যশোরে কিশোরীকে বেঁধে পেটানোর মামলার প্রধান আসামি ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান ও তার দুই সহযোগী গ্রেপ্তার হওয়ার এক দিন পরেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এর জন্য মামলার দুর্বল ধারাকে দায়ী করছেন স্থানীয় আইনজীবীরা।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর থেকে কিশোরীর পরিবারকে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সদর উপজেলার চূড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামে গত ১৫ মার্চ ওই কিশোরীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। পিটুনির ঘটনার দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ১ মিনিট ২৯ সেকেন্ড এবং ৪৪ সেকেন্ডের দুটি ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি দোকানে অর্ধশতাধিক মানুষের সামনে কিশোরীকে এলোপাতাড়ি জুতাপেটা করছেন ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান। লাঠি দিয়েও পেটানো হয় কিশোরীকে। কয়েক যুবক তাকে লাথিও দেন।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গত শুক্রবার কিশোরীর বাবা যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। এর পরপরই পুলিশ অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আনিচুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। বাকি তিনজন হলেন আব্দুলপুরের আব্দুর রহমান ভুট্টো, আব্দুল আলীম ও আইয়ুব আলী।
তবে পরদিন শনিবার রাতেই আনিচুর ও তার দুই সহযোগী আব্দুল আলীম ও আইয়ুব আলী জামিনে মুক্তি পান। আরেক আসামি ভুট্টোর বিরুদ্ধে চুরির মামলা থাকায় তাকে কারাগারে পাঠান বিচারক।
তিনজনের জামিনের বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন যশোর সদর কোর্টের জিআরও মুজিবুর রহমান এবং হাজতখানার ইনচার্জ এটিএসআই সন্তোষ কুমার রায়।
জেলার আইনজীবীরা মনে করছেন, স্পর্শকাতর মামলা হলেও দুর্বল ধারার কারণে ইউপি সদস্য ও অন্য দুই আসামি জামিন পেয়েছেন।
যশোর নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি সেতারা খাতুন নিউজবাংলাকে জানান, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মঞ্জুরুল ইসলাম শনিবার ৩ আসামিকে জামিন দেন। অপর আসামির বিরুদ্ধে আগে থেকে চুরির মামলা থাকায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা হলে আসামিরা জামিন পেতেন না বলে মনে করছেন সেতারা খাতুন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় যৌন নিপীড়নের মতো অপরাধের সংজ্ঞা ও দণ্ডের উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে তাহার যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তাহার শরীরের যেকোনো অঙ্গ বা কোনো বস্তু দ্বারা কোনো নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোনো নারীর শ্লীলতাহানি করেন তাহা হইলে তাহার এই কাজ হইবে যৌন পীড়ন এবং তজ্জন্য উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যূন তিন বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।’
এর পরিবর্তে কিশোরীকে নির্যাতন মামলায় মোট দণ্ডবিধির পাঁচটি ধারা রয়েছে। এগুলো হলো ১৪৩, ৩২৩, ৩৪১, ৩৫৪, ৩৭৯, ৫০৬ ধারা। এসব ধারার সবই জামিনযোগ্য অপরাধসংক্রান্ত।
ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো বেআইনি সমাবেশের সদস্য হবে, সে ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, যার মেয়াদ ছয় মাস পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
মামলা রেকর্ড করার সময় ৩৫৪ ধারা না দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারা দেয়া হলে আসামিদের কেউ জামিন পেতেন না। সবাই কারাগারে যেতেন।
‘ইচ্ছাকৃত আঘাতদানের শাস্তি’র প্রসঙ্গ রয়েছে ৩২৩ ধারায়। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি, ধারা-৩৩৪ এ ব্যবস্থিত ক্ষেত্র ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দান করে, তাহলে ওই ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ এক বৎসর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে- যার পরিমাণ এক হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
‘অবৈধ বাধাদানের শাস্তি’র প্রসঙ্গ রয়েছে ৩৪১ ধারায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘যদি কেউ, কোনো ব্যক্তিকে অবৈধভাবে বাধাদান করে, তাহলে ওই ব্যক্তি বিনাশ্রম কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ এক মাস পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে- যার পরিমাণ পাঁচশত টাকা পর্যন্ত হতে পারে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
‘শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কোনো নারীর ওপর আক্রমণ বা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ’-এর শাস্তি বর্ণিত আছে ৩৫৪ ধারায়। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি, কোনো স্ত্রীলোকের শ্লীলতাহানির অভিপ্রায়ে বা সে তদ্বারা তার শ্লীলতাহানি হতে পারে জেনে তাকে আক্রমণ করে বা তৎপ্রতি অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করে, তাহলে সে ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ দুই বৎসর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।’
৩৭৯ ধারায় চুরির কথা আছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি চুরি করে তাহলে সে ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ তিন বৎসর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।’
আর ‘অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শনের শাস্তি’র প্রসঙ্গ রয়েছে ৫০৬ ধারায়। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শনের অপরাধ সংঘটন করে, তাহলে সে ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ দুই বৎসর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।’
কিশোরীর ওপর নির্মম সহিংসতার ঘটনার মামলায় এ ধরনের দুর্বল ও কম শাস্তির ধারা যুক্ত করায় বিস্মিত যশোরের স্থানীয় মানুষ।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী ফরিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলায় শ্লীলতাহানির ধারা দেয়া হয়েছে ৩৫৪। অথচ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারা দেয়া যেত, যা জামিন অযোগ্য।
আমার মেয়েকে এমনভাবে পেটানো হয়েছে, তার সমস্ত শরীরে কালো দাগ হয়ে গেছে। সে এখনও রাতে ভয়ে কেঁপে উঠছে।
‘মামলা রেকর্ড করার সময় ৩৫৪ ধারা না দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারা দেয়া হলে আসামিদের কেউ জামিন পেতেন না। সবাই কারাগারে যেতেন।’
অভিযোগ উঠেছে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরই অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আনিচুর ও তার দুই সহযোগী এলাকায় ফিরে বাদীপক্ষকে হুমকি দিচ্ছেন। কিশোরীর মা নিউজবাংলার কাছে এ অভিযোগ করেন।
নির্যাতিত কিশোরী এখনও যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সে নিউজবাংলাকে বলে, ‘দূর সম্পর্কের এক কাজিনের সঙ্গে একই ইউনিয়নের এনায়েতপুরে ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিলাম। এরপর মোটরসাইকেলে করে ফেরার পথে আমার সঙ্গে থাকা ছেলেটার সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে মেম্বার আনিচুর রহমান সবার সামনে আমাকে জুতা ও লাঠিপেটা করে। বারবার আকুতি জানালেও তিনিসহ অন্যরা আমাকে ছাড়েননি।’
সঙ্গী ছেলেটির কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন ওই কিশোরী।
ওই কিশোরীর মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মেয়েকে এমনভাবে পেটানো হয়েছে, তার সমস্ত শরীরে কালো দাগ হয়ে গেছে। সে এখনও রাতে ভয়ে কেঁপে উঠছে। আমার মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে তার বিচার চাই। আনিচুর মেম্বার এখন আমাদের হুমকি দিচ্ছেন।’
তবে জামিনে মুক্তি পাওয়া ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান হুমকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে সামাজিকভাবে অপদস্থ করার জন্য একটি মহল এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই সালাউদ্দিন খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি চাঞ্চল্যকর। আমি সব আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপরাধের কথা শিকার করেছেন। তাদের দাবি, অনৈতিক কাজের অভিযোগে মেয়েটিকে মারধর করা হয়।’
প্রধান অভিযুক্তসহ তিনজনের জামিন পাওয়ার বিষয়টি রোববার রাতে ‘লোক মারফত’ জেনেছেন বলে দাবি করেন এসআই সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জানতে পেরেছি ইউপি সদস্যসহ তিনজনের জামিন হয়েছে। এতে মামলার তদন্তে বিঘ্ন ঘটতে পারে।’
নারী নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে সালাউদ্দিন বলেন, ‘ওই ধারায় মামলা হয় শ্লীলতাহানি হলে। কিন্তু মেয়েটিকে মারা হয়েছে বলে ১০ ধারায় মামলা হয়নি। মারপিটের মামলা করা হয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি প্রশ্ন শুনেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য