খেলাপি কমাতে ঋণ পরিশোধের জন্য নানা সুবিধা দিয়েও লাগাম টানতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উল্টো বেড়েই চলছে খেলাপির পরিমাণ। ।
সব মিলিয়ে এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকার বেশি। শতকরা হিসেবে মোট ঋণের প্রায় ৮ শতাংশ।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
সে হিসেবে গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৯৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
সেপ্টেম্বর শেষে মোট ঋণ স্থিতি ছিল ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।
গত বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ১৩ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ৩ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা।
এর আগে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ৬ হাজার ৮০২ কোটি টাকা।
নতুন যে খেলাপি ঋণ বেড়েছে, তার মধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকে, সরকারি ব্যাংকে বেড়েছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই পরিমাণ বাড়ার কারণে সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণকে ছাপিয়ে গেল বেসরকারি ব্যাংক।
তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তুলনায় সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার তিন গুণেরও বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকে যত ঋণ বিতরণ হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশই খেলাপি হয়ে আছে। আর এক বছরে অনেকটা বাড়লেও বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপির হার ৫ শতাংশের কিছু বেশি।
এই এক বছরে সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতির অবনতি হলেও বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এই ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে পেরেছে।
খেলাপি ঋণ কমাতে নানা সুবিধা
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও না বাড়ার ঘোষণা দিয়ে ঋণ নিয়মিতকরণ করতে নানা সুবিধা ঘোষণা করেন।
২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নিয়মিত করার সুবিধা দেয়া হয় শুরুতে। এতে কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত হয়।
২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর কিস্তি না দিয়েও খেলাপিমুক্ত থাকার সুবিধা দেয় হয়। পুরো বছরই চালু থাকে এই সুবিধা।
২০২১ সালের শুরুতে কিস্তি না দিয়ে খেলাপিমুক্ত থাকার ঢালাও সুবিধা কিছুটা কমানো হয়। সে বছর নানা সময় কিস্তিুর একাংশ জমা রাখলেই খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ দেয়া হয়।
প্রথমে বলা হয়, ডিসেম্বরের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে ঋণের ২৫ শতাংশ পরিশোধ করেই খেলাপি হবেন না গ্রাহক। তবে করোনার সময় ব্যবসা বাণিজ্যের সমস্যার কথা বলে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে জমা করার পরিমাণ কমানো হয়।
সবশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণের কিস্তির ১৫ শতাংশ জমা দিলে খেলাপি না করার নির্দেশনা ছিল, যার মেয়াদ গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হলেও চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ সুবিধা আরও ২০ দিন মৌখিকভাবে বাড়িয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
খেলাপির হার সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে
২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ও বেসিকে এ ছয় ব্যাংক মোট ঋণ বিতরণ করে ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ১৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।
এক বছরে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ছিল ৪২ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। ওই সময় বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
টাকার অঙ্কে সরকারি ব্যাংককে ছাপিয়ে গেল বেসরকারি ব্যাংক
বেসরকারি ব্যাংকগুলো গত বছর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ৭০ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৫১ হাজার ৫২০ কোটি টাকা এই লাফ দেয়ায় এখন সরকারি ব্যাংকের তুলনায় বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ টাকার অঙ্কে বেশি।
তবে শতকরা হারের দিক দিয়ে এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সরকারি ব্যাংকের তুলনায় কম। মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ খেলাপি হয়ে আছে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৪০ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা।
বিশেষায়িত তিন ব্যাংক
বিশেষায়িত কৃষি, প্রবাসীকল্যাণ ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন এ তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ হয়েছে ৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এ অঙ্ক তাদের বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ০২ শতাংশ। তারা বিতরণ করেছে মোট ৩৩ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা।
আগের বছর এই ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ছিল ৪ হাজার ৬২ কোটি। অর্থাৎ এই ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
বিদেশি নয় ব্যাংক
বিদেশি মালিকানার নয় ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।
বিদেশি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ হয় ৬৪ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা।
আগের বছর এই নয় ব্যাংকে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ছিল ২ হাজার ৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই এক বছরে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৫৩ কোটি টাকা বা ৩৭ শতাংশ।
আরও পড়ুন:বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার দপ্তরে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী বলেন, নেপালে ১১টি জুট মিল রয়েছে। নেপালের জুট মিলগুলো তাদের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট আমদানির ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ করায় মিলগুলো কিছুটা সমস্যায় পড়েছে। এ সময় তিনি বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট রপ্তানির অনুমতি শিথিল করার আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানান।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে বাংলাদেশের পাটপণ্য ও কাঁচাপাটের চাহিদা রয়েছে। কাঁচাপাট রপ্তানি না করে বাংলাদেশ সেমি-ফিনিশড (আধা-প্রক্রিয়াজাত) পাটপণ্য রপ্তানি করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ উচ্চমানের ও পরিবেশবান্ধব সেমি-ফিনিশড পাটপণ্য উৎপাদন করছে। নেপাল এই পণ্যগুলো আমদানি করলে দুই দেশের বাণিজ্য ভলিউম বাড়বে এবং উভয় দেশই লাভবান হবে।
চীনা কোম্পানি অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেড চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে উচ্চ মানসম্পন্ন গার্মেন্ট উৎপাদনকারী একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে ১৯.৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।
এ লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেপজা কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এবং অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেনের উপস্থিতিতে বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ তৌফিকুল আহসান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বেপজার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই প্রতিষ্ঠানটি বার্ষিক ৩০ লাখ পিস স্কি, স্নো স্পোর্টস, হান্টিং ও মোটর রাইডার গিয়ার, ইনসুলেটেড শীতকালীন কোট, ডাউন জ্যাকেট ও প্যান্ট, রেইন গিয়ার, ওয়ার্কওয়্যার, রানিংওয়্যার, ইয়োগাওয়্যার, এবং ওয়াটার স্পোর্টসওয়্যার তৈরি করবে।
প্রতিষ্ঠানটিতে ২ হাজার ৭৮৮ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সংস্থার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বেছে নেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে ধন্যবাদ জানান এবং সুষ্ঠু ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেডসহ এ পর্যন্ত মোট ৪৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যাদের মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগ প্রায় ১.০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে। ক্রমাগত উন্নয়ন ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের কারণে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার সদস্য (প্রকৌশল) আবদুল্লাহ আল মামুন, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হক, নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ.এস.এম. আনোয়ার পারভেজ এবং অক্টোবর ৪১২৮ (বিডি) লিমিটেডের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত ও বিনিয়োগে ধীরগতির প্রবণতার মধ্যেও বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে নিট এফডিআই প্রবাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংস্থাটির মতে, এই প্রবৃদ্ধি প্রমাণ করে বিদেশি কোম্পানিগুলোর আস্থা বাংলাদেশের বাজারে বাড়ছে এবং তারা ব্যবসা সম্প্রসারণে আরও বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে কার্যরত লাভজনক বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফার একটি বড় অংশ পুনরায় বিনিয়োগ করছে। পুনঃবিনিয়োগের পরিমাণও গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু মুনাফা স্থানান্তর করছে না, বরং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের সম্ভাবনা দেখেই নতুন বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে।
বিশ্বব্যাপী নতুন মূলধনের (গ্রিনফিল্ড এফডিআই) প্রবাহ কমলেও বাংলাদেশে এ খাতে রেকর্ড হয়েছে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। পাশাপাশি বিদেশি মূল কোম্পানিগুলোর স্থানীয় ইউনিটগুলোতে অর্থায়ন বা ইন্টার-কোম্পানি ঋণের হার এক বছরে বেড়েছে ২২৯ শতাংশ।
শুধু ছয় মাস নয়, পুরো অর্থবছরের চিত্রও আশাব্যঞ্জক। জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ অর্থবছরে নিট এফডিআই প্রবাহ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৯ শতাংশেরও বেশি।
এদিকে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে দেশের পাঁচটি বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা- বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ) ও বিসিকের মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোম্পানির মোট ১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রস্তাবিত বিনিয়োগ। এর মধ্যে ৬৫ কোটি ডলারেরও বেশি এসেছে সরাসরি বিদেশি কোম্পানির পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। আর ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই এ বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ পরিবেশের প্রতি বিদেশিদের আস্থার প্রতিফলন। তাদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোতে আরও বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি কমেছে ২০ শতাংশ। আর গত চার মাসে এই পতনের হার প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া নতুন শুল্ক কাঠামোর পুরোপুরি প্রভাব পড়েছে সেপ্টেম্বর মাসে। এই শুল্কের মধ্যে রয়েছে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধে ভারতের অস্বীকৃতির কারণে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানা।
দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) সহ-প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, শুল্ক বৃদ্ধির পর যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাজারে পরিণত হয়েছে।
জিটিআরআইয়ের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, শ্রমনির্ভর খাতগুলোর মধ্যে বস্ত্র, রত্ন ও গয়না, প্রকৌশলজাত পণ্য এবং রাসায়নিক খাত সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে। এসব খাতে রফতানি আয় ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ছিল ৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। সেপ্টেম্বর নাগাদ তা নেমে আসে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পায়। পর পর চার মাস ধরে রপ্তানি কমতে থাকায় ভারতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি কিছুটা ভারসাম্য রক্ষা করেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দীর্ঘ বিরতির পর গত মাসে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা আবার শুরু হয়। চলমান আলোচনার লক্ষ্য আগামী মাসের মধ্যে একটি প্রাথমিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করা। একটি ভারতীয় প্রতিনিধি দল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছে।
বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। ওয়াশিংটন মনে করছে, এর মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ক্রেমলিনের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানো সম্ভব হবে।
তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে আলোচনা চলছে। বর্তমান মার্কিন প্রশাসন এই সহযোগিতা গভীর করতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
অবশ্য কৃষি ও দুগ্ধ খাতের বাজার প্রবেশাধিকার নিয়ে এখনও বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়ে গেছে। বহু বছর ধরে ওয়াশিংটন ভারতের কৃষি খাতকে সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে দেখছে। কিন্তু নয়াদিল্লি খাদ্যনিরাপত্তা, কৃষকের জীবিকা ও অভ্যন্তরীণ বাজার রক্ষার কারণ দেখিয়ে এই খাতকে রক্ষা করে আসছে।
কিছু দিন আগেও যুক্তরাষ্ট্রই ছিল ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৪ সালে দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্য দাঁড়িয়েছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলারে। ট্রাম্প ও মোদি দুজনই এই অঙ্ক ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক শুল্কযুদ্ধ সেই লক্ষ্যকে এখন গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
সর্বস্তরের জনগণকে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে শরীয়াহ্ ভিত্তিক ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি’র রয়েছে বিভিন্ন মেয়াদি আকর্ষণীয় বিশেষ আমানত প্রকল্প। পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন ব্যাংকের যে কোন একটি আমানত প্রকল্প বেছে নেওয়ার জন্য ১৭৪ টি শাখা ও উপশাখায় আপনাকে স্বাগতম।
দি প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি ‘ইন্টিগ্রিটি ও এথিকস প্র্যাকটিস ইন ব্যাংকিং’ শীর্ষক এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালার আয়োজন করে। সম্প্রতি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে লার্নিং অ্যান্ড ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে (LTDC) এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয় ।
অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন দি প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ আবু জাফর, এবং অনুষ্ঠানে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য প্রদান করেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান ডাঃ আরিফুর রহমান। তিনি টেকসই ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সততা ও নৈতিকতার গুরুত্বের ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করেন।
কর্মশালার মূল লক্ষ্য ছিল ব্যাংকিং কার্যক্রমের প্রতিটি স্তরে নৈতিক মান, স্বচ্ছতা এবং উত্তম শাসননীতি প্রচার ও বাস্তবায়ন করা। প্রধান কার্যালয় এবং বিভিন্ন শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রমে সততা ও নৈতিক মূল্যবোধ বজায় রাখার বাস্তবসম্মত দিকগুলো আলোচিত হয়।
প্রযুক্তিগত অধিবেশনগুলো পরিচালনা করেন দি প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি স্বতন্ত্র পরিচালক এম. নুরুল আলম, এফসিএস, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর যুগ্ম পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান খান, যুগ্ন পরিচালক, এবং বাংলালিংকের কমপ্লায়েন্স ডিরেক্টর মোহাম্মদ আদিল হোসেন, সিসিইপি। তাঁরা ব্যাংকিং খাতে নৈতিক সংস্কৃতি শক্তিশালীকরণ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি মেনে চলা এবং দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণ বিষয়ে মূল্যবান মতামত ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
এক জাকজমকপুর্ণ আয়োজনে ৫ম জাতীয় স্কোয়াশ চ্যাম্পিয়নশীপ ২০২৫-এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটির জুলকান ইনডোর এরিনার স্কোয়াশ কোর্টে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এবারের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন মেয়েদের শাখায় অনুর্ধ ১৩ গ্রুপে আরিকা সুলতানা, অনুর্ধ ১৫ গ্রুপে মায়ানুর, উন্মুক্ত মহিলা গ্রুপে চাঁদনী সরকার, ছেলেদের শাখায় অনুর্ধ ১৩ গ্রুপে শাহরিয়ার নাফিজ, অনুর্ধ ১৫ গ্রুপে মেহেদি হাসান, পুরুষ উন্মুক্ত গ্রুপের শাহাদাৎ হোসেন, মেম্বার গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন চট্রগ্রাম ক্লাবের ফজলে ওয়ালি ও বিশেষ পুরস্কার দেয়া হয় ঢাকা স্কোয়াশ একাডেমির জিহাদকে। বিজয়ীদের হাতে ট্রফি তুলেদেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মাহবুব-উল-আলম।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মাহবুব-উল-আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় স্পোর্টস কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক কাজী নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্কোয়াশ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জি এম কামরুল ইসলাম, এসপিপি (অব)-সহ নির্বাহী কমিটির সদস্যগন, বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটির পরিচালক মেজর (অবঃ) মোহসিনুল করিম-সহ উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রাক্তন ও বর্তমান খেলোয়াড় এবং অভিভাবকবৃন্দ।
চার দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৩ অক্টোবর। যা উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া।
প্রধান অতিথি বলেন যে বসুন্ধরা গ্রুপ নিজস্ব কর্মকান্ডের পাশাপাশি খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড-এ পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে অন্যান্য খেলারমত আগামী দিনগুলোতে তারা স্কোয়াশ খেলার পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করবে। ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক বলেন, সম্পদের সল্পতা ও নিজস্ব কোর্ট না থাকাসহ হাজার চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতার মধ্যে গত পাঁচ বছর একটি পরিকল্পনার আওতায় আমরা স্কোয়াশ খেলাকে একটা পর্যায়ে আনতে পেরেছি। এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে বাংলাদেশ স্কোয়াশে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক ভালো করতে পারবে। তিনি আরো বলেন যে পরবর্তী এসএ গেইমসে আমাদের লক্ষ্য মানসম্মত দল প্রেরণ এবং পদক জয় করা।
মন্তব্য