নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির বাড়ার পেছনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ মন্তব্য করে পদত্যাগ দাবি করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
দলটির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সাভার, বরিশাল, ভোলা, জামালপুর, ঝিনাইদহ, খাগড়াছড়ি , নাটোর, নীলফামারী ও পটুয়াখালীতে সমাবেশে এসব কথা বলেন বক্তারা। দ্রব্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
কর্মসূচিতে ছাত্রদল, যুবদলসহ বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। তবে সমাবেশে বিএনপির মিছিলে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এছাড়া পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ায় বিএনপির একাধিক কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
‘এমপি-মন্ত্রীরা চুরি করতে করতে দেশে দ্রব্যের দাম ঊর্ধ্বগতি’
বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের এমপি ও মন্ত্রীরা চুরি করতে করতে আজ দেশে সব দ্রব্যের দাম ঊর্ধ্বগতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন দেশে সুষ্ঠু কোনো নির্বাচন হবে না। তাদের ভোট ডাকাতি এখন দেশ ডাকাতিতে পরিণত হয়েছে।’
বরিশালের অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত এ সমাবেশে জেলার দশটি উপজেলার নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল আউয়াল মিন্টু সরকারের নানা সমালোচনা করেন।
সাধারণ মানুষ সরকারের নির্যাতনের শিকার বলেও দাবি করেন এই বিএনপি নেতা। এ সময় দলীয় নেতা-কর্মীদের সব অভ্যন্তরীণ ভুল বোঝাবুঝি ভুলে তারেক রহমানের ডাকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে একাট্টা হওয়ার আহবান জানান তিনি।
‘আওয়ামী লীগ জনগণের দুঃখ দেখে না, তাই দ্রব্যের দাম কমে না’
জামালপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক রুমীন ফারহানা এমপি বলেছেন, ‘সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা জড়িত। তারা সিন্ডিকেটের কাছ থেকে টাকা পেয়ে দেশের বাইরে সম্পত্তি বানাচ্ছে। এই সরকার জনগণের সরকার না, জনগনের দুঃখ সরকার দেখে না; তাই দ্রব্যমূল্যের দাম কমে না।’
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে ছিল দাবি করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।’
জেলা শহরের শফি মিয়ার বাজার মোড় এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কেটে দেশের বাইরে অঢেল সম্পদ বানাচ্ছে। এই অঢেল সম্পদের হিসাব বিএনপির কাছেও আছে। কড়ায় গন্ডায় সেই হিসাব নেয়া হবে।’
এবারের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করবে দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকার আরও ৫৫০ জনের তালিকা করেছে। যারা দেশে খুন ও গুমের সঙ্গে জড়িত। জনগণ তাদেরকে ছাড় দিবে না। এবারের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করবে। বিএনপির জয়লাভের পরই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে।’
সমাবেশে বক্তারা চাল, ডাল, তেল ও গ্যাসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে টিসিবির মাধ্যমে সহনীয় মূল্যে গ্রাম ও শহরে মানুষের মধ্যে পণ্য সরবরাহের দাবি জানান। দ্রুত দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
সমাবেশে ছাত্রদল, যুবদলসহ বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের হাজারো নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে না পারলে ক্ষমতা ছাড়ুন’
চাল, ডাল, তেল, গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে না পারলে ক্ষমতা সরকারকে ক্ষমতা ছাড়ার আহবান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণ করে। তা রোধ করতে না পারলে সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দিক।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে ফেরেশতা দিয়েও যদি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়, তবু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। জনগণের দাবির মুখে এই কমিশন পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে।’
‘আপনারা নিশ্চিত থাকেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বিএনপি আগামীতে কোনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।’
‘নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো কমিশনের নির্বাচনে যাবে না বিএনপি’
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো সরকার মনোনীত নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম।
খাগড়াছড়িতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দলটি নির্বাচনে যাবে।’
সমাবেশে খাগড়াছড়ি বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়ার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. শরীফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম রাশেদ খানসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলা নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, ‘অবৈধ পথে ক্ষমতায় আসা সরকার দেশের কোনো কিছুর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না। যার প্রভাব পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ঘাড়ে। দেশের মানুষ অনাহারে মরছে আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নিজেদের আখাড় গুছিয়ে নিচ্ছে। নিত্য পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট। তাই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকার পতনের আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে।
‘সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে’
নীলফামারীতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভুইয়া বলেন, ‘সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কোনো দিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তাই অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’
শহরের পৌর বাজারে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন। বলেন, ‘আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা তার মুক্তি চাই।’
‘ব্যবসায়ীদের দিয়ে জনগণের পকেট কাটছে সরকার’
সরকার ব্যবসায়ীদের দিয়ে জনগণের পকেট কাটছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ শামছুল আলম।
ভোলা জেলা বিএনপিরর আয়োজনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রধান অতিথিত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। এদিন সমাবেশে পুলিশের উপস্থিত ছিলো চোখে পড়ার মতো।
শামছুল আলম বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বাজার ব্যবস্থার উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। গরীব-দুঃখী মানুষদের শেষ করে দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের দিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগনের পকেট কাটছে।’
‘তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহনে ভাড়া বেড়েছে, পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বেড়েছে। এর ফলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।’
দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘চাল, ডাল, তেলের দাম কমান, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম কমান। জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করেন।’
পুলিশের ওপর বিএনপিকর্মীদের ইট-পাটকেল, আটক ২
সাভারে বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়লে লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। আটক করা হয় বিএনপির দুই কর্মীকে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করলে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আটক দুজনের বিস্তারিত পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
ঢাকা জেলা বিএনপির সহ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল আলম জানান, ঢাকা জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশ উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন বাবুর ব্যাংক কলোনির বাসায় জড়ো হতে থাকেন। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ও বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীও সেখানে উপস্থিত হন।
সমাবেশ শেষে নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা এলাকায় গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বিএনপিকর্মীরা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়লে লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাঈনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহাসড়কে বিনা অনুমতিতে সমাবেশ করার চেষ্টা করা হয়। আমরা তাদের অনুমতির কথা বললে আকস্মিকভাবে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। নাশকতামূলক কাজ করার চেষ্টা করা হয়।’
মিছিলে ছাত্রলীগ যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের ‘হামলা’
পটুয়াখালীতে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এতে বিএনপির অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মজিবুর রহমান টোটন।
তিনি বলেন, ‘সকালে বিএনপির একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিএনপির বনানী রোডের কার্যালয় থেকে সরকারী কলেজের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশের বাধার মুখে পরে। পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার পর মিছিলটি নিয়ে বনানী চত্বরে আসে।’
‘এ সময় উল্টো দিক থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নামধারী সন্ত্রাসীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে বিএনপির অন্তত ৫০ নেতা-কর্মী আহত হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় একটি মোটরসাইকেল। আওয়ামী লীগের সঙ্গে উপস্থিত পুলিশও আমাদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হামলায় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সফিউল বাশার উজ্জল, সদর থানা ছাত্রদলের আহবায়ক জাকারিয়া আহম্মেদ, দেলোয়ার হোসেন, কাজী মাহাবুব আলম, মীর মাকসুদুর রহমান, বশির উদ্দিন, মোস্তফা, নুরুজ্জামান, মশিউর রহমান মিলনসহ অনেকে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।’
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সফিউল বাশার উজ্জল বলেন, ‘কর্মসূচীতে আওয়ামী লীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এতে আমার হাত ভেঙে যায়। ঘটনাস্থালে উপস্থিত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে আমাদের পেটায়।’
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিএনপির লোকজন মিছিল নিয়ে বনানী চত্বরে এলে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাদেরকে ধাওয়া করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। এ সময় বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিাতি শান্ত করে।
জেলা সেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রিফাত হাসান সজীব বলেন, ‘যে কোনো ই্যসুতে বিএনপি নাটক করে আসছে। বিগত দিন থেকেই নিজেদের দ্বন্দ্ব আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। আজকের ঘটনায় আমরা দায়ী নয়।’
এ বিষয়ে নদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জনগণের জানমাল রক্ষায় ও তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের এনেছে পুলিশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।’
হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কে বা কারা হামলা করেছে, সে বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া বিএনপির কেউ আহত হয়েছে কিনা তাও বলতে পারব না। আমাদের কাছে এমন কোনো খবর নাই।’
এছাড়া লক্ষ্মীপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ আরও কিছু জেলায় এ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এসব সমাবেশেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকারকে দায়ী করে নানা সমালোচনা করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো সরকার মনোনীত নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথাও বলেছেন তারা।
আরও পড়ুন:পালকি ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও একই অবস্থা ছিল। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি রূপগঞ্জে আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই গ্রাম ঘুরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে বর কিংবা মান্যগন্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম যাত্রা করেছে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভুপেন হাজারিকার মাদল তালে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে পালকি চলে.....আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে। রবি ঠাকুরের ‘বীর পুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের সাথে লড়ে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারে না, ভাগ্যেস খোকা ছিল তার সঙ্গে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিকে আর বলে না, আর কটাঁ দিন থাক না দিদি, কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনা ও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর পালকি বহরের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। এক সময় গ্রাম-বাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেতেন বরের লোকজন। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। ছয়জন মিলে পালকি বহন করতো। সামনে পেছনে দুজন ও মাঝখানে দুজন করে পালকি কাঁদে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার পর বর-কনেকে এক সঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসতো।
আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সঙ্গে ফরাসি থেকেও। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর স্মৃতি কথায় এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত এ পালকি এখন বিভিন্ন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নব বর-বধুদের আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার এ যুগে প্রাইভেটকার, নোহা, বাস ও মাইক্রোবাস। হালের লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন। এসব যানের রমরমা ব্যবসাও এ কারণেই জমে ওঠেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর যাত্রা গিয়েছেন সফিক মিয়া। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা তখন পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছড়ায় বলা হতো বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! সোনার বরনী কন্যা এখন আর পালকিবদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলের সাজানো এয়ারকন্ডিশন গাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন (৩৮) মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন- বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ট্রাকের হেল্পার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল। কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন।অপরদিক পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাৎক্ষিনক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাক চালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন— শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম—পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।
দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম—পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
ঈদের ছুটিতে সিলেটে বেড়াতে এসে হেনস্তার শিকার হয়েছেন পর্যটকরা। একদিনের ব্যবধানে জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা ও কোম্পানীগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র থেকে পর্যটকদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুটি ক্ষেত্রেই পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও স্থানীয় একটি অংশের অভিযোগ, নির্বিঘ্নে চোরাচালান ও পাথর লুট করতেই পর্যটকদের বাধা দেয়া হচ্ছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে লুটপাট ও চোরাকারবারে সমস্যা হয়। তাই পর্যটকদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
অশ্লীলতার অভিযোগ এনে সোমবার রাতে মৌলভীবাজারের রাজনগরে “রাজনগর রিসোর্ট এন্ড কফি হাউজে” তালা দিয়েছে স্থানীয় একদল লোক। এসময় স্থানীয় থানার পুলিশ সদস্যদেরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি স্থান জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জ। সবসময়ই এই দুই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় থাকে। ঈদের মতো বড় ছুটিতে ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সীমান্তবর্তী এই দুই এলাকা দিয়েই ভারত থেকে দেদারছে চোরাই পণ্য আসে। এছাড়া এসব এলাকার পাথুরে নদী ও ছড়া থেকে পাথর লুটপাটও নিত্তকার ঘটনা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর চোরাচালান ও পাথর লুট অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রশাসনও লুটপাটকারী ও চোরাকারবারীদের ঠেকাতে পারছে না।
জানা যায়, ঈদের পরদিন রোববার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথুরে ছড়া উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করেন অনেক পর্যটক। বিকেলে সেখানে কিছু সংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোক জড়ো হয়ে পর্যটকদের বের করে দেয়। এ রকম একটি ভিডিও সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। জড়ো হওয়া যুবকরা পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা, মদ্যপান ও এলাকার পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পর্যটকদের বের করে দেয়ার একটি ভিডিওতে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, 'এই এলাকা আলিমদের এলাকা, দ্বীনদার এলাকা। কিন্তু এইখানে অনেকে অনেক পরিবেশে থেকে আসে। এসে মদ খায়, আরও অনেককিছু করে, এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই আমাদের আবেদন, আপনারা এখানে আর আসবেন না। তাছাড়া এটি পর্যটনভুক্ত এলাকাও নয়'।
ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎমাছড়াকে পর্যটন করা যাবে না। তাই আপনারা যারা এখানে এসেছেন দয়া করে এখান থেকে চলে যান। আপনারা এখানে থেকে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। এই এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা এখানে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করছি আজকের পর আপনারা এখানে আর কোনদিন আসবেন না’।
পর্যটকদের বের করে দেয়ার এই ভিডিও যুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ফেসবুকে লিখেন, ‘একদিকে চলবে পর্যটক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা অন্যদিকে পর্যটনে বাঁধা! দেশের ভেতরে সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মালিকানাধীন জায়গা ব্যতীত কোথাও জনসাধারণের প্রবেশে বাঁধা দেয়া মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। মানুষের চলাচলে বাঁধা প্রদান ও হুমকি প্রদান দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু সিলেটে এই অপরাধ ইতিপূর্বেও ঘটেছে।
কিম লিখেন, 'বছর কয়েক পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এক ঈদে মায়াবন নামে পরিচিত যুগীরকান্দি জলারবনে পর্যটকদের উপর হামলা করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওই বনে কোন পর্যটক আর পা রাখেনি। স্থানীয় মাদ্রাসা ওই জলার বনের মাছ ভোগ করে বলে এখানে পর্যটক আসুক তা চায় না। অশ্লীলতার দোহাই দিয়ে যুগীরকান্দি বন বা মায়াবন সবার দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। উতমাছড়ার পাথর লুটে ওই মাদ্রাসার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা জানা প্রয়োজন।'
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘উৎমাছড়ায় বেড়াতে যাওয়া জন্য নির্দিষ্ট কিংবা উপযুক্ত রাস্তা নেই। এ জন্য পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর মাড়িয়ে যাতায়াত করেন। এতে তারা অসুবিধায় পড়েন। বৈঠকে এমন দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় মাদক সেবন ও অশ্লীলতা হয়, এমনটিও দাবি করা হয়েছে’।
উৎমাছড়ায় পর্যটকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘এ অঞ্চলে এমন ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। বিষয়টি ইউএনওকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দেখছেন। ইউএনও জানার চেষ্টা করছেন, বিষয়টি কী?’
এদিকে, সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় কিছু লোক। হামলাকারীরা চোরাকারবারের সাথে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার বিকেলে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, স্থানীয় বখাটেরা পর্যটকদের ওপর হামলা করেছে। পরে সাংবাদিক ও ইউপি সদস্য মিলে ঘটনাস্থলেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান হয়ে গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকের ভুল ধারণা হয়েছে।’
মন্তব্য