পানি পরিশোধন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সরকার ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে দেশের সব নাগরিককে বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকার কাঁচকুড়া হাইস্কুল মাঠে রোববার দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার নির্মাণ ও উন্নয়ন (ফেজ-১) প্রকল্পের উন্নয়নকাজের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ বা এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে কিন্তু অনেক অনেক বেশি টাকা খরচ হয়। সেখানে আমরা ব্যাপক হারে ভর্তুকি দিচ্ছি, কিন্তু বিদ্যুৎ সুবিধা সবাই ভোগ করবেন। ভর্তুকি আমরা দেব কোত্থেকে? এটা তো জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দিতে হচ্ছে।
‘কাজেই যারা ব্যবহার করবেন, উৎপাদনের খরচ তো তাদের দিতে হবে, তবেই না আপনি সুবিধাটা ভোগ করতে পারবেন। তারপরেও যাতে মানুষের জীবনমান উন্নত হয়, সে জন্য ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। এখানে আমার অনুরোধ থাকবে, বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ করতে হবে; বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।’
পানির ক্ষেত্রেও একই চিত্র বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজকে বিভিন্ন নদী থেকে পানি এনে সেটাকে পরিশুদ্ধ করতে অনেক অনেক টাকা খরচ হয়। সেটা হয়তো আপনারা চিন্তাও করতে পারবেন না, কত বেশি টাকা খরচ হয়। সেই পানি ব্যবহারেও প্রত্যেকটা নাগরিককে সাশ্রয়ী হতে হবে; অপচয় বন্ধ করতে হবে।’
আক্ষেপের সুরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে পানি পরিশুদ্ধ করে দিই, সেটা দিয়ে সব কাজ চলে। গাড়ি ধোয়া থেকে শুরু করে কনস্ট্রাকশনের কাজ, সবই করে, কিন্তু এই পানি পরিশুদ্ধ করতে কত টাকা খরচ হয়, সেই হিসাব আপনারা জেনে নেবেন এবং সেই মোতাবেক…সেখানেও আমাকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। সেখানে কিন্তু ভর্তুকি দেয়া ঠিক না।’
সবাই সাশ্রয়ী ব্যবহার করলে বিল যেমন কম আসবে, ভর্তুকির পরিমাণও কমবে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকে বিল কমাতে পারেন, বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারেন, পানির বিল কমাতে পারেন, গ্যাসের বিল কমাতে পারেন, যদি আপনি একটু সচেতন হোন, সাশ্রয়ী হোন।’
‘খাল এজমালি সম্পত্তি নয়’
ঢাকা শহরকে বাঁচিয়ে রাখতে বেদখল হওয়ার খালগুলো উদ্ধারে আবারও তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘মানুষের শরীরে শিরা-উপশিরায় যেমন রক্ত সঞ্চালন হয়, একটা শহরের জন্য এই খালগুলো কিন্তু সেই পানি সরবরাহের মাধ্যমে শহরগুলোর বেঁচে থাকার সঞ্চালন হয়। সেটা উদ্ধার করা একান্তভাবে অপরিহার্য।’
দখলদারদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর অনেক খাল তো বেদখল হয়ে যায়, খালটা তো মনে হয় এজমালি সম্পত্তি, যে যেভাবে পারে ঘরবাড়ি তৈরি করে দখল করে নেয়, দোকানপাট তৈরি করে ফেলে। সেটা উদ্ধার করার জন্য যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সে জন্য আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
বক্স কালভার্ট নির্মাণ ‘খারাপ কাজ’ ছিল বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘যেখানে মুক্ত খাল ছিল, এই খালটা রেখে দুপাশে রাস্তা করা যেত বা পিলার দিয়ে তার ওপর দিয়ে এলিভেটেড রাস্তা করা যেত, কিন্তু বক্স কালভার্ট করার ফলে জলাবদ্ধতা হয়, আবার সেখানে ময়লাও জমে, আবার নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
গুলশানে হবে খেলার মাঠ
ঢাকার গুলশানে নতুন একটি খেলার মাঠ হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘১০ বিঘা একটা জমি। ওখানে ইতালিয়ান অ্যাম্বাসির একটা ই…ছিল, আরেকটি অ্যাম্বাসির ছিল, তারা ওখান থেকে সরে যাচ্ছে। বিজিএমসির একটা বাসা ছিল। সেটাও আমি সরিয়ে দিচ্ছি। এই জায়গাটা সম্পূর্ণ খেলার মাঠ হবে। সেখানে আর কোনো স্থাপনা না, কিচ্ছু না, শুধু মাঠ।’
‘গুলশানের দুই বাড়ির মাঝে ময়লার ডিপো’
গুলশানের আবাসিক ভবন নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘গুলশানের যে ফ্ল্যাট-বাড়িগুলো সেগুলো নিয়ে আমার কিছু কমপ্লেইন আছে। কারণ কেউই এক ইঞ্চি জায়গা ঠিকমতো ছাড়েননি। দুটো বাড়ির মাঝে এমন চাপা জায়গা। আর ওই জায়গাগুলোতে ময়লার ডিপো হয়ে থাকে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি তো সব সময় বের হই না, দেখতে পাই না। কিন্তু যখন যেখানে যাই, একটু দেখার চেষ্টা করি।’
সাবেক মেয়র আনিসুল হককে বিষয়টি জানানো হলে তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা আমি বর্তমান মেয়রকেও বলব, আপনি যদি একটু লক্ষ করেন, দুটি মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিং হচ্ছে, দুটি বাড়ির ভেতরে হাই-ফাই জীবনযাপন, বিশাল ঝাড়বাতি মাথায় ঠেকে, কিন্তু দুই বাড়ির মাঝখানে গেলে দেখবেন ময়লার ডিপো। এটা যেন না থাকে।’
মানতে হবে ট্রাফিক আইন
রাস্তা পারাপারে ট্রাফিক আইন ও নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যেখান-সেখান থেকে দৌড় মেরে রাস্তা পার হতে যেয়ে অ্যাক্সিডেন্ট হলে তো ড্রাইভার মার খায়। তো এটা কি ড্রাইভারের একার দোষ? অথচ আমি যদি ঠিক পথে না চলি, নিয়ম মেনে না চলি, ট্রাফিক আইন না মেনে চলি, তাহলে তো অ্যাক্সিডেন্ট হবেই।’
সড়কে বেড়া দেয়া হলে সেটি টপকে রাস্তা পার হওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
নগরে বাড়াতে হবে সবুজ
বহুতল ভবনের কারণে ঢাকা শহরের গাছের সংখ্যা ও সবুজের পরিমাণ কমে গেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আর তাই ছোট পরিসরে হলেও সবুজ বাড়াতে নগরবাসীকে উদ্যোগী হতে বলেছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার অনুরোধ থাকবে, যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, যেভাবে পারেন, আপনারা একটু বৃক্ষরোপণ করুন; ছাদবাগান করবেন। যেভাবে পারেন একটু কিছু করেন, যাতে প্রচুর সবুজ থাকে। আর পরিবেশটা যেন ঠিক থাকে, সে বিষয়ে বিশেষভাবে নজর দেবেন।’
বিহারিদের উন্নয়ন নিয়ে ভাবছে সরকার
পাকিস্তান ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেও আটকে পড়া পাকিস্তানিদের নেয়নি দেশটির সরকার। মানুষ হিসেবে তাদের সম্মান দিতে ‘বিহারি’ নামে পরিচিত এই জনগোষ্ঠীর উন্নয়নেও সরকার পরিকল্পনা করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘তারা পাকিস্তানে যাবে বলে, পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নেবে বলে অপশন দিয়েছিল, কিন্তু পাকিস্তান কখনও তাদের গ্রহণ করেনি। তাদের নাম করে অনেক প্রতিষ্ঠান অনেক টাকা-পয়সাও তুলেছে, অনেক কিছু করেছে, কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি।
‘এখন বলতে গেলে তাদের ছেলেমেয়ে হয়ে গেছে, নাতিপুতি হয়ে গেছে। তাদের বংশপরম্পরা বেড়ে গেছে, কিন্তু ওই যে জেনেভা ক্যাম্পের ছোট্ট ছোট্ট জায়গা, সে জায়গায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করে।’
কাজে তারা ‘খুব কর্মঠ’ ও ‘দক্ষ’ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ কারণে আমি চাচ্ছি যে তাদের জন্য একটা ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া, তারা যে যে কাজে পারদর্শী, সে কাজে যেন তারা নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারে। সে ব্যবস্থাটা আমাদের করতে হবে।’
ঢাকায় সেটা করা কঠিন বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যেখানে ইন্ডাস্ট্রি আছে বা কাজ আছে, যেখানে তাদের কাজ করার সুযোগ আছে, সে ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে তারা অন্তত ভালোভাবে মানুষের মতন বাঁচতে পারবে। সেটাই আমি চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষকে মানুষ হিসেবে আমরা দেখতে চাই। তারা হয়তো এখানে থাকতে চায়নি, কিন্তু এখন যাবেইবা কোথায়? তাদের যে বংশবৃদ্ধি, তারা তো আমাদের দেশে জন্মগ্রহণ করেছে।’
উন্নয়নকাজের উদ্বোধন
সবার জন্য নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুটি অংশে বিভক্ত করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে পরিণত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি সিটি করপোরেশন দিয়ে ঢাকা শহরের এত মানুষকে সেবা দেয়া অসম্ভব ছিল। যে কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ঢাকার আশপাশে ইউনিয়নগুলো যেগুলো ঢাকা শহরের সংলগ্ন অথচ তারা নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন না। সেই মানুষগুলোর যারা এখানকার আদি বাসিন্দা, তারাসহ অন্যদেরও একই অবস্থা; নিজেদের অবহেলিত মনে করত।
‘সে কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে এটিকে দুটো ভাগে ভাগ করা। বাকি যে জায়গাগুলো, সেগুলো কেউ আমরা সম্পৃক্ত করে ফেলব দক্ষিণ এবং উত্তরে। যে ইউনিয়নগুলো ছিল, সেগুলো ওয়ার্ডে ভাগ করে সিটি করপোরেশনের সমস্ত নাগরিক সুবিধা যাতে পায়, সে ব্যবস্থাটা আমরা নিয়েছি।’
পরে ঢাকা উত্তর সিটির উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত হরিরামপুর ইউনিয়ন এবং পূর্বাঞ্চলে উত্তরখান, দক্ষিণখান, বাড্ডা, বেরাইদ, ডুমনি, সাঁতারকুল ও ভাটারা ইউনিয়নের এলাকাগুলোর ১৮টি ওয়ার্ডকে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৬ সালের ৯ মে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে আটটি করে ইউনিয়ন যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।
১৮ ওয়ার্ডের উন্নয়নকাজের উদ্বোধন
এ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের যে ইউনিয়নগুলো ছিল, সেগুলোকে ওয়ার্ডে উন্নীত করার পর সেখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা, সেটা একান্তভাবে অপরিহার্য ছিল। আজকের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমি মনে করি যে এখানে যে মানুষগুলো বসবাস করে, তারা সুন্দর, চমৎকার একটা জীবন পাবেন। এবং নাগরিক সুবিধাগুলো তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে।’
প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর ওপর দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখেছি, যত কঠিন কাজ হয়, তাদের দায়িত্ব দিলে অত্যন্ত সুচারুভাবে, তারা সেটা পালন করে এবং বাস্তবায়ন করে।’
স্থানীয় জনগণকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সহযোগিতা করতে হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তাদের পাশে থেকে কাজ করতে হবে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। তাহলে কাজটা সুন্দর, সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।’
জনভোগান্তির বিষয়টি সামনে এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজ করতে গিয়ে মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়, সেটাও দেখতে হবে। সেই সঙ্গে আরেকটি বিষয় বলব যে মানুষের যেমন সুবিধা ভোগ করার অধিকার আছে, আবার নাগরিক কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। যারা অধিকার ভোগ করবে, তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
‘সেই ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই নিজ নিজ ঘরবাড়ি শুধু না, নিজের সামনের রাস্তাটাও যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। এই পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে হাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মেয়র সাহেব মশা মারার কাজ করতে গিয়ে, পরিচ্ছন্নতা কাজ দেখতে গিয়ে কিন্তু পা পিছলে একবার পা ভেঙে ফেলেছিলেন। ভবিষ্যতে যেন এই ঘটনা আর না ঘটে আমি আশা করি সেদিকে দৃষ্টি দেবেন।’
আরও পড়ুন:ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে। সবাই ভোট দিতে পারবেন। ভোট হবে দিনের বেলা, রাতের বেলা নয়। নতুন নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পুরোনো ঠিকানায় চলে যাব। আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সুযোগ সব সময় আসে না। একবার সুযোগ আসতে ৫৪ বছর লেগে যায়। আবার কবে সুযোগ আসবে জানি না। তাই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যই শক্তি, শক্তিই শান্তি।’
রাজধানীর বকশিবাজারে গতকাল বুধবার সকালে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার ২৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে ৫৪ বছর পর সুযোগ এসেছে। এ সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘অতি আধুনিক শিক্ষার নামে মাদ্রাসা শিক্ষায় কোরান-হাদিস থেকে সরে গিয়ে কোণঠাসা হয়ে গেছে। মনে রাখতে হবে মাদ্রাসা শিক্ষা বিশেষায়িত শিক্ষা। আধুনিকতার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার মূল ভিত্তি থাকতে হবে কোরান এবং হাদিস, ফেকাহ।’
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসার ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। আলিয়া পদ্ধতির মাদ্রাসার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো। অনেক যোগ্য ব্যক্তি এখানে তৈরি হয়েছেন। আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসার ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। আরবি, ইংরেজি জানলে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পাবেন।’
রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে যুগ যুগ ধরে আলিয়া মাদ্রাসা ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির নামে দুর্বৃত্তপনা বন্ধ করতে হবে। এ সময় ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমদের আল্লাহ এক, কোরান এক, কেবলা এক। এই মিল আমাদের এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসবে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাহিরের ইন্ধনে দুষ্কৃতকারীরা পূজাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিল। তারা সফল হতে পারেনি।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের ইছাপুরায় শ্রী শ্রী সার্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, পূজার শুরুতে ধর্ষণের ঘটনা প্রচার করে পূজাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ কাজে বাহিরের ইন্ধন ছিল কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা সফল হতে পারেনি।
এবার বাংলাদেশের সব জায়গায় ভালোভাবে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পূজা সম্পন্ন হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, দুর্গাপূজা ও বৌদ্ধদের বিজু উৎসব যাতে ভালোভাবে হতে না পারে তার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশের সহযোগিতায় কিছু সন্ত্রাসী এ ধরনের কাজ করেছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন এবং বিশেষ করে পূজা কমিটির সহযোগিতায় এ বছর শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার, সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল ) মো. ইব্রাহিম, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাদর পাল। সূত্র : বাসস
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রত্যাহার হবে এমন কোন সম্ভাবনা নেই।
বরিশাল নগরীর শংকর মঠ পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আজ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যখন একটা দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়, স্থায়ী কি অস্থায়ী এ ধরনের প্রশ্ন থাকে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হবে এরকম কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।
বিদেশি গণমাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অশান্ত পাহাড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাহাড়কে যারা অশান্ত করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার।
তিনি আজ দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউজে পৌঁছে নগরীর নতুন বাজার সংলগ্ন শংকর মঠ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সাঙ্গে সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার মো. শরীফ উদ্দীন, শংকর মঠ পূজা মণ্ডপ কমিটির সভাপতি কানু লাল সাহা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তম্ময় তপু প্রমুখ।
বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের একটি অংশ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আশাবাদী অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি মঙ্গলবার এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে এগোচ্ছে। এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়, একদিনে সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, যারা বিদেশে টাকা পাচার করে তারা সাধারণত খুব কৌশলী ও প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ হয়। ফলে ফেরত আনার কাজ দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল হয়ে পড়ে।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘অর্থ ফেরত আনা মানে সুইস ব্যাংকে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে আসা নয়। আন্তর্জাতিক আইনি ও আর্থিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এটি করতে হয়। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কিছু অগ্রগতি হয়েছে এবং বেশ কিছু বিখ্যাত আইনি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিছু নির্দিষ্ট বিচার ব্যবস্থার সঙ্গেও আলোচনা এগোচ্ছে। আমরা আশা করি ফেব্রুয়ারির মধ্যে কিছু ফল পাওয়া যাবে।’
অর্থ উপদেষ্টা জানান, সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইতোমধ্যে ১১-১২ টি মানিলন্ডারিং মামলা চিহ্নিত করেছে এবং সংশ্লিষ্ট সম্পদের তদন্ত অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পদ জব্দ করেছে, বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করেছে এবং সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট ও বসবাসের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব মামলা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এগোচ্ছে।’
আগামী নির্বাচনের পর নতুন সরকার আপনাদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাধ্য হয়ে তাদের চালিয়ে যেতে হবে। কারণ আমরা প্রক্রিয়াগুলো চালু করে গেলাম, সেটা অব্যাহত না থাকলে তো টাকা ফেরত আনতে পারবে না। তারা বসে থাকলে টাকা ফেরত আসবে না। আর যদি আনতে হয় এই প্রক্রিয়াগুলো মানতে হবে। এটা তো ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস। আমরা যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি তা বজায় রাখতে হবে।’
খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আতপ চালের একটি বাফার মজুত রাখি। অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে যাতে সংকট না হয় সে জন্য নীতিগতভাবে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, সার বিশেষ করে-ডিএপি ও ইউরিয়া আমদানিতে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সুখবর হচ্ছে-আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কিছুটা কমেছে। আমরা বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করছি, পাশাপাশি যথেষ্ট চাল ও সারের মজুদও রাখছি।
সাম্প্রতিক বিবিএস প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সরকার শিশু ও মাতৃকল্যাণ বিষয়ে সতর্ক। তাই ভিজিএফ কর্মসূচি এবং উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আসন্ন মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের প্রতিটি পরিবারকে ২০ কেজি চাল দেওয়া হবে।’
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মজুত ভালো থাকায় চালের দাম সম্প্রতি কমেছে। তবে শাকসবজি ও অন্যান্য দ্রুত নষ্ট হওয়া পণ্যের দাম মৌসুমি কারণে ওঠানামা করে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর কারসাজি এখনো অব্যাহত রয়েছে। ‘ এ কারণেই আমরা এখনো পূর্ণ সাফল্য দাবি করতে পারছিনা,’ স্বীকার করেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (সিএলসিসি) এর প্রথম সভা আজ নগর ভবন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিএসসিসি প্রশাসক জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া এঁর সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার বিভাগের "সিটি কর্পোরেশন নাগরিক সম্পৃক্ততকরণ নির্দেশিকা" এর আলোকে গঠিত সিএলসিসির ৭১ জন সদস্য উপর্যুক্ত সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (সিএলসিসি) সভায় আলোচনাপূর্বক উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মপরিকল্পনা সুপারিশ করতে পারে। এ সভায় সিটি কর্পোরেশনের বার্ষিক বাজেট ও উন্নয়ন পরিকল্পনা, আর্থিক বিবরণীসহ বার্ষিক অর্জন সম্পর্কিত প্রতিবেদন, নাগরিক জরিপ, সামাজিক সমস্যাবলি সমাধানের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ, সিটি কর্পোরেশনের সেবাসমূহের মান উন্নয়ন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নাগরিকদের যথাযথভাবে সেবা প্রদানে চ্যালেঞ্জসমূহ আলোচিত হতে পারে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে ডিএসসিসি প্রশাসক বলেন, "জুলাই পরবর্তী নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে সিএলসিসি কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা তাদের মাধ্যমে সরাসরি নাগরিকদের মতামতের প্রতিফলন হয়।" এ সময় প্রশাসক ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএসসিসির গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে জনগণকে এ বিষয়ে আরও সচেতন ও সম্পৃক্ত করতে সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্যদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় সদস্যবৃন্দ ডিএসসিসির সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা ও সুপারিশ প্রদান করেন এবং সিটি কর্পোরেশন নাগরিক জরিপে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সকল বিভাগীয় প্রধান এবং মিস নাউকু আনজাই, টিম লিডার, সিফরসি২ উপস্থিত ছিলেন।
তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের মধ্যে বাল্যবিয়ে ও কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের প্রবণতা উদ্বেগজনক আকারে বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই শ্রমিকদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি (৬৬ শতাংশ) ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়েছে। তাদের অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়সে প্রথমবারের মতো গর্ভধারণ করেছেন। একই সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের হারও এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তুলনামূলক বেশি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআরবি মিলনায়তনে ‘তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণা বলছে, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী শ্রমিক অন্তত একবার অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং প্রতি চারজনের একজন গর্ভপাত বা মেনস্ট্রুয়াল রেগুলেশন করেছেন।
জানা গেছে, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহায়তায় আইসিডিডিআরবি প্রায় ২৪ মাসব্যাপী এই গবেষণা পরিচালনা করে, যা বাংলাদেশে পরিচালিত প্রথম এমন কোনো গবেষণা। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণাটি কড়াইল ও মিরপুর বস্তি এবং গাজীপুরের টঙ্গী বস্তিতে আইসিডিডিআরবির আর্বান হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভেইলেন্সের আওতাধীন এলাকায় পরিচালিত হয়। ১৫-২৭ বছর বয়সি মোট ৭৭৮ জন বিবাহিত নারী গার্মেন্ট শ্রমিককে এই গবেষণাটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর এদের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়।
সেমিনারে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে জানানো হয়, গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন ৪৯ শতাংশ শ্রমিক, যা দুই বছর শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে। জরুরি গর্ভনিরোধক বড়ি সম্পর্কে জ্ঞান ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ নারীর; গবেষণা শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ শতাংশে। একই সময়ে পরিবার পরিকল্পনায় লিঙ্গ সমতার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশে পৌঁছেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, নারী শ্রমিকরা ঘর ও কর্মস্থল দুই জায়গাতেই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। গত ১২ মাসে স্বামীর সহিংসতার হার ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যৌন সহিংসতা ছাড়া অন্য সব ধরনের সহিংসতা গত দুই বছরে বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রেও সহিংসতার প্রবণতা উল্টোদিকে গেছে— গবেষণার শুরুতে যেখানে প্রায় ৪৮ শতাংশ শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে মানসিক সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন, গবেষণার শেষ দিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশে।
তবে সহিংসতার শিকার হওয়ার পরও খুব কম সংখ্যক নারী আনুষ্ঠানিকভাবে সাহায্য চাইছেন। গবেষণার শুরুতে যেখানে ৩৫ শতাংশ নারী অনানুষ্ঠানিকভাবে (পরিবার বা বন্ধুদের কাছে) সাহায্য চাইতেন, গবেষণার শেষ দিকে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২১ শতাংশে। কর্মক্ষেত্রের সহিংসতার ঘটনাতেও মাত্র এক-পঞ্চমাংশ নারী কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, এবং দুই বছর পরেও এ হার অপরিবর্তিত থাকে।
তরুণ বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি কমাতে কিছু নিয়ামকও চিহ্নিত হয়েছে গবেষণায়। দেখা গেছে, যারা সন্তান ধারণের আগেই গর্ভনিরোধক ব্যবহার শুরু করেছিলেন, তাদের কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের ঝুঁকি ৪৭ শতাংশ কম। এছাড়া যারা প্রথম গর্ভধারণের আগে গার্মেন্ট খাতে কাজ শুরু করেছিলেন, তাদের ঝুঁকি আরও কম।
অন্যদিকে, স্বামী কর্তৃক সহিংসতার অভিজ্ঞতা থাকলে কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেড়ে যায় বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
গবেষণার উপাত্ত বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, নারীর ক্ষমতায়নের বিভিন্ন মাত্রা স্বামীর সহিংসতাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বেশি থাকলে মানসিক ও যৌন সহিংসতা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। মতামত প্রকাশের ক্ষমতা থাকলে যৌন সহিংসতা কমে। আবার চলাচলে স্বাধীনতা থাকলে শারীরিক সহিংসতার ঝুঁকিও কমে যায়।
ঢাকার মহাখালীতে আইসিডিডিআরবি ক্যাম্পাসে আয়োজিত সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (পরিকল্পনা ও গবেষণা) সহকারী পরিচালক ডা. সেকেন্দার আলী মোল্লা, পপুলেশন কাউন্সিল বাংলাদেশের সাবেক পরিচালক ডা. উবাইদুর রব, বিকেএমইএর যুগ্ম সচিব ফারজানা শারমিন এবং মেরী স্টোপস বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও স্বতন্ত্র গবেষক ইয়াসমিন এইচ আহমেদ।
বিকেএমইএর যুগ্ম সচিব ফারজানা শারমিন বলেন, গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শমূলক সেবা বৃদ্ধির কাজ চলছে। তবে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
এই গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন আইসিডিডিআরবির ইমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. রুচিরা তাবাসসুম নভেদ। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেলে তারা শুধু পরিবারে নয়, কর্মক্ষেত্রেও সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত হতে পারেন। গার্মেন্ট শ্রমিক নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, খাগড়াছড়ির বর্তমান পরিস্থিতি সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে স্থিতিশীল পরিস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সোমবার রাজধানীর রমনায় ডিএমপি’র পাঁচটি থানার ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, খাগড়াছড়িতে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সেখানে আছেন। তিনি বিষয়টি দেখাশোনা করছেন এবং স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
খাগড়াছড়িতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে প্রতিবেশী একটি দেশের অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করতে চাই না, তবে পতিত ফ্যাসিস্টদের দল খাগড়াছড়িতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে।’
তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট দলটি সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যাতে চলমান দুর্গাপূজা উৎসবমুখর ও বাধাহীনভাবে উদযাপন করা না যায়।
দুর্গাপূজা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, গতকাল থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব শুরু হয়েছে। কেউ যেন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে ও পূজা নির্বিঘ্নে আয়োজিত হয়, সেজন্য সবাইকে সহায়তা করতে হবে।
পাহাড়ে আটকে পড়া পর্যটকদের বিষয়ে তিনি বলেন, আটকে পড়া পর্যটকদের অধিকাংশকেই নিরাপদভাবে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিএমপিতে ৫০টি থানা রয়েছে, যার অর্ধেক ভাড়া করা ভবনে আছে। আমরা সমস্ত থানাকে তাদের নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর করার জন্য কাজ করছি।
খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক অস্থিরতায় তিনজন নিহত এবং পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
মন্তব্য