ডায়রিয়া ও কলেরা রোগের চিকিৎসায় দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ বা আইসিডিডিআর,বি। প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পর হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া আক্রান্ত সর্বোচ্চ রোগী আসছে এবার।
রাজধানীর মহাখালীর এই হাসপাতালে গত কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই ১ হাজার ২০০-এর বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। এক দিনে এত রোগী এর আগে কখনও দেখেননি হাসপাতালের কর্মীরা।
গরম পড়তে না পড়তেই রাজধানীতে এ রোগের প্রকোপের পেছনে বেশ কিছু কারণকে সামনে এনেছেন আইসিডিডিআর,বির একজন চিকিৎসক।
তিনি বলেন, করোনার প্রকোপের সময় মানুষ রাস্তার ধারে খোলা খাবার কম খেয়েছে। পাশাপাশি বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়েছে। কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণে আসতেই আবার আগের চিত্র ফিরে এসেছে।
অন্য অনেক কারণের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণকেও দায়ী করছেন আরেকজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক জরিপের তথ্য বলছে, পরিবেশ দূষণে দেশের হিসাবে বাংলাদেশ শীর্ষে আর শহর হিসাবে ঢাকা তৃতীয়।
আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দিতে শুক্রবার থেকে দ্বিতীয় তাঁবু তৈরির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলছেন, দেশে রাস্তার পাশে খোলা খাবার খাওয়ার প্রবণতা আছে। বাতাসে দূষণ বেশি হওয়ায় এসব খাবার জীবাণু আক্রান্ত হচ্ছে।
২০১৮ সালেও ঢাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। সে সময় দিনে গড়ে এক হাজারে মতো রোগী ভর্তি হয়েছিল। এর আগে ২০০৭ সালে বন্যার সময় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, সেই সময়ে দৈনিক রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল এক হাজারের মধ্যে।
আইসিডিডিআর,বি বলছে, গত ১৬ মার্চ ১ হাজার ৫৭ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়। পরদিন তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৪১ জনে। ২০ মার্চ রোগীর সংখ্যা হয় ১ হাজার ১৫৭, ২১ মার্চ ১ হাজার ২১৬, ২২ মার্চ ১ হাজার ২৭২ ও ২৩ মার্চ ১ হাজার ২৩৩ জন।
রাজধানীর ঘিরে রাখা জেলাগুলো থেকে রোগী আসছে বেশি। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, কদমতলী, দক্ষিণখান, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর থেকেও রোগী আসছে বেশি।
রাজধানীর বাইরের এলাকার মধ্যে বেশি রোগী সাভার, গাজীপুর ও ময়মনসিংহের।
হাসপাতালের শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় তাঁবু টানিয়ে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছে আইসিডিডিআর,বি। শয্যা আরও বাড়িয়ে শুক্রবার থেকে দ্বিতীয় তাঁবু তৈরির প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে।
হাত ধোয়া ‘ভুলে’ ভুগছে মানুষ
হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক বাহারুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে দুই বছর তাঁবু তৈরির প্রয়োজন হয়নি। তখন মানুষ খুব বেশি রাস্তায় বের হয়নি, রাস্তার খোলা খাবারের দোকানগুলো বন্ধ ছিল। মানুষের মধ্যে হাত ধোয়ার প্রবণতাও বেশি ছিল। কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কমে এসেছে। যে কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে।’
দায় পরিবেশ দূষণেরও
শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমও রাস্তার পাশে খোলা খাবারের পাশাপাশি দায়ী করেছেন পরিবেশ দূষণকে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দূষিত বায়ুর দিক থেকে বাংলাদেশ প্রথম হয়েছে। শহর হিসেবে ঢাকা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এটিও রোগী বাড়ার একটি কারণ মনে হয়েছে আমাদের কাছে।’
শিশুদের চিকিৎসায় গড়ে তোলা এই হাসপাতালে পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সতর্ক আছেন জাহাঙ্গীর আলম। বলেন, ‘কলেরা হাসপাতালে রোগী বেড়েছে সেটা দেখেই আমাদের হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি।’
প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পর আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত সর্বোচ্চ রোগী আসছে এবার। ছবি: নিউজবাংলা
আইসিডিডিআর,বিতে আসা রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই প্রাপ্তবয়স্ক ও পুরুষ। শিশুর সংখ্যা বেশ কম।
কেবল এই হাসপাতাল নয়, ঢাকা শিশু হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগীর চাপ এখনও কম।
গত ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে ১০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। মোট ভর্তি ১০০ জনের নিচে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার কিছু পকেট এরিয়ায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। রোগীর সেবা দিতে হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন, কলেরা শনাক্তকরণ কিটসহ সব উপকরণ পর্যাপ্ত আছে।’
যা করতে হবে, কী করা যাবে না
ডায়রিয়া প্রতিরোধে বাইরের খাবার না খাওয়া ও পানি ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘তীব্র গরমে মানুষ বাইরে শরবত, আখের রস খাচ্ছে। বাড়িতেও পানি ফুটিয়ে খাচ্ছে না অনেকেই।
‘কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় স্কুল-কলেজ সবকিছু খুলে যাওয়ায় মানু্ষ বাইরে যাচ্ছে বেশি এবং খোলা খাবার খাচ্ছে। এসব কারণে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাইরের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। ঘরের বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। খাবার দীর্ঘক্ষণ বাইরে রেখে তারপর ফ্রিজে রেখে খাওয়া যাবে না। রান্নার পরপরই ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।
‘যদি কেউ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়, তাহলে স্যালাইন ও ডাবের পানি খেতে হবে। তা না হলে ডিহাইড্রেশনের কারণে কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
শিশু হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গোসলের সময় শিশুরা যেন পানি না খায়, এটি দেখতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য