ময়দার সঙ্গে মেশানো হয় চালের আটা, সেটা গোলানো হয় পানিতে, সঙ্গে মাখানো হয় ডালডা। এরপর সেটির খামির তৈরি করে ছোট ছোট টুকরা করা হয়। টুকরাগুলো ভাজা হয় ফুটন্ত তেলে। এরপর সেগুলো ডোবানো হয় গুড়ের সিরায়। পরে ঠান্ডা হলে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় মুচমুচে সুস্বাদু খাবার ‘কটকটি’।
সুস্বাদু খাবারটি তৈরির এমন বর্ণনা দিচ্ছিলেন বগুড়ার মহাস্থানগড়ের কটকটি ব্যবসায়ী মাহবুরের স্ত্রী সালমা বেগম। তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে কটকটি তৈরি করে মাজারের পশ্চিমের মাঠে বিক্রি করেন।
উত্তরাঞ্চলের জেলা বগুড়ায় খাবারটি খুব জনপ্রিয়। আশপাশের এলাকায়ও এর চাহিদা রয়েছে। জনপ্রিয় হলেও খাবারটির উৎপত্তির ইতিহাস জানা যায় না। শতবর্ষ ধরে মহাস্থান এলাকায় খাবারটি পাওয়া যায়।
মহাস্থানের মাজার ও প্রাচীন নিদর্শন এলাকায় বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা ফেরার সময় কটকটি কিনতে ভোলেন না। শুধু তা-ই নয়, কোথাও বেড়াতে গেলে কটকটি নিয়ে যাওয়া স্থানীয়দের কাছে অনেকটা রেওয়াজের মতো হয়ে গেছে।
ছোট থেকেই কটকটি তৈরির প্রক্রিয়া জানলেও সালমা বেগম জানান, বিয়ের পর তিনি স্বামীর সঙ্গে পুরোপুরিভাবে কটকটি তৈরিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন।
স্বামী মাহবুর রহমান প্রায় সাত বছর কারিগর হিসেবে অন্যের কারখানায় কাজ করেছেন। এরপর সাত বছর আগে নিজেই শুরু করেন কটকটি তৈরির ব্যবসা। মহাস্থানগড়ের ওপর গড়ে তুলেছেন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
মাহবুর বলেন, ‘আগে কটকটি গরম পানি দিয়ে মাখিয়ে তৈরি হতো। সেই কটকটি ঠান্ডা হয়ে এলে খুব শক্ত হতো। খাওয়ার সময় কটকট করে শব্দ হতো। এখন নরম করে তৈরি করা হয়, তাই চাহিদা আগের চেয়ে আরও বেশি হয়েছে।’
তিনি জানান, একসময় গমের আটা দিয়ে তৈরি হতো এই কটকটি, পরে ময়দার সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি শুরু হয়।
বগুড়া ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয় বলে মহাস্থানগড়ে এখন পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
বাজারটিতে মাসে বা বছরে কী পরিমাণ কটকটি বিক্রি হয় তার কোনো পরিসংখ্যান নেই ব্যবসায়ীদের কাছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বছরে ছয় মাস (নভেম্বর থেকে এপ্রিল) মহাস্থানগড়ে পর্যটন মৌসুম ধরা হয়। এই সময়ে গড়ে অন্তত প্রতিদিন ২৫০ মণ কটকটি বিক্রি হয়। অন্য সময়গুলো দৈনিক ১০০ কেজি পরিমাণ বিক্রি হয়ে থাকে। এই হিসাবে মাসে ৬ হাজার মণ, বছরে ৭২ হাজার মণ কটকটি কেনাবেচা হয়।
সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে কটকটি ব্যবসায়ও। দাম বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীদের লাভের অঙ্কে পড়েছে টান।
ব্যবসার অবস্থা নিয়ে মাহবুর বলেন, ‘সবকিছুর দাম বাড়ার কারণে লাভ অনেক কমে গেছে। যে গুড়ের দাম ছিল ৪৫ টাকা; তা হয়েছে ৮৩ টাকা কেজি। ডালডা ১৬ কেজির একটি কার্টন কিনতে লাগে ২ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ করোনার আগেই এর দাম ছিল ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা। তেল কিনেছি ১৭০ টাকায়। কেনার পর তো আরও দাম বেড়েছে।’
তিনি জানান, এক কেজি কটকটি তৈরি করতে খরচ হয় গড়ে প্রায় ১১০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কেজিতে গড়ে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত লাভ করা যেত। এখন তা অর্ধেকে নেমে গেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও কটকটির চাহিদা কমেনি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
মহাস্থানগড়ে প্রতি কেজি কটকটি মানভেদে ১২০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সয়াবিন তেলে ভাজা কটকটি ১২০ টাকা কেজিতে, ডালডায় ১৪০ এবং ঘি মাখা ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়।
ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, এই কটকটি মাজারের তবারক হিসেবে নেয়া হয়। এ ছাড়া মেহমানদের আপ্যায়নে মুখরোচক কটকটি ব্যবহার করেন স্থানীয়রা।
মহাস্থানগড় উত্তরপাড়ার বাসিন্দা কবিরাজ বাদশা পীর বলেন, ’এই মহাস্থান শাহ মো. সুলতান বলখীর মাজারে অনেক মানুষ প্রতিদিন আসেন। জিয়ারত করেন, মানত করেন। আগতরা এখানে এলে কটকটি কেনেন। এটা মাজারের তবারক হিসেবেই সবাই দেখেন। সব সময় এর বেচাবিক্রি ভালো। রমজানে শুধু বিক্রি কমে যায়।’
গড়ের ওপর জাকারিয়া কটকটির মালিক নুরনবী ইসলাম জানান, দোকানে প্রতিদিন গড়ে ১০০ কেজি কটকটি বিক্রি হয়। শুক্রবার করে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি পর্যন্ত কটকটি বিক্রি হয়ে থাকে।
তাদের একজন আইয়ুব আলী জানান, তারা দুই বাসে প্রায় ১০০ জন মহাস্থানগড়ে বেড়াতে এসেছেন। এসেই নিচে ও ওপরের দোকান ঘুরে প্রায় ৪০ কেজি কটকটি কিনেছেন। এসব কটকটি বাড়ির ও আত্মীয়স্বজনদের জন্য নিয়েছেন।
এই দলের আরেকজন শামীম হোসেন জানান, তাদের গ্রামে মহাস্থানের কটকটি খুব জনপ্রিয়।
মহাস্থান গড়ের নিচের এক দোকানে কথা হয় আরেক দর্শনার্থীর মো. মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে। তার বাড়ি যশোরে। বগুড়ায় থাকেন চাকরির সুবাদে। সুযোগ পেয়ে মহাস্থানগড়ে বেড়াতে এসেছেন।
কটকটি খেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মাজহারুল বলেন, ‘ঐতিহাসিক এই এলাকায় এসে এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার কটকটি খাব না তা হয় না। খেয়েছি, আবার নিয়েও যাচ্ছি।’
মহাস্থানগড়ের নিচে বগুড়া-শিবগঞ্জ সড়কের মাজার রোডের দুই পাশে একাধিক দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকান অনেক পুরোনো। বেশির ভাগই প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বছর ধরে ব্যবসা করছে।
আলাদা এসব দোকানে বড় বড় গামলা ও ড্রামের ট্রেতে কটকটির বিশাল পসরা সাজিয়ে বসেছেন তারা।
সেখানের নাসির কটকটি ভান্ডারের মালিকের ছেলে শহিদুল ইসলাম রঞ্জু এখন ব্যবসা দেখাশোনা করেন। তিনি জানান, কটকটির সুনাম সারা দেশেই ছড়িয়ে আছে। এ জন্য ব্যবসাও প্রসার হচ্ছে। এখানকার প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের কারখানা রয়েছে। এ ছাড়া অনেকে শুধু কারখানা গড়ে তুলেছেন। যেখানে নারী শ্রমিকরাই বেশি।
মহাস্থানের পুরোনো দোকানের মধ্যে অন্যতম হামু মামা কটকটি প্যালেস। দোকানের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির জানান, মহাস্থানে মাজারের ওপর ও নিচের অংশ মিলে প্রায় ২০০ কটকটির দোকান।
তিনি বলেন, ‘এখানকার কটকটি মাজারের তবারক হিসেবে প্রচলিত। প্রায় দেড় শ বছর ধরে কটকটির ব্যবসা হয়ে আসছে এখানে। বিভিন্ন পিকনিক পার্টি থেকে শুরু করে ওরসের লোকজন এখন বেশি। বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার এখানে সবচেয়ে বেশি কটকটি বিক্রি হয়।’
হুমায়ুন আরও বলেন, ‘এ এলাকায় শুধু কটকটি ব্যবসার সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষ জড়িত। কারিগরদের চাহিদা যেমন বেশি, পারিশ্রমিকও অনেক বেশি।’
বগুড়া জেলা চেম্বার অফ কমার্সের সহসভাপতি মাহফুজুল ইসলাম রাজ বলেন, ‘বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার কটকটি। এর সুনাম শুধু দেশ নয়; বিশ্বেও ছড়িয়েছে। কটকটি ব্যবসার সঙ্গে বহু নারী-পুরুষ জড়িত রয়েছে আমরা জানি, যা আমাদের জেলা বগুড়ার জন্য অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে।’
আরও পড়ুন:কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
মন্তব্য