মৌসুমি জ্বর-সর্দি-কাশি তো বটেই, এমনকি করোনায় আক্রান্ত হলেও ৯৮ শতাংশ রোগী অপ্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী সেবন করছেন ওষুধ। ফলে করোনা, সর্দি ও জ্বরের চিকিৎসায় সাধারণ ওষুধের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে ওষুধের দোকানগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে ওষুধ বিক্রি করছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে করোনাকালে কোনো ওষুধের দাম বাড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
শুধু করোনাকালেই ওষুধের বাজারের এমন পরিস্থিতি নয়, বছরজুড়েই খুচরা পর্যায়ে ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। কোনো কারণ ছাড়া ওষুধের দাম বাড়ছে। যেন কেউ দেখার নেই।
দাম নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটি তদারকি টিম রয়েছে, কিন্তু বাজারে সে টিমের তৎপরতা খুব একটা লক্ষ করা যায় না।
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম। করোনা সংক্রমণের শুরুতে এটির চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। করোনা চিকিৎসায় আইসিইউ রোগীদের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাকটেম্রা ইনজেকশন।
এই ইনজেকশন ২০০ ও ৪০০ মিলিগ্রামের শিশিতে পাওয়া যায়। পরিমাণের ভিত্তিতে ২১ থেকে ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
অভিযোগ আছে, বিভিন্ন সিন্ডিকেট এটির দাম বাড়িয়ে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। কৃত্রিম সংকটও তৈরি করেছে দোকানগুলো। দরকারি এই ইনজেকশন সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সুযোগ নিচ্ছে ফার্মেসিগুলো।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ফরাসি ওষুধ কোম্পানি রোস উৎপাদিত ওষুধটি ‘অ্যাকটেম্রা’ নামে বাজারজাত করা হয়। এটি পাশের একটি দেশ থেকে কালোবাজারের মাধ্যমে দেশে আসছে মিটফোর্ডের কিছু ব্যবসায়ীর কাছে। তারা ৪০০ এমএল ওষুধ বিক্রি করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকায়।
দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্তের পর ঘরে ঘরে দেখা দেয় জ্বর -সর্দি। এ সময় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে প্যারাসিটামল। এই ওষুধের চাহিদা শুধু রাজধানীতে নয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও বেড়েছে।
ওষুধের দোকানের কর্মচারীরা বলছেন, করোনা আসার পর থেকেই প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের চাহিদা বেশি। গত দুই সপ্তাহ ধরে এর চাহিদা আরও বেড়েছে। এ ছাড়া শরীরে নানা ধরনের প্যারাসাইট প্রতিহত করার ওষুধ এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ প্রতিরোধ করে এমন অ্যান্টিবায়োটিকেরও চাহিদা আছে। পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধেরও চাহিদা অনেক। এগুলোর দাম বাড়তি।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, করোনা ও সাধারণ জ্বর প্রতিরোধে নাপা, নাপা এক্সট্রা, নাপা এক্সটেন্ড, নাপা সিরাপ, এইস, এইস প্লাস, এইস এক্স, ফাস্ট, ফাস্ট এক্স ট্যাবলেটের চাহিদা বেশি। এসব ওষুধের বাজারমূল্য প্রতি পাতা ১০ টাকা। অবশ্য কিছু কিছু ফার্মেসিতে ১৫ থেকে ১৭ টাকাও নিচ্ছে।
এ ছাড়া করোনা প্রতিরোধে ‘ফেবিপেরাভির’ নামের একটি ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশে শীর্ষস্থানীয় বেশ কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এটি উৎপাদন করছে। ২০০ মিলিগ্রামের একটি ওষুধের দাম ২০০ টাকা হলেও বিভিন্ন ফার্মেসি এটি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করছে।
কোভিড আক্রান্ত শ্বাসকষ্টের রোগীদের ‘মন্টিলুকাস ও ‘ডক্সিসাইক্লিন’ জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত মন্টিলুকাস ওষুধের দাম প্রতি পিস ১৫ থেকে ২০ টাকা। এটি এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায়।
অন্যদিকে ডক্সিসাইক্লিন প্রতি পিসের দাম আড়াই থেকে ৪ টাকা। খুচরা দোকানিরা বিক্রি করে ৫ থেকে ১০ টাকায়।
এনেক্সপেরিন-সোডিয়াম ওষুধটি দেশীয় বেশ কিছু কোম্পানি উৎপাদন করে। এই ইনজেকশন রোগীদের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে কোভিড রোগীদের পেটে এটি দেয়া হয়। এর বাজারমূল্য সাড়ে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা হলেও এটি বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে ২ হাজার টাকায়।
করোনার চিকিৎসায় মলনুপিরাভির দেশীয় অনেক কোম্পানি উৎপাদন করছে।
করোনা প্রতিরোধে ৪০টি ক্যাপসুল খেতে হয়। ক্যাপসুলের বাজারমূল্য ১৬ হাজার টাকা হলেও ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সচিব মুহাম্মদ মাহবুবুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার ও ওষুধ প্রস্তুতকারী কোনো কোম্পানি দাম বৃদ্ধি করেনি। অনেক সময়ে সরবরাহ সংকট দেখিয়ে ফার্মেসিগুলো দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা সব দেশেই হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব ওষুধের সরবরাহ সংকট দেখা যায়, সেগুলোর দাম বাড়ে। এই সময়ে ফার্মেসি মালিকরা বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খুচরা পর্যায়ে ওষুধের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে কী না, আমার জানা নেই। এ ক্ষেত্রে ক্রেতাকে সতর্ক থাকতে হবে।’
তার মতে, যখন ফার্মেসিগুলো দাম বেশি নেয়, তখন ক্যাশ মেমো নিয়ে মামলা করা যায়। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মামলা করা যায়।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আশরাফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ওষুধের দাম বাড়ানো হয়নি। ওষুধ প্রস্তুতকারী কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে দাম বাড়ানোর জন্য আবেদন করেনি। ওষুধের বাজার তদারকি করার জন্য একটি টিমও থাকে, তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’
ওষুধ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওষুধের দাম আমরা ইচ্ছা করলেই বাড়াতে পারি না। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়। অনুমোদন ছাড়া ওষুধের দাম বাড়ানো সম্ভবও নয়। আবেদন সাপেক্ষে অধিদপ্তর তা যাচাই-বাছাই করে। এ ক্ষেত্রে তারাও আইন-কানুন ও নীতিমালা অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত দেয়।’
ভোক্তা পর্যায়ে ওষুধের দাম নিয়ে অরাজকতা বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো দেশে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা করা ছাড়াও ওষুধগুলোর দাম নির্ধারণ করে সরকার। এটাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম। আমাদের দেশের ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতিতেও তা ছিল।
‘কিন্তু ১৯৯৪ সালে ওষুধ কোম্পানির দাবির মুখে বলা হলো, ১৭ শতাংশ ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করবে, বাকিটা করবে কোম্পানি। এটাকে বলা হলো ইন্ডিকেটিভ প্রাইস। এ রকম আজগুবি নিয়ম দুনিয়ার কোথাও নেই।’
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য