তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে অপেক্ষাকৃত শান্তির জনপদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় বান্দরবান জেলাকে। বছরজুড়ে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত লেগে থাকলেও বান্দরবান ছিল তার বিপরীত।
শান্তিচুক্তির পরও এ জেলায় ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত ছিল না। সারা বছর পর্যটকমুখর এ জেলায় সম্প্রতি ও শান্তির সুবাতাস বইলেও হঠাৎ করেই যেন তাতে ছন্দপতন। গত ১০ দিনে এ জেলায় ১২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারানো সবাই পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ও সশস্ত্র সংগঠনের সদস্য।
এসব ঘটনায় বান্দরবানজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হুমকির মুখে পড়েছে জননিরাপত্তা। এ নিয়ে কোনো প্রতিবাদ ও সরাসরি মন্তব্য করতেও নারাজ সংশ্লিষ্টরা। তবে পুলিশ বলছে, সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত সীমাবদ্ধ। এসবের সঙ্গে সাধারণ মানুষ যুক্ত নয়। তাদের প্রত্যক্ষ হুমকি ও হামলাও করছে না। যদিও জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলছে এসব ঘটনা।
সর্বশেষ শনিবার বিকেলে রোয়াঙ্গছড়িতে জনসংহতি সমিতি-সন্তু লারমা (জেএসএস ) ও মগ লিবারেশন পার্টির সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন। এক দিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
তবে ওই দিন (শনিবার) দুপুরে হত্যার শিকার জেএসএস কমান্ডার উনুমং মার্মার মরদেহ এখনও পায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাকে অপহরণ করে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগের না হলেও আমাদের জন্য উদ্বেগের। আধিপত্যের জেরেই জেএসএস ও মগ লিবারেশন পার্টির মধ্যে সংঘর্ষ। দুর্গম এলাকায় তাদের অবস্থান। ফলে ঘটনার পর আমরা খবরগুলো পাই। আমাদের লোকবল মাত্র ২ হাজার ৫০০। অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হয়। এর পরও আমরা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে যাচ্ছি
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে রোয়াংছড়ির নোয়াপতং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আলেচুপাড়ার পাহাড়ি ঝিরি থেকে এক নারীর গলা কাটা দেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে শ্যামল তঞ্চঙ্গ্যা নামে একজনকে আটক করা হয়। পুলিশ বলছে, শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন শ্যামল। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ওই নারীকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর ধর্ষণ করেছেন তিনি।
২৬ ফেব্রুয়ারি একই উপজেলার সদর ইউনিয়নের নতুনপাড়া এলাকায় মংসিং শৈ মারমা নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। স্থানীয়দের বরাতে ওসি জানান, মংসিং শৈ মারমা গোসল করার জন্য বাড়ির পাশের টিউবওয়েলে গেলে সাত-আটজন অস্ত্রধারী তাকে ব্রাশফায়ার করে। মংসিং জেএসএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ ঘটনার দুদিন আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুমার গালেঙ্গ্যা ইউনিয়নের আবুপাড়ায় পাড়াপ্রধান লক্কুই ম্রো এবং তার চার ছেলে নুক্কুই ম্রো, লেং নি ম্রো, মেনু ওয়াই ম্রো ও রিং রাও ম্রোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জুমচাষের জমি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে পাড়াপ্রধান লক্কুই ম্রোর বিরোধের জেরেই ওই হত্যাকাণ্ড বলে পুলিশ জানিয়েছিল।
বান্দরবান এমন সংঘাতময় ছিল না। বান্দরবান এখন অনেক উত্তপ্ত। এটি নিয়ে আমরা সবাই শঙ্কিত। প্রশাসন কিছু না করলে আমরা প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হবে না। মানুষ এখন নীরবে কাঁদে। আমি অন্য সময় মাঠে নেমে প্রতিবাদ করি। কিন্তু এবার মাঠে নামছি না, কারণ আমি নিজেই নিজেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি
এ ছাড়া গত মাসের শুরুতে বান্দরবানে সেনাবাহিনীর একটি টহল দলের সদস্যদের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বা জেএসএসের সদস্যদের গোলাগুলির ঘটনায় এক সেনাসদস্যসহ মোট চারজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর।
শান্তির জনপদ হঠাৎ কেন অশান্ত- এসব নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় বান্দরবান জেলার পুলিশ সুপার জেরিন আখতারের। তিনি বলেন, ‘বান্দরবানের পরিস্থিতি একেক সময় একেক রকম হয়। পাহাড়ে গ্রুপগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। জনসাধারণের সঙ্গে তাদের কোনো সংঘর্ষ ও হুমকির ঘটনা কিন্তু ঘটছে না। তাদের নিজেদের নিজেদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটছে।
‘এসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগের না হলেও আমাদের জন্য উদ্বেগের। আধিপত্যের জেরেই জেএসএস ও মগ লিবারেশন পার্টির মধ্যে সংঘর্ষ। দুর্গম এলাকায় তাদের অবস্থান। ফলে ঘটনার পর আমরা খবরগুলো পাই। আমাদের লোকবল মাত্র ২ হাজার ৫০০। অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হয়। এর পরও আমরা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে যাচ্ছি।’
জেলার প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করছেন স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন নয়। তবে এটি মানতে রাজি নন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বান্দরবান জেলার সভাপতি ডনাই প্রু নেলী।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বান্দরবান এমন সংঘাতময় ছিল না। বান্দরবান এখন অনেক উত্তপ্ত। এটি নিয়ে আমরা সবাই শঙ্কিত। প্রশাসন কিছু না করলে আমরা প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হবে না। মানুষ এখন নীরবে কাঁদে। আমি অন্য সময় মাঠে নেমে প্রতিবাদ করি। কিন্তু এবার মাঠে নামছি না, কারণ আমি নিজেই নিজেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
বান্দরবানে দীর্ঘদিন পর্যটন খাত নিয়ে কাজ করছেন অপু নজরুল। তিনি জানান, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর কারণে পর্যটকদের মধ্যে বিরূপ ধারণা তৈরি হবে। যার প্রভাব পড়বে জেলার পর্যটনশিল্পে। তিনি বলেন, ‘বান্দরবান অন্য দুই পার্বত্য জেলা থেকে অনেক শান্ত। তবে পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাতের কারণে বান্দরবান ঘুরতে আসা নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বাধা কাজ করবে।’
রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি-জেএসএসের পাশাপাশি সংস্কারপন্থি জেএসএস এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সক্রিয় রয়েছে। ইউপিডিএফ ভেঙে গড়া গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফসহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সংগঠনের কমবেশি তৎপরতা থাকলেও বান্দরবানে এখনও আধিপত্য বিস্তার করে আছে মূলধারার জেএসএস। এ ছাড়া রয়েছে জেএসএস-সংস্কারপন্থি ও মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি)।
তিন বছর আগেও বান্দরবান ছিল সংঘাতমুক্ত এলাকা। মগ পার্টির উত্থানের পর থেকে পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে। শুরু হয় সংঘাত, হানাহানি। এই মগ পার্টি মূলত মিয়ানমারের আরাকান লিবারেল পার্টি (এএলপি) দলছুট কয়েকজন নেতাকে নিয়ে গঠিত হয়েছে। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা ও সদরের আংশিক এলাকাজুড়ে রয়েছে এদের শক্তিশালী অবস্থান।
চলমান তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেয়। সে নির্দেশ অমান্য করায় টাঙ্গাইলের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করেছেন গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌরসভার সূতি পলাশ মহল্লার দারুল কোরআন ও কওমী মাদ্রাসায় যান ইউএনও সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা। সেখান গিয়ে তিনি দেখতে পান সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে টিনের ঘরে দমবদ্ধ পরিবেশে ছোট ছোট শিশুরা ক্লাস করছে।
তিনি উপস্থিত হওয়ার পরপরই গরমে রায়হান নামের প্রথম শ্রেণির এক ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়ে। অথচ সেখানে কোনো পানির ব্যবস্থা ছিল না। এমতাবস্থায় ইউএনও তার গাড়িতে রাখা খাবার পানি এনে শিশুটির মাথায় ও চোখমুখে দেয়ার ব্যবস্থা করান।
খবর পেয়ে শিশুটির বাবা বাছেদ মিয়া সেখান হাজির হন এবং চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যান।
পরে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের বাছেদ মিয়া বলেন, প্রচণ্ড গরমে যেখান কোথাও একদণ্ড তিষ্ঠানো (থাকা) যায় না, সেখান প্রতিষ্ঠান প্রধান সরকারি নির্দেশে ছুটি না দিয়ে জলন্ত দুপুরজুড়ে ক্লাস নেন। অভিভাবকরা সন্তানদের ক্লাসে পাঠাতে বাধ্য হন।’
তিনি বলেন, ‘দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। তখন টিনের ঘর নারকীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ফলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানে আইপিএস বসানোর জন্য শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ফিসও আদায় করা হয়েছে, কিন্তু আইপিএস বসানো হয়নি।’
সরকারি আদেশ লঙ্ঘন করে ক্লাস চালু রাখায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শেখ সাদী ইউএনওর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সরকারি নিয়ম মানার প্রতিশ্রুতি দিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে মুচলেকা দেন।
এরপর তপ্ত দুপুরজুড়ে ক্লাস নেয়ার অভিযোগ পেয়ে পৌর শহরের কোনাবাড়ী বাজারে লাইটহাউজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড আলহেরা নূরানী মাদ্রাসায় হাজির হন ইউএনও সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা। সেখানে গিয়েও অভিযোগের সত্যতা পান তিনি।
ওই স্কুলের কয়েকজন অভিভাবক নিউজবাংলাকে জানান, স্কুলপ্রধান মৌখিক ঘোষণা দিয়েছেন যে, কোনো শিশু ক্লাস না করলে পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেয়া হবে। ফলে অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে বাচ্চাদের ক্লাসে পাঠাচ্ছেন।
ওই স্কুল ও মাদ্রাসাপ্রধান হাবিবুর রহমানও ইউএনওর কাছে মুচলেকা দেন।
ইউএনও সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যের চেয়ে শিক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে, শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রেখে কোনো প্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরের পশ্চিমে মেঘনা নদীতে এমভি মৌমনি নামে একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাসানচরের পশ্চিমে ইসলাম চরের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে। জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল।
সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জেলেদের সহযোগিতায় জাহাজের ১১ নাবিককে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। তবে জাহাজের মাস্টার নিখোঁজ রয়েছে।
দুর্ঘটনার পরপরই নাবিকরা জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দিয়ে সহযোগিতা চান। পরে ৯৯৯-থেকে হাতিয়া নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডকে সহযোগিতার জন্য বলা হয়।
বেলা ২টার দিকে হাতিয়া কোস্টগার্ড ও নলচিরা নৌ-পুলিশের দুটি টিম উদ্ধার করার জন্য হাতিয়ার নলচিরা ঘাট থেকে রওনা হয়।
হাতিয়া কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট হারুনর রশিদ বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটেছে ভাসানচরের পশ্চিমে ইসলাম চরের কাছে সাগর মোহনায়। খবর পেয়ে কোস্টগার্ডের একটি দল ট্রলার নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলেদের সহযোগিতায় ১১ নাবিককে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে জাহাজের মাস্টারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
মোহাম্মদ ওহায়েদুল ইসলাম নামে জাহাজের মালিক পক্ষের একজন জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে জাহাজটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তবে ডুবে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। জাহাজে থাকা লোকজনের সঙ্গে প্রথমে কথা বলা গেলেও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় পরে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে মালামাল নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। জাহাজে ১২ জন নাবিক ছিল।
আরও পড়ুন:ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এমপির প্রচেষ্টায় বিদ্যুতের লোডশেডিং থেকে অনেকটাই রক্ষা পেয়েছে চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার প্রায় ৮ লাখ মানুষ। চালু হয়েছে বন্ধ থাকা ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। বিষয়টি এক ভিডিও বার্তায় নিশ্চিত করেছেন তিনি।
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ নসরতপুরে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র সম্প্রতি চালু হয়েছে। এতে করে ব্যারিস্টার সুমন এমপির সংসদীয় এলাকায় আগের তুলনায় লোডশেডিং কমেছে। আগে এখানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৫-১৬ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকতো না। বর্তমানে দিন-রাত মিলে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন ওই এলাকার মানুষ। প্রচণ্ড গরমের এই সময়ে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং কমে আসায় জনজীবনে ফিরেছে স্বস্তি।
পবিত্র রমজান মাসে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতীষ্ঠ হয়ে এমপি সুমনের কাছে এর সমাধান চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হন চুনারুঘাট-মাধবপুরবাসী। তিনি নিজ সংসদীয় এলাকার জনগণের বিদ্যুৎ-ভোগান্তির খবর শুনে ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় লোডশেডিং কমানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সমাধান না হলে তিনি মহাসমাবেশের ডাক দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
পরবর্তীতে ব্যারিস্টার সুমনের ঐকান্তিক চেষ্টায় ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালুর মাধ্যমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে আসে।
ভিডিও বার্তায় এই খবর দিতে গিয়ে এমপি সুমন বলেন, ‘গ্যাস সংযোগ না থাকায় নসরতপুর ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এতোদিন বন্ধ ছিল। গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে কেন্দ্রটি চালু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আর আগের মতো অতটা লোডশেডিং হবে না।
‘যদি আবারও অসহনীয় লোডশেডিং হয়, তবে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হবে জনগণের কাছে।’
পরিশেষে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ইনচার্জসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় সৈকতে ভেসে এসেছে বিরল প্রজাতির ‘ইয়েলো-বেলিড সি স্নেক’।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাতিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মাহবুব মোর্শেদ লিটন। আগের দিন বুধবার বিকেলে উপজেলার কমলার দিঘি সমুদ্র সৈকতে সাপটি দেখা যায়।
মাহবুব মোর্শেদ লিটন বলেন, ‘বুধবার বিকেলের দিকে তানিম নামে এক যুবক ঘুরতে যান উপজেলার চর ঈশ্বর ইউনিয়নের কাজির বাজারের কমলার দিঘি সমুদ্র সৈকতে। ওই সময় তিনি সাপটি দেখতে পান। এরপর স্থানীয় কিছু লোকজনও সেখানে গিয়ে সাপটি দেখতে পান। আমি বিষয়টি স্থানীয় বনবিভাগকে জানিয়েছি। এরপর ওই সাপের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।’
উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। এটি একটি বিষধর সাপ। উভচর প্রাণী হিসেবে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ জলে ও স্থলে প্রায় সময় দেখা যায়। তবে এই প্রজাতির সাপ বিরল। এগুলো এই অঞ্চলে তেমন একটা দেখা যায় না। সাপটি সন্ধ্যার দিকে উপকূলে উঠে মানুষের আনাগোনা দেখে আবার সাগরে চলে যায়।’
চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে আব্দুল জব্বারের বলীখেলার ১১৫তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার হোমনার বাঘা শরীফ। প্রথমবারের মতো এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েই বাজিমাত করেছেন শরীফ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার আরেক সন্তান রাশেদ বলীকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হন শরীফ।
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার বাসিন্দা ফরিদ স্থানীয়দের কাছে ‘বাঘা শরীফ’ নামে পরিচিত।
এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় এবারের আসরের বলীখেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আজম নাছির উদ্দিন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ৮৪ জন বলী প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
দুপুরে খেলা শুরুর আগেই দর্শকে পূর্ণ হয়ে যায় নগরীর লালদীঘি ময়দান। ঐতিহ্যবাহী এ খেলা দেখতে জড়ো হন হাজারো দর্শক। ঢোল-বাজনার তালে তালে আর করতালিতে তারা বলীদের সমর্থন জোগাতে থাকেন।
প্রায় ১১ মিনিট খেলার পর রাশেদ নিজ থেকেই পরাজয় শিকার করে শরীফের হাত তুলে ধরেন। ফলে রেফারি শরীফকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
এ সময় চ্যাম্পিয়ন ‘বাঘা শরীফ’ নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘গতবারের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলী খেলায় অংশ না নিয়ে আমাকে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।’
অন্যদিকে রানার্স আপ মো. রাশেদ বলেন, ‘আমি আগে বলীখেলায় অংশ নেইনি। আমাকে জব্বারের বলীখেলায় নিয়ে এসেছেন শরীফ ভাই। তিনি আমার সিনিয়র। তাই তাকে জয়ী করে দিয়েছি। চ্যাম্পিয়ন শরীফ ভাইয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমার জন্যেও দোয়া করবেন।’
খেলা শুরুর আগেই নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেন গতবারের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলী ও রানার্স আপ তরিকুল ইসলাম জীবন বলী। বাঘা শরীফকে সুযোগ করে দিতেই নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেন বলে জানান তারা।
এবারের প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা। চতুর্থ হয়েছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার রাসেল বলী।
প্রথম রাউন্ডের ৩৫ জন বিজয়ীর প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা করে পুরস্কার দেয়া হয়। রানার আপকে ২০ হাজার টাকা প্রাইজমানি ও একটি সম্মাননা স্মারক (ক্রেস্ট) দেয়া হয়। চ্যাম্পিয়ন পান ৩০ হাজার টাকা প্রাইজমানি ও একটি ক্রেস্ট।
খেলা শেষে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে স্থানীয় আব্দুল জব্বার সওদাগর চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘী মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। পরবর্তীতে সেটি আব্দুল জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিত হয়। এর জনপ্রিয়তা এখনও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বৈশাখ মাসের ১২ তারিখে লালদিঘীর ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এই খেলা। খেলার আগের দিন থেকে শুরু করে পরদিন পর্যন্ত তিন ধরে লালদিঘীর মাঠ ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বসে বৈশাখী মেলা।
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মন্তব্য