‘টাকা-পয়সা নেই, ছেলেরা দেখে না। কী খাব। কষ্টের তো শেষ নেই। নাম তো অনেকবার লিখল, অনেকবার ছবি তুলে নিয়ে গেল। কই কিছুই তো পাইনি।’
কথাগুলো বলছিলেন ‘বাঘ বিধবা’ সোনামণি। দুই স্বামীকে বাঘে নেয়ার কারণে এই নামটি এখন অনেকের কাছেই পরিচিত।
মূলত যাদের স্বামী বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন, স্থানীয়ভাবে তাদের বলা হয় ‘বাঘ বিধবা’।
দক্ষিণাঞ্চলের শেষ জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা মুন্সীগঞ্জ গ্রামের জেলেপাড়ায় তার বাড়ি। স্বামীকে বাঘে নেয়ার দায় নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে জীবন।
সোনামণি জানান, ১৯৯৯ সালে তার স্বামী রাধাকান্ত সরদার বন বিভাগের অনুমতিপত্র নিয়ে সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের কবলে পড়েন। পরে আর জীবিত ফিরে আসেননি। স্বামীর লাশ পর্যন্ত খুঁজে পায়নি সঙ্গীরা।
নিমিষেই সংসার তছনছ হয়ে যায় তার। সোনামণি কীভাবে সংসার চালাবে তা ভেবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সে সময় স্বামীহারা একজন নারীকে অবহেলার চোখে দেখা হতো।
তিনি জানান, দেবরের সংসারে থাকতে অনেক ধরনের কথা শুনতে হয়েছে। বাবার সংসারেও জায়গা হয়নি তার। প্রতিবেশীরা অপয়া, স্বামী খেকো, অলক্ষ্মী বলে ধিক্কার দিতেন।
একপর্যায়ে অবিবাহিত দেবর ভূবেন সরদারের সঙ্গে সোনামণির দ্বিতীয় বিয়ে হয়। ভূবেনও সুন্দরবনে মাছ ধরে উপার্জন করতেন। তখন সোনামনির দুঃখ কিছুটা কমে। এ সংসারে এক ছেলে ও দুই মেয়ে হয় তার।
২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পরপরই ভূবেন বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে মাছ ধরার জন্য গেলে বাঘের আক্রমণে মারা যান। প্রথম স্বামীর মতো লাশ ফিরিয়ে আনতে পারেনি সঙ্গীরা।
দ্বিতীয় স্বামীকে হারিয়ে সোনামণির ঠাঁই হয়নি শ্বশুরবাড়িতে। সন্তানদের বাঁচানোর জন্য লোকের বাড়িতে কাজ করে, মাছ ধরে সংসার চালান। ছেলেমেয়েরা বড় হতে থাকে। নিজের আয়ের টাকায় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে নিয়ে তার স্বপ্ন ছিল সুখী হওয়ার।
ছেলেরা বড় হলে তাদেরও বিয়ে দেন সোনামণি। পরে সংসারে বনিবনা না হওয়ায় তারা পৃথক হয়ে যান।
জমি বলতে জেলেপল্লিতে ছোট এক কুঠিঘর। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু ছাড়া কিছু নেই। এই পরিস্থিতিতে সোনামণি বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা চালান।
সোনামণির অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার থেকে কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। আমাদের বলা হয়েছিল ২০০২ সালে যাদের স্বামী মারা গেছে তারা অনুদান পাবেন। আমাদের ফরেস্টার অফিসে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। আবেদন করেছিলাম, কিন্তু কোনো সহযোগিতা করা হয়নি।
‘এখন আমার থাকার জায়গা নেই। সরকার থেকে যদি আমার একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে খুবই ভালো হতো।’
শ্যামনগরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এমন অনেক ‘বাঘ বিধবা’ নারীর সঙ্গে দেখা মেলে। কেউ মাছ ধরতে গিয়ে, কেউ মধু আহরণ করতে, কেউ আবার কাঠ কাটতে গিয়ে বাঘের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। উপকূলের নারীদের গল্পগুলো প্রায় একই রকম।
উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর সোরা গ্রামের স্বরবানু খাতুনের স্বামী বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন ২২ বছর আগে। তিনি বলেন, ‘আমার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। স্বামী যখন জীবিত ছিল তখন আমাদের জায়গা ছিল, জমি ছিল, সেখানে সবজি হতো, ধান হতো। ঝড়ে লবণ পানির কারণে আমাদের সবকিছু নষ্ট হয়ে যায়। তারপরে ছেলে-মেয়েদের খাদ্য, বাসস্থান সবকিছু সংকুলান হতো না জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায়। আমার স্বামী বন বিভাগের অনুমতিপত্র নিয়ে সুন্দরবনের মধু ভাঙতে যায়। সেখানে বাঘের আক্রমণে মারা যায়।’
তিনি বলেন, ‘এরপর শ্বশুরবাড়িতে ছিলাম। সে সময় শাশুড়ি বলত, ‘অপায়া, অলক্ষ্মী, ডাইনি, তোর কারণে আজ আমার ছেলেটাকে জঙ্গলে বাঘে খেয়েছে। আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যা।’ এসব কথা বলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ছেলেমেয়ের হাত ধরে বাপের বাড়ি চলে আসি।’
স্বরবানু খাতুন বলেন, ‘আসার পরে বাপের বাড়িতেও আমাদের জায়গা হয় না। ভাবি বলে স্বামীকে বাঘে খাওয়াইছে, আমাদেরও খাওয়াবে- এই বলে আমাদের বের করে দেয়।
‘বাঘ বিধবাদের কেউ মূল্যায়ন করে না। চেয়ারম্যান, মেম্বারের কাছে গেলে বলে তোদের কতজনকে বাঘে খাবে, আর কতজনকে আমরা দেখব। তোদের মতো তোরা কাজকর্ম করে খা।’
তিনি বলেন, ‘এত দিন আমরা আশায় ছিলাম সরকার আমাদের বাঘ বিধবাদের জন্য কিছু করবে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমরা বাঘ বিধবারা সব জায়গা থেকে অবহেলিত। আমাদের জন্য সরকারিভাবে যেন একটা উদ্যোগ নেয়া হয়।’
একই গ্রামের মরিয়ম খাতুন বলেন, ‘১৮ বছর আগে আমার স্বামী সরকারি পাস নিয়ে জঙ্গলে গিয়েছিল। সেখানে বাঘের আক্রমণে নিহত হন। সরকারিভাবে পাস নিয়ে সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হলে সরকারিভাবে অনুদান পায়, কিন্তু আমি একটি টাকাও পায়নি। মাঝেমধ্যে কিছু এনজিও ঈদের সময় চাল, ডাল দিয়ে একটু সহযোগিতা করে, তবে সেটা সীমিত। আগে নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতাম। এখন বয়সের কারণে আর পারছি না।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশের পর কোনো বনজীবী বাঘের আক্রমণে হতাহত হলে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক অনুদানের নিয়ম রয়েছে।
যার নামে বোর্ডের লাইসেন্স করা থাকে তারা এটা পায়, যার নামে লাইসেন্স নেই সে বাঘের আক্রমণে নিহত হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারি অনুদান পায় না।
কী বলছেন জনপ্রতিনিধি
শ্যামনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক দোলন বলেন, ‘সুন্দরবনের উপকূলীয় সাধারণ মানুষ জীবন নির্বাহের জন্য অবৈধভাবে বনের ভেতর প্রবেশ করে। এতে বাঘের আক্রমণে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। বাঘের আক্রমণে নিহতের স্ত্রীকে আমরা একটা নাম দিয়েছি বাঘ বিধবা।
‘আমাদের শ্যামনগর উপজেলায় সাড়ে ৩০০ থেকে পৌনে ৪০০-র মতো বাঘ বিধবা রয়েছে। সরকারি যেসব বরাদ্দ আসে, আমরা তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দিয়ে থাকি।’
তিনি বলেন, ‘আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি অনুদানের ব্যবস্থা করেছি। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বাঘের আক্রমণে নিহতদের পরিবারে ১০ হাজার টাকার বরাদ্দ দেয়।
‘বিভিন্ন এনজিও, সংস্থাগুলো বাঘ বিধবাদের বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি সরকারি সহায়তায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে একটি বরাদ্দ দেয়া হয়। যার নামে বোর্ডের লাইসেন্স করা থাকে, তারা এটা পায়। যার নামে লাইসেন্স নেই সে পায় না। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, যে ব্যক্তি নিহত হয় সেই ব্যক্তিকে যেন ক্ষতিপূরণটা দেয়া হয়।’
শ্যামনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রজ্ঞাপন আসছে কি না আমি জানি না। তবে এটি অচিরেই চলে আসবে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ধরনের অসহায় পরিবারের জন্য আরও সরকারি সহায়তা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বন কর্মকর্তার ভাষ্য
এদিকে যার নামে বোর্ডের লাইসেন্স করা থাকে তারা সরকারি অনুদান পায়, যার নামে লাইসেন্স নেই সে বাঘের আক্রমণে নিহত হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারি অনুদান পায় না- এমন কিছু জানেন না সুন্দরবনে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক কে এম হাসান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী তারা কাগজপত্র জমা দিলে ৩ লাখ টাকা করে পায়। আগে ছিল ১ লাখ, এখন ৩ লাখ টাকা করে পায়। গত ১৫ তারিখের অনুষ্ঠানে ১ জনকে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন কোনো কিছু তো নাই। আইনে আছে যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই টাকা পাবে। তার নামে পাস থাকলে বা সে যদি সহযোগী হিসেবেও যায়, একজন মৃত ব্যক্তির সহযোগী হিসেবে গেলেও সে টাকা পাবে। এখন কার নামে বোর্ড আছে, কার নামে লাইসেন্স আছে, এটা তো দেখার বিষয় না। পাশে কার নাম আছে, সেটাই দেখার বিষয়।’
আরও পড়ুন:জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
মন্তব্য