ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্প্রতি অনুমোদনহীন ফার্মেসি থেকে কেনা নাপা সিরাপ খাওয়ার পর দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা ওষুধের দোকানের উপর নজরদারিতে প্রশাসনের গাফিলতি আছে কি না সে বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা।
রংপুরে অনুমোদনহীন এমন ওষুধের দোকানের সংখ্যা কত, সে হিসাব নেই জেলার ঔষধ প্রশাসনের কাছে। তবে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি রংপুরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় অন্তত ৫ হাজার ফার্মেসি আছে। এর মধ্যে কেবল ২ হাজার তাদের তালিকাভুক্ত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অলি-গলিতে ওষুধের দোকান তো আছেই, মুদির দোকানেও দেদার বিক্রি হচ্ছে ওষুধ। কিছু দোকানে লাইসেন্স দেখা গেলেও সেখানে পাওয়া যায়নি সার্টিফাইড কোনো ফার্মাসিস্টকে। আর কিছু দোকানের লাইসেন্সই নেই।
নিয়ম অনুযায়ী, ওষুধের দোকান দিতে হলে ঔষধ প্রশাসনের ড্রাগ লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। একই সঙ্গে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি থেকে সি গ্রেডের ফার্মাসিস্টের সার্টিফিকেট নিতে হয় বিক্রেতাকে।
বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি সূত্র জানিয়েছে, সি গ্রেড ফার্মাসিস্ট হতে হলে বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট কাউন্সিলের অধীনে ৪ মাসের কোর্স করে পরীক্ষা দিতে হয়।
এই সার্টিফিকেট যিনি পাবেন, তিনি ওষুধের দোকান দিতে পারবেন বা অন্য কোনো ওষুধের দোকানে চাকরি করতে পারবেন।
গত মঙ্গলবার ও বুধবার রংপুর নগরী ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজার থেকে ওষুধ কিনে বিক্রেতারা ছোট ছোট দোকানে সেগুলো বিক্রি করছেন। অনেকে আবার ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ওষুধ কিনে দোকান সাজিয়েছেন।
রংপুরের মহানগরীর ধাপ এলাকা, জিএল রায় রোড সড়কে, কলেজ রোডে একাধিক মুদি দোকানে ওষুধ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রংপুরের ধাপ এলাকায় এমনই একটি মুদি দোকানে ওষুধ বিক্রি করা এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি মামার দোকানে ব্যবসা করছি। দোকান রেডি করছি, রেডি হলে আমি লাইসেন্সটা করে নেব।’
ওই এলাকার মো. পরশ নামে আরেক ওষুধ বিক্রেতা জানান, ‘আমাদের লাইসেন্স আছে। ফার্মাসিস্ট আমার বড় ভাই। ফার্মেসিতে ভাই বসেন। প্রেসক্রিপশন ছাড়া আমরা কোনো ওষুধ বিক্রি করি না। সেটা অনেকেই জানে।’
আরেক বিক্রেতা তুহিন ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সবই আছে। সব কাগজ আপডেট। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ বিক্রি করি। মাঝে মাঝে অনেকে গ্যাসের ওষুধ চায়, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, এইচ প্লাস, নাপা চায়। এই কমন ওষুধ বিক্রি করি।’
লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান আছে কি না জানা নেই বলে দাবি করেন ওষুধ প্রশাসনের রংপুর অফিসের সহকারী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেগুলো আছে সেগুলোকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। ওষুধ নিয়ে কথা উঠলেই এসব কথা বলা হয়। তবুও আমাদের টিম কাজ করছে।’
বদরগঞ্জের লোহানী পাড়ার একটি দোকানে ওষুধ কিনতে এসেছেন ওসমান আলী। সঙ্গে প্রেসক্রিপশন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ কিনেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ডাক্তার-টাক্টার কম দেখাই। কিছু হইলে ফার্মেসিতে যাই। কী অসুখ সেটা কয়া (বলে) ওষুধ নেই। মাঝে মাঝে ওষুধ কাম করে, মাঝে মাঝে করে না। কখনও এমনি এমনি ভালো হয়া যায়।’
রংপুরের মাহিগঞ্জ এলাকার ক্রেতা মাহফুজার রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার দুইদিন ধরে একটু একটু জ্বর। ভাবছি সিজনাল হবে। জ্বর কমছিল না। ফার্মেসিতে জ্বরের কথা বলে ওষুধ নিলাম। মেজর কোনো সমস্যা না হলে আমরা ফার্মেসি থেকেই ওষুধ নেই।’
চিকিৎসকের চেয়ে ওষুধের দোকানের বিক্রেতাদের ওপর এমন নির্ভরতা রোগীর জন্য বিপদজনক হতে পারে বলে মনে করেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক জাকির হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ সেবন করা বা ভুলভাবে ওষুধ সেবন করা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আমরা প্রায়ই শুনছি, চকচকে মোড়কে বাজারে ভেজাল ও নিম্মমানের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে।
‘ডাক্তার নিশ্চিত হয়ে ওষুধ লেখেন, কিন্তু সেই ওষুধ যদি ভেজাল দেয়া হয় সেটা তো ক্রেতা জানেন না। সে কারণে, যে রোগের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন রোগীরা সে রোগ ভালো হচ্ছে না। ভেজাল ওষুধের কারণে লিভারে অনেক জটিলতা হতে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।’
অনুমোদনহীন ফার্মেসি আর নিম্নমানের ওষুধ বাজারে সয়লাব হওয়ার পেছনে ওষুধ প্রশাসনকে দায়ী করছে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি।
এর রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভেজাল ওষুধে সয়লাব রংপুর। এখানকার তিনটি মার্কেট ওষুধ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ভেজাল ওষুধের লাগাম টানা যাবে, কিন্তু সেটা তো কখনও দেখি না। যারা তদারকি করে তাদের আরও সহযোগিতা প্রয়োজন।’
স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করে রংপুরভিত্তিক বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন নামে একটি সংগঠন।
এর আহ্বায়ক বেলাল আহমেদ বলেন, ‘পাড়ার মোড়ে মোড়ে, পানের দোকানে, মুদির দোকোনে দেদারসে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ওষুধ বিক্রেতারাই ডাক্তারি করে ওষুধ দিচ্ছেন। অথচ এরা অনেকেই শিক্ষিত না। এই বিষয়টি খুবই বিপদের এবং ভয়ঙ্কর। এ ক্ষেত্রে ক্রেতাকে আরও সচেতন হতে হবে। কঠোর হতে হবে ওষুধ প্রশাসনকেও।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য