মাদারীপুরের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী লেখাপড়া শেষে চাকরি না করে ব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। নিজের জমিতে একটি মুদি ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা তার এই উদ্যোগে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চার বছর আগে ইয়াকুবের শরীরে যক্ষ্মার জীবাণু ধরা পড়ে। স্থানীয়ভাবে দুই মাস ওষুধ খান। একটু সুস্থ হতেই ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেন। সেই ওষুধে পুরোপুরি যক্ষ্মা ভালো হয় না। কিছুদিন পর শারীরিক অবস্থা আরও গুরুতর হয়ে পড়ে।
শেষ পর্যন্ত ঢাকায় এসে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হন ইয়াকুব। প্রথমবার দুই মাস সেবা নিয়ে একটু সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়েন। কিন্তু ৯ মাস পর আবার সমস্যা দেখা দেয়। আবারও জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। দ্বিতীয় দফা দুই মাস হাসপাতালে অবস্থান করে একটু সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও যক্ষ্মা তার পিছু ছাড়ে না। তৃতীয় দফায় দুই মাস ধরে তিনি একই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়, ওষুধ প্রতিরোধী (মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট-এমডিআর) যক্ষ্মায় আক্রান্ত তিনি। ওষুধের ডোজ পুরো না করে ছেড়ে দিলে এটি আবার ফিরে আসে।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ না দেয়া, মাঝপথে চিকিৎসা ছেড়ে দেয়া এবং প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত না হওয়ায় ইয়াকুবের নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। অনিয়মিত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তিনি এমন পরিস্থিতির শিকার।
ইয়াকুব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাদারীপুরে যথাযথ চিকিৎসাসেবা না থাকায় আমারর মতো অনেক রোগীকেই প্রতি মাসে ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আসতে হয়। এতে রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য বলছে, ‘সারা দেশে যক্ষ্মা শনাক্তকরণে ৪৯০টি জিন এক্সপার্ট যন্ত্র, ১ হাজার ১১৮টি অণুবীক্ষণ যন্ত্র এবং ১৮৭টি ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র রোগ পরীক্ষা ও চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে ওষুধ প্রতিরোধী (মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট-এমডিআর) যক্ষ্মায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দেশের ৮টি বিভাগে দেয়া হচ্ছে। জনসংখ্যার বিষয়টি মাথায় রেখে ঢাকায় দুই জায়গায় এই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। একটি শ্যামলীর ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতাল, অন্যদিকে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে।
সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে যক্ষ্মা রোগের ভালো চিকিৎসাসেবা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। জেলা ও উপজেলা শহরে চিকিৎসা এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে রোগীদের এতটা ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
জেলা পর্যায়ে শুধু প্রাথমিক কফ পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এমডিআর পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে এমডিআর যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যক্ষ্মা জটিল পর্যায়ে গেলে এমন সমস্যা দেখা দেয়। গ্রামের মানুষ এতটা সচেতন নয়। যে কারণে নিয়মিত ওষুধও খায় না।
‘রোগীদের প্রথম ছয় মাসের চিকিৎসায় কেউ অনিয়মিত ওষুধ সেবন করলে অথবা চিকিৎসা পদ্ধতিতে ভুল হলে এমডিআর যক্ষ্মা হয়। এমডিআর রোগীর ছোঁয়ায় আরেকজনের এ রোগ হতে পারে। এ রোগ ধরা পড়লে টানা ২৪ মাস চিকিৎসাধীন থাকতে হয়।’
ডা. খুরশীদ আলম আরও বলেন, ‘বিশেষত গ্রামাঞ্চলে কাশীর মতো উপসর্গ দেখা দিলে রোগীরা সাধারণত স্থানীয় হাতুড়ে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়। অনেক ক্ষেত্রেই তারা ভুল চিকিৎসার শিকার হয়। এমন হতে হতে রোগটা জটিল পর্যায়ে চলে যায়। তখন ফুসফুসে ফাইব্রোসিস বা আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
‘তবে আমাদের নেটওয়ার্ক অনেক বিস্তৃত। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দ্রুত শনাক্ত ও পুরোপরি চিকিৎসা দেয়া। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত হলে দ্রুত সুস্থ করা সম্ভব। তাতে করে অন্য কারও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও কমে আসে।’
৯৬ শতাংশ শিশু যক্ষ্মা রোগীই শনাক্তের বাইরে
দেশে মোট শিশুর ৪ দশমিক ৫ শতাংশ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত। তবে এসব শিশুর ৯৬ শতাংশই শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে। যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত বা কার্যকর ব্যবস্থাপনা না থাকা, ডায়াগনস্টিক সুবিধার অপ্রতুলতা, শিশু চিকিৎসক সংকট, শুরুতে কোনো উপসর্গ না থাকা, উপজেলা পর্যায়ে শিশুদের যক্ষ্মা রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসাব্যবস্থা না থাকাই এ ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ। করোনার আগে বছরে শনাক্তের ১২ শতাংশ শিশু পাওয়া গেলেও করোনার মধ্যে এই কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
নিজেদের সীমাবদ্ধতা কথা শিকার করেন যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বড়দের দুই সপ্তাহের বেশি কাশি থাকলে আমরা তাদের কফ পরীক্ষা করে শনাক্তের ব্যবস্থা করি। অন্যদিকে শিশু রোগীদের যক্ষ্মা শনাক্ত করাটা সাধারণ মাঠকর্মীদের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। এ জন্য শিশু বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হয়।
‘যক্ষ্মার সংক্রমণ রোধে করণীয় সম্পর্কে মাঠকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া আছে। আক্রান্তদের সংস্পর্শে থাকা শিশুদের পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। যেমন একজন মা যক্ষ্মা আক্রান্ত হলে তার সন্তান যদি বুকের দুধ পান করে তবে তাকেও পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে।’
লক্ষমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে যক্ষ্মা শনাক্ত
২০২১ সালে সারা দেশে ৩ লাখ ৩২ হাজার রোগী শনাক্তের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বছর শেষে ৩ লাখ ৭ হাজার ৪৪৪ জন রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে যারা শনাক্ত হয়েছে তাদের চিকিৎসা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শনাক্ত ৯৭ শতাংশ রোগীই সুস্থ্ হয়েছে, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ ভালো।
তবে বছরে কতজন মারা গেছে, সেই তথ্য জানাতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, দেশে যক্ষ্মায় দিনে ১৮৫ জন মারা যাচ্ছে। আর চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠছে ৯৭ শতাংশ রোগী।
বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস আজ
এই পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘বিনিয়োগ করি যক্ষ্মা নির্মূলে, জীবন বাঁচাই সবাই মিলে’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে বিশ্বনেতারা বেশকিছু বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০৩৫ সালের মধ্যে সেসব প্রতিশ্রুতি পূরণ করার কথা। অন্যান্য বছরের মতো এবারও জাতীয়ভাবে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালন করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সকালে রাজধানী ঢাকায় শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একই ধরনের কর্মসূচির আয়োজন রয়েছে।
করোনার বাধা কাটিয়ে উঠছে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। শুরুর দিকে এই মহামারি জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করে। একদিকে মানুষ সেবা নিতে কম আগ্রহ দেখায়, অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর্মীরাও সেবাকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মূল্যায়ন বলছে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে সব ধরনের প্রশিক্ষণ স্থগিত হয়ে যায়। স্থানীয় অঘোষিত ‘লকডাউন’ ও যানবাহন স্বল্পতায় কিছু কর্মী কর্মস্থলে উপস্থিত হতে পারেননি। কফ সংগ্রহ বা রোগ শনাক্তকরণও স্থগিত হয়ে যায়। একই কারণে জেলা পর্যায়ের সব পাক্ষিক সভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বাধা কাটিয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে দেশে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয় ৭১ হাজার। তবে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মার্চ থেকে পরের তিন মাসে শনাক্ত সংখ্যা অর্ধেকেরও কমে নেমে আসে। এপ্রিল, মে ও জুন- এই তিন মাসে রোগী শনাক্ত হয় মাত্র ২৮ হাজার ২৪৬ জন। এরপর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে এলে পুরোদমে কাজে নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনার বাধা কাটিয়ে উঠে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য