নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় এক গৃহবধূকে বিতাড়িত করতে গত তিন মাস ধরে স্বামীর বাড়িতে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২৫ বছর বয়সী ওই গৃহবধূর নাম আমিনা বেগম। বর্তমানে তার দুই শিশুকন্যাকে কৌশলে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। বাড়ির ভেতরে অবস্থান করা মায়ের কাছে তাদের যেতে দেয়া হচ্ছে না।
এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গৃহবধূর মা লাইলি বেগম থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গৃহবধূর অভিযুক্ত স্বামী ফারুক ইসলাম থাকেন ব্রুনাইয়ে। উপজেলার নজিপুর পৌরসভার হরিরামপুর পশ্চিমপাড়ায় এই আদম ব্যপারীর বাড়ি।
গৃহবধূর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আট বছর আগে ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের ভেড়ম সোনাদিঘী গ্রামের ফারুকের সঙ্গে পত্নীতলার আকবরপুর ইউনিয়নের বনী গ্রামের আমিনার বিয়ে হয়। মেয়ের সুখের কথা ভেবে বিয়ের সময় ২ লাখ যৌতুকও দিয়েছিল আমিনার পরিবার।
ব্রুনাইয়ে চাকরি দেয়ার নামে এলাকার বিভিন্ন মানুষকে নিয়ে যান ফারুক। এর মধ্যে অনেকেই প্রতারিত হয়ে ফিরে এসেছেন।
কয়েক বছর আগে শ্বশুরবাড়ি থেকে ২৯ লাখ টাকা নিয়ে পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার হরিরামপুর পশ্চিমপাড়ায় জমি কিনে চারতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন ফারুক। দেশে এলে স্ত্রীকে নিয়ে এই বাড়িতেই থাকতেন তিনি। এর মধ্যে ফারহানা ফিন্নি ও ফারিয়া আক্তার রাখি নামে তাদের দুই কন্যার জন্ম হয়। তাদের বয়স যথাক্রমে ৬ ও ৩ বছর। এ ছাড়া ওই বাড়িতে ফারুকের শাশুড়ি ও শালিকাও বসবাস করতেন।
সর্বশেষ তিন বছর আগে দেশে এসেছিলেন ফারুক। এক বছর আগে এক ব্যক্তিকে বিদেশ নিয়ে যান তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, বিদেশে নিয়ে যাওয়া ওই ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে পরকীয়া শুরু করেন ফারুক। এরপর থেকেই সংসারে অশান্তি শুরু। বিদেশ থেকেই স্ত্রীকে মোবাইলের মাধ্যমে তালাক দেন তিনি। গত তিন মাস ধরে ছেলের নির্দেশে ওই বাসায় অবস্থান করছেন ফারুকের মা। আমিনাকে ওই বাড়ি থেকে বের করে দিতে চায় ফারুকের পরিবার।
কিন্তু আমিনা নাছোড়বান্দা। শ্বশুরবাড়ির লোকজন একের পর এক নির্যাতন চালালেও বাড়ি ছেড়ে যেতে তিনি নারাজ।
এ অবস্থায় একটি কৌশল বেছে নেয় ফারুকের পরিবার। গত সোমবার আমিনার দুই কন্যা নানির সঙ্গে বাড়ির বাইরে দোকানে গেলে বাসার মূল দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর কন্যারা ফিরে আসলেও তাদের আর বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, কন্যাদের টানে আমিনা বাড়ির বাইরে এলেই তার জন্য ওই বাড়ির দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।
কন্যাদের বাইরে রাখার প্রতিবাদ করার কারণে শাশুড়ি, দেবর-ননদ ও ম্যানেজার বেলাল আমিনাকে মারধর করেন। এতে আমিনার নাক ফেটে গেলেও তাকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে সালিশ বৈঠক করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। সেখানে খাওয়া পরা ও মেয়েদের পড়াশুনা বাবদ ফারুক মাসে ১২ হাজার টাকা দেবেন এমন সিদ্ধান্ত হয়। আর ফারুক দেশে আসার পর তালাকের বিষয়টি সুরাহা হবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু গত তিন মাসে কন্যাদের জন্য মাত্র ৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন ফারুক।
গৃহবধুর মা লাইলি বেগম বলেন, ‘মেয়ের সঙ্গে আমাকে থাকার জন্য জামাই অনুরোধ করেছিল। পরে নিজের জায়গা জমি বিক্রি করে প্রায় ২৯ লাখ টাকা দিয়ে নজিপুর শহরে জমি কেনা ও বাসার কাজে খরচ করা হয়। গত চার বছর মেয়ের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু গত তিন মাস ধরে আমার মেয়ের ওপর তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করছে। দুই নাতনি মায়ের কাছে যেতে পারছে না। তাদের বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। নাতনিরা আমার কাছে অনেক কান্নাকাটি করছে। থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু অভিযোগ নেয়নি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
ভুক্তভোগী আমিনা বলেন, ‘স্বামীর পরকিয়ায় জড়িত হবার পর থেকে সংসারে অশান্তি শুরু হয়েছে। স্বামী এখন বিদেশে। কিন্তু কয়েকদিন আগেও স্বামী তার ম্যানেজার বেলালের মাধ্যমে পরকিয়ার ওই মহিলা নিপাকে আমার বাসায় জোর করে রাখে। কারণে অকারণে আমাকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করছে। পুলিশকে ফোন করেছিলাম কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমার জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। আমার দুই মেয়ে আমার কাছে আসতে পারছে না। সবকিছু জানার পরও প্রশাসন কেন চুপ আছে। কেন আমার পাশে দাঁড়াচ্ছে না।’
আমিনার শ্বাশুড়ি ফাতেমা বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ছেলে বিদেশ থাকে। ছেলের কথায় তিন মাস থেকে তার বাসায় থাকছি। ছেলের বউকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। বরং আমাকেই মারপিট করেছে। এ ছাড়া আমার ছেলে অন্য কোনো মেয়ের সাথে পরকীয়া করে না।’
বাসার মূল দরজায় তালা, নাতনীদের স্কুলে যেতে না দেয়া ও খাবার দেয়া হয় না এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দরজা খোলায় আমার ছেলের নিষেধ আছে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’
স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল হোসেন বলেন, ‘মেবাইলে তালাক দিলেই কি তালাক হয়? তালাকের আইন আছে। বেশ কিছুদিন ধরে আমিনা বেগমের কান্না ও চিৎকার শোনা যাচ্ছে। বাসায় কিছুদিন থেকে ফারুকের মাও আছে। ছেলে যা বলে তিনি তাই করেন।’
জান্নাতুন বেগম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আমিনা বেগমের দুই মেয়েকে কয়েকদিন ধরে বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এটা কী ধরনের নির্মম কাজ। এর একটা বিহিত দরকার।’
পত্নীতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গাফফার বলেন, ‘তিন মাস আগে ওই পরিবারের উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে বাচ্চাদের ভরণপোষণ ও পড়াশুনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তারা মেনেও নিয়েছেন। এ ছাড়া ওই গৃহবধুর স্বামী যেহেতু বিদেশে থাকেন, তাই তিনি দেশে ফিরে আসলে তারা তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেবেন।’
এ সময় দুই কন্যাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেয়া এবং থানায় অভিযোগ না নেয়ার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও জানিয়েছেন চেয়ারম্যান।
বিষয়টি নিয়ে পত্নীতলা থানার ওসি শামসুল আলম শাহ বলেন, ‘ওই পরিবারের বিষয়ে থানায় লিখিত কোনো অভিযোগ দেয়া হয়নি। গৃহবধূকে নির্যাতন করা হয়েছে জানিয়ে তার মায়ের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে দুই পুলিশ সদস্য পাঠানো হয়েছিল। তখন সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। তবে দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছে। আমরা তাদের শান্তভাবে বসবাসের অনুরোধ করেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ছিয়াত্তর বছর বয়সী আবদুর রহিম স্ত্রীকে হারিয়েছেন দেড় যুগ আগে। পরিবারের সদস্য বলতে এক ছেলে, তাও থাকেন প্রবাসে। ছেলে প্রবাসে যাওয়ার পর অন্য ঘরে চলে গেছেন ছেলের বৌও। তাই রান্না-বান্না থেকে শুরু করে সব কিছুই করতে হয় নিজেকে।
জীবন যুদ্ধে তিনি কখনও দমে যাননি, তবে এবার হার মেনেছেন টিউবওয়েলের পানির কাছে। ১৫ থেকে ১৬ বার টিউবওয়েল চাপার পরেও মিলছে না এক গ্লাস পানি। তাই পানি সংকটের কারণে গোসল থেকে শুরু করে গৃহস্থালির সব কাজ হচ্ছে ব্যাহত।
তাই অধিকাংশ সময় বাড়ির পাশে থাকা মসজিদে গিয়ে পানির চাহিদা পূরণ করছেন আবদুর রহিম।
এদিকে গৃহবধূ ছানোয়ারা খাতুন গৃহস্থালির সব কাজ করেন একাই। বাড়িতে রয়েছে তিনটি গাভি ও চারটি ছাগল। এর মধ্যেই আজ সপ্তাহ দুয়েক ধরে টিউবওয়েলে উঠছে না পানি। খাওয়া থেকে ওজু, গোসল সব কিছুতেই বেগ পেতে হচ্ছে পানি সংকটের কারণে।
ছানোয়ারা খাতুন জানান, তীব্র তাপদাহের মধ্যে আজ সপ্তাহখানেক ধরে বাড়িতে থাকা গরুর গোসল করাতে পারেননি তিনি, তবে নিজে প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে গোসল করে আসেন।
মেহেরপুরের গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে পানির সংকট এখন চরমে পৌঁছেছে। একদিকে গৃহস্থালির কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বোরো চাষে পানির সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তারা সুপেয় পানির সংকটের কথা জানান। বিশেষ করে মুজিবনগর উপজেলার, জয়পুর, আমদহ, তারানগর, বিশ্বনাথপুর; সদর উপজেলার শালিকা, আশরাফপুর, আমদাহ, বুড়িপোতা, আলমপুর এবং গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের আমতৈল, মানিকদিয়া, কেশবনগর, শিমুলতলা, রইয়েরকান্দি, সহড়াবাড়িয়া, মিনাপাড়া, ভোলাডাঙ্গা, কুমারীডাঙ্গা কাথুলি ইউনিয়নের গাঁড়াবাড়িয়া, ধলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় চলতি শুষ্ক মৌসুম শুরু থেকেই সুপেয় পানির সংকট প্রকট হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ধরে অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা, এবং পুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সীমান্তবর্তী মেহেরপুর জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। আগামীতে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলেও জানান তারা।
গ্রামবাসীরা বলছেন, গ্রীষ্মকাল শুরু না হতেই এবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অথচ গ্রামে সুপেয় পানির জন্য নলকূপই শেষ ভরসা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির স্তর প্রতি বছর ১০ থেকে ১১ ফুট নিচে নামছে। ১০ বছর আগেও এই এলাকায় ৬০ থেকে ৭০ ফুটের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর পাওয়া যেত। অথচ এখন পানির জন্য যেতে হয় ৩০০ ফুটেরও বেশি গভীরে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক বছরে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ১০ থেকে ১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে অকেজো হয়ে পড়েছে হস্তচালিত অনেক টিউবওয়েল। যেখানে আগে ভূগর্ভের ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরতা থেকেই পাওয়া যেত সুপেয় পানি। গত এক দশকে ক্রমেই পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
জেলায় গভীর-অগভীর মিলিয়ে ৯ হাজার ৯১৩টি নলকূপ আছে। এর মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে ২ হাজার ২৩৯টি।
গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামের পল্লি চিকিৎসক মতিন বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা দিয়ে বেড়াই। আজ ১০ দিন ধরে আমার বাড়ির নলকূপে পানি উঠছে না। রোদের মধ্যে সারা দিন গ্রাম গ্রাম ঘুরে বাড়ি এসে যদি পানি না পাই তাহলে কেমন লাগে? আমি তাই মসজিদের নলকূপে গিয়ে গোসল সেরে আসি।’
একই এলাকার দিনমজুর সিরাজ বলেন, ‘আমি সারা দিন মাঠে কাজ করি। বাড়িতে দুটি গরুও পালন করি অথচ গরু দুটি আজ কয়দিন গা ধোয়াতে পারিনি। আবার মাঠে এক বিঘা ধানের আবাদ আছে, তাতে সেচ দিতে গিয়ে বিপদে পড়তে হচ্ছে। যেখানে দুই ঘণ্টা মেশিনে পানি দিলে হয়ে যেতো। সেখানে এখন চারটা ঘণ্টা পানি দিয়েও হচ্ছে না।’
এ অঞ্চলের আবহাওয়া নির্ণয়কারী চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এখানে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে আপাতত আজকে বৃষ্টির সম্ভবনা নেই।’
মেহেরপুরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন জানান, সুপেয় পানির সমস্যা নিরূপণে যেসব এলাকায় সংকট সেখানে ১০টি বাড়িকে কেন্দ্র করে একটি ৯০০ ফুট গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এসব এলাকায় ৫০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে, তবে অতিবৃষ্টি ও পানির অপচয় রোধ করা না গেলে পানি সংকটের সমাধান মিলবে না।
আরও পড়ুন:নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের এক নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা মামলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষককে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে।
নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার বুধবার এ রায় দেন। জরিমানার অর্থ ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রদানের নির্দেশ দেন বিচারক।
দণ্ডাদেশ পাওয়া ওই শিক্ষকের নাম আবুল হাসান। ২৫ বছর বয়সী আবুল হাসান বদলগাছী উপজেলার উত্তর পাকুরীয়া গ্রামের বাসিন্দা ও একটি মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের শিক্ষক।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৯ মে সকাল ছয়টার সময় নয় বছর বয়সী ওই মেয়েটি একই গ্রামের আরবি শিক্ষক আবুল হাসানের বাড়িতে আরবি পড়তে যায়। সে সময় অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা না আসায় তাকে একা পেয়ে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর মা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা মেলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত আট জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিন আসামির উপস্থিতিতে তাকে দেয়া সাজার রায় পড়ে শোনানো হয় এবং শেষে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আজিজুল হক ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামলা পরিচালনা করেন। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে এবং আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানায়।
রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:পঞ্চগড়ের বোদা-দেবীগঞ্জ জাতীয় মহাসড়কে ট্রাক ও ট্রলির (ট্রাক্টর) মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পথচারী নারীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চার জন।
বুধবার সকালে বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের কলাপাড়া নামক স্থানে মহাসড়কে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হলেন- বোদা পৌরসভার সদ্দারপাড়া গ্রামের সাফিরের স্ত্রী ৬০ বছর বয়সী নুরজাহান ও একই উপজেলার মাজগ্রাম এলাকার মানিক ইসলামের ছেলে ২৫ বছর বয়সী জাহিদ ইসলাম।
বোদা থানার ওসি মোজাম্মেল হক দুজনের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেবীগঞ্জ থেকে পঞ্চগড়গামী একটি দ্রুতগামী ট্রাক ও বিপরীতমুখী একটি ট্রলির সংঘর্ষ হয়। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে থাকা এক পথচারী নারীকে গাড়িদুটি চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। দুর্ঘটনায় ট্রলির চালক জাহিদও ঘটনাস্থলে নিহত হন। এছাড়া স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মিয়ানমারে জান্তাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চলমান সংঘাতের মধ্যে এবার কক্সবাজারের টেকনাফে একটি গুলির খোসা এসে পড়েছে।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার জাদিমুড়া সিআইসি অফিসের জানালায় এসে পড়ে ওই গুলির খোসা। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি আহমদ বলেন, মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি থেকে এপারের ক্যাম্প-২৭ সিআইসি অফিসের জানালায় একটি গুলির খোসা এসে পড়ে ছিদ্র হয়ে যায়।
হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, রাতে মিয়ানমারের ওপারে চলা গোলাগুলির শব্দে ভয়ে লবণচাষিরা ঘরে ফিরে আসতে বাধ্য হন। গোলাগুলির বিকট শব্দে ঘরে থাকতে পারিনি। রাতভর থেমে থেমে গোলাগুলি হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তার সংঘাত চলছে। এরই মধ্যে ঘুমধুম-উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে এসে পড়ে মর্টারশেল ও গুলি। এ নিয়ে সীমান্তে উত্তেজনা রয়েছে।
বেশ কিছুদিন মিয়ানমার থেকে কোনো গুলি বা মর্টারশেল দেশে না এসে পড়লেও ওপারের শব্দ আসছে এপারে। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা পালিয়ে আশ্রয় নেন বাংলাদেশে।
নাটোরের সিংড়া উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম এবং সাধারণ সম্পাদক মোহন আলীকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ ডলার ও সাধারণ সম্পাদক শফিউল আযম স্বপন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
একই বিজ্ঞপ্তিতে বিএমএম ওয়াহিদুজ্জামান পিন্টুকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সোহেল রানা মুন্নুকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আযম স্বপন জানান, সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেল এবং দেলোয়ার হোসেন পাশা মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। এরপর গত ১৫ এপ্রিল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেতর থেকে লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ থেকে দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ করে নির্যাতন করে তার সমর্থকরা। এই ঘটনায় দেশব্যাপি সমালোচনা শুরু হলে পলকের নির্দেশে তার শ্যালক রুবেল মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।
তিনি বলেন, ফলে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার পাশাকে মঙ্গলবার একমাত্র পার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন রির্টানিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ। এই ঘটনায় বিভিন্ন মিডিয়ার খবর ও পুলিশের তদন্তে সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম এবং সাধারণ সম্পাদক মোহন আলী সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। ফলে তাদের দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় বেতুয়া বাজার ব্রিজ সংলগ্ন মাতামুহুরী নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ দুই জেলের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তারা হলেন- চকরিয়ার পূর্ব বড় ভেওলা এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে মনছুর আলম ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুস সালামের ছেলে মুবিন।
বুধবার সকালে নদীতে মাছ ধরতে নেমে নিখোঁজ হন ওই দুই জেলে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সহায়তায় নিখোঁজ হওয়ার ৬ ঘণ্টা পর বিকেলে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পূর্ব বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান ফারহানা আফরিন মুন্না বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুই জেলে নিখোঁজ হন। স্থানীয়রা নদীতে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও না পাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা এসে নদীর গভীরে তল্লাশি চালিয়ে ওই দুই জেলের মরদেহ উদ্ধার করেন।
মন্তব্য