ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে স্নাতকোত্তরের এক শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে একই হলের কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মীর বিরুদ্ধে।
স্নাতকোত্তরের ওই শিক্ষার্থীকে রক্ষা করতে গেলে মারধরের শিকার হয়েছেন তারই রুমমেট চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী।
শনিবার সকালে হলের পদ্মা ব্লকের ২০১০ নম্বর রুমে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আখলাকুজ্জামান অনিক এবং তার রুমমেট ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুইরেন্স বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাজিব আহমেদ রাজ।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
তবে ভুক্তভোগী অনিক জানিয়েছেন, মাথা ফেটে যাওয়ায় তার আটটি সেলাইয়ের প্রয়োজন হয়েছে।
মারধরের ঘটনায় ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিলেও কয়েকজনের নাম জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এরা হলেন অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সফিউল্লাহ সুমন পিটার, ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির আল হাসান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুর রাশেদ নাইম এবং মাসফি উর রহমান।
এরা সবাই হল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং হল ছাত্রলীগের সভাপতি সজিবুর রহমানের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
মারধরের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আখলাকুজ্জামান অনিক বলেন, ‘আজ সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে আমি রুমে ঘুমাচ্ছিলাম। এসময় কয়েকজন ছেলে আমার রুমে ঢুকে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে। এরপর তারা আমাকে জোর করে রুম থেকে বের করলে রুমের বাইরে আগে থেকেই ওঁতপেতে থাকা ১০-১২ জন আমার ওপর হামলা করে।’
তিনি বলেন, ‘এসময় তাদের হাতে থাকা স্ট্যাম্প দিয়ে এবং কিল, ঘুষি, লাথি মেরে আমার ওপর আক্রমণ করে। একপর্যায়ে একজনের স্টাম্পের আঘাতে আমার মাথা ফেটে যায়। পরে আমি আমার বন্ধুদের সহযোগিতায় ডিপার্টমেন্টে আসি এবং সেখান থেকে শিক্ষকদের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে চিকিৎসা নেই।’
এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘তারা যখন আমাকে মারছিল তখন তাদের কথা শুনে বুঝতে পারি আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ, গত ২৪ তারিখ সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমি নাকি উক্ত হামলাকারীদের একজন মাসফি উর রহমানকে হেনস্তা করেছি এবং সেটির দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেছি, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
অনিক বলেন, ‘গত ১০ মার্চ থেকে আমাকে এম.এ ২য় সেমিস্টারের উচ্চতর অভিনয় অনুশীলনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পরীক্ষা ল্যাবে (নাটমণ্ডল অডিটোরিয়াম) বাধ্যতামূলক উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। আগামী ১ এপ্রিল পর্যন্ত আমাকে এখানে এই সময়ে উপস্থিত থাকতে হবে। সুতরাং ২৪ তারিখ সন্ধ্যায় আমার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার কোন সুযোগই ছিল না।’
ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থী বলেন, “এর আগে গতকাল ক্লাসের বিরতিতে আমি হলে গোসল করতে গেলে দ্বিতীয় বর্ষের মাসফি উর রহমান (অভিযুক্ত) এসে আমাকে সালাম দিয়ে বলে, ‘ভাই, আমাকে চিনতে পেরেছেন? ওই যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে.....’ তখন আমি তাকে বলি, না ভাই, তোমাকে আমি চিনতে পারিনি। তোমার কোথাও হয়ত ভুল হচ্ছে।’
মারধরের ঘটনায় বিচার চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছিরকে লিখিত অভিযোগ দিবেন বলে জানিয়েছেন আখলাকুজ্জামান অনিক।
তিনি বলেন, ‘অপরাধ না করেও শিক্ষাজীবনের শেষে এসে জুনিয়রদের হাতে এরকম মারধরের শিকার হব এটা আমি মেনে নিতে পারছি না৷ আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এ ঘটনার আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।’
যা বলছেন অভিযুক্তরা
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাসফি উর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এই ভাইকে (অনিক) চিনিও না। ভাইয়ের সঙ্গে আমার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কোনো ঝামেলাই হয়নি। গত ২৩ তারিখ রাতে ময়মনসিংহ গেছি, ২৪ তারিখ রাতে হলে আসছি। এরপর গতকাল রাতে আবারও ময়মনসিংহ আসছি। আমি এখন কমলাপুরে নামছি, একটু পর হলে আসব। আমি আজকের মারধরে যুক্ত ছিলাম না।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকই আজকে মারধরের ঘটনায় তাকে জড়িত থাকতে দেখেছে জানালে তিনি বলেন, ‘তাহলে তারা হয়ত ভুল দেখছে। আমি তো হলের বাইরে।’
এ বিষয়ে আরেক অভিযুক্ত সাব্বির রহমান বলেন, ‘ওই ভাই (অনিক) গত ২৪ তারিখ আমার হলের এক ছোট ভাই মাসফিকে বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞেস করে তার আচরণ ভালো না বলে টিএসসির উদ্যান গেইটে থাপ্পড় দিছে।
‘এরপর গতকাল রাতে মাসফি সেই ভাইকে আমাদের হল গেইটে পোস্টার লাগাতে দেখে বুঝতে পারছে, ভাই আমাদের হলেরই। এরপর আজকে সকালে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা গিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে মারামারি, তর্কাতর্কি করছে। এরাই মূলত ঝামেলাটা করছে। এরপর আমরা গিয়েছি। তখন আর কিছু হয়নি।’
তার নেতৃত্বেই এই হামলার অভিযোগ জানালে অভিযুক্ত এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখন তারা যদি বলে আমি সেখানে ছিলাম বলে তাহলে তো আর কিছু করার নেই। তবে আমি যতদূর জানি আমি ছিলাম না।’
মাসফির বক্তব্য জানালে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘কিন্তু আমি জানি মাসফির সঙ্গেই এই ঘটনা ঘটেছে।’
আরেক অভিযুক্ত নাইমুর রাশেদ বলেন, ‘প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে হয়ত এই ভাই মারছে। তাই তাদের বন্ধুবান্ধবরা মারামারি করতে গেছে। তারপর আমরা গিয়ে সেই ঝামেলা সমাধান করার জন্য বড় ভাইদের ফোন দিয়েছি। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।’
অন্য অভিযুক্ত সফিউল্লাহ সুমন পিটারকে ফোন দিলে তিনি নিজেকে পিটার নয়, রাকিব দাবি করে রং নম্বর বলে ফোন কেটে দেন।
ভুক্তভোগীকে বাঁচাতে গিয়ে মারধরের শিকার আরেক শিক্ষার্থী
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, মারধরের সময় আখলাকুজ্জামান অনিককে বাঁচাতে গেলে দুই দফায় মারধরের শিকার হয়েছেন তার রুমমেট রাজিব আহমেদও।
এ বিষয়ে রাজিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকালে অনিক ভাই আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলছে, এরা (অভিযুক্তরা) মনে হয় কিছু নিয়ে কথা বলতে চায়। আসো তো। আমি ঘুম থেকে উঠে দরজার দিকে গেলে বাইরে থাকা একজন আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, আপনার আসার দরকার নেই। এটা বলেই তারা বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিচ্ছে।
‘আমি ঝামেলা হবে বুঝতে পেরে দরজা জোরে টেনে খুলে ফেলি। এরপর দেখি সাত- আটজন আমার দিকে তেড়ে এসে আমাকে অনবরত পাঁচ-ছয় মিনিট কিল ঘুষি মারছে। এরপর আমি পাশে ২০০৯ নং রুমে আশ্রয় নিলে ২৫ মিনিট পর সেখানেও ১৫-২০ জন এসে রুমে যা পারছে, থালা-বাসন থেকে শুরু করে চায়ের কাপ, রাইস কুকার সবগুলো দিয়েই আমাকে মারছে। এরপর আমি মেডিক্যালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছি।’
এসব বিষয়ে হল ছাত্রলীগের সভাপতি সজিবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি এবং আমার সাধারণ সম্পাদক কেউই হলে ছিলাম না। পরে এসে শুনেছি দ্বিতীয় বর্ষের মাসফি নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভুক্তভোগী অনিকের মাঝে পূর্বের একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল হয়ত। সেটার জের ধরে আজকের এই ঘটনা।’
মাশফির বক্তব্য সজিবুর রহমানকে জানালে তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমি শুনেছি তার সঙ্গেই ঘটনাটা ঘটেছে।’
সজিব বলেন, ‘এটা আসলেই দুঃখজনক ঘটনা। হলের অভ্যন্তরে যেহেতু এই ঘটনা এটির দায়বার এড়ানোর কোনো সুযোগ হল প্রশাসনের নেই। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে যারা দোষী তাদের ব্যাপারে হল প্রশাসন যে ব্যবস্থা নিবে আমাদের জায়গা থেকে পূর্ণ সমর্থন করব।’
এদিকে এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছিরকে ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। ইতোমধ্যে দায়িত্বরত শিক্ষককে সেখানে পাঠিয়েছি। তিনি কথা বলেছেন। আমরা রোববার সকালে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
আরও পড়ুন:নতুন বছর, নতুন সম্ভাবনা এবং বাঙালিয়ানার ঐতিহ্যকে হৃদয়ে ধারণ করে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ উদ্যাপন করল পহেলা বৈশাখ ১৪৩২। রাজধানীর প্রগতি সরণি, বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম এভিনিউতে অবস্থিত সিটি ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য বৈশাখী উৎসব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন এই প্রাণবন্ত উৎসবে। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল বৈশাখী রঙে রাঙানো আলোকসজ্জা, মুখরিত পরিবেশ এবং বৈশাখী পোশাকে সজ্জিত মানুষের উপস্থিতি।
আয়োজনের মধ্যে ছিল সংগীত পরিবেশন, কবিতা আবৃত্তি, হস্তশিল্প প্রদর্শনী, ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্টল, নৃত্য, শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বৈশাখী সাংস্কৃতিক পটভূমির ওপর আলোচনা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান, প্রখ্যাত ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফত, উপাচার্য প্রফেসর ড. এইচ এম জহিরুল হক, উপ-উপাচার্য ড. জি ইউ আহসান, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এ এস এম জি ফারুক এবং বিভাগীয় প্রধানরা।
পহেলা বৈশাখের এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে এবং এক অনন্য মিলনমেলায় পরিণত হয়। সাংস্কৃতিক মনোরম পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) আবাসিক হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবিও ঘোষণা করেছেন তারা।
ছুটি শেষে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) কুয়েটের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর বেলা পৌনে ২টার দিকে কুয়েট স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা দেন। পরে বিকাল ৩টার দিকে তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন তারা।
ব্রিফিংয়ের সময় দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়, ভিসি কুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন, ইন্টারনেট ও পানি বন্ধ করে হল থেকে (শিক্ষার্থীদের) বের করে দিয়েছেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে ইন্ধন জুগিয়েছেন এবং তাদের (আন্দোলনরত শিক্ষার্থী) বহিষ্কার করেছেন। তাই আমরা ছয় দফা থেকে এক দফা ঘোষণা করছি—এই ভিসিকে অপসারণই আমাদের একমাত্র দাবি।
একই সঙ্গে নতুন ভিসির অধীন নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান তারা।
ঘোষণাপত্রটি পাঠ করার পর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলের তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করার ঘোষণা দেন। এর পরপরই তারা মিছিল নিয়ে খান জাহান আলী হলের দিকে যান। এরপর হলের ফটকের তালা ভেঙে ফেলেন। একইভাবে তারা ড. এম এ রশিদ হল, অমর একুশে হল, লালন শাহ হলেরও তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন।
এর আগে, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু ও হল খুলে দেওয়ার দাবিতে রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুর থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে কুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভা শেষে ঘোষণা দেওয়া হয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৪ মে থেকে শুরু হবে এবং আবাসিক হলগুলো খুলবে ২ মে।
তার আগে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এই বহিষ্কারাদেশের প্রতিবাদে আজ (মঙ্গলবার) বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু ও হল খুলে দেওয়ার দাবিও জানান তারা।
বর্ণাঢ্য আয়োজনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপিত হয়েছে। নববর্ষে শোভাযাত্রা, মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
আজ সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নববর্ষ শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৈশাখী মেলা ও প্রকাশনা প্রদর্শনীর মধ্যদিয়ে বর্ণাঢ্যভাবে পালিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ।
বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম এর নেতৃত্বে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে নববর্ষ শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে রায়সাহেব বাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় ক্যাম্পাসে সমাপ্ত হয়। নববর্ষ শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালকবৃন্দ, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রক্টর, প্রভোস্টবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।
এবারের নববর্ষ উদযাপনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল “বিপ্লবের সিঁড়ি বেয়ে আসুক নেমে আলো, নববর্ষে মুক্ত জীবন থাকুক আরো ভালো”।
চারুকলা অনুষদের আয়োজনে শোভাযাত্রায় সূর্যমুখী ও শাপলা ফুল, অরিগামি পাখি, চড়কি, তালপাতার সেপাই, লোকজ খেলনা, গরুসহ বড় গরুর গাড়ির স্থাপত্যসহ গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনসমূহ প্রদর্শিত হয়।
শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে ও পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল মাঠে বৈশাখী মেলা এবং ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচতলায় প্রকাশনা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন উপাচার্য মহোদয়। এবারই প্রথম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়, যেখানে বিভিন্ন স্টলে স্থান পায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য, খাদ্যদ্রব্য ও শিল্পকর্ম।
এদিন সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম আনুষ্ঠানিকভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “১৪৩১ বঙ্গাব্দে দেশের মানুষের অসাধারণ ত্যাগ ও সংগ্রামের ফলে আমরা আজ ১৪৩২ বঙ্গাব্দের নববর্ষ একটি মুক্ত পরিবেশে উদযাপন করতে পারছি। এই অর্জনকে ধরে রাখতে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবন চত্বরে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত বিভাগের পরিবেশনায় জমে ওঠে এক প্রাণবন্ত উৎসব। এ বিভাগ পরিবেশন করে হৃদয়ছোঁয়া সঙ্গীত। নাট্যকলা বিভাগ মঞ্চস্থ করে জনপ্রিয় যাত্রাপালা ‘ভেলুয়া সুন্দরী’। এছাড়াও, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আবৃত্তি সংসদ এবং উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী উপস্থাপন করে নানা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। জবি ব্যান্ড মিউজিক অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনায় বিকাল ৩টায় ব্যান্ড সংগীত ও কনসার্টের মনোমুগ্ধকর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ উপস্থিত সকল দর্শক প্রাণভরে উপভোগ করেন উৎসবের রঙিন আমেজ। বৈশাখের রঙে রাঙানো এ আয়োজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে দেয় উৎসবের এক উচ্ছ্বসিত আবেশ। নববর্ষের এই অনুষ্ঠান বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখে।
দেশের ৯টি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আজ বৃহস্পতিবার থেকে এক যোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সুষ্ঠু, সুন্দর ও সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের। প্রশ্নপত্র ফাঁস, গুজব, নকল বা অসদুপায় অবলম্বনের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেছে কমিটি।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের রুটিন অনুযায়ী ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে পরীক্ষা চলবে ১৩ মে পর্যন্ত। এবারও বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিয়ে শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হবে বাংলা (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্রের ও সহজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র দিয়ে। নির্দিষ্ট দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৫ থেকে ২২ মে পর্যন্ত।
এ বছর ১৯ লাখ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় এক লাখ। শুধু তাই নয়, বিগত পাঁচ বছরে এবারই সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। এছাড়া ২০২৩ সালে ছিল ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন, ২০২২ সালে ছিল ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন এবং ২০২১ সালে ছিল ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী।
এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী রয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৭ লাখ এক হাজার ৫৩৮ জন এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ২ হাজার ২৯১টি, প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৪টি।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র এক লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন এবং ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন ছাত্রী। এই বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ৭২৫টি। প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৩টি। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সর্বমোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯২৮ জন। এদিকে এবারের এসএসসি ও সমমানে গণিত পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। এ পরীক্ষা আগামী ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য নতুন সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড নতুন এই রুটিন প্রকাশ করেছে। এর আগে এই পরীক্ষা ২০ এপ্রিল ইস্টার সানডের ছুটির দিনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নানা আলোচনার পর ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড গণিতের পরীক্ষা পিছিয়ে নতুন রুটিন প্রকাশ করল।
লিখিত পরীক্ষা ৮ মে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে আবার সময়সূচি সংশোধন করা হয়েছে। ১৩ এপ্রিল বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিল। কিন্তু বৈসাবি উৎবের কারণে এই পরীক্ষা ১৩ মে অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছিল। এরপর ২০ এপ্রিলের গণিত পরীক্ষা নিয়ে আলোচনার পরে আবার পরিবর্তন আনা হয়েছে সময়সূচিতে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ‘এ’ ইউনিট (বিজ্ঞান ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্সেস), ‘বি’ ইউনিট (কলা ও আইন অনুষদ), ‘সি’ ইউনিট (বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ) এবং ‘ডি’ ইউনিটের (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, শাখা পরিবর্তন) ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবিবার দুপুরে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ এবং ‘ডি’ ইউনিটের স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রত্যেক শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে লগইন করে নিজ নিজ ফলাফল দেখতে পারবেন। এ ছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট www.jnu.ac.bd অথবা https://jnuadmission.com অথবা www.admission.jnu.ac.bd -এ জানা যাবে।
উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আগামী ৮ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত উল্লিখিত ওয়েবসাইটে (www.admission.jnu.ac.bd) লগইন করে বিষয় পছন্দ (Subject Choice) দিতে পারবেন।
‘এ’ ইউনিটের তিন শিফটে মোট আসন ৮৬০টি। সবগুলো আসন বিজ্ঞান বিভাগের জন্য।
প্রথম শিফটে মোট আসন ২৮৪টি। দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৮৭টি। তৃতীয় শিফটে মোট আসন ২৮৯টি।
এ ইউনিটে ৮৬০ আসনের বিপরীতে পরীক্ষায় বসেন ৪৪ হাজার ২২৩ জন।
‘বি’ ইউনিটের তিনটি শিফটে আসন ৭৮৫টি। প্রথম শিফটে মোট আসন ২৯৪টি, যার মধ্যে মানবিকে ২১৬, বাণিজ্যে ৩৭, এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৪১টি।
দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৯২টি, যার মধ্যে মানবিকে ২১৮, বাণিজ্যে ৩৫ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৩৯টি।
তৃতীয় শিফটে মোট আসন ১৯৯টি, যার মধ্যে মানবিকে ১২৪, বাণিজ্যে ১০ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৬৫টি।
‘সি’ ইউনিটের দুটি শিফটে মোট আসন ৫২০টি।
প্রথম শিফটে মোট আসন ২৩০টি, যার মধ্যে শুধু বাণিজ্য বিভাগে ২৩০টি।
দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৯০টি, যার মধ্যে বাণিজ্যে ২৩১, মানবিকে ১৬ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৪৪টি।
‘ডি’ ইউনিটের দুটি শিফটে মোট আসন ৫৯০টি।
প্রথম শিফটে মোট আসন ২৯৪টি, যার মধ্যে মানবিকে ১৯২, বাণিজ্যে ৩৩ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৬৯টি।
দ্বিতীয় শিফটে মোট আসন ২৯৬টি, যার মধ্যে মানবিকে ১৯৩, বাণিজ্যে ৩২ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৭১টি।
এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ডি’ ইউনিট, ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘বি’ ইউনিট, ২২ ফেব্রুয়ারি ‘এ’ ইউনিট এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন:কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র নাইমুর রহমান সীমান্তের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে মঙ্গলবার ভোর ৫টায় মৃত্যু হয় তার।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন বলে জানান তার সহপাঠীরা। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়।
বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সুমাইয়া ফারাহ খান বলেন, ‘আজ ভোর ৫টায় সীমান্ত শ্যামলীতে কিডনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। সে খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। আমরা যতটুকু জেনেছি গত দুই দিন আগে পেটে ব্যথা নিয়ে হাসাপাতালে ভর্তি হয়।
‘গতকাল ওর একটা সাজার্রি করার কথা ছিল। ওর বাবা কিছুদিন আগে মারা গেছে। মা এবং বোন আছে। বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ওদের পরিবার ঢাকাতেই থাকে। তবে ওকে দাফনের জন্য কিশোরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
সীমান্তের মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. সাবিনা শারমিন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন:ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশনের (টিএনই) বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের ফুলার রোড অডিটোরিয়ামে মঙ্গলবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, শিক্ষা খাতের অংশীজন, অ্যাকাডেমিক কমিউনিটি ও আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন এবং ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশনের (টিএনই) বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়ার এডুকেশন ডিরেক্টর স্যালভাডোর কারবাজাল লোপেজ গবেষণা প্রতিবেদনের মূল তথ্য উপস্থাপন করেন।
ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস বলেন, ‘বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ গঠনে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন (টিএনই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে টিএনইয়ের প্রসার সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার পথ সুগম করবে।
‘টিএনই মানসম্মত উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে আমরা আমাদের অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করে এ প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রচেষ্টার আমি সত্যিই প্রশংসা করি। এটি অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করছে।
‘এ সম্পর্ক জোরদার করা উভয় দেশের জন্যই উপকারী হবে, যা উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, জ্ঞান বিনিময় এবং এই খাতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, ‘ব্রিটিশ কাউন্সিলের ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন রিসার্চ রিপোর্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন বৈশ্বিক শিক্ষা অংশীদারত্বের মাধ্যমে শিক্ষার ভবিষ্যৎ গঠনে এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে দারুণ সুযোগ তৈরি করছে।’
অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশনের সম্ভাবনা ও সামাজিক মূল্য’ বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
সেশনটি পরিচালনা করেন ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ডিরেক্টর প্রোগ্রামস ডেভিড নক্স।
প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সদস্য মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশ-এর সেক্রেটারি জেনারেল ইশতিয়াক আবেদিন এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাউথ এশিয়ার এডুকেশন ডিরেক্টর সালভাদর কারবাজাল লোপেজ।
ব্রিটিশ কাউন্সিল নিয়োজিত আন্তর্জাতিক যোগ্যতা মূল্যায়ন সংস্থা ইক্টিস গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা করেছে।
১. টিএনই প্রদানকারীদের জন্য নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াগুলো সহজ করা ও সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা
২. ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ব্রিজিং ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোগ্রাম চালু করা
৩. রিমোট ও অনলাইন লার্নিংকে সহায়তা করতে ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত করা
৪. মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াগুলোতে স্বচ্ছতা ও সমন্বয় বৃদ্ধি করা
৫. বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে লক্ষ্যভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ
৬. মধ্যম আয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বৈত ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ
অনুষ্ঠানে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন (টিএনই) ২০২৫ অনুদানের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি নির্বাচিত ইউকে-বাংলাদেশ পার্টনারশিপ তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২৫ হাজার পাউন্ড করে অনুদান পাবে।
বিজয়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে লিভারপুল জন মুরস ইউনিভার্সিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজ্যাস্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ, নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি–বাংলাদেশ।
এ ছাড়াও রয়্যাল হলোওয়ে, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে কাজ করবে, এবং কীল ইউনিভার্সিটি এফআইভিডিবির সঙ্গে অংশীদারত্ব করবে।
এ অনুদানগুলো ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন উদ্যোগের মাধ্যমে অ্যাকাডেমিক ও গবেষণামূলক সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালীর উদ্দেশে প্রদান করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারত্বকে আরও শক্তিশালী করাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য।
সম্পূর্ণ রিপোর্টটি ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য