মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানকে বলা হয় জীববৈচিত্র্যের আধার। ১ হাজার ২৫০ হেক্টরের এ বনে রয়েছে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী। দেশের মধ্যে শুধু এখানেই রয়েছে আফ্রিকান টিকওক গাছ। আছে বিশ্বব্যাপী মহাবিপন্ন চীনা বনরুইসহ অনেক বিপন্ন প্রাণী।
তবে অব্যবস্থাপনা, বনের জমি দখল, অপরিকল্পিত পর্যটনকেন্দ্র, বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া সড়ক ও রেলপথের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে এখানকার উদ্ভিদ ও প্রাণী। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ বনটিই হুমকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
বিরল উদ্ভিদ ও মহাবিপন্ন প্রাণীর আভাস
লাউয়াছড়া বনে রয়েছে বিশ্বব্যাপী মহাবিপন্ন অনেক প্রাণী। এর মধ্যে অন্যতম চশমাপরা হনুমান ও বনরুই। যুক্তরাষ্ট্রের ডেল্টা স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. এ এইচ এম আলি রেজা ২০১০ সালে লাউয়াছড়ায় গবেষণা চালিয়ে ৪৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১৫ প্রজাতির উভচর প্রাণীর সন্ধান পান।
এরপর ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এখানে গবেষণা চালায় ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স নামের একটি সংগঠন। বন বিভাগের সহযোগিতায় এ গবেষণায় লাউয়াছড়ায় ৫১ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ২০ প্রজাতির উভচর প্রাণী পাওয়া যায়। নতুন পাওয়া এই ১১ প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব বাংলাদেশেই নতুন বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
সবশেষ গবেষণা দলের প্রধান শাহারিয়ার রহমান সিজার বলেন, ‘আমরা বনে নতুন অনেক প্রাণী পেয়েছি। দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রতিটি প্রজাতিকে স্বচক্ষে দেখে, যাবতীয় তথ্য নিয়ে আলাদাভাবে শনাক্ত করেছি।’
নিউজবাংলাকে তিনি জানান, লাউয়াছড়ায় উভচর প্রাণীদের মধ্যে ১৯ প্রজাতির ব্যাঙ ও এক প্রজাতির সিসিলিয়ান জাতীয় প্রাণী পাওয়া গেছে। আর সরীসৃপ শ্রেণির মধ্যে পাওয়া গেছে ২ প্রজাতির কচ্ছপ, ১৪ প্রজাতির টিকটিকিজাতীয় (২ প্রজাতির গুইসাপসহ) এবং ৩৫ প্রজাতির সাপ। এই প্রজাতিগুলোর মধ্যে রাজগোখরা, অজগর ও পাহাড়ি হলুদ কচ্ছপ ইতোমধ্যে মহাবিপন্ন বা বিপন্ন তালিকায় রয়েছে।
অন্যদিকে চিকিলা, বাইবুন গেছো ব্যাঙ, বিথের সাপের মতো প্রজাতিও লাউয়াছড়ায় পাওয়া গেছে। এগুলো প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়নের (আইইউসিএন) লাল তালিকায় রয়েছে।
বানর গবেষক তানভির আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, বাংলাদেশের মোট ১০ প্রজাতির বানরের মধ্যে ছয় প্রজাতিই লাউয়াছড়া বনে পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লুক, চশমাপরা হনুমান ও লজ্জাবতী বানর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এরা পৃথিবীব্যাপী বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রায় ৪০টি উল্লুক এবং কমপক্ষে ১২৯টি চশমাপরা হনুমান রয়েছে। লজ্জাবতী বানরও রয়েছে অনেক। লাউয়াছড়ার মতো ছোট বনে যতগুলো বানরজাতীয় প্রাণী রয়েছে, দেশের অন্য অনেক বনেই তা নেই।’
এ ছাড়া এই বনে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। এর মধ্যে আফ্রিকান টিকওক গাছ দেশের মধ্যে শুধু এই বনেই পাওয়া যায়।
জানা গেছে, ১৯৩০ সালে এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা লাউয়াছড়ায় টিকওক গাছের কয়েকটি চারা রোপণ করেন। এর মধ্যে দুটি গাছ টিকে ছিল। ২০০৬ সালে একটি গাছ ঝড়ে উপড়ে যায়। বর্তমানে জীবিত থাকা গাছটির উচ্চতা ১৫০ ফুট উঁচু।
আফ্রিকান টিকওক গাছের কাঠ ড্রামস ও কফিন বানাতে ব্যবহৃত হয়। ভেষজ ঔষধি গাছ হিসেবে আফ্রিকায় এর পাতা ও বাকলের ব্যবহার রয়েছে। এ গাছের কষ এক ধরনের অ্যান্টি-টিউমার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
গবেষক রফিকুল হায়দার বলেন, ‘টিকওক খুবই বিরল প্রজাতির গাছ। এটি অনেক উপকারী। আমি গাছের টিস্যু সংগ্রহ করেছি। টিস্যু থেকে চারা তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
হারিয়ে যাচ্ছে
লাউয়াছড়ায় একদিকে যেমন নতুন প্রজাতির প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে, অন্যদিকে পুরোনো অনেক প্রজাতি হারিয়েও গেছে।
গবেষকরা জানান, উদ্যানের ভেতরের ছড়া এবং ঝিরিপথগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ঝিরিপথ দিয়ে আশপাশের বিভিন্ন চা বাগানে ব্যবহৃত কীটনাশক এসে মিশে যায়। ফলে এখানকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে লাউয়াছড়ায় বন্যপ্রাণী নিয়ে গবেষণা ও সংরক্ষণের কাজ করছেন হাসান আল-রাজী ও মার্জান মারিয়া দম্পতি। তারা জানান, বনের ভেতরের ছড়া ও ঝিরিগুলো শুকিয়ে যাওয়ার কারণে অনেক প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে, বিশেষত পানির ওপর নির্ভরশীল প্রাণীগুলো।
তারা বলেন, চা বাগানের কীটনাশকের কারণেও অনেক ছোট কীটপতঙ্গ হারিয়ে গেছে। বনের মধ্যে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রাণীদের আবাসস্থল নষ্ট হয়েছে, তাতে আগামী ১০-১৫ বছরে বেশ কিছু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
আবাসন ও খাদ্যসংকট
অব্যাহতভাবে দখলের কারণে লাউয়াছড়ায় কমছে বনের জমি। অন্যদিকে গাছ চুরির কারণেও কমে আসছে বনাঞ্চলের পরিমাণ। গাছ কমায় বন্যপ্রাণীদের আবাসন ও খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। যার কারণে প্রায়ই লোকালয়ে চলে আসে বন্যপ্রাণী। এ ছাড়া বন্যপ্রাণী শিকারের ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। এর মধ্যে হরিণ এবং শূকর শিকারের ঘটনাই বেশি ঘটে।
শ্রীমঙ্গলের বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন পরিচালক সজল দেব বলেন, ‘লাউয়াছড়ার আশপাশের লোকালয় থেকে গত ১০ বছরে আমরা ৪৫০টি প্রাণী উদ্ধার করেছি। মূলত খাদ্যসংকটের কারণেই প্রাণীগুলো বন থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।’
গবেষক সাবিত হাসান বলেন, ‘লাউয়াছড়া উদ্যানে বেশ কিছু কেব্লের ফাঁদ দেখেছি, যেগুলো মোটরসাইকেলের ব্রেক এবং ক্লাস দিয়ে তৈরি। এগুলো দিয়ে মূলত হরিণ ধরার জন্য ফাঁদ পাতা হয়। কোনো প্রাণী পানি খাওয়ার জন্য গেলে সেই ফাঁদে আটকা পড়ে।’
নিউজবাংলাকে লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক সামছুল হক বলেন, ‘লাউয়াছড়ার আশপাশে বনভূমি এবং চা বাগান থাকায় প্রায়ই বন্যপ্রাণীরা এসব এলাকায় যায়; যেখানে শিকারিরা ফাঁদ পেতে রাখে। বিশেষ করে ডলুছড়া, ছনকলা, ফুলবাড়িয়া চাবাগান এলাকায় শিকার বেশি হয়ে হয়।’
তা বন্ধ না করতে পারলে লাউয়াছড়ার অস্তিত্বই সংকটে পড়তে পারে বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুনতাসির আকাশ। ‘থাইল্যান্ডে আমাদের চেয়ে কয়েক গুণ সমৃদ্ধ একটি বন ছিল। কিন্তু শুধু কেবল দিয়ে শিকার করার কারণে সেই বনে এখন প্রাণী নেই। লাউয়াছড়ায় একই কাজ করা হচ্ছে।’
মৃত্যুফাঁদ সড়ক-রেলপথ
লাউয়াছড়া বনের ভেতর দিয়ে গেছে সাড়ে ছয় কিলোমিটারের সড়কপথ। এ ছাড়া রেলপথ রয়েছে প্রায় আট কিলোমিটার। এই দুই পথে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে প্রাণী।
স্থানীয়রা জানান, চলাচলের সময় হঠাৎ করে সামনে চলে আসা যানবাহনের আলোয় প্রাণীরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। তখন দ্রুতগামী গাড়ির ধাক্কায় অনেক প্রাণী মারা যায়। বনের ভেতর থেকে সড়ক ও রেলপথ সরানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানো হলেও তা বাস্তবায়নের দেখা নেই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘আমরা বনের ভেতরের সড়ক বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিলাম, অথচ এই সড়ককে আরও বড় করা হয়েছে। ফলে গাড়ির গতি বেড়েছে। এতে প্রাণী মৃত্যুর হার বেড়েছে।’
সড়ক ও রেলপথে প্রতিদিন কী পরিমাণ প্রাণী মারা যায় এ নিয়ে সাম্প্রতিক কোনো গবেষণা নেই। তবে পুরোনো কিছু গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন অন্তত তিনটি প্রাণী মারা যায়। এর মধ্যে বেশির ভাগই সরীসৃপ ও উভচর প্রাণী।
লাউয়াছড়ায় সড়ক ও রেলপথে প্রাণীর মৃত্যু নিয়ে গবেষণা করে ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স। তাদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশ হয় ২০১৩ সালে। ১৪ মাসে তারা লাউয়াছড়ার ৫০৩টি প্রাণীর মরদেহ খুঁজে পায়। যেগুলো প্রাণ হারিয়েছে শুধু সড়ক দুর্ঘটনায়।
নিউজবাংলাকে এই দলের গবেষক শাহারিয়ার সিজার বলেন, ‘মৃত প্রাণীর বেশির ভাগেরই দেহ পাওয়া যায় না, কারণ শিয়ালসহ কিছু প্রাণী মরদেহগুলো খেয়ে ফেলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গবেষণা সাত বছর আগে হলেও এখনও সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এখনও প্রতিদিন গড়ে তিনটি প্রাণী মারা যাচ্ছে সড়ক ও রেলপথে।’
২০১৭-এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরা একই বিষয়ে একটি গবেষণা করেন। সেই দলের সদস্য মো. সালাহউদ্দীন বলেন, ‘আমরা এক দিনেই বনে ১৬৫টি প্রাণীর মরদেহ খুঁজে পেয়েছি।’
প্রাণীর মৃত্যুরোধে লাউয়াছড়ার বাইরে দিয়ে বিকল্প সড়ক ও রেলপথ তৈরির প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে বন্যপ্রাণী গবেষক তানভির আহমেদ বলেন, ‘তার আগে সড়কে ঘন স্পিড ব্রেকার তৈরি করতে হবে। রেললাইনের ওপর রশি দিয়ে তৈরি করা সেতুর কার্যকারিতাও পরীক্ষা করতে হবে।’
পর্যটকও যখন সমস্যা
লাউয়াছড়ার নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পর্যটন। ১৯৯৬ সালে এটিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পর থেকেই এখানে পর্যটক সমাগম বেড়েছে। দিনে পাঁচ হাজারের অধিক পর্যটকও ঢুকছেন বনটিতে। পর্যটকদের চাপেও বন ছেড়ে পালাচ্ছে প্রাণী। এ ছাড়া উদ্যানের আশপাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন রিসোর্টের উচ্চশব্দের কারণেও হুমকিতে পড়েছে এখানকার প্রাণীগুলো।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘উচ্চশব্দ ও আতঙ্কের কারণে বন্যপ্রাণীদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। অতিমাত্রায় পর্যটকদের উপস্থিতির কারণেও অনেক প্রাণী বন ছেড়ে চলে যায়।’
কী ভাবছে বন বিভাগ
উদ্যানে দুর্ঘটনায় প্রাণীর মৃত্যু ও শিকার ঠেকাতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন বিভাগীয় বন র্কমকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গাছ চুরির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। লাউয়াছড়া এবং আশপাশে মারা যাওয়া প্রাণীর ডাটাবেস সংরক্ষণ শুরু করেছি। লাউয়াছড়ার গেটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি।
‘পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট সীমানা করে দিতে এবং উদ্যানের ভেতর থেকে পর্যটন স্থান একপাশে সরিয়ে নিতে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। পর্যটকের চাপ কমিয়ে তাদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনারও চেষ্টা চলছে।’
এই বন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বনের ভেতর থেকে সড়ক সরানো এবং ট্রেনের গতি সীমিত করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। বনের উভয় পাশে দুটি চেকপোস্ট বসবে, যাতে বনের ভেতর গাড়ি প্রবেশ করলে তার গতি নিয়ন্ত্রিত থাকে।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
ঈদের ছুটিতে সিলেটে বেড়াতে এসে হেনস্তার শিকার হয়েছেন পর্যটকরা। একদিনের ব্যবধানে জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা ও কোম্পানীগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র থেকে পর্যটকদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুটি ক্ষেত্রেই পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও স্থানীয় একটি অংশের অভিযোগ, নির্বিঘ্নে চোরাচালান ও পাথর লুট করতেই পর্যটকদের বাধা দেয়া হচ্ছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে লুটপাট ও চোরাকারবারে সমস্যা হয়। তাই পর্যটকদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
অশ্লীলতার অভিযোগ এনে সোমবার রাতে মৌলভীবাজারের রাজনগরে “রাজনগর রিসোর্ট এন্ড কফি হাউজে” তালা দিয়েছে স্থানীয় একদল লোক। এসময় স্থানীয় থানার পুলিশ সদস্যদেরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি স্থান জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জ। সবসময়ই এই দুই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় থাকে। ঈদের মতো বড় ছুটিতে ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সীমান্তবর্তী এই দুই এলাকা দিয়েই ভারত থেকে দেদারছে চোরাই পণ্য আসে। এছাড়া এসব এলাকার পাথুরে নদী ও ছড়া থেকে পাথর লুটপাটও নিত্তকার ঘটনা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর চোরাচালান ও পাথর লুট অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রশাসনও লুটপাটকারী ও চোরাকারবারীদের ঠেকাতে পারছে না।
জানা যায়, ঈদের পরদিন রোববার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথুরে ছড়া উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করেন অনেক পর্যটক। বিকেলে সেখানে কিছু সংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোক জড়ো হয়ে পর্যটকদের বের করে দেয়। এ রকম একটি ভিডিও সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। জড়ো হওয়া যুবকরা পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা, মদ্যপান ও এলাকার পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পর্যটকদের বের করে দেয়ার একটি ভিডিওতে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, 'এই এলাকা আলিমদের এলাকা, দ্বীনদার এলাকা। কিন্তু এইখানে অনেকে অনেক পরিবেশে থেকে আসে। এসে মদ খায়, আরও অনেককিছু করে, এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই আমাদের আবেদন, আপনারা এখানে আর আসবেন না। তাছাড়া এটি পর্যটনভুক্ত এলাকাও নয়'।
ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎমাছড়াকে পর্যটন করা যাবে না। তাই আপনারা যারা এখানে এসেছেন দয়া করে এখান থেকে চলে যান। আপনারা এখানে থেকে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। এই এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা এখানে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করছি আজকের পর আপনারা এখানে আর কোনদিন আসবেন না’।
পর্যটকদের বের করে দেয়ার এই ভিডিও যুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ফেসবুকে লিখেন, ‘একদিকে চলবে পর্যটক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা অন্যদিকে পর্যটনে বাঁধা! দেশের ভেতরে সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মালিকানাধীন জায়গা ব্যতীত কোথাও জনসাধারণের প্রবেশে বাঁধা দেয়া মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। মানুষের চলাচলে বাঁধা প্রদান ও হুমকি প্রদান দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু সিলেটে এই অপরাধ ইতিপূর্বেও ঘটেছে।
কিম লিখেন, 'বছর কয়েক পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এক ঈদে মায়াবন নামে পরিচিত যুগীরকান্দি জলারবনে পর্যটকদের উপর হামলা করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওই বনে কোন পর্যটক আর পা রাখেনি। স্থানীয় মাদ্রাসা ওই জলার বনের মাছ ভোগ করে বলে এখানে পর্যটক আসুক তা চায় না। অশ্লীলতার দোহাই দিয়ে যুগীরকান্দি বন বা মায়াবন সবার দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। উতমাছড়ার পাথর লুটে ওই মাদ্রাসার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা জানা প্রয়োজন।'
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘উৎমাছড়ায় বেড়াতে যাওয়া জন্য নির্দিষ্ট কিংবা উপযুক্ত রাস্তা নেই। এ জন্য পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর মাড়িয়ে যাতায়াত করেন। এতে তারা অসুবিধায় পড়েন। বৈঠকে এমন দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় মাদক সেবন ও অশ্লীলতা হয়, এমনটিও দাবি করা হয়েছে’।
উৎমাছড়ায় পর্যটকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘এ অঞ্চলে এমন ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। বিষয়টি ইউএনওকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দেখছেন। ইউএনও জানার চেষ্টা করছেন, বিষয়টি কী?’
এদিকে, সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় কিছু লোক। হামলাকারীরা চোরাকারবারের সাথে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার বিকেলে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, স্থানীয় বখাটেরা পর্যটকদের ওপর হামলা করেছে। পরে সাংবাদিক ও ইউপি সদস্য মিলে ঘটনাস্থলেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান হয়ে গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকের ভুল ধারণা হয়েছে।’
নাফ নদীর ভাঙন যেন থামছেই না। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ায় প্রতিদিনই নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্ন। কিছুদিন আগেও যেখানে ছিল ঈদের প্রস্তুতি, হাসি-আনন্দে মুখর পরিবার—আজ সেখানে কান্না আর হাহাকার। প্রবল জোয়ার ও টানা বৃষ্টির তোড়ে শত শত পরিবার এখন আশ্রয়হীন, চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। বসতভিটা হারিয়ে কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ গাছতলায় কিংবা নদীর পাড়েই মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে।
‘নাফের পানি ও তুফানে আমার ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। ঈদের দিনেও কোরবানি দিতে পারিনি, ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনতে পারিনি। এর চেয়ে বড় কষ্ট কিছু হতে পারে না।’-বলেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা আবুল আলী। আলোকিত শহরের ঈদ আনন্দের বিপরীতে এই দ্বীপে নেই রান্নার হাঁড়ি, নেই নতুন জামার ঝলক, শুধু অসহায়ত্ব আর কান্নার সুর।
ভাঙনের মধ্যে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধের আহাজারি
বৃদ্ধ আবুল আলী, কাঁপা গলায় হাতের ইশারায় দেখালেন যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন, সেখানেই ছিল তার ছোট্ট ঘর। নাফের পানি একরাতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ঘর, চুলা, শোবার জায়গা, কিছুই নাই আর। কতবার ঘর তুলুম? আমাদের দেখার কেউ নাই। বারবার আশার বাণী শুনিয়েছেন প্রশাসন। কেউ আজো কিছু দেয়নি। তবে কিছু করবে এমন আশায় আছি।’
ঈদের রান্নাও থেমে গেছে
বৃদ্ধা চলেমা খাতুন বলেন, ‘নাফের পানি চুলোতে ঢুকে ভেঙ্গে গেছে। এখনো রান্না করতে পারি না। ঈদের দিনেও ছেলে-মেয়েদের মুখে ভাত দিতে পারি নাই। নতুন কাপড় তো দূরের কথা। কোরবানিও করা সম্ভব হয় নাই। সাহায্য আসলেও তা আমরা পাই না।’
শুধু আবুল আলী বা চলেমা খাতুনই নন, এমন গল্প আজ জালিয়াপাড়ার শত শত পরিবারের। ঈদের সময় যখন দেশের অন্যপ্রান্তে আনন্দে মুখর প্রতিটি বাড়ি, তখন এই দ্বীপে ঈদ মানে কষ্ট, ভাঙা ঘর, খালি পেট, আর ভেজা চোখ।
আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি—কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেই
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, বহুবার প্রশাসনের লোকজন এসেছেন, ছবি তুলেছেন, কথা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো সহায়তা তারা পাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন,
‘কেবল ছবি তুললে আর রিপোর্ট করলেই কি ঘর ফিরে পাই? আমরা তো বাস্তব সাহায্য চাই।’ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলছে নদীভাঙনের আতঙ্ক। শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর ভাঙন নতুন নয়। ২০১২ সালের ভয়াবহ সামুদ্রিক জোয়ারে এই দ্বীপের চারটি পাড়ার অনেক ঘরবাড়ি, মসজিদ, দোকান সাগরে বিলীন হয়ে যায়। নোনা পানি নষ্ট করে দেয় কৃষিজমি, নিশ্চিহ্ন হয় গ্রাম, গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। কিন্তু এত বড় অভিজ্ঞতার পরও দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২০২৫ সালের এই ঈদুল আজহার সময়, ইতিহাস যেন আবার নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে—আর এই পুনরাবৃত্তি শুধু কষ্টের, শুধু কান্নার। ধ্বংসের চিত্র এখনো স্পষ্ট জালিয়াপাড়ার বিভিন্ন স্থানে এখনো পড়ে আছে ভাঙা কাঠামো, উপড়ে যাওয়া গাছের শিকড়, পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ঘরের চিহ্ন। পথচারীদের চোখে-মুখে শোক, মুখে একটাই প্রশ্ন—‘এই ভাঙন কি আর থামবে না?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ায় যেসব বাংলাদেশি নাফ নদীর ভাঙনে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে তাদের তালিকা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার চন্দনা নদী থেকে মো. আসলাম প্রামানিক (৪২) নামে এক ইজিবাইক চালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে কালুখালী থানা পুলিশ।
বুধবার (১১ জুন) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের চন্দনা ব্রিজের নিচ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত আসলাম শেখ পাংশা উপজেলার চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং পিয়ার আলী প্রামানিকের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসলাম শেখ গত মঙ্গলবার ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাত পর্যন্ত তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। বুধবার সকালে স্থানীয়রা চন্দনা ব্রিজের নিচে একটি মরদেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে মরদেহটি আসলাম শেখের বলে শনাক্ত করেন।
এ বিষয়ে রাজবাড়ীর সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) দেবব্রত সরকার জানান, “প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আসলাম শেখকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।”
পুলিশ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছে।
সোমবার রাতে উপজেলার তারাবো এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, তারাবো সুলতানবাগ এলাকার দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সাবেক রূপগঞ্জ প্রতিনিধি মরহুম আবুল হাসান আসিফের ছেলে শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও অটোরিক্সা চালক অজ্ঞাত (৩৫)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাতে তারাবো বিশ্বরোড এলাকা থেকে অটোরিক্সা যোগে তারাবো সুলতানবাগ এলাকার বাড়িতে ফিরছিলেন শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও তার বন্ধু সায়মন (২৯), তামিম সরকার (২৯)। পথিমধ্যে সাইফিং ফ্যাক্টরীর সামনে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসের সাথে অটোরিক্সাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অটোরিক্সাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় অটোরিক্সা চালক অজ্ঞাত (৩৫) এবং আহত হয় অটোরিক্সার যাত্রী শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও তার বন্ধু সায়মন (২৯), তামিম সরকার (২৯)। তাদের মধ্যে শাহরিয়ার হাসান আকাশ ও তার বন্ধু তামিম সরকারকে গুরুত্বর আহত অবস্থায়
স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা শাহরিয়ার হাসান আকাশকে মৃত ঘোষনা করেন।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, দূর্ঘটনার পর হাইয়েস মাইক্রোবাসের চালক মাইক্রোবাসটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় নি।
শেরপুরের ঝিনাইগাতীর দুটি গুচ্ছগ্রাম - গোমড়া ও কান্দুলীর বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে কুরবানীর মাংস থেকে বঞ্চিত ছিল। গোমড়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা এক যুগ এবং কান্দুলী গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা গত ৬ বছর ধরে কুরবানীর মাংস পায়নি। তবে এবার ‘দৈনিক বাংলাদেশের খবর’ পত্রিকায় বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর স্থানীয় সংগঠন ও দাতাদের উদ্যোগে এই দুটি গ্রামের মানুষ কোরবানির মাংস পেয়েছে।
গোমড়া গুচ্ছগ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা আঙ্গুরী বেগম (৭০) বলেন, ‘১২ বছর ধরে আমরা কোরবানির মাংসের স্বাদ পাইনি। এবার রক্তসৈনিক ফাউন্ডেশন আমাদের জন্য গরু দিয়েছে। আল্লাহ তাদের ভালো রাখুন।’
গুচ্ছগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকার অনেক গরিব মানুষ আছে যারা কোরবানি দিতে পারে না। এই উদ্যোগ আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। আমরা সংগঠনটির কাছে কৃতজ্ঞ।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘গুচ্ছগ্রামের দুঃস্থ মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত ছিল। স্থানীয় সংগঠন ও দাতাদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা সামাজিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাজ করে সবাইকে কোরবানির মাংসের আওতায় আনার চেষ্টা করব। আমাদের বিভাগীয় কমিশনার স্যারও গোসত পাঠাচ্ছেন। যদি কোনো অসহায় মানুষ কোরবানির মাংস না পেয়ে থাকে, আমরা নিশ্চিত করব যেন তারা গোসত পায়।’
পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর রক্তসৈনিক বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন সংগঠনটি বিষয়টি নজরে নিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়। সংগঠনের সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া গোমড়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের জন্য একটি গরু কোরবানির ব্যবস্থা করেন।
অন্যদিকে কান্দুলী গুচ্ছগ্রামে শাহ অলি উল্লাহ ইসলাম সেন্টার বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে এবং অরফান শেল্টার ফাউন্ডেশন, যুক্তরাজ্যের আর্থিক সহায়তায় একটি গরু কোরবানি দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, গত ৬ বছর ধরে এই গ্রামে কুরবানীর মাংস বণ্টন হয়নি। এবার দাতাদের সহযোগিতায় গ্রামবাসী মাংস পেয়ে খুশি।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে ঝিনাইগাতীর দুটি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন পর কুরবানীর মাংস পেয়ে আনন্দিত। স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে আর কেউ যেন কুরবানীর মাংস থেকে বঞ্চিত না হয়।
মন্তব্য