ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম।
মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের কনফারেন্স রুমে শনিবার ‘পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মোস্তফা জামান বলেন, ‘দ্রুত সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার। আর এই অঙ্গীকার পূরণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে ও আইনের বিধান অনুসরণ করে কাজ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে সকাল ১০টার মধ্যে নিম্ন আদালতের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এতে মামলার অনেকাংশ জট ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমে আসবে।’
প্রধান বিচারপতির দেয়া নির্দেশনা সমন্বয় করে বিচারকাজ পরিচালনা করতে হবে বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের এ বিচারপতি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দায়রা জজ ইমরুল কায়েশ বলেন, ‘মানি লন্ডারিং আইন, দুদক আইন ও মাদক আইনের মামলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে তদন্তকারী সংস্থাগুলো সমন্বয় করে তদন্ত করতে হবে।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মুখ্য মহানগর হাকিম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্ত প্রতিবেদন মামলার ভিত্তি রচনা করে দেয়।’
তদন্তের ক্ষেত্রে যে ধরনের অনিয়ম হয়ে থাকে সেগুলোর বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের সর্তক করেন এবং তদন্তে তদারকিকারীদের এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দেন।
এ ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল, সাক্ষীর উপস্থিতি বাড়ানো, আলামত হাজির করা, আলামত নিষ্পত্তি ইত্যাদি বিষয়ে তাগিদ ও দিকনির্দেশনা দেন।
তিনি আরও নির্দেশ দেন পেশাদার মাদক কারবারি, চোর, ছিনতাইকারিসহ অন্য পেশাদার অপরাধীদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার।
রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, এই ধরনের মামলায় তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিচার নিষ্পত্তি করবেন।
আলোচনা সভায় ছিলেন ডিএমপির বিভিন্ন থানার ২৫ জন ওসি, বিভিন্ন জোনের ডিসি, পিবিআই, র্যাব, দুদক, মাদক, জেল, পিপি, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফিরোজুর রহমান (মন্টু)সহ অনেকে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নির্বাচন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার আগে হতে হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তারিখ নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার আগে হতে হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জনগণের আকাঙ্ক্ষা স্থানীয় নির্বাচন আগে হোক। আমরা সেটাকে সমর্থন করি।’
নির্বাচন সংস্কার বিষয়ে জামায়াত একটি লিখিত প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে বলেও জানান জামায়াতের সেক্রেটারি।
তিনি জানান, প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে আনুপাতিক হারে (পিআর) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১ অনুচ্ছেদের (এ) ধারা পুনর্বহাল, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনে নিবন্ধনের শর্তগুলো শিথিল।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি যে আরপিওর ৯১ অনুচ্ছেদের (এ) ধারা পুনর্বহাল করতে, যাতে নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচন আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ বাতিল করার ক্ষমতা পায়।'
অপর এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর ৩০০ আসনে প্রার্থিতা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাসুদ, তাহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিলের পর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এটি জামায়াতের প্রথম কোনো বৈঠক।
এর আগে দলটির নিবন্ধন থাকা অবস্থায় বার্ষিক অডিট রিপোর্ট দিতে ইসি সচিবালয়ে গিয়েছিলেন জামায়াত প্রতিনিধিরা।
বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনে এসেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের সাথে কথা বলব।
আমাদের বক্তব্য তাদের জানাব। পরে গণমাধ্যমের সাথেও আমরা কথা বলব।’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদসহ ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন।
লিবিয়ায় আটকে পড়া ১৪৫ অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি ঢাকায় পৌঁছেছেন।
বুরাক এয়ারের চার্টার্ড ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীর বেশির ভাগই সমুদ্র পথে অবৈধভাবে ইউরোপ গমনের উদ্দেশ্যে মানব পাচারকারীদের প্ররোচনা ও সহযোগিতায় লিবিয়ায় অনুপ্রবেশ করেন। তাদের অধিকাংশই লিবিয়াতে বিভিন্ন সময়ে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।
এতে জানানো হয়, দেশে ফেরত আসার পর এই ভয়ংকর পথ পাড়ি দিয়ে আর যেন কেউ লিবিয়াতে না যান, এ বিষয়ে তাদের সচেতন হওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার পক্ষ থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের প্রত্যেককে ছয় হাজার টাকা, কিছু খাদ্যসমগ্রী উপহার, মেডিক্যাল চিকিৎসা ও প্রয়োজনে অস্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশালায় আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আর্ন্তজাতিক অভিবাসন সংস্থা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াকে অতীতে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে এবং আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী।
মোহাম্মদ শিশির মনির সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ১৩ বছরে এই মামলার তদন্ত শেষ করে রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। আমরা মনে করি, এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা। তবে এই সরকার আসার পর হাইকোর্ট বিভাগের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একটি উচ্চতর টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
‘সে টাস্কফোর্স আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবেন।’
এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘অতীতে এই মামলাটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি। এই মর্মেও তদন্তে কিছু তথ্য-উপাত্ত এসেছে। অতীতে এই ইনভেস্টিগেশন (তদন্ত) সিস্টেমকে (প্রক্রিয়াকে) অবস্ট্রাকশন (বাধাগ্রস্ত) করা হয়েছে। ইনভেস্টিগেশন প্রসেসকে সঠিকভাবে আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি।
‘১৩ বছরে অনেক সাক্ষ্য-প্রমাণই গায়েব হয়ে গেছে। তবে সবকিছুর পরও এখন একটি আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আমরা আশা করি স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই হাইকোর্ট তদন্তকারী কর্মকর্তারা একটি গ্রহণযোগ্য এবং সত্যিকার একটি বিচার পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত তদন্ত রিপোর্ট আদালতের সামনে দাখিল করবেন।’
সাংবাদিক রুনির ভাই ও মামলার বাদী নওশের রোমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করব, যেহেতু আগের সরকার এখন নেই। আগের সরকারকে আমরা মনে করতাম যে, আগের সরকারের সংশ্লিষ্ট কেউ বা সরকার স্বয়ং এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কারণ যত ধরনের নাটক হয়েছে, ডিএনএ টেস্ট থেকে শুরু করে আমাদের হয়রানি এবং নানা সময়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী যেসব কথাবার্তা বলেছেন, স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, কারও বেডরুমের পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব তার না।
‘এই শব্দটা থেকেই আমরা আসলে মনে করি যে, তৎকালীন সরকার বা তাদের সংশ্লিষ্ট কেউ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তবে এখন যেহেতু সব কিছু পরিবর্তন হয়েছে, এখন কিছুটা আশার আলো আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
এ মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে সাগর-রুনির একমাত্র ছেলে মেঘ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন তো দেখতেছি ওরা কাজ করতেছে। একটু হইলেও আমরা হোপফুল। আশা করা যাচ্ছে পজেটিভ কিছু একটা শুনতে পারব।’
রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া করা বাসায় ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। এ সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ।
সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের আলম। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে তদন্তে ব্যর্থতার একপর্যায়ে ডিবি থেকে র্যাবকে এই মামলা তদন্ত করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের ধরা হবে বলে সময় বেঁধে দেন। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি কথার ফানুস হয়েই নিষ্ফল হয়। বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে এখন পর্যন্ত ১১৬ বার সময় নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:অমর একুশে বইমেলায় ‘সব্যসাচী’ স্টলে সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মোহাম্মদ হারুন রশিদকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে এ বিষয়ে একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলা একাডেমি মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, ‘বাংলা একাডেমি আয়োজিত চলমান অমর একুশে বইমেলা-২০২৫-এর দশম দিনে (১০ ফেব্রুয়ারি) সোমবার সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১২৮ নম্বর সব্যসাচী স্টলে সংঘটিত অনভিপ্রেত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
বাংলা একাডেমি প্রেসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খোরশেদ আলমকে সদস্য সচিব করা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ খালিদ হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ রোমেল, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রতিনিধি মো. আবুল বাশার ফিরোজ শেখ এবং শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ খালিদ মনসুর।
চলমান অভিযান ডেভিল হান্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে কোনো শয়তান যেন পালাতে না পারে, সে আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে মঙ্গলবার ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর, দুষ্কৃতিকারী, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে, কিন্তু তাদের দোসররা দেশে-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা এ দেশের জনগণের সম্পদ অন্যায়ভাবে লুটপাট করে অঢেল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে। যারাই তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, তাদের দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছে, দলীয় বাহিনীর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের লেলিয়ে দিয়েছে, অন্যায়ভাবে মামলা-হামলা দিয়ে হেনস্তা করেছে।
‘গণমাধ্যমগুলো দখল ও নিয়ন্ত্রণ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে শায়েস্তা করেছে। অনুগত পুঁজিবাদী শ্রেণি তৈরি করে সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। সিভিল সার্ভিস ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে। আদালতের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এককথায় ফ্যাসিস্ট সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে। আর এখন অবৈধ সম্পদ ব্যবহার করে অপশক্তির সম্পৃক্ততায় নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের পুলিশ বাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আইনি প্রক্রিয়ায় এ সকল অপরাধীদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গ্রেপ্তার করেছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।’
উপদেষ্টা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সারা দেশের অভিযান সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক কার্যক্রম তদারকি করা হবে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে স্থাপিত জয়েন্ট অপারেশন সেন্টারের মাধ্যমে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘মেট্রোপলিটন এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এবং জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ অভিযান পরিচালনায় সমন্বয় করবেন। সিএমএম আদালত, এমএম আদালত, সিজেএম আদালত, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারকগণ, জেলা ম্যাজিস্ট্রটরা, স্পেশাল আদালতের বিচারকগণ, আদালতে সরকারপক্ষের আইনজীবীগণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এই অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য নিয়োজিত।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে চাই। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে চাই। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে বলব।
‘অপারেশন ডেভিল হান্টের বিষয়ে আমি বলব, কোনো শয়তান যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে না যেতে পারে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আইনজীবীদের আমি বলব, কোনোভাবেই যেন কোনো সন্ত্রাসী জামিন না পায়, সবোর্চ্চ সতর্ক থাকুন।’
আরও পড়ুন:বিচার বিবেচনা ছাড়া হুটহাট কাউকে জামিন না দিতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
রাজধানীর রাজারবাগে মঙ্গলবার দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইনপ্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালায় এ আহ্বান জানান তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘মামলার এজাহার সুন্দর করে লিখেন, তথ্য দিন। গত ১৫ বছর ধরে অরাজকতা, গুম ও খুন হয়েছে। প্রতিটি হত্যার বিচার হতে হবে, এ বার্তা দিতে হবে। তা না হলে এ পদে থাকার কোনো মানে হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। পতিত সরকার ও তার দোসররা লাখ লাখ টাকায় দেশকে অস্থিতিশীলের চেষ্টা করছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘মবতন্ত্র ভয়াবহ। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সব বিভাগ যদি ঠিকঠাক কাজ করে, তাহলে মবতন্ত্র কমে যাবে। সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।’
আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা হবে বলে মন্তব্য করেছন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
রাজধানীর মতিঝিল থানার আয়োজনে সোমবার বিকেলে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আব্বাস বলেন, ‘নির্বাচনের পর যে দলই ক্ষমতায় আসুক, আমরা একসাথে মিলেমিশে কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণ যাকে চায় সেই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। যারা নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করছেন, তারা বিএনপিকে ভয় পায়।’
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘গণহত্যার বিচার হতেই হবে। যারা গণহত্যা করেছে, তারাই এ দেশে মানুষের সকল অধিকার হরণ করেছে।
‘তারা জুলাইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দেশের শিশু বাচ্চাদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে, গুলির নির্দেশ দিয়েছে। তারা কেউ যেন বিচারের হাত থেকে রেহাই না পায়, সেই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তবে বিচারের দোহাই দিয়ে নির্বাচনকে দূরে ঠেলে দেওয়া যাবে না। সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচনি প্রক্রিয়া একসাথে চলবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রসঙ্গে আব্বাস বলেন, ‘সংস্কার ঘোষণা দিয়ে হয় না। ২০২২ সালে আমাদের নেতা তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমান সময়ে যারা দেশকে বিভাজনের মাধ্যমে সংস্কার করতে চান, তাদেরকে বলতে চাই, আমাদের ছোট্ট একটা দেশকে ভাগ করে সংস্কার এ দেশের মানুষ কাম্য নয়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য