নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করে এমন বিষয় পাঠ্যপুস্তকে যেন অন্তর্ভুক্ত না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
একই সঙ্গে নারী-পুরুষের সম-অধিকার, মর্যাদা ও সহমর্মিতার বিষয়গুলো ক্যারিকুলামে যুক্ত করা এবং নারীর প্রতি বৈষম্য যাতে না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ইউজিসি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘পরিবারে ছেলে ও কন্যাশিশুর মধ্যে যেন কোনো ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি না হয় সেদিকে বাবা-মাকে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে কন্যাশিশুর ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়ে থাকে। এটি নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা। পরিবার থেকেই নারীর সম-অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নারীদের অবদান অনেক বেশি। শিক্ষা, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে। আগামীতে দেশের সব সেক্টরে নারীরা নেতৃত্ব দেবেন।’
অধ্যাপক দিল আফরোজ বলেন, ‘নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করে এমন বিষয় পাঠ্যপুস্তকে যেন অন্তর্ভুক্ত না করা হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি রাখতে হবে।’ এ ছাড়া তিনি নারীদের জন্য উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
সভায় ইউজিসি সদস্য সাজ্জাদ হোসেন, মুহাম্মদ আলমগীর, বিশ্বজিৎ চন্দ, আবু তাহের, সচিব ফেরদৌস জামান, অতিরিক্ত পরিচালক জেসমিন পারভীন ও নাহিদ সুলতানা বক্তব্য রাখেন।
ইউজিসি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক গোলাম দস্তগীরের সঞ্চালনায় সভায় ইউজিসির জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক এ কে এম শামসুল আরেফিন, গবেষণা সহায়তা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক কামাল হোসেন ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ওমর ফারুখ উপস্থিত ছিলেন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক ও ইউজিসি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ জামিনুর রহমান, ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিকেশন এবং ট্রেনিং বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. দুর্গা রানী সরকারসহ আরও অনেকে সভায় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:তুরস্কের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী সশস্ত্র বাহিনীতে জেনারেল হয়েছেন।
ডেইলি সাবাহর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার উজলেম ইলমাজ সশস্ত্র বাহিনীতে পদোন্নতি পেয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হয়েছেন।
এর আগে ৪৬ বছর বয়সী নারী ইলমাজ ২০১৪ সাল থেকেই সিনিয়র কর্নেলের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনীতে ১৯৫৫ সাল থেকেই নারীদের অংশগ্রহণ রয়েছে। তবে এই প্রথমই কোনো নারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হলেন।
ইলমাজের আরও ১৩ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে, ১৬ জন মেজর জেনারেল হিসেবে ও ২ জন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন।
ইরানে বিয়ের আগে কুমারীত্ব, অনেক মেয়ে ও তাদের পরিবারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরা বিয়ের আগে মেয়েপক্ষের থেকে কুমারীত্বের সার্টিফিকেট দাবি করেন। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরনের প্র্যাকটিসকে মানবাধিকার-বিরুদ্ধ বলে মনে করে। এরই মধ্যে দেশটিতে এই প্রথা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।
অনেক ক্ষেত্রেই কুমারীত্ব ইস্যুটি ইরানের অনেক মেয়েরই জীবনকে অতিষ্ঠ করে দেয়। তেমন একজন মেয়ে মরিয়ম। আর দশটা ইরানি রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ের মতো তিনিও বিয়ের আগে কুমারীত্ব ধরে রাখেন। কিন্তু এতেও তার শেষ রক্ষা হয় না।
বিয়ের পর মরিয়ম যখন তার স্বামীর সঙ্গে প্রথমবার যৌন সম্পর্ক করেন, তখন তার রক্তপাত হয়নি। এতে স্বামীর সন্দেহ হয় এবং তিনি মরিয়মের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেন।
তার মতে, বিয়ের আগে কুমারীত্ব হারানোর মতো বিষয় গোপন করে মরিয়ম তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে এবং সত্য জানলে কেউ মরিয়মকে বিয়ে করত না।
মরিয়ম তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন যে যদিও তার রক্তপাত হয়নি কিন্তু তিনি আগে কখনও সহবাস করেননি। কিন্তু তার স্বামী তাকে বিশ্বাস করেননি এবং তিনি কুমারীত্বের সার্টিফিকেট চেয়ে বসেন।
বিষয়টি শুনতে অদ্ভুত লাগলেও ইরানে মোটেও এমনটা অস্বাভাবিক নয়। বাগদানের পর অনেক নারীই সেখানে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে যান। স্বামীকে দেখানোর মতো প্রমাণ জোগাড় করতে যে তারা আগে কখনই যৌনমিলন করেননি।
পরে মরিয়মের সার্টিফিকেটে লেখা হয় যে তার হাইমেনের (সতিপর্দা) ধরন ইলাস্টিক। এর মানে হলো প্রথমবার সহবাসের পর তার রক্তপাত নাও হতে পারে।
যদিও স্বামীর এই সন্দেহ মরিয়মের আত্মসম্মানে আঘাত দেয়। তার স্বামীর করা অপমান তিনি মেনে নিতে না পেরে কিছু ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
ঠিক সময়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় সে যাত্রায় তিনি বেঁচে যান।
তিনি বলেন, ‘আমি এই অন্ধকার দিনগুলো কখনই ভুলব না। সে সময় আমি প্রায় ২০ কেজি ওজন হারিয়েছিলাম।’
অনেক ইরানিই কুমারীত্ব পরীক্ষার প্রথাকে নিষ্ঠুর ভাবছেন
মরিয়মের গল্পই সত্যি বলতে ইরানের অনেক নারীর জীবনের বাস্তবতা। সমাজে প্রচলিত রক্ষণশীলতার কারণে বিয়ের আগে কুমারী থাকা ইরানি মেয়েদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও ইরানের বর্তমান তরুণ প্রজন্ম কুমারীত্বের পরীক্ষার সঙ্গে একমত হতে পারছে না। সারা দেশে ইরানি নারীর পাশাপাশি পুরুষরাও এখন কুমারীত্ব পরীক্ষা বন্ধ করার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন।
গত নভেম্বরে এক অনলাইন পিটিশনে এক মাসের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ কুমারীত্ব পরীক্ষার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর করেছেন। ইরানে এই প্রথম কুমারীত্ব পরীক্ষাকে এত বেশিসংখ্যক মানুষ চ্যালেঞ্জ করলেন।
কুমারীত্ব হারিয়ে নেদার জীবনে যা হলো
ইরানের এক ছাত্রী নেদা। যখন তেহরানে ছিলেন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। সে সময় তিনি তার প্রেমিকের কাছে কুমারীত্ব হারান। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার জানতে পারলে কী হবে, তা নিয়ে আমি খুবই আতঙ্কিত ছিলাম।’
পরে নেদা তার হাইমেন (সতিপর্দা) ঠিক করতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রযুক্তিগতভাবে এটি অবৈধ নয়, তবে এর বিপজ্জনক সামাজিক প্রভাব রয়েছে তাই কোনো হাসপাতালও এটি করতে রাজি হচ্ছিল না।
নেদা একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের খোঁজ পেলেন, যা গোপনে তার হাইমেন ঠিক করে দেবে; কিন্তু এই জন্য তারা অনেক অর্থ দাবি করে।
নেদা বলেন, ‘আমি আমার সব সঞ্চয় খরচ করেছিলাম। আমি আমার ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন এবং আমার সোনার গয়না বিক্রি করেছিলাম। এমনকি কোনো ভুল হলে সম্পূর্ণ আমিই দায়ী থাকব এমন নথিতেও স্বাক্ষর করেছিলাম।’
একজন মিডওয়াইফ পুরো কাজটি করেন। যদিও তা করতে প্রায় ৪০ মিনিট সময় লাগলেও নেদার সুস্থ হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে।
তিনি সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমি অনেক ব্যথায় ছিলাম এবং পা নাড়াতে পারতাম না।’
পুরো বিষয়টিই তিনি তার মা-বাবার কাছে গোপন করেছিলেন।
নেদা সবকিছু সহ্য করে যাওয়ার পরও দেখা গেল প্রক্রিয়াটা আসলে কাজ করেনি।
এক বছর পর এমন একজনের সঙ্গে তার দেখা হয় যিনি তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যখন তারা যৌনতায় মিলিত হলেন, দেখা গেল রক্তপাত হয়নি।
তার প্রেমিক তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনেছিলেন।
নেদা বলেন, ‘সে বলেছিল আমি মিথ্যাবাদী এবং সে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল।’
ডব্লিউএইচও বলছে, কুমারীত্ব পরীক্ষার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এবং এটি অনৈতিকও। এর পরও ইরান ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, ইরাক ও তুরস্কে কুমারীত্ব পরীক্ষার প্রচলন রয়েছে।
যদি কোনো মেয়ে বিয়ের আগেই তার কুমারীত্ব হারায়, তাহলে সে আর বিশ্বাসযোগ্য নয়। সে তার স্বামীকে ছেড়ে অন্য পুরুষের কাছে চলে যেতে পারে।
ইরানের মেডিক্যাল অর্গানাইজেশন বলছে, ধর্ষণের অভিযোগ, কোর্টের নির্দেশ এই ধরনের বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষাপটে তারা কুমারীত্ব পরীক্ষা করে থাকে।
যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কুমারীত্ব পরীক্ষা করতে আসে বিয়ে হতে যাচ্ছে এমন দম্পতি। সাধারণত মেয়েরা মায়েদের সঙ্গে এই বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে যায়।
কুমারীত্বের সার্টিফিকেটগুলোতে গাইনোকোলজিস্ট বা মিডওয়াইফের স্বাক্ষর থাকে। এই সার্টিফিকেটে হাইমেনের অবস্থার বিবরণ থাকে এবং মন্তব্যে বলা হয়, ‘এই নারী সম্ভবত একজন কুমারী।’
যা বলেছেন গাইনোকোলজিস্ট ড. ফাবিয়া
গাইনোকোলজিস্ট ড. ফাবিয়া বেশ কয়েক বছর ধরেই কুমারীত্বের সার্টিফিকেট ইস্যু করে আসছেন। তিনি স্বীকার করেন যে এটি একটি অপমানজনক প্রথা।
কিন্তু তিনি দাবি করেন, তিনি মেয়েদের সাহায্য করছেন।
তিনি বলেন, তারা পরিবারের পক্ষ থেকে চাপে থাকে। আমি মাঝেমধ্যেই নতুন দম্পতির জন্য মৌখিকভাবে মিথ্যা কথা বলি। তারা যদি আগেই একসঙ্গে সময় কাটায় এবং বিয়ে করতে চায়। আমি তাদের পরিবারের সামনেই বলি, মেয়েটা কুমারী।
রক্ষণশীল পুরুষরা কুমারীত্ব পরীক্ষা নিয়ে যা ভাবছেন
যদিও ইরানের অনেক পুরুষই মনে করেন, কুমারী মেয়েই বিয়ে করা উচিত।
দেশটির সিরাজ শহরে ৩৪ বছর বয়সী ইলেকট্রিশিয়ান আলি বলেন, ‘যদি কোনো মেয়ে বিয়ের আগেই তার কুমারীত্ব হারায়, তাহলে সে আর বিশ্বাসযোগ্য নয়। সে তার স্বামীকে ছেড়ে অন্য পুরুষের কাছে চলে যেতে পারে।’
যদিও আলি নিজেই ১০ জন নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটিয়েছেন।
আলি ইরানি সমাজের এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে তিনি মনে করেন, প্রথা ভাঙার দরকার নেই।
‘সামাজিক রীতি নারীদের থেকে পুরুষের বেশি স্বাধীনতার বিষয়টি মেনে নেয়।’
আলির এই দৃষ্টিভঙ্গি ইরানের অনেক মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। বিশেষ করে ইরানের গ্রাম ও রক্ষণশীল অঞ্চলগুলোতে।
পরে যা হয়েছে মরিয়মের জীবনে
চার বছর আগে আত্মহত্যার চেষ্টা করা মরিয়ম অবশেষে কোর্টের মাধ্যমে তার স্বামীর সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদ করতে পেরেছেন। কয়েক সপ্তাহ হয়েছে তিনি এখন সিঙ্গেল।
তিনি বলেন, আবারও একজন পুরুষকে বিশ্বাস করা কঠিন।
নিকট ভবিষ্যতে তিনি নিজেকে বিবাহিত দেখতে চান না।
হাজারও নারীর মতো কুমারীত্ব সার্টিফিকেটের বিরোধিতা করে মরিয়মও পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।
যদিও তিনি মনে করেন না খুব শিগগির কোনো পরিবর্তন আসবে। হয়তো তার জীবদ্দশায় আসবে না। কিন্তু এর পরও তিনি আসা করেন, কোনো একদিন তার দেশে নারী আরও কিছুটা বেশি সমানাধিকার পাবে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি কোনো একদিন এমনটা হবে। কোনো মেয়েই আমার মতো পরিস্থিতি দিয়ে যেতে হবে না।’
[বিবিসির প্রতিবেদনের আলোকে লেখা। পরিচয়ের সুরক্ষার জন্য এখানে সবকটি নামকেই পরিবর্তন করেছে বিবিসি।]
আরও পড়ুন:কলেজছাত্র মামুন হোসেনকে বিয়ে করার আট মাসের মাথায় শিক্ষক খাইরুন নাহারের মৃত্যু-ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মামুন-খাইরুন গত ১২ ডিসেম্বর বিয়ে করেন, তবে এর ছয় মাস পর জুলাইয়ে ঘটনাটি নিয়ে ফলাও করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। দুজনের ভিডিও সাক্ষাৎকারও টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। এতে ‘টক অফ দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয় বিষয়টি।
খাইরুন নাহারের মরদেহ উদ্ধারের পর প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুন হোসেনকে আটক করা হয়েছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা রোববার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষক ও ছাত্রের প্রেমের কাহিনি ছড়িয়ে পড়লে দুজনই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছিলেন; কিন্তু সামাজিক, পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় তাদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়।
‘তাদের বিয়ের পর বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে অনেক আলোচিত ও সমালোচিত হয়। মানসিক এ চাপের কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন কি না, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’
পুলিশ সুপার বলেন ‘ভাইরাল হওয়ার পর আত্মীয়স্বজনের বিরূপ মন্তব্যে খাইরুন নাহার এমনিতেই বিপর্যস্ত ছিলেন। এরপর মামুনের সঙ্গে দাম্পত্য কলহে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।’
খাইরুনের মৃত্যুতে সংবাদমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশনের নীতি ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অতি উৎসাহ এবং পাঠক আকর্ষণ তৈরিতে সংবাদমাধ্যম মানুষের ব্যক্তিগত পরিসরকে ঝুঁকিতে ফেলছে কি না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
সংবাদমাধ্যম-সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনার সময় এসেছে। ‘ভাইরাল প্রতিবেদন’ করার প্রতিযোগিতা থেকে সরে এসে সংবাদমাধ্যমের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয়া প্রয়োজন।
বেসরকারি এখন টেলিভিশনের সম্পাদক তুষার আব্দুল্লাহর মতে, ‘যেখানে ভাইরালিজম থাকবে সেখানে জার্নালিজম হবে না।’ তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গণমাধ্যম এসব বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর গণমাধ্যম এক হয়ে গিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি নিজের পছন্দ অনুযায়ী যেমন খুশি তেমন লিখছেন, এখন সেটা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও হয়ে গেছে।
‘ব্যক্তি যা খুশি তাই করতে পারে, কিন্তু যখন একটা প্রতিষ্ঠান একটা খবর ছাপার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন কিন্তু দায়িত্বশীলতার জায়গা নিশ্চিত করতে হয়। এখন আমরা যেটা করছি ওই যে লাইক ভিউ বিভিন্ন রেটিং। আমরা এখন জার্নালিজম করছি না, করছি ভাইরালিজম। যেখানে ভাইরালিজম থাকবে, সেখানে জার্নালিজম হবে না।’
তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষিকা তার ছাত্রকে বিয়ে করেছে এমন ঘটনা অতীতে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় হয়েছে। রসাত্মক কোনো বিষয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ রয়েছে। তারা (বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম) এটিকে পুঁজি করেই ব্যবসা করতে চেয়েছিল। এ খবর হয়তো সবাই ক্লিক করবে, তাহলে এটা মানুষ খাবে।
‘এই যে খাওয়া-দাওয়া, খবর তো খাওয়া-দাওয়ার জিনিস নয়। আমরা যেটা করছি যে মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে বেশি ঝুঁকে পড়ছি। মানুষের বেডরুমে পর্যন্ত আমরা ঢুকে যাচ্ছি। যেখানে এ ধরনের ভাইরালিজম জনপ্রিয় হবে, সেখানে এ ধরনের ঘটনাই আমরা দেখতে থাকব।’
সংবাদভিত্তিক বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন নিউজের বার্তাপ্রধান প্রভাষ আমিন মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা সংবাদ হওয়ার মতোই নয়।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একজন শিক্ষিকা তার ছাত্রকে বিয়ে করেছেন। এখানে তো আমি কোনো অপরাধ দেখি না। পাত্র বড় হতে হবে, পাত্রী ছোট হতে হবে, এমন কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। স্ত্রীর বয়স কম হতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। আমরা যুগ যুগ ধরে এটা তৈরি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম যে রিপোর্ট করেছে, আমি মনে করি এটা রিপোর্ট হওয়ার কোনো বিষয়ই না। একজন নারী ও পুরুষ ভালোবেসে বিয়ে করেছেন এটা নিউজের বিষয় নয়। প্রথম অপরাধ গণমাধ্যমের যে, তারা নিউজটা করেছে। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেটা হলো, আমি যখন ট্রলগুলো দেখছিলাম, তখন নিজেকে সেই নারীর জায়গায় ভাবছিলাম। এত ট্রল, এত গালিগালাজ, এত বিদ্রূপ নেয়ার মতো মানসিক শক্তি আমার আছে কি না। আমি নিজেও এটা নিতে পারতাম না। এটা খুবই অন্যায়, খুবই অন্যায়।’
সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠুর মতে, সংবাদ যেন কারও প্রাণসংহারের কারণ না হয় সেদিকে নজর দেয়া জরুরি।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোসাইটিতে কোনো রকম ইমব্যালান্স যদি থাকে, সেখানে মিডিয়ার একটা ভূমিকা থাকে। কোনো নিউজ যেন কারও প্রাণসংহারের কারণ না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
‘কোনো নিউজের কারণে কেউ অপমানিত বা ক্ষুব্ধ বা লজ্জিত হচ্ছে কি না, সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। একটা জীবন শেষ হয়ে গেলে সেই নিউজের কোনো ভ্যালু থাকল না, এটা গুড জার্নালিজম নয়।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষিকা কম বয়সী ছাত্রকে বিয়ে করে এমন কোনো নিন্দনীয় কাজ করেননি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো তার টিচারকে বিয়ে করেছিলেন। সেটা যদি কোনো অন্যায় না হয়, সোসাইটিতে কোনো রিপারকেশন না থাকে, তাহলে আমার এখানে থাকবে কেন?
‘কোনো নিউজ করার ক্ষেত্রে এই সোশ্যাল ভ্যালুজগুলো আমাদের মাথায় রাখা দরকার। রেসপনসেবল জার্নালিজম করাটাই আসলে মুখ্য ব্যাপার।’
তবে খাইরুনের মৃত্যুর পেছনে সংবাদমাধ্যমের দায় মানতে রাজি নন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষিকার আত্মহত্যার পেছনে কেউ যদি মিডিয়ার প্রচারণাকে দায়ী করে, তবে সেটা ঠিক নয়৷ এখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা ঠিকই ছিল। আমাদের দেশের কালচার সাধারণত পুরুষ-নারী সমবয়সী বা নারী পুরুষের তুলনায় কম বয়স হলে বিয়ে হয়। শিক্ষিকা ও ওই ছেলের বিষয়টা অন্যরকম ছিল। শিক্ষিকা ছেলেটির তুলনায় বয়সে অনেক বড় ছিলেন।
‘কুকুর মানুষকে কামড় দিলে নিউজ হয় না, কিন্তু মানুষ কুকুরকে কামড় দিলে নিউজ হয়। এখানে ঘটনাটি সে রকম ঘটেছে। এখানে গণমাধ্যমের কোনো দায় নেই।’
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে কোনো নিউজ না দেয়া হলে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটা প্রচার হবেই। বর্তমান প্রযুক্তির বাস্তবতায় এগুলো লুকিয়ে রাখার সুযোগ নেই। প্রচারণার চেয়ে সামাজিক যে নর্মসগুলো, বিয়ে কেন, কীভাবে হয়েছিল সেগুলোর দিকে নজর দেয়া উচিত।’
প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদের পর এক সন্তানকে নিয়ে নিজ বাড়িতে থাকতেন খায়রুন। ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ২০২১ সালের ২৪ জুন মামুনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এর ছয় মাস পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কাজি অফিসে গিয়ে তাকে বিয়ে করেন খায়রুন।
খায়রুনের মৃত্যুর জন্য সংবাদমাধ্যমকে একক দায় দিতে চান না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনওয়ার হোসেন। তার মতে, এ জন্য রাষ্ট্র, সমাজব্যবস্থাও দায়ী।
ড. মোহাম্মদ আনওয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাষ্ট্রীয় এবং মিডিয়ার আসপেক্টে বাংলাদেশে প্রাইভেসি পলিসিটা কী? রাষ্ট্র এবং সমাজ দুইটার মাঝামাঝি জায়গা থেকে মিডিয়া বিষয়গুলো ডিল করার চেষ্টা করে। এখানে মিডিয়াকর্মীদের যে ট্রেনিংয়ের দরকার ছিল, অর্থাৎ ফিলোসোফিকাল জায়গাটা, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামের ওপর নির্ভর করে।
‘সোশ্যাল, রাষ্ট্রীয় আর ইউনিভার্সিটি কারিকুলাম এগুলো মিলিয়েই মিডিয়ার রুলস। মিডিয়া সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এখানে মিডিয়ার কিছু ইন্টারেস্ট আছে। তারা তাদের… বাড়ানোর জন্য অনেক কিছু দেখে। যদি আমাদের একটা নর্ম গড়ে উঠত, তাহলে মিডিয়া অনেক কিছু প্রচার করতে চাইত না।’
তিনি বলেন, ‘এখানে ফেমিনিস্ট পার্সপেক্টিভ প্রাইভেসির জায়গাটায় কন্ট্রিবিউট করতে পারত। আর আমাদের ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট পার্সপেক্টিভ ওয়েস্টার্ন কনটেক্সট দ্বারা ডমিনেটেড। সেদিক থেকে এটাকে আইসোলেটেডভাবে না দেখে ব্রডার পার্সপেক্টিভে দেখা দরকার। এখানে মিডিয়াকে একক দোষ না দিয়ে বা কাউকে দোষারোপ না করে বৃহৎ পরিসের চিন্তা করা দরকার।
‘তবে যে সম্মানিত নারী ভিকটিম হলেন সেটা দুঃখজনক। আমরা তাকে প্রাইভেসির যে কমফোর্ট, সেটি দিতে পারিনি।’
ড. মোহাম্মদ আনওয়ার হোসেন বলেন, ‘এটা নিয়ে নিউজ করার জন্য প্রথমে আমাদের বোঝাতে হবে প্রাইভেসির জায়গাটাকে আমি কীভাবে ডিল করছি। ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট পার্সপেক্টিভ সেটাকে কীভাবে আমাদের শিখিয়েছে বা সোশ্যাল নর্মস তৈরির ক্ষেত্রে কী ধরনের রুল প্লে করে?
‘বা রাষ্ট্র প্রাইভেসিগুলোকে কীভাবে দেখে বা রেগুলেট করে- এসবের সংমিশ্রণেই বিষয়গুলো রেগুলেটেড হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন:সিনেমার নাম সুনেত্রা সুন্দরম। এর পরিচালক কলকাতার শিবরাম শর্মা, প্রধান চরিত্রের অভিনেত্রী কলকাতার পার্নো মিত্র। তবে সিনেমাটি বাংলাদেশের। বিডি বক্স প্রোডাকশনের ব্যানারে সিনেমাটি প্রযোজনা করছেন মাহমুদুর রহমান।
প্রযোজক নিউজবাংলাকে জানান, সুনেত্রা সুন্দরম বাংলাদেশের সিনেমা। এর দৃশ্যধারণ এখনও শুরু হয়নি। প্রথমে বাংলাদেশে হবে সিনেমার শুটিং, এরপর কলকাতাতেও শুটিংয়ের পরিকল্পনা আছে।
সিনেমাটি বাংলাদেশের, কিন্তু নির্মাতা, প্রধান চরিত্রের অভিনয়শিল্পীরা কলকাতার কেন জানতে চাইলে প্রযোজক বলেন, ‘আমরা সিনেমাটিতে অভিনেত্রী মমকে কাস্ট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার শিডিউল পাওয়া যায়নি।
‘আর নির্মাতা শিবরামকে নেয়ার কারণ হলো, তার সঙ্গে আমি আমার ভাবনা শেয়ার করেছিলাম। তিনি আমাকে যে গল্প ও চিত্রনাট্য করে দিয়েছেন, তাতে আমি খুশি। তার একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা আমি দেখেছিলাম। সেটিও আমার ভালো লেগেছে।’
সুনেত্রা সুন্দরম সিনেমার দৃশ্যধারণ এখনও শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং এফডিসিতে সিনেমাটির কাজের জন্য আবেদন করা আছে বলে জানান মাহমুদুর রহমান।
সিনেমাটি নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বেশ কিছু সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে, ২৩ মার্চে কলকাতায় শুরু হয়েছে সিনেমার শুটিং।
গল্পের ধারণা দিয়ে সেখানে বলা হচ্ছে, গল্প আবর্তিত হয়েছে এক নারী স্কলারকে নিয়ে। তিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। ফলে তার প্রস্রাবের প্রয়োজন হয় ঘন ঘন। চেষ্টা করলেও চেপে রাখতে পারেন না।
সমস্যা হয় তখন, যখন অনেক জায়গায় অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায় না। এমন একটি সামাজিক অবস্থা নিয়ে এগিয়ে যায় সিনেমা।
সিনেমায় সুনেত্রা চরিত্রে অভিনয় করছেন পার্নো মিত্র। তার বিপরীতে দেখা যাবে অভিনেতা সোমরাজ মাইতিকে। আরও আছেন রূপাঞ্জনা মিত্রসহ বাংলাদেশের কয়েকজন শিল্পী।
প্রযোজকের এটিই প্রথম সিনেমা নয়। এর আগে কানামাছি নামের একটি সিনেমা তিনি প্রযোজনা করেছেন। তার পরিকল্পনা দুটি সিনেমা পরপর মুক্তি দেয়ার।
অন্যদিকে নির্মাতা শিবরাম শর্মা মূলত কোরিওগ্রাফার। দেশের সিনেমা ও মিউজিক ভিডিও নির্মাণে তিনি কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন:বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক দেয়া হয়েছে পাঁচ নারীকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এ পদক তুলে দেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সোমবার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
রাজনীতিতে সৈয়দা জেবুন্নেসা হক (সিলেট), অর্থনীতিতে সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ (কুমিল্লা), শিক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি নাসরীন আহমাদ, সমাজসেবায় আছিয়া আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে গোপালগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য (মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার) এ পদক পান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু সেনা সদস্যের নির্মম হামলায় বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে শহীদ হন তিনি। তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ পুরস্কার দেয়া হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা, বাঙালির স্বাধীনতার লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনে নেপথ্যের প্রেরণাদাত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী আজ, ৮ আগস্ট। ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নিয়েছিলেন মহীয়সী এই নারী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাধিক লেখনীতে বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নেপথ্য ভূমিকা উঠে এসেছে। আন্দোলন-সংগ্রামে নীরব সমর্থন, শক্ত হাতে সংসার মোকাবেলা এবং সন্তানদের মানুষ করার পাশাপাশি তিনি বঙ্গবন্ধুকে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করতে উৎসাহ দিয়ে গেছেন।
স্বামীর জেল-জুলুম এমনকি ফাঁসি হতে পারে জেনেও তাকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেননি। বরং ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার বার্তা দলের নেতাকর্মীদের পৌঁছে দিতেন তিনি। ক্ষেত্রবিশেষে নেতাকর্মীদের পরামর্শ এমনকি সিদ্ধান্তও দিয়েছেন অকুতোভয় এই নারী। বলা হয়ে থাকে, শেখ মুজিব দীর্ঘ আপোষহীন লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে শুধু বাঙালি জাতির পিতা নন, বিশ্ববরেণ্য রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছিলেন তারই প্রেরণায়।
বঙ্গবন্ধুর পুরো রাজনৈতিক জীবনে ছায়ার মতো অনুসরণ করে তার প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অফুরান প্রেরণার উৎস হয়ে ছিলেন বেগম মুজিব। বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ ছয়-দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু যখন বারে বারে পাকিস্তানি শাসকদের হাতে বন্দি, তখন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বঙ্গমাতার কাছে ছুটে আসতেন। তিনি তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা বুঝিয়ে দিতেন এবং লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যোগাতেন।
আগরতলা যড়যন্ত্র মামলায় প্যারোলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি নিয়ে একটি কুচক্রী মহল বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল। তখন প্যারোলে মুক্তির বিপক্ষে বেগম মুজিবের দৃঢ়চেতা অবস্থান বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল। তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
এই মহীয়সী নারী পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সপরিবারে খুনি চক্রের নির্মম বুলেটের আঘাতে শহীদ হন।
কর্মসূচি
বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে।
আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে সকাল ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে ‘বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মুক্তি সংগ্রামের নেপথ্যের সংগঠক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ।
এছাড়াও বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীতে আরও দুটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর একটির আয়োজনে রয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
অপর আলোচনা সভাটি হবে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের আয়োজনে এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।
এদিকে মহিলা লীগের উদ্যোগে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিনে অসহায় ও দুস্থ নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হবে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বিকালে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:ভারতে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা চলাকালে র্যাম্পে হাঁটায় বদলি করা হয়েছে পাঁচ পুলিশ সদস্যকে।
স্থানীয় সময় রোববার তামিলনাড়ুতে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার সময় পুলিশের পোশাক পরেই র্যাম্পে হাঁটেন তারা। এদের মধ্যে রয়েছেন দুজন পুরুষ ও তিনজন নারী সদস্য।
শুক্রবার তাদের বদলির আদেশ পাঠান নাগাপত্তিনাম পুলিশ সুপার জাওয়াগার। আদেশে বলা হয়, ‘পুলিশের পোশাক পরে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ায় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে বদলির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
গত রোববার মায়িলাদুথুরাই জেলার সেম্বানারকোভিল এলাকায় সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করে একটি বেসরকারি সংস্থা। অভিনেত্রী ইয়াশিকা আনন্দ বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন।
ওই অনুষ্ঠানে র্যাম্পে হাঁটেন পাঁচ পুলিশ সদস্য। এ খবরে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এর পরই রেণুকা, অশ্বিনী, নিত্যশিলা, শিবানেসান ও স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ইনস্পেক্টর সুব্রহ্মণ্যনিয়ানকে বদলির নির্দেশ দিয়েছেন নাগাপত্তিনাম জেলা পুলিশ সুপার।
তবে ওই পুলিশ সদস্যরা প্রতিযোগিতায় নিবন্ধন করে অংশ নিয়েছেন নাকি শুধু র্যাম্পে হেঁটেছেন সেটি স্পষ্ট করেনি কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য