যশোরে কিশোরীকে বেঁধে পেটানোর মামলার প্রধান আসামি ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান ও তার দুই সহযোগী গ্রেপ্তার হওয়ার এক দিন পরেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এর জন্য মামলার দুর্বল ধারাকে দায়ী করছেন স্থানীয় আইনজীবীরা।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর থেকে কিশোরীর পরিবারকে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সদর উপজেলার চূড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামে গত ১৫ মার্চ ওই কিশোরীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। পিটুনির ঘটনার দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ১ মিনিট ২৯ সেকেন্ড এবং ৪৪ সেকেন্ডের দুটি ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি দোকানে অর্ধশতাধিক মানুষের সামনে কিশোরীকে এলোপাতাড়ি জুতাপেটা করছেন ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান। লাঠি দিয়েও পেটানো হয় কিশোরীকে। কয়েক যুবক তাকে লাথিও দেন।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গত শুক্রবার কিশোরীর বাবা যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। এর পরপরই পুলিশ অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আনিচুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। বাকি তিনজন হলেন আব্দুলপুরের আব্দুর রহমান ভুট্টো, আব্দুল আলীম ও আইয়ুব আলী।
তবে পরদিন শনিবার রাতেই আনিচুর ও তার দুই সহযোগী আব্দুল আলীম ও আইয়ুব আলী জামিনে মুক্তি পান। আরেক আসামি ভুট্টোর বিরুদ্ধে চুরির মামলা থাকায় তাকে কারাগারে পাঠান বিচারক।
তিনজনের জামিনের বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন যশোর সদর কোর্টের জিআরও মুজিবুর রহমান এবং হাজতখানার ইনচার্জ এটিএসআই সন্তোষ কুমার রায়।
জেলার আইনজীবীরা মনে করছেন, স্পর্শকাতর মামলা হলেও দুর্বল ধারার কারণে ইউপি সদস্য ও অন্য দুই আসামি জামিন পেয়েছেন।
যশোর নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি সেতারা খাতুন নিউজবাংলাকে জানান, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মঞ্জুরুল ইসলাম শনিবার ৩ আসামিকে জামিন দেন। অপর আসামির বিরুদ্ধে আগে থেকে চুরির মামলা থাকায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা হলে আসামিরা জামিন পেতেন না বলে মনে করছেন সেতারা খাতুন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় যৌন নিপীড়নের মতো অপরাধের সংজ্ঞা ও দণ্ডের উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে তাহার যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তাহার শরীরের যেকোনো অঙ্গ বা কোনো বস্তু দ্বারা কোনো নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোনো নারীর শ্লীলতাহানি করেন তাহা হইলে তাহার এই কাজ হইবে যৌন পীড়ন এবং তজ্জন্য উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যূন তিন বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।’
এর পরিবর্তে কিশোরীকে নির্যাতন মামলায় মোট দণ্ডবিধির পাঁচটি ধারা রয়েছে। এগুলো হলো ১৪৩, ৩২৩, ৩৪১, ৩৫৪, ৩৭৯, ৫০৬ ধারা। এসব ধারার সবই জামিনযোগ্য অপরাধসংক্রান্ত।
ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো বেআইনি সমাবেশের সদস্য হবে, সে ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, যার মেয়াদ ছয় মাস পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
মামলা রেকর্ড করার সময় ৩৫৪ ধারা না দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারা দেয়া হলে আসামিদের কেউ জামিন পেতেন না। সবাই কারাগারে যেতেন।
‘ইচ্ছাকৃত আঘাতদানের শাস্তি’র প্রসঙ্গ রয়েছে ৩২৩ ধারায়। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি, ধারা-৩৩৪ এ ব্যবস্থিত ক্ষেত্র ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দান করে, তাহলে ওই ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ এক বৎসর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে- যার পরিমাণ এক হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
‘অবৈধ বাধাদানের শাস্তি’র প্রসঙ্গ রয়েছে ৩৪১ ধারায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘যদি কেউ, কোনো ব্যক্তিকে অবৈধভাবে বাধাদান করে, তাহলে ওই ব্যক্তি বিনাশ্রম কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ এক মাস পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে- যার পরিমাণ পাঁচশত টাকা পর্যন্ত হতে পারে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
‘শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কোনো নারীর ওপর আক্রমণ বা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ’-এর শাস্তি বর্ণিত আছে ৩৫৪ ধারায়। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি, কোনো স্ত্রীলোকের শ্লীলতাহানির অভিপ্রায়ে বা সে তদ্বারা তার শ্লীলতাহানি হতে পারে জেনে তাকে আক্রমণ করে বা তৎপ্রতি অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করে, তাহলে সে ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ দুই বৎসর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।’
৩৭৯ ধারায় চুরির কথা আছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি চুরি করে তাহলে সে ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ তিন বৎসর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।’
আর ‘অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শনের শাস্তি’র প্রসঙ্গ রয়েছে ৫০৬ ধারায়। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শনের অপরাধ সংঘটন করে, তাহলে সে ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ দুই বৎসর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।’
কিশোরীর ওপর নির্মম সহিংসতার ঘটনার মামলায় এ ধরনের দুর্বল ও কম শাস্তির ধারা যুক্ত করায় বিস্মিত যশোরের স্থানীয় মানুষ।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী ফরিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলায় শ্লীলতাহানির ধারা দেয়া হয়েছে ৩৫৪। অথচ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারা দেয়া যেত, যা জামিন অযোগ্য।
আমার মেয়েকে এমনভাবে পেটানো হয়েছে, তার সমস্ত শরীরে কালো দাগ হয়ে গেছে। সে এখনও রাতে ভয়ে কেঁপে উঠছে।
‘মামলা রেকর্ড করার সময় ৩৫৪ ধারা না দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারা দেয়া হলে আসামিদের কেউ জামিন পেতেন না। সবাই কারাগারে যেতেন।’
অভিযোগ উঠেছে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরই অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আনিচুর ও তার দুই সহযোগী এলাকায় ফিরে বাদীপক্ষকে হুমকি দিচ্ছেন। কিশোরীর মা নিউজবাংলার কাছে এ অভিযোগ করেন।
নির্যাতিত কিশোরী এখনও যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সে নিউজবাংলাকে বলে, ‘দূর সম্পর্কের এক কাজিনের সঙ্গে একই ইউনিয়নের এনায়েতপুরে ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিলাম। এরপর মোটরসাইকেলে করে ফেরার পথে আমার সঙ্গে থাকা ছেলেটার সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে মেম্বার আনিচুর রহমান সবার সামনে আমাকে জুতা ও লাঠিপেটা করে। বারবার আকুতি জানালেও তিনিসহ অন্যরা আমাকে ছাড়েননি।’
সঙ্গী ছেলেটির কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন ওই কিশোরী।
ওই কিশোরীর মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মেয়েকে এমনভাবে পেটানো হয়েছে, তার সমস্ত শরীরে কালো দাগ হয়ে গেছে। সে এখনও রাতে ভয়ে কেঁপে উঠছে। আমার মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে তার বিচার চাই। আনিচুর মেম্বার এখন আমাদের হুমকি দিচ্ছেন।’
তবে জামিনে মুক্তি পাওয়া ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান হুমকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে সামাজিকভাবে অপদস্থ করার জন্য একটি মহল এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই সালাউদ্দিন খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি চাঞ্চল্যকর। আমি সব আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপরাধের কথা শিকার করেছেন। তাদের দাবি, অনৈতিক কাজের অভিযোগে মেয়েটিকে মারধর করা হয়।’
প্রধান অভিযুক্তসহ তিনজনের জামিন পাওয়ার বিষয়টি রোববার রাতে ‘লোক মারফত’ জেনেছেন বলে দাবি করেন এসআই সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জানতে পেরেছি ইউপি সদস্যসহ তিনজনের জামিন হয়েছে। এতে মামলার তদন্তে বিঘ্ন ঘটতে পারে।’
নারী নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে সালাউদ্দিন বলেন, ‘ওই ধারায় মামলা হয় শ্লীলতাহানি হলে। কিন্তু মেয়েটিকে মারা হয়েছে বলে ১০ ধারায় মামলা হয়নি। মারপিটের মামলা করা হয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি প্রশ্ন শুনেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:আনসার সদস্য তরিকুল ইসলাম। বাড়ি তার বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর গ্রামে। বর্তমানে ঢাকার সুত্রাপুর থানায় কর্মরত।
৩৮ বছর বয়সী এ যুবকের নেশা বিয়ে করা। যেখানেই যান সেখানেই তিনি বিয়ে করেন। এ পর্যন্ত ৭টি বিয়ে করেছেন।
সর্বশেষ তিনি বিয়ে করেন ঝিনাইদহ শহরের পবহাটি এলাকার। ঢাকায় থাকাকালে সেঁজুতি নামের পবহাটির একটি মেয়ের সঙ্গে সপ্তমবারের মতো সংসার শুরু করেন তিনি।
তবে এর মানে এই নয় যে, তার আগের সব স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় স্ত্রী পারভীন তার গ্রামের বাড়িতে এবং ষষ্ঠ স্ত্রী রয়েছেন যশোরের বেনাপোলে। ২ স্ত্রীর ঘরে ২টি সন্তানও রয়েছে তরিকুলের।
সম্প্রতি সংসার জীবন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই যুবক। স্বামীকে ফিরে পেতে আড়াই বছরের মেয়েকে নিয়ে ঝিনাইদহের পবহাটিতে আসেন ষষ্ঠ স্ত্রী হোসনে আরা আক্তার সাথী। তরিকুলকে স্বামী দাবি করলে সেখানে বেঁধে যায় রণক্ষেত্র। স্বামীকে নিয়ে সেঁজুতির সঙ্গে শুরু হয় তার কাড়াকাড়ি। কোনো উপায় না পেয়ে পালিয়ে যান আনসার সদস্য তরিকুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে সাথী জানান, বেনাপোল বন্দরে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজেকে এতিম পরিচয় দিয়ে তাকে বিয়ে করেন তরিকুল। ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তাদের বিয়ের পর থেকে একসঙ্গেই ছিলেন দুজন। তবে ২০২২ সালে বদলি হয়ে ঢাকায় চলে যান তরিকুল। তার কিছুদিন পর থেকে সাথীর সঙ্গে তার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ।
তিনি জানান, ঢাকায় বদলি হওয়ার পর থেকে তার ও তাদের সন্তানের কোনো খরচ পাঠাতেন না তরিকুল। এরই মধ্যে সেঁজুতির সঙ্গে তার ইমোতে পরিচয় হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে সেঁজুতিকে বিয়ে করেন তিনি।
সাথী বলেন, ‘গত ঈদে আমার কাছে গিয়ে ৬ দিন ছিল। সেখানে আমাকে ভুলিয়ে আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে চলে আসে। তারপর আবার সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমার আড়াই বছরের মেয়েটি বাবার জন্য সব সময় কান্নাকাটি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী ঝিনাইদহ আছে- এমন খবর পেয়ে আমরা ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আর এর মধ্যে আবার পালিয়েছে সে (তরিকুল)। আমি তরিকুল ও সেঁজুতির বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে আনসার সদস্য তরিকুলের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:শেরপুরে দুর্বৃত্তের হামলায় ভূমি অফিসের দুই কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। ঘটনার পর হামলাকারীরা ‘ভূমিদস্যু’ বলে অভিযোগ করেছেন আহত কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটার দিকে সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের নন্দীবাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহত দুই কর্মকর্তা হলেন- সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. শহীদুল ও কামারেরচর ভূমি অফিসের নায়েব শহীদুল ইসলাম।
শেরপুর সদর থানার ওসি এমদাদুল হক এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার কামারেরচর থেকে কাজ শেষে মোটরসাইকেলে শহরে ফেরার পথে শেরপুর-জামালপুর সড়কের নন্দীবাজার এলাকায় কয়েকজন ব্যক্তি ওই দুই কর্মকর্তার গতিরোধ করেন। এ সময় সার্ভেয়ার মোটরসাইকেলটি থামানোর সঙ্গে সঙ্গে অতর্কিত পেছন থেকে তাদের দুজনকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি দিতে থাকে এবং একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে সার্ভেয়ার শহীদুলের মাথায় আঘাত করে। এ সময় তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এরপর স্থানীয়রা তাদের শেরপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে আহত সার্ভেয়ার শহীদুল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অপরজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে যান।
আহত সার্ভেয়ার ও নায়েব বলেন, লসমনপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর এলাকার মো. সেলিম মিয়া ও তার ছেলেসহ আরও কয়েকজন এ হামলা চালান। হামলাকারীরা এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু। তাদের নামে শেরপুর সি আর আমলী আদালতে জাল দলিল তৈরি করে ভূমি জালিয়াতি করায় সরকার পক্ষের একটি মামলা চলছে। এরই জেরে তারা পরিকল্পিত এ হামলা চালিয়েছেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তারা।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের আশুলিয়ায় একটি নির্জন বাঁশবাগানের ভেতর থেকে এক নারী পোশাকশ্রমিকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আশুলিয়ার কাঠগড়া নয়াপাড়া এলাকার বাঁশবাগান থেকে শুক্রবার সকালে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো আনজু খাতুন আশুলিয়ার নরসিংহপুরের হা-মীম গ্রুপের একটি তৈরি পোশাক কারখানার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি গাইবান্ধা সদর থানার ঘাগুয়া ইউনিয়নে।
পুলিশের ভাষ্য, বাঁশবাগানের ভেতর নারী পোশাকশ্রমিকের মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। এর পরিপ্রেক্ষিতে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ আরও জানায়, ওই নারীর গলায় ঝোলানো পরিচয়পত্রে দেখা যায়, তিনি হা-মীম গ্রুপের একটি পোশাক কারখানার অপারেটর।
হা-মীম গ্রুপের টিআইএসডব্লিএল-১ কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আনজু খাতুন নামে এক নারী শ্রমিক গতকাল রাত ৯টা ১৫ মিনিটের পরে কারখানা থেকে বাসায় যায়, কিন্তু আজ সকালে তিনি আর কারখানায় আসেননি।
‘পরে লাইনের সুপারভাইজার আনজুকে কল দিলেও সে রিসিভ করেনি।’
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ভজন চন্দ্র বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে কেউ তাকে (পোশাকশ্রমিক) হত্যা করে ফেলে রেখে যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।’
আরও পড়ুন:লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম ডাকু (২২) নামের বাংলাদেশি রাখাল নিহত হয়েছেন।
উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালাংগী বিজিবি ক্যাম্পের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলার এলাকায় শুক্রবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও যুবকের পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে কয়েকজন রাখালসহ শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সীমান্তের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলারের ওপারে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় গরু আনতে যান আবুল কালাম ডাকু। গরু নিয়ে ফেরার পথে শুক্রবার ভোররাতে বিএসএফের ডোরাডাবরী ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ডাকু গুরুতর আহত হলে সঙ্গীরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে বাংলাদেশ সীমান্তে। পরে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ঝালাংগী ক্যাম্পের ইনচার্জ নায়েক সুবেদার নুরুল আমিন বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম ডাকু নামে একজন যুবক নিহত হয়েছেন। পাটগ্রাম থানা পুলিশ পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহতের মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।’
নিহত যুবকের মা মমতা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কী অপরাধের জন্য বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করল জানি না। আমি এই হত্যার বিচার চাই।’
পাটগ্রাম থানার ওসি আবু সাইদ বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে আহত যুবক আবুল কালাম ডাকুকে পরিবারের সদস্যরা পাটগ্রাম হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যান। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় একটি ইউডি (অপমৃত্যুর) মামলা করা হবে।’
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়ায় অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখার ভল্ট থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ওই ব্যাংকের প্রধান তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তিনজনকে আটক করা হয়। দিনভর নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাদের সাঁথিয়া থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তিনজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার আবু জাফর, ব্যবস্থাপক হারুন বিন সালাম ও ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী, যাদের বাড়ি পাবনার বিভিন্ন উপজেলায়।
পুলিশের ভাষ্য, টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী।
সাঁথিয়া থানা ও অগ্রণী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে অগ্রণী ব্যাংক রাজশাহী বিভাগীয় ও পাবনা আঞ্চলিক শাখা থেকে পাঁচ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আকস্মিক অডিটে আসেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখায়। অডিট শেষে সেখানে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকার আর্থিক অনিয়ম দেখতে পান তারা। পরে অডিট কর্মকর্তা সাঁথিয়া থানাকে অবহিত করলে পুলিশ অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় অগ্রণী ব্যাংক পাবনা আঞ্চলিক শাখার উপমহাব্যবস্থাপক রেজাউল শরীফ বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় অভিযোগ করেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে বিভাগীয় অফিস থেকে পাঁচ সদস্যের অডিট টিম ব্যাংকে অডিট শুরু করে। ওই টিমের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনজনের কাছ থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে রাতে তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, আটককৃতদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
তিনি আরও বলেন, অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্তে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য