নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবি ও হতাহতের ঘটনায় ধাক্কা দেয়া জাহাজের ওপরই শুরু থেকে দায় চাপাচ্ছিলেন দুর্ঘটনাকবলিতদের স্বজন ও সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ। তবে কেউ কেউ মনে করছেন জাহাজ নয়, বরং লঞ্চের চালকই এই দুর্ঘটনায় বড় ভূমিকা রেখেছে।
প্রাথমিক তদন্তে উভয় চালককেই দায়ী করেছে এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের গঠিত একটি তদন্ত কমিটি।
ওই কমিটির মতে, নিয়ম অনুযায়ী, কার্গো জাহাজটি নদীর সেন্ট্রাল চ্যানেল ধরে নির্দিষ্ট গতিতে এগিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটি ছিল বেপরোয়া। এ ছাড়া জাহাজটির সামনে কোনো ওয়াচম্যানও ছিল না। জাহাজটি যারা পরিচালনা করছিলেন তাদের গাফিলতি সুস্পষ্ট।
এদিকে নৌ ট্রাফিক নিয়মে নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিন শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম সীমানা ধরে চলাচলের কথা ছিল, কিন্তু ডুবে যাওয়ার আগ মুহূর্তে এটি নদীর পূর্ব সীমানার দিকে যাচ্ছিল।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামীম ব্যাপারী বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে দুর্ঘটনার জন্য কার্গো জাহাজ ও লঞ্চ উভয় পক্ষই দায়ী। দুটি নৌযানই বেপরোয়া গতিতে চলছিল। তারা কেউই আইন মানেনি।’
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানান, নিয়ম থাকলেও জাহাজের মাথায় কোনো ওয়াচম্যান ছিলেন না। দুর্ঘটনা দেখার পরও গতিরোধ করেনি। তা ছাড়া যে লঞ্চটি ডুবেছে সেই লঞ্চের চালক জাহাজটিকে দূর থেকে দেখার পরও সে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। দুই চালকের ভুলেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের কমিটি সম্ভাব্য সব কারণ তদন্তে তুলে ধরবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনতে উদঘাটিত কারণগুলো সুনির্দিষ্টভাবে লেখা থাকবে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।’
বিভিন্ন পক্ষের বিভিন্ন মত
নদীতে নৌ ট্রাফিকব্যবস্থার তদারকি করেন বিআইডব্লিউটিএ-র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপসহকারী পরিচালক বাবু লাল বৈদ্য। তিনি দাবি করেন, ওই নদীতে কার্গো জাহাজের ঘণ্টায় গতিবেগ থাকার কথা ৬ নটিক্যাল মাইল। কিন্তু এমভি রূপসী জাহাজের গতিবেগ ছিল আনুমানিক ১০ নটিক্যাল মাইল।
নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান বলেন, ‘যারা জাহাজটি পরিচালনা করছিলেন তাদের গাফিলতি রয়েছে। কারণ একটি ছোট নৌযানও যদি সামনের দিকে আসে সেটিও দেখা যায়। কিন্তু তারপরও লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয় জাহাজটি। শুধু ধাক্কাই নয়, লঞ্চটিকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছে। এটা পরিষ্কার যে লঞ্চটি ডুবে হতাহতের জন্য জাহাজের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই দায়ী।’
মূল চালক জাহাজটি চালাচ্ছিলেন কি না সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি জানান, অধিকাংশ কার্গো জাহাজের চালক পণ্য খালাসের পর বাড়িতে চলে যান। আর জাহাজ চালিয়ে যান সহকারীরা।
তবে তার কথা মানতে নারাজ বাংলাদেশ শ্রমিক জাহাজি ফেডারেশন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সবুজ সিকদার বলেন, শুধু এমভি রূপসী নয়, লঞ্চটিও এই ঘটনার জন্য দায়ী। কারণ জাহাজটি ২২৫ ফুটের বেশি লম্বা। দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা সামনেই সেতু। ওই সেতুর তিনটি পিলারের মাঝে তিনটি ফাঁকা। ফলে জাহাজটি যাবে মাঝখান দিয়ে আর লঞ্চটি ডান পাশেরটি দিয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজের চালকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, লঞ্চটি তাদের সামনে ছিল। তারা লঞ্চটিকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তখনই ডান পাশ থেকে হঠাৎ বাঁয়ে মোড় নিয়ে জাহাজের হেড ক্রস করতে চায় লঞ্চচালক। এর ফলেই ঘটে দুর্ঘটনাটি।'
সবুজ সিকদার দাবি করেন, তিনি জানতে পেরেছেন ওই লঞ্চে কোনো চালক বা মাস্টার ছিল না। লঞ্চটি চালাচ্ছিলেন একজন সুকানি। আর লঞ্চটির মালিকের ছেলেই কেরানি; তিনিই লঞ্চের টিকিট কাটেন। ঘটনার সময় তিনিও লঞ্চে ছিলেন এবং বেঁচে ফিরেছেন। গ্রিজার ছিল লঞ্চের ইঞ্জিনের কাছে।
সবুজ সিকদার বলেন, ‘তারা একটি লঞ্চ মাত্র তিনজন মানুষ কিভাবে পরিচালনা করেন?’
মুন্সীগঞ্জের কোনো লঞ্চেই মাস্টার নেই দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘এটা দেখার দায়িত্ব বিআইডব্লিউএ-এর। কিন্তু তারা ঘাটে যান না, শুধু অফিসে বসে থাকেন। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছেই।’
বেঁচে ফেরা লঞ্চযাত্রী আর প্রত্যক্ষদর্শীদের মত
ঘটনার সময়ের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, লঞ্চটি পশ্চিম পাশ থেকে মাঝনদী ধরে পূর্ব পাশের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় কার্গো জাহাজটির সামনের অংশ লঞ্চটির বডির মাঝামাঝি আটকে যায়। চলন্ত অবস্থায় কিছুক্ষণ লঞ্চটিকে ধাক্কা দিয়ে সামনে নিতে নিতে ডুবিয়ে দেয় জাহাজটি। তবে এর আগে নৌযান দুটির মধ্যে কিভাবে সংযোগ ঘটল, তা জানতে কথা হয় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা কয়েক যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে।
বেঁচে ফেরা আবদুল রৌফ লঞ্চডুবিতে চোখের সামনে ছেলের বউ আর নাতিকে পানির নিচে তলিয়ে যেতে দেখেছেন। নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে মুন্সীগঞ্জ ফিরছিলেন তারা।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রৌফ বলেন, ‘লঞ্চের ওপরে ছিলাম। সেখানে লঞ্চটা ডুবছে তার একটু আগে দেখেছি বাঁ পাশ থেকে লঞ্চটা ডানে যাইতাছে। এরপর দেখি লঞ্চটা জাহাজটার সামনের দিকে যাইতাছে। তখন অন্য যাত্রীরা চিল্লাইতেছিল। এরপরই ডুইবা গেছে।’
লঞ্চের আরেক যাত্রী ছিলেন নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোকছেদা বেগম। লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর তিনি নদীতে ভেসে থাকা একটি বস্তা আঁকড়ে ভেসে ছিলেন। পরে একটি ট্রলার গিয়ে তাকে টেনে তুললে প্রাণে বেঁচে যান।
মোকছেদা বলেন, ‘আমার বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। তাই লঞ্চে করে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ আসি, কাজ শেষে আবার বাড়ি যাই।’
ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘লঞ্চটার দ্বিতীয় তলায় কেবিনের চেয়ারে বসেছিলাম। হঠাৎ দেখি লঞ্চটা আর জাহাজটা একসঙ্গে যাইতাছে আর চাপতাছে। সঙ্গে সঙ্গেই দেখি লঞ্চ আর জাহাজ লাইগা গেল। পরে আর মনে নাই।’
ঘটনার আগে লঞ্চ ও জাহাজটিকে দেখেছেন টানবাজার এলাকার শামীম মিয়া। শীতলক্ষ্যা নদীর মীনা বাজার ঘাটের ওয়াকওয়ে রেলিংয়ের ওপর বসে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। বন্ধুদের মধ্যে একজন বলেছিল, ‘দেখ, ছোট লঞ্চটা টানে ক্যামনে!’
শামীম বলেন, ‘এরপরই দেখি বড় একটা জাহাজ যাইতাছে। তয় লঞ্চ আর জাহাজের মধ্যে বেশি একটা দূরত্ব ছিল না।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আলামানি নগর এলাকার বাসিন্দা সিজান বলেন, ‘আমার ঘর নদীর তীরে। ঘটনার সময় জানালা দিয়া দেখলাম বড় একটা জাহাজের সঙ্গে ছোট লঞ্চটা লাইগা যাইতাছে। আমি যখন দেখছি তখন জাহাজটা আর লঞ্চের মাঝখানে কিছুটা দূরত্ব ছিল আর লোকজন চিৎকার করতেছিল। ঘর থেকে বাইরে যেতে যেতে দেখি লঞ্চটা জাহাজের সামনের দিকে যাইতাছে, জাহাজও দ্রুত চলতাছে। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখলাম ডুবে গেল। পরে বাড়ির সামনের ঘাটের ট্রলার নিয়া সেখানে গেছি। ৬-৭ জনরে ট্রলারে কইরা পাড়ে তুলছি।’
অন্য লঞ্চের মাস্টার ও কার্গো জাহাজসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মত
দুর্ঘটনাটি সম্পর্কে কথা হয় একাধিক লঞ্চের চালক, মাস্টার ও সুকানির সঙ্গে। তারা নারায়গঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও কুমিল্লার বিভিন্ন ঘাটে লঞ্চ চালিয়ে থাকেন।
তাদের মধ্যে এক লঞ্চের মাস্টার মিজানুর রহমান জানান, নারায়ণগঞ্জের সেন্ট্রাল ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জসহ সাতটি লাইনে অন্তত ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে। ঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার পর নদীর ডানপাশ ধরে রওনা হয় এটাই নিয়ম। লঞ্চ চলাচলের আইন যার যার হাতের ডানে।
তিনি জানান, মুন্সিগঞ্জের লঞ্চগুলো শীতলক্ষ্যা সেতু পার হয়ে নদীর দুই পাশের অবস্থা দেখে সর্তকভাবে বাম পাশে গিয়ে মদনগঞ্জ ঘাটে ভিড়ে। সেখানে যাত্রী ওঠা-নামার পর আবার রওনা হয়। আইনেও আছে প্রতিটি লঞ্চ ঘাট থেকে ছাড়ার পর নদীতে সে তার ডানে থাকবে। নির্দিষ্ট ঘাটের সামনে গিয়ে সতর্কভাবে ভিড়বে।
তিনি বলেন, ‘লঞ্চ ডুবে যাওয়ার ভিডিওতে দেখলাম আফসার উদ্দিন নামের লঞ্চটা পূর্ব পারের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু তার তো সেতু পার হয়ে যাওয়ার কথা।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন একটা লঞ্চ চলাচল করে সেখানে চালক ছাড়াও আরও কয়েকজন থাকেন। পেছনে এত বড় একটা জাহাজ তো তাদের ভালো করেই দেখার কথা। উচিত ছিল, যেহেতু জাহাজটি কাছাকাছি, সেহেতু অন্য পাশে থাকা। জাহাজটি তার লঞ্চ অতিক্রম করার পর বাঁয়ে যাওয়া।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কার্গোচালক বলেন, ‘শীতলক্ষ্যার এই অংশে অনেক ঘাট। তাই নদীতে মাঝখানে ও আশপাশে প্রচুর ট্রলার, নৌকা আর লঞ্চ থাকে। তাই আমি যখন জাহাজ নিয়ে যাই তখন মেঘনা যাওয়ার আগ পর্যন্ত নির্দিষ্ট গতির চেয়েও কমিয়ে রাখি। নদীতে এত ছোট নৌযান যে জাহাজের গতি বাড়াতে ভয় লাগে।’
দুর্ঘটনার ভিডিও দেখে তিনি জানান, লঞ্চটি জাহাজের আগে ছিল। অর্থাৎ তার অনেক পেছনে ছিল জাহাজ। সেটি দ্রুত চালিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিল। যিনি জাহাজটি চালিয়েছেন তার তো দূর থেকে লঞ্চটি দেখার কথা। তা ছাড়া জাহাজে আধুনিক সিস্টেম আছে, সামনে কিছু থাকলে সেটা বোঝা যায়। যখন জাহাজচালক সামনের দিকে যাচ্ছিলেন তার প্রচুর পরিমাণে হর্ন বাজানো উচিত ছিল। তা ছাড়া জাহাজে মাইক রয়েছে। চালক দূর থেকে মাইকে লঞ্চটিকে কাছে না আসতে নিষেধ করতে পারতেন।
জাহাজের সংশ্লিষ্টরা কী বলছে
এমভি রূপসী-৯ নামের জাহাজটি চালাচ্ছিলেন রমজান আলী শেখ। ঘটনার পর তাকে গ্রেপ্তার করে নৌ থানায় আনা হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি তিনি দীর্ঘদিন ধরে চালাচ্ছেন। ঘটনার দিন জাহাজের সামনে দিয়ে লঞ্চটি গতি বাড়িয়ে দিয়ে যেতে চেয়েছিল। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। হঠাৎ করে সামনে চলে আসায় জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।’
তবে তিনি কেন জাহাজ না থামিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন, সেই উত্তর দেননি।
সিটি গ্রুপের নেভিগেশন বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চলন্ত ট্রেন যেমন হঠাৎ থামানো যায় না, তেমনি জাহাজও। লঞ্চটি জাহাজের মাথার সামনে দিয়ে ক্রস করে যেতে চেয়েছে। ফলে সেখানে তো সঙ্গে সঙ্গে জাহাজ থামানো সম্ভব নয়।’
নাগরিক সংগঠনগুলো কী বলছে
সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’ এর সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা বলেন, ‘লঞ্চ ডুবির ভিডিওতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে কার্গো জাহাজের গতি। সামনে একটি সেতু থাকার পরও সেটি কিভাবে বেপরোয়াভাবে চালায়। তার ডান দিক থেকে লঞ্চটি যাত্রী নিয়ে পার হচ্ছে। আমরা যেটা বুঝতে পারছি তারা প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তারা প্রতিযোগিতা করে মানুষ মারবে- এটা কেমন ব্যবহার।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিয়ম মেনে নৌযান চলাচল করছে কি না তা দেখবে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু তারা সেটা করে না। তারা ঘটনা ঘটার পর তৎপর হয়ে ওঠে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ও নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক জানান, ‘নদীতে নৌপুলিশ আছে বলে আমরা মনে করি না। কারণ শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রায় সময় ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। তারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করত তাহলে তো নৌযানগুলো আইন মানতে বাধ্য থাকত।’
বিআইডব্লিউটিএ-এর দায় কতটুকু
বিআইডব্লিউটিএ-এর যুগ্ম পরিচালক মাসুদ কামাল জানিয়েছেন, নৌযান চলাচলের জন্য বয়াবাতি, মার্কা দেয়াসহ সব রকম ব্যবস্থা তারা করে থাকেন। যানগুলোকে সঠিক পথে যেতে সব রকম দিকনির্দেশনাও দেয়া হয় তাদের পক্ষ থেকে।
তারপরও কেন দুর্ঘটনা ঘটল জানতে চাইলে কিছুটা ক্ষেপে গিয়ে মাসুদ কামাল বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা দেখা। কারা কখন নৌযান নিয়ে যাবে, কোন নৌযান কিভাবে যাবে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমাদের কাজ আইন দেখা আমরা আইন দেখছি।’
আরও পড়ুন:অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের পর নিরাপত্তাহীনতায় পুনরায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় গারো পাহাড় সীমান্তে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যসহ ৭ জনকে আটক করেছে বিজিবি।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল পৌণে সাতটার দিকে শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার নকশি সীমান্ত পথে নকশি ক্যাম্পের টহলরত বজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে বিকেলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
বিষয়টি ২৬ আগষ্ট সকালে বিজিবি পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়।
আটককৃতরা হলো মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রমজান আলী (২৪) ও আসমত আলীর ছেলে রাসেল (১৬)। আটক অনুপ্রবেশকারীরা হলো, নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বোমবাঘ গ্রামের শামীম শেখ (২৩), আফসানা খানম (২২), রুমা বেগম (৩২), মিলিনা বিশ্বাস (২৮) ও তিন বছর বয়সী শিশু কাশেম বিশ্বাস।
বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে গত ২৩ আগস্ট রাতের আধারে নালিতাবাড়ীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ পথে নারী এবং শিশুসহ ৫ বাংলাদেশীকে ভারতে পাঠায় মানব পাচারকারী রমজান আলী ও রাসেল। কিন্তু ভারতীয় পুলিশের তৎপরতায় নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে এ পাঁচ বাংলাদেশী। এ কারণে ২৫ আগষ্ট সোমবার সকাল পৌণে সাতটার দিকে ঝিনাইগাতির নকশি সীমান্তের কালিমন্দির এলাকা দিয়ে পুনরায় তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসময় টহলরত বিজিবি সদস্যরা টের পেয়ে সবাইকে আটক করে। পরে মানব পাচারে জড়িত দুইজনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এবং অন্য ৫ জনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অপরাধে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করা হয় এবং সবাইকে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ময়মনসিংহ বিজিবি’র ৩৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মেহেদী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
ঝালকাঠিতে গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনায় এনে ব্রান্ডশপ লোটো ও লি কুপার প্রতিষ্ঠানটি তাদের ১৩২তম ফ্লাগশিপ আউটলেট উদ্বোধন করেছে।
এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্ট লিঃ এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কাজী জাভেদ ইসলাম সহ কোম্পানির অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে নিয়ে ফিতা কেটে আউটলেটটি উদ্বোধন করেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।
পৌর শহরের সাধনার মোড়ে মঙ্গলবার ২৬ আগষ্ট সকাল ১০টায় লোটো ও লি কুপারের ফ্ল্যাগশিপ আউটলেটদ্বয়ের শুভ উদ্বোধন আনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠিতে কোম্পানীর এ যাত্রার প্রথম দিনে স্থানীয় ফ্যাশন সচেতন তরুণ তরুণীরা তাদের পছন্দের পন্য কালেকশন বেছে নিতে ভীর জমায়।
কোম্পানীর পক্ষ থেকে জানানো হয় প্রথম তিনদিনের প্রতিদিন প্রথম ৩০ জন পাবেন ৫০% ছাড়, ২য় ৩০ জন পাবেন ৪০% ছাড়, ৩য় ৩০ জন পাবেন ৩০% ছাড়, ৪র্থ ৩০ জন পাবেন ২০% ছাড় এবং তৎপরবর্তী সকল কাস্টমার পাবেন ১০% ছাড়। এই বিশেষ ছাড় ২৬শে আগষ্ট থেকে শুরু হয়ে ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে
নওগাঁয় সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আটক রেখে ধর্ষণ মামলায় আ: সালাম (৩৮) নামে এক আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আ: সালাম সদর উপজেলার বর্ষাইল মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম ওই শিক্ষার্থীর পরিবার পত্নীতলা উপজেলায় ভাড়া থাকতেন। ভাঙ্গারী ব্যবসার সুবাদে আসামী আ: সালামও পাশাপাশি একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে আ: সালাম বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিতো এবং রাস্তাঘাটে বিরক্ত করতো। বিষয়টি জানাজানি হলে আসামী আ: সালাম ওই ভিকটিমের পরিবারকে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখাতো। এরই একপর্যায়ে ২০২২ সালের ১১ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে আসামী আ: সালাম একটি বাজার এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নওগাঁ সদর উপজেলার ভবানীপুর দক্ষিন পাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ভাড়া বাড়িতে আটক রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা পত্নীতলা থানায় অভিযোগ করলে র্যাব ওই বাড়ি থেকে আসামিকে গ্রেফতার ও মেয়েকে উদ্ধার করে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামী আ: সালামসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ আ: সালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। বাকি আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলার এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী ফাহমিদা কুলসুম উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের বালুকাপাড়া গ্রামে রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় তাকে বিয়ে করায় এক দম্পতিকে দেড় বছর ধরে 'সমাজচ্যুত' করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে নালিশ দেওয়ার জের ধরে পেটানো হয় দিনমজুর আব্দুল জলিল প্রামানিককে। প্রতিপক্ষের লোকজনের মারধরে এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে গেছে।
এঘটনায় তিনি একটি থানায় অভিযোগ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে সেটি মামলাটি হিসেবে রের্কড করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
সরেজমিনে বালুকাপাড়া গ্রামে গিয়ে আব্দুল জলিলকে ১৮ মাস ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার তথ্য জানা গেছে। আব্দুল জলিলের সমাজচ্যুত করার ঘটনাটি স্থানীয় রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশীদ মন্ডলও অবগত আছেন। তিনি দুই পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকেও সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি।
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের কারণে আব্দুল জলিল প্রামানিক রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দেন। এঘটনার ২৯ দিন পর তিনি আবারও স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গ্রাম্য মাতব্বরেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল জলিল প্রামানিকের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখেন। সেই সময় জলিল প্রামানিক বিষয়টি আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে জানান। ইউএনও রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মণ্ডলকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। ইউপি চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। তবে কার্যত কোন কোনো সমাধান করতে পারেননি। এতে গ্রাম্য মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন। সমাজচ্যুত করে রাখা আব্দুল জলিল গত ১৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে গ্রামের মসজিদের দিকে রওনা হন। এসময় মাতব্বরেরা তাকে দুই দফায় প্রচন্ড মারধর করেন। এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে যায়। তিনি চিকিৎসা নিয়ে থানায় আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
বালুকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেড় বছর আগে আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। কয়েক দিন পর আবার সংসার শুরু করেন। এনিয়ে গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিল প্রামানিককে সমাজচ্যুত করেন। এনিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বৃদ্ধা লুৎফন নেছা বলেন, আমি কাজ করতে পারিনি। আব্দুল জলিলের বউ আমার বাড়িতে এসে জবাই করা মুরগির তরকারি রান্না করে দিয়েছিল। আমি জলিলের বাড়িতে গিয়ে এক বাটি মুরগির মাংসের তরকারি দিয়ে এসেছি। এতে আমাকেও সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল।
বালুকাপাড়া গ্রামের মোড়ের দোকানি হাফিজার রহমান বলেন, বউকে তালাক দেওয়ার ঘটনায় আব্দুল জলিল প্রামানিককে গ্রামের মাতব্বরেরা সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল গ্রামের সামাজিক কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেয় না।
আব্দুল জলিল প্রামানিক বলেন, আমি রাগের মাথায় স্ত্রী তালাক দিয়েছিলাম। ২৯ দিন পর আবার বিয়ে পড়ে নিয়েছি। একারণে গ্রামের মাতব্বর রকি খান, মিল্টন খাঁ, আবু সুফিয়ানসহ আরও ১০-১২ জন আমাকে সমাজচ্যুত করেছেন। রাগের মাথায় স্ত্রীক। তালাক দিলে পুনরায় বিয়ে করা যাবে ঢাকার একজন মুফতির মতামত নিয়ে আসার পরও তারা মানেনি। তারা বলছে হিল্লা বিয়ে ছাড়া আমার বিয়ে বৈধ হবে না। তারা আমাকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে গ্রামের মসজিদে নামাজ আদায়ে করতে ও জানাজায় শরিক হতে বা দেননি। মিলাদ মাহফিল দাওয়াত দেওয়ার মাতব্বরদের চাপে পর ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি গ্রামের কারও জমিতে দিনমজুরি কাজও করতে পারব না বলে লোকজন জানিয়ে দেন। একারণে কেউ আমাকে কাজে নেয় না। সমাজচ্যুত করার জের ধরে মসজিদে যাওয়ার সময় মাতব্বরদের একাংশের লোকজন আমাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছেন।
গ্রামের মাতব্বদের একজন মো. মিল্টন খাঁ। তিনি আব্দুল জলিলের দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি। তাকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কাজ করেছেন। একারণে গ্রামের লোকজন তাকে সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কি কাজ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আবার স্ত্রীকে নিয়েছেন। এটা সমাজ বিরোধী কাজ।
আক্কেলপুর রায়কালী ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মন্ডল বলেন, আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। এঘটনায় গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলকে সমাজচ্যুত করেন। আব্দুল জলিল ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। ইউএনও স্যার আমাকে ঘটনাটি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছি। আব্দুল জলিল যেন সামাজিকভাবে মিশতে পারে সেটি বলেছি। সমাজচ্যুতের ঘটনার জের ধরে আব্দুল জলিলকে মারধর করা হয়েছে। এতে তার বাম হাত ভেঙেছে বলে জেনেছি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল জলিল প্রামানিক থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেটি মামলা হিসেবে রের্কড করা হয়েছে। আসামি আট জনের মধ্যে ইতিমধ্যে আদালত থেকে পাঁচজন আসামি জামিন নিয়েছেন, অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য