আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণের হাতের নাগালে রাখতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স কমানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেছেন, ‘দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে নিত্যপণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স তুলে নিতে যাচ্ছি। খুব শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
‘আমরা সারাদেশ ওএমএস কার্যক্রম বৃদ্ধি করব, ন্যায্য মূল্যে যাতে সাধারন মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছাতে পারি। এর পাশাপাশি সাপ্লাইচেইনটা যাতে ঠিক থাকে সরকার সে ব্যবস্থা করবে। কোনো পণ্য যাতে কেউ স্টক করতে না পারে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’
রোববার বিকেল ৪টার দিকে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। রমজান সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়।
বৈঠকে সোমবার ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো সংক্রান্ত এসআরও জারি করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ক্যাবিনেট সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশে চড়ছে মূল্যস্ফীতির পারদ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫.৬ শতাংশ।
এর অর্থ হলো, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৫ টাকা ৬০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
আগের মাস আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫.৫৪ শতাংশ। জুলাইয়ে হয়েছিল ৫.৩৬ শতাংশ।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫.৬৪ শতাংশ।
এর পর থেকে প্রতি মাসেই বাড়ছে মূল্যস্ফীতি।
সেপ্টেম্বরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় খাতেই অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক বেড়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বৃহস্পতিবার মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫.৩ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই লক্ষ্য ধরা ছিল ৫.৪ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছর শেষ হয় ৫.৫৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে।
অর্থাৎ বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে খানিকটা বেশি ছিল গড় মূল্যস্ফীতি।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বাড়ছে। তার প্রভাব পড়েছে ছোট-বড় সব দেশে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলেছে, খাদ্যশস্য ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খাদ্যের মূল্য এখন ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক দাঁড়িয়েছে ১৩০। অথচ গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ৯৭.৯ শতাংশ। খাদ্যে ব্যয় বৃদ্ধি অবস্থাপন্ন মানুষের জন্য বড় সমস্যা না হলেও দরিদ্র মানুষের জন্য তা বড় সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। কারণ আনুপাতিক হারে দরিদ্র মানুষের খাদ্যব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে সবজির দাম বেড়েছে হু-হু করে- যেখানে ১০০ টাকার কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। আলু ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজিই ক্রেতার নাগালের বাইরে। ভালো বোরো ফলন সত্ত্বেও চালের দামও প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) অনুসারে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে, যা গত আগস্টে ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ, এক মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ০.০৭ শতাংশ পয়েন্ট।
মূল্যস্ফীতি ৮.৩৬ শতাংশ মানে হলো- ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যে পণ্য ১০০ টাকায় কেনা যেত, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে সেটির জন্য গুণতে হয়েছে ১০৮ টাকা ৩৬ পয়সা।
বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছিল। অথচ চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে। এই লক্ষ্য অর্জনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রহণ করেছে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি। তবুও লক্ষ্য পূরণ কঠিন হয়ে পড়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।
সিপিআই বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। একই সময় খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা এক মাস আগে ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ, দুই খাতেই পণ্যমূল্য বেড়েছে।
গ্রাম ও শহরের তুলনায় দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলে জীবনযাত্রার ব্যয় শহরের চেয়ে বেশি বেড়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে গ্রামীণ মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশে, যেখানে শহরাঞ্চলে তা ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। গ্রামে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বৃদ্ধির চাপ সবচেয়ে বেশি পড়েছে।
গ্রামাঞ্চলে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে শহরে খাদ্য খাতে ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।
তুলনামূলকভাবে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে। অর্থাৎ, আগের বছরের তুলনায় মূল্যস্ফীতি কমেছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এর আগের বছর ২০২৩ সালে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ- খাদ্যে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর ২০২২ সালে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, যেখানে খাদ্যে ছিল ৯ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এখনো বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ। বর্তমানে ভারতে মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ৭ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ, আফগানিস্তানে ২ দশমিক ২ শতাংশ, মালদ্বীপে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ভুটানে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বিশ্ববাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও দেশীয় বাজারে সরবরাহ ব্যয়, পরিবহন খরচ ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
ডলারের দাম ধরে রাখতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিলামের মাধ্যমে আরও ১০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার (১০৪ মিলিয়ন ডলার) কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার ১২১ টাকা ৮০ পয়সা দরে ৮টি ব্যাংক থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর চলতি বছর জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ডলারের দরে এক রকম স্থিতিশীলতা জরুরি। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার না কিনলে বৈদেশিক মুদ্রাটির দর পড়ে যেত।
আর ডলারের দর বেড়ে যাওয়া যেমন অর্থনীতির জন্য ভালো নয়, তেমনি কমে যাওয়াও ভালো নয়।
বর্তমানে নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনার জন্য রেমিট্যান্স প্রেরক ও রপ্তানিকারকরা সুবিধা পাচ্ছেন। আর বাংলাদেশ ব্যাংকও এ দুই সূচকের প্রবাহ ইতিবাচক রাখার জন্যই নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনছে। অন্যদিকে ডলার কেনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ-ও বাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিশ্ববাজারে প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং ডিজিটাল ব্রিজ পার্টনার্স (ডিবিপি) একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদারিত্বে আবদ্ধ হয়েছে।
এই অংশীদারিত্বের মূল লক্ষ্য হলো- ‘ডিজিটাল ফ্যাক্টরি পাসপোর্ট (ডিএফপি)’ নামে একটি যুগান্তকারী ব্যবস্থা চালু করা। এটি হবে এআইচালিত একটি ইএসজি (পরিবেশগত, সামাজিক ও সুশাসন) কমপ্লায়েন্স ফ্রেমওয়ার্ক, যা দেশের পোশাক খাতের কমপ্লায়েন্স প্রক্রিয়াকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা বাড়াবে এবং বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে।
এ বিষয়ে গত রোববার উত্তরাস্থ বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বিজিএমইএ এবং ডিজিটাল ব্রিজ পার্টনার্সের মধ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান, সহসভাপতি ভিদিয়া অমৃতখান, পরিচালক ফয়সাল সামাদ, পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা, পরিচালক মজুমদার আরিফুর রহমান এবং পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল।
ডিজিটাল ব্রিজ পার্টনার্সের পক্ষ থেকে ছিলেন নাবিল চৌধুরী ও হায়দার আনওয়ার।
এই ডিজিটাল ফ্যাক্টরি পাসপোর্ট একটি সমন্বিত ডিজিটাল টুল হিসেবে কাজ করবে, যা কারখানার তথ্য ব্যবস্থাপনা ও রিপোর্টিং প্রক্রিয়াকে সুবিন্যস্ত করবে। বিশেষ করে পোশাক কারখানার সকল তথ্য, যেমন- উৎপাদন প্রক্রিয়া, পরিবেশগত প্রভাব, শ্রমিকের নিরাপত্তা ও কল্যাণ এবং সাপ্লাইচেইনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডেটাগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে আসবে। ফলে বিভিন্ন ক্রেতা ও সংস্থার জন্য বারবার অডিট বা নিরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা কমবে এবং টেকসই কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণে দক্ষতা বাড়বে।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘আমাদের পোশাকশিল্পের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ডিজিটাল রূপান্তর ও উদ্ভাবন অপরিহার্য।’
তিনি বলেন, বিজিএমইএ ও ডিজিটাল ব্রিজ পার্টনার্সের এই অংশীদারিত্ব পোশাকশিল্পে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন ও প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে বিজিএমইএর চলমান প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
সর্বোপরি, একটি মানসম্মত ও এআইচালিত পদ্ধতি প্রদানের মাধ্যমে এই উদ্যোগটি কারখানাগুলোকে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের শর্ত পূরণে সহায়তা করবে এবং বৈশ্বিক সোর্সিং হাব হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানকে ভবিষ্যতে আরও সুরক্ষিত করবে।
ডিজিটাল ব্রিজ পার্টনার্সের প্রতিনিধিরা ডিজিটাল সমাধানের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই শিল্পকে আরও বেশি দক্ষতা ও স্বচ্ছতা অর্জনে সহায়তা করার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) উদ্যোক্তাদের জন্য বৈদেশিক লেনদেন প্রক্রিয়া আরও সহজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে নিবন্ধিত এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক ক্রেডিট, ডেবিট অথবা প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে বছরে সর্বোচ্চ তিন হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিদেশে পাঠাতে পারবে।
গত রোববার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিবেচনায় বৈদেশিক লেনদেন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও কার্যকর করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রচলিত ব্যাংকিং চ্যানেলের পাশাপাশি কার্ডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিশোধের সুযোগ তৈরি করাই এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
সার্কুলার অনুযায়ী, প্রতিটি নিবন্ধিত এসএমই প্রতিষ্ঠান তাদের মনোনীত কর্মকর্তার নামে রিফিলযোগ্য আন্তর্জাতিক কার্ড অথবা ‘এসএমই কার্ড’ নিতে পারবে।
প্রাথমিকভাবে এই কার্ডে সর্বোচ্চ ৬০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত লোড করা যাবে, যা বৈধ অনলাইন খরচ পরিশোধের জন্য ব্যবহৃত হবে। তবে কার্ড লেনদেন ও সরাসরি রেমিট্যান্স- এই দুটি ক্ষেত্র মিলিয়ে বছরে মোট বৈদেশিক লেনদেনের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ তিন হাজার মার্কিন ডলার। এই অর্থ আন্তর্জাতিক সেমিনার, সম্মেলন, প্রযুক্তিগত সহায়তা ফি, ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ব্যয় মেটাতে ব্যবহার করা যাবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান কেবল একটি অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকের মাধ্যমে এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। শাখা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিতে হবে।
লেনদেনের সময় ব্যাংকগুলোকে প্রচলিত নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। উৎস কর, ভ্যাট ও অন্যান্য শুল্ক আদায়ের পাশাপাশি গ্রাহক যাচাই, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ এবং বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ সংক্রান্ত সব নীতিমালা মানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর নামে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে ১২টি আন্তর্জাতিক সম্পদ পুনরুদ্ধার ও ল-ফার্মের সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ) চুক্তি করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে সোমবার অনুষ্ঠিত এক সভায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের উপস্থিতিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ওমর ফারুক খান বাসসকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় পাচার হওয়া অর্থের উৎস অনুসন্ধান ও ফেরত আনার কাজে যুক্ত হবে।’
তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তা দেবে।
তিনি আরও বলেন, ‘নেতৃত্বদানকারী হিসেবে কিছু ব্যাংক অন্যদের সঙ্গে কনসোর্টিয়াম গঠন করে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করবে। চুক্তি সম্পন্ন হলে পুনরুদ্ধারকৃত অর্থ কীভাবে জমা দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করা হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার প্রাথমিকভাবে পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দেশের ১১টি শিল্পগোষ্ঠীকে শনাক্ত করেছে। যার মধ্যে নাসা ও এস আলম গ্রুপের নাম রয়েছে।
ওমর ফারুক খান বলেন, ‘আমরা নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের (এনডিএ) আওতায় এসব সম্পদ পুনরুদ্ধার সংস্থার সঙ্গে কাজ করব। কিছু প্রাথমিক আলোচনাও শুরু হয়েছে।’
জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি অর্থপাচারের অভিযোগে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, সিকদার গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, ওরিয়ন, জেমকন, নাবিল ও সামিটসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশ শেষ পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের উপকারে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, এসব গোষ্ঠীর মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশ শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের উপকৃত করেছে বলে ধারণা করা হয়।
দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো দুই লাখ টাকায় উঠেছে দাম। নতুন করে প্রতি ভরিতে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) দাম বেড়েছে তিন হাজার ১৫০ টাকা। এতে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণ বিক্রি হবে দুই লাখ ৭২৬ টাকায়। আজ মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে নতুন এ দর কার্যকর হবে।
সোমবার রাতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাম বৃদ্ধির তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সে কারণে দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজুস।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, ২১ ক্যারেটের এক ভরি দাম বেড়ে এক লাখ ৯১ হাজার ৬০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি দাম এক লাখ ৬৪ হাজার ২২৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি দাম এক লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অপরিবর্তিত আছে রুপার দাম। ক্যাটাগরি অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের রুপার দাম ভরি দুই হাজার ৮১১ টাকা।
২১ ক্যারেটের রুপার দাম ভরি দুই হাজার ৬৮৩ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের রুপার দাম ভরি দুই হাজার ২৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম এক হাজার ৭২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ৯০০ ডলার ছাড়িয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬ অক্টোবর স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৯২৯.৯১ ডলারে পৌঁছেছে। একই সময়ে ডিসেম্বর ডেলিভারির মার্কিন স্বর্ণ ফিউচার ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ে এবং দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯৫৪.৭০ ডলারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইয়েনের দুর্বলতা, মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা বাড়িয়েছে। কেসিএম ট্রেডের বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, কম সুদের পরিবেশে স্বর্ণই সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ।
২০২৪ সালে স্বর্ণের দাম ২৭ শতাংশ বেড়েছিল, চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ ক্রয়, এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডের চাহিদা, ডলারের দুর্বলতা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ভূমিকা রেখেছে।
অন্য মূল্যবান ধাতুর বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। সোমবার স্পট সিলভার ৪৮.৫৩ ডলার, প্লাটিনাম ১,৬২৩.৮৮ ডলার এবং প্যালাডিয়াম ১,২৭৫.৬৫ ডলারে পৌঁছেছে।
শেনজেন বে মিক্সসি-তে আলফা গ্লোবাল ফ্ল্যাগশিপ স্টোরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছে বৈশ্বিক এআই ডিভাইস ইকোসিস্টেম প্রতিষ্ঠান অনার। নতুন এ স্টোরটিকে ‘এআই স্মার্ট লিভিং ইনোভেশন হাব’ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, সৃজনশীলতা ও সংস্কৃতির সমন্বয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের এমডব্লিউসি বার্সেলোনাতে একটি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড থেকে বৈশ্বিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্পন্ন ডিভাইস ইকোসিস্টেমে রূপান্তরের রূপরেখা তুলে ধরে অনার। তার ধারাবাহিকতায়, শেনজেন বে মিক্সসি -তে ফ্ল্যাগশিপ স্টোরের উদ্বোধন প্রতিষ্ঠানটির দূরদর্শী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এ উদ্যোগ উন্মুক্ত ও সহযোগিতামূলক এআই ইকোসিস্টেমের প্রতি অনারের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
শেনজেন বে’র শান্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই স্টোরটির নকশা করা হয়েছে। নকশায় উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে সম্পূর্ণরূপে মানব-কেন্দ্রিক পরিবেশের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সেই সাথে স্টোরের লে-আউট সাজানো হয়েছে দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্বের জায়গা থেকে, যেখানে স্মার্ট ভ্রমণ থেকে শুরু করে বিনোদন, সবক্ষেত্রে বিভিন্ন এআইনির্ভর অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।
স্টোরটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ইয়োইয়ো জোন। এটি অনারের এআই অ্যাসিস্ট্যান্টকে ঘিরে চারটি মূল থিমে সাজানো হয়েছে; এআই লাইফস্টাইল, এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট, এআই কনটেন্ট ক্রিয়েশন ও এআই কম্প্যানিয়নশিপ। এর উন্নত ভিজ্যুয়াল পার্সেপশন, মেমোরি ও টাস্ক এক্সিকিউশন ক্ষমতা বাস্তবিকই ব্যক্তিকেন্দ্রিক এআই অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ হল স্টোরটির এআই ইন্সপিরেশন ক্যাফে। এখানে প্রযুক্তিবিদ, সৃজনশীল ব্যক্তি ও দর্শনার্থীরা কফির কাপে চুমুকের সাথে মতবিনিময় করতে পারবেন।
স্টোরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে অনার বিভিন্ন অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে নানা ধরনের উপভোগ্য পারফরমেন্সের আয়োজন করে।
মন্তব্য