‘এখনও রাতে ঘুমাতে পারি না। প্রায়ই সেই দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে যায়। দেখি, লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক আমাদের দিকে তেড়ে আসছে। বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। ভয়ে তখন ঘুম ভেঙে যায়।’
বলছিলেন সুধা রানী দাস। সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে বাড়ি সুধার। গত বছরের এই দিনে হিন্দু অধ্যুষিত নোয়াগাঁওয়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল উগ্রবাদী গোষ্ঠী। আরও অনেকের সঙ্গে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছিল সুধা রানীর ঘরও। সেই নারকীয় ঘটনার এক বছর পর এখনও ওই দিনের দুঃসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় এই বৃদ্ধাকে।
সেদিন লুটপাট হয়েছিল মঙ্গলা রানী চৌধুরীর ঘরও। মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা জমিয়েছিলেন মঙ্গলা। সব লুট হয়ে গেছে।
মঙ্গলা বলেন, ‘সর্বস্ব হারিয়ে আমি এখন নিঃস্ব। মেয়ের বিয়ে দেব কী, খেয়ে-পরে বাঁচাই দায় হয়ে উঠেছে। সংসার চালাতে তাই কিশোর ছেলেকে চাকরিতে পাঠিয়েছি।’
নোয়াগাঁওয়ে হামলার এক বছর পর ওই এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন আতঙ্ক আর আফসোসের কথাই শোনা গেছে। গ্রামবাসীর আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীদের নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ানো। এই হামলা মামলার সব আসামিই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। হামলায় হাজার লোক অংশ নিলেও পুলিশ অভিযুক্ত করেছে ১৮৬ জনকে।
উৎসব রূপ নিল বিষাদে
সেদিন ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। শাল্লায়ও নানা আয়োজনে উদযাপন হচ্ছিল দিনটি। সবখানেই ছিল উৎসবের আমেজ। এর মধ্যে সকালেই নোয়াগাঁওয়ে হামলা চালানো হয়। লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে কয়েক হাজার লোক হামলা চালায় গ্রামটিতে। ভাঙচুর হয় হিন্দুদের ৯০টি ঘর। লুটপাট হয় তাদের সম্পদ। মন্দির-মূর্তিও রক্ষা পায়নি হামলাকারীদের তাণ্ডব থেকে।
নোয়াগাঁওয়ের বাসিন্দা অসীম চক্রবর্তী জানান, হামলার জন্য পরিকল্পিতভাবেই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে বেছে নেয়া হয়েছিল।
যেভাবে সূত্রপাত
গত বছরের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাবেক নেতা মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী ও মামুনুল হক। সমাবেশে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন দিরাইয়ের পাশের উপজেলা শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামের যুবক ঝুমন দাস।
১৬ মার্চ ঝুমন ওই স্ট্যাটাস দেয়ার পর থেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের অনুসারীরা। মামুনুলের সমালোচনাকে তারা ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় প্রচায় চালায়। এতে এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই রাতেই পুলিশ ঝুমন দাসকে আটক করে।
পরদিন সকালে হাজারও মানুষ মিছিল নিয়ে হামলা চালায় নোয়াগাঁওয়ে। ঝুমনের এক স্ট্যাটাসের জন্য ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় ৯০টি ঘর।
নোয়াগাঁওয়ের লোকজন জানান, দিরাই উপজেলার নাচনি, চণ্ডীপুর, সরমঙ্গল, সন্তোষপুর ও শাল্লার কাশিপুর, ধনপুরসহ কয়েকটি গ্রামে মসজিদ থেকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়ানো হয় সেদিন। এরপর এসব গ্রামের মানুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নোয়াগাঁওয়ে নারকীয় হামলা চালায়।
তাণ্ডবের সময় ফেসবুকে লাইভ করে হামলাকারীরা। এতে দেখা গেছে, হামলায় নেতৃত্বদানকারীদের অনেকের মাথায় ছিল ‘হেফাজতে ইসলাম’ লেখা বেল্ট।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, তাৎক্ষণিক স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে জানানো হলেও তারা ব্যবস্থা নিতে যায়নি।
হামলার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বরখাস্ত করা হয় শাল্লা থানার তৎকালীন ওসিকে। তাৎক্ষণিক বদলি করা হয় দিরাই থানার ওসিকে। তা ছাড়া পুলিশের একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি দায়িত্বে অবহেলার জন্য জেলা পুলিশের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলির সুপারিশ করেছিল। পরে তাদের বিরুদ্ধে আর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
মামলা, জামিন, অভিযোগপত্র
নোয়াগাঁওয়ে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত হন শহিদুল ইসলাম স্বাধীন নামে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য। তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার নেতৃত্বেই হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। স্বাধীন মেম্বারসহ প্রায় দেড় হাজার জনকে আসামি করে শাল্লা থানায় তিনটি মামলা হয়।
বিপুলসংখ্যক লোককে আসামি করা হলেও পুলিশ এক বছরে গ্রেপ্তার করেছে ৭৫ জনকে। গ্রেপ্তারের কিছুদিন পরই সবাই জামিন পেয়ে যান। প্রধান অভিযুক্ত স্বাধীনও জামিনে আছেন। চলতি বছর ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছিলেন তিনি।
নোয়াগাঁওয়ের বাসিন্দা তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ দাস ও পুলিশের করা দুটি মামলায় সম্প্রতি অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। দুই মামলার অভিযোগপত্রে ১৮৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আর ঝুমন দাসের মায়ের করা মামলাটি তদন্তের জন্য গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি) দেয়া হয়েছে।
বেশির ভাগ হামলাকারীকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়ায় ক্ষুব্ধ নোয়াগাঁও গ্রামবাসী।
গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জগৎচন্দ্র দাস বলেন, ‘আমরা দেড় হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম। পুলিশ মাত্র ৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। এখন শুনছি ১৮৬ জনকে রেখে সবাইকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
‘আমাদের দাবি ছিল দ্রুত বিচার আইনে মামলা হবে। কিন্তু পুলিশ সাধারণ মামলা নিয়েছিল। তবু জীবদ্দশায় হামলাকারীদের বিচার দেখে যেতে চাই।’
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ের পরও স্বাধীন ও ফক্কন মিয়ার নির্দেশে বাড়িঘর ভাঙচুর করেছিল হামলাকারীরা। প্রকাশ্যে হামলা হলেও পুলিশ তাদের ধরেনি। বরং মামলা থেকে নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার বিচার না হলে আমি মরেও শান্তি পাব না।’
মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সুনামগঞ্জ পাবলিক প্রসিকিউটর ড. খায়রুল কবীর রোমেন বলেন, ‘দুই মাস আগে দুটি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ। তবে এখনও বিচারকাজ শুরু হয়নি। অভিযোগপত্র নিয়ে কেউ আপত্তিও জানায়নি।’
তিনি জানান, এসব মামলায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছিল বা জামিন নিতে এসে কারাগারে গিয়েছিল তারা সবাই এখন জামিনে মুক্ত।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘নোয়াগাঁওয়ে হামলার ঘটনায় মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দেয়া হয়েছে। তদন্তে পুলিশ যাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে।’
এসপি বলেন, ‘ওই গ্রামের পরিস্থিতিও এখন ভালো। তার পরও গ্রামটির ওপর আমাদের আলাদা নজরদারি রয়েছে। কেউ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার চেষ্টা করলে কোনো ছাড় নয়।’
ঘরবন্দি ঝুমন
ফেসবুকে স্ট্যাটাসের পরিপ্রেক্ষিতে ঝুমন দাসকে হামলার আগের দিনই আটক করে পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয় পুলিশ।
পরে ঝুমনের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন শুরু। প্রায় সাত মাস জেল খাটার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত বছরের সেপ্টেম্বরে জামিনে মুক্তি পান ঝুমন।
তবে আদালত থেকে শর্ত দেয়া হয়, সুনামগঞ্জের বাইরে যেতে হলে তাকে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। তাই জামিন পেলেও অনেকটা ঘরবন্দি অবস্থায় আছেন ঝুমন।
ঝুমন দাস বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন ঘরের বাইরে কোথাও যেতে চাইলেও পুলিশকে অবহিত করতে হয়। আর বাড়ির পাশের বাজারে গেলেও লোকজন নানা কানঘুষা করে।’
ঝুমন বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমি হিজাব নিয়ে ফেসবুকে লিখেছিলাম। পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু লিখিনি। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক কানঘুষা শুরু হয়। পরে গ্রামে পুলিশও আসে।’
মানববন্ধনে বিচার দাবি
নোয়াগাঁওয়ে হামলার এক বছর পূর্তিতে বৃ্হস্পতিবার সকালে মানববন্ধন করেছে গ্রামবাসী। গ্রামের পাশে করা মানববন্ধনে সেই ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এ সময় হামলায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
মন্তব্য