ভারতের জনগণকে তাদের ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতা’ ত্যাগ করতে এবং তাদের নিজস্ব পরিচয়ে গর্ব করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির উপরাষ্ট্রপতি এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু। বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার গেরুয়াকরণের জন্য অভিযুক্ত করা হয়, কিন্তু গেরুয়ার দোষ কী? সর্বে ভবনতু সুখিনাহ (সবাই সুখী) এবং বাসুধৈব কুটুম্বকম (বিশ্ব একটি পরিবার), যা আমাদের প্রাচীন গ্রন্থে থাকা দর্শন, যা আজও ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পথপ্রদর্শক।’
হরিদ্বারের দেব সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশীয় শান্তি ও পুনর্মিলন ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনের পর এসব কথা বলেন তিনি।
উপরাষ্ট্রপতি নাইডু ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে শিক্ষার ম্যাকোলে পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এটি দেশে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে একটি বিদেশি ভাষা চাপিয়েছে এবং শিক্ষাকে অভিজাতদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছে।’
উপরাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘শতাব্দীর ঔপনিবেশিক শাসন আমাদের নিজেদের একটি নিকৃষ্ট জাতি হিসেবে দেখতে শিখিয়েছে। আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যগত জ্ঞানকে তুচ্ছ করতে শেখানো হয়েছে। এটি জাতি হিসেবে আমাদের বিকাশকে মন্থর করে দিয়েছে।
‘আমাদের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে একটি বিদেশি ভাষা আরোপ করে শিক্ষাকে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। সমাজের একটি ছোট অংশ, একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে গর্ব করা উচিত। আমাদের অবশ্যই শিকড়ে ফিরে যেতে হবে। অবশ্যই আমাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। আমাদের যত সম্ভব ভারতীয় ভাষা শিখতে হবে। অবশ্যই আমাদের মাতৃভাষাকে ভালোবাসতে হবে। আমাদের ধর্মগ্রন্থগুলোকে জানার জন্য আমাদের অবশ্যই সংস্কৃত শিখতে হবে, যা জ্ঞানের ভান্ডার।’
তরুণদের মাতৃভাষা প্রচারে উৎসাহিত করে নাইডু বলেন, ‘আমি সেই দিনের অপেক্ষায় রয়েছি, যেদিন একটি নিজ নিজ রাজ্যের মাতৃভাষায় সব গেজেট নোটিফিকেশন জারি করা হবে। আপনার মাতৃভাষা আপনার দৃষ্টিশক্তির মতো, যেখানে একটি বিদেশি ভাষা সম্পর্কে আপনার জ্ঞান চশমার মতো।’
এক সময় দেশের অর্থনীতির প্রধান ভরসা ছিলো সোনালি আঁশ পাট। উত্তরাঞ্চলের কৃষক আজও এই ঐতিহ্যবাহী ফসলের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু একের পর এক মৌসুমে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় গাইবান্ধার পাটচাষিদের মনে দানা বাঁধছে হতাশা। এবছর বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতি থাকলেও সেই বাড়তি লাভ পৌঁছায়নি কৃষকের ঘরে। ফলে হাট-বাজারজুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে বঞ্চনা আর নিরাশার দীর্ঘশ্বাস।
পাটচাষের সঙ্গে জড়িত কৃষক ও স্থানীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি তৎপরতার ঘাটতি, পাটকল মালিকদের প্রভাব এবং ফরিয়া-সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যই এই সংকটের মূল কারণ। তাদের আশঙ্কা এই অব্যবস্থাপনা চলতে থাকলে পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে কৃষক।
কমছে চাষের পরিমাণ:
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী জেলায় পাট চাষাবাদের ৫ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কেবল চলতি মওসুমে (২০২৫-২০২৬ অর্থ বছর) মাত্র ৩২ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বাড়লেও গত কয়েক বছর থেকে কমছে পাট চাষ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১ সালে জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয় পাট। তার পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ৬৮৭ হেক্টর কমে ১৪ হাজার ৩১৩ হেক্টর, ২০২৩ সালেও একই পরিমাণ এবং ২০২৪ সালে আরো ৫২৩ হেক্টর কমে চাষ হয় ১৩ হাজার ৭৯০ হেক্টর পাট।
অন্যদিকে, কোনোও বছরই চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি কৃষি বিভাগ।
এ বছর দাম বাড়লেও নেই কৃষকের লাভ:
ফুলছড়ি হাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৯০০ থেকে চার হাজার ২০০ টাকায়— যা দেড় মাস আগেও ছিলো দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৭০০ টাকার মধ্যে। দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কৃষকের ঘরে নেই আনন্দ। কারণ, অধিকাংশ কৃষক আগেই কম দামে পাট বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন ঋণ শোধের চাপে।
চাষি আব্দুল হালিম ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এখন দাম ভালো, আমাদের ঘরে তো পাট নাই । কাটার সময় দাম ছিলো আড়াই-তিন হাজার। ধার শোধ করতে না পারলে তো চলবে না। এখন যারা মজুদ রেখেছে, তারাই লাভ করছে।
ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের খোলাবাড়ি গ্রামের পাটচাষী জসমত আলী বলেন, “সার, বীজ, কীটনাশক, শ্রমিক— সবকিছুর খরচ বেড়েছে। আবার বন্যা-খরার ঝুঁকি নিতে হয়। এত পরিশ্রম করেও দাম না পাওয়ায় পাট চাষ এখন বোঝা মনে হয়। কিছু করারও নাই আমাদের। এসব চরের জমিতে এই সময়ে পাট ছাড়া কিছু করতেও পারিনা আমরা।
একই আরেক পাট বিক্রেতা আলিম উদ্দিন হোসেন বলেন, সরকার যদি মৌসুমের শুরু থেকেই আমাদের কাছ থেকে পাট কিনে, তাহলে আমরা একটু বাঁচতে পারবো। না হলে এই চাষ বন্ধ হয়ে যাবে।” আমরা সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিবছর মরে যাচ্ছি।
সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে বাজার:
কৃষকদের অভিযোগ, বন্যা-খরাসহ নানা দুর্যোগের ঝুঁকি, হারভাঙ্গা খাটুনি আর ধার-দেনা করে পাট চাষ করে কৃষক। আর মৌসুমের শুরুতেই পাটকল মালিক ও ফড়িয়ারা আঁতাত করে দাম কমিয়ে রাখেন। পরে সেই পাটই তারা মজুদ করে অধিক দামে বিক্রি করেন। বছরের পর বছর এই ‘অদৃশ্য সিন্ডিকেট’ই বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে।
পাইকারদের ভিন্ন ব্যাখ্যা:
অন্যদিকে কৃষকদের অভিযোগের দায় নিচ্ছেনা পাইকাররা । ফুলছড়ি হাটের পাইকার শাহ আলম বলেন, “আমরা নিজেরা দাম ঠিক করি না। মিল মালিকরা যে দামে কিনতে বলেন, সেই দামে আমরা পাট কিনি।”
কৃষকদের আক্ষেপ, প্রত্যাশা সরকারি হস্তক্ষেপ:
একদিকে বন্যা, খরা, আগাম বর্ষা-প্রকৃতির অনিশ্চয়তা; অন্যদিকে বাজারের অন্যায় খেলা-সব মিলিয়ে পাট চাষ এখন কৃষকদের কাছে লাভের নয়, বরং লোকসানের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবুও আশা ছাড়েননি। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নিলে ভাঙবে 'সিন্ডিকেটের জাল’, ফিরবে পাটের সোনালী অতীত এমনই প্রত্যাশা গাইবান্ধার পাটচাষিদের।
উন্নয়ন সংগঠন সাদ্দাম হোসেন বলেন, হাটে-হাটে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাট কেনা হলে কৃষকরা অবশ্যই লাভবান হবেন। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি এই কৃষকরা। কৃষিনির্ভর এই দেশে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে কৃষককে আগে বাঁচাতে হবে। "কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পাট কেনা হচ্ছে না ফলে লাভবান হচ্ছেন ফড়িয়া-পাইকারেরা।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিকুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, “জেলায় বর্তমানে পাটের বাজার স্থিতিশীল। কৃষকদের উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। তবে পাটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারি সব দপ্তরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়া সহজ হবে, এমন প্রচারণা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা।’
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী ওলামা দল আয়োজিত কোরআন অবমাননা ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, জামায়াত ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা কিছু ছেলেপেলেকে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচার, কটূক্তি ও করুচিপূর্ণ কথা ছড়ানোর বাহিনী গড়ে তুলেছে। এরা মিথ্যাকে সাজিয়ে গুছিয়ে প্রচার করছে প্রতিনিয়ত।
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াত আওয়ামী লীগের লেজ ধরে চলতে ভালোবাসে, এখনো কেন যেন আওয়ামী লীগের ভোট নেওয়ার জন্য কায়দা কানুন করছে। শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ইসলামের মৌলিক নীতির বাইরে কথা বলছে তারা।’
সাধারণ মানুষ পিআর সম্পর্কে জানে না জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘যারা নভেম্বরে গণভোটের কথা বলছেন তাদের কোনো মাস্টারপ্ল্যান আছে, তারা শর্ত দিয়ে বিভ্রান্ত করে জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চাচ্ছে।’
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, আগামীর স্বপ্নপূরণে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য প্রস্তুতি লাগবে।
তিনি বলেন, যোগ্য হয়েই সুযোগ্য স্থানে অধিষ্ঠিত হতে হবে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।
গতকাল সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র সংসদের আয়োজনে ১ম এমডিসি জাতীয় স্কুল, কলেজ ও আন্তঃমাদ্রাসা বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্রান্ড ফিনালে ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমাদেরকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আমরা একটি স্থানে আসতে পেরেছি। এখানেই শেষ নয়, আরো বহুদূর যেতে হবে। এই পথ পাড়ি দিতে কোনো বাঁধা আসলে আমাদেরকে থেমে গেলে চলবে না। সকল বাঁধা অতিক্রম করেই এগিয়ে যেতে হবে।’
ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. খালিদ বলেন, সকল ভেদাভেদ ও মতপার্থক্য ভুলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যে সুযোগ এসেছে সেটাকে পরিপূর্ণ কাজে লাগাতে হবে। এ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে আমাদেরকে বহুবছর সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি সকলকে কালেমা তায়্যেবার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানান।
পরে উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী দলের সদস্যদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
উল্লেখ্য, তিন মাসব্যাপী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ক্যাটাগরিতে এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সারাদেশের ৫৪টি প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
স্কুল ক্যাটেগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মুগদা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রানারআপ হয়েছে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
কলেজ ও উন্মুক্ত ক্যাটাগরিতে নটর ডেম কলেজ চ্যাম্পিয়ন এবং মনিপুর স্কুল ও কলেজ রানারআপ হয়েছে।
মাদ্রাসা ক্যাটাগরিতে তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা চ্যাম্পিয়ন এবং বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ খলিলুর রহমান মাদানীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ড. শামসুল আলম, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. মনিরুজ্জামান ভূইয়া, আল ফাতাহ পাবলিকেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সাঈদ, ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি আবু সাদিক কায়েম, তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান প্রফেসর নুরুন্নবী মানিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের হয়ে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আয়োজিত মানববন্ধনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসন ও উপদেষ্টা পর্যায়ে দলীয় প্রভাবমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কিছু উপদেষ্টা একটি দলের হয়ে কাজ করছেন। কারা কারা ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের তালিকা ও রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে।
তিনি আরো দাবি করেন, বর্তমানে ডিসি, এসপি ও ইউএনও নিয়োগে পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে। একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে এই নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করছে সরকারের কিছু উপদেষ্টা, যারা নিজেরা নিরপেক্ষ থাকার কথা বললেও, মূলত একটি দলের হয়ে ভূমিকা রাখছেন।
তাহের বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই ষড়যন্ত্র থামাতে হবে। প্রশাসনের ভেতর দলীয় প্রভাব ও গোপন মদদ থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। যারা নির্বাচনের নামে নাটক করতে চায়, জনগণ তা মেনে নেবে না।
জামায়াতের পক্ষ থেকে আবারও গণভোটের দাবি তুলে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি গণভোট আয়োজন করতে হবে। এতে জনগণের ইচ্ছা ও বাস্তবতা পরিস্কার হবে। স্বচ্ছতা থাকলে ২১ দিনেই গণভোট সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, একটি দল মুখে গণতন্ত্র ও সংস্কারের কথা বললেও ঐক্যমতের ক্ষেত্রে তারা অনুপস্থিত। জুলাই সনদের বাস্তবায়নের জন্য আমরা রাজপথে থাকব। প্রয়োজন হলে আরও বড় কর্মসূচিতে যাব।
জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণার জবাবে তাহের বলেন, জামায়াত দখলবাজি করে না, চাঁদাবাজি করে না। আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। ক্ষমতায় গেলে কৃষকের ঋণ মামলাগুলো প্রত্যাহার করব। আমরা সুষ্ঠু ও ন্যায়ভিত্তিক বিচার চাই, যেন-তেন বিচার নয়।
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণমানুষের দাবি মেনে নিতে হবে। গণভোট দিতে হবে। পিআর পদ্ধতি মানতে হবে। আর যারা খুন-গুমে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলার পূর্ব সদরদী এলাকায় যাত্রীবাহী বাস উল্টে খাদে পড়ে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো অন্তত ১০ জন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অন্য একটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে ঢাকা থেকে বরিশালগামী ইউরো লাইন পরিবহনের বাসটি খাদে পড়ে যায়।
এ ঘটনায় নিহত শামসুন্নাহার বেগম (৪১) বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী।
আহতদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় ইউরো লাইন পরিবহনের বাসটি। এ সময় বাসটি উল্টে খাদে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই এক নারী নিহত হন। পরে ফায়ার সার্ভিস, হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ সময় সড়কের দুই দিকে বিপুল পরিমাণ গাড়ি আটকা পড়ে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রোকিবুজ্জামান জানান, একে অপরকে ওভারটেক করতে গেলে শ্যামলী পরিবহনের ধাক্কায় ইউরো লাইন বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান চালাই। দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি উদ্ধার করা হয়েছে।
একইসাথে শ্যামলী পরিবহন বাসটি জব্দ করা হয়েছে।
গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন 'শতফুল ফুটতে দাও'।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের এক মিশ্র সভাতে ইউনিয়নবাসীর সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। সভাতে মাদ্রাসার শিক্ষক, মুসলিম-হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ, রাজনীতিক ব্যাক্তিত্ব সহ অনেক শ্রেণিপেশার মানুষ ছিলেন।
এ সময় বিএনপির মহাসচিব বলেন, আপনারা দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারেন নি। আমরা যে লড়াইটা করেছি, সংগ্রামটা করেছি, ছেলেরা যে কারনে প্রাণ দিয়েছে এটা একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা আপনারা সকলে বুঝেন। আপনারা যা বলবেন সেটাই৷ অর্থাৎ আপনারা ভোট দিবেন আপনার পছন্দের প্রার্থীকে। সে প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে যাবেন। পার্লামেন্টে গিয়ে জনগণের কথা বলবে, আপনাদের কথা বলবে। এটাকে আমরা বলি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।
তিনি আরও বলেন, এবারে এ ব্যবস্থাটার একটু পরিবর্তন হচ্ছে। এবারে দুইটা পার্লামেন্ট থাকবে। একটা নিম্নকক্ষ আরেকটাকে বলে উচ্চকক্ষ। নিম্নকক্ষে আমরা যারা যাবো তারা নির্বাচিত হয়ে যাবো। আর উচ্চকক্ষে যে দলগুলো পার্লামেন্টে যাবে তাদের যে প্রতিনিধির সংখ্যা থাকে সে অনুযায়ী তারা উচ্চকক্ষে যাবে৷ এরপরেও বিভিন্ন সেক্টরের কিছু মানুষ যাবে। যেমন হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ। আলেম সসাজের কিছু মানুষ। আমাদের বিদ্যান, পন্ডিত মানুষ যারা আছেন তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে। তারাও সেখানে থাকবে। এভাবে এমন একটা পার্লামেন্ট হবে যে পার্লামেন্ট সত্যিকার অর্থে জনগণের কথা বলবে। এটা একটা দলের কর্তৃত্ব থাকবেনা। এটা নিয়ম মাফিক, যেটা আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলি। ফলে যেটা পনেরো বছর দু:শাসন হয়েছে, ফ্যাসিজম হয়েছে সে জিনিসটা থেকে থেকে আমরা হবো।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৫ আগস্টে যে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান দেশ নতুন করে সাজানোর সুযোগ হয়েছে। আমরা নতুন করে দেশটা সাজাতে চাই। অনেক মত থাকবে, অনেক মত একমত হবেনা। মতগুলোকে পার্লামেন্টে আনতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে মানুষ একটা সিদ্ধান্ত পাবে। দেশটা সেভাবে চলবে।
তিনি বলেন, আমরা এ কথাটা বারবার বলছি যে, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। এখানে সকল ধর্মের মানুষ থাকবে। এখানে যারা হিন্দু আছেন তারা হিন্দু ধর্ম পালন করবে, তাদের মন্দির সুরক্ষিত থাকতে হবে। যারা ইসলাম ধর্ম পালন করে তাদের মসজিত সুরক্ষিত থাকতে হবে। মানুষের কথা বলার সুযোগ সুরক্ষিত থাকতে হবে। এই যে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই মিলে থাকাটাই আমাদের বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, একটা কথা আছেনা। 'শত ফুল ফুটতে দাও'। শতফুল ফুটলে একটা বগানে সে ফুলের সৌরভ সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে যাবে৷ আমরা আর বিভেদের রাজনীতি চাইনা। আমরা হিন্দুমুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টানের মধ্যে কোন বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইনা। আমরা হিংসার রাজনীকে পশ্রয় দিতে চাইনা। আমরা চাই একটা শান্তির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হোক।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমাদের নেতা শহিদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। তিনি নয়মাস দেশটার জন্য যুদ্ধ করেছেন। আমরা যুদ্ধ করেছি। আমাদের সবার চাওয়া ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতার যে অস্তিত্ব সেটা ভুলে যাওয়ার কোন কারন নাই। আমরা স্বাধীনতা ভুলে যেতে পারিনা। ঠিক একইভাবে চব্বিশের ৫ আগস্ট আমরা ভুরবোনা। কারন এই দিন আমাদের ছেলেরা রক্ত দিয়েছে। আমাদের উপর যে একটা দানব এসে বসেছিলো সেটা সরিয়ে দিয়েছে। এটাকেউ আমরা ভুলতে পারবোনা। এই যে এক সাথে সবকিছুকে নিয়ে চলা এটাই হবে নতুন বাংলাদেশ।
এরপরে পার্শ্ববর্তী সদর উপজেলার শুকানপুকুরি ইউনিয়নে মতবিনিময় সভা করে মির্জা ফখরুল। সেখানে নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শিষের জন্য ভোট চান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: পয়গাম আলী, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, পৌর বিএনপির সভাপতি শরীফুল ইসলাম শরীফ সহ বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।
দৈনিক বাংলার চরফ্যাশন প্রতিনিধি মো. সাইফুল ইসলামকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন চরফ্যাশন পৌর শ্রমিকলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম সবুজ। এঘটনায় সাংবাদিক মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে চরফ্যাশন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
মঙ্গলবার সকালে চরফ্যাশন পৌরসভা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম এর বসতবাড়ি সংলগ্ন জামে মসজিদের সামনে প্রকাশ্য হত্যার হুমকির ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক চরফ্যাশন রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক বাংলা পত্রিকায় চরফ্যাশন উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।
সাংবাদিক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'শ্রমিকলীগ নেতা সবুজের স্ত্রী একটি সরকারী প্রাইমারী স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন। ২০২৫ সনের ২০ জানুয়ারী তার স্ত্রী শ্রেণী কক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্লাসে তার শিশু কন্যাকে টেবিলে বসিয়ে বাকবাকুম পায়রা কবিতা পাড়িয়ে ভিডিও চিত্র ধারন করেন। ওই ভিডিও তার ব্যাক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে পোষ্ট করে ক্যাপশন লিখেন “ম্যাডাম যখন দ্বিতীয় শ্রেণীর ইংরেজি ক্লাসে বাকবাকুম পায়রা কবিতা শেখায়” এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এঘটনা নিয়ে একাধিক জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। আমি তার প্রতিবেশী হওয়ায় তার স্ত্রীকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশে আমার ইন্দন রয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে সে আমার সাথে বিরোধ শুরু করেন। এনিয়ে শ্রমিকলীগ নেতা সবুজ আমার ওপরে ক্ষিপ্ত হন। আমাকে একাধিকবার মামলায় হয়রানীর হুমকি দেন। ফের মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকলীগ নেতা আমার প্রতিবেশী হওয়ায় তার সঙ্গে মসজিদের সমানে দেখা হয়। তার স্ত্রীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ নিয়ে তর্ক হয়। ওই তর্কের জেরে এলাকার মানুষের সামনে প্রকাশ্যে আমাকে ও আমার বাবাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের তোপে মুখে তিনি ওই স্থান থেকে পালিয়ে যান।'
তিনি আরো অভিযোগ করেন, ওই শ্রমিকলীগ নেতা আমাকে ইতিপূর্বেও একধিকবার হত্যার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু ফের আমাকে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেয়ায় আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। এঘটনায় আমি আইনি সহায়তা চেয়ে চরফ্যাশন থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছি।
অভিযুক্ত শ্রমিকলীগ নেতা সবুজ হুমকির বিষয় অস্বীকার করে জানান, তাদের সাথে আমার কোন বিরোধ নাই। তাকে হুমকি কেন দিবো।
চরফ্যাশন থানার ওসি মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, হুমকির ঘটনায় সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম একটি সাধারন ডায়েরী করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য