কয়েক বছর ধরে মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন রাজধানীর গৃহবধূ আফরোজা। চিকিৎসা নিতে রাজধানীর সরকারি একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ব্যবস্থাপত্র দেন চিকিৎসক। ব্যবস্থাপত্রে পাঁচটি ওষুধের নাম লেখা হলেও একটিতেও ওষুধের জেনেরিক নাম লেখা হয়নি। ব্যবস্থাপত্রে রোগের নামও উল্লেখ করেননি চিকিৎসক।
শুধু এই রোগী নন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের বড় অংশের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটছে।
৯০ শতাংশ চিকিৎসকই ব্যবস্থাপত্রে পছন্দের কোম্পানির ওষুধের বাণিজ্যিক নাম লিখে দিচ্ছেন। আর রোগীদের বাড়তি অর্থ দিয়ে কিনতে হচ্ছে সেই ওষুধ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ফিজিশিয়ান প্র্যাকটিস ম্যানুয়ালের তথ্য বলছে, রোগীর জন্য সহজলভ্য ও দাম তুলনামূলক কম, এমন ওষুধের জেনেরিক নাম লিখতে হবে ব্যবস্থাপত্রে।
২০১৭ সালে হাইকোর্ট এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে। তাতে বলা হয়, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের জেনেরিক নাম লিখতে হবে। একই সঙ্গে স্পষ্ট অক্ষরে ‘পড়ার উপযোগী করে’ ব্যবস্থাপত্র লিখতে হবে।
নির্দেশনাটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ৩০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল। বাস্তবতা হলো পাঁচ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এসব নির্দেশনার কোনোটিই মানছেন না দেশের চিকিৎসকরা।
এই নীতি বাস্তবায়ন করতে হলে আগে দেখতে হবে অন্য দেশে ওষুধ বিক্রেতা কারা, আর আমাদের দেশে কারা ওষুধ বিক্রি করে। এখানে ওষুধের দোকানগুলোর কত শতাংশে রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট আছেন?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ব্যবস্থাপত্র লেখার সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি রয়েছে। এটি অমান্য করলে শাস্তির বিধানও রয়েছে। তবে বাংলাদেশে এমন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও চিকিৎসক সংগঠনের নেতারা বলছেন, শুধু নির্দেশনা দিলেই চলবে না। ব্যবস্থাপত্রে জেনেরিক নাম লেখার নির্দেশনা বাস্তবায়নের আগে ওষুধের দোকানগুলোতে ফার্মাসিস্ট থাকাটা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর ওষুধের সমান মান নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে জটিলতা বাড়বে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম এ ফয়েজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই নীতি বাস্তবায়ন করতে হলে আগে দেখতে হবে অন্য দেশে ওষুধ বিক্রেতা কারা, আর আমাদের দেশে কারা ওষুধ বিক্রি করে। এখানে ওষুধের দোকানগুলোর কত শতাংশে রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট আছেন? বাইরের দেশে শতভাগ এই নীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কারণ সেখানে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ওষুধের দোকানে ফার্মাসিস্ট ওষুধ বিক্রি করেন। আমাদের দেশে এটা নেই।’
‘ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের জেনেরিক লেখাটা ভালো। তবে এই নির্দেশনা রাতারাতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমেই ফার্মাসিস্ট না থাকা ওষুধের দোকানগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। এক রোগ সারানোর জন্য একাধিক কোম্পানির ওষুধ বাজারে রয়েছে। সব ওষুধের গুণগত মানও এক নয়। এই ব্যবস্থাপত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া একজন বিক্রেতার কাছে গেলে তো সমস্যা। তিনি মানসম্পন্ন ওষুধ দিতে পারবেন কি না, সেই সংশয় থেকে যায়। ওষুধের দোকানে রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট বসলে তখন এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব।’
দেশে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন করে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি। তাই জেনেরিক নাম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার আগে সব কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধের মান শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।
ইতোমধ্যে কিছু কিছু বেসরকারি হাসপাতালে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখার বিধান চালু হয়েছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ টি এম জাফরুল আজিম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘জেনেরিক নামে লিখলে ফার্মেসিগুলো ভালো মানের ওষুধ দিতে পারে রোগীকে। আর ব্যবস্থাপত্রে একটি কোম্পানির ওষুধ লিখলে ফার্মেসিগুলো সেই কোম্পানির ওষুধ দিতে বাধ্য থাকবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে ফার্মেসিগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিম্নমানের ওষুধ দেন রোগীকে।’
দীর্ঘদিনেও এ-সংক্রান্ত আইন না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ড. জাফরুল আজিম বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকারের পলিসিগত দুর্বলতা আছে। ওষুধ কোম্পানিগুলোর স্বার্থগত বিষয়ও আছে। সরকার চাইলে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হতো। যেমন কিছু হাসপাতাল এই প্র্যাকটিসটা করছে। স্কয়ার, এভারকেয়ারসহ আরও কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসকের দেয়া ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের জেনেরিক নাম ব্যবহার হচ্ছে।’
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশিদ-ই মাহবুব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন করে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি। তাই জেনেরিক নাম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার আগে সব কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধের মান শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য