চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উদ্ভিদ উদ্যানের উত্তর-পশ্চিম পাশে রয়েছে একটি অর্কিড হাউস। বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড এখানে সাজানো আছে।
গবেষণা ও প্রদর্শনের কাজে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অর্কিডগুলো সংগ্রহ করেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত অধ্যাপক ড. কামরুল হুদা ও তার সহযোগী গবেষকরা। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া এই অধ্যাপকের ধ্যান-জ্ঞান ছিল অর্কিড নিয়ে। এখানকার বেশির ভাগ প্রজাতির অর্কিডই কামরুল হুদার নিজের সংগ্রহ করা।
ক্যাম্পাসে যে বাসায় অধ্যাপক কামরুল থাকতেন, সে বাসার ছাদেই তিনি তৈরি করেন অর্কিডের সংগ্রহশালা। তিনি ও তার ছাত্ররা সেগুলো নিয়ে কাজ করতেন। তার মৃত্যুর পর তার সংগ্রহের সব অর্কিডের নতুন স্থান হয় উদ্ভিদ উদ্যানের অর্কিড হাউসে। বর্তমান অর্কিড হাউসটি অধ্যাপক কামরুল হুদার নামে নামকরণের বিষয়ে একটি নীতিগত সিদ্ধান্তও নিয়েছে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ।
অর্কিড হাউসটি ঘুরে কথা হয় অধ্যাপক ড. কামরুল হুদার গবেষণা সহযোগী ও এটির রক্ষণাবেক্ষণে থাকা উদ্ভিদ উদ্যানের সহকারী উদ্ভিদতত্ত্ববিদ ওয়াহিদুল আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, কয়েক প্রজাতির অর্কিড এখানে আছে এবং দুর্গম জায়গাগুলো ঘুরে এই অর্কিডগুলো তারা সংগ্রহ করেছেন।
ওয়াহিদুল বলেন, ‘চবির অর্কিড হাউসে ১২০ প্রজাতির অর্কিড সংগ্রহে আছে। এর মধ্যে ১০ প্রজাতি হাইব্রিড, বাকিগুলো সব দেশীয় প্রজাতির অর্কিড। এই অর্কিডগুলো দেখতে চমৎকার। কোনোটিতে রঙিন ফুল ফোটে, কোনোটি আবার ঔষধি গুণ রয়েছে। এদের বেশির ভাগই (প্রায় ৯০ প্রজাতি) বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির অর্কিড। আছে দুর্লভ প্রজাতির অর্কিডও। এই অর্কিডগুলো বেশির ভাগই অধ্যাপক কামরুল হুদার বাসায় সংগৃহীত ছিল। সংখ্যা হিসাবে এখানে প্রায় হাজারের ওপরে অর্কিড আছে।
‘বেশির ভাগ রেয়ার অর্কিডগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে পার্বত্য অঞ্চল রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেটের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ থেকে পাওয়া। অধ্যাপক কামরুল হুদা ও তার টিম মিলে অর্কিডগুলো বান্দরবানের থানচি, ক্রেওক্রাডংয়ের চূড়া, খাগড়াছড়ির বাঘাইছড়ি, সাজেক, উখিয়া, টেকনাফসহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে এগুলো সংগ্রহ করেছেন। এর বাইরেও সুন্দরবনে আমরা বেশ কিছু অর্কিড পেয়েছি যেগুলো নিউ রেকর্ড। শুধু তা-ই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকেও চার প্রজাতির রেয়ার অর্কিড পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক কামরুল স্যারের সঙ্গে কাজ করে একুশটা নতুন প্রজাতির অর্কিড আমরা আবিষ্কার করেছি, যেগুলোর পেপার পাবলিশ হয়েছে। অপ্রকাশিত রয়েছে আরও ১২টির মতো।’
অর্কিড সংরক্ষণের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘অর্কিডের জন্য প্রয়োজন একটু আলো-ছায়া ও আর্দ্র পরিবেশ। অর্কিড সরাসরি সূর্যের তাপ সহ্য করতে পারে না। এ জন্য ছায়াযুক্ত আর্দ্র পরিবেশে এখানের অর্কিডগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া অর্কিড বিভিন্ন গাছেও আমরা সংস্থাপন করে রেখেছি।’
অর্কিড নিয়ে কথা হয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি সরাসরি কাজ করেছেন অধ্যাপক কামরুল হুদার সঙ্গে। অর্কিডের ওপর এ বছর তাদের (কামরুল হুদা ও তার লেখা) একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এর পুরোটাই বলতে গেলে অধ্যাপক ড. কামরুল হুদা স্যারের হাতে গড়া। এগুলো স্যারের বাসায় ছিল। বর্তমানে উদ্ভিদ উদ্যানের সংগ্রহে আছে। অর্কিড হাউসটি অধ্যাপক ড. কামরুল হুদার নামে নামকরণ করা হবে।
‘কামরুল হুদা স্যার বাংলাদেশে ১৮৮ প্রজাতির অর্কিড আইডেন্টিফাই করেছেন। স্যারের কালেশনে সবগুলো না থাকলেও তার কন্টিনিউয়াস ফিল্ড এক্সপ্লোরেশন ছিল।’
এ শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের ফাইটোকেমিক্যাল ল্যাবরেটরি আছে। সেখানে অর্কিড নিয়ে তিনি (কামরুল হুদা) বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন যে আমাদের অর্কিডের নির্যাস দিয়ে কীভাবে ওষুধ তৈরি করা যায়। অর্কিডের বিভিন্ন অংশ কাঁচামাল হিসেবে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিকে সরবরাহ করতে পারলে সেখান থেকে ওষুধ তৈরি করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা মানবদেহে কাজ করার আগে ইঁদুরের দেহে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করতাম। আমরা সেখানে দেখতাম এটার কোনো ইফেক্ট আছে কি না। কোন অর্কিডের কোন অংশ কার্যকরী। এ ধরনের কাজগুলো স্যার বেঁচে থাকাকালীন চলমান ছিল। এখনও কয়েকজন গবেষক কাজ করছেন এ বিষয় নিয়ে।’
অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, ‘আমরা টিস্যু কালচার ল্যাবে কাজ করি। এই অর্কিডগুলো অ্যাভেইল্যাবল না, রেয়ার। অনেক দুর্গম এরিয়াতে থাকে। তাই আমরা এই অর্কিডগুলোকে টিস্যু কালচার করে ল্যাবে সংরক্ষণ ও আবাদ করি। রেয়ার অর্কিডগুলো যেখানে-সেখানে পাওয়া যাবে না। পরবর্তী সময়ে ওষুধশিল্পের জন্য সংরক্ষণে আমরা ল্যাবে এগুলোকে কালচার করে রাখি। মূলত যে প্রজাতিগুলো রেয়ার বা হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো আমরা কালচারের জন্য প্রায়োরিটি দিই।
‘অর্কিডে মেডিসিন ভ্যালু থাকায় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিও আগ্রহ দেখাচ্ছে। আগে অর্কিডকে শুধু বাহারি ফুলের জন্য বিবেচনা করা হতো। এসব কিছুর পথপ্রদর্শক ছিলেন অধ্যাপক কামরুল হুদা। অধ্যাপক কামরুল হুদা বিশ্বব্যাপী অর্কিড সংরক্ষণের সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ ন্যাচার স্পেসিস সারভাইবাল কমিশনের (আইইউসিএনএসএসসি) সদস্য ছিলেন।’
আবুল কাশেম বলেন, ‘অর্কিডের বাণিজ্যিক চাহিদাও আছে। অর্কিডের ফুল খুবই বাহারি ও বৈচিত্র্যময়। অনেক চমৎকার ফুল ফোটে। অন্যান্য সপুষ্পক উদ্ভিদ থেকে ভিন্ন অর্কিডের ফুল। বিভিন্ন নার্সারিও অর্কিডের কাট ফ্লাওয়ার (একক ফুল) কিংবা পুরো অর্কিডই বিক্রি করে। যদি অর্কিডশিল্প ভালোভাবে গড়ে ওঠে তাহলে বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।’
অর্কিডের বৈশিষ্ট্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘অর্কিডের মধ্যে বেশির ভাগই পরাশ্রয়ী। এগুলো অন্য গাছের ওপর জন্মে। এগুলোকে সংরক্ষণের জন্য মাটি তেমন লাগে না। অর্কিড সানলাইট থেকে নিজের খাবার তৈরি করে, অর্কিডের যে বস্তুর ওপর লেগে থাকে, সেখান থেকে নিউট্রেশন কালেক্ট করে, একটা ঝুলন্ত শিকড় থাকে সেটা দিয়ে বায়ুমণ্ডল থেকে জলীয়বাষ্প নিয়ে থাকে। এর বাইরেও কিছু অর্কিড আছে মাটিতে জন্মে। এক প্রজাতির অর্কিড আছে পানিতে জন্মে।’
বিলুপ্তির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মূলত মানব সৃষ্ট কারণে অর্কিড হারাচ্ছে। গাছ কাটা, বহুবর্ষজীবী গাছ কাটা, নগরায়নের প্রভাব, অর্কিড না চেনা এইসব কারণে অর্কিড বিলুপ্ত হচ্ছে। কেউ যখন গাছ কাটে তখন সে তো জানে না এই গাছে একটা অর্কিড আছে। আর হতে পারে এটা শুধু এক প্রজাতিই আছে। ফলে গাছ কাটায় অর্কিডটাও হারিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া অর্কিডের বংশবিস্তারও একটু স্লো। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও একটা কারণ।’
আরও পড়ুন:অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের পর নিরাপত্তাহীনতায় পুনরায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় গারো পাহাড় সীমান্তে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যসহ ৭ জনকে আটক করেছে বিজিবি।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল পৌণে সাতটার দিকে শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার নকশি সীমান্ত পথে নকশি ক্যাম্পের টহলরত বজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে বিকেলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
বিষয়টি ২৬ আগষ্ট সকালে বিজিবি পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়।
আটককৃতরা হলো মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রমজান আলী (২৪) ও আসমত আলীর ছেলে রাসেল (১৬)। আটক অনুপ্রবেশকারীরা হলো, নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বোমবাঘ গ্রামের শামীম শেখ (২৩), আফসানা খানম (২২), রুমা বেগম (৩২), মিলিনা বিশ্বাস (২৮) ও তিন বছর বয়সী শিশু কাশেম বিশ্বাস।
বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে গত ২৩ আগস্ট রাতের আধারে নালিতাবাড়ীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ পথে নারী এবং শিশুসহ ৫ বাংলাদেশীকে ভারতে পাঠায় মানব পাচারকারী রমজান আলী ও রাসেল। কিন্তু ভারতীয় পুলিশের তৎপরতায় নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে এ পাঁচ বাংলাদেশী। এ কারণে ২৫ আগষ্ট সোমবার সকাল পৌণে সাতটার দিকে ঝিনাইগাতির নকশি সীমান্তের কালিমন্দির এলাকা দিয়ে পুনরায় তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসময় টহলরত বিজিবি সদস্যরা টের পেয়ে সবাইকে আটক করে। পরে মানব পাচারে জড়িত দুইজনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এবং অন্য ৫ জনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অপরাধে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করা হয় এবং সবাইকে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ময়মনসিংহ বিজিবি’র ৩৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মেহেদী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
ঝালকাঠিতে গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনায় এনে ব্রান্ডশপ লোটো ও লি কুপার প্রতিষ্ঠানটি তাদের ১৩২তম ফ্লাগশিপ আউটলেট উদ্বোধন করেছে।
এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্ট লিঃ এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কাজী জাভেদ ইসলাম সহ কোম্পানির অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে নিয়ে ফিতা কেটে আউটলেটটি উদ্বোধন করেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।
পৌর শহরের সাধনার মোড়ে মঙ্গলবার ২৬ আগষ্ট সকাল ১০টায় লোটো ও লি কুপারের ফ্ল্যাগশিপ আউটলেটদ্বয়ের শুভ উদ্বোধন আনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠিতে কোম্পানীর এ যাত্রার প্রথম দিনে স্থানীয় ফ্যাশন সচেতন তরুণ তরুণীরা তাদের পছন্দের পন্য কালেকশন বেছে নিতে ভীর জমায়।
কোম্পানীর পক্ষ থেকে জানানো হয় প্রথম তিনদিনের প্রতিদিন প্রথম ৩০ জন পাবেন ৫০% ছাড়, ২য় ৩০ জন পাবেন ৪০% ছাড়, ৩য় ৩০ জন পাবেন ৩০% ছাড়, ৪র্থ ৩০ জন পাবেন ২০% ছাড় এবং তৎপরবর্তী সকল কাস্টমার পাবেন ১০% ছাড়। এই বিশেষ ছাড় ২৬শে আগষ্ট থেকে শুরু হয়ে ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে
নওগাঁয় সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আটক রেখে ধর্ষণ মামলায় আ: সালাম (৩৮) নামে এক আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আ: সালাম সদর উপজেলার বর্ষাইল মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম ওই শিক্ষার্থীর পরিবার পত্নীতলা উপজেলায় ভাড়া থাকতেন। ভাঙ্গারী ব্যবসার সুবাদে আসামী আ: সালামও পাশাপাশি একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে আ: সালাম বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিতো এবং রাস্তাঘাটে বিরক্ত করতো। বিষয়টি জানাজানি হলে আসামী আ: সালাম ওই ভিকটিমের পরিবারকে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখাতো। এরই একপর্যায়ে ২০২২ সালের ১১ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে আসামী আ: সালাম একটি বাজার এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নওগাঁ সদর উপজেলার ভবানীপুর দক্ষিন পাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ভাড়া বাড়িতে আটক রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা পত্নীতলা থানায় অভিযোগ করলে র্যাব ওই বাড়ি থেকে আসামিকে গ্রেফতার ও মেয়েকে উদ্ধার করে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামী আ: সালামসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ আ: সালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। বাকি আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলার এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী ফাহমিদা কুলসুম উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের বালুকাপাড়া গ্রামে রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় তাকে বিয়ে করায় এক দম্পতিকে দেড় বছর ধরে 'সমাজচ্যুত' করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে নালিশ দেওয়ার জের ধরে পেটানো হয় দিনমজুর আব্দুল জলিল প্রামানিককে। প্রতিপক্ষের লোকজনের মারধরে এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে গেছে।
এঘটনায় তিনি একটি থানায় অভিযোগ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে সেটি মামলাটি হিসেবে রের্কড করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
সরেজমিনে বালুকাপাড়া গ্রামে গিয়ে আব্দুল জলিলকে ১৮ মাস ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার তথ্য জানা গেছে। আব্দুল জলিলের সমাজচ্যুত করার ঘটনাটি স্থানীয় রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশীদ মন্ডলও অবগত আছেন। তিনি দুই পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকেও সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি।
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের কারণে আব্দুল জলিল প্রামানিক রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দেন। এঘটনার ২৯ দিন পর তিনি আবারও স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গ্রাম্য মাতব্বরেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল জলিল প্রামানিকের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখেন। সেই সময় জলিল প্রামানিক বিষয়টি আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে জানান। ইউএনও রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মণ্ডলকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। ইউপি চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। তবে কার্যত কোন কোনো সমাধান করতে পারেননি। এতে গ্রাম্য মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন। সমাজচ্যুত করে রাখা আব্দুল জলিল গত ১৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে গ্রামের মসজিদের দিকে রওনা হন। এসময় মাতব্বরেরা তাকে দুই দফায় প্রচন্ড মারধর করেন। এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে যায়। তিনি চিকিৎসা নিয়ে থানায় আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
বালুকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেড় বছর আগে আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। কয়েক দিন পর আবার সংসার শুরু করেন। এনিয়ে গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিল প্রামানিককে সমাজচ্যুত করেন। এনিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বৃদ্ধা লুৎফন নেছা বলেন, আমি কাজ করতে পারিনি। আব্দুল জলিলের বউ আমার বাড়িতে এসে জবাই করা মুরগির তরকারি রান্না করে দিয়েছিল। আমি জলিলের বাড়িতে গিয়ে এক বাটি মুরগির মাংসের তরকারি দিয়ে এসেছি। এতে আমাকেও সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল।
বালুকাপাড়া গ্রামের মোড়ের দোকানি হাফিজার রহমান বলেন, বউকে তালাক দেওয়ার ঘটনায় আব্দুল জলিল প্রামানিককে গ্রামের মাতব্বরেরা সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল গ্রামের সামাজিক কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেয় না।
আব্দুল জলিল প্রামানিক বলেন, আমি রাগের মাথায় স্ত্রী তালাক দিয়েছিলাম। ২৯ দিন পর আবার বিয়ে পড়ে নিয়েছি। একারণে গ্রামের মাতব্বর রকি খান, মিল্টন খাঁ, আবু সুফিয়ানসহ আরও ১০-১২ জন আমাকে সমাজচ্যুত করেছেন। রাগের মাথায় স্ত্রীক। তালাক দিলে পুনরায় বিয়ে করা যাবে ঢাকার একজন মুফতির মতামত নিয়ে আসার পরও তারা মানেনি। তারা বলছে হিল্লা বিয়ে ছাড়া আমার বিয়ে বৈধ হবে না। তারা আমাকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে গ্রামের মসজিদে নামাজ আদায়ে করতে ও জানাজায় শরিক হতে বা দেননি। মিলাদ মাহফিল দাওয়াত দেওয়ার মাতব্বরদের চাপে পর ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি গ্রামের কারও জমিতে দিনমজুরি কাজও করতে পারব না বলে লোকজন জানিয়ে দেন। একারণে কেউ আমাকে কাজে নেয় না। সমাজচ্যুত করার জের ধরে মসজিদে যাওয়ার সময় মাতব্বরদের একাংশের লোকজন আমাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছেন।
গ্রামের মাতব্বদের একজন মো. মিল্টন খাঁ। তিনি আব্দুল জলিলের দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি। তাকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কাজ করেছেন। একারণে গ্রামের লোকজন তাকে সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কি কাজ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আবার স্ত্রীকে নিয়েছেন। এটা সমাজ বিরোধী কাজ।
আক্কেলপুর রায়কালী ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মন্ডল বলেন, আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। এঘটনায় গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলকে সমাজচ্যুত করেন। আব্দুল জলিল ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। ইউএনও স্যার আমাকে ঘটনাটি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছি। আব্দুল জলিল যেন সামাজিকভাবে মিশতে পারে সেটি বলেছি। সমাজচ্যুতের ঘটনার জের ধরে আব্দুল জলিলকে মারধর করা হয়েছে। এতে তার বাম হাত ভেঙেছে বলে জেনেছি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল জলিল প্রামানিক থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেটি মামলা হিসেবে রের্কড করা হয়েছে। আসামি আট জনের মধ্যে ইতিমধ্যে আদালত থেকে পাঁচজন আসামি জামিন নিয়েছেন, অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য