ইউরোপের বাজারে সবজি রপ্তানিতে প্রধান শর্ত নির্দিষ্ট মান নিশ্চিত করা। এ জন্য রপ্তানি পণ্য শতভাগ স্ক্যান করা বাধ্যতামূলক। আর এই রপ্তানি কার্যক্রম বাধামুক্ত রাখতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে রয়েছে দুটি স্ক্যানার। অথচ দুটি স্ক্যানারই এখন অচল।
একটি স্ক্যানার অচল হয়ে আছে দীর্ঘ এক বছর ধরে। আরেকটি দিয়ে কোনোক্রমে কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছিল। সেটিও অচল দুই সপ্তাহ ধরে। এতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার যুক্তরাজ্যে সবজিসহ কৃষিপণ্য পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে। সবজি রপ্তানি বন্ধ থাকায় গত ১৫ দিনে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
২০২০-২১ সালে বাংলাদেশ এক হাজার ২৯ কোটি টাকার শাক-সবজি ও ফল রপ্তানি করেছিল৷ রপ্তানির এই পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। স্ক্যানার জটিলতায় উল্টো রপ্তানি বাজারই হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে প্রতিযোগিতার বাজারে এগিয়ে যাচ্ছে শাক-সবজি রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। বাংলাদেশের পণ্য সরবরাহ না থাকায় সেই বাজারটা ওই দুই দেশ দখল করে নিচ্ছে। তাদের বাজার বড় হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাৎক্ষণিক আর্থিক ক্ষতির চেয়েও বড় যে ক্ষতিটা হচ্ছে তা হলো সবজির রপ্তানি বাজার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের সরবরাহ না পেলে ক্রেতারা অন্য দেশের সবজির দিকে ঝুঁকে পড়বে। নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় তারা আর বাংলাদেশের সবজি নিতে চাইবে না। আর ক্রেতার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে অনেক সময় লেগে যাবে। তারপরও পুরোটা উদ্ধার করা সম্ভব হবে না।
ফল ও সবজি রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিমানবন্দরের স্ক্যানার প্রায় সময়ই নষ্ট থাকে। এ জন্য কৃষিপণ্য নিয়ে তাদের বিপদে পড়তে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই রপ্তানিকারকরা পণ্য নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছার পর জানতে পারেন যে স্ক্যানার নষ্ট। এতে করে পণ্য রপ্তানি করতে না পেরে তাদের লোকসানে পড়তে হয়। আবার রপ্তানি উপযোগী পণ্য বাজার পণ্যের বেশি দামে কিনতে হয় তাদের। অথচ এসব রপ্তানিকারকের অধিকাংশই স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী।
মাঝে মাঝেই নষ্ট হয় স্ক্যানার
রপ্তানিকারকরা জানান, বিমানবন্দরে মোট চারটি স্ক্যানার রয়েছে। এর মধ্যে দুটির স্ক্যান যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত হয়। যে দুটির অনুমোদন রয়েছে তার একটি আবার এক বছর ধরে অচল। সেটি মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যটি দিয়ে কাজ চললেও টানা ব্যবহারে সার্বক্ষণিক সচল থাকে না। গত এক বছরে এটি চারবার নষ্ট হয়েছে। সবশেষ দুই দফায় এক মাসের মতো নষ্ট থেকেছে এটি। গত দুই সপ্তাহ ধরে অচল থাকা স্ক্যানারটি কবে নাগাদ ঠিক হবে তারও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কৃষিপণ্যের মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশই যায় যুক্তরাজ্যে। শাহ আমানত বিমানবন্দরে রপ্তানির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সবজির প্যাকেট। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্ক্যানার টাইম টু টাইম নষ্ট হচ্ছে। একবার নষ্ট হলে বিদেশ থেকে পার্টস এতে ঠিক করা হয়। তাতে কত দিন লাগবে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় না। সংশ্লিষ্টরা আপডেট কোনো তথ্য দিতে পারেন না।
‘এর আগে দুই দফায় ১৭ ও ১২ দিন বন্ধ ছিল স্ক্যানার। এ দফায় তো ১৫ দিন হতে চলল। বছরের পর বছর এ সমস্যা হচ্ছে। সমস্যাটি কেন এভাবে জিইয়ে রাখা হচ্ছে তা আমাদের মাথায় আসে না। কেন একাধিক স্ক্যানারের ব্যবস্থা করা হয় না তা-ও আমাদের বোধগম্য নয়।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘রপ্তানির জন্য সবজি সংগ্রহে বাড়তি শ্রম ও খরচ আছে। রপ্তানিকারকরা মাঠ থেকে বাড়তি দামে সবজি সংগ্রহ করে তা বাছাই ও পরিষ্কার করেন। পরে তা প্যাক করে এয়ারপোর্টে নিয়ে এসে জানতে পারেন যে মাল ফেরত নিয়ে যেতে হবে। কারণ স্ক্যানার নষ্ট। এ অবস্থায় ওই পণ্য নষ্ট হয়।
‘কয়েক বছর ধরেই এমন হচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা করা তো তাদের দায়িত্ব। কারণ প্রতি কেজিতে সিভিল এভিয়েশন ছয় থেকে আট সেন্ট রাজস্ব পায়। বৈদেশিক মুদ্রাও আসে। তারপরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কোনো নজর নেই।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিষয়টি অনেকের কাছে মামুলি বিষয় মনে হতে পারে। তারা ভাবতে পারেন যে এক বা দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকলে কী আসে যায়। কিন্তু রপ্তানিকারকদের দিক থেকে দেখলে এটা অনেক বড় ক্ষতি। আমদানিকারকরা তো আমাদের জন্য বসে থাকবে না। তারা অন্য দেশ থেকে পণ্য নেবে। এতে আমাদের বাজার নষ্ট হয়ে যায়। আর একবার হাতছাড়া হলে বাজার পুনরুদ্ধার করাটা খুবই কঠিন।’
রপ্তানি কার্যক্রম বাধামুক্ত রাখতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে রয়েছে দুটি স্ক্যানার। দুটি স্ক্যানারই এখন অচল। ফাইল ছবি
ক্ষতির ধরন
বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে দৈনিক ১০০ টনের মতো কৃষিপণ্য বিভিন্ন দেশে যায়। এর মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশই যায় যুক্তরাজ্যে। যুক্তরাজ্যে দিনে ৫০ টন ধরে হিসাব করলেও লোকসানের পাল্লাটা অনেক ভারী। প্রতি কেজি পণ্যে গড়ে ৩ ডলার আয় হয়। সে হিসাবে গত ১৩ দিনে কমপক্ষে ১৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রপ্তানি বন্ধ থাকতে পারে আরো ১৪ দিন৷ সে হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ৩০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
সরকারও প্রতি কেজিতে গড়ে ৭ সেন্ট রাজস্ব হারাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা রপ্তানি বাজার ধরে রাখার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে।
স্ক্যানারের সংকট কেন
শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, মোট চারটি স্ক্যানার মেশিন রয়েছে একই মানের। দুটি নতুন। দুটি পুরোনো। পুরোনোগুলোর একটি অচল। বাকি তিনটি সচল। পুরোনো মেশিনগুলোর স্ক্যানের ফলাফলই গ্রহণ করে যুক্তরাজ্য।
প্রতিটি স্ক্যানার স্থাপন করার পর সেটির কর্মক্ষমতার বিভিন্ন তথ্য ও ফলাফল যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হয়। অনুমোদন পেলেই সেগুলোতে স্ক্যান করে পণ্য পাঠানো যাবে। নতুন দুটি মেশিনের অনুমোদনের জন্য তথ্য পাঠানো হয়েছে, কিন্তু তা দীর্ঘদিন ধরেই আটকে আছে। তাই সংকট যাচ্ছে না। অথচ একই তথ্যের ভিত্তিতে ইইউ নতুন মেশিনের অনুমোদন দিয়েছে। সেগুলোর স্ক্যানের ওপর ভিত্তি করে পাঠানো পণ্য গ্রহণও করছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক এস এম তৌহিদুল আহসান বলেন, ‘স্ক্যানার নষ্ট হওয়ায় বিকল্প হিসেবে আমরা এক্স-রে মেশিন দিয়ে স্ক্যান করে পণ্য পাঠাই। কিন্তু এ মেশিনের স্ক্যানের অনুমোদন ইউকে দেয়নি। তবে ইইউ অনুমোদন দিয়েছে। ফলে ইউকের অপশন কমে গেছে আমাদের। ইউরোপ বা অন্য দেশে সমস্যা হচ্ছে না।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু কাতার এয়ারওয়েজের মাধ্যমে কিছু সবজি রপ্তানি হচ্ছে৷ কারণ দুবাই এয়ারপোর্টে ওই স্ক্যানার আছে৷ এয়ারলাইনসটি তাতে কৃষিপণ্য স্ক্যান করতে পারে। তবে তাতে খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে৷ দেশের স্ক্যানার অচল হওয়ায় প্রায় ২০০ রপ্তানিকারকের মাথায় হাত পড়েছে। এর সঙ্গে যে কৃষকরা রপ্তানিযোগ্য শাক-সবজি উৎপাদন করেন, তারাও ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য