চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে কওমি মাদ্রাসায় আট বছরের শিশু ইফতেখার মালেকুল মাশফির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় হলেও এর কিছুই জানা নেই কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারাসিল আরাবিয়ার (সংক্ষেপে বেফাক) মহাসচিব মাহফুজুল হকের।
এই ঘটনায় ওই মাদ্রাসার তিন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে বেফাক এই বিষয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। সেখানে কী হয়েছে, মাদ্রাসার শিক্ষা পদ্ধতি, কর্মপদ্ধতি বা অন্য কোনো সংকট আছে কি না, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে সেগুলো নিয়ে কোনো কাজ করার ইচ্ছাই তাদের নেই।
কেবল এই ঘটনাটি নয়, নানা সময় মাদ্রাসায় বলাৎকার, শিশুদের অমানবিক পিটুনি, শিশুদের মাদ্রাসা থেকে অভিভাবকদের নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় হলেও প্রতিটি ঘটনাই উপেক্ষা করে আসছে এই বোর্ড।
গত ৪ মার্চ চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে মাদ্রাসা থেকে শিশু ইফতেখার মালিকুল মাশফিকের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তিন শিক্ষক গ্রেপ্তারের রেশ কাটতে না কাটতেই ৮ মার্চ আরও এক ছাত্রের মরদেহ পায় পুলিশ।
গত ৮ মার্চ একই জেলার পাঁচলাইশে আলী বিন আবি তালিব (র.) নামে একটি মাদ্রাসার পেছন থেকে উদ্ধার করা হয় মো. আরমান নামের আরেক ছাত্রের মরদেহ।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর একটি হাফেজি মাদ্রাসায় সম্প্রতি এক ছাত্রকে মারপিটের ভিডিও ভাইরাল হয়। ফাইল ছবি
এ রকম প্রাণহানির তুলনায় কওমি মাদ্রাসা নিয়ে বেশি আলোচনা হয় বলাৎকার ইস্যুতে। কখনও কখনও শিশুদের বেদম পিটুনির ভিডিও আসে সামাজিক মাধ্যমে।
নব্বই দশকে স্কুলেও পিটুনির সমস্যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা দেখা দেয়। এ নিয়ে পরে শিক্ষাবিদ, শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়।
কিন্তু এসব ঘটনায় কওমি মাদ্রাসা দেখভালের দায়িত্বে থাকা বেফাকুল মাদারাসিল আরাবিয়া কেবল নয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও কোনো পদক্ষেপ নেই।
এই অবস্থায় ১২ থেকে ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর কার্যত কোনো অভিভাবক সংস্থা নেই।
বেফাকের মহাসচিব মাহফুজুর রহমান দাবি করেছেন, তাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগই আসেনি।
সরকার আলিয়া মাদ্রাসা দেখভালে বোর্ড গড়ে তুললেও কওমি মাদ্রাসা কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে রেখেছে। এই মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদ দাওরাহে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান বা এই শিক্ষায় সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার পরও বিষয়টি পাল্টায়নি।
বলাৎকারের সমস্যা প্রকট
গত ৯ জানুয়ারি বরিশালের একটি কওমি মাদ্রাসার দুই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয় একই মাদ্রাসার দুই ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
একই মাসে গাজীপুরের টঙ্গীতে ১১ বছর বয়সী দুই মাদ্রাসার ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত ৩৫ বছরের শাহ আলম ওই মাদ্রাসার নূরানী বিভাগের শিক্ষক।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে সাভারের আশুলিয়ায় এক মাদ্রাসায় ছাত্রকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল হলে অনেক সমালোচনা শুরু হয়। ফাইল ছবি
একই সময়ে ফেনীর দাগনভূঞায় এক মাদ্রাসার ছাত্রকে বলাৎকারের ঘটনায় তিন শিক্ষককে কারাগারে পাঠায় আদালত।
২০২১ সালের ১০ আগস্ট। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ ইউনিয়নের ফাতিমানগর এলাকায় জামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল নূর মোহাম্মদ আজমী গ্রেপ্তার। অভিযোগ, তিনি ছাত্রকে বলাৎকার করেছেন।
একই বছরের এপ্রিলে একই জেলার কুলিয়ারচর পৌর সদর এলাকার বড়খারচর আদর্শ নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ১১ বছর বয়সী এক শিশু বারবার পালিয়ে আসার চেষ্টার পর জানা যায়, মাদ্রাসার এক শিক্ষকের বলাৎকারের শিকার সে। এরপর শিশুটির বাবা মামলা করলে গ্রেপ্তার করা হয় সেই শিক্ষককে।
একই বছরের অক্টোবরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ৯ ও ১০ বছর বয়সী দুটি শিশুকে বলাৎকারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন স্থানীয় একটি কওমি মাদ্রাসার সুপার জাহিদুল ইসলাম।
নানা সময় মাদ্রাসায় বলাৎকার, শিশুদের অমানবিক পিটুনি নিয়ে তোলপাড় হলেও প্রতিটি ঘটনাই উপেক্ষা করে আসছে কওমি মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেফাক। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসা। ফাইল ছবি
মার্চের শেষের দিকে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় এক শিশুকে বলাৎকারের অভিযোগ ওঠার পর মামলা করেন সেই শিশুর বাবা। এই অভিযোগে মাদ্রাসার এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়।
ছাত্রদের যৌন নির্যাতনের এমন অভিযোগ বিরল নয়। নিয়মিত এই সংবাদগুলো আসে গণমাধ্যমে।
বছর শেষে বিভিন্ন অপরাধ ও নির্যাতন নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিকে তথ্য পরিসংখ্যান প্রকাশ করলেও এই সংখ্যাটি কখনও জানা যায় না, কোনো সংগঠন এটি নিয়ে কাজ না করায়।
তবে ২০২০ সালে ডিসেম্বরের এক মাসে প্রকাশিত সংবাদগুলো সংকলন করে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠন জানতে পারে, ৩০ দিনে মোট ৪০টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দুটি ঘটনায় মারা গেছে দুটি শিশু। একটি শিশু লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে।
যে শিক্ষকরা নির্যাতন করেন তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রথম থেকেই বলে দেয়া উচিত, এ ধরনের ঘটনা যেন সেখানে না ঘটে। কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের শিক্ষকতা বাতিল করা যেতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সে সময় যে পরিসংখ্যান দিয়েছি, সেটা সংবাদমাধ্যম থেকেই নেয়া।’
নির্যাতন নিয়েও সমালোচনা
শুধু বলাৎকার নয়, কথায় কথায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। পড়া না পারলে, ঘুম থেকে উঠতে দেরি করলে, এক শিক্ষকের ঘরের হিটার আরেক শিক্ষকের কক্ষে রাখলে, দেখতে আসা মায়ের দিকে ছুটে গেলে শিক্ষার্থীদের বেদম পিটুনি দেন। এগুলো গণমাধ্যমেও এসেছে।
গত ২ বছরে বেশ কিছু ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও গণমাধ্যমে এসেছে। এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছিল ব্যাপক। বাবা-মা বা স্বজনরাও মামলা করছেন। অনেক জায়গায় মামলা মীমাংসাও হয়েছে। অনেক জায়গায় মামলা মাথায় নিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকরা দিন পার করছেন। শিক্ষকরা গ্রেপ্তার হয়েছেন। কয়েকটি জায়গায় শিক্ষকদের কারাদণ্ডও হয়েছে।
মাদ্রাসায় বলাৎকারের তথ্যচিত্রের লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। ছবি: নিউজবাংলা
গত বছরের মার্চে বাগেরহাটের রামপালে ১০ বছর বয়সী এক ছাত্রকে হাত বেঁধে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আশুলিয়ার একটি মাদ্রাসায় দুটি শিশুকে আছড়ে ফেলে উপর্যুপরি বেত্রাঘাতের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তীব্র সমালোচনা হয়েছে। এর মধ্যে না বলে বাড়ি যাওয়ার কারণে বাগেরহাটের একটি মাদ্রাসায় শিশুকে ফ্যানে ঝুলিয়ে পেটানো হয়েছে। ভালুকার একটি মাদ্রাসায় পিটুনিতে একটি ছেলে মারাই গেছে।
যা বলছে কওমি শিক্ষা বোর্ড
কওমি মাদ্রাসার এসব বিষয় নিয়ে বেফাকের মহাপরিচালক মাওলানা মো. জুবায়েরের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা। কিন্তু প্রশ্ন শেষ করার আগেই তিনি উল্টো প্রশ্ন করে বসেন। ‘এত দিন পরে কী জানতে চান?’
অতীতে নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মুরব্বিরা একটি কমিটি করেছিলেন। তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান।’
কারা কমিটি করেছিলেন জানতে চাইলে তিনি বেফাকের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকের কথা বলেন। তিনি বলেন, উনাদের কাছে জানতে চান। উনারাই ভালো বলতে পারবেন। এ কথা বলেই তিনি ফোন কেঁটে দেন।’
কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারাসিল আরাবিয়ার যাত্রাবাড়ির কার্যালয়। ছবি: সংগৃহীত
পরে মহাসচিব মাহফুজুল হক বলেন, ‘ছাত্র নির্যাতনের কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমাদের কেন্দ্রের কাছে আসেনি।’
মিডিয়ায় এসব ঘটনা আসে। নিয়ন্ত্রক ও তদারক সংস্থা হিসেবে কোনো ব্যবস্থা বা অনুসন্ধান করেন না কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের জেলা পর্যায়ে কমিটি আছে, সেখানে অনেক বড় প্রতিষ্ঠানের অধীনে অনেক ছোট প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। জেলা পর্যায়েই এই বিষয়গুলো মীমাংসা হয়ে যায়। কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ এলে বিষয়টি আমরা দেখব।’
কওমি নিয়ে মাথাব্যথা নেই মাদ্রাসা বোর্ডের
শিক্ষার্থী নির্যাতন প্রসঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কায়সার আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসা যেহেতু আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, সেটা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘আসলে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত বা শাস্তি দেয়া তো নিষেধ। সাধারণ বোর্ড যেমন সতর্ক করে আমরা ব্যবস্থা নেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দা তাহমিনা আখতার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাদ্রাসা বোর্ড কী করছে আমি জানি না। তবে বোর্ডই তো অনুমতি দেয় মাদ্রাসা করার।’
এই শিক্ষাবিদ মনে করেন, ‘যে শিক্ষকরা নির্যাতন করেন, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রথম থেকেই বলে দেয়া উচিত, এ ধরনের ঘটনা যেন সেখানে না ঘটে। কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের শিক্ষকতা বাতিল করা যেতে পারে।
‘এ ছাড়া মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের আচরণ নিয়ে তাদের পলিসি কিংবা বিধিমালায় সেটা স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থী নির্যাতন অনেক কমে যাবে বলে আমি মনে করি। আর নির্যাতন হলে কী শাস্তি দেয়া হবে, সেটাও সেই বিধিমালায় উল্লেখ থাকা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
আরও পড়ুন:স্লিভলেস টপ পরা এক তরুণীকে নরসিংদী রেলস্টেশনে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার মার্জিয়া আক্তার শিলাকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচরপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার তাকে ছয় মাসের জামিন দেয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো.কামাল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল হাশেম।
নরসিংদী রেল স্টেশনের ১ নম্বর প্লাটফর্মে গত ১৮ মে সকালে ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দুই তরুণ ও এক তরুণী। মেয়েটির পরনে ছিল জিন্স ও টপ। এ সময় স্টেশনে অবস্থানরত এক নারী ওই তরুণীকে হেনস্থা করেন। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন আরও কয়েকজন।
ওই তরুণী দৌড়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে আশ্রয় নেন। পরে স্টেশন মাস্টারের মধ্যস্থতায় দুই বন্ধুসহ ওই তরুণীকে ঢাকাগামী ট্রেনে উঠিয়ে দেয়া হয়।
ঘটনাটির একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরে নরসিংদী রেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করেন।
এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে মার্জিয়াকে ৩০ মে শিবপুররের মুনছেপের চর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
আরও পড়ুন:আগামী ১৮ আগস্ট থেকে চীনের গুয়াংজু রুটে বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী ফ্লাইট শুরু করছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। প্রতিষ্ঠানের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, ১৮ আগস্ট স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে ফ্লাইট বিজি ৩৬৬ স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে গুয়াংজু বাইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
ফিরতি ফ্লাইট বিজি ৩৬৭ একই দিন গুয়াংজু থেকে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে যাত্রা করে ঢাকায় পৌঁছাবে রাত সাড়ে ৯টায়।
এতে আরও বলা হয়, মঙ্গলবার ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. যাহিদ হোসেন সাক্ষাৎ করেন। এ সময় ঢাকা-গুয়াংজু রুটে বিমানের যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে উভয়ের মধ্যে আলোচনা হয়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে চীনের আরেক বাণিজ্যিক শহর কুনমিংয়ে ফ্লাইট চালুর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ নয় জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন ইউনুছ আলী আকন্দ।
সম্প্রতি ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনসহ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী ইউনুছ।
রিটে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদসচিব, উপসচিব ও বিইআরসির চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়। এক লাফে ডিজেল ও কেরোসিনে বাড়ানো হয় লিটারে ৩৪ টাকা। নতুন করে ডিজেল ও কেরোসিন এখন ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ১১৪ টাকা করে।
অন্য দিকে অকটেনে প্রতি লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন ১৩৫ এবং পেট্রোল ৪৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা। এই হিসাবে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয় ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ আর অকটেন-পেট্রোলে ৫১ শতাংশ।
বৈশ্বিক বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায় সরকার। জ্বালানি তেলের নতুন এই দাম কার্যকর হয় সেদিন রাতেই।
আরও পড়ুন:উত্তরায় বক্স গার্ডার দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় দায় নিতে নারাজ এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে। জনসাধারণের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর এ কাজ আবার শুরু হবে। এ বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে।
নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি না করেই ভারী যন্ত্র সরানোর সময় সেটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে যাওয়ার ঘটনায় স্পষ্টতই অবহেলা ছিল কর্মীদের। এর আগেও এই প্রকল্পে একই ধরনের দুর্ঘটনার পরও সেখানে এই হেলাফেলা বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারার মধ্যে বিআরটির এমডি বলেছেন, তদন্ত কমিটিই ঠিক করবে দায় কার।
সোমবার ঢাকার উত্তরায় প্রাণঘাতী এই দুর্ঘটনার পরই জনক্ষোভের মধ্যে এই ঘটনায় প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তদন্তের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারপ্রধান যাদের তদন্তের আওতায় আনার কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে আছেন বিআরটির প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলামও।
এখন নিরাপত্তায় জোর
বিআরটি এমডি জানান, প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
কেন এই নির্দেশ- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে তিনি প্রকল্পের সেফটি এনশিওর (নিরাপত্তা নিশ্চিত) করে তারপর কাজ করার কথা বলেছেন। আমরাও চাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। আমাদের যে যে জায়গায় ইমপ্রুভ (উন্নতি) করতে হবে, সেগুলো ঠিক করতে হবে। কীভাবে নিরাপত্তা এনশিওর করব সেগুলো নিয়ে বৃহস্পতিবার মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করব।’
দায় কার জানেন না এমডি
বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া কাজ করা ঠিকাদারি কোম্পানির অবহেলার প্রমাণ। তিনি এও মনে করেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চর্চা মেনে কাজ করানো নিশ্চিত করা এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও তদারকি সংস্থার দায়িত্ব। কারণ এই কাজে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের একটি বড় অংশ ধরা থাকে। কিন্তু বাজেটের পর অবহেলাগুলো এই প্রকল্পে স্পষ্ট।
তবে বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রধান হয়েও সফিকুল এই ঘটনায় নিজেদের কোনো দায় নিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি সুপারিশ করবে কার দায়। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নির্মাণকাজের সময় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত না করে রাজধানীতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের কাজ কেন চলছিল তার কোনো উত্তর অবশ্য নেই বিআরটি এমডির কাছে।
আবার যে ক্রেনটি দুর্ঘটনা ঘটায়, সেটির এত ওজনের বক্স গার্ডার তোলার সক্ষমতা ছিল কি না, যার সেটি অপারেট করার কথা, তিনিই সেটি চালাচ্ছিলেন নাকি অন্য কেউ চালাচ্ছিলেন, সেই প্রশ্নের জবাবও মিলছে না। দুর্ঘটনার পর ক্রেনের চালক পালিয়ে যান এবং তাকে এখনও ধরা যায়নি।
দুর্ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার নিউজবাংলার মুখোমুখি হয়ে বিআরটি এমডি বলেন, ‘এটা যে কী কারণে হলো। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তারা প্রতিবেদন দিলেই জানা যাবে৷ একটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তবে কমিটি আরও ইনডিটেইল কাজ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবেন।’
প্রাথমিক তদন্তে দোষী ঠিকাদার
এই দুর্ঘটনার তদন্তে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটি এরই মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সড়ক পরিবহন সচিবের কাছে। এতে দায়ী করা হয়েছে ঠিকাদারি কোম্পানিকে।
বিআরটি প্রকল্প নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিযুক্ত রয়েছে চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি)।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকালের (সোমবার) ঘটনার মূল দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। তারা কাউকে না জানিয়ে কাজ করছিল অথচ গতকাল কাজ বন্ধ থাকার কথা।
‘তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, এ ধরনের ব্যাপার ঘটলে তাদের যে দায়, সেই রকম ব্যবস্থাই তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে। এ নিয়ে বিশদভাবে বসবে মন্ত্রণালয়। আরও কারো কোনো দায় আছে কি না, তা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালি প্রমাণিত হলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- এমন প্রশ্নে সফিকুল বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ঠিকাদার কোম্পানির সঙ্গে যে কন্ট্রাক্ট আছে সেই চুক্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
‘বিআরটি গলার কাঁটা’
এর মধ্যেই বিআরটি প্রকল্পটিকে ‘গলার কাঁটা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ঢাকার তেজগাঁও সড়ক ভবনে গেল বছরের ২২ আগস্ট সাসেক রোড কানেকটিভিটি প্রজেক্ট-২-এর চুক্তি সই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেছিলেন।
সেদিন তিনি বলেন, ‘গাজীপুর বিআরটি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে আর প্রকল্প বাড়াবেন না। যতটুকু আছে, এটাই আগে শেষ করুন।’
২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুরের চেরাগআলী এলাকায় চলমান ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে এখনও আশাবাদী বিআরটি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। এ সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব আশা করি।’
কত ভাগ কাজ শেষ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১৮ শতাংশ কাজ বাকি।’
আরও পড়ুন:সব দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কিনতে পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না, এ ক্ষেত্রে তেল আমদানির সম্ভাব্যতা যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের এ নির্দেশনা দেন।
সভা শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেছেন, অন্য রাষ্ট্র রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কিনতে পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যারা বলেছিল শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে দেশ, এরপর ২ মাস পার হয়ে গেছে। আমাদের অর্থনীতি খাদে পড়বে না, উল্টো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।’
তবে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর মন্দার আভাস মনে করিয়ে দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমরাও এর বাইরে নেই। বলেন, এ জন্য ইকোনোমাইজ বা প্রয়োজনীয় সব ব্যয় করবে সরকার। সংকোচন নয়, অহেতুক ব্যয় বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কৃচ্ছ্রসাধনে সব ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম চলতি বছরের শুরু থেকেই বাড়ছিল। দেশে জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানিতে বেশি খরচ হওয়ায় কিছুটা হিমশিম খেতে হয় সরকারকে।
তাই গত ৫ আগস্ট দেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেয় সরকার। ডিজেল ও কেরোসিনে লিটারে বাড়ানো হয় ৩৪ টাকা। আর অকটেন-পেট্রলে বাড়ানো হয় ৫১ শতাংশ।
তার আগে থেকেই দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমাতে চেষ্টা করে সরকার। সে জন্য ডিজেলচালিত কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র সময়ে সময়ে বন্ধ রাখার কথা জাননো হয়। সে কারণে দেশে ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং দেয়া শুরু হয় গত জুলাই থেকে।
প্রথমে দিনে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেয়া হলেও সেটি পরে বাড়িয়ে ২ ঘণ্টা, এমনকি কোথাও কোথাও তারও বেশি করে দেয়া শুরু হয়।
বর্তমানে বিশ্ববাজারে কমতে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের দাম। এখন অশোধিত তেল বিশ্ববাজারে ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলারের নিচে নেমে গেছে। রাশিয়ার ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে শস্যটির রপ্তানি শুরু করেছে রাশিয়া।
সেই সঙ্গে ভারতসহ কয়েকটি দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশও দেশটি থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চায় বলে একনেক সভায় সব বিষয় দেখে এগোতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দাম কমানোসহ কয়েকটি দাবিতে আগামী ২৫ আগস্ট দেশজুড়ে অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে গণতান্ত্রিক বাম জোট।
রাজধানীর শাহবাগে মঙ্গলবার দুপুরে এক সমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস ছাত্তার।
তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪ তারিখের মধ্যে তেল, সার, পরিবহন ভাড়া না কমালে ২৫ আগস্ট অর্ধদিবস হরতাল। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে এই হরতাল পালন করা হবে। আমরা এই কর্মসূচির নাম দিয়েছি দাম কমাও, জান বাঁচাও।’
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে জ্বালানি তেল ও ইউরিয়া সারের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার এবং গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে পল্টন মোড় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা হন বাম জোটের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগ পৌঁছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের চলতে থাকে ধস্তাধস্তি। এক পর্যায়ে শাহবাগ পার হতে না পেরে নেতাকর্মীরা শিশু পার্কের গেটের সামনে সমাবেশ শুরু করেন।
বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেশে গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। নতুন দর অনুযায়ী, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হচ্ছে ১১৪ টাকায়।
অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হচ্ছে। এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটারের দাম ১৩০ টাকা।
আরও পড়ুন:স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করেছেন দুই শতাধিক ট্রান্সজেন্ডার। এ সময় দেশের সব ধরনের উন্নয়ন কাজে টান্সজেন্ডারের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ের সহযোগিতায় নানা আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি পালন করেন তারা।
সোমবার রাজধানীর মিরপুরে পাথওয়ের প্রধান কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী ও ১৫ আগস্টে তার পরিবারের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পরে আলোচনা সভা ও শিশুদের মাঝে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।
এছাড়াও গণভোজ এবং ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ট্রান্সজেন্ডার কান্তা বলেন, ‘জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে সমাজে এতো অবহেলিত হয়ে থাকতে হতো না। সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে দেশের উন্নয়নে আমাদেরকেও কাজ করার সুযোগ করে দিতেন। তার ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ ট্রান্সজেন্ডারদের কর্মস্থানে সরকার প্রধানসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও এগিয়ে আসবে।’
আলোচনা সভায় পাথওয়ের নিবার্হী পরিচালক মো. শাহিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলস্রোতে সংযুক্ত করতে হবে।’
এ সময় তিনি অবহেলিত ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতি পরিবার, সমাজ, ও নিকট আত্মীয় সকলকে সর্বদাই ভাল ব্যবহার, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে তাদের প্রতি সৌহাদ্যপূর্ণ আচরণের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান এবং অন্যান্য যে সকল মৌলিক অধিকার রয়েছে সেদিকে নজর দেয়ার কথা বলেন।
তাদেরকে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে কর্মক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করে রাষ্ট্রের সকল উন্নয়নমূলক কাজে লাগানোর আহবান জানান তিনি।
দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাহিদ, সমাজসেবা অফিসার (অঞ্চল-৬) কে এম শহিদুজ্জামান, পাথওয়ের চেয়ারম্যান রইজুর রহমান, উপদেষ্টা সাদ্দাম হোসেন ফয়েজসহ বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য