জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র আবাসিক হল ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’-এ চার দিনে প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্রী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
অনিরাপদ পানি ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে ছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।
তারা জানান, ১৬ তলা এই ভবনটিতে কেবল নিচতলায় একটি ফিল্টার আছে। সে কারণে সেখানে দীর্ঘ লাইন লেগে থাকে। ফলে ছাত্রীরা সরবরাহ করা পানি সরাসরি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন।
তবে হলে সরবরাহ করা পানি গবেষণাগারে পরীক্ষা করে জীবাণু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রভোস্ট শামীমা বেগম। তিনি দাবি করেছেন, পানি নিয়ে ছাত্রীদের অভিযোগ শুধু শুধু তোলা হচ্ছে। ছাত্রীরা এখানে নতুন উঠেছে উল্লেখ করে তিনি এমনও বলেছেন যে তাদের মানিয়ে নিতে সময় লাগবে।
দ্বিতীয় তলা থেকে ষোল তলা পর্যন্ত প্রতিটি তলায় পানির ফিল্টার বসানো হবে জানালেও সেটি কবে হবে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
আক্রান্ত কত
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের তথ্য বলছে, ২৭ মার্চ থেকে চার দিনে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ৫৮ ছাত্রী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে বুধবার বেলা ২টা পর্যন্ত ১৫ জন, মঙ্গলবার ১৪, সোমবার ১২ ও রোববার ১২ ছাত্রী চিকিৎসা নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ছাত্রী হলের পাঁচ শিক্ষার্থী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সেন্টারটিতে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। সেখান থেকে প্রাথমিক ওষুধ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যাদের অবস্থা গুরুতর, তাদেরকে কাছের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে একজনকে ন্যাশনাল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে আসছেন। বৃহস্পতিবার সাতজন অনাবাসিক শিক্ষার্থী সেখানে চিকিৎসা নেন।
বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শামসুন নাহার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার রুমে চারজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। আমি শুধু হলের খাবার ও পানি খাই। বাইরে কিছু খাই না। এখন হলের পানি, খাবার থেকে এ সমস্যা হতে পারে।’
আরেক ছাত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পানির ফিল্টার একটা। এক হাজার ২০০ ছাত্রীর পানির জন্য সিরিয়াল সারা দিনে শেষ হয় না। পানির সিরিয়ালের ভয়ে পানিও ঠিকমতো খাওয়া হয় না। মেয়েরা তো অসুস্থ হবেই।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুন্নি আক্তার বলেন, ‘হলের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। হলে বেশ কয়েকটি তলায় অনেকের ডায়রিয়া হয়েছে। ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায়। এই পানি দিয়ে হলের ডাইনিংয়ে রান্না করা হয়। এ কারণে রান্না করা খাবার লাল রঙের হয়ে থাকে।’
হল ডাইনিংয়ের প্রধান পরিচালক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘হলের প্রধান সমস্যা নিরাপদ পানি। পানি কিছুক্ষণ গ্লাসে রাখলেই আয়রনের কারণে লাল হচ্ছে। গ্লাস ও জগে কয়েক দিনের মধ্যে আয়রন পড়ে যাচ্ছে।’
প্রাধ্যক্ষ বললেন, মেয়েদের অভিযোগ শুধু শুধু
হল কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে তারা।
প্রাধ্যক্ষ শামীমা বেগম বলেন, ‘যাদের ডায়রিয়া হয়েছে, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। আমরা হল পরিদর্শন করি। ছাত্রীদের অপরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও নজরে এসেছে। সুস্থ থাকতে নিজেদেরও পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।’
পানি নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা শুধু শুধু অভিযোগ করছে। তারা পানি ঘোলা ও গন্ধ বলছে। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি, পানি পরিষ্কার।
‘তারা যেহেতু নতুন এসেছে, তাই মানিয়ে নিতে হয়তো কিছুদিন সময় লাগবে। এ ছাড়া প্রচণ্ড গরমেও এমন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।’
আরও পড়ুন:পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত করে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেছেন, ‘কাজটা যুদ্ধের মতো হয়েছে। ঠিক কবে নাগাদ সব বই ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া যাবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব না।’
বুধবার ‘পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন ও মোড়ক উন্মোচন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন ১৫ জানুয়ারি আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলছেন ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেয়া যাবে। আমি কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো কমিটমেন্ট দেবো না। পাঠ্যবই কবে ছাপা শেষ হবে, তা নিয়ে আমি কিছু বলবো না।’
ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেন, ‘প্রথম সমস্যাটা হলো- আমরা বিদেশে বই ছাপাব না। তারপর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে অনিবার্য কারণে। তাতে বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। যখন কাজ শুরু করা হয়েছিল, সেটা অনেক দেরিতে হয়েছে। অনেক বই পরিমার্জন করতে হয়েছে।
‘রাজনীতিতে নিরপেক্ষ বলে কিছু থাকে না। দলীয় রাজনীতিনিরপেক্ষ সবকিছু যেন বইয়ে থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শিশুদের কাছে বই যাবে। সেটা ভালো কাগজে ছাপা না হলে তো হয় না। সেজন্য উন্নত মানের ছাপা, উন্নত মানের কাগজ ও মলাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘তাছাড়া এনসিটিবিতে আগে যারা কাজ করেছেন তাদের অনেককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। যাদের বসানো হয়েছে, তারা অভিজ্ঞ। কিন্তু মুদ্রণ শিল্প সমিতির যে নেতা, তাদের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়াটা করতে হয়, এটা তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। বই একটু দেরিতে পেলেও শিক্ষার্থীরা ভালো বই পাবে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে যাবে না।’
পাঠ্যবই নিয়ে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘গল্পের একেবারে শেষে গিয়ে ছাড়া যেমন ষড়যন্ত্রকারী কে তা বোঝা যায় না, এখানেও তেমন। সেটা সরকারের কেউ হোক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হোক, এনসিটিবির হোক, মজুতদার হোক, সিন্ডিকেট হোক। মানে, যে কেউ হতে পারে।
‘তবে এখনই আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে আমরা একচেটিয়া ব্যবসা কমিয়ে আনবো। এটা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে।’
নতুন যে শিক্ষাক্রম আওয়ামী লীগ সরকার করেছিল, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয় জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেকে সমালোচনা করছেন- কেন পেছনের শিক্ষাক্রমে ফিরে গেলাম আমরা। আমি মনে করি, যে শিক্ষাক্রম করা হয়েছিল নতুন করে, সেটাতে থাকলে শিক্ষার্থীদের আরও পশ্চাৎপদে নিয়ে যাওয়া হতো।’
তিনি বলেন, ‘দুই বছর এ শিক্ষাক্রম চালিয়ে গেলে সেখান থেকে ফেরার উপায় ছিল না। সেটা সহজও হতো না। সেজন্য আমরা সাময়িকভাবে পেছনের শিক্ষাক্রমে গেছি। এটা আবার এগিয়ে নেয়ার কাজ করা হবে।
‘এবার কিছু পরিমার্জন হয়েছে। আগামীতে আরও পরিমার্জন করা হবে, যাতে শিক্ষাক্রমে ধারাবাহিকতার কোনো ঘাটতি না থাকে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম।
আরও পড়ুন:দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আজ বুধবার থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টারের অফলাইন ও অনলাইন কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। নির্দেশ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিজিএমই) মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জন্য দেশের ১৯টি কেন্দ্রে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন নীতিনির্ধারণী মহল সজাগ রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এবং সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা, সতর্কতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকল্পে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষা-১ শাখার নির্দেশনার আলোকে ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত সব পর্যায়ে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত মেডিক্যাল কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি সব মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। আর ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি।
রাজধানীর সরকারি দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মিরপুরের আর সি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম হবে ‘লালকুঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিরপুর ঢাকা’। আর শেখ কামাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম হবে ‘আনন্দ নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিরপুর, ঢাকা’।
গত ২৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বিদ্যালয়-২) রেবেকা সুলতানা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রজ্ঞাপনটি মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন নীতিমালা, ২০২৩ অনুযায়ী দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হলো। রাজধানীর মিরপুরের আর সি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নাম ‘লালকুঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিরপুর ঢাকা’ এবং একই এলাকা মিরপুরের শেখ কামাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নাম ‘আনন্দ নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিরপুর, ঢাকা’।”
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ‘জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২৩–এর তথ্য বলছে, বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৫টি। এগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৫ জন। অন্যদিকে শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন।
আরও পড়ুন:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) ২০২৫ সেশনের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতি পদে বণিক বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেদী মামুন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন মনোনীত হয়েছেন।
সোমবার দুপুর ২টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক খো. লুৎফুল এলাহী নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। পরে বেলা ১টা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলে।
কার্যকরী পরিষদের অন্য সদস্যরা হলেন- সহ-সভাপতি পদে বায়েজীদ হাসান রাকিব (দৈনিক ইনকিলাব), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে জোবায়ের আহমেদ (ডিবিসি নিউজ), কোষাধ্যক্ষ পদে রাজীব রায়হান (প্রতিদিনের বাংলাদেশ) এবং দপ্তর ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে শাহ্ আলম (ডেইলি অবজারভার)।
এছাড়া কার্যকরী সদস্য হয়েছেন- সৈকত ইসলাম (জাগো নিউজ), আশরাফুল মিয়া (দ্য নিউজ) ও রাসেল মাহমুদ (ব্রেকিংনিউজনেট.কম)।
নির্বাচনে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজাউল রকিব এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইউসুফ হারুন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানো, পোষ্য কোটা বাতিল, চাকসু নির্বাচন ও গুপ্ত হামলার সুষ্ঠু বিচারসহ নয় দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিতে গেলে তাদেরকে ওয়েটিং রুমে বসতে বলে বেরিয়ে যান উপাচার্য। তবে পরীক্ষার আবেদন ফি না কমিয়ে এক হাজার টাকা বহাল রাখার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রোববার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিতে প্রশাসনিক ভবনে যান তারা। তখন উপাচার্যের পিএস তাদেরকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রেখে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতারকে অন্য দরজা দিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র অধিকার পরিষদ চবি শাখার সদস্য সচিব মো. রোমান রহমান বলেন, ‘আজকে প্রশাসনিক ভবনে নয় দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিতে গেলে ওয়েটিং রুমে আমাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করি।
‘এক সময় দেখা যায় ভিসি স্যার প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আমরা দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে স্যারের গাড়ির সামনে দাঁড়াই। স্যারকে বিষয়টি অবগত করি। কিন্তু তিনি আমাদের কোনো কথাই শুনতে রাজি ছিলেন না। তার ভাষ্যমতে, তাকে এ ব্যাপারে কেউ জানায়নি।
তবে চবির ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানোর বিষয়ে উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভায় ফি কমানোর বিষয়ে আলাপ হয়েছিলো। তবে আগের বছরের খরচ বিবেচনা করে এ বছর ফি কমানো সম্ভব হয়নি।’
পোষ্য কোটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পোষ্য কোটা আমরা নির্দিষ্ট আসন থেকে দিচ্ছি না। কোনো বিভাগে ১০০ আসন থাকলে এই আসনগুলোতে পোষ্য কোটা প্রযোজ্য হবে না। বরং এর বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত হিসেবে ওই বিভাগে দুই বা তিনটি আসন রেখে পোষ্যদের ভর্তি নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে ওই বিভাগে ১০২ বা ১০৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন।
শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবি হলো- ভর্তি আবেদন ফি ২০০ টাকা করতে হবে; মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা, পোষ্য কোটাসহ সব ধরনের অযৌক্তিক কোটা বাতিল করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা চালু করতে হবে; বন্ধ হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা, বাড়ির দূরত্ব এবং মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ ও অতিদ্রুত নতুন দুটি হল নির্মাণ করতে হবে; ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল এক্সট্রা কারিকুলার সংগঠনসমূহকে অফিস বরাদ্দ দিতে হবে; অনতিবিলম্বে টিএসসি নির্মাণ করতে হবে; অতি দ্রুত চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন দিতে হবে; প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল প্রদান ও অনলাইনে রেজাল্ট প্রকাশসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড অনলাইনভিত্তিক করতে হবে; সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হামলার সুষ্ঠু বিচার ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন:২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, প্রশ্নের ধরন ও নম্বর বণ্টন প্রকাশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এতে নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
শনিবার বোর্ডের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের মোট ৩২টি বিষয়ের সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন তুলে দিয়ে দেশে ‘নতুন শিক্ষাক্রম’ চালু হয়েছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরে এই শিক্ষাক্রম বাদ দেয়ার ঘোষণা এসেছিল। অন্তর্বর্তী সরকার আবার বিভাগ বিভাজন ফিরিয়ে আনল।
২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার নম্বর বিভাজনে দেখা গেছে, ব্যবহারিক না থাকা বিষয়গুলোতে ৭০ নম্বর রচনামূলক অংশে ও ৩০ নম্বর বহুনির্বাচনি অংশে থাকবে। আর ব্যবহারিকসহ বিষয়গুলোতে তত্ত্বীয় অংশে ৭৫ ও ব্যবহারিক অংশে ২৫ নম্বর থাকবে। তত্ত্বীয় অংশে ৪০ নম্বর ও বহুনির্বাচনি অংশে ২৫ নম্বর থাকবে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রণীত ‘নতুন শিক্ষাক্রম বা জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১’ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় তখন এক পরিপত্রে বলেছিল, বিদ্যমান শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়। তাই ২০২৫ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করে ২০২৬ সাল থেকে তা পরিপূর্ণরূপে কার্যকর করা হবে। তার আগে ২০২৫ সালে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকটা আগের শিক্ষাক্রমের ধাঁচের পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে।
বিভাগ-বিভাজন ফিরিয়ে এনে ২০১২ সালের পাঠ্যসূচির বইগুলোই ২০২৫ সালে বিতরণের জন্য পরিমার্জন করে ছাপানোর কাজ চলছে। আগামী বছরের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী যারা ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বসবে, তারা এসব বই পাবে।
দেশের সব সরকারি-বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২৫ সালের বার্ষিক ছুটির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে মোট ৭৬ দিন ছুটি রাখা হয়েছে।
সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব মোসাম্মৎ রহিমা আক্তারের সই করা প্রজ্ঞাপনে বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি ও ছুটির তালিকা প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত তালিকায় থাকা দীর্ঘ ছুটিগুলো হলো- পবিত্র রমজানের ছুটি শুরু হবে ২ মার্চ। ঈদুল ফিতর, জুমাতুল বিদা, স্বাধীনতা দিবসসহ কয়েকটি ছুটি মিলিয়ে সে সময় টানা ২৮ দিন স্কুল বন্ধ থাকবে। দীর্ঘ ছুটির পর ৮ এপ্রিল পুনরায় ক্লাস শুরু হবে।
ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশেও টানা ১৫ দিন সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ছুটি থাকবে। এ ছুটি শুরু হবে ১ জুন, চলবে ১৯ জুন পর্যন্ত। দুর্গাপূজায় এবার ৮ দিন ছুটি রাখা হয়েছে। অবশ্য এ ছুটির মধ্যে লক্ষ্মীপূজা, ফাতেহা-ই-ইয়াজ দাহমসহ বেশ কয়েকটি ছুটি পড়বে।
অন্যদিকে প্রতিবছরের মতো আগামী বছরের জন্যও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের হাতে সংরক্ষিত তিনদিন ছুটি রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানপ্রধান যখন প্রয়োজন তখন এ ছুটিগুলো দিতে পারবেন। এর বাইরে বিভিন্ন জাতীয়, আন্তর্জাতিক দিবস ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে নিয়ম মেনে ছুটি থাকবে।
শিক্ষা ছুটিতে বলা হয়েছে—
১. শিক্ষাবর্ষ হবে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ সাল পর্যন্ত। সরকার ঘোষিত নির্দেশনার আলোকে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করতে হবে।
২. উল্লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা, প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা, নির্বাচনী পরীক্ষা ও বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং বার্ষিক পরীক্ষার উত্তরপত্র অন্তত এক বছর সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতি পরীক্ষার সময় ১২ কর্মদিবসের বেশি হবে না।
৩. স্ব-স্ব বিদ্যালয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র (পাবলিক পরীক্ষা ব্যতীত) নিজেরাই প্রণয়ন করবে। কোনো অবস্থাতেই অন্য কোনো উৎস থেকে সংগৃহীত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়া যাবে না।
৪. পরীক্ষার নির্ধারিত তারিখ পরিবর্তন করা যাবে না। তবে কোনো বিশেষ কারণে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করতে হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি নিতে হবে।
৫. সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র ও শনিবার) ব্যতীত বছরে মোট ছুটি থাকবে ৭৬ দিন।
৬. কোনো সরকারি কর্মকর্তার পরিদর্শন উপলক্ষে বিদ্যালয়ে ছুটি দেয়া যাবে না এবং সংবর্ধনা বা পরিদর্শন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ করা যাবে না। সংবর্ধিত বা পরিদর্শনকারী ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করানো যাবে না।
৭. ছুটিকালীন অনুষ্ঠেয় ভর্তি কার্যক্রম সম্পাদন ও অন্যান্য পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনে বিদ্যালয় খোলা রাখতে হবে।
৮. এসএসসি পরীক্ষার সময় পরীক্ষা কেন্দ্র ব্যতীত অন্যান্য বিদ্যালয়ে যথারীতি শ্রেণি কার্যক্রম চালু থাকবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য