নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবি ও হতাহতের ঘটনায় ধাক্কা দেয়া জাহাজের ওপরই শুরু থেকে দায় চাপাচ্ছিলেন দুর্ঘটনাকবলিতদের স্বজন ও সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ। তবে কেউ কেউ মনে করছেন জাহাজ নয়, বরং লঞ্চের চালকই এই দুর্ঘটনায় বড় ভূমিকা রেখেছে।
প্রাথমিক তদন্তে উভয় চালককেই দায়ী করেছে এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের গঠিত একটি তদন্ত কমিটি।
ওই কমিটির মতে, নিয়ম অনুযায়ী, কার্গো জাহাজটি নদীর সেন্ট্রাল চ্যানেল ধরে নির্দিষ্ট গতিতে এগিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটি ছিল বেপরোয়া। এ ছাড়া জাহাজটির সামনে কোনো ওয়াচম্যানও ছিল না। জাহাজটি যারা পরিচালনা করছিলেন তাদের গাফিলতি সুস্পষ্ট।
এদিকে নৌ ট্রাফিক নিয়মে নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিন শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম সীমানা ধরে চলাচলের কথা ছিল, কিন্তু ডুবে যাওয়ার আগ মুহূর্তে এটি নদীর পূর্ব সীমানার দিকে যাচ্ছিল।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামীম ব্যাপারী বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে দুর্ঘটনার জন্য কার্গো জাহাজ ও লঞ্চ উভয় পক্ষই দায়ী। দুটি নৌযানই বেপরোয়া গতিতে চলছিল। তারা কেউই আইন মানেনি।’
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানান, নিয়ম থাকলেও জাহাজের মাথায় কোনো ওয়াচম্যান ছিলেন না। দুর্ঘটনা দেখার পরও গতিরোধ করেনি। তা ছাড়া যে লঞ্চটি ডুবেছে সেই লঞ্চের চালক জাহাজটিকে দূর থেকে দেখার পরও সে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। দুই চালকের ভুলেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের কমিটি সম্ভাব্য সব কারণ তদন্তে তুলে ধরবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনতে উদঘাটিত কারণগুলো সুনির্দিষ্টভাবে লেখা থাকবে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।’
বিভিন্ন পক্ষের বিভিন্ন মত
নদীতে নৌ ট্রাফিকব্যবস্থার তদারকি করেন বিআইডব্লিউটিএ-র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপসহকারী পরিচালক বাবু লাল বৈদ্য। তিনি দাবি করেন, ওই নদীতে কার্গো জাহাজের ঘণ্টায় গতিবেগ থাকার কথা ৬ নটিক্যাল মাইল। কিন্তু এমভি রূপসী জাহাজের গতিবেগ ছিল আনুমানিক ১০ নটিক্যাল মাইল।
নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান বলেন, ‘যারা জাহাজটি পরিচালনা করছিলেন তাদের গাফিলতি রয়েছে। কারণ একটি ছোট নৌযানও যদি সামনের দিকে আসে সেটিও দেখা যায়। কিন্তু তারপরও লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয় জাহাজটি। শুধু ধাক্কাই নয়, লঞ্চটিকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছে। এটা পরিষ্কার যে লঞ্চটি ডুবে হতাহতের জন্য জাহাজের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই দায়ী।’
মূল চালক জাহাজটি চালাচ্ছিলেন কি না সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি জানান, অধিকাংশ কার্গো জাহাজের চালক পণ্য খালাসের পর বাড়িতে চলে যান। আর জাহাজ চালিয়ে যান সহকারীরা।
তবে তার কথা মানতে নারাজ বাংলাদেশ শ্রমিক জাহাজি ফেডারেশন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সবুজ সিকদার বলেন, শুধু এমভি রূপসী নয়, লঞ্চটিও এই ঘটনার জন্য দায়ী। কারণ জাহাজটি ২২৫ ফুটের বেশি লম্বা। দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা সামনেই সেতু। ওই সেতুর তিনটি পিলারের মাঝে তিনটি ফাঁকা। ফলে জাহাজটি যাবে মাঝখান দিয়ে আর লঞ্চটি ডান পাশেরটি দিয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজের চালকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, লঞ্চটি তাদের সামনে ছিল। তারা লঞ্চটিকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তখনই ডান পাশ থেকে হঠাৎ বাঁয়ে মোড় নিয়ে জাহাজের হেড ক্রস করতে চায় লঞ্চচালক। এর ফলেই ঘটে দুর্ঘটনাটি।'
সবুজ সিকদার দাবি করেন, তিনি জানতে পেরেছেন ওই লঞ্চে কোনো চালক বা মাস্টার ছিল না। লঞ্চটি চালাচ্ছিলেন একজন সুকানি। আর লঞ্চটির মালিকের ছেলেই কেরানি; তিনিই লঞ্চের টিকিট কাটেন। ঘটনার সময় তিনিও লঞ্চে ছিলেন এবং বেঁচে ফিরেছেন। গ্রিজার ছিল লঞ্চের ইঞ্জিনের কাছে।
সবুজ সিকদার বলেন, ‘তারা একটি লঞ্চ মাত্র তিনজন মানুষ কিভাবে পরিচালনা করেন?’
মুন্সীগঞ্জের কোনো লঞ্চেই মাস্টার নেই দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘এটা দেখার দায়িত্ব বিআইডব্লিউএ-এর। কিন্তু তারা ঘাটে যান না, শুধু অফিসে বসে থাকেন। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছেই।’
বেঁচে ফেরা লঞ্চযাত্রী আর প্রত্যক্ষদর্শীদের মত
ঘটনার সময়ের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, লঞ্চটি পশ্চিম পাশ থেকে মাঝনদী ধরে পূর্ব পাশের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় কার্গো জাহাজটির সামনের অংশ লঞ্চটির বডির মাঝামাঝি আটকে যায়। চলন্ত অবস্থায় কিছুক্ষণ লঞ্চটিকে ধাক্কা দিয়ে সামনে নিতে নিতে ডুবিয়ে দেয় জাহাজটি। তবে এর আগে নৌযান দুটির মধ্যে কিভাবে সংযোগ ঘটল, তা জানতে কথা হয় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা কয়েক যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে।
বেঁচে ফেরা আবদুল রৌফ লঞ্চডুবিতে চোখের সামনে ছেলের বউ আর নাতিকে পানির নিচে তলিয়ে যেতে দেখেছেন। নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে মুন্সীগঞ্জ ফিরছিলেন তারা।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রৌফ বলেন, ‘লঞ্চের ওপরে ছিলাম। সেখানে লঞ্চটা ডুবছে তার একটু আগে দেখেছি বাঁ পাশ থেকে লঞ্চটা ডানে যাইতাছে। এরপর দেখি লঞ্চটা জাহাজটার সামনের দিকে যাইতাছে। তখন অন্য যাত্রীরা চিল্লাইতেছিল। এরপরই ডুইবা গেছে।’
লঞ্চের আরেক যাত্রী ছিলেন নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোকছেদা বেগম। লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর তিনি নদীতে ভেসে থাকা একটি বস্তা আঁকড়ে ভেসে ছিলেন। পরে একটি ট্রলার গিয়ে তাকে টেনে তুললে প্রাণে বেঁচে যান।
মোকছেদা বলেন, ‘আমার বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। তাই লঞ্চে করে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ আসি, কাজ শেষে আবার বাড়ি যাই।’
ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘লঞ্চটার দ্বিতীয় তলায় কেবিনের চেয়ারে বসেছিলাম। হঠাৎ দেখি লঞ্চটা আর জাহাজটা একসঙ্গে যাইতাছে আর চাপতাছে। সঙ্গে সঙ্গেই দেখি লঞ্চ আর জাহাজ লাইগা গেল। পরে আর মনে নাই।’
ঘটনার আগে লঞ্চ ও জাহাজটিকে দেখেছেন টানবাজার এলাকার শামীম মিয়া। শীতলক্ষ্যা নদীর মীনা বাজার ঘাটের ওয়াকওয়ে রেলিংয়ের ওপর বসে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। বন্ধুদের মধ্যে একজন বলেছিল, ‘দেখ, ছোট লঞ্চটা টানে ক্যামনে!’
শামীম বলেন, ‘এরপরই দেখি বড় একটা জাহাজ যাইতাছে। তয় লঞ্চ আর জাহাজের মধ্যে বেশি একটা দূরত্ব ছিল না।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আলামানি নগর এলাকার বাসিন্দা সিজান বলেন, ‘আমার ঘর নদীর তীরে। ঘটনার সময় জানালা দিয়া দেখলাম বড় একটা জাহাজের সঙ্গে ছোট লঞ্চটা লাইগা যাইতাছে। আমি যখন দেখছি তখন জাহাজটা আর লঞ্চের মাঝখানে কিছুটা দূরত্ব ছিল আর লোকজন চিৎকার করতেছিল। ঘর থেকে বাইরে যেতে যেতে দেখি লঞ্চটা জাহাজের সামনের দিকে যাইতাছে, জাহাজও দ্রুত চলতাছে। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখলাম ডুবে গেল। পরে বাড়ির সামনের ঘাটের ট্রলার নিয়া সেখানে গেছি। ৬-৭ জনরে ট্রলারে কইরা পাড়ে তুলছি।’
অন্য লঞ্চের মাস্টার ও কার্গো জাহাজসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মত
দুর্ঘটনাটি সম্পর্কে কথা হয় একাধিক লঞ্চের চালক, মাস্টার ও সুকানির সঙ্গে। তারা নারায়গঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও কুমিল্লার বিভিন্ন ঘাটে লঞ্চ চালিয়ে থাকেন।
তাদের মধ্যে এক লঞ্চের মাস্টার মিজানুর রহমান জানান, নারায়ণগঞ্জের সেন্ট্রাল ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জসহ সাতটি লাইনে অন্তত ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে। ঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার পর নদীর ডানপাশ ধরে রওনা হয় এটাই নিয়ম। লঞ্চ চলাচলের আইন যার যার হাতের ডানে।
তিনি জানান, মুন্সিগঞ্জের লঞ্চগুলো শীতলক্ষ্যা সেতু পার হয়ে নদীর দুই পাশের অবস্থা দেখে সর্তকভাবে বাম পাশে গিয়ে মদনগঞ্জ ঘাটে ভিড়ে। সেখানে যাত্রী ওঠা-নামার পর আবার রওনা হয়। আইনেও আছে প্রতিটি লঞ্চ ঘাট থেকে ছাড়ার পর নদীতে সে তার ডানে থাকবে। নির্দিষ্ট ঘাটের সামনে গিয়ে সতর্কভাবে ভিড়বে।
তিনি বলেন, ‘লঞ্চ ডুবে যাওয়ার ভিডিওতে দেখলাম আফসার উদ্দিন নামের লঞ্চটা পূর্ব পারের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু তার তো সেতু পার হয়ে যাওয়ার কথা।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন একটা লঞ্চ চলাচল করে সেখানে চালক ছাড়াও আরও কয়েকজন থাকেন। পেছনে এত বড় একটা জাহাজ তো তাদের ভালো করেই দেখার কথা। উচিত ছিল, যেহেতু জাহাজটি কাছাকাছি, সেহেতু অন্য পাশে থাকা। জাহাজটি তার লঞ্চ অতিক্রম করার পর বাঁয়ে যাওয়া।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কার্গোচালক বলেন, ‘শীতলক্ষ্যার এই অংশে অনেক ঘাট। তাই নদীতে মাঝখানে ও আশপাশে প্রচুর ট্রলার, নৌকা আর লঞ্চ থাকে। তাই আমি যখন জাহাজ নিয়ে যাই তখন মেঘনা যাওয়ার আগ পর্যন্ত নির্দিষ্ট গতির চেয়েও কমিয়ে রাখি। নদীতে এত ছোট নৌযান যে জাহাজের গতি বাড়াতে ভয় লাগে।’
দুর্ঘটনার ভিডিও দেখে তিনি জানান, লঞ্চটি জাহাজের আগে ছিল। অর্থাৎ তার অনেক পেছনে ছিল জাহাজ। সেটি দ্রুত চালিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিল। যিনি জাহাজটি চালিয়েছেন তার তো দূর থেকে লঞ্চটি দেখার কথা। তা ছাড়া জাহাজে আধুনিক সিস্টেম আছে, সামনে কিছু থাকলে সেটা বোঝা যায়। যখন জাহাজচালক সামনের দিকে যাচ্ছিলেন তার প্রচুর পরিমাণে হর্ন বাজানো উচিত ছিল। তা ছাড়া জাহাজে মাইক রয়েছে। চালক দূর থেকে মাইকে লঞ্চটিকে কাছে না আসতে নিষেধ করতে পারতেন।
জাহাজের সংশ্লিষ্টরা কী বলছে
এমভি রূপসী-৯ নামের জাহাজটি চালাচ্ছিলেন রমজান আলী শেখ। ঘটনার পর তাকে গ্রেপ্তার করে নৌ থানায় আনা হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি তিনি দীর্ঘদিন ধরে চালাচ্ছেন। ঘটনার দিন জাহাজের সামনে দিয়ে লঞ্চটি গতি বাড়িয়ে দিয়ে যেতে চেয়েছিল। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। হঠাৎ করে সামনে চলে আসায় জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।’
তবে তিনি কেন জাহাজ না থামিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন, সেই উত্তর দেননি।
সিটি গ্রুপের নেভিগেশন বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চলন্ত ট্রেন যেমন হঠাৎ থামানো যায় না, তেমনি জাহাজও। লঞ্চটি জাহাজের মাথার সামনে দিয়ে ক্রস করে যেতে চেয়েছে। ফলে সেখানে তো সঙ্গে সঙ্গে জাহাজ থামানো সম্ভব নয়।’
নাগরিক সংগঠনগুলো কী বলছে
সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’ এর সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা বলেন, ‘লঞ্চ ডুবির ভিডিওতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে কার্গো জাহাজের গতি। সামনে একটি সেতু থাকার পরও সেটি কিভাবে বেপরোয়াভাবে চালায়। তার ডান দিক থেকে লঞ্চটি যাত্রী নিয়ে পার হচ্ছে। আমরা যেটা বুঝতে পারছি তারা প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তারা প্রতিযোগিতা করে মানুষ মারবে- এটা কেমন ব্যবহার।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিয়ম মেনে নৌযান চলাচল করছে কি না তা দেখবে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু তারা সেটা করে না। তারা ঘটনা ঘটার পর তৎপর হয়ে ওঠে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ও নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক জানান, ‘নদীতে নৌপুলিশ আছে বলে আমরা মনে করি না। কারণ শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রায় সময় ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। তারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করত তাহলে তো নৌযানগুলো আইন মানতে বাধ্য থাকত।’
বিআইডব্লিউটিএ-এর দায় কতটুকু
বিআইডব্লিউটিএ-এর যুগ্ম পরিচালক মাসুদ কামাল জানিয়েছেন, নৌযান চলাচলের জন্য বয়াবাতি, মার্কা দেয়াসহ সব রকম ব্যবস্থা তারা করে থাকেন। যানগুলোকে সঠিক পথে যেতে সব রকম দিকনির্দেশনাও দেয়া হয় তাদের পক্ষ থেকে।
তারপরও কেন দুর্ঘটনা ঘটল জানতে চাইলে কিছুটা ক্ষেপে গিয়ে মাসুদ কামাল বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা দেখা। কারা কখন নৌযান নিয়ে যাবে, কোন নৌযান কিভাবে যাবে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমাদের কাজ আইন দেখা আমরা আইন দেখছি।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মিজানুর রহমান রিপন (৪৮) নামের এক স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর ও লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটেছে। মিজানুর রহমান রিপন ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
গত রবিবার সন্ধার দিকে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। মিজানুর রহমান রিপন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমর সংবাদ পত্রিকার দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি নিউজ বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এঘটনায় ওই দিন রাতে ভূক্তভুগী নিজে বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
এযাহার সূত্রে জানাযায়, গত ৮ জুন উপজেলার তারাগুনিয়া থানার মোড় এলাকার তারাগুনিয়া ক্লিনিকে আখি খাতুন (২২) নামের এক প্রশুতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি সহ উপজেলার বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সংবাদ প্রকাশ করে। তারি জের ধরে উপজেলা বাজারে থাকা সরকার নিষিদ্ধ ক্লিনিক বেবি নার্সিং হোম এর মালিক আহসান হাবিব কালুর ছোট ছেলে খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারে তাকে মারধর করে।
এবিষয়ে মিজানুর রহমান নামের ওই গণমাধ্যম কর্মী বলেন, গতকাল বিকেলে আমি উপজেলা বাজারে বাড়ির দৈনন্দিন বাজার করছিলাম এসময় খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারের বেবী ক্লিনিক মালিকের ছেলে আমার উপর হামলা চালায়। এসময় সে আমাকে বলে আমার হাসপাতালে যে ডাক্তার আসে সেই ডাক্তারের নামে তুরা নিউজ করেছিস বলে আমার উপর হামলা চালিয়ে বেদড়ক মারধর করে। এঘটনার পর আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
গণমাধ্যম কর্মীকে মারধরের বিষয়ে, দৌলতপুর উপজেলার একজন প্রবীন গণমাধ্যম কর্মী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে এটি কখনই কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া উচিৎ।
এঘটনায় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হুদা জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অভিযুক্ত খালিদ হাসান আর্জু
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী এলাকায় গত '২৪ এর ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক, সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) সকাল ১১ টায় ফেনী ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুরে হাবিব উল্যাহ খাঁন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ উপলক্ষে এক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি।
বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী এলাকায় বন্যা পরবর্তী উন্নয়নমূলক সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপণ ও পরে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় ছাগলনাইয়া উপজেলার হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় এর নবনির্মিত শাহীন ভবন উদ্বোধন এবং দুর্গাপুর সিংহনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নুরুল কোরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন।
এ ছাড়া বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী জেলার বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, বন্যা দুর্গতদের জন্য মেডিকেল সেবা পরিচালনা ও চিকিৎসা সেবা সহায়তা প্রদান কার্যক্রম পরিদর্শন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিমান বাহিনী প্রধান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী জেলায় ২০২৪ সালের আকস্মিক বন্যাকালীন ও বন্যা পরবর্তী সময়ে বিমান বাহিনীর ভুমিকার ভূয়সী প্রসংশা করেন এবং পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সকল প্রতিষ্ঠান আর্থিক, ত্রাণ ও বিভিন্নভাবে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিমান বাহিনীর উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশ ও জনগণের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, বন্যার সাথে তৎকালীন বৈরী আবহাওয়া ও বিছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পেশাদারিত্বের সাথে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, যা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা দিকনির্দেশনায় এবং বিমান বাহিনী প্রধানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ভয়াবহ এ বন্যাদুর্গত কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং বিশেষ করে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী জেলায় হেলিকপ্টার ও ইউএভি এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে এরিয়াল রেকোনাইসেন্স মিশন পরিচালনা করে বন্যা দুর্গত মানুষের সহায়তায় প্রয়োজনীয় জরুরী উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
বিমান বাহিনীর সূত্র জানায়, সামগ্রিকভাবে বিমান বাহিনী বন্যা পরবর্তী এ পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, ধর্মীয় উপাসনালয় ও রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং সংস্কার কার্যক্রম ইতিমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, দূর্গাপুর, ছাগলনাইয়্যা-এ অবস্থিত হাবিব উল্যাহ্ খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রমবর্ধমান ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় জনসাধারণের চাহিদা বিবেচনা করতঃ শাহীন ভবন নামে একটি চারতলা ভিত বিশিষ্ট দুইতলা ভবন আসবাবপত্রসহ নির্মাণ করা হয়েছে, যেটি দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকাস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি একে খন্দকার।
অনুষ্ঠানে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমান ঘাঁটি বাশারের এয়ার অধিনায়ক, বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকতাবৃন্দ, ফেনী জেলা প্রশাসক, সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে অপহরণ করে মুক্তিপন দাবি করে দুষ্কৃতিকারীরা।
পরে মুক্তিপণ না পেয়ে মোবাইল ফোন-মানিব্যাগ রেখে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা।
সোমবার (২৩ জুন) বরিশাল থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার পথে মাদারিপুরে সকাল ৮টার দিকে বাস থেকে নামলে অপহরণের শিকার হন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. আসাদ, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায়।
আসাদের পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অপহৃত শিক্ষার্থীর বড় চাচা মারা যাওয়ায় আজ ভোরে ৬টায় বরিশাল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে মাদারিপুর পর্যন্ত যান বাসে। বাস থেকে নেমে মাদারিপুর নেমে ঝিনাইদহে যাওয়ার জন্য গাড়ি খুঁজতেছিলেন এমন সময় মাইক্রোবাসটি তাকে ঝিনাইদহে পৌঁছে দিবে বলে উঠিয়ে নেয়। উঠিয়ে নেয়ার পর অপহরণকারীরা পরিবারের সঙ্গে ০১৫১৮৪৯৫৬০৯ নম্বর থেকে যোগাযোগ করে মুক্তিপণ দাবি করে। বিষয়টি পরিবারের মাধ্যমে জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশের সহযোগিতা নেন, প্রশাসনের তৎপরতার খবর পেয়ে অপহরনকারীরা তার সব কিছু রেখে তাকে ছেড়ে দেন।
এ বিষয়ে আসাদের সহপাঠী রাফিদ হাসান জানান, আসাদের চাচা মারা যাওয়ায় ও আজ ভোরের দিকে বরিশাল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন, পথিমধ্যে এই ঘটনার শিকার হন ।
এ বিষয়ে আসাদের বাবা বলেন, আসাদের বড় চাচা গতকাল রাতে মারা যাওয়ায় আজকে ভোরে বাড়ি আসার পথে মাদারিপুর থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না পেয়ে ওর মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। পরে অন্য একটি বাসে করে আসাদ বাড়ি ফিরছে বলে জানান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সোনিয়া খান সনি বলেন, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে বরিশাল থেকে ঝিনাইদাহ বাড়ি যাওয়ার পথে মাদারিপুরে আটকিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে, এমন ঘটনা জেনে সাথে সাথে মাদারিপুর পুলিশকে কল করি। শিক্ষার্থী এখন নিরাপদে আছে সে বাড়ি ফিরতেছে শিক্ষার্থী এবং পরিবারের সাথে কথা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাসেম আলী (৩৫) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২২ জুন) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ গোড়ের পাড়া গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত হাসেম আলী দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোবরগাড়া গ্রামের মৃত আছান শেখের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন একটি ভবনে ইট ভেজাতে গিয়ে বৈদ্যুতিক মোটরে কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন হাসেম আলী। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) এক ছাত্রীকে অচেতন করে ধর্ষণের অভিযোগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মোখলেসুর রহমানকে প্রধান করে শনিবার এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো সাইফুল ইসলাম এবং ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ও টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক বেলাল শিকদার।
এসব তথ্য জানিয়ে শাবি প্রক্টর মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। নির্ধারিত সময়ে রিপোর্ট দেবো। এর সাথে আরও কেউ জড়িত কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। যাদেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরআগে শুক্রবার বিকেলে ওই ছাত্রী বাদি হয়ে সিলেটের কতোয়ালি থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থ’র নাম উল্লেখ করে অজ্ঞতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
আদনান ও পার্থকে বৃহস্পতিবার রাতেই আটক করে পুলিশ। পরে মামলায় তদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তারা দু'জনই শাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার শান্ত তারা আদনান নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমানের অনুসারী ছিলেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসীূচতে তাকে দেখা গেছে। আদনান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যান্ড দল ‘নোঙর’-এরও সদস্য ছিলেন।
অপরদিকে, ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক শিক্ষার্থী স্বাগত দাস পার্থ গত বছরের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী। তার ফেসবুকে প্রোফইলেও জুলাই আন্দোলনের সমর্থনে ছবি যুক্ত রয়েছে। তবে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, পার্থ ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তবে তিনি তেমন সক্রিয় ছিলেন না।
এদিকে, পার্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যসংগঠন ‘দৃক থিয়েটার’-এর কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ এবং বিশ্ববিদ্যালের শৃঙ্খলা-বডি সূত্রে জানা যায়- গত ২ মে সন্ধ্যারাতে সহপাঠী শান্ত তারা আদনান এবং স্বাগত দাস পার্থের সঙ্গে শহরের কনসার্টে যাচ্ছিলেন ওই ছাত্রী। কনসার্টে যাওয়ার পূর্বে তারা ওই ছাত্রীকে সুরমা এলাকার একটি মেসে নিয়ে যান। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অচেতন করে ধর্ষণ করেন আদনান এবং পার্থ। একইসাথে এই ঘটনার ভিডিও এবং মেয়েটির নগ্ন ছবি ধারণ করেন। পরে ওইসকল ভিডিও ও নগ্ন ছবি দেখিয়ে আদনান এবং পার্থ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিয়মিত ব্ল্যাকমেইল করছিলেন এবং ঘটনা জানাজানি করলে ভিডিও ও ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করলে প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ আদনান এবং পার্থকে আটক করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন। এরপর প্রক্টরের সঙ্গে আলোচনা শেষে তাদেরকে থানায় পুলিশ হেফাজতে নেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান বলেন, 'বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী শ্লীলতাহানির বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি আমরা। বর্তমানে অপরাধীরা পুলিশ হেফাজতে আছে এবং মামলার বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান।'
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, 'প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হচ্ছে।'
মন্তব্য