অল্প পুঁজি ও ঝুঁকি কম থাকায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বরই চাষ করে অনেকেই সফালতা পেয়েছেন। বরইয়ের বাম্পার ফলনে খরচের চেয়ে লাভের পরিমাণ দুই থেকে তিন গুণ। এতে খুশি ঝালকাঠি, ফেনী ও ময়মনসিংহের চাষিরা। তাদের অনুসরণ করে জেলাগুলোতে দিন দিন এ ফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে অন্য চাষিদেরও।
ঝালকাঠিতে বরই চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা
ঝালকাঠিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে বরই চাষ। জমির আইলে পরীক্ষামূলকভাবে বরই চাষে সফলতার পর কেওড়া ইউনিয়নের সংগ্রামনীল গ্রামের বিজান মণ্ডল ৩ বছর আগে বাণিজ্যিকভাবে বরইয়ের চাষ শুরু করেন। পতিত জমিতে বরই চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি।
নিউজবাংলাকে জানান, অন্যের কাছ থেকে তিন বছর আগে এক বিঘা জমি ইজারা নিয়ে কুল চাষের উপযোগী করেন। সাতক্ষীরা থেকে বাউ কুল, আপেল কুল, নারিকেল কুল এবং বল সুন্দরী কুলের চারা এনে বাগানে রোপণ করেন। মাত্র এক বছরেই বাগানের বরই গাছে বাম্পার ফলন ধরেছে।
এ বছরও বরইয়ের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছ। আকারে বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে বরই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
নারিকেল ও আপেল কুল পাইকারি ৯০ টাকা আর খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। বাউকুল পাইকারি ৬০ টাকা কেজি আর খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে।
বিজান মণ্ডল বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তারা মোগো দিকে যতি তাহাইতো, হেলে ফলন আরও বেশি পাইতাম। মোরা মালিক আর শ্রমিকরা ভালোভাবে বাঁচতে পারতাম।’
এই বাগানে জমি তৈরিসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ১৩৪টি বরই গাছ লাগাতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে দ্বিগুণ লাভ হবে বলেও জানান তিনি।
বাগান পরিচর্যাকারী নিতাই মণ্ডল বলেন, ‘বরই চাষ অত্যন্ত লাভজনক। কম খরচে অধিক লাভ করা যায়। তাছাড়া বরই চাষে তেমন কোনো ঝুঁকিও নেই।’
বরই চাষে বিজানের সফলতা দেখে এখানকার অন্যরাও আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খান। চাষিদের চাহিদা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেন তিনি।
এলাকার আরেক বাগানমালিক মোহাম্মদ আবিয়ান হাসান বলেন, ‘স্থানীয়দের বিষমুক্ত ফল খাওয়ানোর লক্ষ্যে বরই চাষ শুরু করেছি। কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে আগামীতে ব্যাপকভাবে বরই চাষ করব।
‘গত দুবছর করোনা ও লকডাউন থাকায় ফলন অনুযায়ী বিক্রি কম হয়েছে। আশা করি এ বছর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।’
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, এখানকার মাটি বরই চাষের উপযোগী। এ ফল চাষে কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের সবভাবে সহযোগিতা করা হবে।
বরইয়ের বাম্পার ফলনে খুশি চাষিরা
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার চাষি আবু সাঈদ মো. মশিউর রহমান বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষে সাফল্য পেয়েছেন। তিন একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ৮ শতাধিক গাছ লাগিয়েছেন। এসব গাছে বাম্পার ফলন হয়েছে।
খরচ বাদে তিন গুণ বেশি লাভের সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। তার এমন সাফল্য দেখে অন্যরাও বরই চাষে ঝুঁকছেন।
উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের সামানিয়াপাড়া গ্রামে মুশিউর রহমানের বরই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, থরে থরে বরইয়ে গাছের ডালগুলো মাটিতে নুয়ে পড়েছে। শ্রমিকরা বরই তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন, বাগান থেকেই বরই কিনে নিচ্ছেন পাইকাররা।
পাইকার আসাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্রেতারা ফ্রেশ বরই পছন্দ করেন তাই সরাসরি বাগান থেকে বরই সংগ্রহ করি। এতে ত্রেতারা ভালো বরই পাচ্ছেন, আমরাও একটু বেশি দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারি। এ ছাড়া এক বাগানেই ৮ জাতের বরই পাওয়ায় এ বাগান থেকে কিনে বাজারে বিক্রি করি।’
স্থানীয় আসাদুল হক নামে এক কৃষক বলেন, ‘মশিউর রহমান বরই চাষে চমক দেখিয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে বরই বিক্রি করে তিনি লাভবান হচ্ছেন। খরচ বাদে তিন গুণ বেশি লাভ করবে বলে জানিয়েছেন। আমিও তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি। আগামীতে উন্নত জাতের বরইয়ের চারা লাগাব।
মিশ্র জাতের বরই চাষে সাফল্য পাওয়া আবু সাঈদ মো. মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইউটিউব দেখে বরই চাষে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। দুই বছর আগে উন্নত জাতের ৮ শতাধিক বরই গাছ লাগিয়েছি। এসব গাছে অল্প বয়সেই প্রচুর বরই হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাগানে ছয়জন শ্রমিক সার্বক্ষণিক কাজ করে। বাগান পরিচর্যাসহ দুই বছরে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এবারই প্রথম বরই ধরেছে। জাত বেঁধে একেকটি গাছে ২০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত বরই হয়েছে। বাম্পার ফলন হওয়ায় ১২ লাখ টাকার মতো বিক্রি করা যাবে। ফলে খরচ বাদ দিলেও ৯ লাখ টাকা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া বাগানে পেঁপে, পেয়ারা ও লেবুসহ বিভিন্ন ফলের গাছও রয়েছে।’
এ বিষয়ে ত্রিশাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মশিউর এখন অভিজ্ঞ বরই চাষি। তিনি বরই চাষে সফলতা পাওয়ায় আরও অনেকে বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।’
বরই চাষে স্বপ্ন বুনছেন আছমত আলী
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা আছমত আলী। মেঘনার ভাঙনে সব হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ফেনীতে। সদর উপজেলার কাজির বাগ ইউনিয়নে পরিবারসহ থাকেন।
দীর্ঘদিন রিকশা ও ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে অবশেষ ঝুঁকেছেন কৃষিতে। স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের পরামর্শে নামেন কুল চাষে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ফেনীতে এই প্রথম বিভিন্ন স্বাদের কুল চাষ হচ্ছে।
৪০ শতক জমিতে বল সুন্দরী, কাশ্মীরি, বাউকুল, আপেল কুলসহ নানা জাতের কুল চাষ করছেন তিনি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কুলের ভালো ফলন হয়েছে। কুলের ভারে নুয়ে পড়ছে গাছগুলো। নিচে বাহারি শাকসবজি। ওপরে ছাউনি আর চারপাশে বাঁশ দিয়ে ঘেরা হয়েছে।
একই জায়গায় কুল চাষের পাশাপাশি সিম, টম্যাটো, বেগুন, আলু, করলা, মেটে আলু, লাল ও পালংশাকসহ শীত ও গ্রীষ্মকালীন নানা সবজির আবাদ করছেন।
৭০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে এই বছরে বিনিয়োগের টাকা তুলে আগামী ১০ বছরে এ লাভ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন তিনি।
কৃষক আছমত আলী বলেন, ‘এই বছর যে টাকা বিনিয়োগ করেছি সে টাকা তুলতে পারব। তবে আগামী ১০ বছর আর কোনো বিনিয়োগ করতে হবে না। আর লাভ তো পাবই। কুল চাষের পাশাপাশি একই জায়গায় অনেক কিছু করা সম্ভব।
‘আমি মনে করি আমার দেখাদেখি জেলার অন্য কৃষকরাও কুল চাষাবাদে ঝুঁকবেন। ফেনীর মাটি ও জলবায়ু এর চাষাবাদের জন্য বেশ উপযোগী।’
অন্য কেউ কুল বাগান কীভাবে করবেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত বছরের মার্চ থেকে চাষাবাদ শুরু করেছি। পাবনা থেকে বল সুন্দরী, কাশ্মীরি, আপেল কুল ও বাউকুল জাতের ১০০ চারা এনে রোপণ করেছিলাম।
‘এর মধ্যে বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি প্রতি পিস চারা ৮০ টাকা, আপেল কুল ১৫ টাকা, বাউকুল চারা ১২ টাকা দরে কিনেছিলাম। প্রতি গাছে ৯ থেকে ১২ কেজি বরই ফলন হয়েছে। প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বাগান থেকে অনেকে এসে কুল কিনে নিচ্ছে। চলতি মৌসুমে বাগান থেকে ১ লাখ টাকার বেশি কুল বিক্রি করতে পারব আশা করছি।’
তিনি জানান, চারা, চারপাশের বেড়া, ওপরের বিশেষ নেট ও জমি তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কাজে ৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এর মধ্যে কিছু স্থায়ী খরচ রয়েছে যা পরের বছরগুলোতে আর লাগবে না। লাভের পরিমাণ পরের বছরগুলোতে আরও বাড়বে।
আছমত আলী জানান, কুল চাষ করতে গিয়ে আমার বহু টাকা ঋণ হয়েছে। এ ছাড়া অন্যের জমি ইজারা নিয়েছি, থাকছিও ভাড়া বাড়িতে। তাই সরকাররের পক্ষ থেকে কিছু সহযোগিতা করলে উপকার হবে। অন্তত তিনি যেন মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু দেন।
ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ‘কৃষক আছমত আলী এক বছরে যে লাভ পাচ্ছেন তাতে দেশও লাভবান হচ্ছে। পাশাপাশি দেশ বাণিজ্যিক কৃষিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে চাষিরা এ বছরের চেয়ে পরের বছরগুলোতে দ্বিগুণ লাভবান হবেন বরই চাষে।’
প্রণোদনার ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি প্রণোদনা দেয়ার সুযোগ নেই। তবে তাকে অফসিজনের তরমুজের বীজ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।’
কৃষক আছমত আলীর এ কুল বাগান পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল-হাসান। তিনি বলেন, কুল চাষে তার লাভ ও উৎপাদন দেখে অন্যান্য কৃষকও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। ওই কৃষকের স্থায়ী বাসস্থান নেই বলে জেনেছি। তার ব্যাপারটি নিয়ে আমরা ভাবছি।’
আরও পড়ুন:জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সংযোগ সড়ক ও রাস্তা না থাকায় কাজে আসছে না প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় ৫ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের। এমন ব্রিজের দেখা মিলেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর আদ্রা গ্রামের ফসলের মাঠে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটি। ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য নির্মিত হয়নি সড়ক। ফলে কোনো কাজেই আসছে না সাতপোয়া ইউনিয়নের, চর রৌহা, আকন্দপাড়া, মাজারিয়া ও খামার মাগুরাসহ পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার আরও ২টি গ্রামের জনসাধারণসহ হাজারও মানুষের।
সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন এসব এলাকার ফসলের মাঠের আল দিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। ব্রিজটি নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হলেও এটি এখনো জনগণের চলাচলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ব্রিজের দুই পাশে কাঁদা ও অসমতল জমির কারণে শিশু, বৃদ্ধ এমনকি সাধারণ পথচারীদেরও চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া কৃষকদের আবাদি ফসল আনা-নেওয়া বা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতেও হয়েছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হাসানুর কবীর স্বপন, মাসুদ রানা, চান মিয়া, ছমিরন বেওয়া বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের খবরে আমরা এলাকাবাসীরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম আমাদের কয়েক গ্রামের দীর্ঘদিনের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণের এতদিন পার হলেও সড়ক না থাকায় এটি আমাদের কোনো কাজে আসছে না। আমরা দাবি জানাই অতি দ্রুত আমাদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্রিজটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী শওকত জামিল বলেন, ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ব্রিজটি ও সড়কের কথা জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ওই এলাকার মানুষদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘবে মাটি কেটে রাস্তা উঁচু করে ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
পালকি ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও একই অবস্থা ছিল। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি রূপগঞ্জে আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই গ্রাম ঘুরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে বর কিংবা মান্যগন্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম যাত্রা করেছে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভুপেন হাজারিকার মাদল তালে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে পালকি চলে.....আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে। রবি ঠাকুরের ‘বীর পুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের সাথে লড়ে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারে না, ভাগ্যেস খোকা ছিল তার সঙ্গে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিকে আর বলে না, আর কটাঁ দিন থাক না দিদি, কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনা ও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর পালকি বহরের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। এক সময় গ্রাম-বাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেতেন বরের লোকজন। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। ছয়জন মিলে পালকি বহন করতো। সামনে পেছনে দুজন ও মাঝখানে দুজন করে পালকি কাঁদে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার পর বর-কনেকে এক সঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসতো।
আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সঙ্গে ফরাসি থেকেও। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর স্মৃতি কথায় এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত এ পালকি এখন বিভিন্ন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নব বর-বধুদের আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার এ যুগে প্রাইভেটকার, নোহা, বাস ও মাইক্রোবাস। হালের লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন। এসব যানের রমরমা ব্যবসাও এ কারণেই জমে ওঠেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর যাত্রা গিয়েছেন সফিক মিয়া। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা তখন পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছড়ায় বলা হতো বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! সোনার বরনী কন্যা এখন আর পালকিবদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলের সাজানো এয়ারকন্ডিশন গাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন (৩৮) মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন- বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ট্রাকের হেল্পার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল। কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন।অপরদিক পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাৎক্ষিনক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাক চালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন— শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম—পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।
দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম—পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
মন্তব্য