প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সময় সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠী বাছাই ও তার তালিকা তৈরি দেশে নতুন নয়। কিন্তু প্রায়ই এ কাজে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং নানা ধরনের অসংগতি দেখা দেয়। এতে এসব পদক্ষেপের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনও অনেক সময় সম্ভব হয় না।
রমজান সামনে রেখে দেশে প্রথমবারের মতো ফ্যামিলি কার্ড বিতরণের উদ্যোগে এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে। এ কার্যক্রমের আওতায় রাজধানীসহ সারা দেশে এখন একযোগে ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
উপকারভোগীরা বাজারের চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কম দামে ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি) নিয়োজিত ডিলার থেকে তেল, ছোলা, চিনি, খেজুর ও মসুর ডাল কিনছেন। এতে সরকারের প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি খরচ হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর মানবিক এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে একদিকে দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য ক্রয়ে সক্ষম হবে, অপরদিকে, এসব পণ্যের চাহিদা স্থানীয় বাজারে কমবে। ফলে বাজারেও এর দাম স্থিতিশীল থাকবে।
ইতিমধ্যে গত ৮ মার্চ থেকে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোয় পণ্য প্রেরণ শুরু হয়েছে এবং প্রতিটি জেলায় টিসিবির পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পৌঁছে গেছে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি জেলায় খাদ্য অধিদপ্তর, বিএডিসি ও নির্ধারিত গুদামে টিসিবির পণ্য গ্রহণ, প্যাকিং চলছে। ২০ মার্চ থেকে পণ্য বিক্রির যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
ফ্যামিলি কার্ড তৈরিতে দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তালিকা তৈরির কাজটি করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসন যৌথভাবে। ফলে এখানে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কারও আধিপত্যের সুযোগ ছিল না। এ কারণে তালিকাটি নির্ভুল হয়েছে।
উপকারভোগী বাছাইয়ে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তিন স্তরের আলাদা কমিটি কাজ করেছে। গ্রামপর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নিয়ে গঠিত কমিটি প্রাথমিকভাবে উপকারভোগী বাছাইয়ের কাজটি করেছে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে সুপারিশকৃতদের নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করেছে। আর চূড়ান্ত বাছাই হয়েছে জেলা পর্যায়ে। এখানে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বাধীন কমিটির সন্তুষ্টিতে তা অনুমোদন পেয়েছে।
এ যাচাই প্রক্রিয়ার কারণে সুবিধাভোগী বাছাইয়ের কাজে কোনো অসংগতি থাকার সুযোগ নেই বলে দাবি করছেন কর্মকর্তারা।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুবিধাভোগী বাছাইয়ের কাজটি স্বচ্ছভাবে করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসন যৌথভাবে সমন্বয় করে বারবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুবিধাভোগীর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সুবিধাভোগীদের পুরো তালিকা (ছবিযুক্ত নাম-পরিচয় ও পেশাসংবলিত) জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।’
কারা সুবিধাভোগী?
রংপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা সুবিধাভোগীর তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেশির ভাগই কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, গৃহিণী ও স্বল্প আয়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এদের বাইরে সুনির্দিষ্ট পেশা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দর্জি, নাপিত, মুচি, জেলে, মাঝি, ধোপা, অটোচালক, দোকান কর্মচারী, বেসরকারি কর্মচারী, ট্রাকচালক, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, মোটরশ্রমিক, নৌশ্রমিক, ইটভাটা শ্রমিক, রাইস মিল শ্রমিক, গ্রাম পুলিশ, ঝাড়ুদার, আনছার সদস্য, মুয়াজ্জিন, খতিব, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষক, শিক্ষিকা, ইলেকট্রিশিয়ান, টিভি মেকার, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট, পল্লি চিকিৎসক, স্টোর লেবার, বুট মেকার ও ছাত্র-ছাত্রী। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম ও ওয়ার্ডপর্যায়ে তালিকাভুক্ত এসব ব্যক্তির ছবিযুক্ত নাম, পরিচয়, বয়স, পেশা ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে।
একই নমুনা দেখা গেছে কুষ্টিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, জামালপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায়। তবে জেলার ভৌগোলিক অবস্থানভেদে বিভিন্ন পেশার মানুষ টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। যেমন প্রায় সব এলাকায় কৃষকের আধিক্য থাকলেও শিল্পাঞ্চল ও সিটি করপোরেশন এলাকায় শ্রমিকের কার্ডের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, ‘জেলার ভেতরে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় ফ্যামিলি কার্ড সুবিধা পেয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার এবং জেলা পর্যায়ে ৮৬ হাজার। এ সুবিধাভোগীদের আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় নির্বাচন করেছি। ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে তিন স্তরের কমিটি কাজ করেছে। আমরা টার্গেট পিপলদেরই নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছি।’
একই চিত্র পাওয়া যায় আরও কয়েকটি জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকেও।
যেভাবে সুবিধাভোগী বাছাই করা হয়
উপকারভোগী নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসংখ্যা এবং দারিদ্র্যের সূচক বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টিসিবি কার্যক্রম দেখভালে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১ কোটি পরিবারের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে প্রথম বিবেচনায় নেয়া হয়েছে করোনাকালীন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে নগদ সহায়তা প্রদানের যে ডাটাবেজ প্রণয়ন করা হয়, সেই ডাটাবেজকে। ওই তালিকায় ৩০ লাখ পরিবার অন্তর্ভুক্ত ছিল, যাদের সরাসরি টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় নেয়া হয়েছে। ১ কোটি পরিবারের বাকি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সুবিধাভোগী বাছাইয়ের বড় কাজটি করেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসন। এ তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে সারা দেশে স্থানীয় ৫৭ লাখ ১০ হাজার উপকারভোগী পরিবার, যাদেরকে ইতিমধ্যে ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এর বাইরে ঢাকা সিটি করপোরেশনে ১২ লাখ এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনে ৯০ হাজার উপকারভোগী রয়েছে। টিসিবি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে এদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যের পণ্য বিক্রি করা হবে।’
কেন এই উদ্যোগ
বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির দীর্ঘসূত্রতা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। জ্বালানিসহ ভোজ্যতেল, চাল, গমের দাম স্মরণকালের রেকর্ড ভেঙেছে। বিশ্বের দেশে দেশে তার অভিঘাত আছড়ে পড়ছে।
এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন ভোগ্য ও ব্যবহার্য পণ্যের দামের উল্লম্ফনে স্বল্প আয়ের মানুষের দিশেহারা অবস্থা। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা ধরনের পদক্ষেপও যেন কাজ করছে না।
বাড়তি দামের এই উত্তাপ থেকে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে স্বস্তি দিতে টিসিবির নিয়মিত পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এর মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে এই সুবিধায় তালিকাভুক্ত করার নির্দেশনা দেন। এর পরই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সহায়তায় উপকারভোগী বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।
যেভাবে পণ্য পাচ্ছেন উপকারভোগীরা
ভর্তুকি দামে টিসিবির পণ্য কিনতে সুবিধাভোগীদের প্রত্যেক পরিবারকে একটি করে ফ্যামিলি কার্ড দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, উপকারভোগীরা ফ্যামিলি কার্ড দেখিয়ে নিজ নিজ এলাকায় টিসিবি নিয়োজিত ডিলারের কাছ থেকে রমজাননির্ভর পাঁচটি পণ্য কিনতে পারবেন বাজার-দামের প্রায় অর্ধেক দামে।
ইতিমধ্যে গত ৬ মার্চ থেকে রাজধানীতে ১৫০টি ট্রাকে করে শুরু হয়েছে পণ্য বিক্রি। এর বাইরে রাজধানীসহ দেশের সব মহানগরী, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে উপকারভোগী পরিবারের কাছে ভর্তুকির পণ্য পৌঁছে দিতে ২০ মার্চ থেকে একযোগে বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তবে উপকারভোগীর কাছে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে দুই ভাগে। প্রথম দফায় ১ কোটি পরিবার ১১০ টাকা লিটার দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা দরে দুই কেজি চিনি ও ৬৫ টাকা দরে দুই কেজি মসুর ডাল কিনতে পারবে, যা চলবে রমজানের আগে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফায় বিক্রি কার্যক্রম শুরু হবে ৩ এপ্রিল থেকে। শেষ দফায় অভিন্ন দাম ও পরিমাণে আগের তিনটি পণের পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত হবে ২ কেজি ছোলা।
এসব পণ্য সুশৃঙ্খলভাবে বিক্রি করতে ৯টি তদারক দল, একটি উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় দল আছে। এ ছাড়া একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকারসংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। এর প্রভাব দুইভাবে পড়বে। এতে ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় ভোক্তা পর্যায়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে। অন্যদিকে ১ কোটি পরিবার মানে ৫ কোটি লোক এর সুফল ভোগ করবে। ফলে রমজানে চাহিদাযোগ্য এসব পণ্যের বাজারে একটি স্থিতিশীলতা রক্ষা নিশ্চিত করবে।’
আরও পড়ুন:জামালপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক করোনা সনাক্ত হয়েছেন। তিনি অর্থ সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে জামালপুর মেডিকেল কলেজে কর্মরত।
বুধবার (১৮ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ডাঃ আবু হাসনাত মোস্তফা জামান গত ১৬ জুন জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নমুনা পরিক্ষা করান। পরিক্ষায় তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। এ পর্যন্ত ১২ জনের নমুনা পরিক্ষায় এই প্রথম একজন চিকিৎসকের করোনা সনাক্ত হলো। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে করোনা পরিক্ষার সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। ইতিমধ্যেই ১০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিল করা না হলে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। তাছাড়া, অধ্যাদেশটি বাতিল না হওয়ার পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান তিনি।
বুধবার (১৮ জুন) সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের নিচে মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবনের নিচে আন্দোলনকালে এসব কথা জানান তিনি।
নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আট বিভাগে সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে। আলোচনার নামে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আস্থা ভঙ্গ করেছেন, বিশ্বাস নষ্ট করেছেন। আমরা চাই আমাদের ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হোক। এ ছাড়া যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলা রয়েছেন, তাদের তাড়াতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারি কর্মচারী, আমরা নিয়ম-শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী। অধ্যাদেশ বাতিল না হলে রবিবার (২২ জুন) আরও বৃহত্তর আন্দোলন আসবে।’
এর আগে, চাকরি অধ্যাদেশ পুরোপুরি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর।
গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
সরকারি কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এটি বাতিল করার জন্য সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও আজ (বুধবার) সমাজকল্যাণ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
১৮ জুন ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিংস ২০২৫-এর ফলাফলে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) বাংলাদেশের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের শীর্ষ ২০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়ে একটি গৌরবময় অবস্থান নিশ্চিত করেছে। বিশ্বব্যাপী ২,৩১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ডিআইইউ ১০১ থেকে ২০০-এর মধ্যে অবস্থান করেছে। বাংলাদেশ থেকে তালিকাভুক্ত ১৯টি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ডিআইইউ-ই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যা এই মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
টাইমস হায়ার এডুকেশন ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং মূলত জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-এর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান মূল্যায়ন করে থাকে। ২০২৫ সালের র্যাঙ্কিংয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষভাবে, বিশ্ববিদ্যালয়টি মানসম্মত শিক্ষা (এসডিজি-৪) এবং লক্ষ্যের জন্য অংশীদারিত্ব (এসডিজি-১৭) এই দুই ক্যাটেগরিতে বিশ্বব্যাপী ১৯তম স্থান অর্জন করেছে। এছাড়া শালীন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (এসডিজি-৮) ক্ষেত্রে ৩৩তম, শূন্য দারিদ্র্য (এসডিজি-১) ক্ষেত্রে ৩৬তম, জিরো হাঙ্গার (এসডিজি-২) ক্ষেত্রে ৫৩তম এবং বৈষম্য হ্রাস (এসডিজি-১০) ক্ষেত্রে ৬০তম স্থান অর্জন করেছে।
এই কৃতিত্ব ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টেকসইতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও বৈশ্বিক প্রভাব সৃষ্টির প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারের পরিচায়ক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সাফল্যে তাদের সম্মানিত অনুষদ সদস্য, নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, প্রতিভাবান শিক্ষার্থী, গর্বিত প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং মূল্যবান অংশীদারদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন, যারা এই যাত্রার অংশ হয়ে ডিআইইউ-কে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অর্জন বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প, সারাবছর আয়োজিত একাডেমিক ও সামাজিক কার্যক্রম এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রচেষ্টারই স্বীকৃতি। এই সাফল্য একাধারে সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা শিক্ষা ব্যবস্থার এবং তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর জ্ঞানচর্চার ধারাবাহিক উন্নয়নের প্রতিফলন।
কুষ্টিয়া বিজিবির পৃথক যৌথ টাস্কফোর্স এর অভিযানে ২৮৮০ কেজি বেহুন্দী জাল, ৪৭০ কেজি কারেন্ট জাল ও ১৫টি তেলের ড্রাম জব্দ এবং ৮টি নৌকার মালিককে ৩২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাত সাড়ে ১১ টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুষ্টিয়া বিজিবি-৪৭ ব্যাটালিয়ন।
বিজিবি জানায়, ১৬ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জেলার দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মানিকের চর এলাকায় একটি যৌথ টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় দৌলতপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, মৎস্য অফিসার, এবং বিজিবির ভারপ্রাপ্ত কোয়ার্টার মাস্টার সহকারী পরিচালক মোঃ জাকিরুল ইসলাম এর নেতৃত্বে বিজিবি ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালিত হয়।
পরিচালিত অভিযানে এ বিপুল পরিমাণ অবৈধ ২৮৮০ কেজি বেহুন্দী জাল, ১৫টি তেলের ড্রাম জব্দ সহ মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০-এর ৪(ক) ধারা লঙ্ঘনের দায়ে ৬টি নৌকার মালিককে ৫ হাজার টাকা করে মোট ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দকৃত জাল ও তেলের ড্রামের আনুমানিক মূল্য ৭২,৭৫,০০০ হাজার টাকা।
জব্দকৃত জাল ও তলের ড্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হাই সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
এছাড়াও মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে জেলার মিরপুর উপজেলার গরুর হাট সংলগ্ন এলাকায় আরেকটি যৌথ টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালিত হয়।
এ সময় ৪৭০ কেজি ভারতীয় অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। জব্দকৃত অবৈধ কারেন্ট জাল মিরপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয় এবং একই ধারায় অভিযুক্ত ২জনকে ১ হাজার টাকা করে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দকৃত কারেন্ট জালের আনুমানিক মূল্য ৭,০৫,০০০ টাকা।
বিজিবি আরো জানান, সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, মাদক ও চোরাচালানসহ সকল অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে সর্বদা কঠোর অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড। এই অভিযান মাদক ও চোরাচালানবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতির একটি সফল বাস্তবায়ন। ভবিষ্যতেও এই ধরনের অপরাধ দমনে কঠোর এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখবে বিজিবি ৪৭ ব্যাটালিয়ন।
কক্সবাজারের আলোচিত সাবেক এমপি জাফর আলম কে আদালতে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাতে চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হয়েছে আজ।
জাফর আলম সর্বশেষ কক্সবাজার-১ আসনের এমপি এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন।
বুধবার সকাল ৯টার পর পরই জেলা পুলিশের একটু প্রিজন ভ্যানে করে যৌথ বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় তাকে আদালতে আনা হয়।
তাকে আজ আদালতে তোলার খবরে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালত চত্বর ও আশপাশের অন্তত অর্ধ কিলোমিটার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে।
আদালত সূত্র জানায়- বিগত ৫ আগষ্ট পরবর্তী চকরিয়া ও পেকুয়া থানায় দায়ের করা একাধিক হত্যাসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় তাকে শ্যােন অ্যারেস্ট দেখানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। সেসব মামলার শুনানি করা হয় আজ। এ সময় আদালতের বিচারক মো. আনোয়ারুল কবির শুনানী শেষে ৭ মামলায় সর্বমোট ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তন্মধ্যে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব মামলায় সর্বোচ্চ চারদিন ও সর্বনিম্ন ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলাগুলোর মধ্যে চকরিয়া থানার ৫টি ও পেকুয়া থানার ২টি মামলা রয়েছে।
আরও জানান- আদালতের শুনানী চলাকালে জাফর আলমের পক্ষে শুনানী করেন অসংখ্য আইনজীবী। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে তথা জাফর আলমের বিপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট মো. মঈন উদ্দিন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন এপিপি মঈন উদ্দিন-ই।
আদালতের শুনানী শেষে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীরা জাফর আলমের মুক্তির দাবিতে সাড়ে দশটার দিকে একটি ঝটিকা মিছিল বের করেন।
এর আধাঘন্টা পর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জাফর আলমের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে পাল্টা মিছিল করে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে গিয়ে শেষ করেন।
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫' এর অধীনে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর' প্রতিষ্ঠিত হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনসহ গণ-অভ্যুত্থানের মর্ম ও আদর্শকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে এ অধ্যাদেশ। অধ্যাদেশটি জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে প্রকাশ করা হয়।
এই অধ্যাদেশের দ্বিতীয় অধ্যায়ে অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা ও এর কার্যাবলীসহ নানাবিধ বিষয় অর্ন্তভূক্ত রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর' প্রতিষ্ঠিত হবে।
অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থাকবে ঢাকায়। সরকার প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অধিদপ্তরের শাখা কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
অধিদপ্তরের কার্যাবলী হচ্ছে- সরকারি গেজেটে প্রকাশিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা ও ডাটাবেজ সংরক্ষণ, প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন এবং হালনাগাদ আকারে সরকারি গেজেটে প্রকাশের জন্য সুপারিশ।
এছাড়া রয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এককালীন ও মাসিক আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ।
আরো রয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন।
কার্যাবলীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দেশি-বিদেশী সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয়সাধনের কথা রয়েছে।
অধিদপ্তরের একজন মহাপরিচালক থাকবেন এবং তিনি অধিদপ্তরের প্রধান নির্বাহী হবেন।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, এটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনসহ গণ-অভ্যুত্থানের মর্ম ও আদর্শকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে।
অধ্যাদেশ আরো বলা হয়েছে, তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের বর্ণবাদী, নিপীড়নমূলক ও বৈষম্যমূলক নীতি এবং বাংলাদেশের জনগণকে নির্বিচারে হত্যার কারণে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জনগণের অব্যাহত সংগ্রাম ও ত্যাগ তিতিক্ষা সত্ত্বেও স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও সুবিচার, মর্যাদাপূর্ণ গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। জানুয়ারি ২০০৯ সাল থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দলীয়করণ, দুর্নীতি ও পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফলে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়। অন্যায়ভাবে শক্তি প্রয়োগ করে বিরোধীমত দমন, গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যা সংঘটিত হয়। দেশের অর্থ পাচার ও লুটপাট নীতির ফলে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি, নারী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কাঠামোগত সহিংসতার শিকার হয়। জনগণের বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার হরণ করে জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার সৃষ্ট প্রেক্ষাপট জনগণকে শঙ্কিত করে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জুলাই ২০২৪ এ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আপামর জনতার দীর্ঘ পনেরো বৎসরের ফ্যাসিবাদ ও বিচারহীনতার ফলে পুঞ্জীভূত ক্ষোভে এক গণআন্দোলন হতে ক্রমান্বয়ে গণঅভ্যুত্থানে রূপ লাভ করে ৫ আগস্ট, ২০২৪ এ ফ্যাসিবাদী শাসককে জনগণের কাছে পরাজিত হয়ে দেশ ছেড়ে পলায়নে বাধ্য করে। এ গণঅভ্যুত্থানে ব্যাপক সংখ্যক নারী ও পুরুষ অংশগ্রহণ করেছেন এবং দেশব্যাপী সহস্রাধিক নিরস্ত্র দেশপ্রেমিক ছাত্রজনতা শহীদ হয়েছেন।
এছাড়া অসংখ্য মানুষ আহত, কেউ কেউ গুরুতর আহত হয়েছেন। অধিকাংশই আঘাত ও নৃশংসতার বিভীষিকায় পর্যুদস্ত এবং তাদের এই আত্মত্যাগকে যথার্থ সম্মান প্রদর্শন অপরিহার্য।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জুলাই আন্দোলনে ত্যাগের দৃষ্টান্ত জাতির গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও রাষ্ট্র পুনর্গঠনের একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসাবে সমুন্নত রাখা কর্তব্য।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত স্বীকৃতি, সম্মান, কল্যাণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন ও পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। এই অধ্যাদেশ 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫' নামে অভিহিত হবে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও গেজেটে বলা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে বরং জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মেলবন্ধনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত 'প্রধান উপদেষ্টার দরবার' অনুষ্ঠানের বক্তব্যে এ কথা বলেন।
এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যদের সকল রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এসএসএফ মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুস সামাদ চৌধুরী বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তিন বাহিনী প্রধান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য