চোখের সামনেই শীতলক্ষ্যার রং বদলাতে দেখছেন রুস্তম আলী। একসময় যে নদীর পানি দেখেছেন ধবধবে সাদা আর স্বচ্ছ, সেটি এখন কালো আর দুর্গন্ধময়।
নৌকার বৈঠা বাইতে গিয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। তবে যারা তার উপার্জনের পথে বাধা হয়েছেন তাদের অভিশাপ দেন।
রুস্তমের নৌকায় চড়ে আলাপের একপর্যায়ে বলেন, ‘আহা রে, কত্ত সুন্দর আছিল শীতলক্ষ্যা নদীডা। আগে নৌকা চালাইয়া ক্লান্ত হইলে হাতে নিয়া নদীর পানি খাইতাম। ভোর হইলে দেখতাম মাছ ধরতে কত্ত মাইনষের ভিড়। হেই নদীডারে শেষ হইরা দিছে কারখানাগুলি। অহন কালা পানিতে পচা গন্ধ আহে।’
কারখানার বর্জ্য পানিতে মেশা দেখাতে নিয়ে যান নদীর পাড়ে। সেখানে দেখা যায়, মোটা পাইপে রঙিন পানি এসে পড়ছে শীতলক্ষ্যায়। দূষিত নদীতে বাড়ছে দূষণের মাত্রা।
নারায়ণগঞ্জের ৫ নম্বর খেয়াঘাটের মাঝি রুস্তম আলী। তিনি এই ঘাটে ১৯ বছর ধরে নৌকা বেয়েছেন। এখন হাতে বাওয়া নৌকায় রোজগার বেশি না হওয়ায় চালাতে শুরু করেছেন ট্রলার।
আগে অনেকেই শখের বশে নদীতে নৌকায় ঘুরতেন। এখন প্রয়োজন ছাড়া কেউ নদী পার হন না।
শুধু মাঝিরাই নন, শীতলক্ষ্যায় দূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলা, শ্রমিকসহ নানা পেশার মানুষ।
আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর উদ্দিন আহম্মেদ নিউজবাংলাকে জানান, শীতলক্ষ্যা নদীকে ঘিরেই প্রায় ৪০০ বছর আগে ব্যবসা-বাণিজ্যের শহর হিসেবে গড়ে ওঠে প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ। এখানে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের শিল্পকারখানা।
১০ থেকে ১৫ বছর আগেও নদীর পানি ছিল স্বচ্ছ ও জলজ প্রাণীর বাস উপযোগী। অনেকেই এ নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতেন। রান্না, গোসলসহ বিভিন্ন কাজে নদীর পানি ব্যবহার করা হতো। ভয়াবহ দূষণের কারণে নদীর পানি ব্যবহার তো দূরের বিষয়, নদী দিয়ে চলাচলই এখন দুরূহ হয়ে উঠেছে।
প্রতিদিন প্রচুর মানুষকে কাজে যাওয়ার জন্য শীতলক্ষ্যা পার হতে হয়। নাকে রুমাল চেপেও তীব্র দুর্গন্ধ এড়ানো যায় না।
নদীপারের মোহাম্মদ জনি বলেন, ‘প্রতিদিন নদী পার হয়ে গার্মেন্টসে যেতে হয়। শিল্পকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য পানিতে মিশে উৎকট গন্ধ ছড়ায়। নদীর কাছে দাঁড়িয়ে থাকাই যায় না। সেখানে এই পানির ওপর দিয়ে যাতায়াত করা খুব কষ্টের। আবার এভাবে যাতায়াত ছাড়া উপায়ও নেই।’
বন্দরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হারুন মিয়া বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে এই নদীতে গোসল করি। এখন তো নদীর পানি নষ্ট হয়ে গেছে। তাও ছোটবেলার স্বাদ মনে রাখার জন্য এখানে গোসল করি। পরে বাড়িতে গিয়ে আবার গায়ে পানি ঢালি।
‘একসময় নদীর পানি অনেক ভালো ছিল। নিচ পর্যন্ত দেখা যেত। এখন সেই নদী একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে।’
কলকারখানা অধিদপ্তর ও নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জে ৩ হাজার ৫৫০টি বিভিন্ন শ্রেণির কলকারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে তরল বর্জ্য নির্গত হয় ৫০৪টি কারখানার। বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) আছে ৩১৭টি প্রতিষ্ঠানের। ইটিপি ও ছাড়পত্র নেই ১১৮টির।
প্রতিদিন ১৫ কোটি লিটার অপরিশোধিত শিল্প ও গৃহস্থালির তরল বর্জ্য পড়ছে শীতলক্ষ্যায়। নদীর পানিতে ময়লা ও বর্জ্যের পরিমাণ ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। শীতলক্ষ্যার প্রতি লিটার পানিতে ৪ থেকে ৬ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকার কথা থাকলেও আছে ১ থেকে ২ মিলিগ্রাম। এতে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর বসবাস অনুপযোগী হয়ে উঠেছে নদীটি।
নদী ঘুরে দেখা যায়, নিতাইগঞ্জ থেকে আড়াইহাজারের গোপালদী পর্যন্ত অন্তত অর্ধশতাধিক খাল-বিল, নালা ও ড্রেনের মাধ্যমে সরাসরি নদীতে গিয়ে বিভিন্ন বর্জ্য পড়ছে। এসব বর্জ্যের মধ্যে আছে বিভিন্ন এলাকার কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের রাসায়নিকমিশ্রিত পানি, রং, পলিথিন, গৃহস্থালি বর্জ্য, হাটবাজারের উচ্ছিষ্ট, হোটেল-রেস্তোরাঁর আবর্জনা।
দূষণের হাত থেকে শীতলক্ষ্যাকে বাঁচাতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নারায়ণগঞ্জ শাখা।
সংগঠনটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারখানাগুলো রাসায়নিক বর্জ্য ও পানি পরিশোধন ছাড়াই নদীতে ফেলে। ইটিপি থাকলেও তা ব্যবহার করে না। এই নদীকে বাঁচাতে হলে পরিবেশ দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের কঠোর হতে হবে। শুধু নামমাত্র জরিমানায় দায়িত্ব শেষ করা যাবে না।
‘বছরের পর বছর নোটিশ করার পরও যেসব প্রতিষ্ঠান এখনও বর্জ্য পরিশোধনে ইটিপি প্ল্যান্ট নির্মাণ করেনি তাদের কারখানা বন্ধ করা প্রয়োজন। যদি নদীনালা, খালবিল এগুলো বাঁচানো না যায় তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিপদে পড়বে।’
নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যারা আইন মানছে না তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিশেষ আদালতে মামলা করা হচ্ছে। যাদের কারখানায় ইটিপি থাকার পরও ব্যবহার করছে না তাদের কারখানার নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে।
‘যারা পরিবেশ দূষণ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া চলমান। জরিমানাসহ কারখানা বন্ধ করে দেয়া এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নও করা হয়। ইটিপি না থাকায় গত দুই মাসে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ নিট ম্যানুফেকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লোকাল কারখানা ও ডাইংগুলোতে ইটিপি নেই কিন্তু রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোতে ইটিপি রয়েছে এবং সেগুলো ব্যবহার করা হয়। ছোট কারখানাগুলোর পুঁজি কম হওয়ায় তারা ইটিপি স্থাপন করতে পারে না। যদি নদী দূষণ বন্ধ করতে হয় তাহলে সেন্ট্রাল ইটিপি স্থাপন করতে হবে এবং সেখান দিয়ে পানি পরিশোধনের পর নদীতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
‘এ জন্য সরকার ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে। যাদের ইটিপি নেই তারা বেশির ভাগই বিকেএমইএর সদস্য নয়। তাই তাদের সতর্ক করার জন্য নোটিশ দেয়া যায় না।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের বালুচরে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে প্রবাসীকে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
উপজেলার চরপানিয়া এলাকায় শনিবার বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অংশ নেন নিহতের স্ত্রী-সন্তানসহ শতাধিক মানুষ।
পরিবারের এক সদস্যের ভাষ্য, পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় সৌদি আরব প্রবাসী মুজিবুরকে (৪৫)। এ ঘটনায় মামলা করা হলেও ঘটনায় জড়িত খাসকান্দি এলাকার জহির হোসেনকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। জহির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দিতে হবে।
চরপানিয়া এলাকার একটি ক্ষেত থেকে গত ১০ মার্চ প্রবাসী মুজিবুরের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায় অভিযুক্ত জহির হোসেন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গাড়ির চাপায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন একজন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওডালা এলাকায় শনিবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন ঝালকাঠি সদর উপজেলার খেজুরা এলাকার সুরেশ ডাকুয়া (৩৫) ও তার ছেলে লোকেশ ডাকুয়া (৯)। এ ঘটনায় আহত লোকেশ ডাকুয়ার মা নিপু রায় (৩০) বলে জানিয়েছেন কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল হক।
তিনি জানান, শুক্রবার রাতে স্বামী-সন্তানসহ নারায়ণগঞ্জে ‘বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী’ মন্দিরে পূজা করতে যান তারা। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বামী স্ত্রী ও সন্তান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওঢালা এলাকা পার হচ্ছিলেন। এ সময় একটি গাড়ি তাদের চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, আহত অবস্থায় তিনজনকে স্থানীয়রা একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে লোকেশকে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। সুরেশ ও নিপু রায়কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে সুরেশ ডাকুয়ার মৃত্যু হয়।
কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল হক বলেন, ‘নিপু রায় ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে। নিহত দুইজনের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
এ ঘটনায় মামলাসহ গাড়ি ও চালককে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর উদ্যোগে ১৯৭১ সালের অসহায় শরণার্থীদের দুর্ভোগ স্মরণে ‘রোড টু বালুরঘাট’ প্রতীকী পদযাত্রায় ফুটে উঠেছে নওগাঁয় রোড ধরে ভারতে পাড়ি দেয়া শরণার্থীদের দুর্দশার চিত্র।
ঐতিহাসিক ২০ এপ্রিলের এ দিনে ‘রোড টু বালুরঘাট’ স্মরণ করল নওগাঁবাসী। প্রায় ৬০ মিনিটে ৩ কিলোমিটার পদযাত্রায় যুদ্ধকালীন নওগাঁ রোডের শরণার্থীদের যুদ্ধ বিভীষিকা ও অবর্ণনীয় দুর্দশা তুলে ধরা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর শনিবার বেলা ১১টার দিকে পাঁচ শতাধিক মানুষ নওগাঁ রোডে এ প্রতীকী পদযাত্রায় অংশ নেন। শহরের তাজের মোড় শহিদ মিনার পাদদেশ থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল মুক্ত মঞ্চ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে শরণার্থীদের প্রতীকী পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন উপদেষ্টা মইনুল হক দুলদুল, সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যক্ষ বিন আলী পিন্টু, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, সাইমা ফেরদৌসী, নাইস পারভীন, বিষ্ণু কুমার দেবনাথ, গুলশানারাসহ অনেকে।
এ সময় বক্তারা জানান, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বর্বরোচিত অত্যাচার-নিপীড়ন ও গণহত্যা থেকে বাঁচতে যুদ্ধের শুরু থেকে বিশেষ করে ২০ এপ্রিল এই দিনে পায়ে হেঁটে নওগাঁর সড়ক পথে হাজার হাজার মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতের বালুরঘাটে আশ্রয় নেন। চলার পথে সেই সময় পাকহানাদার ও দোসরদের আক্রমণে অনেকের মৃত্যু হয়। সে সব শরণার্থীদের ক্লান্তি ও দুর্ভোগ স্মরণে একুশে পরিষদ নওগাঁ ‘রোড টু বালুরঘাট’ প্রতীকী পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারী বলেন, ‘আমরা অনেকেই একাত্তরের ইতিহাস ভুলে গেছি। ৫৩ বছরের আগে কী ঘটেছিল। লাখ লাখ মানুষ নওগাঁ শহরের ওপর দিয়ে দেশ ছেড়েছিল দেশকে মুক্ত করার জন্য। চলার পথে সে সময় পাকহানাদার ও দোসরদের আক্রমণে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। নওগাঁর মূল ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী এ জেলার সব তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের জানানোর লক্ষ্যেই আয়োজনটি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে জোর করে ধান কাটা বন্ধে উদ্যোগ নেয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় পুলিশের এক উপপরিদর্শক তথা এসআইসহ চারজন আহত হয়েছেন।
উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের পলশিয়া গ্রামে শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতে পাঠায় পুলিশ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘পলশিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের কাজিম মন্ডল একদল সন্ত্রাসী নিয়ে একই গ্রামের সানু মিয়ার ডুব বিলের দুই বিঘা পাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেন। সানু মিয়া ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে গোপালপুর থানার এসআই সাইফুল ইসলাম একজন কনস্টেবল নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। পুলিশ দেখে সস্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়।
‘তারা রামদা, লাঠি ও লোহার রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামের মাথা ফেটে যায়। কনস্টেবল শফিকুল ইসলামসহ সানু মিয়ার দুই আত্মীয় আহত হয়। আহতরা সবাই গোপালপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
গোপালপুর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামের মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়েছে।’
গোপালপুর থানার ওসি ইমদাদুল হক তৈয়ব বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। হামলার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের পটিয়ার সড়কে শুক্রবার বিকেল ও রাতে দুটি দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
বাস উল্টে হেলপার নিহত
পটিয়ার মনসা বাদামতলা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী একটি মিনিবাস বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে শুক্রবার বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে মহাসড়কের পাশে উল্টে যায়। ওই সময় বাসটির হেলপার রফিক (২৩) লাফ দিলে বাসের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান তিনি।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি তৌফিকুল ইসলাম দুর্ঘটনার বিষয়টি জানিয়েছেন।
অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত
উপজেলার খরনা চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
নিহত দুজন হলেন চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী এলাকার আবু বক্কর তাসিফ (১৮) ও কক্সবাজারের ঈদগাহ মধ্যম মাইজপাড়া এলাকার নুরুল আমিন (২৭)।
আহত চারজন হলেন বৈলতলীর রাকিব হোসেন (২০), মোহাম্মদ জাবেদ (১৯), মোহাম্মদ সিহাব (২২) ও চকরিয়ার অটোরিকশার চালক লিটন (৩৫)।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি তৌফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম অভিমুখী দ্রুতগামী মারসা পরিবহনের একটি বাস নম্বরবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়রা অটোরিকশার যাত্রীদের উদ্ধার করে চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত চারজনকে হাসপাতালেই চিকিৎসা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:সুনামগঞ্জের ছাতকের ঐতিহ্যবাহী জাউয়া বাজার ইজারাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি ধারা জারি করা হয়েছে।
সংঘর্ষ এড়াতে শনিবার ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যধারার এক আদেশে ১৪৪ ধারা জারি করেন ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মুস্তাফা মুন্না।
আদেশে বলা হয়েছে, “যেহেতু ছাতক উপজেলাধীন ‘জাউয়া বাজার’ ইজারাকে কেন্দ্র করে বিবাদমান পক্ষসমূহের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং এর ফলে আইন শৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতিসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা বিদ্যমান রয়েছে মর্মে অফিসার ইন- চার্জ, ছাতক থানা, সুনামগঞ্জ থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গিয়েছে।
“সেহেতু সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আমি গোলাম মুস্তাফা মুন্না, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ছাতক, সুনামগঞ্জ আমার উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামী ২০ এপ্রিল সকাল ৬ ঘটিকা হতে রাত ১২ ঘটিকা পর্যন্ত জাউয়া বাজার এলাকা এবং তার আশেপাশের এলাকায় ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারা জারি করলাম।”
আদেশ অনুযায়ী, এ সময় উক্ত এলাকায় সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন, লাঠি বা দেশীয় কোনো অস্ত্র বহন বা প্রদর্শন, যে কোনো ধরনের মাইকিং বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার, পাঁচ বা তার অধিক সংখ্যক ব্যক্তির একসঙ্গে চলাফেরা, সভা সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ থাকবে।
ঢাকার সাভারে দৈনিক যুগান্তরের এক সাংবাদিকের ওপর ঝাঁঝালো রাসায়নিক নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা।
অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে কলমা এলাকায় শুক্রবার রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ইকবাল হাসান ফরিদ দৈনিক যুগান্তরের অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক।
ঘটনার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ফরিদকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাংবাদিক ইকবাল হাসান ফরিদ বলেন, ‘রাতে অফিস শেষে ঢাকা থেকে সাভারের বাসায় ফিরছিলাম। আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে বাসার অদূরে অন্ধকার গলিতে পৌঁছালে পেছন থেকে একজন মুখোশধারী যুবক আমাকে নাম ধরে ডাক দেয়। ডাক শুনে দাঁড়ানোর পর মুখোশধারী দুই যুবক স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে আগামী এক মাসের মধ্যে সাভার এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এলাকা ছেড়ে না গেলে সপরিবারে আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয় তারা।
‘এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগে পেছন থেকে তাদের একজন মরিচের গুঁড়াসদৃশ এক প্রকার ঝাঁঝালো কেমিক্যাল আমার মাথায় ও চোখে-মুখে ছিটিয়ে দেয় এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে চলে যায়। ঝাঁঝালো কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেয়ার পর চোখে-মুখে ও শরীরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা সাভারের যে দুইজন জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে হুমকি দিয়েছে, তাদের কারও সঙ্গে আমার পরিচয়, যোগাযোগ কিংবা কোনো ধরনের বিরোধ নেই। তৃতীয় কোনো পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে তাদের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি হাসপাতালে অসুস্থ সাংবাদিক ফরিদকে দেখতে যায় সাভার মডেল থানা পুলিশ।
সাভার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ‘তদন্ত করে দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য