গাজীপুরের টঙ্গীতে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের নামে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট করে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে। যদিও আয়োজক হিসেবে খাতাকলমে নাম ছিল ‘মিলগেইট ছাত্র ও যুব সমাজ’।
চাহিদামতো চাঁদা না পেয়ে এক ব্যবসায়ীকে হুমকি দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। আবার ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণী শেষে ঘটা করে শিল্পী এনে আয়োজন করার পর তাদেরকে প্রতিশ্রুত টাকাও দেয়া হয়নি।
শিল্পীরা টাকা না পেয়ে গভীর রাত পর্যন্ত থানার সামনে অপেক্ষা করেন। পরে ভোরের আগে আগে তারা হতাশ হয়ে ফিরে যান।
টুর্নামেন্টের নাম রাখা হয় ‘শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্মৃতি মিনি ডে নাইট ক্রিকেট টুর্নামেন্ট।’
গত ২১ ফেব্রুয়ারি টঙ্গীর মিলগেট অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলস্ স্কুল মাঠে শুরু হয় এই আয়োজন। ৫৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম সানি ও সিনিয়র সহসভাপতি পারভেজ ঢালি ছিলেন এর নেপথ্যে।
এক মাস চলার পর ২৫ মার্চ হয় ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ব্যানারে উল্লেখ করা হয় ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলকে। বিশেষ অতিথি করা হয় গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) ইলতুৎ মিশকে। তবে তারা কেউ সে আয়োজনে উপস্থিত হননি।
চাঁদাবাজির অভিযোগ
টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দলের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে ফি নেয়া হয়। প্রতি ম্যাচে দুই দলের কাছ থেকে ফি নেয়া হয় ৪০০ টাকা।
খেলাকে কেন্দ্র করে ওয়ার্ডের বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে স্পনসর দেখানো হয়। টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দলকে পুরস্কার হিসেবে মোটরসাইকেল এবং রানার্সআপ দলকে ফ্রিজ দেয়া হয়েছে।
এই আয়োজনে এলাকার ব্যবসায়ী, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন মার্কেটসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও চাঁদা দাবি করার অভিযোগ ওঠে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ধরন বুঝে চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। তবে সর্বনিম্ন চাঁদা ঠিক করা হয় ৫০০ টাকা।
মিলগেইট এলাকার ব্যবসায়ী আব্বাস উদ্দিন জানান, এক সপ্তাহ আগে ছাত্রলীগ নেতারা একটি দাওয়াত কার্ড দিয়ে যান। এরপর বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহিম সানি চাঁদার টাকা নিতে আসেন।
‘এ সময় বৃষ্টি নামে আমার এক আত্মীয় দোকানে ছিল। সে তাকে ৫০০ টাকা দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে গালাগাল করেন। খবর পেয়ে আমি দোকানে আসি। পরে এক হাজার টাকা দেই। কিন্তু টাকার পরিমাণ তাদের মনমতো না হওয়ায় ছাত্রলীগ নেতারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং টুর্নামেন্টের পর আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন’- বলেন আব্বাস উদ্দিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, রাজনৈতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠান সামনে রেখে চাঁদাবাজি করে থাকে, এটি নতুন কিছু নয়। তবে এ বছর ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ঘিরে যেভাবে চাঁদা আদায় করা হয়েছে, এর আগে কখনো এ রকম হয়নি।
টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী দল গাজীপুর ট্রান্সপোর্ট যুব সংঘের অধিনায়ক সোহেল আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গ্রুপ পর্ব থেকেই একের পর এক বিতর্ক জন্ম দিয়ে এসেছে আয়োজক কমিটি। ওয়াকওভার দেয়ার পর আবার ম্যাচ খেলানো, কোয়ার্টার ফাইনালে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বনাম গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন খেলার ফিক্সচার গঠন, কমিটির টিম অলিম্পিয়া হেরে যাওয়ার পরও তাদেরকে সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ দেয়াসহ একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়েছে আয়োজক কমিটি। এ জন্য স্বেচ্ছায় আমরা টুর্নামেন্ট বর্জন করেছি।’
শিল্পী ভাড়া এনে টাকা না দিয়ে লাপাত্তা
শুক্রবার টঙ্গীর অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলস্ স্কুল মাঠে হয় টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া করে আনা হয় শিল্পী ও মিউজিশিয়ানদের। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে শিল্পীদের পাওনা না মিটিয়ে আয়োজকরা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান।
ছাত্রলীগ নেতাদেরকে না পেয়ে ভুক্তভোগীরা বিষয়টি সমাধানের জন্য গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতির বাসভবনে যান। পরে তারা রাত ৪টা পর্যন্ত টঙ্গী পূর্ব থানার সামনে অপেক্ষা করেন।
ভুক্তভোগী নগর ব্যান্ডের প্রধান রবিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ২৩ হাজার টাকা চুক্তিতে মিউজিশিয়ান ও শিল্পীদের ভাড়া করে আয়োজক কমিটি। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে আয়োজকরা কাউকে কিছু না বলেই টাকা না দিয়ে চলে যান।
‘বিষয়টি নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমানের বাসভবনে বিচার দিতে গিয়েছিলাম। রাত ৪টা পর্যন্ত আমাদের মেয়ে শিল্পীগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। তারা (আয়োজক) আমাদের একটা টাকাও দিল না।’
অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করা মিতুয়া বলেন, ‘আমি মিরপুর থেকে এসেছি। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কথা রাত ১১টায়, কিন্তু হয়েছে ১২টা পর্যন্ত। অনুষ্ঠান শেষে আমাদেরকে বসতে বলে আয়োজক কমিটি চলে গেছে। একজন নারী শিল্পী হয়ে রাত ৩টায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। তারা আমাদের পারিশ্রমিক দেয়নি, অগ্রিম টাকাও দেয় নাই। এখন বাসায় যাওয়ারও অবস্থা নাই।’
ক্ষুব্ধ দলের নেতারাই
আহসানউল্লাহ মাস্টার ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের বাবা। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ৭ মে তাকে প্রকাশ্যে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। তিনি খুবই জনপ্রিয় নেতা ছিলেন, যাকে এখনও টঙ্গীবাসী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
সর্বজনশ্রদ্ধেয় নেতার নামে ক্রিকেট টুর্নামেন্টকে ঘিরে এতসব অভিযোগে ক্ষুব্ধ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাই।
৫৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা অরিজিনাল আওয়ামী লীগের লোক তাদের কাউকে বলে নাই। তাদের নিজেদের মতো করে আমাদের নাম দিয়ে দিছে, কিন্তু আমরা বিতর্ক করি নাই। কারণ, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের নামটা জড়িত এখানে। আমরা তার প্রতি দুর্বল। তবে তারা (আয়োজক) যে কাজটা করছে, এটা জঘন্য হয়েছে। চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে হুমকি দিয়েছে। শিল্পী ভাড়া এনে টাকা দেয়নি। এটা কোনো কথা হলো?’
একই ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ নীরব বলেন, ‘টুর্নামেন্টের বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। কার্ডে বিএনপি নেতাদের নাম ঠাঁই পেলেও ওয়ার্ডের বড় বড় আওয়ামী লীগ নেতার নাম নেই। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আমি বিষয়টি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মহোদয়কে জানাব।’
টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোশিউর রহমান সরকার বাবু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু স্ট্যাটাস দেখে আমি ৫৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম সানিকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিল। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার আমাদের আবেগ ও অনুভূতির জায়গা। উনার নামে টুর্নামেন্ট আয়োজন করে কেউ অপকর্ম করলে বরদাস্ত করা হবেনা। আমরা অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
অভিযোগ শুনেই ফোন কাটেন ছাত্রলীগ নেতা
অভিযোগের বিষয়ে জানতে টুর্নামেন্টের আয়োজক কমিটির সদস্য ৫৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম সানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সভাপতি টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনির হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। রাতে তো টাকা পরিশোধ করার কথা।’
তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের টাকা দেবে না কেন? ভিটাবাড়ি বিক্রি করে হলেও টাকা দিতে হবে। শিল্পীদের আমার কাছে পাঠান, ওদের বাড়ি বিক্রি করে হলেও আমি টাকা পরিশোধ করিয়ে দেব।’
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:নওগাঁর ধামইরহাটে রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল নামে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও তিনি আসলে তা নন, প্রতারণার স্বার্থে ভুয়া পরিচয় ধারণ করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার রুপনারায়নপুর গ্রাম থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন।
২৫ বছর বয়সী রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী ম্যানুয়েল তপন জানান, ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে তিনি (পিয়াল) তার কাছ থেকে ২৯ হাজার ৫৩৮ টাকা গ্রহণ করেন এবং আরও টাকা দাবি করলে স্থানীয় জনতা তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এরপর সংশ্লিষ্ট থানায় খবর দেয়া হয়। পরে থানা পুলিশ গিয়ে প্রতারক পিয়ালকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
তপন বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে আমার মতো এলাকার অন্য লোকজনের কাছেও বিভিন্ন ফন্দি এঁটে প্রতারণা করে আসছে এই প্রতারক।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ধামইরহাট থানার ওসি মো. বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘প্রতারক রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন। ইতোমধ্যে একজনের কাছে থেকে ২৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাও নিতেন তিনি।
‘এদিনও প্রতারণা করতে গেলে জনগণ তাকে আটক করে রাখে। এরপর পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ মামলা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মো. সুলতান নামে এক রোহিঙ্গা নাগরিকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিক এই হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১১৬ নম্বর ক্লাস্টার থেকে পুলিশ সুলতানের মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারের বাসিন্দা ছিলেন।
ভাসানচর থানার ওসি কাওসার আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি বলেন, সুলতান ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারে বসবাস করতেন। ১১৬ নম্বর ক্লাস্টারের খালি জায়গায় তিনি সবজি চাষ করতেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ছেলে তার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে বাবাকে দেখতে না পেয়ে তার ছেলে ওই ক্লাস্টারে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তার বাবার গলা কাটা মরতেজ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। এ সময় অন্য ক্লাস্টারের লোকজন এগিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
ওসি কাওসার আহমেদ জানান, পেছনের দিক থেকে গলা কেটে এই রোহিঙ্গা নাগরিককে হত্যা করা হয়। শুক্রবার সকালে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধরের অভিযোগে অপর প্রার্থী মো. লুৎফুল হাবিবকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান বৃহস্পাতবার অভিযুক্তকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ৮ মে অনুষ্ঠেয় নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাইসহ তিনজনকে অপহরণের সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এ ঘটনায় আপনি লুৎফুল হাবীবকে দায়ী করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে বর্ণিত বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এছাড়া সব জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচিত্র বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
উল্লেখিত প্রতিবেদন ও পত্রিকান্তে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণ হয়েছে। এরূপ ঘটনার জন্য কেন আপনার প্রার্থিতা বাতিল অথবা আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে বিষয়ে লিখিত জবাবসহ নির্বাচন কমিশনে ২২ এপ্রিল সোমবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর নাটোর জেলা নির্বাচন অফিসে গেলে দেলোয়ার হোসেনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে আহত অবস্থায় তাকে তার বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
ভুক্তভোগী প্রার্থীর পরিবার এ ঘটনার জন্য আরেক প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক। দেলোয়ার হোসেন মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে লুৎফুল হাবীব ছিলেন একক প্রার্থী।
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে টিউবওয়েল বসানোর জন্য স্থাপন করা পাইপে পানির পরিবর্তে উঠে আসছে এক ধরনের তরল। অনেকটা ডিজেলের মতো গন্ধযুক্ত এই তরল নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল।
উপজেলার ভোলামোড় এলাকায় এক বাড়িতে ঘটেছে এই ঘটনা। বাড়ির মালিক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘পানীয় জলের জন্য তিন বছর আগে এখানে মোটর বসানো হয়। এটি উপজেলা পরিষদ থেকেই বসানো হয়েছিল। কয়েক মাস থেকে মোটরটি দিয়ে পানি উঠছে না। কারণ জানার জন্য বুধবার সকালে মিস্ত্রি ডেকে আনা হয়।
‘মিস্ত্রি কাজ করার সময় মোটরের সঙ্গে যুক্ত পাইপ দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানির পরিবর্তে তেলের মতো এক ধরনের তরল উঠে আসে। তা দেখে মনে হয়েছে ডিজেলের মতো। বিষয়টি আমরা উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি, যাতে তারা এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন।’
স্থানীয় সংবাদকর্মী মনিরুল ইসলাম জানান, ফেসবুকে ঘটনাটি দেখার পর তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। এ সময় পাইপ দিয়ে উঠে আসা তরলে তিনি কাগজ চুবিয়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করলে তাতে আগুন ধরে যায়। তার প্রশ্ন- পানি হলে তো ভেজা কাগজে আগুন ধরতো না। তাহলে এই তরল কি খনিজ তেল?
এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা সরকার জানান, তিনিও বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর করবেন বলে জানান তিনি।
গাইবান্ধায় ভাঙারির দোকানে চুরি করা রেলপাত (রেললাইন) বিক্রির সময় এক অটোচালকসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এসময় দোকান মালিক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের ব্রিজ রোড এলাকার আশা ভাঙারি দোকানে সরকারি এসব রেলপাত বিক্রির সময় তাদের হাতেনাতে আটক করে গাইবান্ধার রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)।
এ সময় চুরি করে বিক্রি করতে নিয়ে আসা রেলপাত এবং সেসব পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত একটি অটোরিকশাও জব্দ করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- সদর উপজেলার পশ্চিম দুর্গাপুর এলাকার ৩০ বছর বয়সী সাগর মিয়া, ফুলছড়ি উপজেলার উত্তর কঞ্চিপাড়া এলাকার ৪০ বছর বয়সী ওয়াহেদ মিয়া ও আশা ভাঙারি দোকানের শ্রমিক সদর উপজেলার বালুয়া বাজারের পাকারখুটি এলাকার ৩৩ বছর বয়সী মোকলেছুর রহমান। এদের মধ্যে ওয়াহেদ মিয়ার অটোরিকশায় এসব মালামাল পরিবহন করা হয়েছিল।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বোনারপাড়া রেলওয়ে পুলিশের ওসি খাইরুল ইসলাম তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের ব্রিজ রোডের একটি ভাঙারির দোকানে সরকারি রেলপাত অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয়কালে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় দোকান মালিক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এ সময় তাদের কাছ থেকে খণ্ড খণ্ড তিন ফুট দৈর্ঘ্যের ৯ টুকরা রেললাইনের পাত উদ্ধার করা হয়, যা সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দেয়া হবে।’
রেলপাতগুলো বালাসিঘাটের পরিত্যক্ত রেলপথ থেকে খুলে আনা হয়েছে বলে জানান রেলওয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আটককৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পদ অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া এদের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
অপহরণের ৬ ঘণ্টার মধ্যে সিরাজগঞ্জ থেকে তামিম হোসেন নামের ৭ বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময় এ মামলার আসামি আল-আমিন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ভোরে বেলকুচি উপজেলার চন্দনগাতী গ্রাম থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে র্যাব ১২-এর একটি দল। বুধবার দুপুর তিনটার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার হানুরবাড়াদি গ্রাম থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।
অপহৃত তামিম হোসেন চুয়াডাঙ্গার হানুরবাড়াদি গ্রামের মো. সুন্নত আলীর ছেলে। অপরদিকে গ্রেপ্তার হওয়া ২৯ বছর বয়সী আল-আমিন কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানায় মেষতলী বাজারের বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব ১২-এর অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মারুফ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, অপহরণের পর শিশুটির বাবা সুন্নত আলী চুয়াডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি র্যাবকে জানালে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামির অবস্থান নির্ণয় করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, তামিমের বাবার সঙ্গে আল আমিনের দুই মাস আগে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়েই সুকৌশলে তামিমকে অপহরণ করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মুক্তিপণের জন্যই শিশুটিকে অপহরণ করা হয়েছিল।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হস্তান্তর করার আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
মন্তব্য