ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনে শহরে সাবিত্রী বাই ফুলে পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে রোববার বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছে বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা।
স্বাধীনতা দিবসে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে বিকেল পাঁচটায় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের পরিচালক বিজয় খারে, আইসিসিআর, পুনের পরিচালক নিশি বালা ও সাবেক পরিচালক অনুজা চক্রবর্তী।
পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বৃত্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা প্রথম বারের মত এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিসিআর) বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছর বৃত্তি দিয়ে থাকে। পুনেতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যারা আইসিসিআর বৃত্তি নিয়ে এসেছে তাদের একটি সংগঠন রয়েছে, যেটি বাংলাদেশ স্টুডেন্ট কাউন্সিল পুনে নামে পরিচিত। এই সংগঠন থেকেই ২৬ মার্চ পালনের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে একটি প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ২৬ মার্চের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা তুলে ধরে তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের পরিচালক বিজয় খারে। তিনি বলেন, ‘তিনি যেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, সেইভাবেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত বন্ধু ও ভাইয়ের মতো। বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জিডিপি ভারত থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। তোমাদের সরকার তোমাদের শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য অনেক ব্যয় করে। তোমরা দেশের সম্পদ। তোমরা দেশে গিয়ে দেশ উন্নত করবা।’
দুই দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন সুসম্পর্ক থাকে সে বিষয়েও গুরুত্ব দেন বিজয় খারে। বলেন, ‘আমরা এখানে যেমন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সব সমস্যা ও ভালো জিনিসগুলো দেখাশোনা করি, তেমনি বাংলাদেশেও যেন একই রকমভাবে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলো দেখা হয় সেই আশা করি।’
বিজয় খারে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত বন্ধু ও ভাইয়ের মত। বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জিডিপি ভারত থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের কথা ভাবলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা প্রথমে মাথায় আসে।’
তিনি বলেন, ‘তোমরা দেশের সম্পদ, তোমরা দেশে গিয়ে দেশ উন্নত করবা। তোমাদের সরকার তোমাদের শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য অনেক ব্যয় করে।’
আইসিসিআর পুনে এর বর্তমান পরিচালক নিশি বালা এমন আয়োজনের জন্য বাংলাদশি শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান।
সাবেক পরিচালক অনুজা চক্রবর্তী নিজে বাঙালি জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে তার আশা বেশি। ছাত্ররা যেন দেশে গিয়ে দেশকে সেবা করে ও দেশের মর্যাদা রক্ষা করে- এই আশা করেন তিনি।
আলোচনা শেষে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা দেশের সংস্কৃতি ও যুদ্ধের ইতিহাস বিভিন্ন গান ও নাচের মাধ্যমে তুলে ধরে।
পুনেতে আইসিসিআর এর স্কলারশিপে প্রায় ৫৫ শিক্ষার্থী পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজে অধ্যায়ণরত।
স্বাধীনতা দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
শিক্ষার্থীরা সবাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হৈমন্তী দত্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আগেও দেশের বাইরে পারফর্ম করেছি। তবে এবার আমার কাছে এটি ভিন্ন ছিল। স্বাধীনতা দিবসে নিজের দেশকে অন্য ভূমিতে তুলে ধরার মধ্যে দিয়ে অনেক বেশি গর্ব কাজ করছে।’
সংগঠনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী অনুপম দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি খুব বেশি আনন্দিত এমন একটি আয়োজনে অংশ নিয়ে। গত কয়েকদিন অনেক বেশি পরিশ্রম করেছি আমরা।’
দেশের বাইরে থাকলেও দেশের প্রতি ভালোবাসা আছে জানিয়ে অনুপম বলেন, ‘এখানে যারা আছেন সবাই দেশকে ভালোবাসে। খুব অল্পদিনের সিদ্ধান্তে আমরা এমন একটি আয়োজন করতে পেরে আনন্দিত। আশা করব, ভবিষ্যতে এমন ধারা অব্যাহত থাকবে।’
প্রতিনিধিত্বকারী আপন গুহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখানে যারা বাংলাদেশি আছি তারা সবাই দেশের সবকিছুকে অনেক বেশি মিস করি। বিশেষ করে জাতীয় দিবসগুলোতে দেশের হয়ে অন্য জায়গায় এভাবে তুলে ধরার মধ্যে অনেক বেশি আনন্দ কাজ করছে।’
*প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আইচুক ত্রিপুরা ও জুয়েল পাংখোয়া
আরও পড়ুন:আনন্দের সঙ্গে বার্ষিক গ্লোবাল ডে অফ ডিসকভারি উদযাপন করেছে রেনেসাঁ ঢাকা গুলশান হোটেল।
বিশেষ দিনটি বিশ্বব্যাপী রেনেসাঁ হোটেলগুলোর জন্য উৎসর্গ করা হয়।
ইভেন্ট উপলক্ষে হোটেলের লবিটি সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছিল। অনুষ্ঠানে এআইইউবির শিল্পীদের প্রদর্শনী স্থান পেয়েছিল।
শুক্রবার সন্ধ্যার সূচনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটি থেকে আসা শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর লাইভ মিউজিক পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে। অতিথিদের মুগ্ধ করে ফোক, রবীন্দ্র ও নজরুল সংগীত, যা বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় সংগীত ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।
অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় সুস্বাদু পানীয় দিয়ে, যাতে তারা বাংলাদেশের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন।
শিল্প প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে পিতল ও জামদানি প্রদর্শন করা হয়।
রেনেসাঁ ঢাকা গুলশান হোটেলের ম্যানেজার আল আমিন বলেন, ‘এ রকম উৎসাহ ও সৃজনশীলতার সঙ্গে গ্লোবাল ডে অফ ডিসকভারি ২০২৩ উদযাপন করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
‘ইভেন্টটি প্রতিভাবান স্থানীয় শিল্পীদের তাদের অসাধারণ শিল্পকর্ম প্রদর্শনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে এবং আমাদের সম্মানিত অতিথিদের জন্য একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা দিয়েছে।’
হোটেলের সহকারী বিপণন ব্যবস্থাপক ফারাহ আহমেদ বলেন, ‘রেনেসাঁ হিসেবে আমরা শিল্পকে লালন করতে এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রচারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
দ্য গ্লোবাল ডে অফ ডিসকভারি হলো বিশ্বব্যাপী রেনেসাঁ হোটেলগুলো আয়োজিত বার্ষিক অনুষ্ঠান, যা অতিথিদের প্রতিটি দেশের সংস্কৃতি, শিল্প ও সংগীতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির মা রহিমা ওয়াদুদের কুলখানি হবে শুক্রবার।
রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র মাঠে ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে এ অনুষ্ঠান হবে।
চাঁদপুরের প্রথম মুসলমান উকিল মরহুম আবদুল হাকিমের মেয়ে রহিমা ওয়াদুদ। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ট সহচর, ছাত্রলীগের প্রথম কাউন্সিলে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মরহুম এম এ ওয়াদুদের সহধর্মিণী।
ঢাকার কলাবাগানে নিজ বাসায় গত ৬ মে মৃত্যু হয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রহিমা ওয়াদুদের। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। ৭ মে বনানী কবরস্থানে স্বামীর কবরে সমাহিত করা হয় তাকে।
রহিমা ওয়াদুদ এক ছেলে, পুত্রবধূ, এক মেয়ে, জামাতা, পাঁচ নাতি-নাতনি, তাদের স্ত্রী-স্বামী ও এক প্রপৌত্র, এক বোন, আত্মীয়স্বজন, অসংখ্য শিক্ষার্থী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়াতে ঢাকায় একটি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের কবি, সাহিত্যিক, প্রকাশক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা।
তারা বলেছেন, এমন একটি কেন্দ্র বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার পাশাপাশি মানুষে মানুষে বোঝাপড়া ও যোগাযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে।
ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত ‘সিএমজির নতুন অগ্রযাত্রা: চীন বিষয়ক বই প্রকাশ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ পরামর্শ দেন তারা।
চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। চীনের চারটি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনাল, চায়না ন্যাশনাল রেডিও, চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন এবং চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে সিএমজি।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকায় চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সিলর ইয়ুয়ে লি ওয়েন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
বেইজিং থেকে সরাসরি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন সিএমজি বাংলা বিভাগের পরিচালক ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দি। এটি সঞ্চালনা করেন সিএমজি বাংলার বার্তা সম্পাদক শান্তা মারিয়া।
চীনবিষয়ক বইয়ের লেখক ও প্রকাশকদের নিয়ে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন কবি আলমগীর রেজা চৌধুরী ও মনসুর আজিজ, ভ্রমণগদ্য লেখক শাকুর মজিদ, অনুবাদক মসিউল আলম, সাহিত্যিক সিরাজুল ইসলাম মুনির, সেলিম সোলায়মান ও ইমরুল কায়েস এবং প্রকাশক জাকির হোসাইন, মেসবাহউদ্দীন আহমেদ, হাসান তারেকসহ অনেকে। বেইজিং থেকে যুক্ত হন সিএমজি বাংলার সাংবাদিক আলিমুল হক।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চীনা দূতাবাসের কালচারাল অ্যাফেয়ার্স অ্যাটাশে সুন কাংনিং, বাংলাদেশের লেখক ও প্রকাশক রহীম শাহ, দীলতাজ রহমান, ইমরান মাহফুজ, জহিরুল ইসলাম, সিএমজি বাংলার সংবাদকর্মী এবং অন্যান্য দর্শক-শ্রোতা।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়াতে একটি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হওয়া প্রয়োজন।
বাংলা ভাষায় চীনা সাহিত্যকর্ম এবং চীনা ভাষায় বাংলা সাহিত্যকর্মের অনুবাদ বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি জানান, বাংলা একাডেমি একটি প্রকল্পের আওতায় চীনা ও অন্যান্য ভাষার সাহিত্যের অনুবাদ নিয়ে কাজ করছে। এ প্রসঙ্গে চীনা দূতাবাসের সঙ্গে সহযোগিতামূলক আলোচনা চলছে বলে জানান মহাপরিচালক।
চীনবিষয়ক মৌলিক গ্রন্থ রচনার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন কবি নূরুল হুদা।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ চীনের সেরা সাহিত্যকর্মগুলো বাংলা ভাষায় অনুবাদের জন্য চীন সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, একটি দেশের পরিচিতি তুলে ধরার উৎকৃষ্ট উপায় হলো সেই দেশের সেরা সাহিত্যকর্ম ও গুণীজনদের পরিচয় তুলা ধরা। বাংলাভাষীদের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা রাশিয়া সম্পর্কে যে সুন্দর ধারণা ও অনুভূতি তৈরি হয়েছে তার অন্যতম কারণ ভাষান্তরের মাধ্যমে তাদের সাহিত্যকর্মকে ছড়িয়ে দেওয়া।
চীনের চিরায়ত সাহিত্যকর্মগুলো বিভিন্ন ভাষার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার আর্থিক সক্ষমতা দেশটির আছে বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক আবু সায়ীদ।
চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সিলর ইউয়ে লি ওয়েন বলেন, চীন ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কাজ এগিয়ে নিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতামূলক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে।
তিনি দুই দেশের শিল্প-সাহিত্য নিয়ে নিয়মিত আলোচনা অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এ ক্ষেত্রে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দেন।
বক্তারা বলেন, চীনের অন্তত ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা পড়ানো হচ্ছে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, জসীমউদ্দীন ও শামসুর রাহমানের অনেক সাহিত্যকর্ম চীনা ভাষায় অনূদিত হলেও বাংলায় অনূদিত চীনা বইয়ের সংখ্যা খুব কম।
ভাষার সীমাবদ্ধতাকে এ ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করে বক্তারা বলেন, আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলা ভাষাভাষী এখন চীনা ভাষা শিখছেন এবং চীনা ভাষাভাষী বাংলা শিখছেন বলে এ প্রতিবন্ধকতা দূর করা এখন অনেক সহজ হয়েছে।
আরও পড়ুন:ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ঢাকার বড় দুটি মার্কেট ও দেশের অন্যান্য স্থানে আগুনের ঘটনায় এবার বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে শপিং মল ও মার্কেটে।
ঈদকে কেন্দ্র করে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের পর শপিং মল ও মার্কেটকেন্দ্রিক গোয়েন্দা নজরদারি এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে।
রাজধানীসহ সারা দেশে ঈদকে উৎসবমুখর রাখতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হলেও নাশকতার কোনো হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশেষায়িত বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে থানা পুলিশের চেকপোস্ট, তল্লাশি, গাড়িতে ও হেঁটে পেট্রলিং থাকবে। গুজব, মিথ্যা তথ্যের অপপ্রচার ঠেকাতে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সাইবার পেট্রলিং অব্যাহত থাকবে।
রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে থানা পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও মাঠে থাকবে। ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে র্যাবের পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব সদরদপ্তর।
চলতি মাসে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বঙ্গবাজার ও নিউ মার্কেটে বড় দুটি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিঃস্ব হয়েছেন হাজারো ব্যবসায়ী। দুটি আগুনের ঘটনাই ভোররাতে হয়েছে। কেউ আগুন লাগিয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এ কারণে এবারের ঈদে মার্কেটকেন্দ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, নিউ মার্কেটে আগুনের পর রাজধানীর মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরের সংশ্লিষ্টরা। এসব বৈঠকে মার্কেটগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি ওঠে এসেছে।
ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা নিরাপত্তা প্রহরী বাড়িয়েছেন এবং আগুনের মতো দুর্ঘটনা সামাল দিতে পূর্বপ্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও বিপণি বিতানগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছেন।
ঈদ নিরাপত্তা নিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছরই ঈদ বা বড় উৎসবকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। অভিজ্ঞতার আলোকে কোনো একটি বিষয়কে অ্যাড্রেস করার প্রয়োজন মনে হলে বা গোয়েন্দা তথ্য থাকলে সে বিষয়টা যোগ হয়।’
তিনি বলেন, ‘এবার ঈদকে ঘিরে হুমকির কোনো তথ্য নেই, তবে নিউ মার্কেটে আগুনের পর আমরা মনোযোগ দিয়েছি। আমরা প্রতিটা মার্কেটে দোকান মালিক সমিতি ও বড় বড় মার্কেটের সংশ্লিষ্টদের সিকিউরিটি নিয়ে ব্রিফ করেছি। আমাদের গোয়েন্দারা তৎপর রয়েছে। কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করার প্রস্তুতি রয়েছে।’
সরকারি ছুটি দুই দিন আগে থেকে শুরু হওয়ায় একটু আগে আগেই ঢাকা ছাড়ছে নগরবাসী। বুধবার থেকে ক্রমেই ফাঁকা হচ্ছে রাজধানী। শহর ফাঁকা হলে বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তায় চুরি, ছিনতাই বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। সেই আশঙ্কা থেকে পাড়া-মহল্লার সিকিউরিটি গার্ডদের তৎপর থাকতে থানা পুলিশের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ডিএমপি থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি থানা এলাকায় অলিগলি ও মূল সড়কে পুলিশ গাড়ি দিয়ে ও হেঁটে পেট্রলিং করবে। বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে চেকপোস্ট, সন্দেহভাজনদের করা হবে তল্লাশি।
ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে নেয়া হচ্ছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানীর ঈদগাহগুলোতে জামাত শুরুর আগেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ডিএমপি ও র্যাব।
দেশের সবগুলো ব্যাটালিয়ন নিজ নিজ এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘরমুখো মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। স্টেশনগুলোতে আমরা অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছি। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে র্যাবের ব্যাটালিয়নগুলো নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ পর্যাপ্তসংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চেকপোস্ট বসিয়ে এবং সিসিটিভি মনিটরিং করা হবে। এ ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড ও র্যাবের হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা আছে।’
আরও পড়ুন:ইতোমধ্যে অনেকেই নতুন পোশাক কিনে ফেলেছি ঈদের জন্য। আর ঈদের দিন কোন বেলায় কোন পোশাকটি পরা সেটা নিয়ে চলে নানা পরিকল্পনা। অনেকেই সকালে ফ্রেশ হয়েই একটা হালকা পোশাক পরে ফেলেন। দুপুর এবং রাতের জন্য থাকে পছন্দের আলাদা পোশাক। সেই সঙ্গে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সাজটা কেমন হবে, তা নিয়েও যেন ভাবনার অন্ত নেই। ঈদের তিন বেলায় তিন রকম সাজে হয়ে উঠুন সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। পোশাকের পাশাপাশি সাজটা কেমন হবে সে বিষয়ে জানিয়েছেন রুপ বিশেষজ্ঞ এবং ফ্যাশন ডিজাইনাররা।
সকালে স্নিগ্ধ
এবার গরম আবহাওয়ার দিকটা খেয়াল রেখে সকালের সাজটা হতে হবে আরামদায়ক, স্নিগ্ধ আর সতেজ।
বিবিআনার ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, ‘ঈদের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মেয়েরা একটু বেশিই ব্যস্ত থাকে রান্নাবান্না এবং অতিথি আপ্যায়ন নিয়ে। তাই সকালের দিকে পোশাকটা হতে হবে খুব আরামদায়ক। সেই ক্ষেত্রে সুতির সালোয়ার কামিজ বা কুর্তি পরতে পারেন। অনেকেই সকালে শাড়ি পরতে পছন্দ করেন। তাই চাইলে পাতলা শাড়ি পরে ফেললেন।’
আর সকালের সাজটা হবে খুবই হালকা। জারাস বিউটি লাউঞ্জের স্বত্বাধিকারী এবং রুপ বিশেষজ্ঞ ফারহানা রুমি বলেন, ‘বেস মেকআপে শুধু কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়ে তার ওপর ফেস পাউডার লাগিয়ে নিন। কাজল না দিয়ে চিকন করে ওয়াটার প্রুফ আইলাইনার লাগাতে পারেন যেন দুপুর বা বিকেলের সাজে চোখের নিচে কালো ভাবটা না থাকে। সাথে একটু ভারি করে মাশকারা লাগান। গালে দিন হালকা গোলাপি ব্লাশন। ঠোঁটে হালকা করে লাগিয়ে নিন মিষ্টি গোলাপি, বাদামি, কফি বা ন্যাচারাল রঙের লিপস্টিক। কপালে পরতে পারেন ছোট্ট একটি টিপ।
যেহেতু গরম তাই চুলের সাজটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সকালে চুলটা ছেড়ে না রেখে খোঁপা বা বেণি করে বেঁধে ফেললে আরামদায়ক হবে। কেউ চাইলে একটা বেলী ফুলের মালাও গুঁজে দিতে পারেন। সকালের হালকা সাজের সঙ্গে ভালো লাগবে পার্ল, পুঁতি কিংবা স্টোনের ছোট গহনা। সব মিলিয়ে আপনাকে লাগবে পবিত্র, স্নিগ্ধ ও সতেজ।’
দুপুরে উৎসবের আমেজ
ঈদের দুপুরের সাজে আপনি হয়ে উঠতে পারেন অনন্য।
অঞ্জনস এর প্রধান নির্বাহী শাহীন আহমেদ বলেন, ‘এই সময় পোশাকটি পরুন সুতি বা ভয়েলের লং কামিজ বা কুর্তি, শর্ট কুর্তি, শর্ট হাতা কামিজ বা কুর্তি, ফতুয়া এগুলো। রং হিসেবে বেছে নিন অফ হোয়াইট, বিস্কিট, হালকা গোলাপি, আকাশী, লেমন, হালকা নীল, বাঙ্গী, হালকা বাসন্তী এরকম হালকা যেকোনো রং। আমরা গরমে আরামের দিকটা মাথায় রেখে এই পোশাকগুলো রেখেছি বিভিন্ন কাটিং ও প্যাটার্নে। তবে হালকা কাজের এমব্রয়ডারি, সুতার কাজ, ব্লক প্রিন্ট এরকম নকশা ও ডিজাইন করা পোশাকও রয়েছে। সেগুলো পরতে পারেন দুপুরে। এতে পোশাক যেমন আরামদায়ক হবে তেমনি নতুনত্বও বজায় থাকবে। কেউ চাইলে লিনেনও পরতে পারেন। তবে অবশ্যই একটু ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নিন যেন সেটা পরে এবং চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয়। আর মেকআপের ক্ষেত্রে বেসটা সকালের মত হলেই সতেজ লাগবে দেখতে।’
রাতের সাজে জমকালো
রাতের সাজটা একটু জমকালো করেই সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারেন।
এ বিষয়ে রঙ বাংলাদেশের স্বত্তাধিকারী সৌমিক দাস বলেন, ‘এবার ঈদটাই প্রচণ্ড গরমে পরে গেছে৷ তাই আমরা সব পোশাকগুলোর স্টাইলে ভিন্নতার পাশাপাশি আরামের দিকটা খেয়াল রেখেছি। ঈদের দিনটা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সবারই ব্যস্ততায় কাটে। সবাই বেরই হয় বিকেল বা সন্ধ্যায়। সেটা হতে পারে ঘুরতে বা কোনো দাওয়াতে। সেই ক্ষেত্রে সাজপোশাকটা একটু জমকালো হলে ভালো লাগে। তখন একটু গর্জিয়াস পোশাকটাই পরবে সবাই। এর মধ্যে গাউন, লং কুর্তি, বাহারি ডিজাইনের শাড়ি পরতে পারেন। সেটা মাথায় রেখেই আমাদের এক্সক্লুসিভ কালেকশনগুলোই রাখা হয়েছে যেন সবাই সন্ধ্যার পর পরতে পারে। এই পোশাকগুলোতে একটু গাঢ় রং ব্যবহার করা হয়েছে যেটা পার্টি বা দাওয়াতে অনায়াসে মানিয়ে যাবে। এগুলো সুতি না হয়ে মসলিন, সিল্ক এবং জর্জেট হলে বেশ উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত লাগে। আসলে সারাদিন ব্যস্ততার পর সাজসজ্জার ব্যাপারটাই আসে বিকেলে। তাই সকাল বা দুপুরে হালকা সাজপোশাকে থাকলেও বিকেলেই সবাই ঈদের জন্য কেনা মূল ড্রেসটি পরে বের হয়। সেই সাথে সাজটাও দিতে হয় পোশাকের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই।
‘পোশাকে যেটাই হোক তার সাথে সাজ ও জুয়েলারির একটা সামঞ্জস্য থাকলে যেকোনো উৎসবে সবার নজর কাড়া যায়। পোশাকটা খুব বেশি গর্জিয়াস হলে সাজটা খুব বেশি ভারী না হলেই ভালো লাগবে। আর যদি পোশাকটা একটু হালকা কাজের মধ্যে হয় তখন মেকআপটা হতে পারে একটু ভারী। রাতের সাজে চুলটা ইচ্ছেমতো ছেড়ে রাখতে বা বেঁধে ফেলতে পারেন। পোশাকের পাশাপাশি খেয়াল রাখুন কখন কোন মেকআপ মানাবে, কোন পোশাকের সাথে কোন গহনা পরবেন এবং সেই সাথে চুলের সাজটাও যেন হয় পোশাক এবং মুখের আদলের সাথে মানানসই।’
আরও পড়ুন:পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মেতেছে দেশ। নতুন বাংলা বর্ষের প্রথম দিনের ভোরের আলো রাঙিয়ে দেয় নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। রাজধানীসহ সারা দেশেই ছিল বর্ষবরণের নানা আয়োজন। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে শুক্রবার যুক্ত হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩০।
আনন্দঘন পরিবেশে নব আনন্দে বরণ করে নেয়া হয় নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হয় নববর্ষ। জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেসে যাক, ‘মুছে যাক গ্লানি’ এ আহ্বান জানায় বাঙালি। খবর বাসসের
‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩০’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ছায়ানট ভোরে রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করেছে। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন করেছে। বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান জাতীয় সংগীত ও ‘এসো হে বৈশাখ গান’ পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয়।
বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেস্কো কর্তৃক এটিকে বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসাবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। বাংলা নববর্ষে সকল কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার ও ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। এবার দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের নির্দেশনা দিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
সকাল ৯টায় শোভাযাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা থেকে শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ মোড় ঘুরে আবারও একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহের প্রতীকী উপস্থাপনের নানা বিষয় স্থান পেয়েছে।
উৎসবপ্রিয় বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা বর্ষবরণের প্রধান অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান থেকে নেওয়া-‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি।’
সকালে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। শোভাযাত্রায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো ছিল পুরো এলাকা।
শোভাযাত্রায় এবার স্থান পেয়েছে পাঁচটি মোটিফ। মোটিফ পাঁচটি হলো- টেপা পুতুল, ময়ুর, নীল গাই, হাতি ও বাঘ। এছাড়াও শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণকারীদের হাতে ছিলো বিভিন্ন আকৃতির মুখোশ। চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার পর ঢোলের তালে তালে নাচতে শুরু করেন অংশগ্রহণকারীরা। অনেকেই রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা উপভোগ করেন। বিদেশি নাগরিকদেরও শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দেখা গেছে। তারাও সেজেছেন বাঙালি সাজে।
পরে শোভাযাত্রায় প্রদর্শিত শিল্পবস্তু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে যাওয়ার পর ঢাকের তালে উচ্ছ্বাসে মাতেন শিক্ষার্থীরা।
রমনার বটমূলে ভোর সোয়া ৬টায় আহির ভৈরব সুরে শুরু হয় ছায়ানটের অনুষ্ঠান। সবশেষে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে। এতে ছায়ানটের শিল্পীদের পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন অন্য শিল্পীরাও। রবীন্দ্র-নজরুলের গানের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে লোকজ সুরও।
দুই ঘণ্টাব্যাপী এ অনুষ্ঠানে শিল্পীদের পরিবেশনায় গানগুলোর মধ্যে ছিল-‘মনমোহন গহন যামিনী’, ‘রাত্রি এসে যেথায় মেশে’, ‘মোরে ডাকি লয়ে যাও’, ‘অন্তরে তুমি আছো চিরদিন’, ‘সংকটের বিহ্বলতা’, ‘আমাদের নানান মতে’, ‘মন মজালে ওরে বাউলা গান’, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’, ‘এমন মানব সমাজ কোনদিন গো সৃজন হবে’,‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ ইত্যাদি।
এবারের আয়োজনে ছায়ানটের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে তিনি মঞ্চে উঠে সম্প্রীতির বার্তা ও নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সকল জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে বৈশাখী র্যালি আয়োজন করে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার। বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবং বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে নববর্ষ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
সব সরকারি-বেসরকারি টিভি, বাংলাদেশ বেতার, এফএম ও কমিউনিটি রেডিও বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং বাংলা নববর্ষের ওপর বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি চ্যানেলগুলো রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করেছে।
পহেলা বৈশাখ আমাদের সকল সঙ্কীর্ণতা, কুপমুন্ডকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভিতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণে আমাদের মধ্যে এই স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।
অন্য দিকে পহেলা বৈশাখ বাঙালির একটি সার্বজনীন লোকউৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হয় নববর্ষ।
আরও পড়ুন:শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রকাশনা প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজনে ১৪৩০ বঙ্গাব্দকে বরণ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)।
পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়।
শোভাযাত্রাটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক হয়ে শুরুর জায়গায় ফিরে আসে। এতে নেতৃত্ব দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য ‘শান্তি ও সম্প্রীতি’। শোভাযাত্রায় শান্তির প্রতীক হিসেবে কবুতরের প্রতিকৃতি তুলে ধরা হয়। এ ছাড়াও বড় আকারের লক্ষ্মীপেঁচা, ফুল, মৌমাছি, পাতার প্রতিকৃতি স্থান পায়।
শোভাযাত্রায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক, প্রক্টর, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও সাংবাদিক সংগঠনগুলো অংশ নেয়।
মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠান শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দিতে সার্বক্ষণিকভাবে আমাদের সজাগ থাকতে হবে, আমরা শান্তি ও সম্প্রীতি চাই। আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে, তবুও আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এগিয়ে যেতে হবে।’
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল সংগীত বিভাগের পরিবেশনায় দলীয় ও লোক সংগীত। এ ছাড়াও নাট্যকলা বিভাগের আয়োজনে বাঙালি ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন ‘রায়বেঁশে বা লাঠিখেলা’ মঞ্চায়ন হয়। এ ছাড়াও একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, যাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন গ্রন্থ, জার্নাল, সাময়িকী, বার্তাসহ শিক্ষকদের প্রকাশিত গ্রন্থ স্থান পায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য