এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) চলতি বছরের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়।
২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলে এবার পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।
গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষা অন্যান্য বছরের মতো হয়নি। পরীক্ষা হয় শুধু নৈর্বাচনিক বিষয়ে। আর আবশ্যিক বিষয়ে আগের পাবলিক পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মূল্যায়নের মাধ্যমে নম্বর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাদ দেয়া হয় চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষাও।
এ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৮১ জন, উত্তীর্ণ হয় ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন। আর জিপিএ-৫ পান ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা হবে। ওই দিনই বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আর্টস ও সোশ্যাল সায়েন্স অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা হবে। পরদিন শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সিকিউরিটি অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক অনুষদে ভর্তি পরীক্ষা হবে। একই দিনে সায়েন্স ও টেকনোলজি অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নেয়া হবে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও খুলনায় একযোগে এসব ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে মৌখিক পরীক্ষা হবে ঢাকায় বিইউপির ক্যাম্পাসে।
এ ছাড়া চলতি মাসের ১৮ তারিখ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) ভর্তি পরীক্ষাও হবে।
এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হলেও এখনও ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। সাধারণত এ সংগঠন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত একই দিনে যেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ না পড়ে সে জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বসে বিষয়টি সমন্বয় করা হয়।’
চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তারিখ নির্ধারণ করে বিষয়টি আমাদের জানায়। এরপর আমরা বসে সমন্বয় করি। এখনও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ জানানো হয়নি।’
মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা ১ এপ্রিল
আগামী ১ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সারা দেশে একযোগে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষা ২২ এপ্রিল
গত ৯ মার্চ সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে বিডিএস ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ২২ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সারা দেশে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছে।
গত বছর প্রথমবারের মতো ২০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া দ্বিতীয়বারের মতো সাত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
গুচ্ছ পদ্ধতির সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
সাত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
গুচ্ছ পদ্ধতির বাইরে ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
গত বছর পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এরা হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুন:এইচ এসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে, পঞ্চগড় জেলার তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি।
বৃহস্পতিবার ফলাফল প্রকাশ হলে এ তথ্য জানা যায়, পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে।
পঞ্চগড় জেলার মোট ৩৮টি কলেজ এইচএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন ৬৭১২ জন, তাদের মধ্যে ২৮৯৯ পাস করেন, ফেল করেন ৩৮১৩ জন, জিপিএ -৫-১১৩ জন,পাশের পার্সেন্ট ৪৩.১৯%
মাদরাসা ১৬টি কলেজ, ৪০০ জন শিক্ষার্থী, পাস করেন ২১৩ জন, ফেল করেন ১৮৭ জন, জিপিএ -৫ -১ জন, পাসের পার্সেন্টেজ ৫৩.২৫%
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—বোদা উপজেলার বোদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাড়েয়া মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং তেঁতুলিয়া উপজেলার আলহাজ্ব তমিজ উদ্দীন কলেজ। প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়, যার মধ্যে ৪ জন অনুপস্থিত ছিল। মাড়েয়া মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ জন, আর আলহাজ্ব তমিজ উদ্দীন কলেজ থেকে অংশ নেয় ৪ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে ২ জন অনুপস্থিত ছিল।
মাড়েয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ সপেন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, আমাদের কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত হয়নি। কয়েক বছর ধরে নেই কোনো শিক্ষক। এজন্য একজন পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাস করতে পারেনি।
বোদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নার্গিস পারভিন মৌসুমী বলেন, ভর্তি হওয়ার পরে সবার বিয়ে হয়ে গেছে, এ জন্য কেউ পাস করতে পারেনি।
আলহাজ্ব তমিজ উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ হাসান আলী বলেন, আমাদের কলেজের চারজনের মধ্যে দুজন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। দুজনে পাস করার কথা ছিল। আমরা বোর্ড চ্যালেঞ্জ করব।
ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খায়রুল আনাম মো. আফতাবুর রহমান হেলালী বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেনি সেসব প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হবে। এই ফলাফলের কারণ খুঁজে বের করে এখান থেকে কিভাবে উত্তরণ করা যায়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডেও ফল বিপর্যয় ঘটেছে। চলতি বছর এই বোর্ডে পাসের হার ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, চলতি বছর রাজশাহী বোর্ডে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৭৭ হাজার ৭৪২ জন। আরও জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ হাজার ১৩৭ জন।
এ বছর রাজশাহী বোর্ডে ছাত্রদের পাসের হার ৫০ দশমিক ৬৯ শতাংশ, আর ছাত্রীদের পাসের হার ৬৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এছাড়া ছাত্রদের মধ্যে ৪ হাজার ৪৫৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন, আর ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৮২ জন।
এর আগে ২০২৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ, ২০২৩ সালে ছিল ৭৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ২০২২ সালে ৮১ দশমিক ৬০ শতাংশ, ২০২১ সালে ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ, ২০২০ সালে ১০০ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ৭৬ দশমিক ৩৮ শতংশ।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সব শিক্ষা বোর্ড থেকে একযোগে এ ফল প্রকাশ করা হয়।
এ বছর দেশের ৯টি সাধারণ ও কারিগরি এবং মাদরাসা বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার দুই কলেজে এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব পরিক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয়েছেন। মোট ৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও একজনও পাস করতে পারেননি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার পরিক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর একাধিক মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ঘাগোয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মাত্র ৫ জন শিক্ষার্থী। অপরদিকে, সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ি মহিলা কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মাত্র ১ জন। কিন্তু দুই কলেজের কেউই পাস করতে পারেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে অনুপস্থিতি, শিক্ষক সংকট, পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব এবং প্রশাসনিক নজরদারির ঘাটতির কারণে এ ধরনের ফলাফল হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার প্রান্তিক এলাকার ছোট কলেজগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে পাঠদানের মান কমে যাওয়ায় এমন বিপর্যয় ঘটছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতনজনরা।
এছাড়াও স্থানীয় অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ বলছেন, বছরের পর বছর শিক্ষক সংকট ও একাডেমিক দুর্বলতার কারণে উপজেলার অনেক কলেজেই এখন শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘কোনো কলেজ থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দুই প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের সন্তোষজনক জবাব না পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চলতি বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গজারিয়া উপজেলায় সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে বালুয়াকান্দি ডা.আব্দুল গাফফার স্কুল এন্ড কলেজ। ভয়াবহ ফলাফল বিপর্যয়ে পড়া এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে পাশ করেছে মাত্র একজন শিক্ষার্থী।
খবর নিয়ে জানা যায়, বালুয়াকান্দিতে অবস্থিত ডা. আব্দুল গাফফার স্কুল এন্ড কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৭জন শিক্ষার্থী। প্রকাশিত ফলাফলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে শুধুমাত্র একজন শিক্ষার্থী পাশ করেছে। পাসের হার মাত্র ৫.৮৮ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির এমন ফলাফলে সমালোচনামুখর অভিভাবক শ্রেণি।
স্থানীয় বাসিন্দা সোলায়মান জানান, চলতি বছর ১৭জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও তাদের মধ্যে ১৪ জনই অনিয়মিত শিক্ষার্থী। নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৩ জন। মাত্র ৪জন জনবল নিয়ে কোনরকমে কার্যক্রম চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। মানবিক বিভাগের অনিয়মিত শিক্ষার্থী ইয়াসিন ব্যতীত এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে কেউ পাশ করতে পারেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, ' প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখা অত্যন্ত ভালো। তবে কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত নয় সেজন্য কলেজ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এসব সীমাবদ্ধতার সাথে লড়াই করে কোনো রকমের টিকে আছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে'।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ বশির উল্লাহর মোবাইলে কল করা হলে তিনি বলেন, ' আমি এখন ব্যস্ত আছি এ বিষয় নিয়ে কয়েকদিন পরে আপনাদের সাথে কথা বলব'।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত নয় সেজন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী স্বল্পতাসহ নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফলাফল খারাপের বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সাথে বসব’।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নীলফামারী জেলার ১০টি কলেজের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহা. তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, বোর্ডের অধীনে নীলফামারীর ১০টি কলেজের ৪০ জন শিক্ষার্থীর কেউই উত্তীর্ণ হয়নি।
কলেজগুলো হলো, নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ সৃজনশীল কলেজের মানবিক বিভাগের ১ জন, সৈয়দপুর উপজেলার সাতপাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ১ জন, কিশোরগঞ্জ উপজেলার নয়নখাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৮ জনের মধ্যে ৫ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, একই উপজেলার চেওড়াডাঙ্গী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৯ জনের মধ্যে ৬ জন ফেল ও ৩ জন অনুপস্থিত, গোলমুন্ডা আদর্শ কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জন, ডিমলা উপজেলার জেলা পরিষদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ১ জন ও মানবিক বিভাগের ১ জন,একই উপজেলার নাউতারা বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জন,ডিমলা সীমান্ত কলেজের মানবিক বিভাগের ২ জন এবং গয়াখড়িবাড়ি মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগের ৩ জনের মধ্যে ২ জন ফেল ও ১ জন অনুপস্থিত।
নীলফামারী জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর (২০২৫) জেলায় ৯৩টি কলেজের ১২ হাজার ১৮৯ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৭ হাজার ৫২৪ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৮১ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) পাসের হার বিগত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এবারের পাসের হার ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। যা গত বছরের তুলানায় ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম। গতবছর পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এছাড়া এবার জিপিএ-৫ কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭ জন। যা গতবার পেয়েছিল ১০ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী। ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে ফল ঘোষণা করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ এবং সচিব এ কে এম সামছু উদ্দিন আজাদ।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ২ হাজার ৯৭০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ৫৩ হাজার ৫৬০ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৪৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ; ছাত্রীদের পাসের হার ৫৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে পাসের হার ৭০ দশমিক ৯০ শতাংশ। জেলায় পাসের হার ৪৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এছাড়া তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে পাসের হার ৪১ দশমিক ২৪ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৩৫ দশমিক ৫৩ এবং বান্দরবানে ৩৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৪৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার সবচেয়ে বেশি ৭৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৫৫ দশমিক ৩০ শতাংশ ও মানবিক বিভাগে পাসের হার ৩৭ দশমিক শূন্য ৮০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী ফলাফলের বিষয়ে বলেন, এবার মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা ছিল খাতার মূল্যায়ন যেন মেধার ভিত্তিতে হয়। শিক্ষার্থী খাতায় লিখে যে নম্বরটি পাবে, সেটাই যেন মারকিং করা হয়। অতি মূল্যায়নের সুযোগ ছিল না। আমি পরীক্ষার পর সব প্রধান নিরীক্ষকদেও ডেকে এটাই বুঝিয়েছিলাম; রুব্রিক্স পদ্ধতিতে যেন খাতা কাটা হয়। তাছাড়াও জুলাই আন্দোলনের জন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় বিঘ্ন ঘটেছিল। যা সার্বিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্সের ফলাফলে ৩.৯৭ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করলেন ইমরান হোসেন। একই সাথে অসামান্য সাফল্যের জন্য ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ইমরান হোসেন।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ডিনস অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের হাত থেকে ইমরান হোসেন ডিনস অ্যাওয়ার্ড অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন।
ইমরান হোসেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ডহরপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে।
ইমরান হোসেন ঢাবির আররি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। স্নাতকে তিনি ৩.৮৫ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পঞ্চম হন। এবার মাস্টার্সের ফলাফলেও তিনি ৩.৯৭ সিজিপিএ পেয়ে যৌথভাবে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন।
ইমরান হোসেন ২০১৬ সালে বলুহার ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও ২০১৮ সালে ঢাকা মাদ্রাসা ই আলিয়া থেকে আলিম পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে ভর্তি হন।
এছাড়া তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া বাঁশবাড়িয়া মাদ্রাসা থেকে ২০০৯ সালে কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন। এসময় গওহরডাঙ্গা আঞ্চলিক বোর্ড ১০ম স্থান অর্জণ করেন।
ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করেন। এছাড়া ঢাকার মাদ্রাসাতুস সালমান থেকে মুফতি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ইমরান হোসেন বলেন, ১৪ বছর আগে বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ায় ভেবেছিলাম লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ছোট ভাই রেজোয়ান ইসলাম পরিবারের হাল ধরে আগলে রাখেন। পরিবারের সকলের সহযোগিতার জন্য আমার লেখাপড়া অব্যাহত থাকে এবং এই ফলাফল অর্জনে সক্ষম হই।
কোটালীপাড়া সাংবাদিক ফোরামের আহবায়ক মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল বলেন, একটি কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা ইমরান হোসেনের এই ফলাফল সত্যিই আমাদের জন্য গর্বের। ইমরান হোসেন কোটালীপাড়ার মুখ উজ্জ্বল করেছে। পরবর্তী প্রজন্ম ইমরান হোসেনের এই ফলাফলে অনুপ্রাণিত হবে।
মন্তব্য