ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার মেয়র আব্দুল ওয়াহেদ কবির খানের বিরুদ্ধে উন্নয়নকাজের চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
পৌরসভার ছয় কাউন্সিলর এই অভিযোগ তুলেছেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ ১২টি দপ্তরে মেয়রের বিরুদ্ধে অর্থ লুটপাটের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পৌরসভার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান নামের এক বাসিন্দা।
কাউন্সিলরদের অভিযোগ, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম, কর্মচারী গোলাম মোস্তফা, মিরাজুল ইসলাম প্রিন্স ও সাবেক পৌরসচিব রাশেদ ইকবালকে নিয়ে উন্নয়ন বরাদ্দের চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মেয়র আব্দুল ওয়াহেদ কবির খান।
নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র পলাশ তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুধু উন্নয়ন বরাদ্দই নয়, সাবেক মেয়রের রেখে যাওয়া ৪৩ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংকের নলছিটি শাখা থেকে কৃষি ব্যাংকে স্থানান্তর করে পুরোটাই আত্মসাৎ করেছেন মেয়র। ওই টাকা কোন খাতে খরচ করা হয়েছে তার কোনো হিসাব কাউন্সিলরদের দেখাতে পারেননি মেয়র।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় নলছিটি পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম দুলাল চৌধুরী, ফিরোজ আলম খান, রেজাউল চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম টিটু এবং ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর দিলরুবা বেগমের সঙ্গে। তারা মেয়রের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সত্য বলে জানান।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ ১২ দপ্তরে মেয়রের বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগে সাইদুর বলেন, নলছিটি পৌরসভায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বিভিন্ন সময়ে ডেঙ্গু নিধনে বরাদ্দ ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, আইলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, করোনায় স্বাস্থ্যসামগ্রী বিতরণের ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মেয়র আত্মসাৎ করেছেন।
খাতওয়ারি অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, তিনি ৯ প্রকল্পের বিশেষ বরাদ্দের ২৫ লাখ টাকা, উন্নয়ন বাজেটের ২৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা, পৌরসভার বিশেষ বরাদ্দ ২০ লাখ টাকা, নগর উন্নয়ন প্রকল্পের ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা উত্তোলন, জলবায়ু প্রকল্পের ৫০ লাখ টাকা এবং করোনার দ্বিতীয় বরাদ্দের ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার নামমাত্র কাজ করে আত্মসাৎ করেছেন।
পৌর কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম দুলাল চৌধুরী বলেন, ‘যেসব প্রকল্পে টাকা দেয়া হয়েছে, সেসবের বাস্তবায়ন জনগণ দেখেনি। করোনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ ও ডেঙ্গু নিধনে ওষুধ বিতরণ হয়েছে নামমাত্র। বাকিটা হয়েছে হরিলুট।’
কাউন্সিলর রেজাউল চৌধুরী বলেন, ‘নগর উন্নয়ন প্রকল্পে সাতটি রাস্তা নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হলেও ৩টির ২০ ভাগ কাজ হয়েছে। বাকি চারটি রাস্তার কোনো কাজ না করেই বিল তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর ফিরোজ আলম খান বলেন, ‘জলবায়ু প্রকল্পের বরাদ্দ ২ কোটি টাকার অনকূলে ১৫০টি স্ট্রিট লাইট ও ৫০টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ ছিল। এখানে ৮টি গভীর নলকূপ ও ১৫টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন করে বরাদ্দের বাকি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।’
আরেক কাউন্সিলর সহিদুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘৭ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তার কাজ না করে বিল তোলায় আমি মেয়রকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দের সব মিলিয়ে ৪ কোটি টাকার কোনো কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।’
কাউন্সিলর দিলরুবা বেগম বলেন, ‘১ নম্বর প্যানেল মেয়র টেন্ডার কমিটির আহ্বায়ক। তার সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই সব টেন্ডার সম্পন্ন করেছেন মেয়র ওয়াহেদ।’
সরকারি বরাদ্দের অর্থ লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেয়র ওয়াহেদ কবির খান। বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মিথ্যে অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। কাজ না করে বিল ওঠানো এবং হিসাব না দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। অনেক প্রকল্পের কাজ এখনও চলমান রয়েছে।’
আরও পড়ুন:বিয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতা হেলিকপ্টারে করে গেলেন কনে আনতে। এ সময় শত শত লোক ভিড় জমান। উৎসুক লোকজনের ভিড় সামলাতে ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে ছিল পুলিশও।
এ জমকালো বিয়ের বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রিদওয়ান আনসারি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকার আনসারি বাড়ির এ আর আনসারি বাবরু ও রোকসানা আনসারি পপির ছোট ছেলে তিনি।
পরিবারটি আগে থেকেই বেশ স্বচ্ছ্বল।
শুক্রবার দুপুরে শহরের অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বোর্ডিং এর মাঠ থেকে রিদওয়ান হেলিকপ্টারে যাত্রা শুরু করেন। সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের সুহিলপুর বাজারে তার আকাশযান অবতরণ করে। কনের বাড়ি সুহিলপুর গ্রামে।
কনে তামান্না খানম চাঁদনী সুহিলপুর গ্রামের আক্তার খানের মেয়ে। তিনি এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বর ও কনে উভয়ের বাড়ি একই জেলায় হওয়ায় এ ঘটনায় আজ সাড়া পড়ে গিয়েছে।
বিকেলে এই বিয়ের পর বর রিদওয়ান ফের হেলিকপ্টারে চড়ে কনে নিয়ে শহরের বোর্ডিং এর মাঠে অবতরণ করে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।
হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ের আয়োজনের খবর পেয়ে পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে। কৌতূহলী ও উৎসুক লোকজনের ভিড় সামলাতে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।
সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ের আয়োজনের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল। কৌতূহলী ও উৎসুক লোকজনের ভিড় সামলাতে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।’
বরের বড় ভাই রাইয়ান আনসারি রিকি জানান, তাঁরা দুই ভাই, কোনো বোন নেই। রিদওয়ান সবার ছোট। আদরের ভাইয়ের বিয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে হেলিকপ্টারে করে বরযাত্রা ও কনে নিয়ে আসার আয়োজন করা হয়। ঢাকা থেকে ভাড়া করে হেলিকপ্টার আনা হয়।
তিনি বলেন, ‘ছোট ভাইয়ের খুব ইচ্ছে ছিল বিয়ের দিন কনের বাড়িতে হেলিকপ্টারে যাবে। সেই আশায় আমরা পূরণ করেছি।’
কনের গ্রাম সুহিলপুরের বাসিন্দা ও সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ভূইয়া বলেন, ‘হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ের আয়োজনে গ্রামের উৎসুক লোকজন হেলিকপ্টার ও বর-কনেকে দেখতে ভিড় জমান। গ্রামবাসীর মধ্যে এ সময় আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছিল বলে স্থানীয় বিভিন্ন জানিয়েছেন। ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় আমি বিয়েতে যেতে পারিনি। তবে বিষয়টি শুনেছি।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলায় সুবিধাভোগীদের কার্ড কৌশলে জমা নিয়ে টোকেনের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য বিতরণের অভিযোগ উঠেছে একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার মাইজকাপন ইউনিয়নে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের দাবি, সবাইকে দেয়ার মতো পর্যাপ্ত পণ্য তিনি পাননি। এ কারণে এই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে কার্ড জমা রাখার বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা বলছেন, চেয়ারম্যান তাদের বলেছিলেন পণ্য কম এসেছে। তাই বেছে বেছে দেবেন। কিন্তু প্রতি ওয়ার্ডে যতজনকে দেয়া হবে বলেছিলেন, দেয়া হচ্ছে তার চেয়ে অনেক কম।
চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, তার এই উদ্যোগের বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, পণ্যের কোনো সংকট নেই। এভাবে টোকেন দিয়ে পণ্য দেয়া যাবে না। এই অভিযোগ জানার পর তিনি পণ্য বিতরণই বন্ধ করে দিয়েছেন।
কৌশলে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কার্ড জমা নিয়ে টোকেনের মাধ্যমে নিজেদের আত্মীয়স্বজন আর সমর্থকদের মধ্যে এ পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ঈদের আগে কার্ড নিয়ে আর দেননি চেয়ারম্যান
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুবিধাভোগী জানান, ঈদুল ফিতরের আগে তাদের চাল, ডাল, আর চিনি দেয়ার সময় চেয়ারম্যান তাদের কাছ থেকে কার্ডগুলো জমা নিয়েছিলেন। পরে আর ফেরত দেননি।
একজন সুবিধাভোগী বলেন, ‘সহালে হুনলাম টিসিবির মাল দেওয়া অইতাছে। আয়া দেহি যারার আতো (হাতে) টোহেন (টোকেন) আছে তারাই মাল পাইতাছে। হেরারে (তাদেরকে) জিগাইলাম টোহেন কইত্তে (কোথায়) পাইছেন? হেরা কয়, এইহানো (এখানে) আওনের পরে চেয়ারম্যান সাব তারার আতো আতো (হাতে হাতে) এইডি (এগুলো) দিছুইন।
‘আমরা ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে গেয়া মাল চাইলে চেয়ারম্যান কয়, তুমরার (তোমাদের) মাল আইছে না। আইলে পাইবা।’
ক্ষুব্ধ ইউপি সদস্যরাও
নাম প্রকাশে একাধিক সাধারণ ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য জানান, ২৭ তারিখে চেয়ারম্যান তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। তখন তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় এবার মাল কম এসেছে। এগুলো কীভাবে বণ্টন করা যায় সে মতামত নেন তিনি।
সেই বৈঠকে উপস্থিতি এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের মতামত নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বিতরণের সময় তিনি তার ইচ্ছেমতো সেগুলো বিতরণ করেছেন।
‘মিটিংয়ের সময় সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রতি ওয়ার্ডে ৬৫টি করে টোকেন দেবেন। আমরাও রাজি হয়েছি। কিন্তু আজ সকালে আসার পর মাত্র ৯টি টোকেন হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। এগুলো থেকে আমরা কাকে রেখে কাকে দেব?
‘চেয়ারম্যান সাহেব নিজের লোক ঠিক রাখতে এই কাজ করেছেন। কিন্তু আমাদের ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ অনেকেই এসে মাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছেন। তারা অনেকেই আমাদের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছেন। তাদের কিছু দিতে পারিনি বলে আমরাও লজ্জিত হয়েছি।’
ইউপি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় একজন সুবিধাভোগী এসে তার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যের কাছে ভাড়া চান। একজন সুবিধাভোগী ইউপি সদস্যের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মাল দিতে পারবেন না তো আমাদের আনলেন কেন?এখন বাড়ি যাব আসা-যাওয়ার ভাড়া আপনি দিবেন। যদি তাও না পারেন তবে আগামীতে যখন ভোটের জন্য আসবেন তখন ভাড়াটা ঠিকই আদায় করব।’
কী বলছেন চেয়ারম্যান?
মাইজকাপন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। তিনি এ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ২ হাজার ৬৮৪ জন টিসিবি কার্ডধারী সুবিধাভোগী রয়েছেন। কিন্তু আমি মাল পেয়েছি এক হাজার। এখন কী করব? এ বিষয়ে আমার ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে ইউএনও সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সঙ্গে পরামর্শ করেই এভাবে পণ্য বিতরণ করেছি।
‘এখন যদি কার্ড দিয়ে পণ্য বিতরণ করি, তবে সবাই এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতেই এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আপনার আরও কিছু জানার থাকলে ইউএনও স্যার আর ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।’
সুবিধাভোগীদের হাতে কার্ড নেই কেন, এগুলো কোথায়- এই প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, ‘সব কার্ড ডিলারের কাছে।’
তবে পাশেই বসা ছিলেন মেসার্স আবদুস সালাম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো.আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ‘সুবিধাভোগীদের কার্ডগুলো আমার কাছে ছিল ঠিকই, কিন্তু আজ থেকে আরও ২০ দিন পূর্বেই চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। এখনও তার কাছেই আছে।’
তিনি বলেন, ‘গোডাউনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য না থাকায় একসঙ্গে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। আজ আমরা যে পরিমাণ পণ্য পেয়েছি তাতে এক হাজার পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা যাবে। বাকিটুকুও দু-এক দিনের মধ্যেই দিয়ে দেব।’
চেয়ারম্যানের দাবি নাকচ ইউএনওর
প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এভাবে পণ্য বিক্রির বিষয়ে চেয়ারম্যান যে দাবি করেছেন, তা নাকচ করেছেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টোকেনের মাধ্যমে পণ্য বিতরণের বিষয়টি জেনে আমি চেয়ারম্যানকে ফোন করে বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছি।
‘অনেক সময় সুবিধাভোগীদের কার্ড ছিঁড়ে যায়, হারিয়ে যায়। তাই প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের প্রতি নির্দেশনা আছে আপনারা তালিকা দেখে পণ্য বিতরণ করবেন। কিন্তু তারা যদি তালিকার বাইরে টোকেনের মাধ্যমে পণ্য বিতরণ করে থাকেন, তবে এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
পণ্য সংকট বলে চেয়ারম্যান যে দাবি করছেন, সেটিও সঠিক নয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য মজুত রয়েছে। এগুলো ঢাকা ও ময়মনসিংহ থেকে আসে। অনেক সময় পরিবহন সমস্যার কারণে এক-দুদিন সময় লাগে।’
আরও পড়ুন:বর্তমান সরকার যেকোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি কঠোর হস্তে দমনে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামে শ্রীকৃষ্ণ মন্দির আয়োজিত রথযাত্রার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা জানান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে মাঝেমধ্যে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। এই অপশক্তি সাপের মতো ছোবল মারতে চায়। বিভিন্ন সময় সেই অপচেষ্টা হয়েছে। আমাদের সরকার সেগুলোকে কঠোর হস্তে দমন করেছে। আমরা যেকোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি কঠোর হস্তে দমনে বদ্ধপরিকর।’
তিনি বলেন, ‘যারা সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে লালন-পালন করে, সাম্প্রদায়িকতাকে নিয়ে রাজনীতি করে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে যারা দেশে গণ্ডগোল পাকায়, যারা এই দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, তাদেরকে আপনারা চেনেন, তাদেরকে বর্জন করুন।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ হয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে। হিন্দুদের জন্য একটি রাষ্ট্র আর মুসলিমদের জন্য আরেকটি। বিভাজনের পর আমরা বাঙালিরা অনুধাবন করেছি, এই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা আমাদের জন্য নয়।
‘আমাদের প্রথম পরিচয় হচ্ছে, আমি বাঙালি, আমি বাংলায় কথা বলি, বাংলায় গান গাই। দ্বিতীয় পরিচয় হচ্ছে হিন্দু না মুসলিম, না বৌদ্ধ নাকি খ্রিষ্টান। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পাকিস্তানে সেই সংস্কৃতি এবং পরিচয় যখন হুমকির মুখে পড়ল, তখন জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ রচিত হয়।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা ভালো করে জানেন এবং বোঝেন, কারা এই দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। আর দুর্যোগ-দুর্বিপাকে প্রয়োজনের সময় কারা আপনাদের পাশে থাকে, সেই কথাটি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।’
ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ দাশ ব্রহ্মচারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন ও ইসকন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী।
আরও পড়ুন:পুলিশ জনগণের প্রথম ও শেষ ভরসার জায়গা বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমদ।
রাজশাহীর পুলিশ লাইনস মাঠে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, পুলিশবাহিনী যেন জনগণের শেষ ভরসার স্থল হয়। আমরা বলে আসছি, পুলিশ দেশের জনগণের প্রথম ও শেষ ভরসার স্থল হতে চায়।’
আইজিপি বলেন, “আমরা জনগণের প্রথম এবং শেষ ভরসার স্থল হতে চাইলে দেশের সব স্তরের পুলিশ বাহিনীকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের টার্গেট এ দেশের সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের সুখে-দুঃখে পুলিশকে পাশে থাকতে হবে। পুলিশের ‘ম্যান্ডেট’ এর বাইরে গিয়ে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। দিন-রাত পুলিশকে জনগণের সেবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।”
ইতিমধ্যে পুলিশ জনগণের সেবকের ভূমিকায় অবতীর্ণের উদাহরণ টেনে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘রাত ৩টার দিকে সাহায্য চেয়ে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বৃদ্ধা যখন ফোন করে বলে, আমার স্বামী কিছুক্ষণ আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে। এটি কিন্তু পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
‘কিন্তু আমার পুলিশ বাহিনী গভীর রাতে অ্যাম্বেুলেন্স জোগাড় করে বৃদ্ধার স্বামীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। করোনা মহামারির সময় অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে দিন-রাত করোনায় আক্রান্ত মানুষের পাশে ছিল এই মানবিক পুলিশ।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। সেই সময়ের জন্য পুলিশ বাহিনীকে প্রস্তুত করতে হবে। এজন্য বাহিনীর সব স্তরের সদস্যকে সেইভাবে কাজ করতে হবে।’
ড. বেনজীর বলেন, ‘দেশটাকে আরও সামনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের। প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞায় দেশ অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পদ্মা সেতু তৈরি করেছি। এরকম আরও দুটি পদ্মা সেতু তৈরির সক্ষমতা দেশের রয়েছে।’
আইজিপি বলেন, ‘যতই আমরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, ততই একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি, একা হয়ে যাচ্ছি। সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণে বর্তমানে নৈতিক অবক্ষয় বেশি হচ্ছে। ফলে ছাত্র শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করছে। আবার এক শিক্ষক আরেক শিক্ষককে শায়েস্তা করতে ছাত্রকে লেলিয়ে দিচ্ছে।
‘নৈতিক অবক্ষয় থেকে দেশ, সমাজ তথা দেশের নাগরিকদের রক্ষা করতে হবে। এজন্য শুধু পুলিশ বাহিনী নয়, সবাইকে হাতে হাত রেখে নৈতিক এই অবক্ষয় রোধ করতে হবে।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, পুলিশ অ্যাকাডেমির প্রিন্সিপাল (অ্যাডিশনাল আইজি) আবু হাসান মুহম্মদ তারিক, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন, আরএমপি কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দীকসহ আরএমপি ও রাজশাহী রেঞ্জ এবং বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শ্রী শ্রী যশোমাধবের রথযাত্রা ঢাকার ধামরাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ৯ জুলাই রথের উল্টো রশি টানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এর আনুষ্ঠানিকতা।
শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে ৩৫১তম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রথের কার্যক্রম শুরু হয়।
ধামরাইয়ে শ্রী শ্রী যশোমাধব মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) জীবন কানাই দাশের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. শাসসুল আলম।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার শ্রী বিক্রম কে দোরাইস্বামী, ঢাকা-২০ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমদ, ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সরদার, ধামরাই পৌরসভার মেয়র আলহাজ গোলাম কবির মোল্লাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
রথযাত্রা উপলক্ষে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে রথখলা এলাকায়। এ সময় হাজার হাজার নারী-পুরুষ চিনি-কলা ছিটিয়ে যশোমাধবের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
দর্শনার্থী লক্ষ্মী চক্রবর্তী বলেন, ‘দুই বছর পর রথ উৎসবে অনেক মানুষ এসেছে। লোকসমাগম দেখে খুব ভালো লাগছে। আট দিন পর রথ টান হবে, মাসব্যাপী মেলা হবে। আমি প্রতিদিনই আসব।’
যশোমাধব মন্দিরের সহকারী পুরোহিত উজ্জ্বল গাঙ্গুলী জানান, প্রধান অতিথি রথযাত্রার জন্য পুরোহিতের হাতে প্রতীকী রশি প্রদান করলে রশি টেনে শ্রী শ্রী যশোমাধবকে তার কথিত শ্বশুরালয় পৌর এলাকার যাত্রাবাড়ী মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। যাত্রাবাড়ীতেই রথটি প্রতি বছরের মতো ৯ দিন অবস্থান করবে। ৯ দিন পর উল্টো রথ টেনে আবার আগের জায়গায় আনা হবে।
বরিশাল: শুক্রবার বিকেলে নগরীর ব্রজমোহন কলেজ রোডের শ্রী শ্রী শংকর মঠের রাধা শ্যাম সুন্দর মন্দিরে রথযাত্রার উদ্বোধন করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
সেখান থেকে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) উদ্যোগে রথযাত্রা বের করা হয়। প্রতি বছরই একটি রথে করে বলদেব, সুভদ্রা ও জগন্নাথকে নিয়ে যাত্রা হলেও এবার তিনটি ভিন্ন রথে এই যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এবার প্রথম রথে বলদেব, পরে সুভদ্রা এবং শেষে জগন্নাথ দেবের রথ ছিল।
রথযাত্রাটি জেলখানার মোড় হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে অমৃতাঙ্গনে এসে শেষ হয়। এক সপ্তাহ পর এখান থেকেই উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
নীলফামারী: শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে নীলফামারী জেলা শহরের গাছবাড়ি থেকে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) উদ্যোগে রথযাত্রাটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কালিবাড়ী মন্দিরে এসে শেষ হয়।
গাছবাড়িতে রথযাত্রার উদ্বোধন করেন নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ।
এতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারী কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট অক্ষ্ময় কুমার রায়, নীলফামারী সদর উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান সান্ত্বনা চক্রবর্তী ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার রায় বক্তব্য দেন।
ইসকন জেলা সভাপতি ভবদেস রায় উদ্বোধনী আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন।
এ ছাড়া শহরের কালেক্টরেট চত্বরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শিব মন্দির প্রাঙ্গণে রথযাত্রার উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন। এতে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় শিব মন্দির কমিটির সভাপতি তিমির কুমার বর্মন। বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজাহারুল ইসলাম।
পরে ভক্তরা রথ নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিলন পল্লী মন্দিরে যান।
লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরেও শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উদযাপন করা হয়েছে। বিকালে এক বর্ণাঢ্য রথযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে সকালে রথযাত্রা উপলক্ষে শহরের ইসকন মন্দিরে বিশ্ব শান্তি কামনায় যজ্ঞসহ বিভিন্ন মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ, পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শংকর মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক স্বপন চন্দ্র নাথ।
এর আগে আলোচনা সভায় লক্ষ্মীপুর ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ সখাবেশ বলরাম গোপাল দাস ব্রহ্মাচারীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মাচারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মাচারী, ঢাকা রাধা রমন মন্দিরের অধ্যক্ষ শুভ নিতাই দাস ব্রহ্মাচারী, লক্ষ্মীপুর ইসকন মন্দিরের প্রধান উপদেষ্টা কেশব দাস, বাংলাদেশ ইসকনের প্রধান পুরোহিত মাধব মুরারী দাস ব্রহ্মাচারী।
রথযাত্রায় শাড়ি, ধুতি, পাঞ্জাবি, ফতুয়াসহ নানা রঙের পোশাকে সেজে অংশগ্রহণ করে নানা বয়সী পূণ্যার্থীরা।
বাগেরহাট: শুক্রবার দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের লাউপালায় গোপাল জিউর মন্দিরে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই রথযাত্রায় অংশ নেয় সনাতন হিন্দু ধর্মের হাজার-হাজার ভক্ত পূণ্যার্থী।
লাউপাল ছাড়াও বাগেরহাট শহরের রাধেশ্যাম মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, কচুয়ার শিবপুর ও রামপালের হুড়কায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
লাউপালায় রথযাত্রা উপলক্ষে মাসব্যাপী মেলায় পুতুল নাচ, সার্কাসসহ দেশীয় ঐতিহ্যবাহী চারু-কারু ও মৃৎশিল্পের বাহারি পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
পটুয়াখালী: শুক্রবার দুপুরে বৈদিক যজ্ঞানুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির (ইসকন)-এ সাত দিনব্যাপী রথযাত্রা উৎসবের সূচনা হয়েছে। এ সময় ভক্ত সমাগমে মন্দির চত্বর পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
যজ্ঞের আগুনে বিভিন্ন দ্রব্য আহুতি এবং বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে পুরোহিতরা দেশ ও জাতির শান্তি ও কল্যাণ কামনায় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন। বিকেলে মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথটি যাত্রা শুরু করে শহর প্রদক্ষিণ করে।
নাটোর: শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে নাটোর শহরের বড়গাছা পালপাড়া মন্দির কমিটির আয়োজনে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রথযাত্রা উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল।
বিকেলে শহরের রানি ভবানী রাজবাড়ির শ্যামসুন্দর মন্দির থেকে প্রাচীন রথের যাত্রা শুরু হয়। মন্দির কমিটির আয়োজনে দড়িতে টান দিয়ে রথযাত্রার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক জুবায়ের ও পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি। শত শত নারী-পুরুষ ভক্তবৃন্দ রথের দড়ি টেনে নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে লালবাজার এলাকায় জয় কালিবাড়ী মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
এ ছাড়া উপর বাজার শ্রী শ্রী মদন গোপাল মন্দির ও ইসকন মন্দিরের আয়োজনে আরও দুটি রথ বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে নিজ নিজ মন্দিরে ফিরে যায়। সাত দিন পর আবারও উল্টো রথে দেবতা ফিরে যাবেন রানি।
আরও পড়ুন:মাওয়া-শিবচর রুটে পদ্মা সেতু চালুর পর বদলে গেছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথের চিরচেনা রূপ। কিছুদিন আগেও ঘাট এলাকা ছিল লোকেলোকারণ্য। এখন সেখানে হাতেগোনা যাত্রী ও যানবাহন। এরই মধ্যে লোকসান গুনতে শুরু করেছেন হোটেল ব্যবসায়ী ও হকাররা।
রাজধানী থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম নৌপথ মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট। যাত্রী ও যানবাহন পারপারের জন্য পাটুরিয়ায় পাঁচটি ফেরিঘাট ও একটি লঞ্চঘাট রয়েছে। ঘাটকে কেন্দ্র করে হোটেলসহ বিভিন্ন ধরনের পাঁচ শতাধিক দোকান গড়ে ওঠে। আরও কয়েক শ ভ্যানে অস্থায়ী দোকান ছিল ঘাট এলাকায়।
সরেজমিন দেখা যায়, মাওয়া-শিবচর রুটে পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী ও যানবাহন কমে গেছে পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাটে। ঘাটে নেই চিরচেনা যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। ফাঁকা ট্রাক টার্মিনালও। লঞ্চে কিছু যাত্রী পার হলেও যাত্রী ও যানবাহনের জন্য অপেক্ষ করছে ফেরিগুলো। হোটেলগুলোতে নেই ক্রেতা। বেকার বসে আছেন হকাররা।
বাসচালক রনি মিয়া বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হইতে না হইতেই ঢাকা-আরিচা সড়কে অনেক যাত্রী কমে গেছে। আগের তুলনায় ২০ ভাগ গাড়ি রাস্তায় চলতেছে। বাকি গাড়ি বসে রইছে। যাত্রীও একেবারে কম। গাড়ি আর নিজের খরচ কামাইতেই কষ্ট হইতেছে। মাঝেমধ্যে খাওন খরচ নিয়েই চিন্তায় পড়ে যাই।’
হকার রিয়াজুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর আগে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা ঘাটে দেড় শর মতো হকার ছিল, এখন ১০-১৫ জন আছি। বাকিরা অন্য কাজে গেছে। আগে দৈনিক দেড় থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি করতাম। বর্তমানে এক দিনে ৪০০-৫০০ টাকা বিক্রি করা যায়। এতে করে মহাজনরে দিমু কী। মাকে-ছায়ালকে ভাত দিমু কেমনে।’
হোটেল মালিক গোবিন্দ কুমার সরকার বলেন, ‘সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিন ৫-৬ হাজার টাকার বিক্রি করতাম। এখন ৫০০-৬০০ টাকার বিক্রি করি। অনেক দিন তাও বিক্রি করতে পারি না। বেচাকেনা না হলে পাঁচ-সাতজন কর্মচারীকে কেমনে বেতন দিমু। ঘাটে মানুষ না আসায় অবসর কাটাইতে হইতেছে আমাগো। এখন সরকার যদি সাহায্য না করে, তাহলে আমাগো বিপদ হইয়া যাইব।’
পাটুরিয়া লঞ্চ মালিক সমিতির সুপারভাইজার পান্না লাল নন্দি বলেন, ‘পদ্মার সেতু চালুর আগে প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার যাত্রী পার হতো এবং আয় হতো দেড় থেকে পৌনে ২ লাখ টাকা। এখন আয় দাঁড়াইছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। লঞ্চে ৭০ ভাগ যাত্রী কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের লঞ্চ চালাতে কষ্ট হবে, লঞ্চের ব্যবসা বাদ দিতে হবে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিন সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার যানবাহন পারপার করা হতো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার যানবাহন পারাপার হচ্ছে। অনেকে শখ করেও সেতু দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আশা করছি, ঈদের আগে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়বে। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে হয়তো আগের মতো যানবাহন পারাপার হবে।’
এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুর রহমান জানান, পাটুরিয়া ঘাটের হকারদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের কাজ দেয়া হবে।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের মধুপুরে পুকুরে মাছ ধরতে নেমে দুই শিশু ডুবে মারা গেছে।
উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ লাউফুলা গ্রামে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলো দক্ষিণ লাউফুলা গ্রামের মোস্তফা আলীর ছেলে ৯ বছরের মো. তানভীর এবং প্রবাসী হাফিজুর রহমানের ছেলে ১২ বছরের জিহাদ ইসলাম।
প্রতিবেশী মোশাররফ হোসেন ও সাইদুর রহমান জানান, পরিবারের কাউকে না জানিয়ে বাড়ির পাশের একটি পুকুরে মাছ ধরতে যায় তানভীর, জিহাদসহ লিমন নামে আরও এক শিশু। একপর্যায়ে তানভীর ও জিহাদ পুকুরে ডুবে যায়।
এ সময় লিমন বাড়িতে গিয়ে জানালে লোকজন এসে শিশু দুটিকে উদ্ধার করে মধুপুর হাসপাতালে নেয়। সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ময়নাতদন্ত ছাড়াই দুই শিশুর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য