চারদিকে নদীবেষ্টিত ছোট একটি দ্বীপ ঘেরা বেড়িবাঁধে। এর ভেতরে রয়েছে হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি। লোনাপানি তুলে সেখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে রপ্তানিযোগ্য চিংড়ি। লবণের আধিক্যে জন্মায় না কোনো খাদ্যশস্য, চাষ হয় না মিঠাপানির মাছও। দ্বীপটিতে নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা, যাতায়াতের ভালো রাস্তা। জমি থাকলেও ব্যবস্থাপনার অভাবে নিরন্ন হচ্ছেন ওই এলাকার কৃষকরা।
খুলনা শহর থেকে সড়ক পথে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে দ্বীপ এলাকাটি পাইকগাছা উপজেলার ঘ্যাংরাইল, গুনখালী ও শিবসা নদীর মোহনায় অবস্থিত। সেখানে লতা ও দেলুটি ইউনিয়নের মধুখালী, জোকারহুলা, রাধানগর, দিঘলিয়া, চকরিবকরি, জিরবুনিয়া, মাইনকিয়া, হানিরাবাদ, গোয়াসোবা, বাইনচাপরা, রেখামারি ও আসামনগর গ্রামের প্রায় ১৭ হাজার মানুষের বসবাস।
বিগত শতাব্দীর ৬০-এর দশকে দেশের উপকূলীয় এলাকার উন্নয়নে কোস্টাল এমব্যাংকমেন্ট প্রজেক্টের (সিইপি) আওতায় প্রবর্তন করা হয় পোল্ডার ব্যবস্থা। এ প্রকল্পের আওতায় দ্বীপটির পরিধিতে নির্মাণ করা হয় মাটির বেড়িবাঁধ।
চিহ্নিত করা হয় ২০ নম্বর পোল্ডার হিসেবে। উদ্দেশ্য ছিল কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন করা। জোয়ারের লবণাক্ত পানি বিল ও বসতি এলাকায় প্রবেশ করতে না দেয়া, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা থেকে সেখানকার জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করা। ফলে পরের ১৫ থেকে ২০ বছর ওই এলাকায় কৃষি উৎপাদন বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
কৃষকদের ভাগ্যে সেই আশীর্বাদ খুব স্থায়ী হয়নি। আশির দশকে শুরু হয় বেড়িবাঁধ কেটে লোনাপানি তোলার কারবার। এলাকার প্রভাবশালীরা ওই এলাকায় শুরু করে চিংড়ি চাষ। ক্রমাগত লোনাপানির প্রাদুর্ভাবে এলাকায় দ্রুতই আসে বড়সড় পরিবর্তন, নষ্ট হয় পরিবেশ।
সবুজ গাছপালা, ফসল কয়েক বছরের মধ্যেই বিলীন হয়ে যায় লোনাপানিতে। এমনকি খাবারের পানির জন্য সেখানে হাহাকার চলতে থাকে। কয়েক দশক কেটে গেলেও তার উন্নতি হয়নি।
বিশাল এলাকাজুড়ে থাকা সেই বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তাদের কাছে অসংখ্য অভিযোগ গেলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংস্থাটি।
এলাকার হানিরাবাদ গ্রামে দেখা হয় ষাটোর্ধ্ব সোবহান তালুকদারের সঙ্গে। ক্ষেতে লোনাপানি তোলার কথা জানতে চাইলে তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। পানিতে নেমে দেখিয়ে দেন কীভাবে প্রভাবশালীরা বেড়িবাঁধ কেটে মোটা পাইপ বসিয়ে লোনাপানি তুলছেন চিংড়ি ঘেরে।
চোখ মুছতে মুছতে সোবহান বলেন, ‘বড় বড় ঘেরের চিংড়ি চাষিরা জোর করে আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। জমি উদ্ধার করতে না পেরে আমি আদালতে মামলা করেছি। লোনাপানি তোলা বন্ধের দাবিতে যত আন্দোলন হয়েছে, সব কটিতে সক্রিয় ছিলাম।
‘অনেকবার ঘের মালিকদের অপমানের শিকার হয়েছি। কিছুদিন আগেই এক ঘের মালিক বাজারের ওপর সবার সামনে আমার পা ভেঙে দেয়ার হুমকি দেয়। আমার ঘরের পাশে নালা কেটে তারা লবণ পানি তোলে।’
তিনি বলেন, ‘বর্ষায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বাড়ি। কিছু বলতে গেলে আসে প্রাণনাশের হুমকি, গুমের ভয়। আমার দুই ছেলেকে এখানে রাখি না। ফ্যাসাদ এড়াতে তাদের অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি।’
কৃষিজমিতে লোনাপানি উত্তোলনবিরোধী স্থানীয় আন্দোলনকর্মী হরিচাঁদ সরকার প্রায় পুরোটা সময় ছিলেন প্রতিবেদকের সঙ্গে। কিছু দূরে এগোতেই তিনি দেখিয়ে দেন বিশালাকৃতির একটি চিংড়ি ঘের। স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাতক্ষীরার বিঞ্চুনাথ ঘোষ প্রায় ২ হাজার বিঘার বেশি জমির ওই ঘেরের মালিক।
পাউবোর বাঁধ বেয়ে এগোতে এগোতে একের পর এক চোখে পড়ে সেই ঘেরের পানি উত্তোলনের দৃশ্য। বাঁধ খুঁড়ে ৮ থেকে ১০ হাত গভীরে বসানো হয়েছে কাঠের তৈরি বক্স। পাটা দিয়ে বক্স থেকে নদীর পানি তোলা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
এখন শুকনা মৌসুম। কিছুদিন আগে ঘেরের মাছ আহরণ শেষ হয়েছে। বাগদা চিংড়ির পোনা ছাড়ার সময় পার হচ্ছে। তাই ঘেরের নিয়ন্ত্রকরাও এ সময়ে ব্যস্ত লোনাপানি তুলতে। জোয়ারের সময়ে বক্সের পাটা খুলে পানি তোলা হচ্ছে। ভাটার সময়ে সে পাটা বন্ধ করে লবণ পানি আটকে রাখা হয়।
দীর্ঘ বাঁধ পরিদর্শনে চোখে পড়ে এমন বড় বড় ঘেরের শত শত পানি উত্তোলন ব্যবস্থা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকার বড় বড় ঘেরগুলোর মালিক সবাই শহরে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। অনেকে ইজারা নিলেও ঠিকমতো টাকা পরিশোধ করেন না এমন অভিযোগও অনেক।
স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিজেদের জমি কৃষকরা দখল নিতে চাইলে প্রভাবশালীরা তাদের ‘মাস্তান বাহিনী’ পাঠিয়ে হয়রানি-মারধর করেন। হাটে-বাজারে শুরু হয় হেনস্তা। অনেকে আবার বাড়িতে গিয়ে গুমের ভয় দেখান।
কৃষক হাসেম ঢালী বলেন, এলাকার উন্নয়ন না হওয়ায় অনেকে শহরমুখী হয়েছেন। তাদের জমি বড় ঘেরের মালিকরা ইজারা নেন। সেখানে লোনাপানি তুলে চিংড়ি চাষ করেন। লভ্যাংশের টাকা পান ঘেরের মালিকরা, তারাও থাকেন শহরে। আমাদের এলাকায় চাষাবাদের টাকা চলে যায় শহরে। আর অবহেলিত হয়ে থাকি আমরা। আমাদের গ্রামে কাজ নেই, ভালো রাস্তা নেই, ক্ষেতে ফসল নেই, শুধু আছে লবণ পানি।’
দ্বীপবেষ্টিত এলাকাটিতে রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় খাল। বর্ষার পানি সেসব খাল দিয়ে নামানোর জন্য আছে বেড়িবাঁধের ওপর পাউবোর স্লুইস গেট। অথচ সেই স্লুইচ গেট এখন নিয়ন্ত্রণ করেন ঘেরের মালিকরা। তারা সেগুলো দিয়ে জোয়ারের লোনাপানি তুলে নেন ঘেরে।
কৃষকরা জানান, স্থানীয়দের আন্দোলনের পর গেটের দায়িত্ব পাউবো বুঝিয়ে নিলেও এখনও প্রভাবশালীরা রাতে সেসব কপাট খুলে ঘেরে তোলেন লোনাপানি।
দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রিপন কুমার মণ্ডল জানান, বর্তমানে ২০ নম্বর পোল্ডারের চারপাশে শত শত অবৈধ পাইপ ও জলকপাট তৈরি করা হয়েছে। গত বছর পাউবো থেকে সেগুলো শনাক্ত করে উচ্ছেদের জন্য সংশ্লিষ্টদের চিঠিও দিয়েছে, মাইকিং করে তা সরানোর নির্দেশ দিলেও সরাননি ঘের মালিকরা।
কৃষকরা চিংড়ি ঘেরের বিরোধী না। তারা লবণ পানির বিরোধিতা করেন। আমরাও চাচ্ছি এলাকা লবণমুক্ত হোক।
২০ নম্বর পোল্ডারের লতা ইউনিয়নের মধ্যে ২০০ বিঘার ঘের রয়েছে অজিয়ার রহমানের। এলাকাবাসীর অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ঘের থাকায় মানুষ চিংড়ির ব্যবসা করতে পারছেন। আবার সেখানে ধানও চাষ করছেন। অল্প কিছু মানুষ, যাদের জমি নেই, তারাই ঘেরের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। একসময় ঘের করতে গিয়ে জোরজুলুম চলেছে, এখন সেটা নেই। ঘেরের মালিকরা নিজেদের জমির পাশাপাশি হয়তো অল্প কিছু জমি ইজারা নেন।’
খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘ওই এলাকায় আমরা লবণ পানি তুলতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। বেড়িবাঁধ ছিদ্র না করতে বারবার মাইকিং করেছি। আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই।’
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘কৃষকরা চিংড়ি ঘেরের বিরোধী না। তারা লবণ পানির বিরোধিতা করেন। আমরাও চাচ্ছি এলাকা লবণমুক্ত হোক।’
উচ্চ আদালতের আদেশের বাস্তবায়ন নেই
২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ২০১০ সালে উপকূলীয় পাঁচ জেলায় অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ির চাষ বন্ধ করতে উচ্চ আদালতে রিট করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। যার মধ্যে ছিল খুলনার নামও। প্রাথমিক শুনানি শেষে কৃষিজমিতে লবণ পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ সীমিত রাখার আদেশ দেয় আদালত। ২০১২ সালে একই আদেশ বহাল রেখে দেয়া হয় চূড়ান্ত রায়। হাইকোর্টের সে রায় উপেক্ষা করে ২০ নম্বর পোল্ডারে এখনও করা হচ্ছে চিংড়ির চাষ। এতে ২৭ হাজার বিঘা জমির কৃষিব্যবস্থা শেষ হয়ে গেছে।’
হাইকোর্টের সে আদেশ লঙ্ঘিত হওয়ায় সম্প্রতি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নোটিশ করেছেন বেলার আইনজীবী এস হাসানুল রানা। নোটিশে তিনি বলছেন, লবণের কবল থেকে কৃষিজমি বাঁচাতে উচ্চ আদালতের রায় আছে, প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনাও আছে। তা সত্ত্বেও ২০ নম্বর পোল্ডারের কৃষিজমি রক্ষায় উদ্যোগ না নেয়া গ্রহণযোগ্য নয়। এটা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরিপন্থি ও আদালত অবমাননার শামিল।’
এ বিষয়ে বেলার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান বলেন, কৃষিজমিতে অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ বন্ধ করতে আদালতের চূড়ান্ত রায়ের পর খুলনার দাকোপ উপজেলার ৩২ নম্বর পোল্ডারে চাষ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু অন্য এলাকায় কৃষিজমিতে লোনাপানি তুলে ঠিকই চিংড়ি চাষ হচ্ছে। আসলে আদালতের ওই আদেশ পালনে ব্যবস্থা নিতে অনীহা রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের।’
দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, লবণ পানির ঘের বন্ধ করতে ইউনিয়ন পরিষদে স্থায়ীয় ৮০ শতাংশ মানুষ আবেদন করেছিল। এরপর চলতি বছরে পরিষদ থেকে রেজ্যুলেশন করে ঘের বন্ধ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করা হয়।
পাইকগাছা উপজেলার ইউএনও মমতাজ বেগম বলেন, ‘এলাকার মানুষ লবণ পানির ঘের বন্ধ করতে জোটবদ্ধ হয়েছেন, তাই ঘেরমালিক ও তাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করা হয়েছে। কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি নয়। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, সে ব্যাপারে নতুন করে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের আলোচিত সাবেক এমপি জাফর আলম কে আদালতে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাতে চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হয়েছে আজ।
জাফর আলম সর্বশেষ কক্সবাজার-১ আসনের এমপি এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন।
বুধবার সকাল ৯টার পর পরই জেলা পুলিশের একটু প্রিজন ভ্যানে করে যৌথ বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় তাকে আদালতে আনা হয়।
তাকে আজ আদালতে তোলার খবরে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালত চত্বর ও আশপাশের অন্তত অর্ধ কিলোমিটার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে।
আদালত সূত্র জানায়- বিগত ৫ আগষ্ট পরবর্তী চকরিয়া ও পেকুয়া থানায় দায়ের করা একাধিক হত্যাসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় তাকে শ্যােন অ্যারেস্ট দেখানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। সেসব মামলার শুনানি করা হয় আজ। এ সময় আদালতের বিচারক মো. আনোয়ারুল কবির শুনানী শেষে ৭ মামলায় সর্বমোট ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তন্মধ্যে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব মামলায় সর্বোচ্চ চারদিন ও সর্বনিম্ন ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলাগুলোর মধ্যে চকরিয়া থানার ৫টি ও পেকুয়া থানার ২টি মামলা রয়েছে।
আরও জানান- আদালতের শুনানী চলাকালে জাফর আলমের পক্ষে শুনানী করেন অসংখ্য আইনজীবী। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে তথা জাফর আলমের বিপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট মো. মঈন উদ্দিন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন এপিপি মঈন উদ্দিন-ই।
আদালতের শুনানী শেষে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীরা জাফর আলমের মুক্তির দাবিতে সাড়ে দশটার দিকে একটি ঝটিকা মিছিল বের করেন।
এর আধাঘন্টা পর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা জাফর আলমের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে পাল্টা মিছিল করে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে গিয়ে শেষ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার গোসাইপুর-জালশুকা সড়কের নির্মাণ কাজ ১১ মাসেও শেষ হয়নি। অথচ ঠিকাদারের শর্ত অনুসারে এ কাজ নয় মাসে শেষ করার কথা। অভিযোগ রয়েছে- ঠিকাদার লোকমান হোসেন এ সড়কের বক্সকাটিং করে ১১ মাস ধরে ফেলে রেখেছেন। তার স্বেচ্ছাচারিতা ও গাফিলতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। উল্লেখ্য তিতাস নদীর উত্তর পাড়ে বড়াইল ইউনিয়নের একটি গ্রাম গোসাইপুর। গ্রামের পশ্চিম অংশে বাজার। বাজারের পূর্ব দিকে দিয়ে চলে গেছে গোসাইপুর-জালশুকা সড়কটি। এ বাজারের যাতায়াতের জন্য রাধানগর, চরগোসাইপুর, জালশুকা, বড়াইল, মেরাতুলী গ্রামের মানুষেরাও সড়কটি ব্যবহার করে।
গোসাইপুর বাজারের মুদি মালের ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেন বলেন-"আমার গ্রামের বাড়ি জালশুকা । প্রতিদিন এ সড়কে বাজারে আসি। সড়কটি বর্ষাকালে বৃষ্টি হলেই পানি ও কাঁদা মিলে চলাচলে অযোগ্য হয়ে যায়"। বড়াইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাসার বলেন-"পূর্ব অঞ্চলের জনগণের জন্য এই রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গোসাইপুর বাজার ও রাধানগর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজে আসা-যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। সড়কটির কাজ শেষ না হওয়ার কারণে জনগণের যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে"। গোসাইপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন-"সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। নির্মাণ কাজ করতে এসে ঠিকাদার আর কাজ করছেন না। এখন বর্ষার বৃষ্টির কারনে মোড়ে মোড়ে রাস্তা ভেঙে মাটি পড়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা পা পিছলে পড়ে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরাও"। কাজ বন্ধ থাকার বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন- "সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে আমি কয়েকবার তাগিদ দিয়েছি"। এ বিষয়ে ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হোসেন বলেন-"এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে"। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী বলেন-"এই সড়কের কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি দ্রুত সময়ে কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করব"।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সংযোগ সড়ক ও রাস্তা না থাকায় কাজে আসছে না প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় ৫ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের। এমন ব্রিজের দেখা মিলেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর আদ্রা গ্রামের ফসলের মাঠে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটি। ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য নির্মিত হয়নি সড়ক। ফলে কোনো কাজেই আসছে না সাতপোয়া ইউনিয়নের, চর রৌহা, আকন্দপাড়া, মাজারিয়া ও খামার মাগুরাসহ পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার আরও ২টি গ্রামের জনসাধারণসহ হাজারও মানুষের।
সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন এসব এলাকার ফসলের মাঠের আল দিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। ব্রিজটি নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হলেও এটি এখনো জনগণের চলাচলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ব্রিজের দুই পাশে কাঁদা ও অসমতল জমির কারণে শিশু, বৃদ্ধ এমনকি সাধারণ পথচারীদেরও চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া কৃষকদের আবাদি ফসল আনা-নেওয়া বা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতেও হয়েছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হাসানুর কবীর স্বপন, মাসুদ রানা, চান মিয়া, ছমিরন বেওয়া বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের খবরে আমরা এলাকাবাসীরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম আমাদের কয়েক গ্রামের দীর্ঘদিনের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণের এতদিন পার হলেও সড়ক না থাকায় এটি আমাদের কোনো কাজে আসছে না। আমরা দাবি জানাই অতি দ্রুত আমাদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্রিজটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী শওকত জামিল বলেন, ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ব্রিজটি ও সড়কের কথা জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ওই এলাকার মানুষদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘবে মাটি কেটে রাস্তা উঁচু করে ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
পালকি ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও একই অবস্থা ছিল। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি রূপগঞ্জে আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই গ্রাম ঘুরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে বর কিংবা মান্যগন্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম যাত্রা করেছে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভুপেন হাজারিকার মাদল তালে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে পালকি চলে.....আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে। রবি ঠাকুরের ‘বীর পুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের সাথে লড়ে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারে না, ভাগ্যেস খোকা ছিল তার সঙ্গে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিকে আর বলে না, আর কটাঁ দিন থাক না দিদি, কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনা ও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর পালকি বহরের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। এক সময় গ্রাম-বাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেতেন বরের লোকজন। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। ছয়জন মিলে পালকি বহন করতো। সামনে পেছনে দুজন ও মাঝখানে দুজন করে পালকি কাঁদে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার পর বর-কনেকে এক সঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসতো।
আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সঙ্গে ফরাসি থেকেও। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর স্মৃতি কথায় এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত এ পালকি এখন বিভিন্ন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নব বর-বধুদের আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার এ যুগে প্রাইভেটকার, নোহা, বাস ও মাইক্রোবাস। হালের লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন। এসব যানের রমরমা ব্যবসাও এ কারণেই জমে ওঠেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর যাত্রা গিয়েছেন সফিক মিয়া। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা তখন পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছড়ায় বলা হতো বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! সোনার বরনী কন্যা এখন আর পালকিবদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলের সাজানো এয়ারকন্ডিশন গাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন (৩৮) মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন- বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ট্রাকের হেল্পার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল। কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন।অপরদিক পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাৎক্ষিনক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাক চালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন— শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম—পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।
দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম—পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
মন্তব্য