রাজধানীর খালকে ‘ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করে’ উল্লেখ করে আক্ষেপ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পুনরুদ্ধার করা লাউতলা খালে নৌ চলাচলের উদ্বোধন ও দূষণ রোধে জনসাধারণের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে চারটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে লাউতলা থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করে রামচন্দ্রপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর সংযোগস্থলে পৌঁছান।
তিনি জানান, এই পথে নৌ চলাচল চালু হবে। সড়কে ৪৫ মিনিট লাগলেও নৌযানে পৌঁছাতে লাগবে ছয় মিনিট। এ জন্য সিটি করপোরেশন থেকে প্রাথমিকভাবে ২০টি ইঞ্জিনচালিত নৌকার লাইসেন্স দেয়া হবে।
মেয়র বলেন, ‘নৌকায় চড়ে আমি দেখেছি অসংখ্য খামার ও বাড়ির বর্জ্য সরাসরি এই খালে গিয়ে পড়ছে।’
খামারি ও বাড়ির মালিকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা ব্যবসা করবেন কিন্তু এই খাল ও শহরের ক্ষতি করবেন না। শুধু নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে সকলের কথা চিন্তা করবেন, এই শহরের কথা চিন্তা করবেন।’
এই খালের উপর অবৈধভাবে গড়ে ওঠে ট্রাক স্ট্যান্ড। ১৪ বছর ধরে থাকা সেই অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করেছে সিটি করপোরেশন।
গত ২৩ জানুয়ারি খাল উদ্ধারের কার্যক্রম শুরু করা হয়। সোয়া এক মাস পর খালে পানিপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে।
উচ্ছেদের সেই স্মৃতি তুলে ধরে মেয়র বলেন, ‘আমরা কাজ করতে গিয়ে দেখেছি মানুষ এই খালকে ডাস্টবিন বিন হিসেবে ব্যবহার করছে। এই খালে পলিথিন, পুরনো সোফা, কার্পেট, চটের বস্তাসহ বাসা-বাড়ির সকল ধরনের ময়লা ফেলা হয়েছে।
‘খালে ময়লা ফেলা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। এই খাল দিয়ে নৌযান চলবে, মাছের চাষ হবে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।’
এর জন্য সরকার ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে জনগণেরও দায়িত্ব পালন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণকে সংঘবদ্ধভাবে খাল দখলদার ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়।’
এই খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে খাল পরিষ্কার রাখা ও তদারকির জন্য বিশেষ টিম গঠন করে দেয়ার পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে বলেও জানান মেয়র।
রাজধানীর খাল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ওয়াসা থেকে সিটি করপোরেশনে দেয়ার পর কী কী করা হয়েছে, তাও তুলে ধরেন মেয়র। বলেন, “প্রায় এক বছর আড়াই মাস আগে আমরা ঢাকা ওয়াসা থেকে ২৯ টি খাল বুঝে পাই। পাওয়ার পর থেকেই দেখছি দুই ‘দ’-'দখল' আর 'দূষণ' এর কবলে খালগুলো সব মৃতপ্রায়। খালে স্বচ্ছ পানি প্রবাহ দেখার অভিপ্রায় নিয়ে আমরা কাজ করছি নিরন্তর।”
রামচন্দ্রপুর খালের বিষয়ে আতিকুল বলেন, ‘এই খালটির এতদিন সঠিক তদারকি ছিল না। এখন দায়িত্ব নিয়েছে সিটি করপোরেশন। খালের সীমানা নির্ধারণের কাজ চলমান। সীমানার মধ্যে যত স্থাপনা থাকবে সব ভেঙে ফেলা হবে। তখন খালের পার দিয়ে ওয়াকওয়ে এবং সবুজায়ন করা হবে। যদি জায়গা বেশি পরিমাণ থাকলে সাইকেল লেনও করা হবে।’
ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা এস এম শরিফ-উল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী আমিরুল ইসলামসহ স্থানীয় কাউন্সিলরা।
আরও পড়ুন:রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে পরিবেশগত এবং মানবিক প্রয়োজনের ভিত্তিতে নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে একশনএইড বাংলাদেশ-এর ‘বাংলাদেশে পানি আলোচনার ১০ বছর: পানি জাদুঘরের অবদান’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান করা হয়েছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে বুধবার বিকেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বইয়ের পর্যালোচনা করেন পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. সুফিয়া খানম।
একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির চেয়ারপারসন ইব্রাহিম খলিল আল জায়াদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন সেন্টার ফর অল্টারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও গবেষণাবিষয়ক পরামর্শক ড. হাসিব মো. ইরফানুল্লাহ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষক ও সেন্টার ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্টের (সিএসডি) পরিচালক ড. সামিয়া সেলিম।
স্বাগত বক্তব্য দেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির।
তিনি বলেন, ‘ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা অর্জনের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে আলোচনা এবং সহযোগিতা গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে ঐতিহ্যগত ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উভয়কেই একত্রিত করা যায়।
‘এ লক্ষ্যে পানিসম্পদের গুরত্ব, পানির ন্যায্যতা এবং নদীর অধিকার নিশ্চিত করবার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে একশনএইড বাংলাদেশ। টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে একশনএইডের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা তুলে ধরার লক্ষ্যে এই বই প্রকাশ করা হয়েছে।’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘পানি হচ্ছে সীমিত সম্পদ। জলবায়ু পরিবর্তন এ সীমিত সম্পদকে আরও জটিল করে তুলছে। যেমন: এক জায়গায় বন্যা এবং অন্য জায়গায় খরা। আমাদের খুব দ্রুতই এ সমস্যা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
টেকসই পানি ও নদী ব্যবস্থাপনার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার জোট গঠনের আহ্বান জানান এ ইমেরিটাস অধ্যাপক।
তিনি আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আন্তসীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনার পক্ষে জোরালো কণ্ঠস্বর তৈরি করতে আঞ্চলিক জোট গঠন করা প্রয়োজন। আঞ্চলিক ঐকমত্যের অভাবে পানি অধিকার রক্ষায় আমরা শক্ত অবস্থানে যেতে পারিনি।
‘ভবিষ্যতে আমাদের সফল ও কার্যকরী মডেল তৈরি করতে হবে, যা আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পানি ও নদী সমস্যাগুলো চিহ্নিত ও সমাধান করতে পারবে।’
সেন্টার ফর অলটারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘নদীকে শুধু পানির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সুযোগ নাই। কারণ পানি, জ্বালানি, জীববৈচিত্র্য ও পলিমাটির এক বহুমুখী সমন্বয়ে নদীর অস্তিত্ব।
‘পানির পাশাপাশি এ অনিবার্য উপাদানগুলো নিয়েও আমাদের আলোচনায় আসতে হবে। আমাদের মনস্তাত্ত্বিক ভাবনায় এ পরিবর্তন এনে সবগুলো বিষয়কে আন্তসীমান্ত নদী ব্যবস্থাপনার আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. সুফিয়া খানম বলেন, ‘পানি জাদুঘরের পরিধি সম্প্রসারণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা গড়ে তোলা, যাতে পানির টেকসই ও ন্যায়সংগত ব্যবস্থাপনার দিকে রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেই বিষয়েও এই বইয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা টেকসই পানি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।’
পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও গবেষণাবিষয়ক পরামর্শক ড. হাসিব মো. ইরফানুল্লাহ বলেন, ‘প্রমাণভিত্তিক অ্যাডভোকেসি ভালো, তবে প্রমাণ, প্রাসঙ্গিক ও জ্ঞান দিয়ে নীতি প্রভাবিত করা আরও ভালো। আমাদের নীতিতে গবেষণাভিত্তিক রেফারেন্সের পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশেরও কম। এটি একটি বড় গ্যাপ, যা আমাদের পূরণ করতে হবে।’
সমাপনী বক্তব্যে একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির চেয়ারপারসন ইব্রাহিম খলিল আল জায়াদ বলেন, ‘পানিসম্পদ ও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের চিন্তার প্রসার, পানি নিয়ে বিভিন্ন উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটানো, বিভিন্ন ধরনের সংলাপকে উৎসাহিত করা, পানি নিয়ে একত্রে কাজ করতে জোট গঠন, আন্তসীমান্ত কার্যক্রমের উৎসাহ প্রদানে নিরবচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একশনএইড বাংলাদেশ। পানি ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করতে এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশা করি।’
অনুষ্ঠানে ভিডিওবার্তায় প্রকাশনার অংশ হতে পেরে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ভারতের দ্য ওয়াটার রিসোর্সেস কাউন্সিলের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ড. মানসী বাল ভার্গব।
এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষক ও সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (সিএসডি)-এর পরিচালক ড. সামিয়া সেলিম, একশনএইড বাংলাদেশের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসহ জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
বইটিতে অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে একশনএইড বাংলাদেশের ১০ বছরের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার (যেমন: আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন আয়োজন এবং বাংলাদেশের প্রথম পানি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পানির ব্যবস্থাপনা টেকসই করা) বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
একশনএইডের জমিকেন্দ্রিক থেকে পানিকেন্দ্রিক কৌশলে স্থানান্তরিত হওয়ার পক্ষে সমর্থনের (যেখানে নীতিমালা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে একত্র করা হয়েছে) বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে এ বইয়ে।
কমিউনিটির অংশগ্রহণ, স্থানীয় উদ্যোগ এবং জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণের গুরুত্বকে তুলে ধরাসহ টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর কৌশলগুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বইটিতে।
আরও পড়ুন:আগামী বৃহস্পতিবারের (২৩ জানুয়ারি) মধ্যে দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকা খুলে দিয়ে প্রকাশনা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সংবাদকর্মীরা।
এ সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সব সাংবাদিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে কাকরাইলের এইচআরটি ভবন ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদক খোন্দকার কাওছার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ভোরের কাগজের নির্বাহী সম্পাদক এ কে সরকার স্বাক্ষরিত নোটিশে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করা হয়েছে, এমন কোনো ঘোষণা আমরা দেখতে পাইনি। আমরা বিশ্বাস করি ভোরের কাগজের প্রকাশনা বন্ধ করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভোরের কাগজের প্রকাশনা অব্যাহত থাকবে। অনতিবিলম্বে প্রধান কার্যালয়ের তালা খুলে দিয়ে ভোরের কাগজের প্রকাশনা পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেওয়া হোক। আমরা ভোরের কাগজকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।’
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখ করে খোন্দকার কাওছার হোসেন বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরে ১৬ সেপ্টেম্বর ভোরের কাগজের সম্পাদক গ্রেপ্তার হন। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এরপর আমরা দেখলাম ভোরের কাগজের মালিক সাবের হোসেন চৌধুরীর স্বাক্ষরে এ কে সরকার ভোরের কাগজে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে নিয়োগপত্র নিয়ে আমাদের অফিসে হাজির হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এ কে সরকার মূলত সাবের হোসেন চৌধুরীর মালিকানাধীন কর্ণফুলী গ্রুপের আবাসিক পরিচালক। গণমাধ্যম বিষয়ে তার কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা নেই বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। আমরা তার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একদিন তিনি আমাদের জানালেন সাবের হোসেন চৌধুরী আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান।
‘এক মিটিংয়ে আমাকেসহ আটজন বিভাগীয় প্রধানের নাম চূড়ান্ত করে উনাকে জানানো হলে, তিনি ৩০ নভেম্বর আমাদের সঙ্গে বসলেন। সেখানে অর্থ বিভাগের প্রধান আর্থিক সংকটের কথা জানালে তিনি সরাসরি প্রশ্ন করলেন, গত ১৫ বছরে যে আয় হয়েছে, সেই টাকা কোথায়? অর্থ বিভাগ তার কোনো উত্তর দিতে পারেনি।’
প্রধান প্রতিবেদক আরও বলেন, ‘ভোরের কাগজ অষ্টম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করেছে ঘোষণা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে ৯০০ টাকা কলাম ইঞ্চি হারে বিজ্ঞাপন বিলসহ নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু আমাদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করেনি; নিয়োগপত্র দেয়নি। যদি আমাদের ছাঁটাই করা হয়, তাহলে অষ্টম ওয়েজ বোর্ডের সব সার্ভিস বেনিফিটসহ এরিয়ার বেতন পরিশোধ করতে হবে।
‘যদি ছাঁটাই করা না হয়, তবে যেদিন থেকে আমি ভোরের কাগজে কাজ শুরু করেছি, সেই তারিখ থেকে নিয়োগপত্র দিতে হবে। অষ্টম ওয়েজ বোর্ডে প্রাপ্য সব বকেয়া বেতন দিতে হবে। এখন থেকে ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন-ভাতা দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনতিবিলম্বে ভোরের কাগজ খুলে দেওয়ার দাবি জানাই। পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখার দাবি করছি। সঙ্গে আমাদের সব পাওনা পরিশোধ করার দাবি জানাই।’
ওই সময় ভোরের কাগজের ১১টি বিভাগের প্রধানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
ডিএমপির গণমাধ্যম বিভাগের দায়িত্বরত উপকমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) তালেবুর রহমান জানান, সোমবার ঢাকার মনসুরাবাদ হাউজিং সোসাইটি থেকে ড. মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি বলেও জানান ডিএমপির এ কর্মকর্তা।
রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের প্রশিকা মোড় এলাকায় বাটা জুতার শোরুমে ধরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বাহিনীটির মিডিয়া সেল জানায়, শোরুমে রবিবার রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে আগুন ধরার খবর পেয়ে প্রথম ইউনিট পৌঁছায় রাত ১২টা ২ মিনিটে। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় আরও পাঁচটি ইউনিট।
মিডিয়া সেল আরও জানায়, ছয়টি ইউনিটের চেষ্টায় সোমবার ভোররাত চারটা ৫০ মিনিটে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংস্কার ও নির্বাচন একটি থেকে আরেকটি পৃথক নয়। দুটোই নির্বিঘ্নে এবং সমান্তরালে এগিয়ে যেতে পারে।
জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। সংস্কার অব্যাহত থাকবে; নির্বাচনও চলবে।
তিনি বলেন, যে দল নির্বাচনে জয়ী হবে এবং সরকার গঠন করবে, তারাই সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বিএনপির বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে এটা পরিষ্কারভাবে বলতে পারি যে, আমরা প্রতিটি সংস্কার (যদি আমরা সরকার গঠন করি) এগিয়ে নেব।’
চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মির্জা ফখরুল।
তিনি উল্লেখ করেন, সরকার বলেছে যে, তারা প্রতিবেদন পাওয়ার পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে এবং তার পরে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
তবে ঐকমত্য ছাড়া কোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না বলে জানান বিএনপির মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে আমরা সকল মানুষের মধ্যে শক্তিশালী ঐক্য কামনা করি এবং আশা করি যে, আমরা শিগগিরই একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে ফিরে আসতে পারি; একটি সঠিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারি।’
এর আগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মির্জা ফখরুল।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী শেরেবাংলা নগরে জিয়ার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে তারা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করেন।
ওই সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নীরব, ডা. রফিকুল আলম মঞ্জুসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও জিয়ার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাছির উদ্দিন।
রাজধানীর আগারগাঁয়ের নির্বাচন ভবনে রবিবার এক অনুষ্ঠানে সিইসি এ কথা জানান।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে কম সংস্কার হলে নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে।
নির্বাচন ভবনের অনুষ্ঠানে সরকারঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করছি।’
ওই সময় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, ভোটার তালিকা নিয়ে সব সন্দেহ দূর করতে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘সংশয় দূর করার জন্য আমরা এটা (ভোটার তালিকা হালনাগাদ) করছি। আমরা মাঠে অনেক মানুষকে সম্পৃক্ত করছি।’
সারা দেশে সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য কিছু উপকরণ সহায়তা দেয় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার ১৭৫টি ল্যাপটপ, ২০০টি স্ক্যানার ও ৪ হাজার ৩০০ ব্যাগ সিইসির কাছে হস্তান্তর করেন।
নাছির উদ্দিন জানান, তারা ছয় মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন এবং প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ বিশাল এ কর্মসূচিতে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, ‘এই ছয় মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করার জন্য আমাদের প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হবে।’
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, তারা রাজনৈতিক বক্তব্য (বিতর্ক) করেন না এবং আইন ও বিধিবিধানের মধ্যে থাকবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই।’
ইউএনডিপির সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, তারা আমাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’
আরও পড়ুন:পণ্যের ওপর যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার, সেটিকে ‘হঠকারী সিদ্ধান্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
দলটির ভাষ্য, এ সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তিতে ফেলবে। যদিও অন্তবর্তী সরকারের দাবি, ‘এতে ন্যূনতম প্রভাব পড়বে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের অফিসে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যে ভ্যাট ও পরোক্ষ কর বাড়িয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।’
দেশের চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও মুদ্রাস্ফীতির কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। কিছু কিছু পণ্যের ওপর থেকে কর অব্যাহতিও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে খাদ্য, পোশাক, ওষুধ ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যও রয়েছে।’
এতে সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে গরিব ও মধ্যবিত্তদের ব্যাপক দুর্ভোগে পড়তে হবে।’
এসব ভোগান্তি থেকে সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে বিকল্প পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর পরিবর্তে সরকার যাতে অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন খরচ কমিয়ে দেয়, অন্তবর্তী সরকারকে সেই পরামর্শও দিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক বলেন, ‘জবাবদিহিতাপূর্ণ একটি প্রশাসনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত একটি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা।’
এর আগে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ আরেক দফা বেড়ে যেতে পারে সাধারণ মানুষের। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেছেন, মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়বে। আবার পোশাক–আশাকের দামও বাড়তে পারে ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে।
এ ছাড়া মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে মিষ্টি, ওষুধ, এলপি গ্যাস, ফলের রস, ড্রিংক, বিস্কুট, চশমার ফ্রেম, সিগারেটসহ নানা পণ্যের।
গেল ৯ জানুয়ারি রাতে এ–সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ দুটি হলো মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫।
এ ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের ওপর তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য