আট বছরের স্কুলছাত্রী তানিশা। চোখে সমস্যা থাকায় তাকে ল্যাপটপ, মোবাইলের মতো ডিভাইস বেশি সময় ব্যবহার না করতে বলেছিলেন চিকিৎসক, তবে করোনাভাইরাস মহামারিতে চিকিৎসকের সে পরামর্শ মানতে পারেনি শিশুটি।
করোনায় তানিশার মতো খুদে শিক্ষার্থীদের দিনে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা অনলাইনে ক্লাসসহ স্কুল কার্যক্রমে অংশ নিতে হয়েছে। হোমওয়ার্ক ও অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে জমা দিতে হয়েছে অনলাইনেই। এ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে হেডফোন ব্যবহার করতে হয়েছে তাদের।
হেডফোনের এ ব্যবহার শিশুদের শ্রবণক্ষীণতা বাড়ার একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ডিভাইসটির অতি ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
গত বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটে যায় তানিশা। ওই সময় তার অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
তিনি বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস করার সময় কানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিক্ষকের কথা মনোযোগ সহকারে শুনতে হেডফোন ব্যবহার করার কারণে কানে সমস্যা বেড়েছে। কখনো কখনো মাথাব্যথা করে, চোখব্যথা করে।’
শুধু তানিশা নয়, দীর্ঘ সময় ধরে ক্লাসের কারণে হাজারো শিক্ষার্থীর এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা জানান, করোনা মাহামারি কারণে প্রায় দুই বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ সময়ে শিশুদের জীবন বদলে গেছে। বিশেষ করে অনলাইন পাঠদানের কারণে দীর্ঘসময় তাদের হেডফোনের ব্যবহার বেড়েছে।
নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন মানুষ ঘরবন্দি ছিল। অনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাসের কারণে ব্যাপকভাবে কানের ওপর প্রভাবে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত হেডফোন ব্যবহারের কারণে ক্লাসে অমনোযোগীও ছিলেন। ভারতের একটি গবেষণায় আরও উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।
‘গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত হেডফোন ব্যবহারের কারণে ভারতে ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনলাইনে ক্লাসে মনোযোগ ছিল না। এসব শিক্ষার্থীর ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তাদের মাথাব্যথা, চোখব্যথা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে আরও বেশি দৃশ্যমান হবে আরও কয়েক বছর পর। কারণ কানের সমস্যা মানুষ সঙ্গে সঙ্গে অনুভব করতে পারেন না। যখন গুরুতর হয়, তখন হাসপাতালে আসেন।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৩০টি কঠিন রোগের কারণ ১২ ধরনের দূষণ। এর মধ্যে শব্দদূষণ অন্যতম।
শব্দদূষণের কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি হৃৎস্পন্দনে পরিবর্তন, হৃৎপিণ্ডে ও মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যেতে পারে। শ্বাসকষ্ট, মাথাঘোরা, বমি বমি ভাব, দিক ভুলে যাওয়া, দেহের নিয়ন্ত্রণ হারানো, মানসিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা তৈরি করে এ দূষণ।
ডা. মনিলাল আইচ বলেন, ‘দেশে গড়ে ৩৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে কানের সমস্যায় রয়েছে। প্রতি তিনজনে একজন গড়ে কানে কম শোনে। এ ছাড়া যেসব কারণে শব্দদূষণ হচ্ছে, এটা কমাতে যেসব নীতিমালা করা হয়েছে, তার একটাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না, যার কারণে শব্দদূষণ বাড়ছে।’
২০১৭ সালের একটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে শব্দদূষণের দেশ হচ্ছে ঢাকা। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এটা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের কানের সমস্যা দেখা দেবে।’
জাতীয় নাক, কান ও গলা ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মানস রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘দেশে শ্রবণক্ষীণতার প্রধান কারণ শব্দদূষণ। শব্দের একটি গ্রহণযোগ্য মাত্রা রয়েছে। সাধারণত মানুষের ৮০ ডেসিবল শব্দ গ্রহণের সক্ষমতা রয়েছে।
‘এর চেয়ে বেশি পরিমাণ শব্দের মধ্যে মানুষ নিয়মিত কাজ করলে, কানে সমস্যা দেখা দেয়, কিন্তু রাজধানীসহ সারা দেশেই নগরায়নের প্রভাবে সবখানেই মাত্রাতিরিক্ত শব্দ সৃষ্টি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, দেশে অনেক মানুষ জন্মগত ও কানপাকা রোগের কারণে কানে কম শোনে। এ ছাড়া দেশে প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার শিশু জন্মগতভাবে শ্রবণ সমস্যা নিয়ে বেড়ে উঠছে, কিন্তু জাতীয়ভাবে এ সমস্যা শনাক্তে তেমন ব্যবস্থা না থাকায় অনেক পরে এটি প্রকাশ পাচ্ছে।
এ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, জাতীয়ভাবে জন্মের পরপর শিশুর শ্রবণ শনাক্তের ব্যবস্থা থাকলে এ সমস্যা অনেক কমে আসত। এ ছাড়া দেশে তরুণ সমাজের মধ্যে যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, বিশেষ করে কানে অনিয়ন্ত্রিত ইয়ার প্লাগ ব্যবহার বাড়ছে, তাতে করে ধীরে ধীরে শ্রবণক্ষীণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করেছে। সেখানে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া আছে, কিন্তু তার সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের।
বিশ্ব শ্রবণ দিবস-২০২২ উপলক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জীবনভর ভালো শ্রবণশক্তি বজায় রাখার উপায় হিসেবে নিরাপদ শ্রবণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
এর আগে ২০২১ সালে ডব্লিউএইচও শ্রবণ সংক্রান্ত বিশ্ব প্রতিবেদন চালু করে, যেখানে শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে থাকা মানুষের ক্রমবর্ধমান সংখ্যাকে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি উচ্চ শব্দ কমানোর ওপর গুরুত্বরোপ করা হয়।
ডব্লিউএইচও বলছে, কানের যত্নের মাধ্যমে সারা জীবন ভালো শ্রবণশক্তি পাওয়া সম্ভব; শ্রবণশক্তি কমার অনেক সাধারণ কারণ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
শব্দদূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সারা বিশ্বের মতো বৃহস্পতিবার দেশে পালন হচ্ছে বিশ্ব শ্রবণ দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপ্রাদ্য ‘টু হিয়ার ফর লাইফ, লিসেন উইথ কেয়ার!’ এর মানে দাঁড়ায়, ‘জীবনভর শুনুন, যত্নের সঙ্গে শুনুন’।
দেশে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে আরও ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ৭৩ জনে। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন করে করোনা আক্রান্ত ১০ জনসহ চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২৮ জনে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হওয়ায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ হাজার ৫১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতো ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত ৩ দিনে ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ জন। গত ২২ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত এই ৩ দিনে ১০ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, গত রোববার থেকে আমরা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর তথ্য সংগ্রহ করে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে প্রেরণ করেছি। তিনি জানান, আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত রোববার কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন, হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে ২ জন, রেডিয়াম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ২ জন, হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ২ জন ডেঙ্গুরোগী পাওয়া গেছে।
কাপাসিয়া উপজেলার সরকারি - বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই রক্ত পরীক্ষা করেছেন। রক্ত পরীক্ষার পর এক দিনে ৫ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। ২৩ জুন, সোমবার কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন, রেডিয়াম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১ জন, ইরাম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ১জনসহ মোট ৩ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। তাছাড়া গত মঙ্গলবার হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে ২ জন মহিলার রক্ত পরীক্ষার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে নতুন করে কারো মৃত্যু হয়নি। বুধবার (২৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৯ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।
দেশে এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ৬৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৯ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট ২৯ হাজার ৫১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এডিশ মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মুত্যৃর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরে ডেঙ্গু যেনো ভয়বহ রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২৬ জন। সবচেয়ে বেশি ১১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন বরিশাল বিভাগে। এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরিশাল বিভাগে ১১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৬ জন, খুলনা বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৯ জন, ময়মনসিংহে ৫ জন ও সিলেট বিভাগে একজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১৯ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭ হাজার ৭৪৯ জন। চলতি বছরের ২৫ জুন পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৮৭০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন মোট এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেন ৫৭৫ জন। এর আগের বছর ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। সোমবার (২৩ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় কারো মৃত্যু হয়নি। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৯৪ জন। আর চলতি সপ্তাহের এই কয়েকদিনে রোগটিতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
সোমবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। এ সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে আক্রান্ত হয় সর্বোচ্চ ১৫৭ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৯৪ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯২ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩০২ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুরুষ এবং ৫০ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮ হাজার ৫৪৪ জন। এর মধ্যে ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
বরিশাল বিভাগের বরগুনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধা রাবেয়া (১০০) মারা গেছেন। গতকাল সোমবার ভোরে তিনি বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ নিয়ে বিভাগে ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে বরগুনার বাসিন্দাই রয়েছে ৬ জন। এদিকে গত রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। একই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১২৯ জন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সোমবার ভোরে মৃত্যু হওয়া শতবর্ষী রাবেয়া বেগম বরগুনা সদরের বাসিন্দা। তাকে গত রোববার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
স্বাস্থ্য বিভাগে তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি হয়েছে। এছাড়া বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে ৮ জন।
পটুয়াখালী জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৭ জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, ভোলা সদর হাসপাতালে ৫ জন ভর্তি হয়েছে। পিরোজপুরে ১৬ জন ও বরগুনায় ৭৩। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ঝালকাঠিতে কেউ আক্রান্ত হয়নি।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশংকাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরুতে হবে। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশে-পাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে ঊর্ধ্বগতির আক্রান্তের হারের মধ্যে দেশে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (২২ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই মৃত্যু হয়। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৯২ জন।
সোমবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটি করপোরেশন ও বরিশাল বিভাগে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আর আক্রান্তের হারে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে নতুন করে মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৬ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৯২ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৬ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩০৬ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুরুষ এবং ৫০ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ শতাংশ নারী।
মন্তব্য