ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী আচরণের অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে সরকারের কাছে সহজে ব্যবসা করারও সুযোগ চেয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা: বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সভাপতিত্বে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ নেতারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এসময় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘সারাবিশ্বে গড় কর্পোরেট করের হার ২৩ শতাংশ, কিন্তু দেশে কর্পোরেট করের হার ৩০ শতাংশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পরামর্শ মেনে অন্যান্য দেশগুলোর ট্যাক্স কমিয়ে আনছে কিন্তু আমাদের এখানে সে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। গুটিকয়েক চোরের কারণে সব ব্যবসায়ীকে চোর হিসাবে দেখা হয়। তাদেরকে নানাভাবে নানা কারণে হয়রানি করা হচ্ছে। সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও বেশি ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে।’
শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ করে সরকার ভ্যাট যুক্ত করে দিল, কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো তো এখনও রেডি হয়নি। কারো সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ করেই একটা পণ্যের উপর ট্যাক্স ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করে দেয়া হয়। এই যে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস ভেঙে যাচ্ছে আত্মবিশ্বাস নষ্ট হচ্ছে এতে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এনবিআরের অথোরিটারিয়ান (কর্তৃত্ববাদী) মনোভাব পরিহার করতে হবে। না হলে সরকারের ব্যবসা-বান্ধব যে মনোভাব, সেটা নষ্ট হবে। যিনি করের হার ঠিক করবেন, তিনি কর তুলবেন এটা কীভাবে হয়। কর নির্ধারণ ও কর আদায়ে আলাদা সংস্থা থাকা উচিত। ট্যারিফ কমিশন বা অন্য কোনো সংস্থা এটা করতে পারে।’
কিছু প্রকল্প মানুষের ভোগান্তির কারণ হচ্ছে উল্লেখ করে এই সাবেক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘অদক্ষতার কারণে অনেক প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বেড়ে যায়, এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি মানুষকে এত দুর্ভোগ দিচ্ছে। এটা নয় বছর ধরে চলছে। মানুষকে সীমাহীন কষ্ট দিচ্ছে। এর জন্য যারা দায়ী তাদের অবশ্যই শাস্তি দেয়া উচিত।’
দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে আরও বেশি প্রণোদনা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা ছোট, তাদের হয়তো কমপ্লায়েন্স নাই, কারও ট্রেড লাইসেন্স নাই, কারও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, এজন্য তারা বিভিন্ন প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হন। তারা কিন্তু এ দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, এটা আমাদেরকে স্বীকার করতে হবে। তাই তাদেরকে কীভাবে সহযোগিতা দেয়া যায়, সেটা আমাদেরকে দেখতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমি একজন সচেতন দর্শক। ব্যবসায়ীরা যেসব দাবিদাওয়া করছেন, গত ১০ বছর ধরে দেখে আসছি। আমার মনে হয় না, আমার এ জীবনে এগুলো পুরোপুরি সমাধান হবে। সব সমাজে এসব সমস্যা আছে, হয়তো আমাদের এখানে বেশি। তার হয়তো সঙ্গত কোনো কারণ আছে।’
তিনি বলেন, ‘কীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ আরও সহজ করা যায়, সেটি করা উচিত। এটা হয়তো পুরো মসৃণ হবে না। এমন অনেক কিছুই আছে, যা তাৎক্ষণিক সমাধান করা যায়। কিন্তু এক জায়গায় হাত দিতে গেলে ২০ জায়গায় নড়াচড়া হয়। ভয় এত বেশি মাথায় উঠে যে, আগায় না।’
অথরিটি শব্দটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘অথরিটি শব্দটা অনেকেই পছন্দ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী পছন্দ করেন না। কেন বিডা (বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটি) হবে, বিপা (বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সি) হবে না? অথরিটি, মাই গড!’
তিনি বলেন, ‘অথরিটিকে কুর্নিশ করতে কে আসে? এগুলো তো মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য সেবা সংস্থা। এসব নিয়ে সরকারি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরও আলোচনা বাড়াতে হবে।
‘অনেকগুলো ফিগার নিয়ে আমরা খুব বেশি লাফালাফি করছি। তবে যখন পুরো দুনিয়ার দিকে তাকাই, তখন দেখিই সেটা খুব বেশি না। ব্যবসায়ীদের সব দাবি-দাওয়া আমি সরকারের কাছে তুলে ধরব।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, ‘ব্যবসায়ীদেরকে সহজে ব্যবসা করার সুযোগটা দেন। বছরের ৩৫ থেকে ৫০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য যুক্ত হচ্ছে, তাই এদেশের প্রচুর উদ্যোক্তা তৈরি করতে। এজন্য ব্যবসার পরিবেশ আরও সহজ হতে হবে। এইসব ডুইং বিজনেস সহজ হলেই দেশে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, দেশে বিনিয়োগ বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। জার্মানি ও আমেরিকার মতো দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হচ্ছে এসএমই। সুতরাং তাদের কথাই আগে ভাবতে হবে। এটা কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে বড় জায়গা।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে আয়কর, ভ্যাট ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২২টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের টেক জায়ান্ট ওয়ালটনের ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো ‘পার্টনার্স টুগেদার-২০২৫’ শীর্ষক সম্মেলন।
এতে দেশজুড়ে ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত সহস্রাধিক ব্যবসায়িক অংশীদারসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের বিক্রয় প্রতিনিধি, কর্মকর্তা এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা অংশ নেন।
গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক পার্কে বৃহস্পতিবার সকালে বেলুন উড়িয়ে ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের ওই সম্মেলন উদ্বোধন করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির চেয়ারম্যান এস এম শামছুল আলম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম।
ওয়ালটন ব্র্যান্ডের প্রতি সিংহভাগ ক্রেতার আস্থা বজায় রাখা, পণ্য বিক্রয়ে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, গ্রাহককে সর্বোচ্চ সেবা ও সুবিধা প্রদান, বাজার গবেষণা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সময়োপযোগী বিপণন কৌশল প্রণয়নের মতো বিষয়ে সম্মেলনে আগত ডিস্ট্রিবিউটররে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ দেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
তারা চলতি বছর নতুন নতুন মডেলের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব, সর্বাধুনিক ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং ফিচারের প্রযুক্তিপণ্য বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেন।
ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের হেড অব সেলস ফিরোজ আলমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ রায়হান, ওয়ালটন হাই-টেকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এএমডি) ও চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) মো. জিয়াউল আলম, এএমডি মো. ইউসুফ আলী, ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের এএমডি প্রকৌশলী লিয়াকত আলী, ওয়ালটন হাই-টেকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মফিজুর রহমানসহ অনেকে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক এবং ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিন খান।
২০২৪ সালে বিক্রয় বৃদ্ধিতে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করায় সম্মেলনে ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের ১৭৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য শেষ হয় ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের দিনব্যাপী এই সম্মেলন।
আরও পড়ুন:গাজীপুরের কাজী নেচার ক্যাম্পে শনিবার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে ট্রেইনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের।
দিনব্যাপী লার্নিং গেমসভিত্তিক ট্রেইনার্স ট্রেনিং ও রিট্রিটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৫০ জন প্রশিক্ষক অংশ নেন।
এ আয়োজন প্রশিক্ষণের নতুন নতুন কৌশল শেখার পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বন্ধন সুদৃঢ় করার এক অনন্য সুযোগ তৈরি করে।
ট্রেইনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সহসভাপতি ইউসুফ ইফতি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষক তৈরি, আয়ের নতুন পথ সৃষ্টিতে সহায়তা, প্রশিক্ষকদের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ হাজার প্রশিক্ষক তৈরির লক্ষ্যে কাজ করব। এই উদ্যোগ দেশের পেশাগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
ট্রেইনারসের নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কেএম হাসান রিপন, প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সহসভাপতি ইউসুফ ইফতি, সহসভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মোহাম্মদ মোরাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেল এইচ খান, পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লায়লা নাজনীন এবং পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জিয়া উদ্দিন মাহমুদ।
অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ ও কার্যকর করার জন্য রওনক জাহান নিসাকে সমন্বয়কারী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।
ট্রেইনারসের সভাপতি কে এম হাসান রিপন বলেন, ‘আজকের অনুষ্ঠানটি শুধু শিক্ষামূলকই নয়, বরং উদ্বুদ্ধ করার মতো একটি মাইলফলক। এটি নেটওয়ার্কিং এবং দক্ষতা উন্নয়নের একটি চমৎকার সুযোগ তৈরি করেছে। আমরা দেশের সকল প্রশিক্ষকদের আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাই।’
কাজী নেচার ক্যাম্পের সুযোগ-সুবিধার প্রশংসা করে ট্রেইনারসের সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করার পর আমরা কাজী নেচার ক্যাম্পকে প্রশিক্ষণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হিসেবে পেয়েছি। এখানে ট্রি-টপ অ্যাক্টিভিটিস, বোটিং, কায়াকিং, টেন্ট, ফায়ার ক্যাম্প, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারসহ অসাধারণ সেবা রয়েছে। এটি প্রশিক্ষণের জন্য আদর্শ পরিবেশ।’
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শায়লা আশরাফ, সামিরা হক, আজিজ সেলিম, ইসরাত জাহান, সুমন ও ইকবাল কার্যক্রম নিয়ে তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ট্রেইনারসের ঐতিহাসিক সূচনা চিহ্নিত করে। ভবিষ্যতে আরও প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রমের মাধ্যমে ট্রেইনারস দেশের প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শক্তিশালী নেতৃত্ব ও উদ্ভাবনী চিন্তাধারার মাধ্যমে ট্রেইনারস প্রশিক্ষকদের ক্ষমতায়ন ও জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম শনিবার ইউএনবিকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২ জানুয়ারি মাসুদ বিশ্বাসের নামে মামলা করে দুদক।
এ মামলায় মাসুদ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে সংস্থার একটি দল তাকে আদালতে হাজির করবে।
এর আগে ২ জানুয়ারি দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এক কোটি ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ৬২২ টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে।
মাসুদ বিশ্বাসের স্ত্রী কামরুন নাহারের সম্পদের বিবরণীও চেয়েছে দুদক। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে বলে দুদক জানিয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ২ জানুয়ারি তার নামে মামলা হয়।
মূলত অর্থ পাচার প্রতিরোধেই কাজ করে বিএফআইইউ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মাসুদ বিশ্বাস পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন:বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে ছোট হলেও গণমুখী উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অর্থনীতি এখন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করতে একনেকের কয়েকটি সভায় উপদেষ্টারা এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়, এমন ছোট ছোট প্রকল্প বাছাই করতে সরকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে।
ইউএনবিকে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তবে এসব ছোট প্রকল্প অবশ্যই স্থানীয় জনগণের জন্য ব্যাপকভাবে উপকারী হতে হবে, এটিই বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একনেক সভায় স্পষ্টভাবে বলা হয়, সরকার দেশের মানুষের কল্যাণে কিছু ভালো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায়।
এ বিষয়ে একনেক সভায় এসব প্রকল্প থেকে যারা উপকৃত হবেন, তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আলোচনা করতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্দিষ্ট এলাকায় কোনো উন্নয়ন করার সময় প্রথমে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, কোনো সেচ প্রকল্প নির্দিষ্ট এলাকার জন্য নেওয়া হলে তা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে যথাযথ আলোচনা করে তাদের প্রচলিত সেচ প্রক্রিয়া ও নতুন সেচ ব্যবস্থার প্রতি তাদের মনোভাব সম্পর্কে জানতে হবে।
তিনি বলেন, ‘নতুন সেচ প্রকল্পটি যদি স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আলোচনা না করে রাজধানী শহর থেকে নকশা করা হয়, তাহলে তা ব্যবহারকারীদের জন্য কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। কারণ স্থানীয় জনগণ হয়তো এ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন না বা ব্যবহার করতে উৎসাহিত হবেন না।’
পরিকল্পনা কমিশনের এ কর্মকর্তা বলেন, ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে বড় প্রকল্প চালু করলে ভালো রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগ নাও থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ‘তাই সরকার এডিপি বাস্তবায়নের হার বৃদ্ধি এবং অর্থনীতিকে চাঙা করতে স্থানীয় পরামর্শ নিয়ে ছোট ছোট প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায়।’
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর মেয়াদে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ১৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের গত বাজেটে পাস হওয়া ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার এডিপির মধ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছিল মাত্র ১২ দশমিক ৩ শতাংশ।
ছাত্র-নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়।
আইএমইডির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-নভেম্বর সময়ে এডিপির ব্যয় হয় ৩৪ হাজার ২১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৬ হাজার ৮৫৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান ও নতুন প্রস্তাবিত সব প্রকল্প পর্যালোচনায় বিলম্বের পাশাপাশি অর্থ ছাড়ে ক্রমবর্ধমান বিলম্বকে এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আইএমইডি কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া আগস্টের শুরুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেক ঠিকাদার প্রকল্পগুলো ছেড়ে চলে যায়।
আরও পড়ুন:সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) ভিত্তিতে মিয়ানমার থেকে ২২ হাজার টন আতপ চাল নিয়ে ‘এমভি গোল্ডেন স্টার’ নামের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত চালের প্রথম চালান। জাহাজে রক্ষিত চালের নমুনা সংগ্রহ করে ভৌত পরীক্ষা শেষে দ্রুত খালাসের কাজ শুরু হবে। এ জন্য এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে পাকিস্তান থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্তের কথা জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৪ জানুয়ারি খাদ্য অধিদপ্তর ও ট্রেডিং করপোরেশন অফ পাকিস্তানের (টিসিপি) মধ্যে এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল খালেক ও টিসিপির চেয়ারম্যান সৈয়দ রাফিউ বশির শাহ নিজ নিজ পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সরকারের ক্রয় কমিটির অনুমোদনের পর চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হবে। ওই চাল আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশে আসতে শুরু করবে।
এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করতে এ সমঝোতা স্মারক এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:ঢাকার পুঁজিবাজারে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শুরু হয়েছে পতন দিয়ে।
লেনদেনের শুরুর ঘণ্টাতেই পয়েন্ট কমে তিনটি সূচকের।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সোমবার লেনদেন শুরুর পর থেকেই সূচক কমতে থাকে।
প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৬ পয়েন্ট। আর বাছাইকৃত ব্লুচিপ সূচক ডিএসই-৩০ কমেছে ২ পয়েন্ট।
পতনের ধারা অব্যাহত ছিল শরিয়াহভিত্তিক শেয়ারের সূচকে। ডিএসইএসের সূচক কমে দশমিক ১৩ পয়েন্ট।
শুরুর ঘণ্টায় বাজারে লেনদেন হয় প্রায় ৮০ কোটি টাকার। লেনদেন হওয়া শেয়ারের মধ্যে দাম কমে ১৫৪টি এবং বাড়ে ১২২টি শেয়ারের। দাম অপরিবর্তিত ছিল ৮০টি শেয়ারের।
দামের দিক থেকে ভালো অবস্থানে ছিল অটোমোবাইল, পেপার মিলস, ফেব্রিকস ও প্রকৌশল কোম্পানির শেয়ারের দাম। দিনের শুরুতে শীর্ষ ২০ ব্যাংক খাতের শেয়ারের সংখ্যা তিনটি।
এদিকে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজার সূচক হারিয়েছে ৩৮ পয়েন্ট। দুই দিনের পতনে বর্তমানে প্রধান সূচক কমে নেমেছে ৫ হাজার ১৫৫ পয়েন্টে।
পতনের ধারা অব্যাহত আছে চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের প্রথম ঘণ্টায় নিম্নমুখী ছিল প্রধান সূচক।
এ পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতেই দাম কমেছে ৪১টি এবং বেড়েছে ২৭টি কোম্পানির শেয়ারের। প্রথম ঘণ্টায় লেনদেন হয়েছে ৪৭ কোটি টাকার শেয়ার ও বন্ডের।
আরও পড়ুন:বাংলা ট্র্যাক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘আমি প্রবাসী’, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এ চুক্তির মাধ্যমে ‘গার্ডিয়ান প্রবাসী প্রহরী’ নামে একটি বিশেষ বিমা সেবা চালু করেছে, যা বিশেষভাবে প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারকে সুরক্ষা দেবে।
আমি প্রবাসীর পক্ষে বাংলা ট্র্যাক গ্রুপের গ্রুপ হেড অফ ইনোভেশন এম তানভীর সিদ্দিকি ও গার্ডিয়ান লাইফের সিইও শেখ রকিবুল করিম, এফসিএ সম্প্রতি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
বিশেষ এ বিমা সেবাটি প্রবাসীদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সুবিধা দেবে। এসবের মধ্যে রয়েছে বিদেশে হাসপাতাল সেবার খরচ, মৃত্যুজনিত কভারেজ, স্থায়ী বা আংশিক অক্ষমতার কভারেজ, বিনা মূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা, ইনকাম লসের কভারেজ, মৃতদেহ দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা ও দাফন সেবা।
এসব সুবিধা প্রবাসী বাংলাদেশিদের আর্থিক সুরক্ষা এবং মানসিক শান্তি নিশ্চিত করে তাদের সার্বিক ভালো থাকা নিশ্চিত করবে।
এ বিষয়ে বাংলা ট্র্যাক গ্রুপের গ্রুপ হেড অফ ইনোভেশন এম তানভীর সিদ্দিকি বলেন, ‘চুক্তিটি আমাদের প্রবাসীদের ক্ষমতায়নের প্রতি প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা এমন একটি সল্যুশন আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে সহায়তা করবে, যাতে তারা নির্বিঘ্নে কাজ করে তাদের উপার্জনে মনোনিবেশ করতে পারেন।’
গার্ডিয়ান লাইফের সিইও শেখ রকিবুল করিম বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সবসময় বিমাকে সহজলভ্য ও অর্থবহ করে তোলা। এ চুক্তির মাধ্যমে আমরা প্রবাসীদের চাহিদা পূরণে কাজ করব যাতে তারা পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন, সুরক্ষিত অনুভব করতে পারেন।’
অনুষ্ঠানটিতে আরও উপস্থিত ছিলেন আমি প্রবাসীর পক্ষে মো. সাজেদুল হক (চিফ টেকনোলজি অফিসার), আহসানুল হক (হেড অফ বিজনেস অপারেশনস), সিয়াম আহম্মদ (অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) এবং মো. সাইফ-উল-আলম (কমিউনিকেশন লিড)।
গার্ডিয়ান লাইফের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আবদুল হালিম (এসভিপি এবং হেড অফ মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স), মো. জালাল উদ্দিন (ম্যানেজার, মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্ট), নওশীন নাহার হক (এভিপি, মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্ট) এবং শারমিন আক্তার শাওন (বিজনেস রিলেশনশিপ ম্যানেজার, মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্ট)।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য