নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূলধারায় অংশগ্রহণ করাতে পারলে নারীরাই অর্থনীতির চালিকাশক্তি হবে বলে মনে করেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের বোর্ড অফ ট্রাস্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান আঞ্জুমান আরা শহীদ।
ইভোলিউশন থ্রি সিক্সটি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রজেক্ট চেঞ্জমেকারের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এই আয়োজনের স্লোগান ছিল, ‘এসো বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখি, নারী সহিংসতা রোধ করি’।
শুক্রবার রাজধানীর প্রগতি সরণির কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান হয়। এ আয়োজনের অফিশিয়াল ক্লাব পার্টনার ছিল সিইউবি ইংলিশ ক্লাব।
আঞ্জুমান আরা শহীদ বলেন, “আমরা যদি নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধ করতে পারি, এই বছরের নারী দিবসের স্লোগান ‘ব্রেক দ্য বায়াস’কে অনুসরণ করে নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূলধারায় অংশগ্রহণ করাতে পারি, তাহলে নারীরাই ‘ড্রাইভারস অফ দ্য ইকোনমি’ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।”
তিনি বলেন, ‘চেঞ্জমেকার বলতে আমরা বুঝি আমাদের যুব সমাজকে যারা আজকের এবং আগামীর সমাজকে আশানুরূপভাবে পরিবর্তন করতে পারবে; এমন একটি পৃথিবী সৃষ্টি করা যেখানে নারী-পুরুষ সমঅধিকার থাকবে।’
জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে বিশ্বব্যাপী পরিচয় পাওয়া ১৬ বছরের সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তাকে নিউ ফেস অফ ক্লাইমেট অ্যাক্টিভিজম বলা হচ্ছে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা যারা ছাত্র বয়স কম, যারা ভাবছ এখনও করার কিছু হয়নি, ব্যাপারটা সে রকম না। কেউ যদি চায় সে সমাজের জন্য, দেশের জন্য, সমগ্র বিশ্বের জন্য করবে, সে ১৬ বছর বয়সেই অনেক কিছু করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ টেনে আঞ্জুমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন মারা গেলেন, তখন উনি দুই সন্তানের জননী, একজন সাধারণ গৃহিণী ছিলেন। উনি কখনই ভাবেননি ওনার বাবা ও বড় দুই ভাই মারা যাবেন, এই দেশের জন্য তাকে কিছু করতে হবে। যখন সময় হয়েছে, তখন তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।’
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির বোর্ড অফ ট্রাস্টির সিনিয়র অ্যাডভাইজার অধ্যাপক এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সহিংসতা যদি না থাকত, তাহলে এই অনুষ্ঠান করার প্রয়োজন ছিল না। নারীরা মায়ের জাতি, তাদের সম্মান করা আমাদের দায়িত্ব।’
নারীরা যে কত চাপ সহ্য করে, তা সবাই বোঝে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানসিকতা ঠিক না হলে সহিংসতা কখনও দূর হবে না।’
শুধু নারীর প্রতি নয়, সবার প্রতি সহনশীল হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন জহিরুল।
নারীরা দিনে ১৮ ঘণ্টায় ৪৫ ধরনের কাজ করে জানিয়ে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাহেদ হাসান বলেন, ‘সেই স্বীকৃতি রাষ্ট্রীয়ভাবে পায় না, পরিবারও স্বীকৃতি দেয় না। আমাদের জিডিপিতে তাদের অবদান অন্তর্ভুক্ত না।’
উইমেন ইন্সপায়ার হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউটিউব কনটেন্ট ক্রিয়েটর কামরুন নাহার ডানা।
২০১৬ সালে গঠিত হওয়া ‘ইভোলিউশন থি সিক্সটি’ সংগঠনটি মূলত যুব সমাজের উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনিকা সুবাহা আহমেদ উপমা বর্তমানে কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ বিভাগের প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সারা দেশে প্রায় ৫০০-এর বেশি স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন সংগঠনটির, যারা মূলত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি ফাইভ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি হত্যায় ব্যবহার করা মোটরসাইকেল, অস্ত্র ও গুলিসহ আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মোটরসাইকেলের চালক শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম, তৌফিক হাসান ওরফে বাবু, সুমন হোসেন, এহতেশাম উদ্দিন চৌধুরী অপু ও শরিফুল ইসলাম হৃদয়।
ডিএমপির ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘মামলাটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছে থেকে নম্বরবিহীন মোটরসাইকেল, দুটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। তারা স্বীকার করেছেন এই মোটরসাইকেল ও অস্ত্র হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে।’
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা প্রথমেই মূল শুটার আকাশকে গ্রেপ্তার করেছি। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ একে একে অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।’
মামলাটিতে এই পাঁচজনসহ মোট ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান ডিবিপ্রধান।
মোল্লা শামীম বেনাপোল হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলেও জানান তিনি। তাকে বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হত্যার নির্দেশদাতা জিসান ও মানিক, পরিকল্পনায় মূসা
ডিবিপ্রধান হারুর অর রশীদ দাবি করেন, টিপু হত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও মানিক। সেটি বাস্তবায়নে পরিকল্পনা করেন মূসা।
তিনি বলেন, ‘বোচা বাবু হত্যার পর টিপুর সঙ্গে মূসার একটা দ্বন্দ্ব ছিল। সেই দ্বন্দ্ব থেকেই মূসা এই হত্যাকাণ্ড ঘটনার পরিকল্পনা করে। সে পরিকলাপনা করে শামীমকে দায়িত্ব দেয়। আমরা মূসাকে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় এরই মধ্যে ওমান থেকে দেশে এনেছি। তার উদ্দেশ্য ছিল টিপুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া। জিসান ও মানিক বিদেশ বসে এই হত্যার সঙ্গে যোগ দিয়ে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চেয়েছে। তারা মূলত জানান দিতে চেয়েছে যে, তারা এখনও রয়েছে।’
হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান তিনি।
উদ্ধার অস্ত্র টিপু হত্যায় ব্যবহার হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আকাশ বলেছে, যে অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেটিই আমরা উদ্ধার করেছি। আমরা এই হত্যার ঘটনায় দ্রুততার সঙ্গে জিসান ও মানিককে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।’
ডিএমপির ডিবির মতিঝিল বিভাগ মামলাটি তদন্ত করছে।
গত ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম টিপু এজিবি কলোনি থেকে গাড়িতে বাসায় ফেরার সময় গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
সে সময় গাড়ির পাশে থাকা রিকশা আরোহী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি গুলিবিদ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ডিবিপ্রধান জানান, মোল্লা শামীমের দেয়া তথ্যে তৌফিক হাসান ওরফে বাবু ওরফে বিডি বাবু, সুমন হোসেন ও এহেতেশাম উদ্দিন চৌধুরী ওরফে অপুকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের দেয়া তথ্যে দক্ষিণ গোড়ান থেকে শরিফুল ইসলাম ওরফে হৃদয়কে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি বিদেশি পিস্তল, আট রাউন্ড গুলি, তিনটি ম্যাগাজিনসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
বাবুর দেয়া তথ্যে পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি দক্ষিণ গোড়ান থেকে জব্দ করা হয়।
আরও পড়ুন:উত্তরায় বক্স গার্ডার দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় দায় নিতে নারাজ এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে। জনসাধারণের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর এ কাজ আবার শুরু হবে। এ বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে।
নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি না করেই ভারী যন্ত্র সরানোর সময় সেটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে যাওয়ার ঘটনায় স্পষ্টতই অবহেলা ছিল কর্মীদের। এর আগেও এই প্রকল্পে একই ধরনের দুর্ঘটনার পরও সেখানে এই হেলাফেলা বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারার মধ্যে বিআরটির এমডি বলেছেন, তদন্ত কমিটিই ঠিক করবে দায় কার।
সোমবার ঢাকার উত্তরায় প্রাণঘাতী এই দুর্ঘটনার পরই জনক্ষোভের মধ্যে এই ঘটনায় প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তদন্তের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারপ্রধান যাদের তদন্তের আওতায় আনার কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে আছেন বিআরটির প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলামও।
এখন নিরাপত্তায় জোর
বিআরটি এমডি জানান, প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
কেন এই নির্দেশ- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে তিনি প্রকল্পের সেফটি এনশিওর (নিরাপত্তা নিশ্চিত) করে তারপর কাজ করার কথা বলেছেন। আমরাও চাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। আমাদের যে যে জায়গায় ইমপ্রুভ (উন্নতি) করতে হবে, সেগুলো ঠিক করতে হবে। কীভাবে নিরাপত্তা এনশিওর করব সেগুলো নিয়ে বৃহস্পতিবার মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করব।’
দায় কার জানেন না এমডি
বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া কাজ করা ঠিকাদারি কোম্পানির অবহেলার প্রমাণ। তিনি এও মনে করেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চর্চা মেনে কাজ করানো নিশ্চিত করা এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও তদারকি সংস্থার দায়িত্ব। কারণ এই কাজে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের একটি বড় অংশ ধরা থাকে। কিন্তু বাজেটের পর অবহেলাগুলো এই প্রকল্পে স্পষ্ট।
তবে বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রধান হয়েও সফিকুল এই ঘটনায় নিজেদের কোনো দায় নিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি সুপারিশ করবে কার দায়। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নির্মাণকাজের সময় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত না করে রাজধানীতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের কাজ কেন চলছিল তার কোনো উত্তর অবশ্য নেই বিআরটি এমডির কাছে।
আবার যে ক্রেনটি দুর্ঘটনা ঘটায়, সেটির এত ওজনের বক্স গার্ডার তোলার সক্ষমতা ছিল কি না, যার সেটি অপারেট করার কথা, তিনিই সেটি চালাচ্ছিলেন নাকি অন্য কেউ চালাচ্ছিলেন, সেই প্রশ্নের জবাবও মিলছে না। দুর্ঘটনার পর ক্রেনের চালক পালিয়ে যান এবং তাকে এখনও ধরা যায়নি।
দুর্ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার নিউজবাংলার মুখোমুখি হয়ে বিআরটি এমডি বলেন, ‘এটা যে কী কারণে হলো। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তারা প্রতিবেদন দিলেই জানা যাবে৷ একটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তবে কমিটি আরও ইনডিটেইল কাজ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবেন।’
প্রাথমিক তদন্তে দোষী ঠিকাদার
এই দুর্ঘটনার তদন্তে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটি এরই মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সড়ক পরিবহন সচিবের কাছে। এতে দায়ী করা হয়েছে ঠিকাদারি কোম্পানিকে।
বিআরটি প্রকল্প নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিযুক্ত রয়েছে চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি)।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকালের (সোমবার) ঘটনার মূল দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। তারা কাউকে না জানিয়ে কাজ করছিল অথচ গতকাল কাজ বন্ধ থাকার কথা।
‘তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, এ ধরনের ব্যাপার ঘটলে তাদের যে দায়, সেই রকম ব্যবস্থাই তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে। এ নিয়ে বিশদভাবে বসবে মন্ত্রণালয়। আরও কারো কোনো দায় আছে কি না, তা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালি প্রমাণিত হলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- এমন প্রশ্নে সফিকুল বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ঠিকাদার কোম্পানির সঙ্গে যে কন্ট্রাক্ট আছে সেই চুক্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
‘বিআরটি গলার কাঁটা’
এর মধ্যেই বিআরটি প্রকল্পটিকে ‘গলার কাঁটা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ঢাকার তেজগাঁও সড়ক ভবনে গেল বছরের ২২ আগস্ট সাসেক রোড কানেকটিভিটি প্রজেক্ট-২-এর চুক্তি সই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেছিলেন।
সেদিন তিনি বলেন, ‘গাজীপুর বিআরটি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে আর প্রকল্প বাড়াবেন না। যতটুকু আছে, এটাই আগে শেষ করুন।’
২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুরের চেরাগআলী এলাকায় চলমান ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে এখনও আশাবাদী বিআরটি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। এ সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব আশা করি।’
কত ভাগ কাজ শেষ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১৮ শতাংশ কাজ বাকি।’
আরও পড়ুন:উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পে ফ্লাইওভারের বক্স গার্ডার দুর্ঘটনায় মর্মাহত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনায় প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট যার যার গাফিলতি আছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান।
সোমবার এই দুর্ঘটনার পর পরই প্রকাশ পায়, নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া ভারী বস্তুটি সরানো হচ্ছিল। এই ঘটনায় জনক্ষোভের মধ্যে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি, একনেকের সভায় প্রসঙ্গটি তোলেন সরকার প্রধান। সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দেন তিনি।
সভা পরবর্তী ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘উত্তরার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী মর্মাহত। তিনি বলেছেন, এটা কেন হলো? এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কী, সেটিও জানান মান্নান। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রকল্প পরিচালক থেকে ঠিকাদার- সংশ্লিষ্ট সবাইকেই তদন্তের মধ্যে আনতে হবে। দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
বিআরটি প্রকল্পটি চীনের জিয়াংশু প্রভিন্সিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ও গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড বাস্তবায়ন করছে। তাদের কোনো বক্তব্য আপাতত পাওয়ার সুযোগ নেই।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি গেলেও তারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। বিআরটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তবে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে বারবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
পরিবহন সচিব বিআরটির চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দায় কি আমার? আমি কি মালিক? আমি কি বিআরটি প্রকল্প পরিচালক? আপনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন।’
উত্তরায় নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের এই বক্স গার্ডার দুর্ঘটনায় প্রাইভেটকারের পাঁচ আরোহী মারা গেছেন। দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন নারী ও দুটি শিশু রয়েছে। জসীম উদ্দীন মোড়ে প্যারাডাইজ টাওয়ারের সামনের সড়কে সোমবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
এরই মধ্যে এই ঘটনার তদন্তে গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি। এক দিনের মধ্যেই প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন সচিবের কাছে। এতে দায়ী করা হয়েছে ঠিকাদারি কোম্পানিকে।
সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেছে
সিসিটিভি ক্যামেরায় দুর্ঘটনার যে ভিডিও পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়, ব্যস্ত সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রেখেই ক্রেনে করে বক্স গার্ডারটি একটি গাড়িতে তোলা হচ্ছিল। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এই বিষয়টি নিয়ে কর্মীদের মধ্যে কোনো ভাবান্তরই ছিল না।
হঠাৎ করেই গার্ডারটি পিছলে পড়ে যায়। যে গাড়িতে সেটা তোলার কথা ছিল, সেটার পাশ দিয়ে যাওয়া প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে সেটি।
সেই গাড়িতে নবদম্পতি ছাড়াও তাদের পাঁচ জন স্বজন ছিলেন। মারা গেছেন সেই স্বজনরা।
‘ঠিকাদার, বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান এবং তদারকি সংস্থা সবাই দায়ী’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান এই প্রাণহানির জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অবহেলাকে দায়ী করেছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যখন ভারী উপকরণ বা সরঞ্জাম আপনি বহন করবেন, সেটা ক্রেনের মাধ্যমে হোক আর যেকোনো মাধ্যমে হোক না কেন, ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিসটা হচ্ছে অবশ্যই একটা নিরাপত্তা-বেষ্টনী তৈরি করতে হবে আগে। কারণ, ক্রেন থেকে গার্ডার কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমে পড়ে যেতেই পারে, সে কারণেই আপনাকে পূর্ব সতর্কতা নিতে হয়। ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস হচ্ছে আমাকে সেই জায়গাতে আগেই কর্ডন বা নিরাপত্তা-বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। ওই বেষ্টনীর মধ্যে যেন পথচারী বা কোনো যানবাহন ঢুকতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্বও কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।’
যে ক্রেন দিয়ে গার্ডারটি তোলা হচ্ছিল, সেটি যিনি চালাচ্ছিলেন, তার দক্ষতা ছিল কি না, ক্রেনটি যার চালানোর কথা তিনিই তা করছিলেন নাকি অন্য কেউ করছিলেন-এসব প্রশ্নেরও জবাব মিলছে না।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, এই ঘটনায় কেবল কর্মী নয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান এবং তদারকি সংস্থা সবার গাফিলতি ছিল। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্রকল্পে কিন্তু এই ম্যানেজমেন্টের জন্য একটা বড় ব্যয় ধরা থাকে। আমার মনে হয়, বিআরটি প্রজেক্টে প্রথম থেকেই কনস্ট্রাকশন প্র্যাকটিসের ন্যূনতম যে গ্রামারটা আছে, সেটা তারা ফলো করছে না।
‘কিন্তু তারা ঠিকমতো প্র্যাকটিস করছে কি না, এটার নজরদারি বা তদারকির দায়িত্ব তো বাস্তবায়নকারী সংস্থার। এই ধরনের প্রকল্পের সুপারভিশনের দায়িত্ব আরেক সংস্থার থাকে।
‘তার মানে কাজটা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সেটার জন্য সুপারভিশন সংস্থা আছে, আমাদের বাস্তবায়নকারী সংস্থা আছে, এটার একটা সমন্বয় দরকার। আমি যেটা মনে করি, এই ধরনের কাজ একটা বড় কাজ।
‘পাশাপাশি এটা অনেক বিজি একটা করিডর। এই করিডরে কাজ করতে গেলে অবশ্যেই যারা বাস্তবায়ন করছে তাদের ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি এবং তদারকি করতে হবে। কোথাও যদি কনস্ট্রাকশন প্র্যাকটিসের ব্যত্যয় হয়, তাকে কিন্তু জবাব দিতে হবে। এই জবাব দিতে হয় না বলেই আমরা দেখছি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যেভাবে কাজ করার কথা, সেভাবে হয় না। তাদের মধ্যে অবহেলার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের ভায়াডাক্টের একাংশ পড়ে প্রাইভেটকারের ৫ যাত্রী নিহতের ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসির গাফিলতির বিষয়টি উঠে এসেছে মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্তে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকালের (সোমবার) ঘটনার মূল দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। তারা কাউকে না জানিয়ে কাজ করছিল অথচ গতকাল কাজ বন্ধ থাকার কথা।
‘তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, এ ধরনের ব্যাপার ঘটলে তাদের যে দায়, সেই রকম ব্যবস্থাই তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে। এ নিয়ে বিশদভাবে বসবে মন্ত্রণালয়। এবং আরও কারো কোনো দায় আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মঙ্গলবার সকালে কমিটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।
সোমবার বিকেলের ওই ঘটনা তদন্তে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৫ সদস্যের কমিটি করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
রাতে মন্ত্রণালয়ের সচিব এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পরপরই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আরবান ট্রান্সপোর্ট অনুশাখার অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতারকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
‘তদন্ত কমিটি এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও ২ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেবে।’
উত্তরার জসীম উদ্দীন মোড়ে প্যারাডাইজ টাওয়ারের সামনের সড়কে সোমবার বিকেলে ফ্লাইওভারের গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে একটি প্রাইভেট কার।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, গার্ডারটি ক্রেন দিয়ে তোলার সময় সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সেটি তোলার সময় সেখানে কোনো নিরাপত্তা-বেষ্টনী তৈরি করা হয়নি, যে কারণে এই প্রাণহানির ঘটনাটি ঘটে।
গাড়িতে থাকা সাতজনের মধ্যে মারা গেছে দুই শিশুসহ পাঁচজন।
বিআরটি প্রকল্প নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিযুক্ত রয়েছে চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি)।
আরও পড়ুন:গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকায় পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেসের চারটি বগি লাইনচ্যুতির ঘটনায় দেশের উত্তরবঙ্গমুখী কয়েকটি ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে।
আগামীকাল বুধবারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা করছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
রোববার রাতে গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকায় ঢাকা ছেড়ে যাওয়া দ্রুতযান এক্সপ্রেসের চারটি যাত্রীবাহী বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে আহত হয় ৭ যাত্রী।
দুর্ঘটনার কারণে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ১১ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। সোমবার সকাল ৮টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত পঞ্চগড়গামী ‘দ্রুতযান এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি সরিয়ে নেয়া হলে চলাচল স্বাভাবিক হয়।
তবে পরবর্তী সময়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হলেও বেশ কয়েকটি ট্রেন দেরিতে ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কমলাপুর রেলস্টেশনের পরিবহন কর্মকর্তা আমিনুল হক।
নিউজবাংলাকে তিনি জানান, ‘গত পরশুদিন দুর্ঘটনার পর কয়েকটি ট্রেন দেরিতে ছেড়ে গেছে। যে ট্রেনগুলো দেরিতে ছেড়ে গেছে সেগুলো রেলওয়ে পশ্চিম বিভাগের অর্থাৎ উত্তরবঙ্গ ও খুলনাগামী ট্রেন বলেই জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এগুলোকে শিডিউল বিপর্যয় বলা যায় না। কয়েকটি ট্রেন ২-৩ ঘণ্টা দেরি করেছে দুর্ঘটনার কারণে। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে এটা ঠিক হয়ে যাবে।’
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত পরশুদিন দুর্ঘটনা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক দেরি হয়েছে। প্রায় ১১-১২ ঘণ্টা লেগেছে। সে সময় প্রায় ১২ ঘণ্টার মতো উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। সেই পরিস্থিতি এখনও ফেস করতে হচ্ছে।’
তিনি জানান, উত্তরবঙ্গগামী কয়েকটি ট্রেন দেরিতে ছেড়ে গেছে। যার মধ্যে রয়েছে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস, পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ও খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন। যার প্রতিটি ট্রেন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামীকালের মধ্যে ট্রেনের এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেল ও ইউরিয়া সারের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার এবং গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণতান্ত্রিক বাম জোটের একটি মিছিল পুলিশের বাধার মুখে পড়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর পল্টন মোড় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা হন নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগ পৌঁছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের চলতে থাকে ধস্তাধস্তি। এক পর্যায়ে শাহবাগ পার হতে না পেরে বাম জোটের নেতাকর্মীরা শিশু পার্কের গেটের সামনে সমাবেশ শুরু করেন।
বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেশে গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। নতুন দর অনুযায়ী, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হচ্ছে ১১৪ টাকায়।
অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হচ্ছে। এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটারের দাম ১৩০ টাকা।
আরও পড়ুন:
চকবাজারে চারতলা ভবনে আগুনের ঘটনায় বরিশাল হোটেল মালিক ফখরুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ভোরে তাকে চকবাজার এলাকা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে হোটেল মালিকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তার হোটেলের ৬ জন কর্মচারী আগুনে পুড়ে মারা গেল, সে গা ঢাকা দিয়ে থাকবে তা তো হতে পারে না। ঘটনার পর থেকেই তাকে ধরতে আমরা অভিযান শুরু করি। ভোরে চকবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তিনি জানান, বরিশাল হোটেলের কর্মচারী রুবেলের বড় ভাই মোহম্মদ আলী চকবাজার থানায় হোটেলমালিক ফখরুদ্দিনকে আসামি করে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করেছেন। সে মামলাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফখরুদ্দিনকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার উপপরিদর্শক রাজীব সরকার।
সোমবার দুপুরে লাগা আগুনে বরিশাল হোটেলের ছয় কর্মচারীর মৃত্যু হয়। তারা সবাই হোটেলটিতে নাইট শিফটে কাজ করে সকালে ঘুমিয়েছিলেন। তাদের থাকার ব্যবস্থা ছিল ভবনের দ্বিতীয় তলায়। নিচতলায় ছিল বরিশাল হোটেল।
আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রায় আড়াই ঘণ্টা কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট।
মিটফোর্ড হাসতাপালে নিহত ছয়জনের ময়নাতদন্ত হচ্ছে।
যেভাবে আগুন লাগে
নিচতলার হোটেল থেকেই আগুনের সূত্রপাত বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
প্রত্যক্ষদর্শীরাও বলেন, একটা বোমা ফাটার মতো আওয়াজ হয়েছে হোটেলের ভেতর। এরপরই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে ভবনে।
আগুনের সূত্র খুঁজতে গিয়ে সেখানে দেখা যায়, বরিশাল হোটেলের প্রবেশমুখেই ডান পাশে রান্নার চুল্লি। পাইপ লাইনের গ্যাসের মাধ্যমে এই হোটেলের রান্নার কাজ চলত তা বোঝা গেল। চুলার চেম্বারের পাশেই হোটেলের দেয়াল ঘেঁষে গ্যাসের রাইজার ও গ্যাসলাইন। ওই গ্যাসলাইনের একটি আবার চলে গেছে হোটেলের চুল্লির চেম্বারে। সেখান থেকে আবার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে হোটেলের আরেকটি চুলায় গ্যাসের সংযোগ দেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ওই চুলার বার্নারটি খুলে রাস্তায় পড়ে ছিল আর এই বার্নারের গোড়াতেই প্লাস্টিক পাইপ ঝুলতে দেখা যায়।
হোটেলটির ঠিক ওপরেই কাঠের পাটাতন দিয়ে কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা ছিল। হোটেলের পেছনে আলাদা সিঁড়ি ব্যবহার করে কর্মীরা ওই সিলিং ঘরে যাতায়াত করতেন। আর দুই শিফটে কাজ করে পালাক্রমে কর্মীরা সেখানে ঘুমাতেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য