আবুল খায়ের খানের বাসা কিশোরগঞ্জের নগুয়ায়। সম্প্রতি ঢাকার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি গেছেন। গাজীপুরের কাপাসিয়া হয়ে বাইকের মাইল মিটারে দূরত্ব এসেছে ৯৮ কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার দূরত্ব আসে ৭ কিলোমিটার। এই হিসাবে এই রুটের দূরত্ব হয় ১০৫ কিলোমিটার।
গুগল ম্যাপে এই পথের দূরত্ব দেখাচ্ছে ১০৮ কিলোমিটার।
প্রাইভেট কারে নিয়মিত ভাড়ায় যাত্রী আনা-নেয়া করেন হারিছ উদ্দিন। এই পথের দূরত্ব কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাইটাল থেকে গাজীপুর হয়ে মহাখালীর দূরত্ব ১১০ কিলোমিটারের মতো। আর একরামপুর থেকে নরসিংদীর পাঁচদোনা হয়ে দূরত্ব হয় ১২৫ কিলোমিটারের মতো।’
কিন্তু সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিএ কাপাসিয়া হয়ে পথের দূরত্ব দেখিয়েছে ১৩০ কিলোমিটার আর এ কারণে ভ্রমণ না করেও বাড়তি ২০ বা ২২ কিলোমিটারের ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে বাসযাত্রীদের।
বিআরটিএ কীভাবে দূরত্ব মাপল, সেটি সংস্থাটির কিশোরগঞ্জের কর্মকর্তা কিছুই বলতে পারছেন না।
বাস ভাড়ায় নৈরাজ্য কেবল রাজধানীতে নয়, দূরপাল্লাতেও যে কম নয়, সেটির প্রমাণ হিসেবেই এই রুটটাকে ধরে নেয়া যায়।
ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে বেশ কয়েকটি পথে চলে বাস। এর মধ্যে একটি চলে গাজীপুরের কাপাসিয়া হয়ে। বিআরটিএ কেবল এই ২০ বা ২২ কিলোমিটারের বাড়তি ভাড়া আদায়ের সুযোগ করে দিচ্ছে তা নয়, তাদের নজরদারির অভাবে নির্ধারিত হারের চেয়েও বেশি হারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
বিআরটিএ ঠিক করে দিয়েছে দূরপাল্লায় প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হবে ১ টাকা ৮০ পয়সা। এই হিসাবে এই পথের ভাড়া হওয়ার কথা ছিল ২০০ টাকা (একটি সেতুর টোলসহ)।
বিআরটিএ আরও বলে দিয়েছে, যদি বাসগুলো যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক যাত্রার ব্যবস্থা করে আসন কমায়, তাহলে আনুপাতিক হারে ভাড়া বাড়াতে পারবে। এই নীতিমালার সুযোগ নিয়ে আসন না কমিয়েও বাড়তি হারে ভাড়া আদায় করছে বাস কোম্পানিগুলো।
যদি ১৩০ কিলোমিটারও দূরত্ব হয়, তাহলেও ভাড়া হয় ২৩৪ টাকা। সঙ্গে ৯০ টাকা টোল থাকায় যাত্রীপিছু আরও আড়াই টাকা আসায় ভাড়া হওয়ার কথা বড়জোর ২৩৭ টাকা। কিন্তু ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২৭০ টাকা।
বাড়তি আদায় করেও পরিবহনমালিকদের দাবি, তারা যাত্রীদের কথা ভেবে ২০ টাকা করে কম আদায় করছেন। এই বিস্ময়কর দাবির পেছনে অবশ্য কারণ কী, সেটার ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারছে না।
বিষয়টি নিয়ে বিআরটিএর সহকারী পরিচালক বখতিয়ার উদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘৫১ সিটের ভাড়া ৪০ জনের ওপর ধরলে জনপ্রতি কিছুটা বাড়ে।’
কিন্তু এই রুটে তো ৫২ আসনের বড় বাসগুলো চলে না। ৪০ থেকে ৪২টি আসনেই যাত্রীদের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাহলে আসন কমিয়ে ভাড়া বাড়ানোর যুক্তি তো খাটে না।
বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি, আগামী সমন্বয় মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এটাই একমাত্র রুট নয়
যাত্রীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক খানের তথ্য বলছে, কেবল এই রুট নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটেও বেশি দূরত্ব দেখিয়ে যাত্রীদের পকেট কাটার সুযোগ করে দিচ্ছে বিআরটিএ।
নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরাও দেখতে পাচ্ছি এ রকম অসংখ্য রাস্তায় কিলোমিটার চুরি করা হয়েছে। এ রকম অভিযোগ আমরাও অনেক পেয়েছি। এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বরাবর অভিযোগও করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি চট্টগ্রাম। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-কুমিল্লা এই সড়কগুলোতে আমি যাতায়াত করি। প্রতিটি পথে ঢাকার দূরত্ব বেশি লিখতে দেখেছি।
‘সায়দাবাদ থেকে চট্টগ্রাম ২৬৪ কিলোমিটার হিসাব করে ভাড়া নির্ধারণ করেছিল। আমরা হিসাব করে পেয়েছিলাম ২১০ কিলোমিটার। আমরা অভিযোগ করার পরে তারা ২০ কিলোমিটার কমিয়ে দিয়েছিল।’
গুগল ম্যাপে সায়েদাবাদ থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব দেখাচ্ছে ২৩৬ কিলোমিটার।
বাসমালিকের দাবি, ভাড়া কম নিচ্ছেন
জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক লেলিন রায়হান শুভ্র শাহিন বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, তারা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম আদায় করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিআরটিএ থেকে যে চার্ট পেয়েছি, সে অনুযায়ী প্রতিটি পরিবহনে যাত্রীপ্রতি ১৫-২০ টাকা কম নিচ্ছি।’
তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক পরিবহনশ্রমিক বলেন, ‘ডিজেলই বলেন আর গ্যাসই বলেন, দাম বাড়লে মালিকরা খুশি হয়।’
তিনি বলেন, ‘এ জেলার সকল মালিক ঐক্যবদ্ধ। তারা জানে সবাই মিলে যেই রকম বাসই চলতে দেয়, যাত্রীরাও এর বিকল্প না পেয়ে এগুলো দিয়েই চলাচল করবে। আপনি চাইলে ভালো মানের বাস এনে জেলায় চালাতে পারবেন না।
‘তারা (বাস মালিক সমিতি) যেকোনো সিস্টেমে আপনার পরিবহন বন্ধ করে দেবে। কারণ, একটা ভালো পরিবহন চললে তাদের লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো অচল হয়ে পড়বে।’
কিশোরগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ভাড়া কোথাও চলে না। এই ক্ষেত্রে আমাদের যাত্রীদের যে অধিকার, তা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। ’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাড়া তো বেশিই নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চালকেরা তাদের ইচ্ছামতো স্টপেজ দিয়ে যাত্রী তোলে। অভিযোগ থাকার পরেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি বাড়তি ভাড়া আদায় করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
জবাব নেই বিআরটিএ কর্মকর্তার
প্রকৃত দূরত্বের চেয়ে বেশি দূরত্ব দেখিয়ে বাসমালিকদের বেশি টাকা আদায়ের সুযোগ করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ কিশোরগঞ্জ জেলার সহকারী পরিচালক বখতিয়ার উদ্দিন কিছুই বলতে পারেননি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আন্তজেলা পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করে হেড অফিস। হেড অফিস থেকে ভাড়া নির্ধারণ করে ওয়েবসাইটে দিয়ে দিয়েছে। ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমার কিছুই করার নাই।’
পরে আরও প্রশ্নের মুখে বখতিয়ার বলেন, ‘দূরত্বের ব্যাপারে সঠিক তথ্য পাবেন সড়ক ও জনপথ বিভাগে।
সেখানে গিয়ে কথা হয় সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক রোড রয়েছে। কোন পথে দূরত্ব কত সেটা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।’
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে ভাড়া নির্ধারণ কমিটি আছে, তার ১৩ সদস্যের মধ্যে ১২ জনই বাসমালিক, শ্রমিক। একজন আছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি। তারা বাস ভাড়া নিয়ে কোনো কাজ করেন না।
এই কর্মকর্তাও জানান, দূরত্বের হিসাব তারা জেলা থেকে নেন না। ভাড়া নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে হেড অফিস থেকে হিসাব নিয়ে তারা চূড়ান্ত তালিকা করেন।
‘মালিক-প্রশাসন আঁতাত’
যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সব সময় অভিযোগ করে আসছি, দূরত্ব নির্ধারণ সব সময় আঁতাতের মধ্য দিয়ে হয়। কর্মকর্তারা বাসমালিকদের সুযোগ করে দিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেন।’
তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে ভাড়া নির্ধারণ কমিটি আছে, তার ১৩ সদস্যের মধ্যে ১২ জনই বাসমালিক, শ্রমিক। একজন আছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি। তারা বাস ভাড়া নিয়ে কোনো কাজ করেন না।
‘আমরা যারা নিবন্ধিত যাত্রী সংগঠন আছি, আমরা এই জায়গাটাতে বারগেইনিংয়ের সুযোগ চাইলেও দেয়া হয় না।’
যন্ত্রণা দেয় বাসের আসন
মিঠামইন উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন মহাখালী টার্মিনাল থেকে টিকিট নিয়ে অনন্যা পরিবহনে এসে নামেন গাইটাল বাসস্ট্যান্ডে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাই জানডা শেষ। দাঁড়ান একটু টানাটুনা দিয়া লই। লক্কড়-ঝক্কড় বাসে বইয়া থাইক্যে শরীরের বারোটা বাইজ্যে গেছে গা।’
কী সমস্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিটের ওপরে ফ্যান আছে ঠিহই, সারা রাস্তাত একবার আর চলতে দেখলাম না। চালানির কথা কইছিলাম, হেলপারে কয় মামা গতকালকেও ঠিক আছিন। আজকে সকালে নষ্ট হইছে। যাত্রীডি নামাইয়া গিয়া আগে ফ্যান ঠিক করমু।’
আবদুল্লাহপুরের পর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত পুরোটা রাস্তায় কী পরিমাণ ধুলাবালি এসে শরীরে পড়েছে তার কোনো হিসাব নেই। আপনি ইচ্ছে করলেই জানালা বন্ধ করবেন সেই সুযোগও নাই। কারণ এইসব পরিবহনের বেশির ভাগেরই জানালা নষ্ট।
তোফাজ্জলের পেছনেই ছিলেন নান্দাইল মুসুল্লী এলাকার বাসিন্দা রিমন আহাম্মেদ। তিনি নিজে থেকেই বলেন, ‘ভাই এগুলো জিজ্ঞেস করে কোনো লাভ নাই। এই পরিবহনে যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন কেবল তারাই জানেন কী পরিমাণ ভোগান্তি যে পোহাতে হয়!’
তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহপুরের পর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত পুরোটা রাস্তায় কী পরিমাণ ধুলাবালি এসে শরীরে পড়েছে তার কোনো হিসাব নেই। আপনি ইচ্ছে করলেই জানালা বন্ধ করবেন সেই সুযোগও নাই। কারণ এইসব পরিবহনের বেশির ভাগেরই জানালা নষ্ট।’
মাথায় হাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দেখেন মাথার চুল জট বেঁধে গেছে। কাপড়চোপড়ের কথা নাইবা বললাম।’
তাদের সঙ্গে কথা শেষ করতেই এগিয়ে আসেন আরেক যাত্রী। তিনি ক্ষুব্ধ। কারণ হিসেবে বলেন, ‘এমন সাংবাদিক কত আইল আর গেল। টেলিভিশন আর পত্রিকায় রিপোর্টও করল, কিন্তু পরিবহন সেবার মান তো আর উন্নত হইলো না।
‘এরা (পরিবহনমালিক) এই জিনিসটা খুব ভালো করেই জানে, মিডিয়াতে নিউজ হইলে দুই-এক দিন একটু-আধটু আলোচনা/সমালোচনা হবে, তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।’
ছারপোকাও কামড়ায়। যাদের অ্যালার্জি আছে তারা এই বাসে পাঁচ ঘণ্টা জার্নি করলে বাসায় গিয়ে আরও পাঁচ ঘণ্টা চুলকাবে এইটুকু আমি নিশ্চিত।
ইটনা উপজেলার ছিলনী গ্রামের বাসিন্দা হাসিব রহমান বলেন, ‘এই বাসের সিটগুলো এত কাছাকাছি যে হাঁটু নাড়াচাড়াও করা যায় না। আবার দূরত্বের পরিমাণে ভাড়াও নেয় বেশি।
‘তা ছাড়া ছারপোকাও কামড়ায়। যাদের অ্যালার্জি আছে তারা এই বাসে পাঁচ ঘণ্টা জার্নি করলে বাসায় গিয়ে আরও পাঁচ ঘণ্টা চুলকাবে এইটুকু আমি নিশ্চিত।’
বাসে অতিরিক্ত আসন, যাত্রীদের চলাচলে ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে গতানুগতিক জবাব আসে তার কাছে। বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন বাসগুলো বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সব রুটেই বাড়তি ভাড়া
ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে বাস চলে নানা দিক দিয়ে। একরামপুর, বত্রিশ ও গাইটাল বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাড়ে বাসগুলো। একটি রুট গাজীপুরের কাপাসিয়া দিয়ে জয়দেবপুর চৌরাস্তা হয়ে; একটি নরসিংদীর পাঁচদোনা হয়ে, একটি ভৈরব-নরসিংদী হয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত।
একরামপুর ও গাইটাল থেকে নরসিংদী হয়ে যেসব গাড়ি চলে, সেগুলোর দূরত্ব ১২০ থেকে ১২৫ কিলোমিটার। আর ভৈরব হয়ে চলা পথ ঢাকার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত গুগল ম্যাপে ১৩৫ টাকা, বিআরটিএর রুটে ১৪০ কিলোমিটার।
কিন্তু গাইটাল বাসস্ট্যান্ডে ভৈরব হয়ে ঢাকায় চলা যাতায়াত পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আনিসুজ্জামান রিপন দাবি করেন, ‘কিশোরগঞ্জ থেকে সায়েদাবাদের দূরত্ব ১৫৩ কিলোমিটার।’
একরামপুর থেকে মহাখালী পর্যন্ত চলা উজান-ভাটি আর গাইটাল থেকে মহাখালী পর্যন্ত চলা অনন্যা ও অনন্যা ক্লাসিক ভাড়া নেয় ২৭০ টাকা। আর গাইটাল বাসস্ট্যান্ড থেকে ভৈরব হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত চলা যাতায়াত পরিবহনের (গেইটলক) ভাড়া নেয়া হয় ৩০০ টাকা। যাতায়াত পরিবহন (লোকাল) ২৫০ টাকা।
করিমগঞ্জ উপজেলার চামড়াবন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি পর্যন্ত চলে দুটি পরিবহন। একটি ভাটিবাংলা পরিবহন, অন্যটির নাম হাওরবিলাস। এই বাসগুলোতে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৩০০ টাকা।
শাহপরান পরিবহন নামের একটি বাস যায় মিরপুর-১৪ নম্বরে। এস ইসলাম নামের একটি বাস চলে কামরাঙ্গীরচরে। যোগাযোগ নামের আরেকটি বাস চলে চাঁনখারপুলে। এগুলো ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে। প্রতিটি বাসেই অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর এর কারণ কৌশলে বাড়তি দূরত্ব দেখানো।
আরও পড়ুন:কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাসেম আলী (৩৫) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২২ জুন) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ গোড়ের পাড়া গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত হাসেম আলী দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোবরগাড়া গ্রামের মৃত আছান শেখের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন একটি ভবনে ইট ভেজাতে গিয়ে বৈদ্যুতিক মোটরে কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন হাসেম আলী। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) এক ছাত্রীকে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মোখলেসুর রহমানকে প্রধান করে শনিবার এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো সাইফুল ইসলাম এবং ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ও টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক বেলাল শিকদার।
এসব তথ্য জানিয়ে শাবি প্রক্টর মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। নির্ধারিত সময়ে রিপোর্ট দেবো। এর সাথে আরও কেউ জড়িত কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। যাদেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরআগে শুক্রবার বিকেলে ওই ছাত্রী বাদি হয়ে সিলেটের কতোয়ালি থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থ’র নাম উল্লেখ করে অজ্ঞতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
আদনান ও পার্থকে বৃহস্পতিবার রাতেই আটক করে পুলিশ। পরে মামলায় তদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তারা দু'জনই শাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার শান্ত তারা আদনান নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমানের অনুসারী ছিলেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসীূচতে তাকে দেখা গেছে। আদনান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যান্ড দল ‘নোঙর’-এরও সদস্য ছিলেন।
অপরদিকে, ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক শিক্ষার্থী স্বাগত দাস পার্থ গত বছরের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী। তার ফেসবুকে প্রোফইলেও জুলাই আন্দোলনের সমর্থনে ছবি যুক্ত রয়েছে। তবে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, পার্থ ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তবে তিনি তেমন সক্রিয় ছিলেন না।
এদিকে, পার্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যসংগঠন ‘দৃক থিয়েটার’-এর কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ এবং বিশ্ববিদ্যালের শৃঙ্খলা-বডি সূত্রে জানা যায়- গত ২ মে সন্ধ্যারাতে সহপাঠী শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থের সঙ্গে শহরের কনসার্টে যাচ্ছিলেন ওই ছাত্রী। কনসার্টে যাওয়ার পূর্বে তারা ওই ছাত্রীকে সুরমা এলাকার একটি মেসে নিয়ে যান। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অচেতন করে ধর্ষণ করেন আদনান এবং পার্থ। একইসাথে এই ঘটনার ভিডিও এবং মেয়েটির নগ্ন ছবি ধারণ করেন। পরে ওইসকল ভিডিও ও নগ্ন ছবি দেখিয়ে আদনান এবং পার্থ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিয়মিত ব্ল্যাকমেইল করছিলেন এবং ঘটনা জানাজানি করলে ভিডিও ও ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করলে প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ আদনান এবং পার্থকে আটক করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন। এরপর প্রক্টরের সঙ্গে আলোচনা শেষে তাদেরকে থানায় পুলিশ হেফাজতে নেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান বলেন, 'বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী শ্লীলতাহানির বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি আমরা। বর্তমানে অপরাধীরা পুলিশ হেফাজতে আছে এবং মামলার বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান।'
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, 'প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হচ্ছে।'
র্যাবের অভিযানে ০৫ টি ডাকাতি, ০২ টি অস্ত্র আইনের মামলাসহ মোট ০৯ টি মামলার আসামী জলিল ডাকাতকে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ হতে গ্রেফতার করেছে সিপিসি-১, র্যাব-৮ এবং সিপিএসসি, র্যাব-৬, খুলনার যৌথ আভিযানিক দল।
র্যাব-৮, সিপিসি-১ (পটুয়াখালী) এবং র্যাব-৬, সিপিএসসি (খুলনা) এর যৌথ গোয়েন্দা ও অভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২১ জুন ২০২৫ ইং তারিখ বিকেল আনুমানিক ১৭৪৫ ঘটিকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানায় সংঘটিত চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস ডাকাতি মামলার মূল হোতা মোঃ আঃ জলিল খাঁন (৪০), পিতা- আলী আকবর খাঁন, সাং-হোসনাবাদ, থানা- বেতাগী, জেলা- বরগুনা’কে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ভুক্তভোগী মোঃ গিয়াস উদ্দিন একজন প্রবাসী, যিনি সৌদি আরব থেকে ৯ জানুয়ারি ২০২৫ ইং দেশে ফেরেন। গত ৮ এপ্রিল ২০২৫ ইং তারিখ গভীর রাতে, আনুমানিক ০৩:০০ ঘটিকায় তার মঠবাড়িয়া থানাধীন বাড়িতে একদল সশস্ত্র ডাকাত হামলা চালায়। ১০-১২ জনের এই ডাকাত দল বাড়ির গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। তারা ঘরের মালামাল ভাংচুর করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে নগদ অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতরা ওই সময় ঘর থেকে প্রায় ৩,৫০,০০০ (তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা নগদ, ২৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ২টি স্মার্টফোন এবং ১টি ল্যাপটপসহ মোট আনুমানিক ৪৫,২০,০০০ (পঁয়তাল্লিশ লক্ষ বিশ হাজার) টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মঠবাড়িয়া থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়। ঘটনার পরপরই র্যাব গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায়, ২১ জুন ২০২৫ তারিখ বিকালে পরিচালিত অভিযানে মোঃ আঃ জলিল খাঁনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব। তাকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
কৃষকের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। কিন্তু নানা কারণে এ খেলাটি দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে শুকনো মৌসুমে শেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয়ে থাকে এ খেলা। শেরপুর সদরের চরশেরপুর নাগপাড়ায় মই দৌড় খেলার আনন্দে মেতে উঠে কৃষক সহ সাধারণ মানুষ।
শেরপুর জেলার কৃষকদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ষাড়ের মই দৌড় খেলা। শুকনো মৌসুমে মাঝে মাঝেই জেলার বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। যেখানেই আয়োজন করা হয় এ মই দৌড় খেলা, সেখানেই হাজির হয় হাজার হাজার বয়স্ক, যুবক শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খেলাকে অনেকেই এখনো দেখেই নি। নতুন করে এ খেলা দেখে তারা খুব আনন্দ পেয়ে থাকে। যে এলাকায়ই ষাড়ের মই দৌড় খেলা অনুষ্ঠিত হয় সেখানেই উৎসবের আমেজ বয়ে যায়। ১৯ জানুয়ারি এমনই এক খেলার আয়োজন করে উৎসবে মেতে উঠে শেরপুর সদরের চরশেরপুর নাগপাড়া এলাকার মানুষ।
একটি মইয়ে ৪টি ষাড় গরু থাকে। আর এরকম দুটি করে মই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। অনেক সময় নির্ধারিত দাগের বাইরে চলে যায় ষাড়ের মই। এতে আউট ধরা হয় ওই মইকে। এখানে থাকে দুজন মইয়াল। আরো থাকে ৩ জন ধরাল। রেফারীরর বাশিঁ ফুকানোর সঙ্গে সঙ্গেই মইগুলোর ষাড়েরা দৌড়ানো শুরু করে। যে মই বিজয়ী হয় তখন তারা মেতে ওঠে আনন্দে। আর চারদিকে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশুর উল্লাস ধ্বনিতে মূখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এ খেলা দেখাতে পেরে ময়ালরাও অনেক খুশি।
গ্রামবাংলার ষাড়ের দৌড় খেলা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে জানান দিতে নাগপাড়ায় প্রথমবারের মতে এ খেলার আয়োজন করা হয়। স্থানীয়দের আগ্রহের কারণে পরবর্তীতেও আয়োজন করা হবে ঐতিহ্যবাহী ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা। এমনটাই জানালেন আয়োজকরা।
বিভিন্ন স্থান থেকে ৮টি মই দৌড় দল এ খেলায় অংশ গ্রহণ করে। এতে জামালপুর জেলা ইসলামপুরের চন্দনপুরের হাবু বেপারি চ্যাম্পিয়ন হয়।
খেলাশেষে বিজয়ী ও বিজিতদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করবে ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী। সফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সোহানুর রহমান সাইম, শিক্ষক আসমত আলীসহ আরো অনেকে।
আয়োজক আসমত আলী বলেন, ‘এ খেলার প্রতি কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের আগ্রহ আছে, তাই আমরা প্রতিবছর এ খেলার আয়োজন করব।’
সীমান্তের ওপারে ভারতের ভেতরে সিলেটের এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উৎমাছড়া সীমান্তের ওপারে জাকারিয়া আহমদ (২৩) নামের ওই যুবকের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে বলে খবর পান পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি বিজিবি ও পুলিশকে জানিয়েছে পরিবার।
নিহত জাকারিয়া (২৩) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার লামারগ্রাম কামালবস্তির আলাউদ্দিন আলাইয়ের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোরে জাকারিয়া বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১২৫৭ নম্বর মেইন পিলারের ২০ নম্বর ছাফ পিলারের নিকটবর্তী ভারতের অভ্যন্তরে একটি গাছের ডালে দড়িতে ঝুলন্ত একটি মরদেহ দেখা গেছে। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর নিহত ব্যক্তির পরিবার মরদেহটি জাকারিয়ার বলে শনাক্ত করে।
তার পরিবারের সদস্যরা জানান, গত সোমবার একই ইউনিয়নের কাকরাইল গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে জাকারিয়ার বিয়ে হয়েছিল।
সিলেট কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ জানান, ‘সীমান্তের পিলারের ওপারে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। লাশ উদ্ধারের জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)র উৎমাছড়া ক্যাম্পের কমান্ডারের সাথে আলাপ হয়েছে। নিহতের পরিবার থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হলে পরবর্তীতে বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা গিয়ে লাশ উদ্ধার করতে পারবে। যেহেতু সীমান্তের ওপারে তাই কিছু আইনি জটিলতার জন্য লাশ উদ্ধারে বিলম্ব হচ্ছে।’
এদিকে , বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উৎমা বিওপি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) সমন্বয়ে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি।
কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ফেনীর ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর একটি স্থানে বাঁধ ভেঙে লোকালয় পানি ঢুকেছে । এতে চার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ২০২৪ এর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার বছর না পেরোতেই আবারও বাঁধ ভাঙনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দায়সারা কাজকে দুষছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জনগণ বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারের দায়সারা সংস্কার ও মেরামতের কারণে এখানকার জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দিবাগত রাত ১০টার দিকে এ ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত ১০টার দিকে ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর বরইয়া বণিকপাড়া সহদেব বৈদ্যের বাড়ি-সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধের একটি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনগণ প্রাণপণ চেষ্টা করেও এ ভাঙ্গন ঠেকাতে পারেনি।
এতে উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বণিকপাড়া, বসন্তপুর এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যা থেকে ফুলগাজী তরকারি বাজার-সংলগ্ন স্থানে মুহুরী নদীর পানি প্রবেশ করে বাজারের একটি অংশ প্লাবিত হয়েছে। আজ শুক্রবার বৃষ্টি না
হাওয়ায় ফুলগাজী বাজার থেকে পানি নেমে গেছে।
প্রতি বছর দায়সারা বাঁধ মেরামত ও নদী সংস্কার না করার কারনে স্থানীয় এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডেকে এজন্য দায়ী করছেন। এখানকার জনগণ প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানিতে প্লাবিত হওয়ার কারণে কোন ত্রাণ নয়, তারা চায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার ফেনীর ফুলগাজী বাজার ও ভাঙ্গন স্থান পরিদর্শন করেছেন। তিনি স্থানীয় জনগণকে আতঙ্কিত না হয় সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় ফেনীতে নদীর পানি বাড়ছে। তবে মুহুরী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। বাঁধের ভাঙ্গন স্থল রক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের নিরাপত্তায় আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
বরগুনার আমতলী উপজেলার আমড়াগাছিয়া নামক স্থানে সোয়া ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গুলিশাখালী খালের ওপরে নির্মিত সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। মই বেয়ে ওঠতে হয় সেতুতে। যা রীতিমতো ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী, কুকুয়া ও চাওড়া এই তিন ইউনিয়নের সংযোগস্থল আমড়াগাছিয়া বাজারের পশ্চিমপাশে গুলিশাখালী খালের ওপর ৬৬ মিটার দৈর্ঘ্য ৬.৭৭ মিটার প্রস্থের এই গার্ডার সেতু ৬ কোটি ২২ লাখ ৫৮ হাজার ৩২৩ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের চুক্তি করে বরগুনা এলজিইডি। কাজটি পায় বরিশালের মেসার্স কহিনুর এন্টার প্রাইজ অ্যান্ড ত্রিপুরা জেভি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালের ১৯ মে কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জুনে নির্ধারিত সময়ের আগেই মূল সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন। কিন্ত বিপত্তি দেখা দেয় সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে। সেতুর পশ্চিম পাশের সেতুর ঢালের ৫ ফুটের মাথায় রয়েছে পূর্ব খেকুয়ানি গ্রামের চলাচলের জন্য সড়ক। সেতুর ডিজাইন এবং উচ্চতা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলে এই সড়কটি বন্ধ হয়ে যাবে এ নিয়ে দেখা দেয় বিপত্তি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেতু নির্মাণের ১১ মাস ধরে সংযোগ সড়ক ছাড়া এভাবে পরে আছে। এতে তিন ইউনিয়নের ২০ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পড়েছে ভোগান্তিতে। যাতায়াতের জন্য স্থানীয়রা সেতুর পশ্চিম পারে কাঠ ও বাঁশের মই বানিয়ে কোনো রকমে যাতায়াতের উপযোগী করে চলাচল করছে। এই মই বেয়ে বয়স্ক ও শিশুরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। কোনো ধরনের যানবাহন সেতুতে ওঠতে না পারায় পণ্য পরিবহনে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। পণ্য পরিবহন করতে দশ কি. মি. ঘুরে মহিষকাটা সেতু পাড় হয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এতে ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতুটি গুলিশাখালী, চাওড়া ও কুকুয়া এই তিন ইউনিয়নের সংযোগস্থল । এই সেতু পার হয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়নের পূর্ব খেকুয়ানী, গুলিশাখালী, ডালাচারা, বাইবুনিয়া, কলাগাছিয়া গ্রামের শত শত মানুষ আমতলী সদর, বরিশাল, ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচল করে। চাওড়া ও কুকুয়া ইউনিয়নের মানুষও এই সেতু পার হয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়নে যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় আমাদের চলাচলে অনেক কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন, রোগী আনা-নেওয়ায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। মরদেহ আনা-নেওয়ায়ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দ্রুতই সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে যাতায়াতের সুব্যবস্থার দাবি করছেন এলাকাবাসী । ঠিকাদার মো. কাওছার মিয়া বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করেছি। সংযোগ সড়কের জন্য আলাদা দরপত্র হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে তারাই কাজ করবে। এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, সেতুর উচ্চতা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক তৈরি করতে গেলে পাশের একটি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণে বিকল্প হিসেবে সেখানে আন্ডারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে যাতে মূল সড়কটি ঠিক থাকে। এতে ব্যয় কিছুটা বাড়বে। এ লক্ষ্যে নতুন করে নকশা ও বাজেট তৈরি করে প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলেই দরপত্র আহ্বান করে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
মন্তব্য