সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলনে সভাপতি পদে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর প্রার্থী হওয়াই ছিল বড় চমক। তবে তারচেয়েও চমকে দিয়েছে তার দল বিএনপি।
বিএনপির কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো হয়েছে আরিফের। তার আগে হঠাৎ স্থগিত করা হয় কাউন্সিল ও সম্মেলন। এরপর বাড়ানো হয়েছে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের তারিখ। আর আরিফুল হক মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিনই সম্মেলনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছে জেলা বিএনপি।
এমন কর্মকাণ্ডে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যেই প্রশ্ন ওঠে, আরিফকে ঠেকাতেই কি বিএনপি এত কৌশল নিয়েছে?
আরিফ অনুসারী নেতারা জানান, জেলা বিএনপির সভাপতি পদে আরিফুল হক চৌধুরীর বিজয় আঁচ করতে পেরে তার বিরোধী বলয়ের নেতারা দলের হাইকমান্ডে প্রভাব বিস্তার করে সম্মেলন স্থগিত করান। এরপর কেন্দ্রের চাপে সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন আরিফ।
বিএনপি নেতাদের আরেক অংশ জানায়, সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রতি বিএনপির হাইকমান্ড অসন্তুষ্ট। ১৬ মার্চ সম্মেলনের ঠিক চার দিন আগে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়ায় আরিফের ওপর আরও রুষ্ট হয় দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। ফলে নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম হওয়ার প্রাক্কালে জেলা বিএনপির সভাপতি পদে আরিফকে দেখতে চায়নি হাইকমান্ড। এ কারণে আরিফের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানো হয়েছে।
তবে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন দাবি করেন, সঠিক সময়ে ভোটার তালিকা প্রকাশ না করায় জেলা বিএনপির কাউন্সিল স্থগিত করা হয়। এতে অন্য কোনো কারণ নেই।
আরিফের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে কেন্দ্রের নির্দেশনা প্রসঙ্গে সাখাওয়াত হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি মেয়র পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। তাকে অনেক কিছু ম্যানেজ করে চলতে হয়। স্থানীয় সাংসদ ও মন্ত্রীদের সঙ্গে তাকে সুসম্পর্ক রাখতে হয়। তাই এই মুহূর্তে দলের দায়িত্ব নিলে তাকে এসব ম্যানেজ করতে সমস্যা হতে পারে। এতে দলের কার্যক্রমের পাশপাশি সিলেটের উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হবে। এসব কারণে তাকে সভাপতি পদে প্রার্থিতা থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে।’
সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল ২১ মার্চ। কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচনের ঘোষণা দেয় দলটি। সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছিল। সম্মেলন ঘিরে চাঙা হয়ে ওঠেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, এবার সম্মেলনে চমক সৃষ্টি হয় সভাপতি পদে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হওয়ায়। কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আরিফ এর আগে মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। মহানগর বিএনপির সভাপতিও ছিলেন। এবারের জেলা কাউন্সিলে হঠাৎ করেই তিনি সভাপতি প্রার্থী হন। তার প্রার্থী হওয়া বদলে দেয় সিলেটে বিএনপির রাজনীতির হিসাব-নিকাশ। দ্বিধাবিভক্ত বিএনপির রাজনীতিতে আরিফের প্রার্থী হওয়া পুরোনো বিরোধকে উসকে দেয়।
কয়েকজন নেতা জানান, সিলেটে বিএনপি এখন মূলত দুই ধারায় বিভক্ত। এক বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। অপর বলয়ের নেতৃত্বে আরিফ। তবে মুক্তাদির কেন্দ্রের শীর্ষ পদে থাকায় সিলেটে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটিগুলোতে তার বলয়েরই আধিপত্য।
মুক্তাদিরের এই আধিপত্যে ভাঙন ধরাতেই আরিফ জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী হয়েছিলেন বলে জানান তারা। আবার কয়েকজন নেতা মনে করেন, মুক্তাদিরই দলের হাইকমান্ডে প্রভাব খাটিয়ে জেলার সম্মেলন স্থগিত করান।
সম্মেলনের এক দিন আগে ২০ মার্চ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল কবির রিজভীর সই করা চিঠিতে সম্মেলন স্থগিতের নির্দেশনা দেয়া হয়।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির তিন সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবুল মোমেন ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সখ্যের কারণে আরিফুল হক চৌধুরীর ওপর আগে থেকেই অসন্তুষ্ট ছিল বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় থাকারও অভিযোগ রয়েছে মেয়র আরিফের বিরুদ্ধে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সম্মাননা দেয়ার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবুল মোমেনকে সংবর্ধনা দিয়েও নিজ দলে সমালোচিত হয়েছিলেন আরিফ।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির তিন সদস্য জানান, জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারবিরোধী শক্ত আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে সখ্যের কারণে আরিফের পক্ষে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবে না, দলের হাইকমান্ড এমনই ভেবে থাকতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই তিন নেতা আরও বলেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হয়তো মনে করেছে, নিজের ব্যক্তি ইমেজ, মেয়র পদ ও আর্থিক সক্ষমতা দিয়ে সভাপতি পদে আরিফুল হক জয়ী হয়ে যেতে পারেন। সরকার নানা মেকানিজম করেও তাকে জয়ী করে ফেলতে পারে। তাই কেন্দ্র থেকে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে বলা হয়েছে।’
এ ক্ষেত্রে খন্দকার মুক্তাদিরের ভূমিকা থাকতে পারে বলে মনে করেন তারা।
তবে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে তার মন্তব্য জানা যায়নি।
এ বিষয়ে আরিফুল হক চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মঙ্গলবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। আমার বিজয় ছিল সুনিশ্চিত।
‘বিএনপি দেশের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সেই দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে আমার কাছে জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ব্যক্তির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।’
আরিফের মনোনয়নপত্র প্রত্যহারের পর জেলা বিএনপির সভাপতি পদে লড়াইয়ে আছেন শুধু আবুল কাহের চৌধুরী শামীম ও আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেন আরিফ। ওইদিন রাতেই বৈঠক করে ২৯ মার্চ কাউন্সিলের নতুন তারিখ নির্ধারণ করে সিলেটে জেলা বিএনপি। কেন্দ্র মঙ্গলবারই এই প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রস্তাবনা অনুমোদন দিয়েছেন।
আমি ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপির সঙ্গেও জড়িত আছি, তবু আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর পেছনে ষড়যন্ত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য চিঠি দিয়েছি।
এদিকে, মঙ্গলবার নির্বাচন পরিচলানা কমিটির বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কামরুল ইসলাম শাহীন ও সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী শাকিল মোর্শেদের মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগের দিন মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আবদুল আহাদ খান জামালের।
ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় কামরুল ইসলাম শাহীন ও শাকিল মোর্শেদের এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের পদে থাকায় আব্দুল আহাদ খান জামালের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে জানান নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান আব্দুল গাফ্ফার।
এক প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং তিন প্রার্থীর বাতিল হওয়ায় সিলেট জেলা বিএনপির তিন পদে লড়ছেন ৯ জন। এর মধ্যে দুই সভাপতি প্রার্থী ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে আ. ফ. ম কামাল, আলী আহমদ, ইমরান আহমদ চৌধুরী ও মো. আব্দুল মান্নান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এম মুজিবুর রহমান মুজিব, লোকমান আহমদ ও মো. শামিম আহমদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল বলেন, ‘অঙ্গসংগঠনের পদে থাকার কারণ দেখিয়ে আমার মনোয়ন বাতিল করা হয়েছে। অনেক উপজেলায় অঙ্গসংগঠনের পদে থাকা নেতারা বিএনপির শীর্ষ পদে ঠাঁই পেয়েছেন। আমার মনোনয়নপত্র অবৈধ হলে তারা কীভাবে পদ পেলেন?’
মনোনয়নপত্র বাতিলের নেপথ্যে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে মনে করেন আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কামরুল ইসলাম শাহীন।
তিনি বলেন, ‘আমি ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপির সঙ্গেও জড়িত আছি, তবু আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর পেছনে ষড়যন্ত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য চিঠি দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
মন্তব্য