করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে বড় ধরনের সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে। যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সব হিসাবনিকাশ পাল্টে গেছে; ব্যাহত হচ্ছে কোভিড-১৯ পুনরুদ্ধার কার্যক্রম।
দেশের আমদানি খরচ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ডিসেম্বরের পর জানুয়ারি মাসেও আমদানি খাতে ব্যয় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার বেশি হয়েছে। চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে; দরও বাড়ছে। কমছে টাকার মান। চড়ছে মূল্যস্ফীতি। টান পড়ছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে। সব মিলিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
এই সংকট মোকাবিলায় আমদানির লাগাম টানার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতির দুই গবেষক এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ও আহসান এইচ মনসুর। একইসঙ্গে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে সরকার ও দেশবাসীকে অনুরোধ করেছেন তারা। সবাইকে সাশ্রয়ী হতে বলেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৫ হাজার ৪৪ দশমিক ৯৩ কোটি (৫০.৪৫ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি।
এই সাত মাসে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে আরও বেশি, ৫২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৮ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এ খাতে ৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
লাগামহীন এই আমদানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। করোনার ধাক্কা সামলে ছোট-বড় সব দেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল, তখনই যুদ্ধ সব তছনছ করে দিয়েছে। জ্বালানি তেল, গ্যাস, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। কবে এ সবের দাম কমবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সব দেশের আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশেও বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সাত মাসে ৫০ শতাংশ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি সত্যিই উদ্বেগজনক। এভাবে চলতে থাকলে এবার অর্থবছর শেষে মোট আমদানি ব্যয় ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। যে করেই হোক এটা কমাতে হবে এবং দ্রুত কমাতে হবে। সরকারকে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানি যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের ব্যবহার যাতে কম হয়, সেদিকে বেশি নজর দিতে হবে।’
‘দাম বাড়ায় সরকারের জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কয়েকগুণ বেড়েছে গেছে। একইসঙ্গে গ্যাসে ভর্তুকি বেড়েছে, সারে বেড়েছে। বিদুৎতে বেড়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এবার ভর্তুকি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বাজেট ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের চাপ পড়বে।’
এক্ষেত্রে এখন করণীয় কী- এ প্রশ্নের উত্তরে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা আহসান মনসুর বলেন, ‘সরকারকে সাশ্রয়ী হতে হবে। একইসঙ্গে দেশের মানুষকেও সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কম খরচ করতে হবে। আমাদের অনেক কিছুই কিন্তু জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরশীল। গ্যাস, বিদ্যুৎ, সার, পানি-এ সব কিছু উৎপাদনে তেলের প্রয়োজন হয়। এই সংকটের সময়ে এ সব কিছু যদি মানুষ কম ব্যবহার করে।
‘পরিবহন খাতে যদি জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমানো যায়, তাহলে আমদানি খাতে খরচ কমবে। সরকারের ভর্তুকি কমবে। অন্যদিকে বিলাসবহুল পণ্য যাতে কম আমদানি হয়, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। একেবারে প্রয়োজন নেই এমন পণ্য আমদানি থেকে এখন বিরত থাকতে হবে।’
এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে স্বল্পমেয়াদি একটি দিকনির্দেনা দেয়া উচিৎ বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কোমরের বেলটা আরও টাইট করতে হবে। যে করেই হোক আমদানি কমাতেই হবে। এছাড়া এখন আর অন্য কোনো পথ খোলা নেই। তাই আমদানি কমিয়েই বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল তেলের দাম; একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেলের দর ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। সপ্তাহখানেক তা ১০৮ থেকে ১২০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে। যুদ্ধের অবসান ঘটাতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে নতুন করে আলোচনায় বসার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার খবরে তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি প্রশমিত হয়। ১০০ ডলারের নিচে নেমে আসে।
কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে তা ফের ফের ছুটছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেল ১২১ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে ভাবা হয়েছিল, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সম্মানজনক সমাধান হবে। যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে খুব একটা পড়বে না। কিন্তু এক মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলো, যুদ্ধ তো থামছেই না। দিন যতো যাচ্ছে, সংকট ততো বাড়ছে। জ্বালানি তেল, খাদ্যসহ সবকিছুর দাম বাড়ছে।’
পরিবহন খাতে যদি জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমানো যায়, তাহলে আমদানি খাতে খরচ কমবে। সরকারের ভর্তুকি কমবে। ফাইল ছবি
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানি খাতে খরচ যেটা বাড়ছে, যেটা কিন্তু পণ্যর দাম বাড়ার কারণেই বাড়ছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের দাম বাড়তে থাকে। একইসঙ্গে জাহাজ ভাড়া দুই গুণ-আড়াই গুণ বেড়ে যায়। তার প্রভাব পড়ে জিনিসপত্রের দামে। ছোট-বড় সব দেশেই মূল্যস্ফীতির পারদ চড়তে থাকে।
‘যুদ্ধের কারণে আরেক দফা বাড়ে সকল পণ্যের দাম। এখনও বেড়ে চলেছে। একটা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি গোটা বিশ্ব। কবে স্বাভাবিক হবে কেউ জানে না। এ অবস্থায় সতর্কতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করতে হবে।’
আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘একটা দিক দিয়ে আমরা স্বস্তির মধ্যে আছি। সাম্প্রতিক মৌসুমগুলোতে আমাদের ধানের ভালো ফলন হয়েছে। দেশে প্রচুর ধান-চাল মজুদ আছে। সরকারের গুদামগুলোতেও মজুদ পরিস্থিতিও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কিছুটা কমলেও আমাদের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখনও সন্তোষজনক অবস্থায় আছে; তবে এর থেকে আর যেনো না কমে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’
‘আমরা যদি সাশ্রয়ী হয়ে আমদানির লাগামটা টানতে পারি। সরকার যদি কৃচ্ছসাধন করে, দেশবাসী যদি সঙ্কটের বিষয়টি অনুধাবন করে সব অপ্রয়োজনীয় খরচ না করে, তাহলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হবে।’
চাপে রিজার্ভ
গত ৬ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড আমদানি বিল পরিশোধের পর বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। যা ছিল গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
প্রথমবারের মতো আকুর ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আকুর ২ বিলিয়নন ডলারের বেশি আমদানি বিল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে কখনই আকুর এতো বিশাল অঙ্কের বিল শোধ করা হয়নি।
এর আগে নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদে ১৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। যা ছিল গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।
রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় গত কয়েক দিনে রিজার্ভ বেড়ে রোববার ৪৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।
বর্তমানে মাসে ৮ বিলিয়ন ডলারের আমদানির খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। অথচ ছয় মাস আগেও এই রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা দিয়ে ১০ মাসের আমদানি খরচ মেটানো যেতো।
আরও পড়ুন:জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ ৯ হাজার ৩৬১ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১১ টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
অনুমোদিত প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন ৬ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা, প্রকল্প ঋণ ২ হাজার ৪২৮ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২৫৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে নতুন প্রকল্প ৫টি, সংশোধিত প্রকল্প ২টি এবং ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধির ৩টি প্রকল্প রয়েছে।
একনেক চেয়ারপার্সন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গতকাল রোববার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র এবং কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
আজকের সভায় অনুমোদিত ১১ প্রকল্পসমূহ হলো: কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন’ প্রকল্প, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘বাপবিবোর বিদ্যমান শিল্পসমৃদ্ধ এলাকার ৩৩/১১ কেভি আউটডোর উপকেন্দ্রের আধুনিকায়ন ও ক্ষমতা বর্ধন’ প্রকল্প, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘বিএমআর অব কেরু অ্যান্ড কোং (বিডি) লি. (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ স্থাপন’ প্রকল্প, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘৫টি নির্ধারিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী এবং ফরিদপুর) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকাস্থ আজিমপুর সরকারি কলোনির ভেতরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (জোন-সি)’ প্রকল্প, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ২টি বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টাল সাসটেনেবল ওয়াটার সাপ্লাই (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প ও ‘বান্দরবান পৌরসভা এবং বান্দরবান জেলার ৩টি উপজেলা সদরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ‘চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্প, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প।
সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক ইতোমধ্যে অনুমোদিত ৯টি প্রকল্প সর্ম্পকে একনেক সদস্যদের অবহিত করা হয়। সেগুলো হলো ১. হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন (২য় সংশোধিত), ২. রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগে নেসকোর আওতাধীন এলাকায় স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্বাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ৩. বরগুনা জেলার ২টি পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ৪. তিন পার্বত্য জেলায় দুর্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, ৫. লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী পুণ্যস্নান উৎসবের অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় সংশোধিত), ৬. তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি (২য় সংশোধিত), ৭. সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, ৮. কপোতাক্ষ নদ ও তৎসংলগ্ন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ (২য় পর্যায়) (১ম সংশোধিত), ৯. বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য দক্ষতা কেন্দ্রিক সাক্ষরতা (২য় সংশোধিত) প্রকল্প।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের আয়কর নির্দেশিকায় সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ৪২টি ভাতা বা আয়ের উৎস করমুক্ত ঘোষণা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে মূল বেতন, উৎসব ভাতা ও বোনাস করযোগ্য আয়ের আওতায় থাকবে।
এনবিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক হলেও, নির্দিষ্ট কিছু আয়ের ওপর তাদের কর দিতে হবে না। এসব করমুক্ত আয় মূলত কর্ম-সম্পর্কিত বিভিন্ন ভাতা ও ভ্রমণ সুবিধা।
করমুক্ত ঘোষিত ৪২টি আয়ের ধরন হলো- চিকিৎসা ভাতা, নববর্ষ ভাতা, বাড়িভাড়া ভাতা, শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা, শিক্ষাসহায়ক ভাতা, কার্যভার ভাতা, পাহাড়ি ভাতা, ভ্রমণ ভাতা, যাতায়াত ভাতা, টিফিন ভাতা, পোশাক ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা, ধোলাই ভাতা, বিশেষ ভাতা, প্রেষণ ভাতা, প্রশিক্ষণ প্রেষণ ভাতা, জুডিশিয়াল ভাতা, চৌকি ভাতা, ডোমেস্টিক এইড অ্যালাউয়েন্স, ঝুঁকি ভাতা, অ্যাকটিং অ্যালাউয়েন্স, মোটরসাইকেল ভাতা, আর্মরার অ্যালাউয়েন্স, নিঃশর্ত যাতায়াত ভাতা, টেলিকম অ্যালাউয়েন্স, ক্লিনার ও ড্রাইভার অ্যালাউয়েন্স, মাউন্টেড পুলিশ, পিবিএক্স, সশস্ত্র শাখা, বিউগলার ও নার্সিং ভাতা, দৈনিক/খোরাকি ভাতা, ট্রাফিক অ্যালাউয়েন্স, রেশন মানি, সীমান্ত ভাতা, ব্যাটম্যান ভাতা, ইন্সট্রাকশনাল অ্যালাউয়েন্স, নিযুক্তি ও আউটফিট ভাতা এবং গার্ড পুলিশ ভাতা।
করযোগ্য আয়, মূল বেতন, উৎসব ভাতা, বোনাস এসব আয়ের ওপর আয়কর আইন অনুযায়ী নির্ধারিত হারে কর দিতে হবে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে ৬৩.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানি হবে বাংলাদেশ থেকে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে এ ঘোষণা দেয়া হয়। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এ ঘোষণা দেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লিখিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সমাপ্ত অর্থবছর ২০২৪-২৫ এ বাংলাদেশ পণ্য খাতে ৫০.০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৮.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৭% এবং পূর্ববর্তী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৮.৫৮% বেশী।
সেবা খাতের লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫০ বিলিয়নের বিপরীতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৫.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.১৩% বেশী।
অর্থবছরে রপ্তানি খাতে অর্জিত প্রবৃদ্ধির গতিধারা, পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণ, বিশ্ব বাণিজ্যের সাম্প্রতিক গতিধারা, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব, দেশীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মধ্যপ্রাচ্য সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, অংশীজনদের মতামত, বিগত অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা এবং লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জনের হার ও পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার ইত্যাদি পর্যালোচনাপূর্বক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর পরিদর্শনে গিয়ে বস্ত্র ও নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘সরকার বিভিন্ন স্থলবন্দর প্রাইভেট সেক্টরের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা করছে। একই সঙ্গে, যেসব স্থলবন্দর থেকে সরকার কোনো রাজস্ব আহরণ করতে পারছে না, সেগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
শনিবার দুপুরে হিলি স্থলবন্দর পরিদর্শনের সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ২৪টি স্থলবন্দর রয়েছে, যার মধ্যে ইতোমধ্যে চারটি স্থলবন্দর বন্ধ করা হয়েছে। আরো চারটি অলাভজনক স্থলবন্দর বন্ধের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘উন্নয়নশীল স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনাও প্রণয়ন করা হচ্ছে এবং ধাপে ধাপে এসব বন্দরের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
হিলি স্থলবন্দর সভাকক্ষে কাস্টমস, বন্দরের কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্যবসায়ীরা রাস্তা-ঘাট সংস্কার, ওয়্যারহাউজ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে দ্রুত সেসব সমাধানের অনুরোধ করেন।
উপদেষ্টা হিলি স্থলবন্দর ও কাস্টমস বিভাগের বিভিন্ন অবকাঠামো ঘুরে দেখেন এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।
এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, রংপুর কাস্টমসের বিভাগীয় কমিশনার অরুন কুমার বিশ্বাস, হিলি কাস্টমসের সহকারী কমিশনার এ এস এম আকরামসহ আরো অনেকেই।
স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যাদি (ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডাল) বিক্রয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীতে ৬০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে আজ (১০ আগস্ট) হতে পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
শনিবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে টিসিবি।
টিসিবির উপপরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০ আগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিন (শুক্রবার ছাড়া) এবং চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৫টি, গাজীপুর মহানগরীতে ছয়টি, কুমিল্লা মহানগরীতে তিনটি এবং ঢাকা জেলায় আটটি, কুমিল্লা জেলায় ১২টি, ফরিদপুর জেলায় চারটি, পটুয়াখালী জেলায় পাঁচটি ও বাগেরহাট জেলায় পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ১০ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১৯ দিন (শুক্রবার ছাড়া) টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে। দৈনিক ট্রাক প্রতি ৫০০ জন সাধারণ মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্যাদি (ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডাল) বিক্রয় কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। যে কোনো ভোক্তা ট্রাক থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।
ভোক্তা প্রতি ভোজ্যতেল দুই লিটার ২৩০ টাকা, চিনি এক কেজি ৮০ টাকা এবং মসর ডাল দুই কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হবে। স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারীর কাছে বিক্রয় মূল্য আগের ন্যায় বহাল থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিকৃত বাংলাদেশি পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর থেকে কার্যকর হয়েছে। ফলে এই সময়ের আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে তোলা পণ্য নতুন শুল্ক এড়াতে সক্ষম হয়েছে। এ সুবিধা কাজে লাগাতে আগাম পণ্য পাঠিয়ে রফতানিকারকরা জোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, এই রফতানিতে জোয়ারের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, রফতানিকারকদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ায় প্রতিদিন অতিরিক্ত ৮০০ কনটেইনার রফতানি হচ্ছে। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দরের ১৯টি ডিপোতে জমা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০টি ২০ ফুট এককের রফতানি কনটেইনার। যার বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রমুখী।
এ বিষয়ে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ৭ আগস্ট সময়সীমার মধ্যে পণ্য পাঠাতে অনেকেই চেষ্টা করেছেন। তবে যারা আগাম উৎপাদন সম্পন্ন করেছিলেন, তারা ১ আগস্টের আগেই রফতানি নিশ্চিত করেছেন। ফলে জুলাই মাসে রফতানিতে ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
চট্টগ্রামের এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম জানান, জুলাই মাসে বাংলাদেশ থেকে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে, যার মধ্যে ৮২ কোটি ডলারের পোশাক গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এর ৬০ শতাংশ রফতানি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন। পরবর্তীতে ৩১ জুলাই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের তৃতীয় দফা আলোচনার পর চুক্তির ভিত্তিতে পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামানো হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রে আগে থেকেই গড়ে ১৫ শতাংশের বেশি শুল্ক কার্যকর ছিল, ফলে মোট শুল্ক দাঁড়াচ্ছে ৩৫ শতাংশের বেশি। তৈরি পোশাকে আগে শুল্ক ছিল প্রায় ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, শুল্ক কার্যকরের ক্ষেত্রে বন্দর থেকে পণ্য ছাড়কাল থেকেই সময় গণনা করা হয়। এপ্রিলেও একই পদ্ধতিতে ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক কার্যকর হয়।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামাল ব্যবহারে পাল্টা শুল্ক ছাড় থাকায় বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। কারণ পোশাক খাত তুলানির্ভর এবং বাংলাদেশের আমদানিকৃত তুলার বড় অংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এড়াতে রফতানিকারকরা আগেভাগেই কনটেইনার পাঠিয়েছেন ডিপোতে। এর প্রভাবে আগস্টেও ডিপো থেকে আমেরিকামুখী রফতানি বেশি হবে।
তিনি জানান, প্রতি মাসে গড়ে ৬০-৬৫ হাজার কনটেইনার রফতানি হলেও জুলাই মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজারে; যার মধ্যে ৮১ হাজার কনটেইনার ইতোমধ্যে রফতানি হয়েছে।
গত বছরের রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তনের পর অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহে বড় ধরনের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে এই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বাংলাদেশে নিট এফডিআই প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ৮৬৪.৬৩ মিলিয়ন ডলার। যা ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ১১৪.৩১ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে বিনিয়োগ ছিল ৪০৩.৪৪ মিলিয়ন ডলার।
এই বিনিয়োগ প্রবাহ ২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায়ও ৭৬.৩১ শতাংশ বেশি। তখন নিট এফডিআই ছিল ৪৯০.৪০ মিলিয়ন ডলার।
ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট বা মূলধনী বিনিয়োগেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে এটি দাঁড়ায় ৩০৪.৩৮ মিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৮৮.৪৩ মিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনার প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের ‘আস্থার প্রতীক’। যদিও দেশ এখনো মুদ্রা অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক ঋণের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
বর্তমান বিনিয়োগ পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বাসসকে বলেন, সরকারি ও বেসরকারি খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ এখনো প্রত্যাশার তুলনায় কম। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো, এই সমস্যা দ্রুত সমাধান খুবই কঠিন।
বাসসর সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, উচ্চ-প্রভাবসম্পন্ন বিনিয়োগ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন, ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের সমস্যার সমাধান এবং বড় বিনিয়োগের একটি শক্তিশালী পাইপলাইন তৈরি করা এই চারটি প্রধান অগ্রাধিকারের ওপর জোর দিচ্ছে বিডা ও বেজা।
বিডা প্রধান সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট -২০২৫’ এর সাফল্য তুলে ধরে বলেন, ৭ থেকে ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ৫০টি দেশের ৪১৫ জন বিদেশি প্রতিনিধি অংশ নেন এবং এতে প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা পান এবং বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত এবং লাভজনক হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, বেজা নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, যাতে বিনিয়োগ প্রক্রিয়াগুলোর বাস্তব অগ্রগতি নিশ্চিত করা যায়।
ভারসাম্যপূর্ণ শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) একটি ‘জাতীয় মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়ন করছে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশজুড়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো তিন ধাপে বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে।
জাতীয় মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবে ২০৪৬ সালের মধ্যে ২০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে । যা সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে কৌশলগতভাবে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রস্তুত হওয়া এই মাস্টার প্ল্যানটি ভূমি অধিগ্রহণ, অবকাঠামো প্রস্তুতি এবং বিনিয়োগকারীর আস্থার মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রথম পর্যায়ে, অর্থবছর ২৫ থেকে অর্থবছর ৩০ পর্যন্ত যেগুলোর উন্নয়ন কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বা পরিকল্পনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এমন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এদিকে, দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) তাদের নতুনভাবে ডিজাইন করা ওয়েবসাইট চালু করেছে। যা বিনিয়োগ অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
নতুন এই প্ল্যাটফর্মে বিডার এফডিআই হিটম্যাপ অনুযায়ী সম্ভাবনাময় খাতগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, নীতিমালা, এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ফোকাল পয়েন্ট সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্য এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিডার লোগোও নতুনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
বিডা তাদের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) পোর্টালেরও হালনাগাদ সংস্করণ চালু করেছে, যার উদ্দেশ্য হলো দেশি ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীদের জন্য সেবার গুণগতমান বৃদ্ধি।
এই ওএসএস পোর্টালটি ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চালু করা হয় এবং বর্তমানে ৩৫টি সরকারি সংস্থা, ১২টি ব্যাংক ও ৫টি চেম্বার সংস্থার ১৩৩টি সেবা একত্রে প্রদান করে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. মনজুর হোসেন বলেন, ‘আগামী মাসগুলোতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ বজায় থাকলে বিনিয়োগ প্রবাহ আরও বাড়বে।’
এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণের পথে বাধাগুলি মোকাবেলা করতে বিডা এবং বেজা কয়েক মাস ধরে আরও বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য কিছু সফল ইভেন্টের আয়োজন করেছে। এছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর ব্যবস্থা আরও সহজ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।
বেপজার নির্বাহী পরিচালক আবু সাইয়েদ মো. আনোয়ার পারভেজ বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেপজার ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিচালিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো মেশিনারি, নির্মাণ সামগ্রী এবং অন্যান্য মূলধনী খাতে (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ছাড়া) ২৯২.৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
আনোয়ার পারভেজ বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৩টি নতুন বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা বেপজার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
তিনি বলেন, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশ থেকে আগত বিনিয়োগকারীরা শিল্প কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে এসব চুক্তিতে সই করেছেন।
পারভেজ বলেন, ‘এই চুক্তির আওতায় মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৯৭.৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সম্ভাব্য ৫৯ হাজার ৪০৮ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করবে, যার মধ্যে রয়েছে: তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, কৃষিভিত্তিক পণ্য, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, প্যাকেজিং সামগ্রী, তাঁবু, কৃত্রিম চুল, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, খেলনা এবং কম্পোজিট আইটেম।
তিনি আরও বলেন, এই বিনিয়োগগুলো চালু হলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রকৃত বিনিয়োগ প্রবাহ আরও গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মন্তব্য