দুই সপ্তাহ আগে সংবাদকর্মী বাদল খান ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, তিনি ২৩ দিন হর্ন না বাজিয়ে ঢাকায় মোটরসাইকেল চালিয়েছেন। এতে কোনো সমস্যা হয়নি জানিয়ে তার মনে উপলব্ধি এসেছে, ঢাকায় হর্ন না বাজিয়েও বাইক চালানো যায়।
রাজধানীতে প্রধান সড়কে, অলিগলিতে, হর্ন নিষিদ্ধ এলাকায়, হাসপাতাল-স্কুলের সামনে চলতে থাকা যানবাহন, এমনকি সিগন্যালে গাড়ি আটকে থাকা অবস্থায় যখন উচ্চৈঃস্বরে হর্ন বাজতে থাকে, সে সময় বাদলের এই উপলব্ধি কি একেবারেই অবাস্তব?
এই সংবাদকর্মীর স্ট্যাটাসের নিচেই বেশ কয়েকজন কমেন্ট করেন। এদের একজন জানান, তিনি তিন বছর ধরেই হর্ন না বাজিয়ে চলছেন, একজন জানান, তিনি ছয় বছর ধরে হর্ন দেন না বললেই চলে।
রাজধানীতে শব্দদূষণ কতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে, সেটি ফুটে উঠেছে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে, যেখানে বলা হয়েছে ঢাকায় শব্দদূষণ এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি।
নানা কারণে শব্দদূষণ হয়ে থাকে, তার একটি হলো গাড়ির হর্ন। এই হর্নের নির্ধারিত যে মাত্রা সরকার বেঁধে দিয়েছে, তার চেয়ে উচ্চ শব্দের হর্ন আমদানি হচ্ছে হরদম। হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধের বিষয়টি যে একেবারেই কাগজে-কলমে, সেটি মহাসড়কে এমনকি ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে গেলেই বোঝা যায়। দূরপাল্লার বাসগুলো ঢাকার বাইরে তো বটেই, এই সড়কটিতেও হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করে।
বাদলের স্ট্যাটাসের নিচে কমেন্ট করে ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজের সিনিয়র রিপোর্টার আহম্মদ ফয়েজ তিন বছর ধরে হর্ন না বাজিয়ে রাজধানীতে বাইক চালান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মানুষ অকারণে কেন হর্ন বাজায় তা আমি বুঝি না। অনেকেই দেখি খালি রাস্তায় দুইবার বাজায়। পরে আমি চিন্তা করলাম হর্ন না বাজিয়ে চলা যায় কি না। দিনে একবার দুইবার হঠাৎ বাজাতে হয় যদি সরু গলিতে ঢুকতে হয়। এ ধরনের কারণ ছাড়া ঢাকা শহরের রাস্তায় হর্ন বাজানোর কোনো যুক্তি আসলে নাই।’
এই অভ্যাস কীভাবে করা যায়, সে পরামর্শও দিয়েছেন এই সাংবাদিক। বলেন, ‘যারা এই চর্চা করতে চাচ্ছে তাদের প্রথমে ঠিক করতে হবে, তিনি হর্নে হাত দেবেন না। ব্যক্তিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দূষণ থেকে শহরকে বাঁচাবেন। তাহলেই হবে। গলাটিপে এটা বন্ধ করা যাবে না। মানুষকে সচেতন করতে হবে।’
প্রতিটি গাড়িতেই হর্ন ছাড়াও সামনের গাড়িতে সংকেত দেয়ার ব্যবস্থা থাকে। হেডলাইটের পাশে ছোট বাতি থাকে, সেটি জ্বলে থাকে না। নির্দিষ্ট বাটনে চাপ দিলে সামনের গাড়ির লুকিং গ্লাস হয়ে চালকের চোখে সেই সংকেত ধরা দেয়। এতে তিনি পেছনের গাড়ির গতিবিধি দেখতে পারেন।
তবে বাংলাদেশে বিশেষ করে বাইকে প্রায়ই দেখা যায়, লুকিং গ্লাস খুলে ফেলা হয়েছে। ফলে পেছনের গাড়ির গতিবিধি তার দেখার সুযোগ নেই। আর গাড়ির কারের চালকরাও আলোর সংকেতে অভ্যস্ত নয়। যে কারণে হর্নই চলে দিনরাত।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা অপূর্ণ রুবেল হর্ন ছাড়া বাইক চালান ৬ বছর ধরে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৬ সালের দিকে লেখক আনিসুল হকের কাছ থেকে শুনলাম তার গাড়িতে হর্ন বাজে না। তখন আমিও ট্রাই করলাম হর্ন না বাজানোর। কয়েক দিন চেষ্টা করেই সফল হয়ে গেলাম।’
রাজধানীর একটি হাসপাতালের সামনে শব্দদূষণের মাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফাইল ছবি
ক্ষতি ব্যাপক, কিন্তু নেই সচেতনতা
গাড়ির হর্নের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা গড়ার চেষ্টা হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে একটি প্রচার চালাচ্ছেন মমিনুর রহমান রয়েল নামে একজন, যিনি কাজ করেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। তার ব্যতিক্রমী পোস্টার সহজেই নজর কাড়ে নগরবাসীর। সেখানে লেখা থাকে, ‘হর্ন হুদাই বাজায় ভুদাই।’
তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে স্টাডি করেছি, যারা এক্সপার্ট তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। অতিরিক্ত হর্নের কারণে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। মানুষের টেম্পারমেন্ট কমে যায়, উচ্চ রক্তচাপ হয়, গর্ভবতী মায়ের সন্তান ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে।’
মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে কি না- এমন প্রশ্নে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মনে হচ্ছে কিছু মানুষের মধ্যে কিছুটা এসেছে। তবে সামগ্রিকভাবে খুব বেশি হয়েছে সেটি বলা যায় না।’
রয়েল যে ক্ষতির কথা বলেছেন, সেটিই ফুটে উঠল জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরীর কথায়। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শব্দদূষণের কারণে শ্রবণ ইন্দ্রিয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশে মৃদু বধির এবং মধ্যম মানের বধিরের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
‘শব্দদূষণের কারণে আমাদের মস্তিষ্ক উত্তেজিত এবং বিরক্তবোধ করে। ফলে হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়। রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে উচ্চ রক্তচাপ রোগের সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্ক উত্তেজিত থাকার কারণে অনিদ্রা এবং ঘুম হয় না। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
‘মেজাজ খিটখিটে হওয়ার কারণে মনোসংযোগ করার ক্ষমতা কমে যায়। সব মিলিয়ে একটি ব্যক্তির যে সাম্য অবস্থা ভারসাম্য, সেটা বিঘ্নিত হয়। এভাবে চলতে থাকলে তার হার্টের ওপর চাপ পড়বে এবং হৃদরোগের তৈরি হয়। হৃদরোগের সৃষ্টি হলে উচ্চ রক্তচাপের কারণে স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
‘এভাবে শব্দদূষণ বধির থেকে শুরু করে ডায়াবেটিসসহ বড় বড় রোগের আধার হিসেবে আমাদের শরীরটাকে তৈরি করে ফেলে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হয়। আবার অসুস্থ হওয়ার কারণে জাতীয় শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্য তো বটেই, অর্থনীতিরও ক্ষতির কারণ হয়েছে।’
আইন আছে, প্রয়োগ নেই
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ২০০৬ সালে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা করা হয়। এতে বলা হয়, আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল।
হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া আছে।
২০০৭ সালে রাজধানীর বেশ কয়েকটি সড়কে হর্ন নিষিদ্ধ করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সে সময় অভিযান চালিয়ে প্রতিদিন জরিমানা কত সেটি গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
কিন্তু এখন এই ধরনের অভিযান আর হয় না। সব সড়কেই দেদার বাজতে থাকে হর্ন।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (আইন শাখা) খোন্দকার ফজলুল হক নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, তাদের অভিযান চালু আছে। তিনি বলেন, ‘আগে কেবল ঢাকা শহরে চলত, এখন প্রতিটি জেলা শহরেই চলে।’
শব্দদূষণের আরও উৎস
গাড়ির হর্ন ছাড়াও শব্দদূষণের কারণের অভাব নেই। ঢাকা শহরে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায় দিনরাত চলে পাইলিংয়ের কাজ। ইট ভাঙার যন্ত্র, সিমেন্ট মিকশ্চারেরও যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে।
এর বাইরে অনুমোদন ছাড়া মাইকের ব্যবহার, গভীর রাতে বাড়ির ছাদে উচ্চ শব্দে পার্টি আর ধর্মীয় আলোচনাও শব্দদূষণ ঘটাচ্ছে।
সব মিলিয়ে শব্দদূষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে অস্বস্তিকর অবস্থায়। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) ২০২২ সালের প্রতিবেদনে শব্দদূষণে বিশ্বের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম।
ফ্রন্টিয়ারস ২০২২: 'নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন বলছে, ঢাকায় শব্দের সর্বোচ্চ তীব্রতা ১১৯ ডেসিবল, যা এ প্রতিবেদনে আসা শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
কদিন আগেই সারা বিশ্বে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ প্রথম এবং শহর হিসেবে ঢাকা ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে।
এই জরিপের প্রসঙ্গ টেনে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যানবাহন শব্দদূষণের প্রধানতম উৎস। যেহেতু আমরা উৎসগুলো জানি; সমাধানের কথা চিন্তা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আইনে হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধের কথা বলা আছে। নীরব এলাকা, বধির এলাকার কথা বলা আছে, কিন্তু কিছু মানা হয় না।’
কামরুজ্জামান জানান, দেশে শব্দের যে সর্বোচ্চ মাত্রার কথা বলা আছে, গাড়ির হর্ন আমদানি করা হয় তার চেয়ে বেশি মাত্রায়।
তিনি বলেন, ‘গাড়ির হর্ন আমদানির মানমাত্রা দেয়া আছে ৮০ থেকে ৮৫ ডেসিবল, মোটরসাইকেলে তা ১০০ ডেসিবলের ওপরে চলে যায়। অথচ সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দ ব্যবহার করতে পারব ৭০ ডেসিবল।’
সচেতনতা ছাড়া উপায় নেই
পরিবেশকর্মী কামরুজ্জামান বলেন, ‘যিনি হর্নটা দিচ্ছেন, তিনি নিজেও ক্ষতির শিকার। এ ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবটাই স্পষ্ট হয়। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালের সামনের এলাকা নীরব এলাকা। কিন্তু অনেকেই জানে না কোনটা নীরব এলাকা।’
দূষণ সবচেয়ে বেশি হাসপাতাল এলাকায়
রোগীর সঠিক সেবা নিশ্চিতে শব্দদূষণ কম হয় এমন জায়গায় নির্মিত হয়েছিল হাসপাতাল। কিন্তু দেখা গেছে শব্দদূষণের এসব হাসপাতালের সামনের রাস্তাতেও দেখা গেছে।
সম্প্রতি বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেডের যৌথ এক গবেষণায় ধানমন্ডি এলাকায় হাসপাতালগুলোর সামনে ১৭টি জায়গায়ই শব্দ পাওয়া গেছে আদর্শ মানের বেশি।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজের সামনে মাত্রা পাওয়া গেছে ৬৯ দশমিক ৭ ডেসিবল, সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনে ৮৯ দশমিক ৯ ডেসিবল।
এই ১৭টি স্থানের মধ্যে শব্দের মাত্রা গড়ে ৮১ দশমিক ৭ ডেসিবল। এর মধ্যে ৯টি স্থানেই ৮০ ডেসিবলের বেশি, যা খুবই বিপজ্জনক।
আরও পড়ুন:ঈদুল আজহায় টানা ছুটির মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকার বাতাস মোটামুটি স্বাস্থ্যকর ছিল। তবে গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিহীন শুষ্ক পরিবেশ আর ক্রমেই রাজধানীর পুরনো ভিড় বাড়তে থাকায় দূষণও বাড়ছে সমান তালে।
রবিবার (১৫ জুন) সকাল ৯টার দিকে দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ফের শীর্ষস্থানগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা। এ সময়ে ১৪২ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত বাতাসের শহর ছিল বাংলাদেশের রাজধানী, সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য যা অস্বাস্থ্যকর।
এ সময় ১৫৩ স্কোর নিয়ে শীর্ষ দূষিত শহর ছিল ইন্দোনেশিয়ার মেদান। এ ছাড়া ১২৬ ও ১২৪ স্কোর নিয়ে ঢাকার পরেই ছিল যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও মিসরের কায়রো।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
রাজধানীর উত্তরায় র্যাব পরিচয়ে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদের’ এক পরিবেশকের এক কোটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কে এই ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানায়, ‘আব্দুল খালেক নয়ন নগদের একজন পরিবেশক। তিনি উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্লাটে থাকেন। শনিবার সকালে তিনি তার চারজন এমপ্লয়িকে দুইটি মোটরসাইকেলযোগে বাসার পাশেই পরিবেশক অফিসে পাঠাচ্ছিলেন। সাথে এক কোটি টাকার বেশি ছিল।’
‘তাদের বহনকারী মোটরসাইকেল দুটি বারো নম্বর রোড ক্রস করে যখন তেরো নম্বর রোডে ঢুকছিল, তখন ওৎপেতে থাকা একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস তাদের গতি রোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত তিন থেকে চারজন নেমে এসে টাকার ব্যাগ বহনকারী মোটরসাইকেল আরোহীদের ধাওয়া করে।’
পুলিশ আরও জানায়, এদের মধ্যে একজন আরোহী দৌড়ে পালিয়ে গেলেও তিনজনকে টাকার ব্যাগসহ তারা মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরবর্তীতে তারা উত্তরা সতেরো নম্বর সেক্টরে নগদ মাইক্রোবাস থেকে তাদের ফেলে দিয়ে টাকার ব্যাগ সহ পালিয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে উত্তরা ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার মইদুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, ‘ঘটনার পরপরই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিসিটিভির ফোটেজ সংগ্রহ করেছেন। ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।’
ঈদ উপলক্ষে লম্বা ছুটিতে বেশ কিছুদিন ধরে একপ্রকার ফাঁকা হয়ে গেছে শহর ঢাকা। সড়কগুলোতে নেই যানবাহনের চাপ; স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতও বন্ধ; রাস্তায় লোকজনও হাতেগোনা। এই অবস্থায় গত কয়েকদিন বৃষ্টি কমে গেলেও রাজধানীর বাতাসের মানে খুব বেশি অবনতি হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল মাত্র ৬৬। আর দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান আরও অবাক হওয়ার মতো। প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিলেও ঢাকার অবস্থান আজ ৫৫তম।
কণা দূষণের একিউআই মান যদি ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০-এর মধ্যে হলে সেটি ‘মাঝারি’। ঢাকার বাতাস আজ মাঝারি হলেও ‘ভালো’ থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
এই সময়ে ৬৭ একিউআই স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকার ৫২তম স্থানে ছিল স্পেনের বার্সেলোনা, ৫০তম স্থানে সুইজারল্যান্ডের বেয়ার্ন, ৬৮ স্কোর নিয়ে ৪৯তম স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি, ৭০ ও ৭১ স্কোর নিয়ে ৪৪ ও ৪৩তম স্থানে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসি, ৭৩ স্কোর নিয়ে ৩৮তম স্থানে কানাডার টরেন্টো, ৮০ স্কোর নিয়ে ২৭তম দূষিত শহর শিকাগো, ৯৯ স্কোর নিয়ে ১৫তম স্থানে ইতালির রোম এবং ১২৮ স্কোর নিয়ে তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছে মিলান।
তবে ১৬৮ একিউইউ স্কোর নিয়ে এই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল ভারতের দিল্লি। ১৬২, ১৫৬ ও ১৩৭ স্কোর নিয়ে এর পরের তিন দূষিত শহর যথাক্রমে ইরাকের বাগদাদ, পাকিস্তানের লাহোর ও সৌদি আরবের রিয়াদ।
একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
এডিস মশার বিস্তার রোধে তাৎক্ষণিক ফল পেতে ১৪ জুন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন(ডিএসসিসি) এলাকায় দ্বিগুণহারে কীটনাশক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও করোনা প্রতিরোধে ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর ওয়াসা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় অ্যাডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমে (ফগার মেশিন দ্বারা পরিচালিত) বর্তমানে ব্যবহৃত ৩০ লিটার কীটনাশকের পরিবর্তে দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থাৎ ৬০ লিটার কীটনাশক প্রতিদিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ছাড়া অঞ্চলভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠন ও জনবল ঘাটতি পূরণে উদ্যোগসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় মশক কর্মীদের সকাল ও বিকেলে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, সঠিক অনুপাতে কীটনাশক প্রয়োগ যাচাই, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং মশক কর্মী দ্বারা বাড়ির ভিতর, আঙিনা ও ছাদের জমানো পানিসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে অঞ্চল ভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া, ডেঙ্গু ও করোনা বিষয়ে ডিএসসিসি সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফারিয়া ফয়েজকে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে মনোনীত করা হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মাসের মধ্যে কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে নগর ভবনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিনের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হালনাগাদ তথ্য ডিএসসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। মশক নিধনে জনবল ঘাটতি পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাসহ ডেঙ্গু ও করোনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এ কে এম মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সেলিম (৪৫), রফিক (৪০), সাদ্দাম (৩০), উজ্জ্বল (৩২) ও শামীম (২৫)।
গতকাল সোমবার (৯জুন) মোহাম্মদপুর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে রয়েছে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১জন, মাদক মামলায় ১জন, দূস্যতার মামলায় ১জন এবং অন্যান্য মামলায় ২জন।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর পল্লবী থানার মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে।
নিহত ওই যুবকের নাম রাকিবুল হাসান সানি (২৯)। ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সকাল সাতটার দিকে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছি। পরে মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদক বিক্রির আধিপত্য বিস্তার ও দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রাতের আঁধারে হত্যাকারীরা কীভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে; তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নিহতের পরিবারের দাবি, সানি একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গেল রমজান মাসেও একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র তার ওপর হামলা চালিয়েছিল।
ঘটনার পর থেকে মিল্লাত ক্যাম্প এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং এলাকায় পুলিশ ও সিআইডি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
গতকাল শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে বন্ধ থাকার পর আজ রোববার থেকে ফের চালু হয়েছে মেট্রোরেল। তবে মেট্রোতে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না।
রোববার সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, আজ (রোববার) প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ট্রেন চলছে। আগামীকাল সোমবার থেকে মেট্রোরেল সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে।
গত মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না। মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটে যাত্রীদের যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর কাছে কাঁচা বা রান্না করা মাংস পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তার মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ আটকে দেওয়া হবে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীদের এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতেও বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য