ৯, ১১, ১৩, ১৭, ১৮. ১৯, ২০, ২১ ও ২২ সালের বিভিন্ন মডেলের গাড়ি রয়েছে।
৩১ মে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই নিলামের প্রস্তাবিত মূল্য গ্রহণ করা হবে।
মোংলা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মাহফুজুর রহমান জানান, মোংলা কাস্টমের রাজস্ব আয়ের শতকরা ৫২ শতাংশ আসে আমদানি করা গাড়ির শুল্ক থেকে। দীর্ঘদিন আমদানি করা গাড়ি বন্দরে পড়ে থাকলে অন্যান্য পণ্য রাখায় সমস্যা তৈরি হয়। নিলাম প্রক্রিয়া চালু রাখলে গাড়ি বা অন্যান্য পণ্য রাখতে ব্যবসায়ীদের সুবিাধার পাশাপাশি সঠিক সময় সরকারের রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার মো. কুদরত আলী বলেন, ‘জাপান থেকে মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি শুরু হয় ২০০৯ সালের ৩ জুন। প্রথম চালানে এ বন্দর দিয়ে ২৫৫টি গাড়ি আমদানি করা হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত মোংলা বন্দর দিয়ে ২২ হাজার ৪৩৭টি গাড়ি আমদানি করা হয়। যা মোট আমদানি গাড়ির শতকরা ৬০ ভাগ।’
এদিকে এই নিলাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারবিডা) সভাপতি হাবিবুল্লা ডন।
তিনি বলেন, ‘একদিকে বৈশ্বিক মন্দা চলছে, সরকারি সংস্থা ও ব্যাংকগুলো গাড়ি কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোও এখন গাড়ি কিনছে না। এর মধ্যে নিলাম আমাদের আরেকটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।’
আরও পড়ুন:দেশের বাজোরে স্বর্ণের দাম কিছুটা কমেছে। ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের ভরির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৬ হাজার ৬৯৫ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) রোববারের এ সিদ্ধান্ত সোমবার থেকে কার্যকর হবে।
বাজুসের এক সদস্য নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, এতদিন ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের ভরি ছিল ৯৭ হাজার ১৬১ টাকা। নতুন দাম অনুযাী এই স্বর্ণ বিক্রি হবে ৯৬ হাজার ৬৯৫ টাকা ভরি।
নতুন দর অনুযায়ী, ২১ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি ৯২ হাজার ৩২১ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৭৯ হাজার ১৪০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের ভরি ৫৬ হাজার ৯৬০ টাকা।
আগের হিসাবে ২১ ক্যারেট স্বর্ণে ভরি ৯৩ হাজার ৯৫৪, ১৮ ক্যারেট ৮০ হাজার ৫৪০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের ভরি ছিল ৬৭ হাজার ১২৬ টাকা।
স্থানীয় বাজারে পাকা স্বর্ণের দাম কিছুটা কমায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ হয়েছে বলে বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
স্বর্ণের দাম কমলেও রুপার দাম আগের মতই আছে। সোমবার থেকে হলমার্ক করা ২২ ক্যারেট রুপার দাম প্রতি ভরিতে ১ হাজার ৭১৫ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ হাজার ৬৩৩ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৪০০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপা বিক্রি হবে ১ হাজার ৫০ টাকায়।
এর আগে সর্বশেষ গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ২৮৩ টাকা বাড়ানো হয়।
আরও পড়ুন:
এশিয়া মার্কেটিং ডে-২০২৩ এবং আধুনিক মার্কেটিংয়ের জনক ফিলিপ কটলারের ৯২তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে শনিবার বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ১৭টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে এশিয়ান মার্কেটিং ফাউন্ডেশন। বাংলাদেশে এই অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করে মার্কেটিং সোসাইটি অফ বাংলাদেশ।
মহতী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম ছিল কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ (সিইউবি)।
বাংলাদেশের তরুণদের আরও ক্ষমতায়িত করা এবং স্মার্ট নাগরিকের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্য নিয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের মূল উপজীব্য ছিল ‘স্মার্ট জাতি ও স্মার্ট নাগরিক সৃষ্টিতে মার্কেটিংয়ের ভূমিকা’।
সেমিনারের লাইভ প্যানেলে প্রধান বক্তা হিসেবে অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন আধুনিক মার্কেটিংয়ের জনক ফিলিপ কটলার। সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে মার্কেটিং দুনিয়ার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
সিইউবি অংশে অনুষ্ঠানটির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র অধ্যাপক প্রফেসর মুহাম্মদ রিদওয়ানুল হক।
লাইভ প্যানেল সেশনের মেম্বার হিসেবে সিইউবি’র পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এইচ এম জহিরুল হক। আরও উপস্থিত ছিলেন স্কুল অফ বিজনেসের ডিন ড. জহুরুল আলম ও স্কুল অফ বিজনেসের প্রধান এস এম আরিফুজ্জামান।
সেমিনারে লাইভ প্যানেল সেশনের মেম্বার হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট অফ মার্কেটিংয়ের অনারারি সেক্রেটারি হাসলিনা বিন্তি আযলান এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ-এর মহাপরিচালক ও চিফ ইনোভেশন অফিসার ড. সৈয়দ মুনতাসির মামুন।
আরও পড়ুন:ইরানের নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের উদ্বেগের জবাব দিয়েছে ইসলামী প্রজাতন্ত্রটি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে নিজ অ্যাকাউন্টে শুক্রবার এক পোস্টে ইরানের অবস্থান তুলে ধরেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি।
ইরানভিত্তিক সংবাদ সংস্থা তাসনিমের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার ইরান ‘খাইবার’ তথা ‘খোরামশহর ৪’ নামের ক্ষেপণাস্ত্রটি উন্মোচন করে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পশ্চিমা রাষ্ট্র দুটি।
কানানি তার পোস্টে বলেন, ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন সরকার ইরানের বিভিন্ন শহর ও নিরীহ মানুষের ওপর যে ‘সামরিক আগ্রাসন’ ও বোমা হামলা চালিয়েছিল, তাতে উসকানি ও অস্ত্রের জোগান দেয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের। দেশ দুটি মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্রের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক। তারাই এখন ইরানের উন্নতি ও প্রতিরক্ষা শক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
কানানির ভাষ্য, পশ্চিমা সরকারগুলো ইরানকে শক্তিশালী অবস্থায় দেখতে চায় না।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর খোররামশহর মুক্ত হওয়ার ৪১তম বার্ষিকীতে ইরান খাইবার নামের মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রটি উন্মোচন করে। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা আশতিয়ানি।
খাইবার তরল জ্বালানিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র, যেটি ২ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এটি দেড় হাজার কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহনে সক্ষম।
ক্ষেপণাস্ত্রটি উন্মোচনের দিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও সংখ্যাবৃদ্ধি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।
ফ্রান্সের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইরানের এমন তৎপরতা জাতিসংঘের প্রস্তাবের লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন:দেশের অর্থনীতি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২২-২৩: তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শিরোনামে পর্যালোচনায় সিপিডি বিষয়টি জানিয়েছে।
ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে শনিবার বেলা সোয়া ১১টার পর থেকে পর্যালোচনাটি তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
বাহ্যিক চ্যালেঞ্জ
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমরা দেখছি যে, আমাদের যে অর্থনীতি বর্তমানে এগোচ্ছে, সেখানে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ প্রতিভাত হচ্ছে। আমরা কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। এখন যে গতিধারাটা আমরা দেখছি, বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ কঠিন কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। একটি হচ্ছে বাহ্যিক, আরেকটি হচ্ছে অন্তর্নিহিত বা ভেতরের।
‘বাহ্যিক যে কারণগুলো আমরা দেখি, আমরা শুরু করেছিলাম সেই কোভিডের সময় থেকে। ২০২০ সালে যখন কোভিড প্যানডেমিকের (করোনাভাইরাস মহামারি) প্রতিঘাত সেটি এবং সেটা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মুখোমুখি হই ২০২০-এর ফেব্রুয়ারি মাসে এবং এই ফ্যাক্টরগুলো, এই অনুঘটকগুলোর কারণে আমরা দেখছি যে, আন্তর্জাতিক বাজারে যে পণ্যের মূল্য, সেটি অত্যন্ত উচ্চ দিকে, ঊর্ধ্বগতির দিকে গিয়েছিল এবং তার ফলে আমদানি পণ্যমূল্য বেড়ে যায় এবং আমদানি যে মূল্যস্ফীতি, আমদানির মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি সেটা এবং তা ছাড়া আমাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে একটা ব্যাঘাত ঘটেছিল, সেটার কারণে কিন্তু এই মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে এবং অন্যান্য চ্যালেঞ্জ আমাদের এখানে দেখা দিচ্ছে।’
অন্তর্নিহিত চ্যালেঞ্জ
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আর অভ্যন্তরীণ যে কারণগুলো, সেগুলো তো আমরা দেখছি…আমাদের অন্তর্নিহিত যে কাঠামোগত দুর্বলতা, অর্থনীতিতে এবং নীতি নেয়ার ক্ষেত্রে একটা পূর্ণাঙ্গ নীতি না, কিছু কিছু সঠিক নীতিমালার একটা অভাব এবং যে নীতিগুলো নেয়া হয়, সেগুলো বাস্তবায়নেরও দুর্বলতা এবং তা ছাড়া সুশাসনের ঘাটতি এবং আমরা যে সমস্ত সংস্কারের কথা বলছি, সেই সংস্কার বাস্তবায়নের ব্যর্থতার কারণেও কিন্তু আমরা অনেক সমস্যাগুলো এখন দেখছি, যেগুলো খুব গুরুতরভাবে প্রতিভাত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু ২০২২-এর জুলাই মাস থেকেই এই যে অর্থনীতির যে দুর্বলতাগুলি কোথায় এবং সেখানে প্রেশার পয়েন্টগুলো কোথায় এবং এগুলো যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা প্রভাব ফেলবে, সেগুলোর ব্যাপারে কিন্তু ক্রমাগতভাবে বলে এসেছি এবং ২০২৩ অর্থবছরের সামষ্টিক অর্থনীতির যে স্ট্রেসগুলো, অভিঘাতগুলো, সেগুলো যদি আমরা দেখি, সেগুলোর মূল মূল জায়গাগুলো কীভাবে প্রতিভাত হচ্ছে?
‘একটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন। সেখানে কিন্তু আহরণ কম এবং যার ফলে আমাদের রাজস্বের ক্ষেত্রে একটা স্বাধীনতা, ফিসকাল স্পেস, সেখানে কিন্তু একটা সংকোচন ঘটছে এবং তার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়াটা বাড়ছে সরকারের। সরকারের যে বাজেট ঘাটতি, সে ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার ব্যাপকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে এবং তা ছাড়া যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে, সেখানে আমরা দেখছি যে তারল্যের একটা নিম্নগতি এবং প্রাইসের কথা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতির কথা, লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি এবং সেটিও আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
বহিঃখাত
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘…আমাদের যে বহিঃখাত, সেই বহিঃখাতের যে ভারসাম্য, সেটার ক্ষেত্রে একটা অধোগতি, নিম্নগতি, এই ভারসাম্যের ক্ষেত্রে এবং তার পাশাপাশি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে একটা নিম্নগতি দেখা যাচ্ছে এবং এর মধ্যে আমরা দেখছি যে, এই প্রেক্ষিতটার কারণেই, এই স্ট্রেসগুলোর কারণে আমরা দেখছি যে, আমরা এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণ নিয়েছি, যাতে কিনা আমাদের যে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, সেটা আমরা ফিরে পাই।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য