ইলিশের উৎপাদন বাড়িয়ে আরও বেশি রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছে সরকার। পাশাপাশি দেশের সব মানুষের হাতের নাগালে ইলিশ পৌঁছে দেয়ার কথাও জানান মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
সচিবালয়ে বুধবার জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘ইলিশের উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে চাই। ইলিশ সম্পদ উন্নয়নের মধ্যে আমরা বাংলাদেশের সকল মানুষের হাতের নাগালে ইলিশ মাছ পৌঁছে দিতে চাই। এ লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
প্রতিবছরের মতো এবারও আগামী ৩১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে ‘ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ, জাটকা ধরলে সর্বনাশ।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ১২ দশমিক ২২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। যা একক প্রজাতি হিসেবে সর্বোচ্চ। জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশের বেশি। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এ দেশের নদনদী, মোহনা ও সাগর থেকে।
‘ফলে ইলিশ দেশের জিআই পণ্যের মর্যাদা পেয়েছে। প্রায় ৬ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।’
জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এ বছর দেশের ইলিশ সম্পৃক্ত ২০টি জেলায় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কর্মসূচির প্রথম দিন বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে সপ্তাহের উদ্বোধন করা হবে এবং পদ্মা নদীতে একটি নৌ-র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
‘এ কার্যক্রম সফল বাস্তবায়নে সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং আপামর জনসাধারণ বিশেষ করে মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও ভোক্তাদের আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা জাটকা ধরা, কেনাবেচা এবং খাওয়া থেকে বিরত থেকে জাতীয় মাছ ইলিশের উন্নয়নে এগিয়ে আসবেন।’
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘বিদ্যমান আইন সংশোধন করে জাটকা আহরণে নিষিদ্ধ সময় নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ৮ মাস করা হয়েছে এবং জাটকার দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি করা হয়েছে। বিগত ২০০৮ থেকে ২০০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। উৎপাদন ও প্রাপ্যতা বৃদ্ধির ফলে ইলিশ আজ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে এসেছে।
‘ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান অন্তরায় হচ্ছে কারেন্ট জাল, বেহুন্দি জালসহ অন্যান্য অবৈধ জাল নিয়ে নির্বিচারে জাটকা নিধন। এই অবৈধ জাল নির্মূলে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ৪ সপ্তাহ দেশের ১৭টি জেলায় বিশেষ কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় ৩০ দিনে মোট ৮৮৪টি মোবাইল কোর্ট ও ৩৫৪৬টি অভিযান পরিচালনা করে ৪২১৭টি বেহুন্দি জাল, ৪৬৯ দশমিক ৫২ লাখ মিটার কারেন্ট জাল এবং ৯৫৬২টি অন্যান্য জাল যেমন বেড়জাল, চরঘড়া জাল, মশারি জাল, পাইজাল ইত্যাদি জব্দ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের জন্য ভিজিএফ খাদ্য সহায়তার পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জাটকা আহরণে বিগত ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯৬ জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৪ মাসে ৫৬ হাজার টন ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়েছে। যা বিগত বছর থেকে প্রায় ১০ হাজার টন বেশি ছিল।
‘প্রথম কিস্তি মার্চ-এপ্রিল মাসের জন্য ৩ লাখ ৯০ হাজার ৭০০ জেলে পরিবারের জন্য ৪০ কেজি হারে মোট ৩১ হাজার ২৫৬ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে বেশি। ২০২১ সালে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৪ জন জেলে পরিবারকে ২০ কেজি হারে মোট ১১ হাজার ১১৯ টন চাল দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ২৮ হাজার জেলে পরিবার মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের সময় ভিজিএফ চাল পেয়েছে। ভিজিএফ সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ৫২ হাজার জেলেকে তাদের চাহিদানুযায়ী নানা প্রকার উপকরণ দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:সিলেটে চলমান বন্যায় কৃষি খাতে বড় ধাক্কা লেগেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ পর্যন্ত পাওয়া হিসাবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যা আরও বাড়তে পারে।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভাগের চার জেলাতেই কৃষির ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি দেখেছে সিলেট জেলা।
গত ১৫ জুন থেকে বন্যা শুরু হয় সিলেটে। চলতি বছরের এটি তৃতীয় দফার বন্যা, যাকে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
বানের পানিতে তলিয়েছে সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ ও সিলেটের ৭০ শতাংশ এলাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এই বন্যায় বিভাগে আউশ ধানের ৬৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমি, বোনা আমনের ১৫ হাজার হেক্টর ও সবজির প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমি তলিয়েছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যায়। বুধবার উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, তেলিখাল এলাকায় সড়কের পাশে ভেজা ধান শুকাচ্ছিলেন কৃষক সিতারা বেগম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাঠের সব ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরে থাকা ধানও ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এইগুলা শুকালেও এ থেকে ধান পাওয়া যাবে না।’
মে মাসের বন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার রাধানগর এলাকার কৃষক পরীন্দ্র দাসের বোরো ধান তলিয়ে গিয়েছিল। এবার তলিয়েছে তার আউশের ক্ষেত।
পরীন্দ্র বলেন, ‘বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার ক্ষতি পোষাতে ঋণ করে চার একর জায়গায় আউশের ক্ষেত করেছিলাম। এখন এটিও তলিয়ে গেল। না খেয়ে মরা ছাড়া এখন আর আমার সামনে কোনো পথ নেই।’
গেল মাসে পানিতে নেমে বোরো ধান কেটে ঘরে তুলেছিলেন সদর উপজেলার কান্দিগাঁওয়ের মটু মিয়া। সে যাত্রায় কিছু ধান রক্ষা করতে পারলেও শেষ রক্ষা আর হয়নি। কারণ এবার বানের পানিতে ঘরে মজুত সেই ধান ভেসে গেছে।
আক্ষেপ করে মটু বলেন, ‘পানি আমার সব নিয়ে গেছে। এত কষ্ট করে, এত টাকা খরচ করে ধান তুলেছিলাম। চোখের পলকেই ঢল এসে তা ভাসিয়ে নিয়ে গেল। এখন চাষাবাদ ফেলে আমার দিনমজুর হতে হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান জানান, সিলেট জেলায় আউশ ধান তলিয়েছে ২৬ হাজার ৬৭৯ হেক্টর এবং সবজি ডুবেছে ২ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমির। হবিগঞ্জে ১৫ হাজার ৭১০ হেক্টর আউশ ধান, ১ হাজার ৫৯৭ হেক্টর সবজি এবং ১৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর বোনা আমন ডুবে গেছে।
তিনি আরও জানান, মৌলভীবাজারে আউশ ধান ডুবেছে ১১ হাজার ৭৪১ হেক্টর, সবজি ডুবেছে ৮০৮ হেক্টর এবং বোনা আমনের জমি ডুবেছে ৩৬২ হেক্টর। আর সুনামগঞ্জে আউশের জমি ডুবেছে ১১ হাজার ৪০৩ হেক্টর ও সবজির জমি ডুবেছে ২ হাজার ৪০০ হেক্টর।
অধিদপ্তর কর্মকর্তা মোশাররফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাঠে আমাদের প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকের গোলায় থাকা অনেক ধানও তলিয়ে গেছে। এগুলোর প্রকৃত হিসাব পাওয়া সম্ভব নয়। পেলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ত।
‘এখনও অনেক এলাকায় পানি বাড়ছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।’
আরও পড়ুন:সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রাম ও নীলফামারিতে বন্যায় এক লাখ হেক্টর আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। অবশ্য সামগ্রিক বিবেচনায় এটি তেমন ক্ষতি নয় বলে দাবি করেছেন তিনি।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা জানান।
অবশ্য কৃষিমন্ত্রী দাবি করেন সিলেট অঞ্চলের বন্যায় ধানের উৎপাদনে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। যদি বন্যা আবারও আসে তবে ধানের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে বলেও আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কয়েক দিন আগে চেরাপুঞ্জিতে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ায় তিন-চার দিনে প্রায় ২২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটা ১২২ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এলাকায় অস্বাভাবিক পানি ঢুকেছে। তবে একটা বিষয় ভালো ছিল, এই মুহূর্তে তেমন কোনো ফসল মাঠে ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলে প্রচুর জমি পতিত থাকত; মানুষ চাষাবাদে তেমন একটা আগ্রহী ছিল না। আমরা সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছি এই জমিগুলোতে চাষাবাদ করার এবং এতে আউশ ধান করা যায় কি না, সে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আমরা দেখছি বন্যায় সিলেটের ২২ হাজার হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ হবিগঞ্জে প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর জমির আউশের ক্ষতি হয়েছে। আজ আমরা খবর পাচ্ছি কুড়িগ্রাম, নীলফামারী এই এলাকায় যে পানি আসছে তাতে ৫৬ হাজার একর জমির ক্ষতি হয়েছে। মানে আউশ ধান আক্রান্ত হয়েছে। যদিও আউশ উঁচু জমিতে হয়। বন্যা যদি আর না বাড়ে, এখন যে অবস্থায় আছে তাতে আর ক্ষতি হবে না।’
ধান উৎপাদনে প্রভাব না পড়লেও শাকসবজি উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫-৬ হাজার হেক্টরে। এ সময় গ্রীষ্মকালীন সবজির বেশ ক্ষতি হয়েছে। তিল ও বাদাম চর এলাকায় ছিল, সেটারও ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে আউশ ও শাকসবজির।’
দেশের সবচেয়ে বড় ফসল রোপা নিয়ে শঙ্কার কথাও জানান কৃষিমন্ত্রী। বলেন, ‘এখন রোপার বীজতলা তৈরির সময়। এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফসল। এটা কিন্তু বন্যার ওপর নির্ভর করে। এখনও বীজতলা সেভাবে করে নাই, কেবল শুরু করেছে। আর যদি বৃষ্টি না হয়, আর বন্যা যদি না বাড়ে তাহলে ভালো। তবে অনেক সময় দেখা যায় আবার বন্যা আসে, এতে বীজতলা নষ্ট হয়। তখন আমরা আবার করি, পুনর্বাসন কর্মসূচিতে যাই।’
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলতে পারছি না কত ক্ষতি হচ্ছে বা হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল নির্দেশ দিয়েছেন, আমনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি রাখতে। বীজতলা যদি নষ্ট হয় তাহলে আমরা যে এক্সট্রা কিছু বীজ রাখি ঘরে, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আবার বীজতলা তৈরি করে মানুষকে দেয়া। সে প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। আরেকটি হলো একেবারেই যদি ফসল নষ্ট হয়ে যায় তাহলে লেট ভ্যারাইটি…।
‘আমন হলো ফটোসেনসিটিভ। দিন ছোট হলেই এতে ফুল চলে আসে। যে ধানগুলো সাধারণত আমনে করা হয় সেটা করলে ফুল আসবে, আর উৎপাদন কম হবে। কিন্তু আমাদের বিজ্ঞানীরা জাত উদ্ভাবন করেছেন যেগুলো লেস ফটোসেনসিটিভ। এগুলো বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘যে পরিস্থিতিই আসুক, যদি আমন নষ্ট হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে রবি ফসল আমাদের বাড়াতে হবে। শাকসবজি, আলু, তেলের বীজ ও সার আমরা বিনা মূল্যে চাষিদের দেব। এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। এখন পর্যন্ত যা ক্ষতি হয়েছে সেটা কিছু না। যেহেতু ফসলই নেই। এখন আমনটা কেমন হয় দেখা যাক। তবে শাকসবজির ওপরে প্রভাব পড়বে।’
আরও পড়ুন:খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় বছরে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য কৃষকরা তরমুজের ন্যায্য দাম পান না।
কৃষকরা তাদের নায্য দাবি ও অধিকার আদায়ের জন্য মঙ্গলবার দুপুরে খুলনার এই দুই উপজেলাকে তরমুজ চাষের জন্য কৃষি অর্থনৈতিক জোন ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
ওই অঞ্চলের কৃষকদের দাবি নিয়ে কাজ করে ‘লোকজ মৈত্রী কৃষক ফেডারেশন’ নামের একটি সংগঠন।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বিভাষ মণ্ডল বলেন, ‘এ বছর খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছিল। কৃষকের পাশাপাশি করোনাকালীন অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এ বছর নতুন করে তরমুজ চাষে যুক্ত হন। এলাকার ৮০ শতাংশ চাষির ভালো ফলন হওয়ার পরও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও বিক্রীত মালের দাম না পাওয়ায় তারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।’
‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেরিতে বীজ রোপণ, বীজের দাম বেশি, অনেক ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকেও বেশি দামে সার কেনা, ছত্রাকনাশক-কীটনাশক ও হরমোন জাতীয় ওষুধের লাগামহীন মূল্য, মাটির গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা না থাকা, সেচের পানির অপ্রতুলতা, পরিবহন ও বিপণন ব্যবস্থা মধ্যস্বত্বভোগীদের অবৈধ নিয়ন্ত্রণে থাকায় কৃষকরা এই ক্ষতিতে পড়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর আমরা তরমুজ চাষ থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। জমির মালিক জমির হারি কয়েক গুণ বৃদ্ধি করেছেন। গত বছর যে জমির হারি ১ থেকে ৩ হাজার টাকার ভেতরে ছিল, তা এবার বৃদ্ধি পেয়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। বিশেষত শিক্ষক, ব্যাংকার, এনজিওকর্মী, ব্যবসায়ী, গাড়িচালকসহ অন্যান্য শ্রেণির মানুষের এই চাষে অনুপ্রবেশ ঘটায় সমস্যা আরও বেড়েছে।’
বিভাষ মণ্ডল বলেন, ‘গত বছর ৩৩ শতকের জমি চাষ করতে খরচ হয়েছিল ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ১৫ টাকা বৃদ্ধির কারণে এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। সার, বীজ, কীটনাশকের দাম গায়ে উল্লেখিত খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সার, বীজ, কীটনাশকের দাম বাড়িয়ে কৃষককে ফাঁদে ফেলে বেশি মূল্য আদায় করা হয়েছে।
‘দালাল চক্রের জন্য পাইকারি ক্রেতারা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনতে পারেনি। পাইকার যে ক্ষেতের দাম ৫ লাখ বলেছে, দালাল পাইকারকে বলেছে কি দেখে ৫ লাখ বললেন; এর আগে ২ লাখও কেউ বলেনি। আমি আপনাকে কম টাকায় কিনে দেব, আমাকে একটু খুশি করবেন।’
‘এ ছাড়া পরিবহন সিন্ডিকেট বেশি ভাড়ায় গাড়ি সরবরাহ করেছে। পক্ষান্তরে অন্য কাউকে কম টাকায় গাড়ি সরবরাহ করতে দেয়নি। যে গাড়ি ভাড়া ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা ছিল তা বাড়িয়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।’
বিভাষ মণ্ডল বলেন, ‘অনেক কৃষক লেখাপড়া না জানায় স্থানীয় কীটনাশক বিক্রেতারা ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির একই গ্রুপের কীটনাশক বিক্রি করে কৃষকদের ঠকিয়েছে। তরমুজ বহন শ্রমিকরাও সুযোগ বুঝে পিস প্রতি ১/১.৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩/৫ টাকা করেছে।
‘তরমুজের আড়তদারের কোনো লোকসান নেই। কেনাবেচা উভয় দিকের কমিশন। তারপর ব্যাপারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ৮ হাজার টাকার পণ্য ৪ হাজার টাকায় বিক্রিতে বাধ্য করে কৃষককে ঠকানো হয়েছে। বিনিময়ে ব্যাপারীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়া ছাড়াও আড়তঘরের নিযুক্ত কমিশন এজেন্ট রয়েছে। এদের কাজ কৃষককে বুঝিয়ে তরমুজের গাড়ি নির্দিষ্ট আড়তে নেয়া ও শতকরা ২ থেকে ৪ ভাগ কমিশন খাওয়া।’
লোকজ মৈত্রী কৃষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ব্যাপারীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম কমিয়েছেন। কৃষক কোনো উপায় না পেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।’
সংগঠনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘কৃষকদের এসব সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত করতে হলে খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলাকে তরমুজ চাষের জন্য কৃষি অর্থনৈতিক জোন ঘোষণা করতে হবে। তাহলে সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান এখানে কাজ করবে। পক্ষান্তরে কৃষকরাও লাভবান হবেন। ফলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার বেশ উন্নয়ন হবে।’
আরও পড়ুন:সাতক্ষীরা সদরের কুশখালী ইউনিয়নের আড়ুয়াখালী গ্রামের ‘রাসেল বস’। কোরবানিতে হাটে তুলতে তাকে খাইয়ে দাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করা হচ্ছে।
রাসেলকে লালন পালন করছেন আব্দুর রহিম সরদার।
প্রতি বছর ঈদের আগে আগে বড় আকারের কিছু ষাঁড় নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়। এবার কথা হচ্ছে রাসেল বস নিয়ে।
ভারতীয় লাল সিন্ধি জাতের ষাঁড়টির দৈর্ঘ্য ৭ ফুট ১০ ইঞ্চি, উচ্চতা ৫ ফুট, ওজন ২৩ মণ।
খামারি আব্দুর রহিম সরদার জানান, গত বছর ভালো দাম না পাওয়ায় বিক্রি করেননি রাসেলকে। গত বছরের চেয়ে এ বছর তার ষাঁড় দেখতে আরও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়েছে।
রহিম বলেন, ‘রাসেল বস খুব শান্ত স্বভাবের গরু। ওর কোনো রাগ নেই। কারও দিকে তেড়েও আসে না। তিন বছর সাত মাস ধরে আমি লালন পালন করছি। ইতোমধ্যে সাত-আট লাখ টাকা দাম উঠেছে। তবে ১১ লাখ টাকা পেলে গরুটি ছেড়ে দেব।’
রহিম আরও জানান, বিশাল আকারের এই গরুটির পরিচর্যা করা খুবই কঠিন। দিনে দুই বার গোসল করাতে হয়, প্রতিদিন খাবার খায় চার বার। খাবারের মধ্যে রয়েছে গমের ভুসি, ধানের গুঁড়া, ভুট্টা, শুকনো খড় ও কাঁচা ঘাস। মাঝে মধ্যে ভাতও খায়।
রাসেল বসের বিশালতার কারণে রহিমের খামারে ঢুঁ দেয়ার মানুষের অভাব পড়ে না। গরু দেখতে আসা মো. সৌরভ হোসেন বলেন, ‘বড় গরুর কথা শুনে দেখার আগ্রহ হয়েছিল। তাই দেখতে আসছি। আমি অনেক খামারির কাছে খবর নিয়েছি, এত বড় গরু জেলার মধ্যে মনে হয় আর নেই।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জয়দেব কুমার সিংহ নিউজবাংলাকে জানান, জেলা সদরে ৮ হাজার ৪৩৪ টি গরুর খামার রয়েছে। খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:দেশে আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে ফল খাচ্ছে মানুষ। মাথাপিছু ফল খাওয়ার হার ৩০ গ্রাম বেড়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু ফল খাওয়ার হার ৮৫ গ্রাম বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
জাতীয় ফল মেলা-২০২২ উপলক্ষে সচিবালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ তথ্য জানান।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘২০০৬ সালে মাথাপিছু ফল খাওয়ার হার ছিল ৫৫ গ্রাম, যা বেড়ে এখন হয়েছে ৮৫ গ্রাম।
‘২০০৮-০৯ সালে দেশে ফলের উৎপাদন ছিল প্রায় এক কোটি টন, আর বর্তমানে ফলের উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টন। বিগত ১২ বছরে ফলের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ২২ শতাংশ। এর ফলে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু দানাজাতীয় শস্য গ্রহণের পরিমাণ কমেছে এবং মাথাপিছু ফল খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে।’
সার্বিকভাবে দেশের মানুষের মধ্যে ফল খাওয়ার হার বৃদ্ধি পেলেও এখনও তা দৈনন্দিন যে পরিমাণ খাওয়া উচিত তার থেকে কম। কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ফলের চাহিদা ২০০ গ্রাম।
এ চাহিদা পূরণ করতে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশসম্মত নিরাপদ ফল উৎপাদনেও গুরুত্বারোপ করেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের বিজ্ঞানীরা দেশে চাষ উপযোগী ৩০টি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের ৬৫টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন।
‘দেশীয় ফলের সঙ্গে স্ট্রবেরি, রাম্বুটান, ড্রাগন ফল, অ্যাভোকাডো প্রভৃতি বিদেশি ফলের চাষে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দেশের পাহাড়ি অঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের অনেক জায়গায় কাজুবাদাম ও কফি চাষের সম্প্রসারণ হচ্ছে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ফল উৎপাদনে বিশ্বে সফলতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এ মুহূর্তে বিশ্বে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হারের রেকর্ড বাংলাদেশের, বছরে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে। কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, আমে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, পেঁপেতে ১৪তম স্থানে আছে বাংলাদেশ।
‘আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। নিত্যনতুন ফল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ সফলতা পেয়েছে। ২০ বছর আগে আম আর কাঁঠাল ছিল এই দেশের প্রধান ফল। এখন বাংলাদেশে ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে, যা আগে হতো ৫৬ প্রজাতির।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার এখন সব মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে ফল ও ফলদ বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ফলের উৎপাদন যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি নিরাপদ ফল চাষে গুরুত্ব দিতে হবে।
‘একই সঙ্গে ফলমূলকে পচনের হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের সংগ্রহত্তোর ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাত সম্পর্কে জানা থাকতে হবে। এসব বিষয়ে ফলের উৎপাদনকারী বা চাষি, পরিবহনকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী, ভোক্তাসহ সবার সচেতনতা অত্যন্ত প্রয়োজন। এ লক্ষ্যেই কৃষি মন্ত্রণালয় জাতীয় ফল মেলার আয়োজন করে।’
কৃষিমন্ত্রী জানান, আগামী ১৬ জুন রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে শুরু হচ্ছে জাতীয় ফল মেলা। মেলা চলবে ১৮ জুন পর্যন্ত। মেলার এ বছরের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে- বছরব্যাপী ফল চাষে অর্থ পুষ্টি দুই-ই আসে। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আরও পড়ুন:আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৮ হাজার কেজি আম নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন।
রহনপুর স্টেশন থেকে সোমবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে এ মৌসুমের আম নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ট্রেনটি। এ স্টেশন থেকে প্রায় ৩ হাজার কেজি আম তোলা হয়েছে সেটিতে।
ওই স্টেশনে ট্রেনযাত্রার উদ্বোধন করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট শহিদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সাহিদুল ইসলাম ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা।
সেখান থেকে ট্রেনটি যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশনে। প্রায় ৫ হাজার ৪০০ কেজি আম সেখানে তোলা হয়। এরপর রাজশাহী হয়ে আরও আম নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে ম্যাঙ্গো ট্রেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন মাস্টার শহিদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় প্রতিকেজি আম পরিবহনে খরচ হয়েছে ১ টাকা ৩১ পয়সা।
গত মাসের শেষের সপ্তাহ থেকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম পাকতে শুরু করেছে। ওই অঞ্চলে এখন গোপালভোগ আম শেষের দিকে। বাজার দখল করে আছে হিমসাগর। কয়েক দিনের মধ্যেই ল্যাংড়া উঠবে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার এর আগে জানিয়েছিলেন, আম নিয়ে এই ট্রেন প্রতিদিন বিকেল ৪টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহমপুর থেকে যাত্রা শুরু করবে। রাজশাহী এসে আম নিয়ে আবার রাত ৯টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীদের মতে আগামী দেড় মাস ট্রেনে পাঠানোর মতো আম থাকবে। ততদিনই ট্রেন চলবে। এর আগে আম কমে গেলে ট্রেন বন্ধ করা হবে।
২০২০ সালের ৫ জুন ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনের উদ্বোধন হয়। সে বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত আম ঢাকায় পৌঁছে দেয় ট্রেনটি। দ্বিতীয়বারের মতো ২০২১ সালের ২৭ মে এটি চালু করা হয়। সেবার ১৬ জুলাই পর্যন্ত আম পরিবহন করা হয়।
আরও পড়ুন:জামালপুর সদর উপজেলার ইটাইল ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রাম। প্রকৃতির সবুজ চাদরে ঘেরা গ্রামটির বেশির ভাগ বাসিন্দা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুটি ইটভাটা।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, ফসলি জমি দখল করে গড়ে তোলা ইটভাটা ও এর বর্জ্যের কারণে আশপাশের পরিবেশ মারাত্মক দূষিত হচ্ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় তাই মরছে কৃষি; মরছে প্রকৃতি। ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে।
ক্রমেই সবুজ প্রকৃতি বিবর্ণ হয়ে উঠছে। তামাটে রং ধারণ করছে ফসলি জমির মাটি। একটা সময় ফসলি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তাদের জনজীবন। এখন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে আরও একটি ইটভাটা স্থাপনের প্রক্রিয়া।
তাই ইটভাটা স্থাপনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে গ্রামবাসী। গ্রামবাসীর পক্ষে ইটভাটা স্থাপন না করার অনুরোধ জানিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন এক বীর মুক্তিযোদ্ধা।
মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও আবেদনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শামছুল হক বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি ও ফসলের জমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপনের কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু এবিসি ইটভাটা কর্তৃপক্ষ ভাটা স্থাপনের কাজ করে যাচ্ছে। আমরা গ্রামে আর কোনো ইটভাটা চাই না।
‘ইটভাটার কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে, হচ্ছে। প্রভাবশালী ব্যবসায়ী টাকা ছিটিয়ে জোর পূর্বক এখানে ইটভাটা স্থাপনের পাঁয়তারা করছে।’
স্থানীয় কৃষক লিয়াকত মাস্টার বলেন, ‘গ্রামের দক্ষিণ দিকে বিস্তীর্ণ তিন ফসলি জমির মাঠ। একসময় এই জমি থেকে কয়েক লাখ মণ ধান ঘরে তোলা হতো। কিন্তু গ্রামে দুটি ইটভাটা হওয়ার পর তেমন ধান পাওয়া যায় না। এর মধ্যে নতুন করে আরও একটি ইটভাটা হলে আমাদের ধানের চাষ বাদ দেয়া লাগবে।’
গ্রামের আরেক কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এমনিতেই গ্রামের দুই ইটভাটার বর্জ্য নিয়ে আমরা অতিষ্ঠ। রাস্তা-ঘাটসহ ক্ষেতের নানা জায়গায় ইটভাটার বর্জ্য পড়ে থাকে। আশপাশের পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। আরেকটি ইটভাটা হলে আমাদের শ্বাস নেয়া কঠিন হয়ে যাবে।’
ইটভাটা থেকে ১০০ গজ দূরে গ্রামে একটি গভীর নলকূপ রয়েছে। প্রায় ৪০ বছর ধরে সেই নলকূপ থেকে ক্ষেতে পানি দেন গ্রামের চাষিরা। এমনিতেই এখানে পানির স্তর অনেক নিচে। এখন আরেকটি ইটভাটা হলে পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাবে। তখন কৃষকরা বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে বলে জানান স্থানীয় সিদ্দিক মিয়া।
তবে ইটভাটার ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘গ্রামের কয়েকজন একজোট হয়ে শুধু শুধু আমার বিরোধিতা করছে। আগে ওই জায়গায় আমার একটি পুরাতন ইটভাটা ছিল, সেটিই আবার নতুন করে করছি।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও অনুমতি পাইনি, তবে ফাইল রেডি হচ্ছে।’
জামালপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এরপর কয়েকটি দপ্তর তদন্তে যায়। সেখানে দুটি ফসলি জমি আছে। আরও কিছু আইনি বিষয় রয়েছে। এসব বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
‘কিছুদিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে, তবে কেউ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ইটভাটা স্থাপনের চেষ্টা করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য