ঘুষ আর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হওয়া ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি নয়া উপপরিচালকের নির্দেশে স্বচ্ছ হয়েছে বলে গুণকীর্তন ছড়িয়ে দিয়েছে কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, এখন আর দালালের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে পাসপোর্ট করতে হয় না। দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আসলেই কি তাই? এর সত্যতা খুঁজতে টানা ১৫ দিন অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অনিয়ম-দুর্নীতির নানা তথ্য।
আঞ্চলিক এই পাসপোর্ট অফিসের বর্তমান উপপরিচালক হাফিজুর রহমান। তিনি গত বছরের ১৪ অক্টোবর ওই পদে যোগ দেন। এরপর কার্যালয়ের সামনে বড় করে প্যানা টানিয়ে দেন তিনি।
সেখানে লেখা হয়, ‘আপনার পাশে আমরা। পাসপোর্ট করতে এসে কোনো ধরনের ভোগান্তি সৃষ্টি হলে ২০৬ নম্বর কক্ষে সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’
এমন লেখায় কার্যালয়টির পুরোনো চেহারা পাল্টাবে- এমনটাই প্রত্যাশা করেছিল সেবাগ্রহীতারা। কোনো ধরনের সমস্যা হলে প্রধান এই কর্মকর্তার কক্ষের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে একে একে যোগাযোগও করেছেন অনেকে। কিন্তু আসলেই কি স্বচ্ছ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নাকি লোকদেখানো কিছু সেবাগ্রহীতাদের সমস্যা সমাধান করে প্রশংসা নিয়ে গেছে?
অনুসন্ধানে জানা যায়, আগের উপপরিচালক সালাহ উদ্দিন যোগদানের পর দালালদের সঙ্গে সমঝোতা করে প্রতিটি পাসপোর্ট বাবদ এক হাজার ২০০ টাকা করে ঘুষ নির্ধারণ করেন। হাফিজুর রহমানের যোগদানের পরও তা পাল্টায়নি।
বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০টি আবেদন জমা পড়ছে বলে জানিয়েছেন পাসপোর্ট অফিসের একাধিক কর্মকর্তা।
এই আবেদনের ৮০ শতাংশের বেশি জমা পড়ে দালালদের মাধ্যমে। এ হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ২০০টি আবেদন জমা পড়লে একদিনে ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। তবে ১৫০টি আবেদন জমা পড়লে প্রতিদিন ঘুষের পরিমাণ ২ লাখ ৪ হাজার টাকা। এ হিসাবে প্রতি মাসে ৪০ লাখ টাকার বেশি ঘুষ আদায় করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে, দালালরা প্রতিটি আবেদনে ব্যবহার করে বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন। প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা বিশেষ কোড। পাসপোর্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া এসব চিহ্ন ও কোড বোঝার কোনো উপায় নেই।
এরপর আবেদনকারী পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে এগুলো জমা দেন। কর্মকর্তারা আবেদন দেখেই বুঝতে পারেন কোন দালাল আবেদনপত্র পূরণ করে পাঠিয়েছে। কে কতটি আবেদন করেছে, তাও নোট করে রাখা হয়।
এরপর দালালরা ঘুষের নির্ধারিত টাকাগুলো যথাসময়ে পাসপোর্ট অফিসে পৌঁছে দেন। অফিসের সূত্র বলছে, এই ঘুষের টাকা ভাগাভাগি হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।
মাসোয়ারা হিসেবে অফিসের খাতায় তালিকাভুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে মাসের নির্দিষ্ট তারিখেই ঘুষের টাকা বণ্টন করা হয়।
এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার উপপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে নিউজবাংলা। সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। বলেছেন, বাইরে কিছু দালাল থাকতে পারে। তবে অফিসের কোনো কর্মকর্তাদের সঙ্গে দালালদের যোগাযোগ নেই বলে দাবি তার।
২৩ বছরের ‘অভিজ্ঞ দালালের’ গর্ব ও চ্যালেঞ্জ
এরপরই পরিচয় গোপন রেখে পাসপোর্ট অফিসের সামনে কয়েকজন দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা। প্রথমে মুখ খুলতে রাজি হননি কেউ।
এরপর কৌশল পাল্টে দালালদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হয়। পাসপোর্টের আবেদনের বিষয়ে জানতে ওই নম্বরে নিয়মিত যোগাযোগ করা হয়। পরিচয় গোপন রেখে ধীরে ধীরে সখ্য গড়ে তোলা হয়।
কয়েকজন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবে জানালে পাসপোর্ট অফিসের সামনে তাদের নিজস্ব অফিসে আসতে বলে দালাল। আগে টাকার অঙ্কটা পরামর্শ করা প্রয়োজন জানালে একজন দালাল রাজি হন।
গত ৩০ মার্চ বিকেল ৫টার দিকে উজ্জ্বল নামের ওই দালালকে নগরীর চরপাড়া এলাকায় ডেকে আনা হয়। এ সময় খোলামেলা আলোচনা হয় তার সঙ্গে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১০ বছরের জন্য পাসপোর্ট নিতে চাইলে আমাদের হাতে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। আর ৫ বছরের জন্য করলে ৭ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হবে। গ্যারান্টি দিচ্ছি, এক মাসের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাবেন৷’
এই লাইনে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার গর্বও করলেন উজ্জ্বল। বলেন, ‘২৩ বছর ধরে দালালি করছি। আজ পর্যন্ত কথার বরখেলাপ করিনি।’
নিজে আবেদন করে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিলেই পাসপোর্ট পাওয়া যায়। তাহলে আপনাদের বাড়তি টাকা দেব কেন? এমন প্রশ্নে রীতিমতো রাগান্বিত হয়ে যান উজ্জ্বল। বলেন, ‘তাহলে ডেকেছেন কেন?’
চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দিলেন তিনি। বললেন, ‘সাধারণ পাবলিক হিসেবে গিয়ে দেখেন, পাসপোর্ট সময়মতো পান কি না। এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে দৌড়াদৌড়ি করে জুতা ক্ষয় করতে হবে। পরে আমাদের সঙ্গেই যোগাযোগ করতে হবে।’
একপর্যায়ে ঘুষ লেনদেনের সব তথ্য বলে দেন এই উজ্জ্বল। বলেন, ‘অফিসের তালিকাভুক্ত দালাল ছাড়াও সহযোগী দালাল রয়েছে পাঁচ শতাধিক। কিছু দালাল রয়েছে যারা সরাসরি নিজে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ না করে আরেক দালালকে দিয়ে করায়। এ জন্য সেই দালালকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হয়৷
‘আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করে বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়৷ এরপর আবেদনকারী নিজে গিয়ে আবেদন জমা দেন। ওই চিহ্ন দেখেই কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন কোন দালালের মাধ্যমে কতটি আবেদন জমা পড়েছে।’
দালাল যতটি আবেদন করবে প্রতিটি আবেদন বাবদ এক হাজার ২০০ টাকা করে জমা দিতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে- এটাও বলে দিলেন উজ্জ্বল।
আবেদনে ত্রুটি থাকলে লাভ বেশি
উজ্জ্বল জানান, কারও কোনো সমস্যা থাকলে বা আবেদনে ত্রুটি-বিচ্যুতির পাসপোর্টের জন্য দর-কষাকষি করে নেয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
তিনি বলেন, ‘আমরা (দালালরা) যে আবেদনগুলো করে দেই, সেগুলো অফিসের কর্মকর্তারা ভুল ধরতে পারবেন না। ভুল থাকলেও সব ঠিক। তবে সাধারণ লোক নিজে আবেদন করে জমা দেয়ার সময় সামান্য ত্রুটি থাকলে এটিকে বড় ভুল হিসেবে ধরা হয়। ফলে আমাদের সঙ্গেই যোগাযোগ করতে বাধ্য হয় আবেদনকারীরা।’
ঘুষ বন্ধের ‘বিজ্ঞাপন’ নিয়ে
ঘুষ বন্ধ হয়েছে, কাউকে বাড়তি টাকা দিতে হয় না বলে যে দাবি অফিস থেকে করা হচ্ছে, সে বিষয়ে উজ্জ্বলের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কটাক্ষের হাসি হাসেন।
বলেন, ‘যাদের মুখ পরিচিত, তারা অনলাইনে আবেদন করে সরাসরি জমা দিলে নির্দিষ্ট সময় পর হলেও পাসপোর্ট পাবেন। তবে এ সংখ্যাটা হাতে গোনা কয়েকজন। আর প্যানা টানানোর বিষয়টি লোকদেখানো। যদি পাসপোর্ট অফিস স্বচ্ছই হয়, তাহলে মাস শেষে বণ্টন করা টাকাগুলো আসে কীভাবে? এগুলো ঘুষের টাকা।’
কী বলছেন ভুক্তভোগীরা
উজ্জ্বলের এসব বক্তব্য যাচাই করতে গিয়ে নিউজবাংলা কথা বলে পাসপোর্ট নিয়ে কাজ করেন এমন এক কর্মকর্তার সঙ্গে। পরিচয় ও সংস্থার নাম গোপন রাখার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি এই পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রতি মাসে দুই হাজার করে টাকা নেই। এটা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। যার রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে।’
পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে কথা হয় রাফিউল্লাহ নিলয় নামের এক যুবকের সঙ্গে। তিনি গত ২৩ মার্চ জেলার গফরগাঁও উপজেলা থেকে পাসপোর্ট করতে আসেন।
আবেদনপত্র জমা দিতে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দালাল ডিঙিয়ে আবেদন জমা দিতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হয়েছি। ফলে বাধ্য হয়েই দালালদের শরণাপন্ন হতে হয়েছে।
‘এক দালালকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করেছেন। এরপর আমি জমা দিতে গেলে তাৎক্ষণিক জমা রাখা হয়। তখন আর কোনো সমস্যা হয়নি।’
জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার কাহালগাঁও গ্রাম থেকে এসেছেন হোসেন আলী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাসপোর্ট করেছিলাম ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি। ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ ছিল৷ দুবাই যাব, এ জন্য মেয়াদ ১০ বছরের জন্য বাড়াতে দালাল বাবলুর মাধ্যমে আরেক দালালকে ১০ হাজার টাকা খরচ করে আবেদন করেছি। দালাল লিখে দেয়ার কারণে খুব সহজেই জমা দিতে পেরেছি।’
নিজে জমা দিলেন না কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার এলাকার ও পরিচিত অনেকে দালাল ছাড়া আবেদন করে ভোগান্তিতে পড়েছে। লেখাতে সামান্য ভুল থাকলেও আবেদন গ্রহণ করা হয় না। অফিস থেকে বলা হয়, ঠিক করে নিয়ে আসেন। এ জন্য দালালের শরণাপন্ন হয়ে সহজেই আবেদন জমা করতে পেরেছি।’
ভালুকার ডাকুরা এলাকা থেকে আসা মো. নাজমুল হাসান বলেন, আমার ভোটার আইডি কার্ডে Md. Nasmol hasan ও মায়ের নাম মোছা. নাজমা খাতুন উল্লেখ থাকলেও পাসপোর্টে আমার নাম Md. Nasmul hasan ও মায়ের নাম মোছা. নাজমা আক্তার এসেছে। এটি সংশোধন করতে ফেব্রুয়ারি মাসে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করলে ব্যস্ততা দেখিয়ে কোনো কর্মকর্তা পরামর্শ দেননি৷
‘পরে অফিসের সামনে এক কম্পিউটারের দোকানে গেলে এফিডেভিটের মাধ্যমে সংশোধন করতে বলেন। স্ট্যাম্পের মাধ্যমে সব করে দেয়ার শর্তে ওই দোকানে থাকা দালালকে ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।’
শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অফিসের প্রবেশ পথের দুই ধারে সংঘবদ্ধ দালালচক্র অফিস খুলে বসেছে। পাসপোর্ট করতে আসা মানুষ অফিসে ঢোকার আগেই ওত পেতে থাকা এসব দালালের খপ্পরে পড়েন।’
তিনি বলেন, ‘দালাল অজয় বাবু আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন৷ তবুও ভোগান্তি ছাড়া পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি, এতেই খুশি।’
‘কর্মকর্তা সৎ হলে দালাল থাকবে না’
ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আমীন কালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা সৎ হলে দালালদের অস্তিত্ব থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘কোন পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যাবে, সরকারি খরচ কত, এগুলো সম্পর্কে এখনও অনেকে জানে না। এগুলো উল্লেখ করে কার্যালয়টির সামনে টানিয়ে সেবাগ্রহীতাদের কেন অবহিত করা হয় না?’
নাগরিক সংগঠন ‘জেলা জন-উদ্যোগ’ এর আহ্বায়ক আইনজীবী নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, ‘কার্যালয়টিতে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন, তারাও এগুলো চুপচাপ দেখেন। এতেও বোঝা যায়, দালালদের সঙ্গে তাদের কোনোভাবে যোগসাজশ রয়েছে।’
কর্মকর্তা ও দালালদের যোগসাজশের বিষয়টি উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কমিশন জেলা শাখার সভাপতি শিব্বির আহম্মেদ লিটন।
তিনি বলেন, ‘পাসপোর্টটির যখন নিজস্ব জায়গা ছিল না, তখন কর্মকর্তারা দোহাই দিত স্থানীয় লোকজন এসে দালালির কাজগুলো করে। ভবনটি নিজস্ব জায়গায় স্থানান্তরিত হওয়ার পর কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, দুর্ব্যবহার ও নৈরাজ্যও স্থানান্তরিত করে নিয়ে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘হাতে গোনা কয়েকজন ব্যক্তির পাসপোর্ট করতে দালাল ধরতে হয় না। বাকিদের দালালদের কাছেই যেতে হয়।’
সব অভিযোগ অস্বীকার কর্মকর্তাদের
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক বিল্লাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই কার্যালয়ে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
দালালদের আপনাদের যোগসাজশের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে জানালে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘দালালদের সঙ্গে আমাদের কারও সম্পর্ক নেই। উপপরিচালক সব বলতে পারবেন।
পরে উপপরিচালক হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যোগদানের পর কাজে স্বচ্ছতা আনতে চেষ্টা করছি। অফিসের বাইরে দালাল থাকতে পারে, তবে সেটা আগের চেয়ে কম৷’
দালালচক্রের অপতৎপরতা রোধে র্যাব-১৪-এর অভিযানে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১১ জনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়। এর পরই পাসপোর্ট অফিসটির আগের উপপরিচালকসহ অন্তত সাত কর্মকর্তাকে গণবদলি করা হয়।
আরও পড়ুন:নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। যেকোনো মূল্যে তাকে প্রতিহত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার নোয়াখালী প্রেসক্লাবে জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময় দলীয় প্রধানের আদেশ অমান্য করে নিজের ছেলেকে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করায় একরামুল করিম চৌধুরীর সংসদ সদস্যপদ স্থগিতের দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী খায়রুল আনাম সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শিহাব উদ্দিন শাহিন, সাধারণ সম্পাদক মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল, সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার উদ্দিন খেলন ও সাধারণ সম্পাদক হানিফ চৌধুরী।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর বাড়ি কবিরহাট উপজেলায়। তিনি নিজ ছেলের জাতীয় পরিচয়পত্র স্থানান্তর করে সুবর্ণচরে নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রবীণ নেতা খায়রুল আনম সেলিমের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছেন।
‘প্রতীক পাওয়ার আগে থেকে ভোটের মাঠে নেমে এমপি একরাম আওয়ামী লীগের নেতাদের হুমকি দিচ্ছেন, বিষোদ্গার করছেন। ভোট না দিলে উন্নয়ন করবেন না বলে সাধারণ মানুষকে শাসাচ্ছেন।’
‘জেলা সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী পৌর মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেলকে অফিস থেকে বের হতে দেবেন না বলেও হুমকি দিচ্ছেন, যা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। একজন আইনপ্রণেতা হয়ে তিনি আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।’
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এইচ এম খায়রুল আনাম সেলিম বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় একরাম চৌধুরী নোয়াখালী পৌরসভার মেয়রের কক্ষে আমাকে নেতা-কর্মীদের সামনে চরমভাবে অপমান করেন। একপর্যায়ে তেড়ে আসেন এবং আমাকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমপি একরাম তার ছেলে সাবাব চৌধুরীকে পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেছেন। অঢেল টাকা, পেশিশক্তি, সন্ত্রাসী বাহিনী, অবৈধ অস্ত্র এবং ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে জয়ী করতে উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি।
‘এমপি একরামের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
অন্ধকার ঘরে চৌকির ওপর বসে আছে ১৫ বছর বয়সী রিয়াজ। গলায় শেকল পরিয়ে ঝুলানো বড় তালা। শেকলের অন্য প্রাপ্ত চৌকির সঙ্গে প্যাঁচানো। কোনোভাবে যেন শেকল খুলে বা চৌকি ভেঙে বাইরে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করেছে পরিবারের সদস্যরা।
দীর্ঘ তিন বছর ধরে এভাবেই শেকলবন্দি রিয়াজ। মাঝে-মধ্যে বাবা ও মায়ের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার সুযোগ মিললেও ছাড়া মেলে না এই কিশোরের।
ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে মা নার্গিস খাতুন ও বাবা লিটন হোসেনের সঙ্গে এভাবেই দিন কাটছে ছেলেটির।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সাত বছর আগে শহরের আরাপপুর এলাকায় থাকা অবস্থায় কিছু বখাটে ছেলের পাল্লায় পড়ে চুরি করা শুরু করে রিয়াজ। এরপর থেকে সুযোগ পেলেই চুরি করে সে। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে শহরসহ আশপাশের জেলাতে গিয়েও সে চুরি করেছে।
চুরি করা অনেকটা নেশার মতো রিয়াজের কাছে। বিভিন্ন সময় পুলিশ ওকে বাড়িতে দিয়ে গেলেও তার চুরি বন্ধ হয়নি। নানা স্থান থেকে একের পর এক অভিযোগ পেয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন বাবা-মা। উপায়ান্তর না পেয়ে সন্তানকে শেকলে তালাবদ্ধ করে রাখা শুরু করেন তারা। এভাবেই কেটে গেছে দীর্ঘ তিনটি বছর। তারপরও সুযোগ পেলেই পালিয়ে যায় রিয়াজ। আবারও জড়িয়ে পড়ে চুরি ঘটনায়।
লিটন হোসেন বলেন, ‘রিয়াজ সুযোগ পেলেই চুরি করে। চুরি করাটা যেন ওর নেশা। উপায় না পেয়ে বাবা হয়েও তিন বছর ধরে সন্তানকে গলায় শেকল পরিয়ে ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখেছি। কী করব বলেন! যেখানে যায় সেখান থেকেই চুরি করে।
‘আমরা উপায় না পেয়ে বেঁধে রেখেছি। কতবার পুলিশ এসে বাড়িতে দিয়ে গেছে। কত ডাক্তার দেখিয়েছি, কোনো সমাধান হচ্ছে না।’
মা নার্গিস খাতুন বলেন, ‘আমার দুটি সন্তান। বড় সন্তান মেয়ে। ছেলেকে এভাবে রাখতে আমার খুব খুবই কষ্ট। আমি কিচ্ছু চাই না। শুধু চাই ও পড়াশোনা করুক। অন্য ছেলেদের মতো খেলা করুক, ঘুরে বেড়াক।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক কোনো সমস্যার কারণে রিয়াজ এমন কাজ বার বার করছে। নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা দিলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘কয়েকটি কারণে শিশু রিয়াজ একই কাজ বার বার করছে। পরিবারে যদি এমন কেউ চুরির সঙ্গে জড়িত থাকত তাহলে এমনটা হতে পারে।
‘ওর মানসিক বিকাশ না হওয়ার কারণেও এমনটা হতে পারে। নিয়মিত চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি মোটিভেশন দিলে ছেলেটির এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।’
কদিন ধরেই দাবদাহে পুড়ছে জনজীবন। গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। দিনভর তীব্র তাপপ্রবাহ, তবে রাতে কিছুটা স্বস্তি মিলছে। এই অবস্থা থেকে আপাতত মুক্তি মিলছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ যেভাবে বয়ে যাচ্ছে, আরও কটা দিন এভাবেই তা চলবে। কোথাও কোথাও সামান্য বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে এতে গরম তেমন একটা কমবে না।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর ও পটুয়াখালী জেলাসমূহের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে।
তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হওয়ারও পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে জানিয়ে আবহাওয়ার খবরে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য থাকবে। এর ফলে ভ্যাপসা গরমে জনজীবনে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
পরবর্তী পাঁচ দিনের আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
এর আগে সোমবার চলমান তাপপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে ৭২ ঘণ্টার জন্য দেশজুড়ের রেড অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তার আগেও গত ১৯ এপ্রিল তিন দিনের হিট অ্যালার্ট দেয়া হয়। অ্যালার্ট থাকবে ২৫ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত।
টানা কদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী, পাবনা, বরিশালেও প্রচণ্ড গরম। সোমবার খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
আরও পড়ুন:ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইনের পঞ্চপল্লীতে সহোদর দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ এবং দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-মাগুরা মহাসড়কের মধুখালীতে বিক্ষুদ্ধ জনতা সড়কে মানববন্ধন করে গাছের গুড়ি ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে।
মধুখালী থানার ওসি মিরাজ হোসেন জানান, সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে ঢাকা-মাগুরা মহাসড়কের পাইলট স্কুলের সামনে থেকে নওপাড়া পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে কিছু বিক্ষুব্ধ মানুষ ডুমাইনের ঘটনার প্রতিবাদে সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ সড়ক অবরোধ করে রাখে। পুলিশ দোষীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার আশ্বাস দেয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু মধুখালীতে তারা গাছের গুড়ি ফেলে সড়কে বসে পড়ে।
এ সময় সড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় বলে জানান ওসি।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বিনা ধান-২৫ এর পরীক্ষামূলক চাষাবাদে সফলতা পাওয়া গেছে। স্বল্প সময়ে ধানের বাম্পার ফলনে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে এ ধান উৎসাহ-উদ্দীপনা যুগিয়েছে।
নতুন উদ্ভাবিত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান বোরো জাতের বিনা ধান-২৫। উচ্চ ফলনশীল হলেও ধানটি হাইব্রিড নয় বলে দাবি করা হচ্ছে। বাসমতি চালের বিকল্প হিসেবে এ ধানের চাষ বাড়লে দেশে চিকন চালের আমদানি কমতে পারে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের জলালপুর গ্রামে এ বছর বিনা ধান-২৫ এর পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হয়েছে। মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো. নওরোজ মিয়াসহ এলাকার তিনজন কৃষক চার একর জমিতে বিনা ধান-২৫ এর চাষাবাদ করেছেন।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বিনা ধান-২৫ বোরোর উন্নতমানের নতুন একটি জাত। নতুন উদ্ভাবিত এই ধানের জাতটি সর্বাধিক লম্বা ও সরু। এর চালের আকার চিকন ও লম্বা। বিদেশ থেকে যে বাসমতি চাল আমদানি করা হয় এটাও অবিকল সেই চালের মতো। এজন্য এই চালের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেশি।
এর বাজারমূল্যও বেশ ভালো জানিয়ে সূত্র আরও জানায়, উৎপাদন ব্যয় অন্য ধানের মতোই। তবে ফলন অন্য ধানের চেয়ে ভালো হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। দেশের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি এই ধান রপ্তানিও করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃষক নওরোজ মিয়া বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ ধান পাওয়ার আশা করছি। এই প্রথম নতুন জাতের বিনা ধান-২৫ চাষাবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি শীষে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০টি ধান ধরেছে।
‘অন্যান্য জাতের তুলনায় বিনা ধান-২৫ জাতে শীষ প্রতি ধানের পরিমাণও বেশি। চাষাবাদে আশানুরূপ ফলন হওয়ায় নিজেকে আরও উদ্বুদ্ধ করে তুলছে বলে মনে হচ্ছে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দেব বলেন, ‘পরীক্ষামূলক চাষাবাদে এবং কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে ধান কাটা হবে।’
ঝিনাইদহ জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন ভোরের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক রোকনুজ্জামান মিলন। আনসারের জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন ও মহেশপুর উপজেলা টিআই হুসাইনসহ আনসার সদস্যরা তাকে মারধর করে একটি ঘরে আটকে রাখেন। পরে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করেন।
সংবাদকর্মীরা জানান, ৮ মে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আনসার অফিসে নির্বাচনকালীন অস্থায়ী সদস্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সেই খবর সংগ্রহের জন্য সাংবাদিক রোকনুজ্জামান মিলন সেখানে গেলে তার সঙ্গে অসদাচরণ করেন জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ। এক পর্যায়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে ঝিনাইদহে কর্মরত সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করেন।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন জেলায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা।
ভুক্তভোগী রোকনুজ্জামান মিলন বলেন, ‘আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য ওই অফিসের বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন এক নারীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছিলেন। আমি এগিয়ে গেলে আমাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন সোহাগ।
‘আমি সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে অন্য আসনার সদস্যরা আমাকে টেনে-হিঁচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে কিল-ঘুষি মারেন। আমাকে সেখানে এক ঘণ্টা আটকে রাখার পর মোবাইল ফোন ফেরত দেয়া হয়। পরে মোবাইলে সহকর্মীদের ফোন করলে তারা এসে আমাকে উদ্ধার করেন। আমি ওই কর্মকর্তাসহ ঘটনায় জড়িত অন্যদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন বলেন, ‘যেভাবে বলা হচ্ছে তেমন কিছু ঘটেনি। সে প্রথমে পরিচয় না দেয়ায় তাকে রুমের মধ্যে বসিয়ে রেখেছিলাম। তাকে মারধর বা লাঞ্ছিত করা হয়নি।’
আরও পড়ুন:সারা দেশের মতো তাপপ্রবাহে পুড়ছে শেরপুর জেলাও। কয়েকদিনের গরমে শেরপুরে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। শুধু তাই নয়, লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জেলার বোরো ধানের আবাদেও।
কৃষি বিভাগের তথ্যনুসারে, চলতি মৌসুমে শেরপুর জেলাজুড়ে ৯১ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানখেতে ধান পুষ্ট হতে শুরু করেছে। তবে এরই মধ্যে লোডশেডিং শুরু হওয়ায় চাহিদামাফিক সেচ দিতে না পারছেন না জেলার কৃষকরা। ফলে ধানের আশানুরূপ ফলন পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তাদের মনে।
বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ কম থাকায় সেচ পাম্পের মোটরও পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সেচ পাম্পের মালিকরাও আছে বিপাকে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৯১ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ৭০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের ফ্লাওয়ারিং হয়েছে (ফুল ফুটেছে)। অন্যদিকে, পাহাড়ি এলাকায় আগাম জাতের লাগানো ধানগুলো ইতোমধ্যে কাটা শুরু করেছে।
জেলার পিডিবি অফিস বলছে, জেলায় দৈনিক বিদ্যুৎতের চাহিদা প্রায় ৬০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৫ থেকে ২৮ মেগাওয়াট। তাই চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের মতও একইরকম। তাদের ভাষ্য, জেলায় পল্লীবিদ্যুতের বিদ্যুৎ চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ৫০ মেগাওয়াটেরও কম। তাই চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ দিয়ে যতটা পারা যায়, ঠিকঠাক ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করছেন তারা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানে দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মতো। এতে করে সেচ পাম্পগুলো ঠিক মতো চালাতে পারছেন না কৃষকরা। বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ কম থাকায় মোটর পুড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, পানির অভাবে জমি ফেটে যাচ্ছে। ধানের থোড় (গাছে যে অংশ থেকে ফুল হয়ে পরে ধান হয়) বের হওয়ার পর কিছু কিছু জমির থোড় শুকিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ অবস্থার পরিবর্তন না হলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের।
সদর উপজেলার যোগিনীমুড়া গ্রামের কৃষক আলমগীর হারুন বলেন, ‘বোরোর আবাদ কইরা আমরা বর্তমানে খুবই আশঙ্কার মধ্যে আছি। মাঠে যে থুর (থোড়) ধানগুলা বাইর হইতাছে, ঠিকমত সেচ দিবার পাইতাছি না। এই ধানগুলা চিচ (চিটা) হইয়া যাইব।
‘বিদ্যুৎ দিনে ৪-৫ ঘণ্টা থাকে। এত কষ্ট কইরা ফসল ফলাইয়া ঘরে না তোলবার পাইলে আমরা মাঠেই মারা যাব।’
সদর উপজেলার বাজিতখিলা গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলেন, ‘আবাদ তো নষ্ট হইয়া গেল। কারেন্ট থাহে না। ৫০ হাজার টাহা খরচ কইরা ধান লাগাইছি। পানি দিবার না পাইলে তো সব শেষ। আমগোরে কি মাইরা হারবার চাইতাছে নাকি?’
আরেক কৃষক শামসুল মিয়া বলেন, ‘দিনে কারেন্ট থাহে ৪-৬ ঘণ্টা, কিন্তু ভোল্টেজ তো থাহে না। কম ভোল্টেজে মোটর চালু দিলে তো মোটর পুইড়া যায়।’
কৃষকদের কাছে বিদুৎ সঙ্কটের কারণে সেচে প্রভাব পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেলেও পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তার দাবি, এতে সেচে তেমন প্রভাব পড়বে না।
শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আলী হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এই শেরপুর জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাভুক্ত ৫টি উপজেলা এবং এর আওতায় প্রায় ১০ হাজার সেচ সংযোগ রয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। এর আগে আমরা ভালো বিদুৎ পেয়েছি, তবে বর্তমানে জেলায় ৩০ শতাংশের মতো লোডশেডিং হচ্ছে। আশা করি, খুব দ্রুত এ সঙ্কটও কেটে যাবে।’
মন্তব্য