রিজিয়া বেগমের দিন শুরু হয় রাতে। ভোররাতে নগরবাসী যখন গভীর নিদ্রায় ডুবে, রিজিয়া তখন ব্যস্ত নগর সাজাতে।
রাজধানীতে দিনভর যত জঞ্জাল জমে রাস্তার ধারে, সেসব সাফ-সুতরো করাই রিজিয়ার মতো নারীদের কাজ। এ কাজে কিছু পুরুষ কর্মীকেও নিয়োগ দিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।
গভীর রাতকে আপন করে নেয়া রিজিয়ারা কেমন আছেন, রাতে কাজ করেও তারা কী করে ঘর-সংসারের চাপ সামাল দেন তা জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।
রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করা তিন নারী কথা বলেছেন নিউজবাংলা প্রতিবেদকের সঙ্গে। কর্মক্ষেত্র ছাড়া আরও কয়েকটি জায়গায় কাকতালীয় মিল রয়েছে তাদের।
এসব নারীর পারিবারিক জীবন দারিদ্র্যে ঘেরা। প্রত্যেকের পরিবারেই আছেন ছয়জন করে সদস্য। সবার স্বামী অসুস্থতার কারণে কাজ করতে অক্ষম। তিনজনই তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি।
৪৫ বছর বয়সী রিজিয়া বেগমের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। স্বামী-সন্তানসহ থাকেন রাজধানীর হাজারীবাগের একটি বাসায়।
সংকটের মাঝেও দৃশ্যত নিরুত্তাপ রিজিয়া। প্রচলিত গোছালো জীবন হারিয়েছেন ২২ বছর আগেই।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ শুরুর পর রিজিয়ার দিন শুরু হয় রাত ৩টায়। বাসায় ফিরতে ফিরতে বেলা ১২টা। সপ্তাহের সাত দিন একই রুটিন।
স্বামী-সন্তান যখন গভীর ঘুমে রিজিয়া তখন সিটি করপোরেশনের এপ্রোন গায়ে জড়িয়ে বের হয়ে যান রাস্তা ঝাড়ু দিতে।
তার কর্ম এলাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মোহাম্মদপুর অংশে।
৩ মার্চ ভোররাতে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকায় নির্জন সড়কে ঝাড়ু দিতে দেখা যায় রিজিয়াকে।
এদিক-ওদিক তাকিয়ে কী যেন খুঁজছেন। জিজ্ঞেসা করতেই জানালেন, একটি রিকশা দরকার। আজ তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে হবে। তাই রিকশায় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে যাওয়া দরকার। সেখানে ঝাড়ু দিয়ে বাসায় ফিরে যাবেন।
অন্যদিন দুপুরে বাসায় ফিরলেও আজ কেন তাড়াহুড়া- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পোলার বাপরে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। প্যারালাইসিস হইছে। মাঝে মাঝে ডাক্তার আর হাসপাতালে আমারেই দৌড়াইতে হয়। সারা দিন কাজের আর শেষ নাই।’
কথা শেষ করতেই একটি রিকশা পেয়ে যান রিজিয়া। রওনা দেন মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের দিকে। নিউজবাংলা প্রতিবেদকও তার সঙ্গী হন।
ভোররাত তখন পৌনে ৪টার মতো। একটি দোকানের নিচ থেকে লম্বা বাটওয়ালা ঝাড়ু বের করে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ শুরু করেন রিজিয়া।
একটুও বিরাম নেয়ার ফুরসত নেই। সূর্য ওঠার আগেই ৪০০ মিটার রাস্তার পুরোটাই পরিষ্কার করতে হবে।
এর মধ্যেই কথা চলতে থাকে রিজিয়ার সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২২ বছর ধরে এই রাস্তা ঝাড়ু দেই। একটা দিনও বাদ যায় নাই। কারণ একদিন ঝাড়ু না দিলে রাস্তায় কেউ চলতে পারব না।’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘অনেকের ছুটি আছে, আমাগোর সেটাও নাই। আমরা না করলে এই কাজ আর কে করব। তখন শহর আর শহর থাকব না। এ জন্য আমরা ছুটি কাটাইতে পারি না। বিবেকে বাধা দেয়।’
ধূলিধূসর রাস্তায় খানিক থেমে একবুক নিঃশ্বাস নেন রিজিয়া। আনমনে আবার বলতে থাকেন, ‘আমাগো এই কাজ দেখে অনেকে প্রশংসা করে। আবার দোয়াও করে। বলে তোমরা যে কাজ করো এর জন্য আল্লাহ তোমাগো মরণের পর ভালো জায়গা দিব। এই কথা শুনলে আর কোনো কষ্ট থাকে না। শরীরটা ভালো থাকলে কষ্ট হয় না। শরীর খারাপ করলে একটু কষ্ট হয়ে যায়।’
শরীরের দিকে তাকানোর সত্যিই কোনো সময় নেই রিজিয়ার। তিনি কাজ বন্ধ রাখলে অভুক্ত থাকবে আরও পাঁচটি প্রাণ। স্বামীর চিকিৎসা হবে না। তাই ক্লান্তিতেও থামতে পারেন না এই নারী।
মসজিদ থেকে ফজরের আজান ভেসে আসছে। কাজে বিরতি দিয়ে রাস্তার পাশেই নামাজ পড়েন রিজিয়া। এরপর আবার রাস্তা ঝাড়ু দেয়া শুরু। একটানা কাজ চলে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।
এরপর আরও দুই ঘণ্টা কেটে যায় ঝাড়ু দেয়া সব জঞ্জাল এক জায়গায় করতে। সকাল ৯টার দিকে হাত থেকে নামে ঝাড়ু। সিটি করপোরেশনের স্থানীয় কার্যালয়ে হাজিরা খাতায় নাম তোলেন রিজিয়া। এরপর সেখান থেকে বাসায় ফিরতে সকাল সাড়ে ১০টা বেজে যায়।
ফেরার পথে রিজিয়া বলেন, ‘দেখলেন তো মামা আমাগো সময় কীভাবে কাটে। পোলার বাপরে ডাক্তারখানায় নিয়ে যাওয়া লাগবে। সে জন্য আজ এক মিনিট জিরানোর টাইম পাইলাম না। সামনে গরমের সময় আসছে। তখন মাঝে মাঝে পরানডা যায় যায় করে।’
অবিন্যস্ত জীবনের মাঝেও পরিবারের সব দায়িত্ব সামলান এই নারী। রিজিয়া বলেন, ‘পোলা মাইয়ারা যখন ল্যাদা ছিল, তখন কামের কষ্টের চেয়ে মনের কষ্ট বেশি হইত। ঢাকা শহরে আমাগো কোনো আত্মীয় নাই। তয় ওগো বাপ তখন সুস্থ ছিল, রিকশা চালাইত। মাইয়ারে বাপের কাছে ঘুমায়ে দিয়ে কাজে আসতাম। এখন রাত ৩টায় আসি। তখন আসতাম ১টার দিকে। কারণ আমার স্বামী সকাল হইলেই রিকশা নিয়ে বাইর হইয়া যাইত।
‘বাচ্চাগো রেখে সারা রাত বাইরে থাকতে হইত বলে সারা দিন ওগো কোল থেকে নামাইতে মন চাইত না। খুব ঘুম ধরত, তার মধ্যেই সংসারের কাম করতাম।’
এবার বিষণ্নতা চেপে ধরে রিজিয়াকে। ধরা গলায় বলেন, ‘আমার সবচেয়ে কঠিন সময় গেছে যখন চারটা বাচ্চাই পৃথিবীতে আসছে। যখন ওগো বাপ কাজ করতে পারে না। বাচ্চাগো তার কাছে দিয়ে কাজে যাইতে ভরসা লাগে না। কারণ সে-ও তো অসুস্থ। আয়ও কমে গেছে তখন। একার আয়ে সংসার চলে না। সে সময় বেতন কম। কী করি, কী করি করে বেড়াই।’
আগের কয়েক ঘণ্টা ভাবলেশহীন রিজিয়ার চোখ এবার ভিজে এসেছে। প্রায় দুই দশক আগের কঠিন সময়ের বর্ণনা করে বলেন, ‘সকালে বাসায় ফিরে বাচ্চাদের পরিষ্কার করে গুছিয়ে তারপর সংসারের কাজে হাত দিতাম। রান্না করতাম। তারপর সবাইকে খাইয়ে ছোট মেয়েটাকে কোলে নিয়ে একটা বাসায় ঝাড়ামোছার কাজ করতাম, যাতে একটু বেশি আয় হয়।
‘এরপর বাসায় ফিরে নিজের গোসল-খাওয়া শেষ করে বাচ্চাগুলোকে কোলের মধ্যে নিয়ে চোখ বুজতাম। দুই-এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে আবার বিকেলের কাজ শেষ করে রান্না করতে করতে রাত। এরপর বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে আবার কাজ।’
তবে এখন কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে রিজিয়ার। সব মিলিয়ে বেতন মানে ২১ হাজার টাকা। সন্তানরাও বড় হয়েছে।
রিজিয়া বলেন, ‘এখন সন্তানরা বড় হইছে। লেখাপড়া করছে। শত কষ্টের পরেও তাদের লেখাপড়া করাইছি। তয় এখনও কেউ চাকরি জোগাড় করতে পারেনি।
‘এখনও সব কাজ আমারই করা লাগে। এই যে এখন কাজ শেষ করে ফিরে রান্না করা লাগবে, তারপর সবাই খাবে। আমি অন্য সব কাজ শেষ করে গোসল করে খেয়ে দুই-এক ঘণ্টা ঘুমাব। তারপর বিকেলে বাজার সদাই করা, অন্য বাসার কাজ শেষ করতে করতে রাত হয়ে যাবে। এরপর নামাজ কালাম পড়ে একটু চোখ বোজার পরেই আবার কাজে দৌড়।’
ঘুমন্ত রাজধানীর পথে পথে আরও অনেক ‘রিজিয়া’
রিজিয়ার মতো একই ধরনের জীবনসংগ্রাম ফাতেমা বেগমের। থাকেন রাজধানীর হাজারীবাগের একটি বাসায়।
বাসা বলতে একটি মাত্র কক্ষ। ফ্লোরে বালিশ, কাঁথা আর বাসনকোসন ছাড়া তেমন কোনো আসবাব নেই।
ফাতেমার কথায়, আত্মীয়স্বজন এলে কাপড়ের আড়াল তৈরি করে শোয়ার জন্য দুটি জায়গা করা হয়। একদিকে থাকেন ছেলেরা, অন্যদিকে ঘুমান পরিবারের মেয়েরা।
উত্তর ঢাকার এই পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ কষ্ট করতে পারছি বলেই সবাই মিলে পেট ভরে ভাত খেতে পারছি। নিজেকে মহিলা মনে কইরা ঘরে বইসা থাকলে সন্তানগো পড়ালেখা করাইব কে?’
৪৭ বছর বয়সী ফাতেমা বলেন, ‘ওগো বাবা সুস্থ থাকলে তো সে-ই সব করত। এখন সে পারতাছে না বইলাই তার বদলে আমি করতেছি। কাজ-কাম দায়িত্ব পালন একজন করলেই হইল। মেয়ে হইছি বইলা কি দায়িত্ব পালন করতে পারব না?’
১৬ বছর ধরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করছেন ফাতেমা। নিজের কাজ নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই, বরং গর্ব ঝরে তার কণ্ঠ।
দক্ষিণ ঢাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী পারভীন বেগম। তিনিও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন পরিবারের ভরণপোষণের পুরো দায়িত্ব।
পারভীন বলেন, ‘দিন শেষে আমরা সবাই মানুষ, মনডাই আসল। কি নারী, কি পুরুষ। আজকে আমার স্বামী সুস্থ থাকলে আমার হয়তো কষ্ট কম হইত। সে আমারে খুব ভালো পায়।’
পরিবারের সান্নিধ্য খুব একটা পান না পারভীন। তা নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও অন্যরকমের একটা ভালোলাগাও আছে মনের ভেতর।
পারভীন বলেন, ‘কাম-কাজের চাপেই তো আমি পরিবারে সব সময় থাকতে পারি না। সংসার চালানোর জন্য, সবাইকে ভালো রাখার জন্য আমাকে দৌড়াইতে হয়। তবে সবার জন্য নিজে কিছু করতে পারলে সেটাই তো সবচেয়ে শান্তি।’
এই নারীদের সবাই বলছেন আগের চেয়ে বেতন কাঠামো ভালো হওয়ায় কারা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন। তবে সবাই আছেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে। ফলে সবার সামনেই থাকে অনিশ্চয়তা। এ ছাড়া পেনশন সুবিধা না থাকায় প্রৌঢ় জীবনের নানান শঙ্কা তাড়িয়ে বেড়ায় তাদের।
আরও পড়ুন:৫৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ওই সময় তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। ওই সময়ে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
পরে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এ ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হয়।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ড. মুশফিকুর রহমান ও ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএম শাহাবুদ্দিন।
প্রধান উপদেষ্টার গণমাধ্যম শাখা থেকে এমন তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ তুলে দিয়েছেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক এ পুরস্কার প্রদান করেন তিনি।
এবার স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ পুরস্কার বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা করেন। তিনি পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ তুলে দেবেন।
ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।
তথ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন।
গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
যেসব ব্যক্তি এবার স্বাধীনতা পুরুস্কার পাচ্ছেন তারা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
আরও পড়ুন:ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামরুজ্জামান রবিবার যে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন, তাতে বলা হয়, ‘সরকার আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করল। ছুটিকালীন সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
‘তবে জরুরি পরিষেবা, যেমন: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।’
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতা-বহির্ভূত থাকবে। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীগণ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে।
‘জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসসমূহ এই ছুটির আওতা বহির্ভূত থাকবে। ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:চলতি বছর ব্যতিক্রমী কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এ বছর কারা ও কতজন এ পুরস্কার পাচ্ছেন, তা জানাননি উপদেষ্টা।
সচিবালয়ে রবিবার স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি উল্লিখিত বক্তব্য দেন।
উপদেষ্টা বলেন, কমিটি কিছু নাম সুপারিশ করেছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নামের তালিকা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো হবে।
দেশের জন্য অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ব্যতিক্রমী কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ওই সময়ে উপস্থিত আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, এর আগে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে দলগত ও গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। র্যাবের মতো বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকেও দেশের সর্বোচ্চ এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
এ বছর ১০ জনের কম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য