নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির বাড়ার পেছনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ মন্তব্য করে পদত্যাগ দাবি করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
দলটির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সাভার, বরিশাল, ভোলা, জামালপুর, ঝিনাইদহ, খাগড়াছড়ি , নাটোর, নীলফামারী ও পটুয়াখালীতে সমাবেশে এসব কথা বলেন বক্তারা। দ্রব্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
কর্মসূচিতে ছাত্রদল, যুবদলসহ বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। তবে সমাবেশে বিএনপির মিছিলে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এছাড়া পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ায় বিএনপির একাধিক কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
‘এমপি-মন্ত্রীরা চুরি করতে করতে দেশে দ্রব্যের দাম ঊর্ধ্বগতি’
বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের এমপি ও মন্ত্রীরা চুরি করতে করতে আজ দেশে সব দ্রব্যের দাম ঊর্ধ্বগতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন দেশে সুষ্ঠু কোনো নির্বাচন হবে না। তাদের ভোট ডাকাতি এখন দেশ ডাকাতিতে পরিণত হয়েছে।’
বরিশালের অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত এ সমাবেশে জেলার দশটি উপজেলার নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল আউয়াল মিন্টু সরকারের নানা সমালোচনা করেন।
সাধারণ মানুষ সরকারের নির্যাতনের শিকার বলেও দাবি করেন এই বিএনপি নেতা। এ সময় দলীয় নেতা-কর্মীদের সব অভ্যন্তরীণ ভুল বোঝাবুঝি ভুলে তারেক রহমানের ডাকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে একাট্টা হওয়ার আহবান জানান তিনি।
‘আওয়ামী লীগ জনগণের দুঃখ দেখে না, তাই দ্রব্যের দাম কমে না’
জামালপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক রুমীন ফারহানা এমপি বলেছেন, ‘সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা জড়িত। তারা সিন্ডিকেটের কাছ থেকে টাকা পেয়ে দেশের বাইরে সম্পত্তি বানাচ্ছে। এই সরকার জনগণের সরকার না, জনগনের দুঃখ সরকার দেখে না; তাই দ্রব্যমূল্যের দাম কমে না।’
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে ছিল দাবি করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।’
জেলা শহরের শফি মিয়ার বাজার মোড় এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কেটে দেশের বাইরে অঢেল সম্পদ বানাচ্ছে। এই অঢেল সম্পদের হিসাব বিএনপির কাছেও আছে। কড়ায় গন্ডায় সেই হিসাব নেয়া হবে।’
এবারের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করবে দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকার আরও ৫৫০ জনের তালিকা করেছে। যারা দেশে খুন ও গুমের সঙ্গে জড়িত। জনগণ তাদেরকে ছাড় দিবে না। এবারের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করবে। বিএনপির জয়লাভের পরই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে।’
সমাবেশে বক্তারা চাল, ডাল, তেল ও গ্যাসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে টিসিবির মাধ্যমে সহনীয় মূল্যে গ্রাম ও শহরে মানুষের মধ্যে পণ্য সরবরাহের দাবি জানান। দ্রুত দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
সমাবেশে ছাত্রদল, যুবদলসহ বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের হাজারো নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে না পারলে ক্ষমতা ছাড়ুন’
চাল, ডাল, তেল, গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে না পারলে ক্ষমতা সরকারকে ক্ষমতা ছাড়ার আহবান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণ করে। তা রোধ করতে না পারলে সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দিক।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে ফেরেশতা দিয়েও যদি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়, তবু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। জনগণের দাবির মুখে এই কমিশন পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে।’
‘আপনারা নিশ্চিত থাকেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বিএনপি আগামীতে কোনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।’
‘নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো কমিশনের নির্বাচনে যাবে না বিএনপি’
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো সরকার মনোনীত নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম।
খাগড়াছড়িতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দলটি নির্বাচনে যাবে।’
সমাবেশে খাগড়াছড়ি বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়ার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. শরীফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম রাশেদ খানসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলা নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, ‘অবৈধ পথে ক্ষমতায় আসা সরকার দেশের কোনো কিছুর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না। যার প্রভাব পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ঘাড়ে। দেশের মানুষ অনাহারে মরছে আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নিজেদের আখাড় গুছিয়ে নিচ্ছে। নিত্য পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট। তাই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকার পতনের আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে।
‘সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে’
নীলফামারীতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভুইয়া বলেন, ‘সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কোনো দিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তাই অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’
শহরের পৌর বাজারে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন। বলেন, ‘আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা তার মুক্তি চাই।’
‘ব্যবসায়ীদের দিয়ে জনগণের পকেট কাটছে সরকার’
সরকার ব্যবসায়ীদের দিয়ে জনগণের পকেট কাটছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ শামছুল আলম।
ভোলা জেলা বিএনপিরর আয়োজনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রধান অতিথিত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। এদিন সমাবেশে পুলিশের উপস্থিত ছিলো চোখে পড়ার মতো।
শামছুল আলম বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বাজার ব্যবস্থার উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। গরীব-দুঃখী মানুষদের শেষ করে দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের দিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগনের পকেট কাটছে।’
‘তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহনে ভাড়া বেড়েছে, পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বেড়েছে। এর ফলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।’
দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘চাল, ডাল, তেলের দাম কমান, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম কমান। জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করেন।’
পুলিশের ওপর বিএনপিকর্মীদের ইট-পাটকেল, আটক ২
সাভারে বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়লে লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। আটক করা হয় বিএনপির দুই কর্মীকে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করলে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আটক দুজনের বিস্তারিত পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
ঢাকা জেলা বিএনপির সহ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল আলম জানান, ঢাকা জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশ উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন বাবুর ব্যাংক কলোনির বাসায় জড়ো হতে থাকেন। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ও বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীও সেখানে উপস্থিত হন।
সমাবেশ শেষে নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা এলাকায় গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বিএনপিকর্মীরা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়লে লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাঈনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহাসড়কে বিনা অনুমতিতে সমাবেশ করার চেষ্টা করা হয়। আমরা তাদের অনুমতির কথা বললে আকস্মিকভাবে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। নাশকতামূলক কাজ করার চেষ্টা করা হয়।’
মিছিলে ছাত্রলীগ যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের ‘হামলা’
পটুয়াখালীতে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এতে বিএনপির অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মজিবুর রহমান টোটন।
তিনি বলেন, ‘সকালে বিএনপির একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিএনপির বনানী রোডের কার্যালয় থেকে সরকারী কলেজের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশের বাধার মুখে পরে। পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার পর মিছিলটি নিয়ে বনানী চত্বরে আসে।’
‘এ সময় উল্টো দিক থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নামধারী সন্ত্রাসীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে বিএনপির অন্তত ৫০ নেতা-কর্মী আহত হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় একটি মোটরসাইকেল। আওয়ামী লীগের সঙ্গে উপস্থিত পুলিশও আমাদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হামলায় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সফিউল বাশার উজ্জল, সদর থানা ছাত্রদলের আহবায়ক জাকারিয়া আহম্মেদ, দেলোয়ার হোসেন, কাজী মাহাবুব আলম, মীর মাকসুদুর রহমান, বশির উদ্দিন, মোস্তফা, নুরুজ্জামান, মশিউর রহমান মিলনসহ অনেকে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।’
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সফিউল বাশার উজ্জল বলেন, ‘কর্মসূচীতে আওয়ামী লীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এতে আমার হাত ভেঙে যায়। ঘটনাস্থালে উপস্থিত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে আমাদের পেটায়।’
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিএনপির লোকজন মিছিল নিয়ে বনানী চত্বরে এলে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাদেরকে ধাওয়া করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। এ সময় বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিাতি শান্ত করে।
জেলা সেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রিফাত হাসান সজীব বলেন, ‘যে কোনো ই্যসুতে বিএনপি নাটক করে আসছে। বিগত দিন থেকেই নিজেদের দ্বন্দ্ব আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। আজকের ঘটনায় আমরা দায়ী নয়।’
এ বিষয়ে নদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জনগণের জানমাল রক্ষায় ও তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের এনেছে পুলিশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।’
হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কে বা কারা হামলা করেছে, সে বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া বিএনপির কেউ আহত হয়েছে কিনা তাও বলতে পারব না। আমাদের কাছে এমন কোনো খবর নাই।’
এছাড়া লক্ষ্মীপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ আরও কিছু জেলায় এ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এসব সমাবেশেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকারকে দায়ী করে নানা সমালোচনা করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো সরকার মনোনীত নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথাও বলেছেন তারা।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আটক রেখে ধর্ষণ মামলায় আ: সালাম (৩৮) নামে এক আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আ: সালাম সদর উপজেলার বর্ষাইল মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম ওই শিক্ষার্থীর পরিবার পত্নীতলা উপজেলায় ভাড়া থাকতেন। ভাঙ্গারী ব্যবসার সুবাদে আসামী আ: সালামও পাশাপাশি একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে আ: সালাম বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিতো এবং রাস্তাঘাটে বিরক্ত করতো। বিষয়টি জানাজানি হলে আসামী আ: সালাম ওই ভিকটিমের পরিবারকে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখাতো। এরই একপর্যায়ে ২০২২ সালের ১১ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে আসামী আ: সালাম একটি বাজার এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নওগাঁ সদর উপজেলার ভবানীপুর দক্ষিন পাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ভাড়া বাড়িতে আটক রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা পত্নীতলা থানায় অভিযোগ করলে র্যাব ওই বাড়ি থেকে আসামিকে গ্রেফতার ও মেয়েকে উদ্ধার করে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামী আ: সালামসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ আ: সালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। বাকি আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলার এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী ফাহমিদা কুলসুম উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের বালুকাপাড়া গ্রামে রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় তাকে বিয়ে করায় এক দম্পতিকে দেড় বছর ধরে 'সমাজচ্যুত' করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে নালিশ দেওয়ার জের ধরে পেটানো হয় দিনমজুর আব্দুল জলিল প্রামানিককে। প্রতিপক্ষের লোকজনের মারধরে এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে গেছে।
এঘটনায় তিনি একটি থানায় অভিযোগ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে সেটি মামলাটি হিসেবে রের্কড করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
সরেজমিনে বালুকাপাড়া গ্রামে গিয়ে আব্দুল জলিলকে ১৮ মাস ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার তথ্য জানা গেছে। আব্দুল জলিলের সমাজচ্যুত করার ঘটনাটি স্থানীয় রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশীদ মন্ডলও অবগত আছেন। তিনি দুই পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকেও সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি।
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের কারণে আব্দুল জলিল প্রামানিক রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দেন। এঘটনার ২৯ দিন পর তিনি আবারও স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গ্রাম্য মাতব্বরেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল জলিল প্রামানিকের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখেন। সেই সময় জলিল প্রামানিক বিষয়টি আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে জানান। ইউএনও রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মণ্ডলকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। ইউপি চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। তবে কার্যত কোন কোনো সমাধান করতে পারেননি। এতে গ্রাম্য মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন। সমাজচ্যুত করে রাখা আব্দুল জলিল গত ১৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে গ্রামের মসজিদের দিকে রওনা হন। এসময় মাতব্বরেরা তাকে দুই দফায় প্রচন্ড মারধর করেন। এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে যায়। তিনি চিকিৎসা নিয়ে থানায় আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
বালুকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেড় বছর আগে আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। কয়েক দিন পর আবার সংসার শুরু করেন। এনিয়ে গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিল প্রামানিককে সমাজচ্যুত করেন। এনিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বৃদ্ধা লুৎফন নেছা বলেন, আমি কাজ করতে পারিনি। আব্দুল জলিলের বউ আমার বাড়িতে এসে জবাই করা মুরগির তরকারি রান্না করে দিয়েছিল। আমি জলিলের বাড়িতে গিয়ে এক বাটি মুরগির মাংসের তরকারি দিয়ে এসেছি। এতে আমাকেও সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল।
বালুকাপাড়া গ্রামের মোড়ের দোকানি হাফিজার রহমান বলেন, বউকে তালাক দেওয়ার ঘটনায় আব্দুল জলিল প্রামানিককে গ্রামের মাতব্বরেরা সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল গ্রামের সামাজিক কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেয় না।
আব্দুল জলিল প্রামানিক বলেন, আমি রাগের মাথায় স্ত্রী তালাক দিয়েছিলাম। ২৯ দিন পর আবার বিয়ে পড়ে নিয়েছি। একারণে গ্রামের মাতব্বর রকি খান, মিল্টন খাঁ, আবু সুফিয়ানসহ আরও ১০-১২ জন আমাকে সমাজচ্যুত করেছেন। রাগের মাথায় স্ত্রীক। তালাক দিলে পুনরায় বিয়ে করা যাবে ঢাকার একজন মুফতির মতামত নিয়ে আসার পরও তারা মানেনি। তারা বলছে হিল্লা বিয়ে ছাড়া আমার বিয়ে বৈধ হবে না। তারা আমাকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে গ্রামের মসজিদে নামাজ আদায়ে করতে ও জানাজায় শরিক হতে বা দেননি। মিলাদ মাহফিল দাওয়াত দেওয়ার মাতব্বরদের চাপে পর ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি গ্রামের কারও জমিতে দিনমজুরি কাজও করতে পারব না বলে লোকজন জানিয়ে দেন। একারণে কেউ আমাকে কাজে নেয় না। সমাজচ্যুত করার জের ধরে মসজিদে যাওয়ার সময় মাতব্বরদের একাংশের লোকজন আমাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছেন।
গ্রামের মাতব্বদের একজন মো. মিল্টন খাঁ। তিনি আব্দুল জলিলের দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি। তাকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কাজ করেছেন। একারণে গ্রামের লোকজন তাকে সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কি কাজ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আবার স্ত্রীকে নিয়েছেন। এটা সমাজ বিরোধী কাজ।
আক্কেলপুর রায়কালী ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মন্ডল বলেন, আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। এঘটনায় গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলকে সমাজচ্যুত করেন। আব্দুল জলিল ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। ইউএনও স্যার আমাকে ঘটনাটি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছি। আব্দুল জলিল যেন সামাজিকভাবে মিশতে পারে সেটি বলেছি। সমাজচ্যুতের ঘটনার জের ধরে আব্দুল জলিলকে মারধর করা হয়েছে। এতে তার বাম হাত ভেঙেছে বলে জেনেছি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল জলিল প্রামানিক থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেটি মামলা হিসেবে রের্কড করা হয়েছে। আসামি আট জনের মধ্যে ইতিমধ্যে আদালত থেকে পাঁচজন আসামি জামিন নিয়েছেন, অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
মন্তব্য