করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অক্সিজেনের ব্যাপক চাহিদার কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লিন্ডে বিডির আয় বেড়েছে ১৪ শতাংশের বেশি।
কোম্পানির ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় করার পর বিনিয়োগকারীদের শেয়ারপ্রতি ৫৫ টাকা অর্থাৎ ৫৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। ১৯৭৮ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কখনও কোম্পানিটি এত বেশি লভ্যাংশ দেয়নি।
বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি ১২২ কোটি ৫৮ লাখ ৩৪ হাজার ৬৫ টাকা আয় করেছে। এই হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৮০ টাকা ৫৫ পয়সা।
আগের বছর কোম্পানিটির আয় ছিল ১০৭ কোটি ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮২ টাকা আয় করেছিল কোম্পানিটি। ওই বছর শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৭০ টাকা ৫৪ পয়সা। ওই বছর শেয়ারপ্রতি লভ্যাংশ এসেছে ৪০ টাকা।
কোম্পানিটি এর আগে সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০১৯ সালে। ওই বছর তারা শেয়ারপ্রতি রেকর্ড ৮০ টাকা ৯২ টাকা, অর্থাৎ ১২৩ কোটি ১৪ লাখ ৬৪ হাজার ৮৩৬ টাকা আয় করে ৫০ টাকা অর্থাৎ ৫০০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
কোম্পানিটির আয়ের পাশাপাশি সম্পদমূল্যও বেড়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৯৫ টাকা ৫৫ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ৩৫৫ টাকা ৭১ পয়সা।
যারা এই লভ্যাংশ নিতে চান, তাদের আগামী ৩১ মার্চ শেয়ার ধরে রাখতে হবে। অর্থাৎ সেদিন হবে লভ্যাংশ-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট।
এই লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ডাকা হয়েছে আগামী ১২ মে।
আরও পড়ুন:ইসলামী ফাইন্যান্স উইং খোলার অনুমোদন পেয়েছে ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড-এসএফআইএল।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের পরিচালক জুলকার নায়েন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
এসএফআইএলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর লেখা চিঠিতে বলা হয়, “এসএফআইএলর আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে 'ইসলামী ফাইন্যান্স উইং' খোলার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হলো।”
স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্সের এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতেজা আহমেদ খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রাহকরা এখন ইসলামী ধারার লেনদেন বেশি পছন্দ করছে। মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের অনেক মানুষ সুদের সঙ্গে যুক্ত হতে চান না, ইসলামী লেনদেনে আস্থা পান তারা। এজন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে ইসলামী ফাইন্যান্স উইং খোলার আবেদন করি।’
তিনি জানান, তাদের ৯৮ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার প্রাতিষ্ঠানিক। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ কানাডা ও আমেরিকার সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) রয়েছে। আর বাকি ২ শতাংশ ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ফলে সুশাসন ও ব্যবস্থাপনা পরিধি নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়। এটা আমাদের শক্তি। আমানতকারীদের আস্থা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা একটা ভালো উদাহরণ।
দেশে আর্থিক খাতের বয়স বিবেচনায় এসএফআইএল নবীন। ‘স্বচ্ছতার বন্ধন’– এই স্লোগান সামনে রেখে করোনার মধ্যে যাত্রা শুরু করে এসএফআইএল। তবে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি তার পরিচালন দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং গ্রাহকসেবার ক্ষেত্রে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রেও মিলেছে কাঙিক্ষত সাফল্য।
অতি সতর্কভাবে ঋণ বিতরণ করায় প্রতিষ্ঠার দেড় বছর পরেও প্রতিষ্ঠানটির বিতরণকৃত ঋণের এক টাকাও খেলাপি হয়নি।
অনুমোদন পেতে যেসব কাজ করতে হবে
ইসলামী ফাইন্যান্স উইং খোলার জন্য এসএফআইএলকে কিছু কার্যক্রম নিতে হবে বলে চিঠিতে বলা হয়।
এগুলো হলো:
>> এসএফআইএলকে নিবন্ধিত সংঘ-স্মারক সংশোধনপূর্বক ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবসা পরিচালনাকে কোম্পানির অন্যতম ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য হিসেবে সংযুক্ত করতে হবে;
>>কোম্পানির সংঘ-বিধি সংশোধন করে একটি স্বতন্ত্র শরীয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটি গঠন করতে হবে;
>> ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে একটি পৃথক ইসলামী অর্থায়ন বিভাগ গঠন করতে হবে;
>>কী কী আমানত, ঋণ, লিজ, বিনিয়োগ, ফাইন্যান্সিং সুবিধা প্রদান করা হবে তা সংবলিত প্রোডাক্ট পলিসি গাইডলাইন প্রণয়ন;
>>বিদ্যমান তহবিল থেকে প্রস্তাবিত ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবসার পৃথক তহবিল গঠন;
>> শরীয়াহ ভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি অপারেশনাল ম্যানুয়াল প্রণয়ন;
>>আমানত ও বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফার হার নির্ধারণ বা হিসাবায়নের নীতিমালা প্রণয়ন;
>>ইসলামী শরীয়ারভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবসার জন্য পৃথক হিসাবরক্ষণ নীতি ও পদ্ধতি গ্রহণপূর্বক পৃথক আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত;
>> বাংলাদেশ ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং নীতিমালার আলোকে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে;
>> ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবসা পরিচালনার জন্য পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুতি করা হয়েছে মর্মে স্বতন্ত্র শরীয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র দাখিল;
এবং
>>নীতিগত অনুমোদন পা্ওয়ার ছয় মাসের মধ্যে এসব নির্দেশনা পরিপালনপূর্বক 'ইসলামী ফাইন্যান্স উইং’ এর মাধ্যমে ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবসা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হবে।
আরও পড়ুন:দেশের পুঁজিবাজারে এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং ফান্ড-ইটিএফ প্রডাক্ট চালুর লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডন গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সঙ্গে বৈঠক করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
রোববার প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা-সিইও মরিস পটের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
বৈঠকে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, মিজানুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ উদ্দেশ্যে গঠিত এক ধরনের কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম বা সমন্বিত বিনিয়োগ তহবিলকে বলা হচ্ছে ইটিএফ। এ ধরনের তহবিল থেকে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ার বা নির্দিষ্ট সূচক অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়।
মিউচুয়াল ফান্ডের মতো এ তহবিল ব্যবস্থাপনারও দায়িত্বে থাকে সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান। ওই সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান তহবিলের অর্থ আইন অনুযায়ী নির্ধারিত শেয়ারে বিনিয়োগ করে। ইটিএফ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তহবিলটির ইউনিট কেনাবেচার সুযোগ পাবেন।
এটি মেয়াদি বা বেমেয়াদি উভয় ধরনেরই হতে পারে। তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে এ ধরনের তহবিলে। কোথাও কোথাও এটির বিনিয়োগকে নির্দিষ্ট সূচক বা ইনডেক্সভিত্তিক করা হয়।
বৈঠকে মরিস পট বাংলাদেশে ইটিএফ চালুকরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা প্রদান, নলেজ ট্রান্সফার বা জ্ঞান স্থানান্তরে প্রশিক্ষণ এবং ইটিএফে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বিএসইসি জানায়, ইটিএফ চালুর ক্ষেত্রে বাজার সৃষ্টিকারী বা মার্কেট মেকার প্রয়োজন হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বনামধন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাজার সৃষ্টিকারী সনদপ্রাপ্তির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা সভায় আলোচনা হয়েছে। বাজার সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা প্রদানের বিষয়েও মরিস পট আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বিনিয়োগকারীরা যেন সর্বোচ্চ মুনাফা পান, সে জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে ইটিএফ গঠনের ক্ষেত্রে পরিচালন ব্যয় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার বিষয়ে সভায় গুরুত্বারোপ করা হয়।
বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বৈঠকে বলেন, ‘ইটিএফে বিনিয়োগ তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ইটিএফ খুবই জনপ্রিয় একটি বিনিয়োগ পণ্য হিসেবে বিনিয়োগকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে।’
বিএসইসি চেয়ারম্যান মনে করেন, নতুন এ বিনিয়োগ পণ্যটি এলে তা বাজারের স্থিতিশীলতা, বৈচিত্র্য সৃষ্টি ও তারল্যপ্রবাহ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, ‘ইটিএফ গঠন ও বাজার সৃষ্টিকারী সনদ প্রদানে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে কমিশনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতাসহ ফাস্ট ট্র্যাক সেবা প্রদান করা হবে বলে।’
আরও পড়ুন:আবার দরপতনের মধ্য দিয়ে সপ্তাহ শুরু হলো পুঁজিবাজারে। টানা তিনটি সপ্তাহে এই প্রবণতা দেখা গেল।
এদিন এমন কোনো খাত ছিল না, যেটি দরপতনের মধ্য দিয়ে যায়নি। এর মধ্যে গত দুই সপ্তাহের মতোই দুর্বল বা স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারে উল্লম্ফন দেখা যায়।
সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির মধ্যে কোনোটিই মৌলভিত্তির কোম্পানি নয়। এর মধ্যে ৬টিই লোকসানি কোম্পানি, যেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ কেবল গত বছর নয়, এক যুগেও লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
কেবল সবচেয়ে বেশি ১০টি নয়, সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে-এমন ২০টি কোম্পানির ক্ষেত্রেও দেখা গেছে একই চিত্র।
কেবল সূচকের পতন নয়, টানা ষষ্ঠ দিন কমল লেনদেন। সেটি নেমে এলো ছয় শ কোটির নিচে। গত ২৬ মের পর ২০ কর্মদিবসে কখনও এত কম লেনদেন হয়নি।
৯৪টি শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৩০টির দর। ৫৭টির দর ছিল অপরিবর্তিত।
চলতি অর্থবছরের শেষ মাসে জুনকে ঘিরে সমন্বয়, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সংযোজন বিয়োজন করে পাস, মুদ্রানীতিসহ নানা বিষয় বিনিয়োগকারীদের হিসাবনিকাশে। এ কারণে এই মুহূর্তে শেয়ার না কিনে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। যে কারণে লেনদেন নেমে এসেছে তলানিতে।
দিন শেষে হাতবদল হয়েছে ৫৯৪ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকার শেয়ার। আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন ছিল ৬৮৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
গত ১৬ জুন লেনদেন এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর পুঁজিবাজারে আশার সঞ্চার হলেও এর পরদিন থেকে প্রতিদিনই লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কমেছে।
দরপতনের আগের বহুদিনের মতোই শেয়ারদর ও সূচক বেড়েই শুরু হয় দিনের লেনদেন। তবে সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথম ১৬ মিনিটে সূচক ২৪ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হতে থাকলেও এরপর থেকে কেবলই কমেছে। লেনদেনের গতি শুরু থেকেই ছিল মন্থর। শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে তা।
শেষ পর্যন্ত সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৬ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন। বেলা শেষে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩০১ পয়েন্ট, যা গত ২৬ মের পর সর্বনিম্ন।
সেদিন সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২৩৭ পয়েন্ট। সেদিনের পর থেকে বাজার কিছুদিন ছিল চাঙা।
এক্সপো ট্রেডার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা-সিইও শহিদুল হোসেন বলেন, ‘বাজেট নিয়ে এখনও নানা আলোচনা চলছে। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের পক্ষ থেকে এখনও অনেক দাবি তোলা হচ্ছে। যার কারণে বাজেটে কী হবে তা নিয়ে একটি অস্থিরতা রয়েছে বিনিয়োগকারীদের মনে। তারা হয়তো বাজেটে কী হয় তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের নিজেদের গুটিয়ে নেয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে, কোম্পানির আর্থিক বছর শেষের বিষয়টি। জুলাইয়ে শুরু হবে নতুন বছর। কোম্পানিগুলো তার আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। এটার ওপর নির্ভর করে অনেক বিনিয়োগকারী সিদ্ধান্ত নেবেন যে, পরবর্তীতে কী করবেন।’
দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়ে মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘কেন এসব শেয়ারের দাম বাড়ে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নিশ্চয় এটা কোনো স্বাভাবিক কারণে বাড়ছে না। কেন বাড়ছে সেটা সবাই জানে, তারপরও মানুষ সেসব শেয়ারই কেনেন।’
দর বৃদ্ধির শীর্ষে যেসব কোম্পানি
সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়েছে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের দর। এ নিয়ে টানা চার কর্মদিবস শেয়ারের দর বাড়ল কোম্পানিটির। বৃহস্পতিবার ৩৪ টাকা ৩০ পয়সায় বেচাকেন হয়েছিল, সেটি আজকে দাঁড়িয়েছে ৩৭ টাকা ৭০ পয়সায়।
লোকসানের কারণে ২০২১ সালে লভ্যাংশ দেয়নি। চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিক পর্যন্তও কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়েছে পুঁজিবাজারে নতুন তালিকাভু্ক্ত কোম্পানি মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের। বৃহস্পতিবার দিনের সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ার হাতবদল হয় ৩০ টাকা ৯০ পয়সায়। সেটি আজ লেনদেন হয়েছে ৩৩ টাকা ৯০ পয়সায়।
এ নিয়ে টানা ১৩ কর্মদিবস দিনের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত বাড়ল মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর। গত ৮ জুন ১০ টাকায় লেনদেন শুরু করে কোম্পানিটি।
এক যুগেও লোকসানের কারণে লভ্যাংশ দিতে না পারা মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের দর বেড়েছে দিনের তৃতীয় সর্বোচ্চ। ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়ে হাতবদল হয়েছে ২৯ টাকা ১০ পয়সায়।
কোম্পানির শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক, বিদেশি বা সরকারি বিনিয়োগ নেই। অর্ধেক শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালক ও বাকি অর্ধেক সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
তালিকার চতুর্থ স্থানে থাকা প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলসের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। বৃহস্পতিবার শেয়ারের ক্লোজিং প্রাইস ছিল ২৮ টাকা ৩০ পয়সা, সেটি রোববার দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ৯০ পয়সায়।
২২ মে থেকে কোম্পানির শেয়ারদর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ওই দিন ২৪ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল প্রতিটি শেয়ার। কোম্পানির শেয়ারের দাম মাঝে মধ্যেই ওঠানামা করে যদিও গত দুই বছরে এর লভ্যাংশ প্রদানের ইতিহাস খুব বেশি ভালো নয়। ২০২০ সালে ১ শতাংশ ও ২০২১ সালে মাত্র ২ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।
এর পরেই ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর কমেছে ফু-ওয়াং ফুডসের। ২৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে ২৫ টাকা ৫০ পয়সায়। কোম্পানির লভ্যাংশের পরিমাণ খুবই নগণ্য।
ষষ্ঠ স্থানে থাকা সাভার রিফ্যাক্টরিজ লিমিটেডের দর বেড়েছে ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। আগের দিন ২১৬ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি আজ লেনদেন হয়েছে ২৩৪ টাকায়।
১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনোদিন লভ্যাংশ দিতে পারেনি। তারপরেও শেয়ারটির শেয়ারদর প্রায়ই লাফায়।
আরেক লোকসানি মেঘনা পেটের দর ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৫ টাকা ৫০ পয়সায়। বিনিয়োগকারীদের কোনোদিনই লভ্যাংশ দিতে পারেনি ২০০১ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি।
শেয়ারটির দর প্রায়ই ওঠানামা করে। ২৫ মে থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে দর। ওই ২২ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল।
এ ছাড়া মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস, আরামিট সিমেন্ট এবং বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডসের দর ৬ শতাংশের মতো কমে যথাক্রমে ৩০ টাকা, ৩৩ টাকা ৩০ পয়সা এবং ২৩ টাকায় হাতবদল হয়েছে।
দর পতনের শীর্ষ ১০
দরপতনের শীর্ষে রয়েছে ফাস ফাইন্যান্স লিমিটেড। আজ শেয়ারটির দর ১০ পয়সা বা ২ শতাংশ কমেছে। ৭১ বারে কোম্পানিটির ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৭টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজার মূল্য ১১ লাখ টাকা। কোম্পানিটির সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ৯০ পয়সা।
বিকন ফার্মাসিটিক্যালস তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দর ৫ টাকা ৩০ পয়সা বা ২ শতাংশ কমেছে। শেয়ারটি সর্বশেষ ২৬০ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়।
তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা পেপার প্রসেসিংয়ের দর ৩ টাকা ৬০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমেছে। শেয়ারটি সর্বশেষ ১৭৭ টাকা লেনদেন হয়।
তালিকার শীর্ষ দশের অন্য কোম্পানি হলো- সোনালী পেপার, এইচ আর টেক্সটাইল, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, তমিজ উদ্দিন টেক্সটাইল, বিডি মনোস্পুল পেপার, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
সূচক কমাল যারা
সবচেয়ে বেশি ৫ দশমিক ৫ পয়েন্ট কমেছে বেক্সিমকো লিমিটেডের কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৯ পয়েন্ট কমিয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
ম্যারিকোর দর ১ দশমিক ৮১ শতাংশ দর কমার কারণে সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট।
এ ছাড়া লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ, বিকন ফার্মা, তিতাস গ্যাস, রবি, পূবালী ব্যাংক, বেক্সিমকো গ্রিণ সুকুক ও পাওয়ার গ্রিডের দরপতনে সূচক কিছুটা কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি কমিয়েছে ২৬ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ৬ দশমিক ২ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে গ্রামীণফোন। এদিন কোম্পানিটির শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ দর বেড়েছে।
ওয়ালটন হাইটেকের দর শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট।
স্কয়ার ফার্মা সূচকে যোগ করেছে ১ দশমিক ৭১ পয়েন্ট।
এ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ব্যাংক এশিয়া, লুব রেফ বাংলাদেশ লিমিটেড, সিটি ব্যাংক, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল এবং ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট।
আরও পড়ুন:ছয় মাস চেষ্টার পর ধানের কুঁড়ার তেল বাজারে নিয়ে আসার প্রস্তুতি শেষ করেছে শেরপুরের এমারেল্ড অয়েল।
বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া কোম্পানিটির সব দায়দেনা নিজেরা তুলে নিয়ে কারখানাটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় গত ৯ জানুয়ারি। তবে সেই তেল এতদিন বাজারে ছাড়া হয়নি।
আগামী মঙ্গলবার স্পন্দন ব্র্যান্ডের তেলের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর একটি হোটেলে হবে এই অনুষ্ঠান।
২০১৭ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেও একই ব্র্যান্ডের তেল বাজারে ছাড়ত এমারেল্ড। গত বছর এ কোম্পানিটির পরিচালনায় আসে জাপান প্রবাসীর কোম্পানি মিনোরি বাংলাদেশ। এরপর প্রাণ ফেরে কোম্পানিটিতে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার পর দেশের চাহিদা পূরণে সরকার এবার দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোয় নজর দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে মোট ভোজ্যতেলের এক-তৃতীয়াংশ ধানের কুঁড়ার তেল দিয়ে পূরণ করার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
২০১৪ সালে এমারেল্ড অয়েল বাজারে আসার পর আরও বেশ কিছু কোম্পানি এই ধানের কুঁড়ার তেল বা রাইস ব্র্যান অয়েল বাজারে নিয়ে আসে। কিন্তু এরারেল্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অন্যদের উৎপাদনও সেভাবে বাড়েনি। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এখন এই তেল নিয়েই নতুন আশাবাদ তৈরি হয়েছে।
২০০৯ সালে জামালপুরের সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব শেরপুর শহরের শেরীপাড়ায় গড়ে তোলেন এমারেল্ড অয়েল কারখানা। এখানকার স্পন্দন ব্র্যান্ডের তেল জনপ্রিয় হয় দ্রুত।
প্রায় পাঁচ বছর উৎপাদন চালিয়ে গেলেও বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দুদকের মামলায় জেলে যেতে হয় গনিকে। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে দেশের বাইরে চলে যান তিনি। বন্ধ হয়ে যায় স্পন্দনের কারখানা।
২০২০ সালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বে পরিবর্তনের পর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিগুলো নতুন করে চালু করতে পর্ষদ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে এমারেল্ড, আলহাজ্ব টেক্সটাইল, রিংসাইন টেক্সটাইল। সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলও উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায়।
এর মধ্যে এমারেল্ডের দায়িত্ব দেয়া হয় মিনোরি বাংলাদেশের কাছে। গত জানুয়ারিতে ক্রুড অয়েল উৎপাদন শুরু হলেও গ্যাস কম থাকায় উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। এই ক্রুড অয়েল খুলনা ফিড মেইলে নিয়ে মাছের ও মুরগির খাদ্য তৈরি করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। পরে কারখানার সব যন্ত্রপাতি মেরামত করে তেল উৎপাদন শুরু হতে যাচ্ছে।
কারখানাটির ইনচার্জ আহসান হাবিব বেগ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন মিলটি বন্ধ থাকায় অনেক যন্ত্রপাতি খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাই পুরোপুরি উৎপাদন চালু করতে দেরি হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে খাবার উপযোগী তেল উৎপাদন করে বাজারজাত করতে পারব বলে আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের মধ্যে এ তেলের চাহিদা রয়েছে। গ্যাসের চাপ সমস্যার সমাধান হলে সে চাহিদা পূরণ করতে পারব।’
এমারেল্ডের উৎপাদনে ফেরার খবরে শেরপুরের তেল ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা বেশ খুশি।
শেফালী বেগম নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘স্পন্দন তেলটা একসময় ব্যবহার করতাম, ভালোই ছিল। কিন্তু তেলটা বাজারে বেশি দিন পাওয়া যায়নি। শুনলাম বাজারে নতুন করে আবার আসছে। আবার এ তেল ব্যবহার করতে পারব।’
শেরপুর শহরের কলেজ মোড়ের বাসিন্দা ডেইজি আক্তার বলেন, ‘এ তেল পরিমাণে কম দিলেই হয়। আবার বাজারে এলে ব্যবহার করব।’
স্পন্দন তেলের ব্যবসা করতেন পৌর শহরের খোয়ারপাড়ের ডালিম এন্টারপ্রাইজের মালিক ডালিম মিয়া। তিনি বলেন, ‘এ তেল বাজারে একসময় খুব চলত। দাম একটু বেশি থাকলেও বাজারে চাহিদা ভালোই ছিল। এখন বাজারে এলে আবার জনপ্রিয়তা পাবে।’
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শামসুল আরেফিনকে অপসারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতেও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এ বিষয়ে উত্তরা ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান এবং এমডিকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
উত্তরা ফাইন্যান্স থেকে অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ আত্মসাতে অন্যদের সহায়তা ও আর্থিক প্রতিবেদনে তথ্য গোপনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়ে, পরে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান রহমান রহমান হকের (কেপিএমজি) প্রতিবেদনেও উঠে আসে।
চিঠিতে বলা হয়, সিএ ফার্ম রহমান রহমান হকের (কেপিএমজি) করা বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটিতে ঘপা ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থেকে প্রতিষ্ঠান ও আমানতকারীদের জন্য ক্ষতি করায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শামসুল আরেফিনকে ২৩ জুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর পদ হতে অপসারণ করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে উত্তরা ফাইন্যান্সের এমডি এস এম শামসুল আরেফিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উত্তরা ফাইন্যান্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৭ সালে।
তালিকাভুক্ত হওয়ার পর প্রতি বছর আকর্ষণীয় মুনাফা করে বিনিয়োগকারীদেরকে ভালো লভ্যাংশ দিয়ে আসলেও ২০১৯ সালের পর আর লভ্যাংশই ঘোষণা করেনি কোম্পানিটি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৬৮ পয়সা মুনাফা দেখায়। ওই বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ১ টাকা ১৯ পয়সা।
এরপর চতুর্থ প্রান্তিক, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আয় ব্যয়ের কোনো হিসাব প্রকাশ করা হয়নি।
অথচ ২০১৯ সালে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৯ টাকা ৪৫ পয়সা, আগের বছর ৮ টাকা ২৭ পয়সা, ২০১৭ সালে ৭ টাকা ২৫ পয়সা, তার আগের বছর ৬ টাকা ৬২ পয়সা এবং ২০১৫ সালে শেয়ার প্রতি ৪ টাকা ৪১ পয়সা মুনাফা করেছিল।
২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৩০ শতাংশ নগদ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ৩ টাকা, পরের বছর ২০ শতাংশ, অর্থাৎ ২ টাকা লভ্যাংশ দেয় উত্তরা ফাইন্যান্স।
২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি নগদ দেড় টাকার পাশাপাশি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ারও দেয়া হয়।
এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে উঠানামা করলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৩৫ টাকা ৪০ পয়সায়। গত এক বছরের সর্বনিম্ন দর ৩৩ টাকা ৫০ পয়সা আর সর্বোচ্চ দর ৫৬ টাকা।
গত ৩১ মের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ৪২ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৩২ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে রয়েছে ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ শেয়ার।
এছাড়া বাকি ১৭ দশমিক ০৫ শেয়ারের মালিক সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
আরও পড়ুন:মন্দা পুঁজিবাজারে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে দুর্বল কোম্পানির দর। টানা পঞ্চম দিন এই প্রবণতা দেখা গেল পুঁজিবাজারে।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির মধ্যে তিনটিই লোকসানি। একটি কোম্পানি এক বছরের বেশি সময় ধরে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়নি। সবশেষ যখন লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, সেই লভ্যাংশ বিতরণ না করায় কোম্পানির পরিচালকদের জরিমানা করা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহের রবি থেকে প্রতি দিনই একই চিত্র দেখা গেছে। প্রতি দিনই সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সিংহভাগই লোকসানি বা দুর্বল কোম্পানির আধিক্য দেখা গেছে।
গত ৯ জুন বাজেট ঘোষণার পরের কর্মদিবস ১২ জুন থেকেই টানা দরপতনের ধারায় পুঁজিবাজার। এর মধ্যে দুই সপ্তাহেই শেষ দুই কর্মদিবসে সূচক কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে। বাকি তিন দিন করে ছয় দিন পতন হয়েছে সূচকের।
এই নিয়ে বাজেট পেশের দুই সপ্তাহে পুঁজিবাজারে সূচক পড়ল ১৬২ পয়েন্ট।
চলতি সপ্তাহে টানা পাঁচ দিন লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কমেছে। সপ্তাহের শেষ দিন হাতবদল হয়েছে ৬৮৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের দিন ছিল ৬৯৪ কোটি ৩৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা। সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার হাতবদল হয়েছিল ৮৯৫ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
অথচ আগের সপ্তাহে সূচক বাড়ুক আর কমুক, প্রতি দিনই লেনদেন আগের দিনকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ১৬ জুন লেনদেন এক হাজার ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার টাকা হয়ে যায়।
আগের সপ্তাহের মতোই প্রথম দিন সূচকের পতনের পর শেষ দুই দিন কিছুটা বাড়তে দেখা যায়। আগের সপ্তাহে প্রথম দিন ১১৮ পয়েন্ট কমার পর শেষ দুই দিনে বেড়েছিল ৬৪ পয়েন্ট।
আর চলতি সপ্তাহে প্রথম তিন দিন ১১৩ পয়েন্ট কমার পর বুধবার ৬ পয়েন্ট এবং পরদিন বাড়ল ৯ পয়েন্ট।
এদিন লেনদেন শুরুর ৩৮ মিনিটের মধ্যে সূচক ৫০ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হতে দেখা যায়। এরপর থেকে পতনে সূচক স্থির থাকেনি।
টানা তিন কর্মদিবস পরে বুধবার ১৯৩টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়ে লেনদেন হতে দেখা গিয়েছিল। তবে আজ সূচকে পয়েন্ট যোগ হলেও কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির দর। ১৬২টি কোম্পানির দর কমে লেনদেন হয়েছে। বিপরীতে বেড়েছে ১৪৫টির ও অপরিবর্তিত দামে কেনাবেচা হয়েছে ৭৪ কোম্পানির শেয়ার।
লেনদেনের বিষয়ে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের-ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ‘জুনে বিভিন্ন কোম্পানির হিসাব-বছর শেষ হবে। আর কয়েক দিন পরই ঈদ। এসব কারণে বিনিয়োগকারীরা নিজেদের কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছেন। প্রতি বছরই এমনটা দেখা গেছে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই থেকে পুঁজিবাজার ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখন কোম্পানির আর্থিক সংগতি বুঝে বিনিয়োগে যাবেন সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা।’
দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এসএমইতেও দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু কোম্পানির দাম হুহু করে বাড়ছে। আর এই দর বেড়ে যাওয়া দেখে মানুষ ঢুকছে। এগুলো কেন বাড়ছে, প্রশ্ন রয়েছে। এগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তো বাড়ে না।’
দর বৃদ্ধির শীর্ষে যেসব কোম্পানি
সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ দর বেড়েছে পুঁজিবাজারে নতুন তালিকাভু্ক্ত কোম্পানি মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের। আগের দিন দর ছিল ২৮ টাকা ১০ পয়সা। সেটি বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা ৯০ পয়সা।
এ নিয়ে টানা ১২ কর্মদিবস দিনের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত বাড়ল মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর। গত ৮ জুন ১০ টাকায় লেনদেন শুরু করে কোম্পানিটি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের দর। এ নিয়ে টানা তিন কর্মদিবস শেয়ারের দর বাড়ল। মঙ্গলবার ৩১ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল প্রতিটি শেয়ার। আজকে সেটি হাতবদল হয়েছে ৩৪ টাকা ৩০ পয়সায়।
২০১৬ সাল থেকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়ে এলেও লোকসানের কারণে ২০২১ সালে লভ্যাংশ দেয়নি। চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিক পর্যন্তও কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে।
দর বৃদ্ধির পরের স্থানে রয়েছে থাকা সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ ধারাবাহিক লোকসান থেকে কিছুটা বের হতে পারলেও কোম্পানিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ১ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেও তা বিতরণ করেনি কোম্পানিটি। এখন সব কোম্পানি সরাসরি ব্যাংক হিসাবে লভ্যাংশ পাঠালেও সুহৃদ কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট পাঠানোর কথা জানায়। কিন্তু সেই ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট বিনিয়োগকারীদের হিসাবে কখনও যায়নি। ২০২০ সালের জন্য এখনও লভ্যাংশ ঘোষণা বা কোনো হিসাবও প্রকাশ করা হয়নি।
কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৮.৫৭ শতাংশ। এই দর বাড়া শুরু হয়েছে ২৫ মে থেকে। ওই দিন ১৮ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল, সেটি হয়েছে ২২ টাকা ৮০ পয়সায়।
সমরিতা হসপিটালের দর ৬.৮৬ শতাংশ বেড়েছে। চলতি মাসের শুরুতেই ৭৮ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারের দাম কমে মঙ্গলবার ৬৯ টাকা ২০ পয়সায় ঠেকে। সেখান থেকে পর পর দুই দিন বেড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৪ টাকা ৭০ পয়সায়।
তিতাস গ্যাসের দর বেড়েছে ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। আগের দিন ৩৯ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ার আজ হাতবদল হয়েছে ৪১ টাকা ৮০ পয়সায়।
টানা দুই দিন দর বাড়ল মুনাফায় থাকা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি-ডেসকোর। আগের দিন ৩৬ টাকায় লেনদেন হয়েছিল, সেটি আজ হাতবদল হয়েছে ৩৮ টাকা ১০ পয়সায়।
৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ দর বেড়েছে লোকসানি ও স্বল্প মূলধনি শ্যামপুর সুগার মিলসের। ৫ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কখনোই লভ্যাংশ দিতে পারেনি। তাই লেনদেন করছে জেড ক্যাটাগিরতে।
পর পর দুই দিন দর বেড়ে লেনদেন হতে দেখা গেল। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ৭৭ টাকা ১০ পয়সায়। সেই দর এখন দাঁড়িয়েছে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায়।
এ ছাড়া ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ দর বেড়ে ৫১ টাকা ২০ পয়সা, যদিও কেবল দুটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
লোকসানি অ্যারামিট সিমেন্টের দরও বেড়েছে ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ১০ টাকার শেয়ারে তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ৭ টাকা ৬২ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটির শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ৪০ পয়সা।
স্বল্প মূলধনি বহুজাতিক কোম্পানি ও বার্জার পেইন্টসের দর ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৭৮৭ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
দর পতনের শীর্ষ ১০
শেয়ার দর সবচেয়ে বেশি কমেছে এপেক্স ট্যানারির। বুধবার শেয়ার দর ছিল ১৫০ টাকা ১০ পয়সা। আজ ৩ টাকা বা ১.৯৯ শতাংশ দর কমে লেনদেন হয়েছে ১৪৭ টাকা ১০ পয়সায়।
দর পতনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে আলহাজ্ব টেক্সটাইল ও হাক্কানি পাল্পের দর কমেছে ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
১ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর কমেছে ড্যাফোডিল কম্পিউটার ও প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্সের।
ইমাম বাটনের ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ, বঙ্গজ লিমিটেডের ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ, এইচ আর টেক্সটাইলের ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ দর কমেছে।
এ ছাড়াও সোনালী পেপার ও ইসলামি ইন্সুরেন্সের দর ১ দশমিক ৯১ শতাংশ করে কমেছে।
সূচক বাড়িয়েছে যারা
সবচেয়ে বেশি ৩ দশমিক ৬ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে বার্জার পেইন্টস। এদিন কোম্পানিটির ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ দর বেড়েছে।
তিতাস গ্যাসের দর বেড়েছে ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট। ডেসকো সূচকে যোগ করেছে শূন্য দশমিক ৮২ পয়েন্ট।
এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পাওয়ার গ্রিড, রেনাটা, ব্র্যাক ব্যাংক, রেকিট বেনকিজার ও ট্রাস্ট ব্যাংক সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১০ দশমিক ২ পয়েন্ট।
সূচক কমাল যারা
কোনো কোম্পানিই এককভাবে ১ পয়েন্ট সূচক কমাতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি শূন্য দশমিক ৯৩ পয়েন্ট কমেছে বিকন ফার্মার কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৮ পয়েন্ট কমিয়েছে ওয়ালটন। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ।
বেক্সিমকো ফার্মার দর শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ দর কমার কারণে সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৫৭ পয়েন্ট।
এ ছাড়া বেক্সিমকো সুকুক বন্ড, আইসিবি, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, যমুনা অয়েল, সোনালী পেপার ও সাইফ পাওয়ারের দরপতনে সূচক কিছুটা কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি কমিয়েছে ৪ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে প্রভিডেন্ড, পেনশন ও গ্র্যাচুইটি ইত্যাদি ফান্ডে বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস পড়ে আছে। পুঁজিবাজারে ভারসাম্য আনতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে সেসব ফান্ডের বিনিয়োগ চান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের-বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
বুধবার বিকেলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের-ডিএসই মাল্টিপারপাস হলরুমে বিএসইসি আয়োজিত এক গণশুনানিতে উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গণশুনানির বিষয় ছিল ‘দ্য ইনভেস্টমেন্ট এলিজিবিলিটি অফ দ্য রেজিস্টার্ড রিকগনাইজড প্রভিডেন্ড, পেনশন অ্যান্ড গ্র্যাচুইটি ফান্ডস (আরপিপিজিএফ) ফর আইপিওস’।
বিএসইসি কমিশনার বলেন, ‘আমাদের দেশে ৬ বিলিয়ন ডলারের ওয়েলথের বিভিন্ন ফান্ড আছে। সেগুলো সেই পরিমাণে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে এসে পৌঁছায়নি। আমাদের মার্কেটের তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২০ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ডলার রয়েছে। এসব ফান্ড বিনিয়োগ করতে পারলে পুঁজিবাজার অনেক উপকৃত হবে।’
এসব অর্থ বিনিয়োগে কোনো বাধা নেই উল্লেখ করে শামসুদ্দিন বলেন, ‘সরকার সুবিধা দিয়েছে এসব ফান্ডের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত লিস্টেড সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে। এগুলো ব্যবহার করতে পারলে পুঁজিবাজার অনেক সম্প্রসারিত হবে। কিন্তু সেটিও সেই অর্থে এখনও অনেক দূরে আছে।’
গণশুনানির উদ্দেশ্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কীভাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতা করা যায়, কীভাবে তারা আরও বেশি আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে, সেই প্রেক্ষাপট থেকে প্রভিডেন্ড ফান্ড, পেনশন ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ফান্ড আছে, সেগুলো আইপিওতে কীভাবে আসতে পারে এবং সহজেই বিনিয়োগ করতে পারে সেটির বিষয়ে আজকের আলোচনা।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের ভারসাম্য যাতে বৃদ্ধি পায় সে জন্য আমরা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়াতে চাই। যারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ করতে পারেন তাদের আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। তাদের পরামর্শ গ্রহণ করেছি।
‘আরও যদি প্রশ্ন থাকে বিএসইসির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। যদি কোনো বিষয়ে সংশোধনের প্রস্তাব আসে এবং উপযুক্ত মনে হলে সেগুলো আইন-কানুন দেখে তাদের সুবিধামতো সেটা করে দেয়ার চেষ্টা করব।’
গণশুনানিতে ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে ৬০ ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংকের প্রায় ১০ হাজার শাখা রয়েছে। একই সঙ্গে অনেকগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে প্রভিডেন্ড ফান্ড রয়েছে, সেগুলো আমরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারি। এসব অর্থ পুঁজিবাজারের নিয়ে আসতে পারলে বাজার অনেক উপকৃত হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে যেভাবে কাজ করছি তা অনেকটা পূর্ণ হবে যদি প্রভিডেন্ড ফান্ড বিনিয়োগের জন্য নিয়ে আসতে পারি।’
সমাপনী বক্তব্যে বিএসইসি কমিশনার আব্দুল হালিম বলেন, ‘আমাদের এখানে ইনভেস্টর ফান্ডের অভাব রয়েছে সেটি পুরোপুরি সত্য নয়। আস্থার জায়গা, সেই জায়গাটা এখনও সংকটজনক অবস্থানে রয়েছে। বিনিয়োগ সুযোগ আরও বাড়াতে কমিশন কাজ করছে।’
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের-ডিবিএ প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও, ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা-সিআরও সাইফুর রহমান মজুমদার।
অনুষ্ঠানে ‘এলিজিবল ইনভেস্টরস-আরপিপিজিএ: এনগেজমেন্ট ইন ক্যাপিটাল মার্কেট’ শিরোনামে প্রজেক্টেড ভিউ উপস্থাপন করেন ডিএসইর লিস্টিং অ্যাফেয়ার্স বিভাগের ইনচার্জ ও সিনিয়র ম্যানেজার রবিউল ইসলাম।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য